দেশের কৃষি বিজ্ঞানীরা মাটির ‘সঠিক’ ব্যবস্থাপনায় ‘অত্যন্ত দুর্বল’ ভূমিকা পালন করছেন বলে মন্তব্য করেছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক। পাশাপাশি দেশের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা কারিকুলাম নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
গতকাল বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত সেমিনার, সয়েল কেয়ার অ্যাওয়ার্ড ও বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) এর নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ মো. বখতিয়ার। প্রবন্ধে তিনি জানান, দেশের শতকরা ৩৩ ভাগ জমি অবক্ষয়িত। টেকসই মৃত্তিকা ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে শতকরা ৫৮ ভাগ বেশি ফসল উৎপাদন করা সম্ভব। তিনি জানান, ২০৫০ সালের খাদ্য চাহিদা মিটাতে হলে বর্তমানের চেয়ে শতকরা ৬০ ভাগ বেশি ফসল উৎপাদন করতে হবে।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘অধিক ফসলের জন্য সার ব্যবহার করছেন, সেটার জন্য মাটির স্বাস্থ্যের ক্ষতি হচ্ছে। বাংলাদেশের মাটির স্বাস্থ্য ক্রমেই দুবল হচ্ছে। নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন, মাটির স্বাস্থ্য ঠিক না থাকলে সেগুলো ভালো ফল দেবে না। আবার ফসলের উৎপাদন বাড়াতে সারও লাগবে। সবকিছু ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সবকিছুর সঠিক ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। সে দিক থেকে আমাদের বিজ্ঞানীরা খুব দুর্বল।’
বিজ্ঞানীদের গবেষণায় আরও মনোনিবেশ করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আপনাদের ব্যাপক গবেষণার প্রয়োজন। নতুন নতুন প্রযুক্তির জন্য মাটির কি ধরনের ক্ষতি হচ্ছে সে ধারণা নিন। কয়েক বছর আগে নতুন প্রযুক্তি ভার্মিকম্পোস্ট এসেছে। আমি অনেক বিজ্ঞানী কে জিজ্ঞেস করেছি এতে নাইট্রোজেনের মাত্রা কত? জানেন না। সেটা খুব দুঃখজনক। আপনাদের উঁচু মানের প্রশিক্ষণ প্রয়োজন।’
মাঠের কৃষিবিদদের সক্ষমতা অত্যন্ত নাজুক উল্লেখ করে আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘যারা কৃষিবিদ হয়ে উঠছেন, তাদের জন্য দুর্বলতা রয়েছে। মাঠের সঙ্গে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার কোন সম্পর্ক নেই। হাতে কলমে শিক্ষা নিতে হবে। তারা শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ে বসে বিসিএস পরীক্ষার জন্য সাধারণ জ্ঞান পড়ে। তারা কয়েকটি নোট পড়ে কোনভাবে ডিগ্রি নিয়ে আসছে। আমি বলছি না সবাই সেটা করছে। তবে অধিকাংশরা সেটা করছে।’
তিনি আরও যোগ করেন, এত বড় বড় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় একটিও পোল্ট্রি খামার নেই। ডেইরি ফার্ম নেই। তারা শিখবে কিভাবে। কিন্তু বেসরকারি খাত কতো বড় বড় প্রকল্প নিচ্ছে। সেখানে গিয়ে তারা কিভাবে সহায়তা দেবে। মন্ত্রী কৃষি গবেষণা সংশ্লিষ্টদের তাগিদ দিয়ে বলেন, ‘প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাইস চ্যান্সেলরদের নিয়ে বসেন। তাদের কারিকুলাম দিন। কিভাবে পড়ানো করানো উচিত।’
‘বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতেই বিসিএসের পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত শিক্ষার্থীরা। কয়েকটি নোট পড়ে কোনভাবে ডিগ্রি নিয়ে আসছে। আমি বলছি না সবাই সেটা করছে। তবে অধিকাংশরা সেটা করছে।’ বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘সবাই সরকারী চাকরি নিতে ব্যস্ত। মানেই মাস গেলে বেতন। কোন দায়িত্ব নেই। কোন কাজ নেই। এ মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’
আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘জমির সবোচ্চ ব্যবহার করে আমরা খাদ্য উৎপাদন করি। অন্য সম্পদ আমাদের নাই। এখনও অনেক খাদ্য বিদেশ থেকে আনি। সবকিছু অনেক চ্যালেঞ্জ। সত্যিকার অর্থে খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে হলে আমাদের অনেক কাজ করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘অনেকেই চায় অর্গানিক এগ্রিকালচার করতে। কিন্তু এটা দিয়ে কি এত মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব কি না? আমাদের প্রয়োজন এক বিঘায় ৩০ মণ ধান উৎপাদন করা। কিন্তু শুধু জৈব সার দিয়ে তো এত উৎপাদন হবে না।’
পরে কৃষিমন্ত্রী ‘ল্যান্ড ডিগ্রেডেশন ইন বাংলাদেশ’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন এবং সয়েল কেয়ার অ্যাওয়ার্ড ও বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস পুরস্কার দেয়া হয়। এ বছর সয়েল কেয়ার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক এসএম ইমামুল হক, মৃত্তিকা বিজ্ঞানী এমএ সাত্তার ও কৃষক গোলাম রব্বানী। বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস পুরস্কার পেয়েছেন মৃত্তিকা সম্পদ ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী ছাব্বির হোসেন, উপজেলা কৃষি অফিসার আদনান বাবু ও উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা করুণা ম-ল।
খামারবাড়ি কেআইবি মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানে বিষয় অতিথি ছিলেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোস্তাফিজুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রুহুল আমিন তালুকদার। এছাড়া কৃষি মন্ত্রণালয়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবং কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের অন্তর্ভুক্ত সব প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্মারা উপস্থিত ছিলেন।
মঙ্গলবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২২
দেশের কৃষি বিজ্ঞানীরা মাটির ‘সঠিক’ ব্যবস্থাপনায় ‘অত্যন্ত দুর্বল’ ভূমিকা পালন করছেন বলে মন্তব্য করেছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক। পাশাপাশি দেশের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা কারিকুলাম নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
গতকাল বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত সেমিনার, সয়েল কেয়ার অ্যাওয়ার্ড ও বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) এর নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ মো. বখতিয়ার। প্রবন্ধে তিনি জানান, দেশের শতকরা ৩৩ ভাগ জমি অবক্ষয়িত। টেকসই মৃত্তিকা ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে শতকরা ৫৮ ভাগ বেশি ফসল উৎপাদন করা সম্ভব। তিনি জানান, ২০৫০ সালের খাদ্য চাহিদা মিটাতে হলে বর্তমানের চেয়ে শতকরা ৬০ ভাগ বেশি ফসল উৎপাদন করতে হবে।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘অধিক ফসলের জন্য সার ব্যবহার করছেন, সেটার জন্য মাটির স্বাস্থ্যের ক্ষতি হচ্ছে। বাংলাদেশের মাটির স্বাস্থ্য ক্রমেই দুবল হচ্ছে। নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন, মাটির স্বাস্থ্য ঠিক না থাকলে সেগুলো ভালো ফল দেবে না। আবার ফসলের উৎপাদন বাড়াতে সারও লাগবে। সবকিছু ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সবকিছুর সঠিক ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। সে দিক থেকে আমাদের বিজ্ঞানীরা খুব দুর্বল।’
বিজ্ঞানীদের গবেষণায় আরও মনোনিবেশ করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আপনাদের ব্যাপক গবেষণার প্রয়োজন। নতুন নতুন প্রযুক্তির জন্য মাটির কি ধরনের ক্ষতি হচ্ছে সে ধারণা নিন। কয়েক বছর আগে নতুন প্রযুক্তি ভার্মিকম্পোস্ট এসেছে। আমি অনেক বিজ্ঞানী কে জিজ্ঞেস করেছি এতে নাইট্রোজেনের মাত্রা কত? জানেন না। সেটা খুব দুঃখজনক। আপনাদের উঁচু মানের প্রশিক্ষণ প্রয়োজন।’
মাঠের কৃষিবিদদের সক্ষমতা অত্যন্ত নাজুক উল্লেখ করে আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘যারা কৃষিবিদ হয়ে উঠছেন, তাদের জন্য দুর্বলতা রয়েছে। মাঠের সঙ্গে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার কোন সম্পর্ক নেই। হাতে কলমে শিক্ষা নিতে হবে। তারা শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ে বসে বিসিএস পরীক্ষার জন্য সাধারণ জ্ঞান পড়ে। তারা কয়েকটি নোট পড়ে কোনভাবে ডিগ্রি নিয়ে আসছে। আমি বলছি না সবাই সেটা করছে। তবে অধিকাংশরা সেটা করছে।’
তিনি আরও যোগ করেন, এত বড় বড় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় একটিও পোল্ট্রি খামার নেই। ডেইরি ফার্ম নেই। তারা শিখবে কিভাবে। কিন্তু বেসরকারি খাত কতো বড় বড় প্রকল্প নিচ্ছে। সেখানে গিয়ে তারা কিভাবে সহায়তা দেবে। মন্ত্রী কৃষি গবেষণা সংশ্লিষ্টদের তাগিদ দিয়ে বলেন, ‘প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাইস চ্যান্সেলরদের নিয়ে বসেন। তাদের কারিকুলাম দিন। কিভাবে পড়ানো করানো উচিত।’
‘বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতেই বিসিএসের পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত শিক্ষার্থীরা। কয়েকটি নোট পড়ে কোনভাবে ডিগ্রি নিয়ে আসছে। আমি বলছি না সবাই সেটা করছে। তবে অধিকাংশরা সেটা করছে।’ বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘সবাই সরকারী চাকরি নিতে ব্যস্ত। মানেই মাস গেলে বেতন। কোন দায়িত্ব নেই। কোন কাজ নেই। এ মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’
আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘জমির সবোচ্চ ব্যবহার করে আমরা খাদ্য উৎপাদন করি। অন্য সম্পদ আমাদের নাই। এখনও অনেক খাদ্য বিদেশ থেকে আনি। সবকিছু অনেক চ্যালেঞ্জ। সত্যিকার অর্থে খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে হলে আমাদের অনেক কাজ করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘অনেকেই চায় অর্গানিক এগ্রিকালচার করতে। কিন্তু এটা দিয়ে কি এত মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব কি না? আমাদের প্রয়োজন এক বিঘায় ৩০ মণ ধান উৎপাদন করা। কিন্তু শুধু জৈব সার দিয়ে তো এত উৎপাদন হবে না।’
পরে কৃষিমন্ত্রী ‘ল্যান্ড ডিগ্রেডেশন ইন বাংলাদেশ’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন এবং সয়েল কেয়ার অ্যাওয়ার্ড ও বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস পুরস্কার দেয়া হয়। এ বছর সয়েল কেয়ার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক এসএম ইমামুল হক, মৃত্তিকা বিজ্ঞানী এমএ সাত্তার ও কৃষক গোলাম রব্বানী। বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস পুরস্কার পেয়েছেন মৃত্তিকা সম্পদ ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী ছাব্বির হোসেন, উপজেলা কৃষি অফিসার আদনান বাবু ও উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা করুণা ম-ল।
খামারবাড়ি কেআইবি মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানে বিষয় অতিথি ছিলেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোস্তাফিজুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রুহুল আমিন তালুকদার। এছাড়া কৃষি মন্ত্রণালয়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবং কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের অন্তর্ভুক্ত সব প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্মারা উপস্থিত ছিলেন।