alt

জাতীয়

সবাইকে পেনশনের আওতায় আনতে সংসদে বিল পাস

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : মঙ্গলবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৩

দেশের সব প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিককে পেনশন-ব্যবস্থার আওতায় আনতে জাতীয় সংসদে ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা বিল-২০২৩’ পাস করা হয়েছে। বর্তমানে শুধু সরকারি কর্মচারীরা অবসরের পর পেনশন-সুবিধা পান। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল, সবার জন্য পেনশন চালু করা হবে। এই বিল পাস হওয়ার ফলে সবার জন্য পেনশন স্কিম চালু করার আইনি ভিত্তি তৈরি হলো।

অবশ্য কোনো ব্যক্তিকে মাসিক পেনশন-সুবিধা পেতে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর ধারাবাহিকভাবে কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দিতে হবে। এ চাঁদার হার কত হবে, তা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। আইন হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এটি নির্ধারণ করবে। মাসিক বা ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে চাঁদা দেওয়া যাবে এবং অগ্রিম ও কিস্তিতেও চাঁদা দেওয়ার সুযোগ থাকবে।

আজ মঙ্গলবার সংসদ অধিবেশনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বিলটি পাসের প্রস্তাব করলে কণ্ঠভোটে তা পাস হয়। এর আগে বিকেলে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের মুলতবি বৈঠক শুরু হয়।

এ উদ্যোগের প্রশংসা করার পাশাপাশি বিরোধী দলের একাধিক সংসদ সদস্য (জাপা) বলেছেন, এই পেনশন-ব্যবস্থা ‘ব্যাংকের ডিপিএস স্কিমের মতো’। জনগণ চাঁদা দেওয়ার পর সরকার কী পরিমাণ অর্থ দেবে, সরকারের অংশগ্রহণ কী হবে, তা আইনে পরিষ্কার নয়। এই আইন ‘সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক’ বলেও দাবি করেন কেউ কেউ। বিলটিকে ‘শিয়ালের কাছে মুরগি বর্গা’ রাখার সঙ্গেও তুলনা করেছেন জাপার এক সংসদ সদস্য।

বিলে যা আছে

বিলে বলা হয়েছে, জাতীয় পরিচয়পত্রকে ভিত্তি ধরে সর্বজনীন পেনশনের আওতায় ১৮ বছর বা তার বেশি বয়স থেকে ৫০ বছর বয়সী সব বাংলাদেশি নাগরিক অংশ নিতে পারবেন। বিশেষ বিবেচনায় পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিদেরও পেনশন স্কিমের আওতায় রাখার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে মাসিক পেনশন-সুবিধা পেতে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর চাঁদাদাতাকে ধারাবাহিকভাবে কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দিতে হবে। ১০ বছর চাঁদা দেওয়া শেষে তিনি যে বয়সে উপনীত হবেন, সে বয়স থেকে আজীবন পেনশন পাবেন। বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীরাও এতে অংশ নিতে পারবেন।

আইনে বলা হয়েছে, চাঁদাদাতা ধারাবাহিকভাবে কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দিলে মাসিক পেনশন পাবেন। চাঁদাদাতার বয়স ৬০ বছর পূর্তিতে পেনশন তহবিলে পুঞ্জীভূত মুনাফাসহ জমার বিপরীতে পেনশন দেওয়া হবে। একজন পেনশনার আজীবন পেনশন–সুবিধা পাবেন। সরকার গেজেট জারি করে বাধ্যতামূলক না করা পর্যন্ত এই পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণ হবে ঐচ্ছিক।

বিলে বলা হয়েছে, পেনশনে থাকাকালে কোনো ব্যক্তি ৭৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে মারা গেলে তার নমিনি অবশিষ্ট সময়ের জন্য (মূল পেনশনারের বয়স ৭৫ বছর পর্যন্ত) মাসিক পেনশন প্রাপ্য হবেন। চাঁদাদাতা কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দেওয়ার আগে মারা গেলে জমাকৃত অর্থ মুনাফাসহ তার নমিনিকে ফেরত দেওয়া হবে।

পেনশন তহবিলে জমা দেওয়া অর্থ কোনো পর্যায়ে এককালীন তোলার প্রয়োজন পড়লে চাঁদাদাতা আবেদন করলে জমা দেওয়া অর্থের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ঋণ হিসেবে তুলতে পারবেন। যা ফিসহ পরিশোধ করতে হবে। পেনশন থেকে পাওয়া অর্থ আয়করমুক্ত থাকবে। পেনশনের জন্য নির্ধারিত চাঁদা বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য করে কর রেয়াতের জন্য বিবেচিত হবে।

বিলে বলা হয়েছে, নিম্ন আয়সীমার নিচের নাগরিকদের অথবা অসচ্ছল চাঁদাদাতার ক্ষেত্রে পেনশন তহবিলে মাসিক চাঁদার একটি অংশ সরকার অনুদান হিসেবে দিতে পারবে। বিলে সর্বজনীন পেনশন-পদ্ধতিতে সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত অথবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অংশ নেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কর্মী ও প্রতিষ্ঠানের চাঁদার অংশ কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করবে। তবে সরকার সিদ্ধান্ত না দেওয়া পর্যন্ত সরকারি ও আধা সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিরা এই পেনশন–ব্যবস্থার আওতাবহির্ভূত থাকবেন।

‘এটি ব্যাংকের ডিপিএস স্কিমের মতো’

বিল পাসের আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘বিলের কথাগুলো ভালো। কিন্তু এই পেনশন স্কিমে সরকারের অংশগ্রহণ কী? সরকারের কোনো অংশগ্রহণ নেই। এটা ব্যাংকের ডিপিএস স্কিমের মতো। গুঞ্জন আছে, সরকারের কি টাকার অভাব হয়েছে যে জনগণের কাছ থেকে টাকা নিয়ে চলবে?’

টাকা পাচার, বিদেশে বাংলাদেশিদের বাড়ি কেনাসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করে মুজিবুল হক বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী কথা কম বলেন। বোবার শত্রু কম। কিন্তু অর্থমন্ত্রীর কানে কথা পৌঁছায় কি না, জানা নেই। তার কোনো ফিডব্যাক, উদ্যোগ দেখা যায় না।’

গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, বিলটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এটি চমৎকার উদ্যোগ। কিন্তু এই পেনশন-ব্যবস্থায় সাধারণ মানুষের সাড়া পাওয়া যাবে না। কারণ, সরকারি চাকরিজীবীরা যেভাবে পেনশন পান, তার সঙ্গে অনেক কিছুই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। মানুষ রিটার্ন কীভাবে পাবে, তা পরিষ্কার নয়। এটা অনেকটা ব্যাংকিং প্যাকেজের মতো। এই বিল পাসের আগে সাধারণ মানুষের মতামত নেওয়া উচিত।

‘শিয়ালের কাছে মুরগি বর্গা রাখার মতো’

জাতীয় পাটির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, শিয়ালের কাছে মুরগি বর্গা রাখার মতো। মানুষ ব্যাংকে টাকা রাখবে আর ব্যাংক দেদার টাকা বিদেশে পাচার করবে। ব্যাংকগুলো মানুষের আস্থা হারিয়েছে। এক ব্যাংকের পরিচালক আরেক ব্যাংক থেকে টাকা নিচ্ছেন। ব্যাংকগুলো বারভূঁইয়াদের কাছে চলে গেছে। সব সুবিধা পাচ্ছেন ঋণখেলাপিরা। এ সময় বিদেশে টাকা পাচার নিয়ে প্রথম আলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, দেখার কেউ নেই। যারা টাকা পাচার করছে, তাদের উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।

‘বিলটি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক’

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, বিলটি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সংবিধানে বল হয়েছে, ‘সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার, অর্থাৎ বেকারত্ব, ব্যাধি বা পঙ্গুত্বজনিত কিংবা বৈধব্য, মাতৃপিতৃহীনতা বা বার্ধক্যজনিত কিংবা অনুরূপ অন্যান্য পরিস্থিতিজনিত আয়ত্তাতীত কারণে অভাবগ্রস্ততার ক্ষেত্রে সরকারি সাহায্যলাভের অধিকার।’ এগুলো নাগরিকের অধিকার। কিন্তু এই আইনে বলা হচ্ছে, মানুষের কাছ থেকে চাঁদা নিয়ে সরকার আবার ফেরত দেবে। এই বিল পাস করার কোনো সুযোগ নেই।

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, আপাতদৃষ্টে আইনটি ভালো। কিন্তু বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যেভাবে প্রভিডেন্ট করে, এটি তার বাইরে কিছু বলে মনে হয় না। সরকার কী মুনাফা দেবে, তা পরিষ্কার নয়। তিনিও দাবি করেন, এ আইন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

জাতীয় পার্টির আরেক সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমানও দাবি করেন, এই বিলের সংবিধানের সঙ্গে মিল নেই।

স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বলেন, তার এক শিক্ষক ৩৬ বছর চাকরি করার পর এখনো পেনশনের টাকা তুলতে পারেননি। জনগণ পেনশনের টাকা জমা দেবেন কিন্তু তারা তো অফিসের বারান্দাই চেনেন না। এই টাকার নিরাপত্তা কী? যারা একবার সংসদ সদস্য হয়েছেন, তাদের জন্য আজীবন পেনশন স্কিম চালু করার দাবি জানান তিনি।

অর্থমন্ত্রী যা বললেন

বিরোধী দলের সদস্যদের সমালোচনার জবাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বিলটি আনার আগে অনেক আলোচনা করা হয়েছে। যারা লিখিত মতামত দিয়েছিলেন, তাদের মতামত আমলে নেওয়া হয়েছে। সংসদীয় কমিটিতেও বিলটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বিলটি গ্রহণযোগ্যতা পাবে বিবেচনায় এটি সংসদে আনা হয়েছে।

বিলের ওপর আনা জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি শেষে বিলটি কণ্ঠভোটে পাস হয়।

বিলে একটি জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ গঠনের বিধান রাখা হয়েছে। এই কর্তৃপক্ষে একজন নির্বাহী চেয়ারম্যান ও চারজন সদস্য থাকবেন। তাদের নিয়োগ করবে সরকার। বিলে ১৬ সদস্যের একটি পরিচালনা পর্ষদ গঠনের বিধান রাখা হয়েছে। এর চেয়ারম্যান হবেন অর্থমন্ত্রী। বিলে বলা হয়েছে, বিধি দ্বারা নির্ধারিত এক বা একাধিক তফসিলি ব্যাংক জাতীয় পেনশন তহবিলের ব্যাংকার হিসেবে কাজ করবে।

প্রাথমিকে প্রধান শিক্ষক নিয়োগে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

শামীম ওসমান ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের দুই মামলা

৯৬ বাংলাদেশিকে বিমানবন্দর থেকে ফেরত পাঠিয়েছে মালয়েশিয়া

বাংলা একাডেমি সংস্কার কমিটি থেকে সরে দাঁড়ালেন ব্রাত্য রাইসু

গুলিস্তানে দুই ট্রাকের মাঝখানে চাপা পড়ে চালকের সহকারী নিহত

আগস্ট থেকে ১৫ টাকা কেজিতে চাল পাবে ৫৫ লাখ পরিবার: খাদ্য উপদেষ্টা

ছবি

সব ঘটনা সাম্প্রদায়িক নয়’—সংখ্যালঘু সহিংসতা নিয়ে পুলিশের ব্যাখ্যা

ভাঙ্গুড়ায় তিন বছরের শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা

ছবি

শ্রীমঙ্গলে ডিনস্টন সিমেট্রি যেন এক টুকরা স্কটল্যান্ড

বিএসবির বাশারকে আদালত চত্বরে ঘুষি, লাথি, ডিম নিক্ষেপ

দুই বিভাগে অতিভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস

গ্রেনেড হামলা মামলায় আসামিদের খালাসের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি কাল

চিকুনগুনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জাও ছড়াচ্ছে ডেঙ্গুর পাশাপাশি

বুধবার বেরোবি শিক্ষার্থী আবু সাইদ দিবস

ছবি

ফেনীর বন্যায় ১৪৬ কোটি টাকার ক্ষতি, এখনও পানিবন্দী সাত হাজার পরিবার

বড়পুকুরিয়ার ‘উচ্চ মানের’ কয়লা ‘কম দামে’ নিচ্ছে পিডিবি

বাণিজ্যের নামে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গোপন চুক্তি চলবে না: সিপিবি

রিভিউ হবে ইন্ডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্লান্টের চুক্তি

মিটফোর্ডে সোহাগ হত্যা: ফের ৫ দিনের রিমান্ডে মহিন

ছবি

‘জাতীয় সংস্কারক’ উপাধি পেতে ইচ্ছুক নন অধ্যাপক ইউনূস

নিবন্ধনের শর্ত পূরণে ব্যর্থ এনসিপিসহ ১৪৪ দল: ইসি

তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় ঐকমত্য, পরিবর্তনে লাগবে গণভোট

ছবি

নতুন নীতিমালায় পিস্তল-রাইফেলের লাইসেন্স ও নবায়নে বাড়ল শর্ত ও ফি

ছবি

শহীদদের স্মরণে সরকারি-বেসরকারি ভবনে অর্ধনমিত থাকবে জাতীয় পতাকা

ছবি

দলগুলোর মতবিরোধে উচ্চকক্ষ নিয়ে রোববার সিদ্ধান্ত ঘোষণা

ছবি

বদলির আদেশ অমান্য ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণে বরখাস্ত ৮ কর্মকর্তা

ছবি

তিস্তা রক্ষায় জনগণের দাবি পরিকল্পনায় যুক্ত করা হয়েছে: পরিবেশ উপদেষ্টা

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রসহ পাঁচ দেশে প্রবাসী ভোটার তালিকাভুক্তির উদ্যোগ

ছবি

খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে আরও ৫ লাখ পরিবার যুক্ত, শুরু অগাস্টে

ছবি

বাংলা একাডেমি সংস্কার কমিটি থেকে সরে দাঁড়ালেন ব্রাত্য রাইসু

ছবি

শর্ত পূরণের ব্যর্থতায় মালয়েশিয়া থেকে ৯৬ বাংলাদেশি ফেরত

ছবি

জাতীয় ঐকমত্যে ব্যর্থতা হলে দায় সবার: আলী রীয়াজ

ছবি

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

ছবি

‘সংস্কার উদ্যোগের প্রশংসা’ করলেন বিশ্ব ব্যাংক ভাইস প্রেসিডেন্ট

ছবি

ভারী বৃষ্টির সম্ভবনা, নদী ও সমুদ্র বন্দরে সতর্ক সংকেত জারি

ছবি

মধ্যরাতের আকাশে ‘ড্রোন শো’তে ‘জুলাই স্মৃতি’

tab

জাতীয়

সবাইকে পেনশনের আওতায় আনতে সংসদে বিল পাস

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

মঙ্গলবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৩

দেশের সব প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিককে পেনশন-ব্যবস্থার আওতায় আনতে জাতীয় সংসদে ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা বিল-২০২৩’ পাস করা হয়েছে। বর্তমানে শুধু সরকারি কর্মচারীরা অবসরের পর পেনশন-সুবিধা পান। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল, সবার জন্য পেনশন চালু করা হবে। এই বিল পাস হওয়ার ফলে সবার জন্য পেনশন স্কিম চালু করার আইনি ভিত্তি তৈরি হলো।

অবশ্য কোনো ব্যক্তিকে মাসিক পেনশন-সুবিধা পেতে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর ধারাবাহিকভাবে কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দিতে হবে। এ চাঁদার হার কত হবে, তা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। আইন হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এটি নির্ধারণ করবে। মাসিক বা ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে চাঁদা দেওয়া যাবে এবং অগ্রিম ও কিস্তিতেও চাঁদা দেওয়ার সুযোগ থাকবে।

আজ মঙ্গলবার সংসদ অধিবেশনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বিলটি পাসের প্রস্তাব করলে কণ্ঠভোটে তা পাস হয়। এর আগে বিকেলে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের মুলতবি বৈঠক শুরু হয়।

এ উদ্যোগের প্রশংসা করার পাশাপাশি বিরোধী দলের একাধিক সংসদ সদস্য (জাপা) বলেছেন, এই পেনশন-ব্যবস্থা ‘ব্যাংকের ডিপিএস স্কিমের মতো’। জনগণ চাঁদা দেওয়ার পর সরকার কী পরিমাণ অর্থ দেবে, সরকারের অংশগ্রহণ কী হবে, তা আইনে পরিষ্কার নয়। এই আইন ‘সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক’ বলেও দাবি করেন কেউ কেউ। বিলটিকে ‘শিয়ালের কাছে মুরগি বর্গা’ রাখার সঙ্গেও তুলনা করেছেন জাপার এক সংসদ সদস্য।

বিলে যা আছে

বিলে বলা হয়েছে, জাতীয় পরিচয়পত্রকে ভিত্তি ধরে সর্বজনীন পেনশনের আওতায় ১৮ বছর বা তার বেশি বয়স থেকে ৫০ বছর বয়সী সব বাংলাদেশি নাগরিক অংশ নিতে পারবেন। বিশেষ বিবেচনায় পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিদেরও পেনশন স্কিমের আওতায় রাখার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে মাসিক পেনশন-সুবিধা পেতে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর চাঁদাদাতাকে ধারাবাহিকভাবে কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দিতে হবে। ১০ বছর চাঁদা দেওয়া শেষে তিনি যে বয়সে উপনীত হবেন, সে বয়স থেকে আজীবন পেনশন পাবেন। বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীরাও এতে অংশ নিতে পারবেন।

আইনে বলা হয়েছে, চাঁদাদাতা ধারাবাহিকভাবে কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দিলে মাসিক পেনশন পাবেন। চাঁদাদাতার বয়স ৬০ বছর পূর্তিতে পেনশন তহবিলে পুঞ্জীভূত মুনাফাসহ জমার বিপরীতে পেনশন দেওয়া হবে। একজন পেনশনার আজীবন পেনশন–সুবিধা পাবেন। সরকার গেজেট জারি করে বাধ্যতামূলক না করা পর্যন্ত এই পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণ হবে ঐচ্ছিক।

বিলে বলা হয়েছে, পেনশনে থাকাকালে কোনো ব্যক্তি ৭৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে মারা গেলে তার নমিনি অবশিষ্ট সময়ের জন্য (মূল পেনশনারের বয়স ৭৫ বছর পর্যন্ত) মাসিক পেনশন প্রাপ্য হবেন। চাঁদাদাতা কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দেওয়ার আগে মারা গেলে জমাকৃত অর্থ মুনাফাসহ তার নমিনিকে ফেরত দেওয়া হবে।

পেনশন তহবিলে জমা দেওয়া অর্থ কোনো পর্যায়ে এককালীন তোলার প্রয়োজন পড়লে চাঁদাদাতা আবেদন করলে জমা দেওয়া অর্থের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ঋণ হিসেবে তুলতে পারবেন। যা ফিসহ পরিশোধ করতে হবে। পেনশন থেকে পাওয়া অর্থ আয়করমুক্ত থাকবে। পেনশনের জন্য নির্ধারিত চাঁদা বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য করে কর রেয়াতের জন্য বিবেচিত হবে।

বিলে বলা হয়েছে, নিম্ন আয়সীমার নিচের নাগরিকদের অথবা অসচ্ছল চাঁদাদাতার ক্ষেত্রে পেনশন তহবিলে মাসিক চাঁদার একটি অংশ সরকার অনুদান হিসেবে দিতে পারবে। বিলে সর্বজনীন পেনশন-পদ্ধতিতে সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত অথবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অংশ নেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কর্মী ও প্রতিষ্ঠানের চাঁদার অংশ কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করবে। তবে সরকার সিদ্ধান্ত না দেওয়া পর্যন্ত সরকারি ও আধা সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিরা এই পেনশন–ব্যবস্থার আওতাবহির্ভূত থাকবেন।

‘এটি ব্যাংকের ডিপিএস স্কিমের মতো’

বিল পাসের আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘বিলের কথাগুলো ভালো। কিন্তু এই পেনশন স্কিমে সরকারের অংশগ্রহণ কী? সরকারের কোনো অংশগ্রহণ নেই। এটা ব্যাংকের ডিপিএস স্কিমের মতো। গুঞ্জন আছে, সরকারের কি টাকার অভাব হয়েছে যে জনগণের কাছ থেকে টাকা নিয়ে চলবে?’

টাকা পাচার, বিদেশে বাংলাদেশিদের বাড়ি কেনাসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করে মুজিবুল হক বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী কথা কম বলেন। বোবার শত্রু কম। কিন্তু অর্থমন্ত্রীর কানে কথা পৌঁছায় কি না, জানা নেই। তার কোনো ফিডব্যাক, উদ্যোগ দেখা যায় না।’

গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, বিলটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এটি চমৎকার উদ্যোগ। কিন্তু এই পেনশন-ব্যবস্থায় সাধারণ মানুষের সাড়া পাওয়া যাবে না। কারণ, সরকারি চাকরিজীবীরা যেভাবে পেনশন পান, তার সঙ্গে অনেক কিছুই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। মানুষ রিটার্ন কীভাবে পাবে, তা পরিষ্কার নয়। এটা অনেকটা ব্যাংকিং প্যাকেজের মতো। এই বিল পাসের আগে সাধারণ মানুষের মতামত নেওয়া উচিত।

‘শিয়ালের কাছে মুরগি বর্গা রাখার মতো’

জাতীয় পাটির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, শিয়ালের কাছে মুরগি বর্গা রাখার মতো। মানুষ ব্যাংকে টাকা রাখবে আর ব্যাংক দেদার টাকা বিদেশে পাচার করবে। ব্যাংকগুলো মানুষের আস্থা হারিয়েছে। এক ব্যাংকের পরিচালক আরেক ব্যাংক থেকে টাকা নিচ্ছেন। ব্যাংকগুলো বারভূঁইয়াদের কাছে চলে গেছে। সব সুবিধা পাচ্ছেন ঋণখেলাপিরা। এ সময় বিদেশে টাকা পাচার নিয়ে প্রথম আলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, দেখার কেউ নেই। যারা টাকা পাচার করছে, তাদের উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।

‘বিলটি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক’

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, বিলটি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সংবিধানে বল হয়েছে, ‘সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার, অর্থাৎ বেকারত্ব, ব্যাধি বা পঙ্গুত্বজনিত কিংবা বৈধব্য, মাতৃপিতৃহীনতা বা বার্ধক্যজনিত কিংবা অনুরূপ অন্যান্য পরিস্থিতিজনিত আয়ত্তাতীত কারণে অভাবগ্রস্ততার ক্ষেত্রে সরকারি সাহায্যলাভের অধিকার।’ এগুলো নাগরিকের অধিকার। কিন্তু এই আইনে বলা হচ্ছে, মানুষের কাছ থেকে চাঁদা নিয়ে সরকার আবার ফেরত দেবে। এই বিল পাস করার কোনো সুযোগ নেই।

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, আপাতদৃষ্টে আইনটি ভালো। কিন্তু বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যেভাবে প্রভিডেন্ট করে, এটি তার বাইরে কিছু বলে মনে হয় না। সরকার কী মুনাফা দেবে, তা পরিষ্কার নয়। তিনিও দাবি করেন, এ আইন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

জাতীয় পার্টির আরেক সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমানও দাবি করেন, এই বিলের সংবিধানের সঙ্গে মিল নেই।

স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বলেন, তার এক শিক্ষক ৩৬ বছর চাকরি করার পর এখনো পেনশনের টাকা তুলতে পারেননি। জনগণ পেনশনের টাকা জমা দেবেন কিন্তু তারা তো অফিসের বারান্দাই চেনেন না। এই টাকার নিরাপত্তা কী? যারা একবার সংসদ সদস্য হয়েছেন, তাদের জন্য আজীবন পেনশন স্কিম চালু করার দাবি জানান তিনি।

অর্থমন্ত্রী যা বললেন

বিরোধী দলের সদস্যদের সমালোচনার জবাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বিলটি আনার আগে অনেক আলোচনা করা হয়েছে। যারা লিখিত মতামত দিয়েছিলেন, তাদের মতামত আমলে নেওয়া হয়েছে। সংসদীয় কমিটিতেও বিলটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বিলটি গ্রহণযোগ্যতা পাবে বিবেচনায় এটি সংসদে আনা হয়েছে।

বিলের ওপর আনা জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি শেষে বিলটি কণ্ঠভোটে পাস হয়।

বিলে একটি জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ গঠনের বিধান রাখা হয়েছে। এই কর্তৃপক্ষে একজন নির্বাহী চেয়ারম্যান ও চারজন সদস্য থাকবেন। তাদের নিয়োগ করবে সরকার। বিলে ১৬ সদস্যের একটি পরিচালনা পর্ষদ গঠনের বিধান রাখা হয়েছে। এর চেয়ারম্যান হবেন অর্থমন্ত্রী। বিলে বলা হয়েছে, বিধি দ্বারা নির্ধারিত এক বা একাধিক তফসিলি ব্যাংক জাতীয় পেনশন তহবিলের ব্যাংকার হিসেবে কাজ করবে।

back to top