alt

জাতীয়

৯ সরকারি হাইস্কুল প্রকল্পে অনিয়ম, অগ্রিম বিল পরিশোধের পর নির্মাণ কাজে স্থবিরতা

রাকিব উদ্দিন : শনিবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২২

শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ নয়টি সরকারি হাইস্কুল স্থাপন প্রকল্পের নথিপত্রে অগ্রগতি ৩৫ শতাংশ। তবে বাস্তবে এই প্রকল্প পরিদর্শনে ভিন্ন তথ্য পাওয়া গেছে। কাজ না হলেও অবকাঠামো নির্মাণে নিয়মিত অর্থও ছাড় হচ্ছে। ঠিকাদারের নামে কোটি টাকার বিল পরিশোধ দেখানো হয়েছে। অথচ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে জানতে পায় নির্মাণ কাজ এখনও শুরুই হয়নি।

এ তথ্য পাওয়া গেছে বিভাগীয় পর্যায়ে নতুন ‘৯টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন’ প্রকল্পের কার্যক্রম পরিদর্শনে। সম্প্রতি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের (মাউশি) উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের একটি টিম এ প্রকল্পের আওতায় রংপুরে একটি বিদ্যালয় নির্মাণের প্রস্তাবিত স্থান পরিদর্শনে গিয়ে এ তথ্য জানতে পায়।

কিন্তু টাকা ছাড়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রকল্প কর্মকর্তা এবং নির্মাণ কাজের দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলীরা প্রভাবশালী হওয়ায় এ অনিয়ম ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে। ইইডির পরিদর্শন দলের সদস্যরা এ বিষয়ে লিখিত প্রতিবেদন দেয়ার জন্য সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তার সম্মতি চাইলে তা মেলেনি বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে জানিয়েছেন।

রংপুর সদরে নতুন ‘কামাল কাছলা মৌজা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়’ স্থাপন হচ্ছে। এ জন্য ১০তলা ভিত্তি বিশিষ্ট ১০তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ হচ্ছে। এ অবমাঠামো নির্মাণের জন্য ঢাকার একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে গত ২৮ এপ্রিল কার্যাদেশ দেয়া হয়। এ নির্মাণ কাজের মোট দরপত্র মূল্য ধরা হয়েছে ২৩ কোটি দশ লাখ টাকার মতো। মোট ৩৬ মাসে নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রকল্প কার্যালয় থেকে গত ২৬ জুন রংপুর অফিসের অনুকূলে (ইইডি) এক কোটি টাকা ছাড় করা হয়। পরবর্তীতে আরও প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ছাড় হয় প্রকল্প অফিস থেকে। তবে প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) টাকা ছাড়ের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। ইইডির প্রধান কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরাও এই অনিয়মের সঙ্গে জড়িত বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

কাজ না হওয়া সত্ত্বেও টাকা ছাড়ের বিষয়ে জানতে চাইলে ৯টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পের পিডি অধ্যাপক রায়হানা তসলিম সংবাদকে বলেন, রংপুরের ওই স্কুলটির জন্য ‘আমরা টাকা ছাড় করিনি।’

কিন্তু ইইডি কর্মকর্তারা টাকা ছাড়ের প্রমাণ পেয়েছে-এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে পিডি বলেন, ‘অল্প কিছু টাকা দেয়া হয়েছে; কাজও এখন চলমান।’

এ বিষয়ে ইইডির রংপুর আঞ্চলিক অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কালাম মো. আকতারুজ্জামান সংবাদকে বলেন, তিনি এখন প্রায় পাঁচ কোটি টাকা পেয়েছেন প্রকল্প অফিস থেকে। এর মধ্যে ঠিকাদারকে এক কোটি টাকার মতো দেয়া হয়েছে। বাকি টাকা ‘ইইডির ট্রেজারি’তে রাখা হয়েছে।

ইইডির দুই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রংপুরে একটি স্কুল স্থাপনে ‘ভুল ডিজাইনে ভুল ফাইলিং’ হয়েছে। যদিও এ প্রকল্পের ডিজাইনের দায়িত্বে থাকা সংস্থার নির্বাহী প্রকৌশলী ও ‘বিশেষজ্ঞ’ ডিজাইনার জয়নাল আবেদীন সংবাদকে বলেন, ‘আমি কোনো ভুল ডিজাইন করি না। সেখানে (রংপুর) ফাইলিংয়ে ভুল হয়েছে। এখন নতুন করে ফাইলিং করতে হবে।’

অগ্রিম বিল পরিশোধের পরও নির্মাণ কাজ এগুচ্ছে না বিভাগীয় পর্যায়ে নতুন ৯টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থান প্রকল্পে। এ প্রকল্পের আওতায় রংপুরে দুটি স্কুল নির্মাণের কথা রয়েছে। তবে ছয় মাসে কাজ হয়নি ১০ লাখ টাকারও। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে সম্প্রতি ওই বিদ্যালয় স্থল পরিদর্শনে যান শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের (ইইডি) কয়েকজন প্রকৌশলী ও কর্মকর্তা। তারা সেখানে গিয়ে জানতে পান আগাম টাকা-পয়সা দেয়া হলেও নির্মাণ কাজ শুরু হয়নি।

এরপর তারা বিষয়টি সংস্থার প্রধান প্রকৌশলীকে অবহিত করলে তিনি প্রকৌশলীদের ওপর ‘ক্ষোভ’ প্রকাশ করেন। ‘পরিদর্শনের এজেন্ডায়’ এই স্কুলের নাম না থাকায় ‘ক্ষোভ’ প্রকাশ করেন প্রধান প্রকৌশলী। কারণ ইইডির ওই জোন অফিসের প্রধান এবং ওই কাজের ঠিকাদার-দুজনই ‘প্রভাবশালী’। এ অনিয়মের’ সঙ্গে প্রকল্প কর্মকর্তাদেরও সম্পৃক্ততা থাকতে পারে বলে ইইডি কর্মকর্তাদের ধারণা।

২০১৮ সালের অক্টোবরে শুরু হওয়া ‘৯ স্কুল’ প্রকল্পটির প্রথম দফায় মেয়াদ ছিল ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত। পরে মেয়াদ দুই বছর বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। এ হিসেবে আগামী সাত মাসে প্রকল্পের বাস্তবায়ন শেষ করতে হবে।

৪৬৪ কোটি টাকার এ প্রকল্পে গত জুন নাগাদ প্রায় ১৬২ কোটি টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। এ হিসেবে আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়ায় ৩৫ শতাংশের মতো। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) অধীনে বাস্তবায়ন হওয়া এ প্রকল্পের প্রকৃত অগ্রগতি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

প্রকৌশলী ও প্রকল্প কর্মকর্তারা সংবাদকে জানিয়েছেন, ৯টি বিদ্যালয়ের মধ্যে অন্তত পাঁচটির অবকাঠামো নির্মাণ কাজই ‘সন্তোষজনক’ নয়। এগুলোতে কখনো কাজ হচ্ছে, কখনো বন্ধ থাকছে। ‘মনিটরিং’ হচ্ছে দায়সারাগোচের। এ কারণে আগাম বিল পরিশোধের পরও কাজ এগুচ্ছে না।

প্রকল্পটির অধীনে চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগীয় শহরে দুটি করে, ময়মনসিংহ বিভাগীয় শহর ও জয়পুরহাটে একটি করে এবং সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলে একটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় নির্মাণের কথা রয়েছে।

এর মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগীয় শহরের দুটি বিদ্যালয়ের জমি নির্ধারণ করতেই দুই বছর চলে যায়। একটি বিদ্যালয় নির্মাণের জন্য অন্তত দুই একর জমির প্রয়োজন। একসঙ্গে জমি না পাওয়ায় শহরের দক্ষিণের দিকে পতেঙ্গায় দুটি বিদ্যালয় নির্মাণের জমি নির্ধারণ করা হয়। দুটি বিদ্যালয়ের মধ্যে একটির নির্মাণ কাজ শুরু হলে কাজ এগুচ্ছে ধীরগতিতে; আরেকটি কাজ শুরু হয়নি।

রাজশাহী শহরে দুটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জন্য বোয়ালিয়ার ছোট বনগ্রাম এবং বড় বনগ্রাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে একটির কাজ শুরু হলেও অপরটির কাজ শুরু হয়নি।

এছাড়া জয়পুরহাটের বিদ্যালয়টির নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। রংপুর শহরের কামালকাস্তা এবং উত্তম এলাকায় সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় দুটি স্থাপনের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে উত্তম এলাকায় স্কুলের দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি।

ময়মনসিংহ শহরের ঢাকা বাইপাস এলাকায় জমি নির্ধারণ করা হয়েছে। নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে মাত্র। আর শ্রীমঙ্গলের বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের ভেতরে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় নির্মাণ করা হলেও কাজ এগুচ্ছে ধীর গতিতে।

৯টি বিদ্যালয়ের মধ্যে বিভাগীয় শহরের ৭টি বিদ্যালয় হবে ১০ তলাবিশিষ্ট এবং জেলা-উপজেলা শহরের দুটি হবে ৬ তলাবিশিষ্ট। বিদ্যালয়গুলোতে পর্যাপ্ত সংখ্যক শ্রেণিকক্ষের পাশাপাশি আইসিটি ল্যাব, বিজ্ঞানাগার, লাইব্রেরি, মাল্টিপারপাস হল রুম, প্রধান শিক্ষকের কক্ষ, সহকারী প্রধান শিক্ষকের কক্ষ, অফিস কক্ষ, শিক্ষক কমনরুম, দর্শনার্থী কক্ষ ও মিড ডে মিল কক্ষ ও সেমিনার কক্ষ থাকবে।

এছাড়া বিএনসিসি, গার্লস গাইড কক্ষ, প্রাথমিক চিকিৎসা কক্ষ এবং ইন্টানেট সুবিধাসহ ল্যাপটপ, কম্পিউটার ও কম্পিউটার সামগ্রী, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর, বই-পুস্তক, খেলাধুলার সরঞ্জাম, বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্র সুবিধাও রাখার কথা রয়েছে প্রকল্প দলিলে।

ছবি

থাইল্যান্ডের সঙ্গে পাঁচটি দ্বিপক্ষীয় নথি স্বাক্ষর

ছবি

দক্ষিণ এশিয়ার যে শহরগুলোর তাপমাত্রা এখন সর্বোচ্চ

ছবি

বাংলাদেশের চিকিৎসা সেবায় থাইল্যান্ডের বিনিয়োগ চায় প্রধানমন্ত্রী

গাজীপুরে মরে যাচ্ছে মুরগি, বন্ধ হয়ে যাচ্ছে খামার

ছবি

আগ্রাসন ও নৃশংসতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

ছবি

একটানা এতদিন এত তাপ দেখেনি বাংলাদেশ

রোববার খুলছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

মার্কিন মানবাধিকার প্রতিবেদনে ‘ভিত্তিহীন’ তথ্য রয়েছে

ছবি

গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা টিকিয়ে রাখতে উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করতে বদ্ধপরিকর ইসি

ছবি

থাইল্যান্ডের রাজা-রাণীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাৎ

ছবি

মৃত্যুর দু’বছর পর ব্রুনাই থেকে ফিরছে দুই বাংলাদেশির লাশ

ছবি

রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান হলেন এম ইউ কবীর চৌধুরী

বাল্যবিবাহ রোধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে : মানবাধিকার কমিশন

ছবি

১৫ বছরে আমাদের চাল আমদানি করতে হয়নি: এলজিআরডি মন্ত্রী

ছবি

শপথ নিলেন আপিল বিভাগের ৩ বিচারপতি

ছবি

যুদ্ধ অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত : প্রধানমন্ত্রী

ছবি

গ্যাস সংকটে আগামীর ‘ভরসা’ এলএনজি

ছবি

রানা প্লাজা ধসের ১১ বছর : ‘আমার স্বপ্নও ভেঙে গেছে’

ছবি

এভিয়েশন শিল্পের উন্নয়নে সহযোগিতা করতে চায় যুক্তরাজ্য

ছবি

থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা

ছবি

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ৩ নতুন বিচারক

ছবি

কক্সবাজারে ভোটার হওয়া রোহিঙ্গাদের তালিকা চায় হাই কোর্ট

ছবি

ব্যাংকক পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী

ছবি

তাপপ্রবাহের এলাকা আরও বাড়বে

ছবি

ব্যাংককের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করলেন প্রধানমন্ত্রী

ছবি

বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে ৫টি চুক্তি ও ৫টি সমঝোতা স্মারক সই

ছবি

ঢাকা ছাড়লেন কাতারের আমির

ছবি

সোমালি জলদস্যুদের দ্বারা জব্দ করা জাহাজ সংযুক্ত আরব আমিরাতে পৌঁছেছে; ২৩ জন বাংলাদেশি নাবিকের সবাই নিরাপদ

ছবি

পদে থেকেই ইউপি চেয়ারম্যানরা উপজেলা নির্বাচন করতে পারবেন

ছবি

পদত্যাগ না করেই ইউপি চেয়ারম্যানরা উপজেলা নির্বাচন করতে পারবেন

ছবি

বান্দরবানের তিন উপজেলায় ভোট স্থগিত : ইসি সচিব

ছবি

তীব্র দাবদাহের মধ্যেও বিদ্যুৎ উৎপাদনে রেকর্ড , আছে লোড শেডিংও

ছবি

বাংলাদেশ-কাতার ১০ চুক্তি সই

ছবি

ঢাকা থেকে প্রধান ১৫টি রুটে ট্রেনের ভাড়া যত বাড়ল

ছবি

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে কাতারের আমির

ছবি

তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা বাড়লো আরও ৩ দিন, দুর্ভোগে সাধারণ মানুষ

tab

জাতীয়

৯ সরকারি হাইস্কুল প্রকল্পে অনিয়ম, অগ্রিম বিল পরিশোধের পর নির্মাণ কাজে স্থবিরতা

রাকিব উদ্দিন

শনিবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২২

শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ নয়টি সরকারি হাইস্কুল স্থাপন প্রকল্পের নথিপত্রে অগ্রগতি ৩৫ শতাংশ। তবে বাস্তবে এই প্রকল্প পরিদর্শনে ভিন্ন তথ্য পাওয়া গেছে। কাজ না হলেও অবকাঠামো নির্মাণে নিয়মিত অর্থও ছাড় হচ্ছে। ঠিকাদারের নামে কোটি টাকার বিল পরিশোধ দেখানো হয়েছে। অথচ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে জানতে পায় নির্মাণ কাজ এখনও শুরুই হয়নি।

এ তথ্য পাওয়া গেছে বিভাগীয় পর্যায়ে নতুন ‘৯টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন’ প্রকল্পের কার্যক্রম পরিদর্শনে। সম্প্রতি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের (মাউশি) উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের একটি টিম এ প্রকল্পের আওতায় রংপুরে একটি বিদ্যালয় নির্মাণের প্রস্তাবিত স্থান পরিদর্শনে গিয়ে এ তথ্য জানতে পায়।

কিন্তু টাকা ছাড়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রকল্প কর্মকর্তা এবং নির্মাণ কাজের দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলীরা প্রভাবশালী হওয়ায় এ অনিয়ম ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে। ইইডির পরিদর্শন দলের সদস্যরা এ বিষয়ে লিখিত প্রতিবেদন দেয়ার জন্য সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তার সম্মতি চাইলে তা মেলেনি বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে জানিয়েছেন।

রংপুর সদরে নতুন ‘কামাল কাছলা মৌজা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়’ স্থাপন হচ্ছে। এ জন্য ১০তলা ভিত্তি বিশিষ্ট ১০তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ হচ্ছে। এ অবমাঠামো নির্মাণের জন্য ঢাকার একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে গত ২৮ এপ্রিল কার্যাদেশ দেয়া হয়। এ নির্মাণ কাজের মোট দরপত্র মূল্য ধরা হয়েছে ২৩ কোটি দশ লাখ টাকার মতো। মোট ৩৬ মাসে নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রকল্প কার্যালয় থেকে গত ২৬ জুন রংপুর অফিসের অনুকূলে (ইইডি) এক কোটি টাকা ছাড় করা হয়। পরবর্তীতে আরও প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ছাড় হয় প্রকল্প অফিস থেকে। তবে প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) টাকা ছাড়ের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। ইইডির প্রধান কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরাও এই অনিয়মের সঙ্গে জড়িত বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

কাজ না হওয়া সত্ত্বেও টাকা ছাড়ের বিষয়ে জানতে চাইলে ৯টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পের পিডি অধ্যাপক রায়হানা তসলিম সংবাদকে বলেন, রংপুরের ওই স্কুলটির জন্য ‘আমরা টাকা ছাড় করিনি।’

কিন্তু ইইডি কর্মকর্তারা টাকা ছাড়ের প্রমাণ পেয়েছে-এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে পিডি বলেন, ‘অল্প কিছু টাকা দেয়া হয়েছে; কাজও এখন চলমান।’

এ বিষয়ে ইইডির রংপুর আঞ্চলিক অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কালাম মো. আকতারুজ্জামান সংবাদকে বলেন, তিনি এখন প্রায় পাঁচ কোটি টাকা পেয়েছেন প্রকল্প অফিস থেকে। এর মধ্যে ঠিকাদারকে এক কোটি টাকার মতো দেয়া হয়েছে। বাকি টাকা ‘ইইডির ট্রেজারি’তে রাখা হয়েছে।

ইইডির দুই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রংপুরে একটি স্কুল স্থাপনে ‘ভুল ডিজাইনে ভুল ফাইলিং’ হয়েছে। যদিও এ প্রকল্পের ডিজাইনের দায়িত্বে থাকা সংস্থার নির্বাহী প্রকৌশলী ও ‘বিশেষজ্ঞ’ ডিজাইনার জয়নাল আবেদীন সংবাদকে বলেন, ‘আমি কোনো ভুল ডিজাইন করি না। সেখানে (রংপুর) ফাইলিংয়ে ভুল হয়েছে। এখন নতুন করে ফাইলিং করতে হবে।’

অগ্রিম বিল পরিশোধের পরও নির্মাণ কাজ এগুচ্ছে না বিভাগীয় পর্যায়ে নতুন ৯টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থান প্রকল্পে। এ প্রকল্পের আওতায় রংপুরে দুটি স্কুল নির্মাণের কথা রয়েছে। তবে ছয় মাসে কাজ হয়নি ১০ লাখ টাকারও। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে সম্প্রতি ওই বিদ্যালয় স্থল পরিদর্শনে যান শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের (ইইডি) কয়েকজন প্রকৌশলী ও কর্মকর্তা। তারা সেখানে গিয়ে জানতে পান আগাম টাকা-পয়সা দেয়া হলেও নির্মাণ কাজ শুরু হয়নি।

এরপর তারা বিষয়টি সংস্থার প্রধান প্রকৌশলীকে অবহিত করলে তিনি প্রকৌশলীদের ওপর ‘ক্ষোভ’ প্রকাশ করেন। ‘পরিদর্শনের এজেন্ডায়’ এই স্কুলের নাম না থাকায় ‘ক্ষোভ’ প্রকাশ করেন প্রধান প্রকৌশলী। কারণ ইইডির ওই জোন অফিসের প্রধান এবং ওই কাজের ঠিকাদার-দুজনই ‘প্রভাবশালী’। এ অনিয়মের’ সঙ্গে প্রকল্প কর্মকর্তাদেরও সম্পৃক্ততা থাকতে পারে বলে ইইডি কর্মকর্তাদের ধারণা।

২০১৮ সালের অক্টোবরে শুরু হওয়া ‘৯ স্কুল’ প্রকল্পটির প্রথম দফায় মেয়াদ ছিল ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত। পরে মেয়াদ দুই বছর বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। এ হিসেবে আগামী সাত মাসে প্রকল্পের বাস্তবায়ন শেষ করতে হবে।

৪৬৪ কোটি টাকার এ প্রকল্পে গত জুন নাগাদ প্রায় ১৬২ কোটি টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। এ হিসেবে আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়ায় ৩৫ শতাংশের মতো। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) অধীনে বাস্তবায়ন হওয়া এ প্রকল্পের প্রকৃত অগ্রগতি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

প্রকৌশলী ও প্রকল্প কর্মকর্তারা সংবাদকে জানিয়েছেন, ৯টি বিদ্যালয়ের মধ্যে অন্তত পাঁচটির অবকাঠামো নির্মাণ কাজই ‘সন্তোষজনক’ নয়। এগুলোতে কখনো কাজ হচ্ছে, কখনো বন্ধ থাকছে। ‘মনিটরিং’ হচ্ছে দায়সারাগোচের। এ কারণে আগাম বিল পরিশোধের পরও কাজ এগুচ্ছে না।

প্রকল্পটির অধীনে চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগীয় শহরে দুটি করে, ময়মনসিংহ বিভাগীয় শহর ও জয়পুরহাটে একটি করে এবং সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলে একটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় নির্মাণের কথা রয়েছে।

এর মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগীয় শহরের দুটি বিদ্যালয়ের জমি নির্ধারণ করতেই দুই বছর চলে যায়। একটি বিদ্যালয় নির্মাণের জন্য অন্তত দুই একর জমির প্রয়োজন। একসঙ্গে জমি না পাওয়ায় শহরের দক্ষিণের দিকে পতেঙ্গায় দুটি বিদ্যালয় নির্মাণের জমি নির্ধারণ করা হয়। দুটি বিদ্যালয়ের মধ্যে একটির নির্মাণ কাজ শুরু হলে কাজ এগুচ্ছে ধীরগতিতে; আরেকটি কাজ শুরু হয়নি।

রাজশাহী শহরে দুটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জন্য বোয়ালিয়ার ছোট বনগ্রাম এবং বড় বনগ্রাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে একটির কাজ শুরু হলেও অপরটির কাজ শুরু হয়নি।

এছাড়া জয়পুরহাটের বিদ্যালয়টির নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। রংপুর শহরের কামালকাস্তা এবং উত্তম এলাকায় সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় দুটি স্থাপনের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে উত্তম এলাকায় স্কুলের দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি।

ময়মনসিংহ শহরের ঢাকা বাইপাস এলাকায় জমি নির্ধারণ করা হয়েছে। নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে মাত্র। আর শ্রীমঙ্গলের বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের ভেতরে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় নির্মাণ করা হলেও কাজ এগুচ্ছে ধীর গতিতে।

৯টি বিদ্যালয়ের মধ্যে বিভাগীয় শহরের ৭টি বিদ্যালয় হবে ১০ তলাবিশিষ্ট এবং জেলা-উপজেলা শহরের দুটি হবে ৬ তলাবিশিষ্ট। বিদ্যালয়গুলোতে পর্যাপ্ত সংখ্যক শ্রেণিকক্ষের পাশাপাশি আইসিটি ল্যাব, বিজ্ঞানাগার, লাইব্রেরি, মাল্টিপারপাস হল রুম, প্রধান শিক্ষকের কক্ষ, সহকারী প্রধান শিক্ষকের কক্ষ, অফিস কক্ষ, শিক্ষক কমনরুম, দর্শনার্থী কক্ষ ও মিড ডে মিল কক্ষ ও সেমিনার কক্ষ থাকবে।

এছাড়া বিএনসিসি, গার্লস গাইড কক্ষ, প্রাথমিক চিকিৎসা কক্ষ এবং ইন্টানেট সুবিধাসহ ল্যাপটপ, কম্পিউটার ও কম্পিউটার সামগ্রী, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর, বই-পুস্তক, খেলাধুলার সরঞ্জাম, বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্র সুবিধাও রাখার কথা রয়েছে প্রকল্প দলিলে।

back to top