alt

জাতীয়

আবার বাড়লো বিদ্যুতের দাম

ফয়েজ আহমেদ তুষার : মঙ্গলবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৩

আইএমএফের ঋণ অনুমোদন হওয়ার দিনই বিদ্যুতের দাম আবার বাড়ালো সরকার। এবার খুচরা গ্রাহক পর্যায়ে প্রতি ইউনিট (কিলোওয়াট/ঘণ্টা) বিদ্যুতের দাম গড়ে পাঁচ শতাংশ এবং পাইকারিতে আট দশমিক শূন্য ছয় শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। সরকারের নির্বাহী আদেশে বাড়ানো বিদ্যুতের নতুন এ দাম আজ থেকে কার্যকর হবে।

গত সোমবার রাতে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) সকালে তা প্রকাশ করে বিদ্যুৎ বিভাগ। এতে বলা হয়, ভর্তুকি সমন্বয়ের জন্য বিদ্যুতের এই দাম বাড়ানো হয়েছে।

এক মাসেই (জানুয়ারি) সরকারের নির্বাহী আদেশে একবার গ্যাসের দাম এবং দুইবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলো।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু গত সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রত্যেক মাসেই গ্যাস-বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করার কথা আমরা আগেই বলেছিলাম। আমাদের আর ভর্তুকি দেয়ার সুযোগ নেই। এখন এভাবে সমন্বয়ের মধ্য দিয়েই যেতে হবে।’

আগে গণশুনানি করে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়াতো বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। সম্প্রতি আইন সংশোধন করে নিজের হাতে এই ক্ষমতা নেয় সরকার।

গত ১২ জানুয়ারি খুচরা বিদ্যুতের দাম গড়ে ৫ শতাংশ, ১৮ জানুয়ারি গ্যাসের শিল্পে ১৬০ শতাংশ, বিদ্যুৎ উৎপাদনে ১৭৮ শতাংশ ও বাণিজ্যিক খাতে ১৪ শতাংশ বাড়ানো হয় সরকারের নির্বাহী আদেশে। ৩০ জানুয়ারি নির্বাহী আদেশে আবার খুচরা বিদ্যুতের দাম গড়ে ৫ শতাংশ এবং পাইকারিতে ৮ দশমিক শতাংশ বাড়ানো হলো।

জানুয়ারি মাসের বাড়তি বিদ্যুৎ বিল গ্রাহককে ফেব্রুয়ারি মাসে দিতে হবে। ফেব্রুয়ারি মাসের বাড়তি দামের বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিল গ্রাহককে দিতে হবে মার্চ মাসে।

বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, নতুন করে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়নি। গত ১২ জানুয়ারি সরকারের নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের যে দাম বাড়ানো হয়েছে সেই জারি করা প্রজ্ঞাপন সংশোধন করে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।

আবাসিক খাতে নতুন মূল্য

আবাসিক খাতে শূন্য থেকে ৫০ ইউনিট বিদ্যুৎ যারা ব্যবহার করে তাদের অতি দরিদ্র মনে করা হয়, এদের বিদ্যুতের ধাপকে লাইফ লাইন বলা হয়।

এছাড়া বিদ্যুতের ব্যবহার ভেদে ছয় ধরনের গ্রাহক রয়েছে। যে গ্রাহক যত বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করবেন তাকে বিদ্যুতের দাম তত বেশি দিতে হবে।

৩০ জানুয়ারি জারি করা (সংশোধিত) প্রজ্ঞাপনে, শূন্য থেকে ৫০ ইউনিট ব্যবহারকারী লাইফ লাইন গ্রাহকদের বিদ্যুতের দাম ইউনিটপ্রতি ৩ টাকা ৯৪ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৪ টাকা ১৪ পয়সা করা হয়েছে।

এক্ষেত্রে প্রতি মাসে ৫০ ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী একজন গ্রাহককে ডিসেম্বর পর্যন্ত বিল দিতে হতো ১৮৭ টাকা (প্রতি ইউনিট ৩.৭৫ টাকা ধরে, ভ্যাট, ডিমান্ড চার্জ ইত্যাদি ছাড়া)।

এই গ্রাহককে একই পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহারের জন্য জানুয়ারি মাসে দিতে হবে ১৯৭ টাকা এবং ফেব্রুয়ারি মাসে দিতে হবে ২০৭ টাকা। এক মাসে দুই দফায় দাম বেড়েছে ১০ দশমিক ৪ শতাংশ।

অর্থাৎ অতি দরিদ্র শ্রেণী বা লাইফ লাইন গ্রাহকের ক্ষেত্রে ডিসেম্বরের তুলনায় ফেব্রুয়ারিতে বিদ্যুৎ বিল বাড়বে ২০ টাকা। এর সঙ্গে ভ্যাট ও অন্যান্য খরচ আগে যা ছিল, তার সঙ্গে আর কয়েক টাকা যুক্ত হবে।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, শূন্য থেকে ৭৫ ইউনিট ব্যবহারকারীর বিদ্যুতের দাম ৪ টাকা ৪০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৪ টাকা ৬২ পয়সা এবং ৭৬ থেকে ২০০ ইউনিট ব্যবহারকারীদের ৬ টাকা ১ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৬ টাকা ৩১ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে।

২০১ থেকে ৩০০ ইউনিট ব্যবহারকারীদের ৬ টাকা ৩০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৬ টাকা ৬২ পয়সা, ৩০১ থেকে ৪০০ ইউনিটের জন্য ৬ টাকা ৬৬ পয়সা থেকে বেড়ে ৬ টাকা ৯৯ পয়সা করা হয়েছে।

৪০১ থেকে ৬০০ ইউনিটের জন্য ১০ টাকা ৪৫ পয়সা থেকে বেড়ে ১০ টাকা ৯৬ পয়সা এবং ৬০০ ইউনিটের ওপরে বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী আবাসিক গ্রাহকদের বিদ্যুৎ বিল ১২ টাকা ০৩ পয়সা থেকে বেড়ে ১২ টাকা ৬৩ পয়সা করা হয়েছে।

বিদ্যুৎ সচিব যা বলছেন

বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ফেব্রুয়ারি মাসের জন্য বিদ্যুতের খুচরা গ্রাহকদের বিভিন্ন স্তরে বিভিন্নভাবে দাম বাড়ানো হয়েছে। তাতে খুচরায় গড়ে ৫ শতাংশ দাম বেড়েছে।’

তিনি বলেন, ‘পাইকারিতেও ২৩০ কেভি লাইন, ১৩২ কেভি লাইন ও ৩৩ কেভি লাইনের জন্য বিতরণ সংস্থাভেদে বিভিন্ন রকম দাম ঠিক করা হয়েছে। তাতে গড়ে ৮ দশমিক ০৬ শতাংশ দাম বেড়েছে।’

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, খুচরায় গ্রাহক পর্যায়ে গড়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ভারিত গড়ে দাঁড়াবে ৭ টাকা ৮৫ পয়সা, যা আগে ৭ টাকা ৪৮ পয়সা ছিল। আর ভারিত গড়ে পাইকারি বিদ্যুতের প্রতি ইউনিটের দাম ৬ টাকা ২০ পয়সা থেকে বেড়ে হচ্ছে ৬ টাকা ৭০ পয়সা।

প্রজ্ঞাপনে চাপ অনুযায়ী আবাসিক, সেচ বা কৃষিকাজে ব্যবহার করা পাম্প, ক্ষুদ্র শিল্প, নির্মাণ, শিক্ষা, ধর্মীয় ও দাতব্য প্রতিষ্ঠান এবং হাসপাতাল, ব্যাটারি চার্জিং স্টেশন, বাণিজ্যিক ও অফিস, শিল্প গ্রাহক শ্রেণীতে নতুন হার নির্ধারণ করা হয়েছে।

তাতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম সর্বনিম্ন ৪ টাকা ১৪ পয়সা এবং সর্বোচ্চ ১৭ টাকা ৬৪ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে।

সেচ, কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্যিক খাত

নতুন মূল্যহারে সেচ বা কৃষি কাজের জন্য ব্যবহৃত পাম্পের বিদ্যুতের জন্য দিতে হবে ৪ টাকা ৫৯ পয়সা। এক্ষেত্রে আগের দর ৪ টাকা ৩৭ থেকে বাড়ানো হয়েছে ১২ পয়সা।

ক্ষুদ্র শিল্পে ফ্যাট রেট করা হয়েছে ৯ টাকা ৪১ পয়সা (আগে ছিল ৮ টাকা ৯৬ পয়সা); অফ পিকে ৮ টাকা ৪৬ পয়সা (আগে ছিল ৮ টাকা ০৬ পয়সা) এবং পিক আওয়ারে ইউনিটপ্রতি দর নির্ধারণ করা হয়েছে ১১ টাকা ২৯ পয়সা (আগে ১০ টাকা ৭৫ পয়সা ছিল)।

বাণিজ্যিক ও অফিসের ক্ষেত্রে ফ্ল্যাট রেট ১১ টাকা ৩৬ পয়সা (আগে ছিল ১০ টাকা ৮২ পয়সা); অফপিক ১০ টাকা ২২ পয়সা (আগে ছিল ৯ টাকা ৭৩ পয়সা) এবং পিক ১৩ টাকা ৬৩ পয়সা (আগে ছিল ১২ টাকা ৯৮ পয়সা)।

এছাড়া মধ্যম, উচ্চ ও অতি উচ্চচাপে এসব শ্রেণীর গ্রাহকদের প্রতি ইউনিটের জন্য আরও বেশি টাকা গুনতে হবে।

অন্যদিকে উচ্চচাপে শিল্পের জন্য ফ্ল্যাট রেট ধরা হয়েছে ৯ টাকা ৩১ পয়সা (আগে ছিল ৮ টাকা ৮৭ পয়সা), অফ পিকে ৮ টাকা ৩৯ পয়সা (আগে ছিল ৭ টাকা ৯৯ পয়সা) এবং পিক আওয়ারে ১১ টাকা ৬৪ পয়সা (আগে ১১ টাকা ০৯ পয়সা ছিল)।

পাইকারিতে নতুন মূল্য

নতুন পাইকারি মূল্য হারে ফেব্রুয়ারিতে পিডিবির প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাগুলোর কাছে বিক্রি করবে গড়ে ৬ টাকা ৭০ পয়সায়, যা জানুয়ারিতে ৬ টাকা ২০ পয়সা ছিল। মোট ছয় কোম্পানির ২৩০ কেভি, ১৩২ কেভি ও ৩৩ কেভি লাইনের জন্য পৃথক ট্যারিফ ঠিক করা হয়েছে।

বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে ৩০ জানুয়ারি জারি হওয়া গেজেট বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ছয়টি বিতরণ সংস্থার মধ্যে পিডিবির ক্ষেত্রে ৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ, পল্লী বিদ্যুতের ক্ষেত্রে ৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ, ডিপিডিসির ক্ষেত্রে ৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ, ডেসকোর ক্ষেত্রে ৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ, ওজোপাডিকোর ক্ষেত্রে ৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ এবং নেসকোর ক্ষেত্রে ৭ দশমিক ০৬ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে।

শহরাঞ্চলে বিদ্যুৎ বিতরণে নিয়োজিত ডেসকোর ৩৩ কেভি লাইনে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুতের দাম ধরা হয়েছে সর্বোচ্চ ৮ টাকা ২৪ পয়সা, যা আগে ৭ টাকা ৭৪ পয়সা ছিল।

আর ডিপিডিসির ৩৩ কেভি লাইনের বিদ্যুতের দাম ধরা হয়েছে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা ৮ টাকা ২২ পয়সা, যা এতদিন ছিল ৭ টাকা ৭২ পয়সা।

বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সমিতিগুলোর ৩৩ কেভি লাইনের জন্য প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুতের দাম ধরা হয়েছে ৫ টাকা ৯০ পয়সা যা পাইকারি বিদ্যুতের সর্বনিম্ন দর। এতদিন এই দর ছিল ৫ টাকা ৩৯ পয়সা।

ওজোপাডিকোর ৩৩ কেভি লাইনে আগের ৬ টাকা ৬২৭৫ পয়সা থেকে ৫০ পয়সা বাড়িয়ে ৭ টাকা ১২৭৫ পয়সা করা হয়েছে। এখানে দাম বেড়েছে ৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ।

নেসকোর ৩৩ কেভি লাইনে আগের ৬ টাকা ২০৫০ পয়সা থেকে ৫০ পয়সা বাড়িয়ে ৬ টাকা ৭০৫০ পয়সা করা হয়েছে। এখানে দাম বেড়েছে ৮ দশমিক ০৫ শতাংশ।

গত ২১ নভেম্বর বিদ্যুতের পাইকারি দর ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বাড়িয়ে ৬ টাকা ২০ পয়সা নির্ধারণ করেছিল বিইআরসি। আড়াই মাসের মাথায় সরকার নির্বাহী ক্ষমতাবলে তা আরও ৮ দশমিক ০৬ শতাংশ বাড়ালো।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডে (পিডিবি) বলছে, দেশের পাইকারি বিদ্যুৎ কিনতে গিয়ে সংস্থাটির ৪০ হাজার কোটি টাকা লোকসান হবে। এর মধ্যে সরকার দেবে ১৭ হাজার কোটি টাকা। ঘাটতির বাকি টাকা দাম বাড়িয়ে পূরণ করতে হবে।

ছবি

সারাদেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি

ছবি

জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাস আর নেই

ছবি

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করা হবে : আরাফাত

স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র এবং মুজিবনগর দিবস সম্পর্কে নতুন প্রজন্মেকে জানাতে হবে

ছবি

স্থানীয় সরকার নির্বাচ‌নে ভোটার উপ‌স্থি‌তি সংসদ নির্বাচ‌নের ‌চে‌য়ে বে‌শি থাকবে

ছবি

প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

ছবি

থাইল্যান্ড সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

জুন-জুলাইয়ে দেশে ইনফ্লুয়েঞ্জার হার বেশি

মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতির ওপর নজর রাখতে বললেন প্রধানমন্ত্রী

এথেন্স সম্মেলনে দায়িত্বশীল ও টেকসই সমুদ্র ব্যবস্থাপনায় সম্মিলিত প্রয়াসের আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর

ছবি

কৃষকরাই অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি: স্পিকার

ছবি

মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতির ওপর নজর রাখার তাগিদ প্রধানমন্ত্রীর

ছবি

লালমনিরহাট সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে সাবেক ইউপি সদস্য গুলিবিদ্ধ

ছবি

তৃতীয় ধাপে ১১২ উপজেলায় ভোট ২৯ মে

ছবি

এমভি আবদুল্লাহ : ২১ নাবিক দেশে ফিরবেন জাহাজে, বাকি দুজন বিমানে

ছবি

৯৬ হাজার ৭৩৬ শিক্ষক নিয়োগে প্রক্রিয়া শুরু, আবেদনের নিয়ম

ছবি

ঢাকায় গ্রিসের দূতাবাস স্থাপন ও জনশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা

ছবি

টিসিবির তালিকা হালনাগাদ করতে চাই:বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী

ছবি

লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে গমের আবাদ কম

ছবি

ভোজ্য তেলের দাম বাড়াতে চায় ব্যবসায়ীরা আপত্তি বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীর

ছবি

অনিবন্ধিত অনলাইনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবো : তথ্য প্রতিমন্ত্রী

ছবি

জলবায়ু পরিবর্তনে দেশে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষিখাত : মন্ত্রী

ছবি

দেশে ফিরতে আরও ১০ দিন সময় লাগবে নাবিকদের

ছবি

মুক্ত এমভি আবদুল্লাহর ৩ ছবি প্রকাশ

ছবি

২ মে বসছে সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশন

ছবি

কারো যাতে ডেঙ্গু না হয় সেজন্য সবাইকে কাজ করতে হবে : স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ছবি

মুক্তিপণ দেওয়ার ছবি নিয়ে যা বললেন নৌ প্রতিমন্ত্রী

ছবি

লঞ্চে বেড়েছে ঢাকায় ফেরা যাত্রীর চাপ

ছবি

নববর্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সমৃদ্ধ ও স্মার্ট ভবিষ্যৎ নির্মাণে একযোগে কাজ করার আহ্বান অর্থ প্রতিমন্ত্রীর

ছবি

জিম্মি জাহাজটি কীভাবে মুক্ত হলো, জানাল মালিকপক্ষ

ছবি

সোমানিয়ান জলদস্যুদের কবল থেকে এমভি আব্দুল্লাহ মুক্ত ২৩ নাবিক অক্ষত

ছবি

মুক্তিপণ নিয়ে তীরে উঠেই ৮ জলদস্যু গ্রেপ্তার

ছবি

দেশের প্রতি ভালোবাসার বার্তা এমভি আব্দুল্লাহর নাবিকদের

ছবি

কত টাকায় মুক্তি পেলেন জিম্মি ২৩ বাংলাদেশি নাবিক

ছবি

সোমালিয়ার জলদস্যুদের কাছ থেকে এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক মুক্ত

ছবি

আজ পহেলা বৈশাখ,নতুন বছর বরণের দিন,বাঙালির উৎসবের দিন

tab

জাতীয়

আবার বাড়লো বিদ্যুতের দাম

ফয়েজ আহমেদ তুষার

মঙ্গলবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৩

আইএমএফের ঋণ অনুমোদন হওয়ার দিনই বিদ্যুতের দাম আবার বাড়ালো সরকার। এবার খুচরা গ্রাহক পর্যায়ে প্রতি ইউনিট (কিলোওয়াট/ঘণ্টা) বিদ্যুতের দাম গড়ে পাঁচ শতাংশ এবং পাইকারিতে আট দশমিক শূন্য ছয় শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। সরকারের নির্বাহী আদেশে বাড়ানো বিদ্যুতের নতুন এ দাম আজ থেকে কার্যকর হবে।

গত সোমবার রাতে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) সকালে তা প্রকাশ করে বিদ্যুৎ বিভাগ। এতে বলা হয়, ভর্তুকি সমন্বয়ের জন্য বিদ্যুতের এই দাম বাড়ানো হয়েছে।

এক মাসেই (জানুয়ারি) সরকারের নির্বাহী আদেশে একবার গ্যাসের দাম এবং দুইবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলো।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু গত সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রত্যেক মাসেই গ্যাস-বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করার কথা আমরা আগেই বলেছিলাম। আমাদের আর ভর্তুকি দেয়ার সুযোগ নেই। এখন এভাবে সমন্বয়ের মধ্য দিয়েই যেতে হবে।’

আগে গণশুনানি করে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়াতো বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। সম্প্রতি আইন সংশোধন করে নিজের হাতে এই ক্ষমতা নেয় সরকার।

গত ১২ জানুয়ারি খুচরা বিদ্যুতের দাম গড়ে ৫ শতাংশ, ১৮ জানুয়ারি গ্যাসের শিল্পে ১৬০ শতাংশ, বিদ্যুৎ উৎপাদনে ১৭৮ শতাংশ ও বাণিজ্যিক খাতে ১৪ শতাংশ বাড়ানো হয় সরকারের নির্বাহী আদেশে। ৩০ জানুয়ারি নির্বাহী আদেশে আবার খুচরা বিদ্যুতের দাম গড়ে ৫ শতাংশ এবং পাইকারিতে ৮ দশমিক শতাংশ বাড়ানো হলো।

জানুয়ারি মাসের বাড়তি বিদ্যুৎ বিল গ্রাহককে ফেব্রুয়ারি মাসে দিতে হবে। ফেব্রুয়ারি মাসের বাড়তি দামের বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিল গ্রাহককে দিতে হবে মার্চ মাসে।

বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, নতুন করে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়নি। গত ১২ জানুয়ারি সরকারের নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের যে দাম বাড়ানো হয়েছে সেই জারি করা প্রজ্ঞাপন সংশোধন করে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।

আবাসিক খাতে নতুন মূল্য

আবাসিক খাতে শূন্য থেকে ৫০ ইউনিট বিদ্যুৎ যারা ব্যবহার করে তাদের অতি দরিদ্র মনে করা হয়, এদের বিদ্যুতের ধাপকে লাইফ লাইন বলা হয়।

এছাড়া বিদ্যুতের ব্যবহার ভেদে ছয় ধরনের গ্রাহক রয়েছে। যে গ্রাহক যত বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করবেন তাকে বিদ্যুতের দাম তত বেশি দিতে হবে।

৩০ জানুয়ারি জারি করা (সংশোধিত) প্রজ্ঞাপনে, শূন্য থেকে ৫০ ইউনিট ব্যবহারকারী লাইফ লাইন গ্রাহকদের বিদ্যুতের দাম ইউনিটপ্রতি ৩ টাকা ৯৪ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৪ টাকা ১৪ পয়সা করা হয়েছে।

এক্ষেত্রে প্রতি মাসে ৫০ ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী একজন গ্রাহককে ডিসেম্বর পর্যন্ত বিল দিতে হতো ১৮৭ টাকা (প্রতি ইউনিট ৩.৭৫ টাকা ধরে, ভ্যাট, ডিমান্ড চার্জ ইত্যাদি ছাড়া)।

এই গ্রাহককে একই পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহারের জন্য জানুয়ারি মাসে দিতে হবে ১৯৭ টাকা এবং ফেব্রুয়ারি মাসে দিতে হবে ২০৭ টাকা। এক মাসে দুই দফায় দাম বেড়েছে ১০ দশমিক ৪ শতাংশ।

অর্থাৎ অতি দরিদ্র শ্রেণী বা লাইফ লাইন গ্রাহকের ক্ষেত্রে ডিসেম্বরের তুলনায় ফেব্রুয়ারিতে বিদ্যুৎ বিল বাড়বে ২০ টাকা। এর সঙ্গে ভ্যাট ও অন্যান্য খরচ আগে যা ছিল, তার সঙ্গে আর কয়েক টাকা যুক্ত হবে।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, শূন্য থেকে ৭৫ ইউনিট ব্যবহারকারীর বিদ্যুতের দাম ৪ টাকা ৪০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৪ টাকা ৬২ পয়সা এবং ৭৬ থেকে ২০০ ইউনিট ব্যবহারকারীদের ৬ টাকা ১ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৬ টাকা ৩১ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে।

২০১ থেকে ৩০০ ইউনিট ব্যবহারকারীদের ৬ টাকা ৩০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৬ টাকা ৬২ পয়সা, ৩০১ থেকে ৪০০ ইউনিটের জন্য ৬ টাকা ৬৬ পয়সা থেকে বেড়ে ৬ টাকা ৯৯ পয়সা করা হয়েছে।

৪০১ থেকে ৬০০ ইউনিটের জন্য ১০ টাকা ৪৫ পয়সা থেকে বেড়ে ১০ টাকা ৯৬ পয়সা এবং ৬০০ ইউনিটের ওপরে বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী আবাসিক গ্রাহকদের বিদ্যুৎ বিল ১২ টাকা ০৩ পয়সা থেকে বেড়ে ১২ টাকা ৬৩ পয়সা করা হয়েছে।

বিদ্যুৎ সচিব যা বলছেন

বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ফেব্রুয়ারি মাসের জন্য বিদ্যুতের খুচরা গ্রাহকদের বিভিন্ন স্তরে বিভিন্নভাবে দাম বাড়ানো হয়েছে। তাতে খুচরায় গড়ে ৫ শতাংশ দাম বেড়েছে।’

তিনি বলেন, ‘পাইকারিতেও ২৩০ কেভি লাইন, ১৩২ কেভি লাইন ও ৩৩ কেভি লাইনের জন্য বিতরণ সংস্থাভেদে বিভিন্ন রকম দাম ঠিক করা হয়েছে। তাতে গড়ে ৮ দশমিক ০৬ শতাংশ দাম বেড়েছে।’

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, খুচরায় গ্রাহক পর্যায়ে গড়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ভারিত গড়ে দাঁড়াবে ৭ টাকা ৮৫ পয়সা, যা আগে ৭ টাকা ৪৮ পয়সা ছিল। আর ভারিত গড়ে পাইকারি বিদ্যুতের প্রতি ইউনিটের দাম ৬ টাকা ২০ পয়সা থেকে বেড়ে হচ্ছে ৬ টাকা ৭০ পয়সা।

প্রজ্ঞাপনে চাপ অনুযায়ী আবাসিক, সেচ বা কৃষিকাজে ব্যবহার করা পাম্প, ক্ষুদ্র শিল্প, নির্মাণ, শিক্ষা, ধর্মীয় ও দাতব্য প্রতিষ্ঠান এবং হাসপাতাল, ব্যাটারি চার্জিং স্টেশন, বাণিজ্যিক ও অফিস, শিল্প গ্রাহক শ্রেণীতে নতুন হার নির্ধারণ করা হয়েছে।

তাতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম সর্বনিম্ন ৪ টাকা ১৪ পয়সা এবং সর্বোচ্চ ১৭ টাকা ৬৪ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে।

সেচ, কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্যিক খাত

নতুন মূল্যহারে সেচ বা কৃষি কাজের জন্য ব্যবহৃত পাম্পের বিদ্যুতের জন্য দিতে হবে ৪ টাকা ৫৯ পয়সা। এক্ষেত্রে আগের দর ৪ টাকা ৩৭ থেকে বাড়ানো হয়েছে ১২ পয়সা।

ক্ষুদ্র শিল্পে ফ্যাট রেট করা হয়েছে ৯ টাকা ৪১ পয়সা (আগে ছিল ৮ টাকা ৯৬ পয়সা); অফ পিকে ৮ টাকা ৪৬ পয়সা (আগে ছিল ৮ টাকা ০৬ পয়সা) এবং পিক আওয়ারে ইউনিটপ্রতি দর নির্ধারণ করা হয়েছে ১১ টাকা ২৯ পয়সা (আগে ১০ টাকা ৭৫ পয়সা ছিল)।

বাণিজ্যিক ও অফিসের ক্ষেত্রে ফ্ল্যাট রেট ১১ টাকা ৩৬ পয়সা (আগে ছিল ১০ টাকা ৮২ পয়সা); অফপিক ১০ টাকা ২২ পয়সা (আগে ছিল ৯ টাকা ৭৩ পয়সা) এবং পিক ১৩ টাকা ৬৩ পয়সা (আগে ছিল ১২ টাকা ৯৮ পয়সা)।

এছাড়া মধ্যম, উচ্চ ও অতি উচ্চচাপে এসব শ্রেণীর গ্রাহকদের প্রতি ইউনিটের জন্য আরও বেশি টাকা গুনতে হবে।

অন্যদিকে উচ্চচাপে শিল্পের জন্য ফ্ল্যাট রেট ধরা হয়েছে ৯ টাকা ৩১ পয়সা (আগে ছিল ৮ টাকা ৮৭ পয়সা), অফ পিকে ৮ টাকা ৩৯ পয়সা (আগে ছিল ৭ টাকা ৯৯ পয়সা) এবং পিক আওয়ারে ১১ টাকা ৬৪ পয়সা (আগে ১১ টাকা ০৯ পয়সা ছিল)।

পাইকারিতে নতুন মূল্য

নতুন পাইকারি মূল্য হারে ফেব্রুয়ারিতে পিডিবির প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাগুলোর কাছে বিক্রি করবে গড়ে ৬ টাকা ৭০ পয়সায়, যা জানুয়ারিতে ৬ টাকা ২০ পয়সা ছিল। মোট ছয় কোম্পানির ২৩০ কেভি, ১৩২ কেভি ও ৩৩ কেভি লাইনের জন্য পৃথক ট্যারিফ ঠিক করা হয়েছে।

বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে ৩০ জানুয়ারি জারি হওয়া গেজেট বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ছয়টি বিতরণ সংস্থার মধ্যে পিডিবির ক্ষেত্রে ৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ, পল্লী বিদ্যুতের ক্ষেত্রে ৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ, ডিপিডিসির ক্ষেত্রে ৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ, ডেসকোর ক্ষেত্রে ৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ, ওজোপাডিকোর ক্ষেত্রে ৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ এবং নেসকোর ক্ষেত্রে ৭ দশমিক ০৬ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে।

শহরাঞ্চলে বিদ্যুৎ বিতরণে নিয়োজিত ডেসকোর ৩৩ কেভি লাইনে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুতের দাম ধরা হয়েছে সর্বোচ্চ ৮ টাকা ২৪ পয়সা, যা আগে ৭ টাকা ৭৪ পয়সা ছিল।

আর ডিপিডিসির ৩৩ কেভি লাইনের বিদ্যুতের দাম ধরা হয়েছে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা ৮ টাকা ২২ পয়সা, যা এতদিন ছিল ৭ টাকা ৭২ পয়সা।

বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সমিতিগুলোর ৩৩ কেভি লাইনের জন্য প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুতের দাম ধরা হয়েছে ৫ টাকা ৯০ পয়সা যা পাইকারি বিদ্যুতের সর্বনিম্ন দর। এতদিন এই দর ছিল ৫ টাকা ৩৯ পয়সা।

ওজোপাডিকোর ৩৩ কেভি লাইনে আগের ৬ টাকা ৬২৭৫ পয়সা থেকে ৫০ পয়সা বাড়িয়ে ৭ টাকা ১২৭৫ পয়সা করা হয়েছে। এখানে দাম বেড়েছে ৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ।

নেসকোর ৩৩ কেভি লাইনে আগের ৬ টাকা ২০৫০ পয়সা থেকে ৫০ পয়সা বাড়িয়ে ৬ টাকা ৭০৫০ পয়সা করা হয়েছে। এখানে দাম বেড়েছে ৮ দশমিক ০৫ শতাংশ।

গত ২১ নভেম্বর বিদ্যুতের পাইকারি দর ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বাড়িয়ে ৬ টাকা ২০ পয়সা নির্ধারণ করেছিল বিইআরসি। আড়াই মাসের মাথায় সরকার নির্বাহী ক্ষমতাবলে তা আরও ৮ দশমিক ০৬ শতাংশ বাড়ালো।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডে (পিডিবি) বলছে, দেশের পাইকারি বিদ্যুৎ কিনতে গিয়ে সংস্থাটির ৪০ হাজার কোটি টাকা লোকসান হবে। এর মধ্যে সরকার দেবে ১৭ হাজার কোটি টাকা। ঘাটতির বাকি টাকা দাম বাড়িয়ে পূরণ করতে হবে।

back to top