alt

জাতীয়

সিলেট ওসমানী বিমানবন্দর সম্প্রসারণ

নকশায় ত্রুটি, প্রকৌশলীদের গাফিলতি ও পিডির ব্যর্থতায় শেষ হচ্ছে না প্রকল্পের কাজ

আকাশ চৌধুরী, সিলেট : শুক্রবার, ০৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

নকশায় ত্রুটি এবং তা সমাধানে অনেকদিন সময় ব্যয় ও প্রকৌশলীদের গাফিলতির কারণেই শেষ হচ্ছে না সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ প্রকল্পের কাজ। দুই হাজার ১১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সরকারের এ মেগা প্রকল্পটি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এই সময়ে তো দূরের কথা, আরও কত সময় পার করতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও তা জানে না। এতে সরকারের নতুন করে আরও কোটি কোটি টাকা গুনতে হবে। আর এই অপচয়ের জন্য সংশ্লিষ্টরাই দায়ী বলে ধরে নেয়া যায়।

২০২০ সালের ২৭ আগস্ট এই প্রকল্পের কাজ উদ্বোধন করা হয়েছিল। দুই বছর মেয়াদি এ প্রকল্প কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও পরে আগামী ২৬ মে পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোন কাজ হয়নি। বলা চলে অন্তত ২০ শতাংশ কাজও সমাপ্ত না হওয়ায় কিছুদিন আগে সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ নিয়ে তিনি বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রীকে চিঠিও দেন। সংশ্লিষ্টরা কাজের ধীরগতির কারণ উদ্ঘাটনে একটি তদন্ত কমিটি করেন। খুব শীঘ্রই কমিটি প্রতিবেদন দাখিল করবে বলে জানিয়েছেন তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। এছাড়া প্রকল্প পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, বেআইনি সুবিধার ফলে স্থানীয় ঠিকাদাররা কাজের মধ্যে নি¤œমানের পাথর ও বালু সরবরাহ করার।

প্রকল্পটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে বিশ্বের অষ্টম বৃহৎ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান চীনের বেইজিং আরবান কনস্ট্রাকশন গ্রুপ (বিইউসিজি) কো. লি.। সূত্র মতে, প্রকল্প পাসের পর শুরুতেই ঘাপলার সৃষ্টি হয় নকশা নিয়ে। এই নকশার দায়িত্বে ছিলেন সিভিল অ্যাভিয়েশনের প্রধান প্রকৌশলী আবদুল মালেক ও প্রকল্প পরিচালক (পিডি) শাহ জুলফিকার হায়দার। সূত্র বলছে, তারা নকশা তৈরির পর তাতে ত্রুটি পাওয়া যায়। পরে আরও দীর্ঘ সময় পার হয়ে যায় মূল নকশা তৈরিতে। কাজের বিলম্বের এটাও একটি কারণ ছাড়াও অদক্ষ প্রকল্প পরিচালকের ব্যর্থতাও রয়েছে। জানা গেছে, প্রকল্পটির ৭৫ ভাগ কাজ হচ্ছে পূর্তবিভাগ সংশ্লিষ্ট। বাকি ২৫ ভাগ কাজ ইলেকট্রিক্যাল-মেকানিক্যাল ও যোগাযোগ যন্ত্রাংশের। অথচ প্রকল্প পরিচালক শাহ জুলফিকার হায়দার মেকানিক্যাল ডিগ্রিধারী প্রকৌশলী। অ্যাভিয়েশন সংক্রান্ত বিষয়ে তার কোন দক্ষতাই নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী এ ধরনের প্রকল্পে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার আইকাও (ইন্টারন্যাশনাল সিভিল অ্যাভিয়েশন অর্গানাইজেশন)-এর অ্যানেক্স-১৪সহ অন্যান্য রুলস রেগুলেশন, এফএএ-এর (ফেডারেশন অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) অ্যাডভাইজরি সার্কুলার সংক্রান্ত দেশীয় ও আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড সম্পর্কে ধারণা থাকার কথা। কিন্তু এরকম একজন অদক্ষ পরিচালক কার স্বার্থে কেন এই প্রকল্পে নিয়োগ দেয়া হলো তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। এমনকি এ নিয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষও ক্ষুব্ধ।

সম্প্রতি সিভিল অ্যাভিয়েশনকে এক চিঠিতে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বলেছে, ‘ওসমানী বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পে অনুমোদিত ডিপিপির নিয়মবহির্ভূতভাবে প্রকল্প পরিচালককে (পিডি) নিয়োগ করা হয়েছে। যার ফলে প্রকল্প বাস্তবায়নে বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে। কারণ পিডি প্রেষণে নিয়োগ হওয়ায় অ্যাভিয়েশন সংক্রান্ত কাজে তিনি দক্ষ ও অভিজ্ঞ নন। এ ধরনের একটি প্রকল্পে অভিজ্ঞ কাউকে পিডি হিসেবে নিয়োগ দেয়ার দরকার ছিল। কারণ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুশাসনে বলা আছে, ওই পদের কর্মকর্তাকে অবশ্যই দক্ষ ও কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন হতে হবে।’

জানা গেছে, লন্ডন থেকে আসা আন্তর্জাতিক ফ্লাইট অবতরণ করলেও রানওয়ের সক্ষমতা না থাকায় প্রয়োজনীয় জ্বালানি ও পূর্ণ আসনের যাত্রী নিয়ে উড্ডয়ন করতে পারছে না ওই বিমানবন্দর থেকে। তাই নতুন প্রকল্পের আওতায় এখানে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ফুয়েলিং সিস্টেম স্থাপন করা হবে। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় একটি পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিকমানের টার্মিনাল ভবন নির্মাণ, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য পৃথক সাবস্টেশন স্থাপন, নিরাপত্তার জন্য ফায়ার ফাইটিং সিস্টেম, যাত্রীদের জন্য এক্সকেলেটরসহ আরও আনুষঙ্গিক কিছু কাজ রয়েছে।

এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বিমান প্রতিমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে উল্লেখ করেন, ‘গত ২৯ ডিসেম্বর সিলেট সফরকালে আমি সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উন্নয়ন কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করি। আমার ধারণা প্রকল্পটি এখন যে অবস্থায় আছে, তাতে ‘বিশেষ ব্যবস্থা ও উদ্যোগ’ না নিলে এটি আরও বিলম্বিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আমাদের দেশে প্রকল্প ব্যয় বাড়াতে উন্নয়ন কাজ বিলম্ব করার ট্রাডিশন রয়েছে।’ অবশ্য এর দু’দিন আগে ২৭ নভেম্বর যথাসময়ে শেষ না হওয়ার কারণ অনুসন্ধানে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিমান মন্ত্রণালয়। দুই সদস্যবিশিষ্ট ওই কমিটির আহ্বায়ক করা হয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (পরিকল্পনা) খলিলুর রহমানকে। কমিটির অন্য সদস্য হলেন সিনিয়র সহকারী সচিব ও সহকারী নিয়ন্ত্রক (হোটেল ও রেস্তোরাঁ সেল) আয়েশা হক। যোগাযোগ করা হলে যুগ্ম সচিব (পরিকল্পনা) খলিলুর রহমান বলেন, তদন্ত শেষ পর্যায়ে। শীঘ্রই প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। প্রতিবেদন দাখিল না হওয়া পর্যন্ত তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তবে এ বিষয়ে কথা বলতে সিভিল অ্যাভিয়েশনের প্রধান প্রকৌশলী আবদুল মালেক ও প্রকল্প পরিচালক (পিডি) শাহ জুলফিকার হায়দারকে একাধিকবার ফোন করা হলে তারা কল রিসিভ করেননি। এমনকি এ প্রতিবেদক পরিচয় দিয়ে তাদের মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠালেও তারা সাড়া দেননি।

এ বিষয়ে যোগাযাগ করা হলে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলম বলেন, কেন কাজের অগ্রগতি নেই সেজন্য একটি কমিটি তদন্ত করছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পরই এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।

ছবি

ঢাকায় গ্রিসের দূতাবাস স্থাপন ও জনশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা

ছবি

টিসিবির তালিকা হালনাগাদ করতে চাই:বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী

ছবি

লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে গমের আবাদ কম

ছবি

ভোজ্য তেলের দাম বাড়াতে চায় ব্যবসায়ীরা আপত্তি বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীর

ছবি

অনিবন্ধিত অনলাইনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবো : তথ্য প্রতিমন্ত্রী

ছবি

জলবায়ু পরিবর্তনে দেশে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষিখাত : মন্ত্রী

ছবি

দেশে ফিরতে আরও ১০ দিন সময় লাগবে নাবিকদের

ছবি

মুক্ত এমভি আবদুল্লাহর ৩ ছবি প্রকাশ

ছবি

২ মে বসছে সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশন

ছবি

কারো যাতে ডেঙ্গু না হয় সেজন্য সবাইকে কাজ করতে হবে : স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ছবি

মুক্তিপণ দেওয়ার ছবি নিয়ে যা বললেন নৌ প্রতিমন্ত্রী

ছবি

লঞ্চে বেড়েছে ঢাকায় ফেরা যাত্রীর চাপ

ছবি

নববর্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সমৃদ্ধ ও স্মার্ট ভবিষ্যৎ নির্মাণে একযোগে কাজ করার আহ্বান অর্থ প্রতিমন্ত্রীর

ছবি

জিম্মি জাহাজটি কীভাবে মুক্ত হলো, জানাল মালিকপক্ষ

ছবি

সোমানিয়ান জলদস্যুদের কবল থেকে এমভি আব্দুল্লাহ মুক্ত ২৩ নাবিক অক্ষত

ছবি

মুক্তিপণ নিয়ে তীরে উঠেই ৮ জলদস্যু গ্রেপ্তার

ছবি

দেশের প্রতি ভালোবাসার বার্তা এমভি আব্দুল্লাহর নাবিকদের

ছবি

কত টাকায় মুক্তি পেলেন জিম্মি ২৩ বাংলাদেশি নাবিক

ছবি

সোমালিয়ার জলদস্যুদের কাছ থেকে এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক মুক্ত

ছবি

আজ পহেলা বৈশাখ,নতুন বছর বরণের দিন,বাঙালির উৎসবের দিন

ছবি

চালের বস্তায় যেসব লেখা বাধ্যতামূলক করল সরকার

ছবি

নাবিকরা শিগগিরই মুক্তি পাবে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ছবি

পহেলা বৈশাখে নারীরা হেনস্তার শিকার হলে জানাবেন: র‌্যাব ডিজি

ছবি

নববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচছা, ‘সুন্দর ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে’ একযোগে কাজ করার আহবান

ছবি

বৈশাখের শুরুতে বৃষ্টির আভাস, বাড়বে গরম

ছবি

সদরঘাটে দুর্ঘটনা: দুই লঞ্চের আটক ৫

ছবি

সদরঘাটে দুর্ঘটনায় ২ লঞ্চের রুট পারমিট বাতিলসহ তদন্তে কমিটি গঠন

ছবি

ঢাকা মিরপুর চিড়িয়াখানায় হাতির আছাড়ে নিহত কিশোর

ছবি

পরিদর্শনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী: ছুটিতে হাসপাতাল কেমন চলছে?

ছবি

দেশ থেকে অপরাজনীতি চিরতরে দূর হওয়া প্রযোজন : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ছবি

আওয়ামী লীগ নিতে নয় মানুষকে দিতে এসেছে:

ঢকায় বায়তুল মোকাররমে ঈদের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত

ছবি

আজ ঈদুল ফিতর, মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব

ছবি

প্রধানমন্ত্রী ঈদের দিন গণভবনে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন

ছবি

রাষ্ট্রপতি ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন

ছবি

প্রধানমন্ত্রী দেশবাসী ও মুসলিম উম্মাহকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন

tab

জাতীয়

সিলেট ওসমানী বিমানবন্দর সম্প্রসারণ

নকশায় ত্রুটি, প্রকৌশলীদের গাফিলতি ও পিডির ব্যর্থতায় শেষ হচ্ছে না প্রকল্পের কাজ

আকাশ চৌধুরী, সিলেট

শুক্রবার, ০৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

নকশায় ত্রুটি এবং তা সমাধানে অনেকদিন সময় ব্যয় ও প্রকৌশলীদের গাফিলতির কারণেই শেষ হচ্ছে না সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ প্রকল্পের কাজ। দুই হাজার ১১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সরকারের এ মেগা প্রকল্পটি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এই সময়ে তো দূরের কথা, আরও কত সময় পার করতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও তা জানে না। এতে সরকারের নতুন করে আরও কোটি কোটি টাকা গুনতে হবে। আর এই অপচয়ের জন্য সংশ্লিষ্টরাই দায়ী বলে ধরে নেয়া যায়।

২০২০ সালের ২৭ আগস্ট এই প্রকল্পের কাজ উদ্বোধন করা হয়েছিল। দুই বছর মেয়াদি এ প্রকল্প কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও পরে আগামী ২৬ মে পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোন কাজ হয়নি। বলা চলে অন্তত ২০ শতাংশ কাজও সমাপ্ত না হওয়ায় কিছুদিন আগে সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ নিয়ে তিনি বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রীকে চিঠিও দেন। সংশ্লিষ্টরা কাজের ধীরগতির কারণ উদ্ঘাটনে একটি তদন্ত কমিটি করেন। খুব শীঘ্রই কমিটি প্রতিবেদন দাখিল করবে বলে জানিয়েছেন তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। এছাড়া প্রকল্প পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, বেআইনি সুবিধার ফলে স্থানীয় ঠিকাদাররা কাজের মধ্যে নি¤œমানের পাথর ও বালু সরবরাহ করার।

প্রকল্পটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে বিশ্বের অষ্টম বৃহৎ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান চীনের বেইজিং আরবান কনস্ট্রাকশন গ্রুপ (বিইউসিজি) কো. লি.। সূত্র মতে, প্রকল্প পাসের পর শুরুতেই ঘাপলার সৃষ্টি হয় নকশা নিয়ে। এই নকশার দায়িত্বে ছিলেন সিভিল অ্যাভিয়েশনের প্রধান প্রকৌশলী আবদুল মালেক ও প্রকল্প পরিচালক (পিডি) শাহ জুলফিকার হায়দার। সূত্র বলছে, তারা নকশা তৈরির পর তাতে ত্রুটি পাওয়া যায়। পরে আরও দীর্ঘ সময় পার হয়ে যায় মূল নকশা তৈরিতে। কাজের বিলম্বের এটাও একটি কারণ ছাড়াও অদক্ষ প্রকল্প পরিচালকের ব্যর্থতাও রয়েছে। জানা গেছে, প্রকল্পটির ৭৫ ভাগ কাজ হচ্ছে পূর্তবিভাগ সংশ্লিষ্ট। বাকি ২৫ ভাগ কাজ ইলেকট্রিক্যাল-মেকানিক্যাল ও যোগাযোগ যন্ত্রাংশের। অথচ প্রকল্প পরিচালক শাহ জুলফিকার হায়দার মেকানিক্যাল ডিগ্রিধারী প্রকৌশলী। অ্যাভিয়েশন সংক্রান্ত বিষয়ে তার কোন দক্ষতাই নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী এ ধরনের প্রকল্পে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার আইকাও (ইন্টারন্যাশনাল সিভিল অ্যাভিয়েশন অর্গানাইজেশন)-এর অ্যানেক্স-১৪সহ অন্যান্য রুলস রেগুলেশন, এফএএ-এর (ফেডারেশন অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) অ্যাডভাইজরি সার্কুলার সংক্রান্ত দেশীয় ও আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড সম্পর্কে ধারণা থাকার কথা। কিন্তু এরকম একজন অদক্ষ পরিচালক কার স্বার্থে কেন এই প্রকল্পে নিয়োগ দেয়া হলো তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। এমনকি এ নিয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষও ক্ষুব্ধ।

সম্প্রতি সিভিল অ্যাভিয়েশনকে এক চিঠিতে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বলেছে, ‘ওসমানী বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পে অনুমোদিত ডিপিপির নিয়মবহির্ভূতভাবে প্রকল্প পরিচালককে (পিডি) নিয়োগ করা হয়েছে। যার ফলে প্রকল্প বাস্তবায়নে বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে। কারণ পিডি প্রেষণে নিয়োগ হওয়ায় অ্যাভিয়েশন সংক্রান্ত কাজে তিনি দক্ষ ও অভিজ্ঞ নন। এ ধরনের একটি প্রকল্পে অভিজ্ঞ কাউকে পিডি হিসেবে নিয়োগ দেয়ার দরকার ছিল। কারণ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুশাসনে বলা আছে, ওই পদের কর্মকর্তাকে অবশ্যই দক্ষ ও কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন হতে হবে।’

জানা গেছে, লন্ডন থেকে আসা আন্তর্জাতিক ফ্লাইট অবতরণ করলেও রানওয়ের সক্ষমতা না থাকায় প্রয়োজনীয় জ্বালানি ও পূর্ণ আসনের যাত্রী নিয়ে উড্ডয়ন করতে পারছে না ওই বিমানবন্দর থেকে। তাই নতুন প্রকল্পের আওতায় এখানে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ফুয়েলিং সিস্টেম স্থাপন করা হবে। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় একটি পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিকমানের টার্মিনাল ভবন নির্মাণ, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য পৃথক সাবস্টেশন স্থাপন, নিরাপত্তার জন্য ফায়ার ফাইটিং সিস্টেম, যাত্রীদের জন্য এক্সকেলেটরসহ আরও আনুষঙ্গিক কিছু কাজ রয়েছে।

এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বিমান প্রতিমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে উল্লেখ করেন, ‘গত ২৯ ডিসেম্বর সিলেট সফরকালে আমি সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উন্নয়ন কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করি। আমার ধারণা প্রকল্পটি এখন যে অবস্থায় আছে, তাতে ‘বিশেষ ব্যবস্থা ও উদ্যোগ’ না নিলে এটি আরও বিলম্বিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আমাদের দেশে প্রকল্প ব্যয় বাড়াতে উন্নয়ন কাজ বিলম্ব করার ট্রাডিশন রয়েছে।’ অবশ্য এর দু’দিন আগে ২৭ নভেম্বর যথাসময়ে শেষ না হওয়ার কারণ অনুসন্ধানে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিমান মন্ত্রণালয়। দুই সদস্যবিশিষ্ট ওই কমিটির আহ্বায়ক করা হয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (পরিকল্পনা) খলিলুর রহমানকে। কমিটির অন্য সদস্য হলেন সিনিয়র সহকারী সচিব ও সহকারী নিয়ন্ত্রক (হোটেল ও রেস্তোরাঁ সেল) আয়েশা হক। যোগাযোগ করা হলে যুগ্ম সচিব (পরিকল্পনা) খলিলুর রহমান বলেন, তদন্ত শেষ পর্যায়ে। শীঘ্রই প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। প্রতিবেদন দাখিল না হওয়া পর্যন্ত তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তবে এ বিষয়ে কথা বলতে সিভিল অ্যাভিয়েশনের প্রধান প্রকৌশলী আবদুল মালেক ও প্রকল্প পরিচালক (পিডি) শাহ জুলফিকার হায়দারকে একাধিকবার ফোন করা হলে তারা কল রিসিভ করেননি। এমনকি এ প্রতিবেদক পরিচয় দিয়ে তাদের মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠালেও তারা সাড়া দেননি।

এ বিষয়ে যোগাযাগ করা হলে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলম বলেন, কেন কাজের অগ্রগতি নেই সেজন্য একটি কমিটি তদন্ত করছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পরই এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।

back to top