alt

জাতীয়

সামাজিক ভাতার ১৫০০ কোটি টাকা খাচ্ছে অযোগ্যরা

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : রোববার, ৩০ এপ্রিল ২০২৩

সামাজিক ভাতাপ্রাপ্তদের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ বয়স্ক ও ৩৩ শতাংশ বিধবা অযোগ্য সুবিধাভোগী রয়েছে। যার মাধ্যমে অযোগ্য সুবিধাভোগীদের জন্য ব্যয় হয় প্রায় ১৫০০ কোটি টাকা। যা প্রতিরোধে কার্যকরী পারিবারিক জরিপ করার দাবি করেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।

রোববার (৩০ এপ্রিল) রাজধানীর মহাখালীতে সিপিডি আয়োজিত এক সেমিনারে এসব তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে এ সংক্রান্ত গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ও শামীম আলম শিবলী। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।

সিপিডির গবেষণায় উঠে আসে, স্থানীয় পর্যায়ে বয়স্ক ও বিধবা ভাতা কার্ড করতে গিয়ে একজন উপকারভোগী সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিয়েছেন। আর এসব ঘুষ নিয়েছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ও সরকারের কর্মকর্তারা।

সিপিডি মনে করে, ওই অপব্যয় রোধ করা গেলে শতকরা ৪৫ শতাংশ প্রকৃত যোগ্যদের ভাতার আওতায় আনা সম্ভব। একই সঙ্গে যোগ্য অ-সুবিধাভোগীদের ভাতার আওতায় আনতে বরাদ্দ বাড়ানোরও দাবি করেছে সংস্থাটি।

সিপিডি বলছে, বর্তমানে বয়স্ক ও বিধবা ভাতার ক্ষেত্রে মাসে ৫০০ টাকা ও শিক্ষা উপবৃত্তির জন্য মাসে ১৫০ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। সামাজিক ভাতাপ্রাপ্তদের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ বয়স্ক ও ৩৩ শতাংশ বিধবা অযোগ্য সুবিধাভোগী রয়েছে। তাদের মধ্যে আবার প্রায় ১২ শতাংশ পেনশন, ভিজিডি বা অন্যান্য ভাতা নিচ্ছেন। এর মাধ্যমে প্রায় ১৫০০ কোটি টাকা অযোগ্য সুবিধাভোগীদের জন্য ব্যয় করা হচ্ছে। যা প্রতিরোধ করা প্রয়োজন। তাই প্রকৃত দুস্থ ও আর্থিক দিক দিয়ে দুর্বলদের চিহ্নিত করতে দারিদ্র্যপ্রবণ এলাকায় একটি কার্যকরী পারিবারিক জরিপ করা উচিত। অন্যদিকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করা ও যথাযথ কাগজপত্রের অভাবে ৫ থেকে ৩০ শতাংশ ছাত্র-ছাত্রী উপবৃত্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাদেরকেও ওই সুবিধার আওতায় আনা প্রয়োজন।

সিপিডির তথ্যানুযায়ী, যোগ্য অ-সুবিধাভোগীদের ভাতার আওতায় আনতে অতিরিক্ত ৪ হাজার ৩০২ কোটি টাকা প্রয়োজন। এদিকে অযোগ্যদের পেছনে ১৫০০ কোটি টাকা অপব্যবহার হচ্ছে। তা রোধ করে এ বিপুল পরিমাণ অর্থ যোগ্যদের পেছনে ব্যয় করা যেতে পারে। আর এই ১৫০০ কোটি টাকার মাধ্যমে প্রকৃত যোগ্য এমন ৪৫ শতাংশ ব্যক্তিকে ভাতার আওতায় আনা সম্ভব।

সিপিডি মনে করছে, বর্তমান সুবিধাভোগীর প্রয়োজন বিবেচনায় টাকার পরিমাণ যদি বাড়ানো যায়, অর্থাৎ ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকা করা হয় তাহলে অতিরিক্ত ৩ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা প্রয়োজন। কর ফাঁকি ও কর অস্বচ্ছতার মাধ্যমে প্রতি বছর সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। সেটা যদি আদায় করা সম্ভব হয় তাহলে সেখান থেকে অর্থ সংগ্রহ করে এ খাতে ব্যয় করা সম্ভব।

প্রসঙ্গত, গত ৩ এপ্রিল প্রকাশিত সিপিডির এক গবেষণায় দেখানো হয়েছে, কর ফাঁকি ও কর এড়ানোর মাধ্যমে ৫৫ হাজার ৮০০ কোটি টাকা থেকে ২ লাখ ৯২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। কর ফাঁকি যদি ৮০ শতাংশ হয়, তাহলে ২ লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকার মতো রাজস্ব হারায় সরকার। আবার যদি কর ফাঁকি ৫০ শতাংশ ধরা হয়, তাহলে সরকার রাজস্ব হারায় ৪১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।

অন্যদিকে কর এড়ানোতে যে ব্যয় হচ্ছে সেটা যদি ৫-২৫ শতাংশ পর্যন্ত হয় তাহলে সেটার পরিমাণ ১৪ হাজার কোটি টাকা থেকে ৬৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকার মতো। এই বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।

সিপিডির সংলাপে অংশ নিয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘আমরা আমাদের দারিদ্র্যসীমা কমিয়ে আনতে পারলেও বৈষম্য এমনভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে যে এটা তুলনাহীন জায়গায় চলে গেছে। খুব দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই বৈষম্যের ব্যাপারটি আমাদের রাষ্ট্রকর্তৃক স্বীকৃত নয়।’

রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘খুব দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের রাষ্ট্রটা এখন অতিক্ষুদ্র ধনিক গোষ্ঠী, সামরিক-বেসামরিক আমলাদের হাতের মধ্যে বন্দী হয়ে গেছে। এ কারণে বৈষম্য অনেক বেড়েছে। দারিদ্র্য কমেছে বলে আমরা উৎফুল্ল হতে পারি। কিন্তু বর্তমানে বৈষম্য এত বেশি যে সেখানে সামাজিক স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।’ এজন্য সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর পরিধি আরও বাড়ানোর কথা বলেন তিনি।

অন্যদিকে সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর পরিধি বাড়াতে বেসরকারি সংস্থাগুলোর (এনজিও) থেকে সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আরমা দত্ত। তিনি বলেন, এনজিওগুলো সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির চেয়ে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে বেশি আগ্রহী। কিন্তু তারা যে মুনাফা করছে, সেখান থেকে ৫ শতাংশ এই খাতে দিতে পারে।

সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী কর্মসূচির ক্ষেত্রে আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয়ের অভাব রয়েছে বলে জানান সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী। তিনি বলেন, ভাতা প্রদানের দায়িত্বে যেসব মন্ত্রণালয় রয়েছে, তাদের মধ্যে সমন্বয়ের দুর্বলতা রয়েছে। এজন্য দেখা যায়, অনেকে একাধিক ভাতা পাচ্ছেন, আবার অনেকে একটি ভাতাও পান না।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনের সভাপতিত্বে সংলাপে উপস্থিত থেকে সমাজসেবা অধিদপ্তরের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিচালক মো. মোক্তার হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক বজলুল হক খোন্দকার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আবু ইউসুফ ও ক্রিশ্চিয়ান এইড বাংলাদেশের প্রোগ্রাম ম্যানেজার নুজহাত জেবিন, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বক্তব্য দেন।

ছবি

আইভীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ, ৬ ঘন্টার আভিযান, এলাকাবাসীর বাধা

ছবি

বিশেষ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে সশস্ত্র বাহিনীর ক্ষমতা বহাল থাকছে দুই মাস

‘উলবাকিয়া মশা’ ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে নতুন সম্ভাবনা: আইসিডিডিআর’বি

সচিবালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মৌন প্রতিবাদ সমাবেশ

বিএনপির সদস্য সংগ্রহ: যোগ দিতে পারে আ’লীগের ‘ক্লিন ইমেজের’ লোকও

ছবি

ববি’র ভিসির পদত্যাগ দাবি : শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন শিক্ষকরাও

ছবি

আবদুল হামিদের দেশত্যাগ: পুলিশ সুপার প্রত্যাহার, তদন্ত কমিটি গঠন

ছবি

বিচার কার্যক্রম ত্বরান্বেতে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২

ছবি

মুন্সীগঞ্জের নিমতলায় ৫ জনসহ পাঁচ জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১১

রমনা বটমূলে বোমা হামলা: হাইকোর্টের রায়ের পরবর্তী অংশ ঘোষণা ১৩ মে

এবার টিউলিপকে দুদকে তলব

ছাত্রদের বাদ দিয়ে ‘দ্বি-দলীয় বন্দোবস্তে’ ফিরতে ‘এস্টাবলিশমেন্ট অপেক্ষমাণ’: তথ্য উপদেষ্টা

চট্টগ্রাম বন্দরে ৮০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে নেদারল্যান্ড: বিডা চেয়ারম্যান

প্রতিদিন নতুন নতুন সংস্কারের লিস্ট, সব জটিল হয়ে যাচ্ছে: মির্জা ফখরুল

ছবি

ভারত-পাকিস্তান: পাল্টাপাল্টি হামলা অব্যাহত, বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা

ছবি

সাবেক রাষ্ট্রপতির দেশত্যাগে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিতে পারলে পদত্যাগ করবেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

পাকিস্তানে ভারতের হামলা দুঃখজনক: চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন

ছবি

ছাত্রদের বাদ দিয়ে দ্বিদলীয় বন্দোবস্তে ফিরতে চায় এস্টাবলিশমেন্ট: মাহফুজ আলম

চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ

ছবি

রমনা বটমূলে বোমা হামলা: হাইকোর্টে রায় পড়া শুরু

খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা, সবাইকে ধন্যবাদ তারেক রহমানের

হত্যার তিন মাস পর কারামুক্ত হই, আদালতকে লিটন

পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বেতন কমানোর নির্দেশ

সাবেক আইজিপি শহীদুল ও দুইজনকে দ্বিতীয় দফায় জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি

মিথ্যা মামলা: আসামি খালাস, বাদীর সাজা

ছবি

বিশ্বকবির ১৬৪তম জন্মবার্ষিকী বৃহস্পতিবার

ছবি

দেশে প্রথম জলাভূমিনির্ভর প্রাণীদের দু’টি অভয়ারণ্য ঘোষণা

ছবি

ঘোড়াঘাটে পানির দরে আলু বিক্রি, পথে বসেছেন চাষিরা

ছবি

একযোগে বিআরটিএ’র ৩৫ কার্যালয়ে দুদকের অভিযান

ভারত যেভাবে লোকজনকে ঠেলে দিচ্ছে, তা ‘ঠিক নয়’: খলিলুর

ছবি

কুড়িগ্রামে ৩৬ রোহিঙ্গাসহ ৮ বাংলাদেশিকে পুশইন করেছে বিএসএফ

ছবি

শেখ হাসিনাকে দুদকে তলব

নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি নিয়ে ইসলামী আন্দোলনের প্রশ্ন

৬ হাজার কোটি টাকার হিসাব না দিয়েই ‘পালিয়েছেন’ সাবেক প্রকল্প পরিচালক : উপদেষ্টা

সালমান পরিবারের ৯৪ কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ

ঐকমত্যে পৌঁছাতে ছাড় দেবে নাগরিক ঐক্য

tab

জাতীয়

সামাজিক ভাতার ১৫০০ কোটি টাকা খাচ্ছে অযোগ্যরা

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

রোববার, ৩০ এপ্রিল ২০২৩

সামাজিক ভাতাপ্রাপ্তদের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ বয়স্ক ও ৩৩ শতাংশ বিধবা অযোগ্য সুবিধাভোগী রয়েছে। যার মাধ্যমে অযোগ্য সুবিধাভোগীদের জন্য ব্যয় হয় প্রায় ১৫০০ কোটি টাকা। যা প্রতিরোধে কার্যকরী পারিবারিক জরিপ করার দাবি করেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।

রোববার (৩০ এপ্রিল) রাজধানীর মহাখালীতে সিপিডি আয়োজিত এক সেমিনারে এসব তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে এ সংক্রান্ত গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ও শামীম আলম শিবলী। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।

সিপিডির গবেষণায় উঠে আসে, স্থানীয় পর্যায়ে বয়স্ক ও বিধবা ভাতা কার্ড করতে গিয়ে একজন উপকারভোগী সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিয়েছেন। আর এসব ঘুষ নিয়েছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ও সরকারের কর্মকর্তারা।

সিপিডি মনে করে, ওই অপব্যয় রোধ করা গেলে শতকরা ৪৫ শতাংশ প্রকৃত যোগ্যদের ভাতার আওতায় আনা সম্ভব। একই সঙ্গে যোগ্য অ-সুবিধাভোগীদের ভাতার আওতায় আনতে বরাদ্দ বাড়ানোরও দাবি করেছে সংস্থাটি।

সিপিডি বলছে, বর্তমানে বয়স্ক ও বিধবা ভাতার ক্ষেত্রে মাসে ৫০০ টাকা ও শিক্ষা উপবৃত্তির জন্য মাসে ১৫০ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। সামাজিক ভাতাপ্রাপ্তদের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ বয়স্ক ও ৩৩ শতাংশ বিধবা অযোগ্য সুবিধাভোগী রয়েছে। তাদের মধ্যে আবার প্রায় ১২ শতাংশ পেনশন, ভিজিডি বা অন্যান্য ভাতা নিচ্ছেন। এর মাধ্যমে প্রায় ১৫০০ কোটি টাকা অযোগ্য সুবিধাভোগীদের জন্য ব্যয় করা হচ্ছে। যা প্রতিরোধ করা প্রয়োজন। তাই প্রকৃত দুস্থ ও আর্থিক দিক দিয়ে দুর্বলদের চিহ্নিত করতে দারিদ্র্যপ্রবণ এলাকায় একটি কার্যকরী পারিবারিক জরিপ করা উচিত। অন্যদিকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করা ও যথাযথ কাগজপত্রের অভাবে ৫ থেকে ৩০ শতাংশ ছাত্র-ছাত্রী উপবৃত্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাদেরকেও ওই সুবিধার আওতায় আনা প্রয়োজন।

সিপিডির তথ্যানুযায়ী, যোগ্য অ-সুবিধাভোগীদের ভাতার আওতায় আনতে অতিরিক্ত ৪ হাজার ৩০২ কোটি টাকা প্রয়োজন। এদিকে অযোগ্যদের পেছনে ১৫০০ কোটি টাকা অপব্যবহার হচ্ছে। তা রোধ করে এ বিপুল পরিমাণ অর্থ যোগ্যদের পেছনে ব্যয় করা যেতে পারে। আর এই ১৫০০ কোটি টাকার মাধ্যমে প্রকৃত যোগ্য এমন ৪৫ শতাংশ ব্যক্তিকে ভাতার আওতায় আনা সম্ভব।

সিপিডি মনে করছে, বর্তমান সুবিধাভোগীর প্রয়োজন বিবেচনায় টাকার পরিমাণ যদি বাড়ানো যায়, অর্থাৎ ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকা করা হয় তাহলে অতিরিক্ত ৩ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা প্রয়োজন। কর ফাঁকি ও কর অস্বচ্ছতার মাধ্যমে প্রতি বছর সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। সেটা যদি আদায় করা সম্ভব হয় তাহলে সেখান থেকে অর্থ সংগ্রহ করে এ খাতে ব্যয় করা সম্ভব।

প্রসঙ্গত, গত ৩ এপ্রিল প্রকাশিত সিপিডির এক গবেষণায় দেখানো হয়েছে, কর ফাঁকি ও কর এড়ানোর মাধ্যমে ৫৫ হাজার ৮০০ কোটি টাকা থেকে ২ লাখ ৯২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। কর ফাঁকি যদি ৮০ শতাংশ হয়, তাহলে ২ লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকার মতো রাজস্ব হারায় সরকার। আবার যদি কর ফাঁকি ৫০ শতাংশ ধরা হয়, তাহলে সরকার রাজস্ব হারায় ৪১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।

অন্যদিকে কর এড়ানোতে যে ব্যয় হচ্ছে সেটা যদি ৫-২৫ শতাংশ পর্যন্ত হয় তাহলে সেটার পরিমাণ ১৪ হাজার কোটি টাকা থেকে ৬৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকার মতো। এই বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।

সিপিডির সংলাপে অংশ নিয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘আমরা আমাদের দারিদ্র্যসীমা কমিয়ে আনতে পারলেও বৈষম্য এমনভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে যে এটা তুলনাহীন জায়গায় চলে গেছে। খুব দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই বৈষম্যের ব্যাপারটি আমাদের রাষ্ট্রকর্তৃক স্বীকৃত নয়।’

রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘খুব দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের রাষ্ট্রটা এখন অতিক্ষুদ্র ধনিক গোষ্ঠী, সামরিক-বেসামরিক আমলাদের হাতের মধ্যে বন্দী হয়ে গেছে। এ কারণে বৈষম্য অনেক বেড়েছে। দারিদ্র্য কমেছে বলে আমরা উৎফুল্ল হতে পারি। কিন্তু বর্তমানে বৈষম্য এত বেশি যে সেখানে সামাজিক স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।’ এজন্য সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর পরিধি আরও বাড়ানোর কথা বলেন তিনি।

অন্যদিকে সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর পরিধি বাড়াতে বেসরকারি সংস্থাগুলোর (এনজিও) থেকে সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আরমা দত্ত। তিনি বলেন, এনজিওগুলো সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির চেয়ে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে বেশি আগ্রহী। কিন্তু তারা যে মুনাফা করছে, সেখান থেকে ৫ শতাংশ এই খাতে দিতে পারে।

সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী কর্মসূচির ক্ষেত্রে আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয়ের অভাব রয়েছে বলে জানান সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী। তিনি বলেন, ভাতা প্রদানের দায়িত্বে যেসব মন্ত্রণালয় রয়েছে, তাদের মধ্যে সমন্বয়ের দুর্বলতা রয়েছে। এজন্য দেখা যায়, অনেকে একাধিক ভাতা পাচ্ছেন, আবার অনেকে একটি ভাতাও পান না।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনের সভাপতিত্বে সংলাপে উপস্থিত থেকে সমাজসেবা অধিদপ্তরের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিচালক মো. মোক্তার হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক বজলুল হক খোন্দকার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আবু ইউসুফ ও ক্রিশ্চিয়ান এইড বাংলাদেশের প্রোগ্রাম ম্যানেজার নুজহাত জেবিন, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বক্তব্য দেন।

back to top