উপজেলা চেয়ারম্যানদের ওপর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) একচ্ছত্র কর্তৃত্ব আর থাকল না। এখন থেকে উপজেলা পরিষদ চালাবেন জনপ্রতিনিধিরা। আর সাচিবিক সহায়তা দেবেন ইউএনওরা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা উপজেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা থাকার বিধান সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করে বুধবার (২৯ মার্চ) রায় দিয়েছে উচ্চ আদালত। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করে।
রায়ে ইউএনওদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পদ সংক্রান্ত উপজেলা পরিষদ আইনের ৩৩ ধারা বাতিল করা হয়। এছাড়া রায়ে বিভিন্ন আমন্ত্রণপত্রে উপজেলা পরিষদ না লিখে উপজেলা প্রশাসন লেখার সিদ্ধান্তকেও অবৈধ ঘোষণা করা হয়। রায় অনুযায়ী এখন থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দিয়েই উপজেলা পরিষদ পরিচালিত হবে। উপজেলা পরিষদের কোন কার্যক্রম উপজেলা প্রশাসনের ব্যানারে হবে না।
আইনের ৩৩(১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হবেন এবং তিনি পরিষদকে সাচিবিক সহায়তা দেবেন। (২) পরিষদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন, আর্থিক শৃঙ্খলা প্রতিপালন এবং বিধি মাধ্যমে নির্ধারিত অন্যান্য কার্যাবলি পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা সম্পাদন করবেন।’
রায় ঘোষণার পর রিটের পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার হাসান এমএস আজিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘উপজেলা পরিষদে একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি থাকা সত্ত্বেও একজন নির্বাহী কর্মকর্তাকে বেশি ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। এটা সাংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ কারণে ৩৩ ধারা বাতিল করেছেন আদালত। এরফলে এখন থেকে উপজেলা পরিষদ চালাবেন জনপ্রতিনিধিরা। আর ইউএনওরা সাচিবিক সহায়তা দেবেন। তবে সাচিবিক দায়িত্ব পালন করলেও তারা উপজেলা পরিষদের জবাবদিহির মধ্যে থাকবে। আর চিঠিপত্রে এখন থেকে উপেজলা প্রশাসন নয়, উপজেলা পরিষদ ব্যবহার করতে হবে।’
২০২০ সালের ৭ ডিসেম্বর উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও দুমকী উপজেলা চেয়ারম্যান হারুন-অর-রশিদ ও অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মনোহরদী উপজেলা চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম খান, গাজীপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান রিনা পারভীন, কালিয়াকৈর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সেলিম আহম্মেদ ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রাশেদা আক্তার এ সংক্রান্ত রিট দায়ের করেন।
পরে ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি উপজেলা পরিষদে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পদ সংক্রান্ত উপজেলা পরিষদ আইনের ৩৩ ধারা কেন বাতিল করা হবে না, জানতে চেয়ে রুল জারি করে আদালত। বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রুল জারি করে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব, স্থানীয় সরকার সচিবসহ ১৫ বিবাদীকে ওই রুলের জবাব দিতে বলা হয়। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি ও ব্যারিস্টার হাসান এমএস আজিম। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মেহেদী হাছান চৌধুরী।
ব্যারিস্টার হাসান এমএস আজিম বলেন, ‘মাঠ প্রশাসন কোন চিঠিপত্র লিখলে বা অনুষ্ঠান করলে দাওয়াতপত্র বা ব্যানারে উপজেলা পরিষদ না লিখে উপজেলা প্রশাসন লিখছে। এর মাধ্যমে ইউএনওরা স্থানীয় সরকারের ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। এছাড়া সরকারি কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে যতগুলো কমিটি গঠন করা হয় তার সবগুলোতে ইউএনওকে চেয়ারম্যান করা হয় এবং উপজেলা চেয়ারম্যানদের করা হয় উপদেষ্টা। আবার স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় উল্লেখ থাকে ইউএনও ইচ্ছে করলেই আরও সদস্য অন্তর্ভুক্ত করতে পারবেন। এর মধ্যদিয়ে উপজেলা পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের প্রায় নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়। এমনি অনেক ক্ষেত্রে আয়-ব্যয়ের হিসাবও তাদের দেয়া হয় না। যা সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক ও স্থানীয় সরকার পদ্ধতির চেতনার পরিপন্থী।’
বুধবার, ২৯ মার্চ ২০২৩
উপজেলা চেয়ারম্যানদের ওপর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) একচ্ছত্র কর্তৃত্ব আর থাকল না। এখন থেকে উপজেলা পরিষদ চালাবেন জনপ্রতিনিধিরা। আর সাচিবিক সহায়তা দেবেন ইউএনওরা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা উপজেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা থাকার বিধান সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করে বুধবার (২৯ মার্চ) রায় দিয়েছে উচ্চ আদালত। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করে।
রায়ে ইউএনওদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পদ সংক্রান্ত উপজেলা পরিষদ আইনের ৩৩ ধারা বাতিল করা হয়। এছাড়া রায়ে বিভিন্ন আমন্ত্রণপত্রে উপজেলা পরিষদ না লিখে উপজেলা প্রশাসন লেখার সিদ্ধান্তকেও অবৈধ ঘোষণা করা হয়। রায় অনুযায়ী এখন থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দিয়েই উপজেলা পরিষদ পরিচালিত হবে। উপজেলা পরিষদের কোন কার্যক্রম উপজেলা প্রশাসনের ব্যানারে হবে না।
আইনের ৩৩(১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হবেন এবং তিনি পরিষদকে সাচিবিক সহায়তা দেবেন। (২) পরিষদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন, আর্থিক শৃঙ্খলা প্রতিপালন এবং বিধি মাধ্যমে নির্ধারিত অন্যান্য কার্যাবলি পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা সম্পাদন করবেন।’
রায় ঘোষণার পর রিটের পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার হাসান এমএস আজিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘উপজেলা পরিষদে একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি থাকা সত্ত্বেও একজন নির্বাহী কর্মকর্তাকে বেশি ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। এটা সাংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ কারণে ৩৩ ধারা বাতিল করেছেন আদালত। এরফলে এখন থেকে উপজেলা পরিষদ চালাবেন জনপ্রতিনিধিরা। আর ইউএনওরা সাচিবিক সহায়তা দেবেন। তবে সাচিবিক দায়িত্ব পালন করলেও তারা উপজেলা পরিষদের জবাবদিহির মধ্যে থাকবে। আর চিঠিপত্রে এখন থেকে উপেজলা প্রশাসন নয়, উপজেলা পরিষদ ব্যবহার করতে হবে।’
২০২০ সালের ৭ ডিসেম্বর উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও দুমকী উপজেলা চেয়ারম্যান হারুন-অর-রশিদ ও অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মনোহরদী উপজেলা চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম খান, গাজীপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান রিনা পারভীন, কালিয়াকৈর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সেলিম আহম্মেদ ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রাশেদা আক্তার এ সংক্রান্ত রিট দায়ের করেন।
পরে ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি উপজেলা পরিষদে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পদ সংক্রান্ত উপজেলা পরিষদ আইনের ৩৩ ধারা কেন বাতিল করা হবে না, জানতে চেয়ে রুল জারি করে আদালত। বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রুল জারি করে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব, স্থানীয় সরকার সচিবসহ ১৫ বিবাদীকে ওই রুলের জবাব দিতে বলা হয়। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি ও ব্যারিস্টার হাসান এমএস আজিম। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মেহেদী হাছান চৌধুরী।
ব্যারিস্টার হাসান এমএস আজিম বলেন, ‘মাঠ প্রশাসন কোন চিঠিপত্র লিখলে বা অনুষ্ঠান করলে দাওয়াতপত্র বা ব্যানারে উপজেলা পরিষদ না লিখে উপজেলা প্রশাসন লিখছে। এর মাধ্যমে ইউএনওরা স্থানীয় সরকারের ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। এছাড়া সরকারি কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে যতগুলো কমিটি গঠন করা হয় তার সবগুলোতে ইউএনওকে চেয়ারম্যান করা হয় এবং উপজেলা চেয়ারম্যানদের করা হয় উপদেষ্টা। আবার স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় উল্লেখ থাকে ইউএনও ইচ্ছে করলেই আরও সদস্য অন্তর্ভুক্ত করতে পারবেন। এর মধ্যদিয়ে উপজেলা পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের প্রায় নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়। এমনি অনেক ক্ষেত্রে আয়-ব্যয়ের হিসাবও তাদের দেয়া হয় না। যা সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক ও স্থানীয় সরকার পদ্ধতির চেতনার পরিপন্থী।’