alt

জাতীয়

ডেঙ্গু বেড়েছে ৬ গুণ, সতর্ক থাকার পরামর্শ

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : সোমবার, ২৯ মে ২০২৩

https://sangbad.net.bd/images/2023/May/29May23/news/dengu-2.jpg

বিগত কয়েকদিন ধরেই বাড়ছে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা। সর্বশেষ একদিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৭২ জন। এর মধ্যে ঢাকায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫৮ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, চলতি বছরের শুরু থেকে সোমবার (২৯ মে) সকাল ৮টা পর্যন্ত ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে মোট ১ হাজার ৮৪৩ জন। অন্যদিকে গত বছর একই সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল মাত্র ৩২০ জন। এ হিসাবে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর রেকর্ড গত বছরের তুলনায় এবার রোগীর সংখ্যা বেড়ে প্রায় ছয়গুণ। এমন পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন, আসছে বর্ষায় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে।

কীটতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা জানান, বর্তমান আবহাওয়া ও পরিবেশ ডেঙ্গুজ্বরের বাহক এডিস মশার প্রজনন ও বংশ বিস্তারের জন্য অনুকূলে আছে। এডিস মশার সংখ্যা এখনই না কমাতে পারলে ভাইরাসবাহী মশা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে। এখন যে ওষুধ ছিটানো হয়, তাতে প্রায় ১০ থেকে ১৫ ভাগ মশাও মরে না। একবার ভাইরাসবহনকারী মশা বেড়ে গেলে আর কন্ট্রোল করা কষ্টকর হবে।

এলাকাভিত্তিক পাড়া প্রতিবেশীসহ সবাইকে নিয়ে এখন মশা দমন করা জরুরি হয়ে পড়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা জানান। এছাড়া নির্মাণাধীন ভবনের মালিকদের সঙ্গে কথা বলে আলোচনা করে মশা দমন করা দরকার। তা না হলে মৃত্যুর সংখ্যা এখন বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

https://sangbad.net.bd/images/2023/May/29May23/news/dengu-1.jpg

ডেঙ্গু আক্রান্তের ভিড় মুগদা মেডিকেল হাসপাতালে-সংবাদ

এদিকে ডেঙ্গু রোগী সংখ্যা বাড়ার চিত্র তুলে ধরে দেশবাসীকে এডিস মশাবাহিত এই রোগ থেকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। সোমবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গু বেড়ে গেছে। এ বিষয়ে আমরা, আমাদের অধিদপ্তর যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।’ তিনি বলেন, ‘মে মাস পর্যন্ত ১৭০৪ ডেঙ্গু রোগী আমরা পেয়েছি। মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের এবং আমরা যদি গত বছরের সঙ্গে তুলনা করি, এ বছর রোগীর সংখ্যা প্রায় পাঁচগুণ, গত বছরের তুলনায়। অর্থাৎ অনেক রোগী বৃদ্ধি পেয়েছে।’

মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ্ ইমাজেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় (রোববার সকাল ৮টা থেকে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে আরও ৭২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় ৫৮ জন ও ঢাকার বাইরে ১৪ জন। এ হিসাবে ঢাকায় ডেঙ্গুতে আক্রান্তের হার ৮০ শতাংশ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে সর্ব মোট ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছে ২২৬ জন। এর মধ্যে ঢাকার ৫৩টি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে রোগী ভর্তি ১৯৮ জন। আর অন্যান্য বিভাগে বর্তমানে রোগী ভর্তি ২৮ জন। এ হিসাবে ৮৭ শতাংশ রোগী ঢাকার হাসপাতালগুলোতে ভর্তি আছেন।

হাসপাতালের তথ্যমতে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছে ২৬ জন। মিটফোর্ড হাসপাতালে ২৬ জন। ঢাকা শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে ৪ জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৯ জন, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫২ জন, মহাখালী ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ হাসপাতালে ৫ জন ভর্তি আছে। এই ভাবে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছে ১২৮ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, সোমবার পর্যন্ত ঢাকায় ১ হাজার ২৩৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। আর ঢাকার বাইরে ৬০৮ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় ১ হাজার ২৭ জন ও ঢাকার বাইরে ৫৭৭ জন রোগী ছাড়পত্র পেয়েছেন। আর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৩ জন। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন কেউ মারা যাননি বলে জানিয়েছে কন্ট্রোল রুম।

অভিযোগ রয়েছে, এডিস মশা নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নানাভাবে উদ্যোগ নিলেও পাড়া-মহল্লায় তেমন কোন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। হাউজিং সোসাইটিগুলোতে যত্রতত্র পানি ফেলা হচ্ছে। গাড়ি ধোয়া হচ্ছে। নিয়ম কানুন কিছুই মানা হচ্ছে না। ফুলের টব, পানি, ডাবেল খোসা ফেলে রাখা হয়। থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে ডাবেল খোসায় পানি জমে সেখানে মশা ডিম পাড়ে ও প্রজনন ও বংশ বিস্তার ঘটছে।

মহাখালী রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোস্তাক হোসেন সংবাদকে জানান, ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হওয়ার আগেই প্রতিরোধ করতে হবে। হাসপাতালে যাতে যেতে না হয়। দরকার হলে দুই থেকে ৩ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে মশা মারতে হবে। মানুষকে বিচ্ছিন্নভাবে বললে সচেতন হয় না। সবাইকে সমন্বিত উদ্যোগ নিয়ে কাজ করতে হবে। কোভিড-১৯ মোবাবিলার মতো ডেঙ্গু মোকাবিলায় কাজে করলে উপকৃত হবে। বছর শেষ হলে সবাই ভুলে যায়। এখন ডেঙ্গু সারা বছরই থাকে। তাই মশা দমন করতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, ডেঙ্গুজ্বরের বাহক এখন রাজধানী থেকে গ্রামগঞ্জ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত কোন ব্যক্তি শহর থেকে গ্রামে গেলে সেখানে তাকে যদি মশা কামড় দেয়। সেই মশা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। এরপর ওই মশা নতুন করে কাউকে কামড় দিলে সেও আক্রান্ত হয়। এই ভাবে সারাদেশে ডেঙ্গুভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে।

সূত্র মতে, এখন শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত নির্মাণাধীন বিভিন্ন ভবনের ছাদে জমে থাকা পরিষ্কার পানিতে এডিস মশা প্রজনন ও বংশ বিস্তার ঘটে। এই ভাবে ডেঙ্গুজ্বর ছড়িয়ে পড়ে। অভিযোগ রয়েছে, মশার ওষুধ এখন অনেক এলাকায় ছিটানো হয় না। অভিযাত এলাকাগুলোতে মশার ওষুধ দেয়া হলেও অনেক এলাকায় নজরে পড়ে না। হাসপাতালের তথ্য মতে, মুগদা ও মিটফোর্ড হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বেশি। ওই সব এলাকায় প্রতিদিন আক্রান্ত রোগীরা ভর্তি হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, মশা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আছে। তবে অনেক দেশে মশা দমনে আলাদা বিভাগও রয়েছে। তারা বছরজুড়ে মশা দমনে ওষুধ দেয়া থেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন সবই করছে। আর তাৎক্ষণিকভাবে তারা ব্যবস্থা নিয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশ উন্নত থেকে স্মার্ট যুগে গেলেও মশা দমনে এখনও পিছিয়ে আছে বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রতি বছর মশার কামড়ে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে, আবার মারা যাচ্ছেন। কোন মতে মৃত্যু ঠেকানো যাচ্ছে না।

বর্ষা আসতে না আসতে এই বছর মশা বাহিত এই রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। ঢাকার বাইরে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত ইতোমধ্যে বেড়েছে। সেখানে ক্যাম্পগুলোতে যত্রতত্র পানি ফেলে রাখার কারণ সেখানে মশা প্রজনের হটস্পটে পরিণত হয়েছে। ঢাকার পরে কক্সবাজারে মশার উপদ্রব বেশি। পর্যটক এলাকাগুলোতে মশা দমনে তেমন তৎপরতা নেই। সর্বত্র মশা।

কয়েকজন পর্যটক বলেন, দিনে রাতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ও হোটেল-মোটেল জুনে মশার ওপর লাগামহীনভাবে বাড়ছে। বছরজুড়ে বাড়লে মশা মারার তেমন উদ্যোগ নেই। এই বছর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে আগে থেকে প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। চিকিৎসক ও নার্সদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।

আগামী ছয় মাস নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চলবে নিউমুরিং টার্মিনাল: অর্থ উপদেষ্টা

জ্যেষ্ঠতা যোগদানের তারিখ থেকে, রুল হাইকোর্টের

মগবাজারে হোটেলে স্ত্রী-সন্তানসহ প্রবাসীর মৃত্যু

ডেঙ্গু: আরও ৩৮৬ জন আক্রান্ত, মৃত্যু ১

আদালতে সাবেক সিইসি নূরুল হুদার ‘স্বীকারোক্তিমূলক’ জবানবন্দি

ছবি

বারোমাসিয়া নদীর ভাঙা সাঁকোয় বারোমাসই দুঃখ

ছবি

কক্সবাজারের সাবেক ডিসি, জজসহ ৫ জনের বিচার শুরু আগামী ৩ আগস্ট সাক্ষ্যগ্রহণ

ছবি

মুরাদনগরে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির ১৫ সদস্যের দল

ছবি

ইস্টার্ন রিফাইনারিতে গত অর্থবছরে তেল শোধন ১৫ লাখ ৩৫ হাজার মেট্রিক টন

ছবি

এনবিআরের আরও ৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনা ৫ অভিযোগ সঠিক নয়, দাবি রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবীর

ছবি

হবিগঞ্জ গ্যাসফিল্ড খনন প্রকল্পের নামে সমান হচ্ছে পাহাড়

রাজধানীতে বিএনপি নেতাকে কুপিয়ে হত্যা, গ্রেপ্তার ২

ছবি

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করেই ঘরে ফিরবো, ঘোষণা নাহিদ ইসলামের

ছবি

প্রতিবেশী দেশের নেতার সঙ্গে ফোনালাপ, থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীকে অব্যাহতি

জ্বালানি আমদানিতে শুল্ক নীতি সংশোধন, চাপে বিপিসি

ভোটের তারিখ বা সময় নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি: সিইসি

ছবি

জাতীয় সরকারের কথা বললেন তারেক

ছবি

স্বৈরাচার যেন আর মাথাচাড়া দিতে না পারে: প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

পদ্মা সেতু মামলার পুনরুজ্জীবনে উদ্যোগ, ‘গায়ের জোরে’ দায়মুক্তি দেওয়ার অভিযোগ দুদকের

ছবি

ডেঙ্গু আক্রান্ত ১০ হাজার ছাড়াল, মৃতের সংখ্যা ৪৩

ছবি

দেশে নারী ও শিশু নির্যাতন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে ড. কামাল হোসেনের উদ্বেগ প্রকাশ

ছবি

জুলাই গণ-অভ্যুত্থান বর্ষপূর্তিতে মাসব্যাপী স্মৃতি উদ্‌যাপন শুরু

ছবি

শেখ হাসিনাসহ ২৩ জনকে হাজিরার নির্দেশ, পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আদেশ

ছবি

আসিফের ব্যাগে ম্যাগাজিন: শাহজালাল বিমানবন্দরে বাড়ানো হল নিরাপত্তা

ছবি

বাংলাদেশে কোনো জঙ্গি নেই, ছিনতাইকারীরা-ই আসল সমস্যা: ডিএমপি কমিশনার

ছবি

ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন ধরে প্রস্তুতি নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ

ছবি

ইউনূস–রুবিও ফোনালাপে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিরাপত্তা জোরদারে জোর

ছবি

৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ, উত্তীর্ণ ১,৬৯০ জন

ছবি

‘ন্যায়সংগত ও টেকসই জ্বালানি রূপান্তরের প্রয়োজনীয়তা জরুরি’

আহমেদ আকবর সোবহান ও তারিক আহমেদ সিদ্দিককে দুদকে তলব

সাড়ে তিন মাসেও সন্ধান মেলেনি নিখোঁজ কলেজছাত্রীর

এনসিপির সততা নিয়ে প্রশ্ন ‘আপ বাংলাদেশ’র

পলাতক লিয়াকত শিকদার, জব্দ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট

ছবি

বাবুই পাখির ছানা হত্যা, অভিযুক্ত মোবারক আলী গ্রেপ্তার

শূন্য ইউনিটের বিদ্যুৎ বিল ৪০ হাজার টাকা!

tab

জাতীয়

ডেঙ্গু বেড়েছে ৬ গুণ, সতর্ক থাকার পরামর্শ

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

সোমবার, ২৯ মে ২০২৩

https://sangbad.net.bd/images/2023/May/29May23/news/dengu-2.jpg

বিগত কয়েকদিন ধরেই বাড়ছে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা। সর্বশেষ একদিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৭২ জন। এর মধ্যে ঢাকায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫৮ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, চলতি বছরের শুরু থেকে সোমবার (২৯ মে) সকাল ৮টা পর্যন্ত ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে মোট ১ হাজার ৮৪৩ জন। অন্যদিকে গত বছর একই সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল মাত্র ৩২০ জন। এ হিসাবে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর রেকর্ড গত বছরের তুলনায় এবার রোগীর সংখ্যা বেড়ে প্রায় ছয়গুণ। এমন পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন, আসছে বর্ষায় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে।

কীটতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা জানান, বর্তমান আবহাওয়া ও পরিবেশ ডেঙ্গুজ্বরের বাহক এডিস মশার প্রজনন ও বংশ বিস্তারের জন্য অনুকূলে আছে। এডিস মশার সংখ্যা এখনই না কমাতে পারলে ভাইরাসবাহী মশা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে। এখন যে ওষুধ ছিটানো হয়, তাতে প্রায় ১০ থেকে ১৫ ভাগ মশাও মরে না। একবার ভাইরাসবহনকারী মশা বেড়ে গেলে আর কন্ট্রোল করা কষ্টকর হবে।

এলাকাভিত্তিক পাড়া প্রতিবেশীসহ সবাইকে নিয়ে এখন মশা দমন করা জরুরি হয়ে পড়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা জানান। এছাড়া নির্মাণাধীন ভবনের মালিকদের সঙ্গে কথা বলে আলোচনা করে মশা দমন করা দরকার। তা না হলে মৃত্যুর সংখ্যা এখন বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

https://sangbad.net.bd/images/2023/May/29May23/news/dengu-1.jpg

ডেঙ্গু আক্রান্তের ভিড় মুগদা মেডিকেল হাসপাতালে-সংবাদ

এদিকে ডেঙ্গু রোগী সংখ্যা বাড়ার চিত্র তুলে ধরে দেশবাসীকে এডিস মশাবাহিত এই রোগ থেকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। সোমবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গু বেড়ে গেছে। এ বিষয়ে আমরা, আমাদের অধিদপ্তর যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।’ তিনি বলেন, ‘মে মাস পর্যন্ত ১৭০৪ ডেঙ্গু রোগী আমরা পেয়েছি। মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের এবং আমরা যদি গত বছরের সঙ্গে তুলনা করি, এ বছর রোগীর সংখ্যা প্রায় পাঁচগুণ, গত বছরের তুলনায়। অর্থাৎ অনেক রোগী বৃদ্ধি পেয়েছে।’

মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ্ ইমাজেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় (রোববার সকাল ৮টা থেকে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে আরও ৭২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় ৫৮ জন ও ঢাকার বাইরে ১৪ জন। এ হিসাবে ঢাকায় ডেঙ্গুতে আক্রান্তের হার ৮০ শতাংশ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে সর্ব মোট ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছে ২২৬ জন। এর মধ্যে ঢাকার ৫৩টি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে রোগী ভর্তি ১৯৮ জন। আর অন্যান্য বিভাগে বর্তমানে রোগী ভর্তি ২৮ জন। এ হিসাবে ৮৭ শতাংশ রোগী ঢাকার হাসপাতালগুলোতে ভর্তি আছেন।

হাসপাতালের তথ্যমতে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছে ২৬ জন। মিটফোর্ড হাসপাতালে ২৬ জন। ঢাকা শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে ৪ জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৯ জন, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫২ জন, মহাখালী ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ হাসপাতালে ৫ জন ভর্তি আছে। এই ভাবে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছে ১২৮ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, সোমবার পর্যন্ত ঢাকায় ১ হাজার ২৩৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। আর ঢাকার বাইরে ৬০৮ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় ১ হাজার ২৭ জন ও ঢাকার বাইরে ৫৭৭ জন রোগী ছাড়পত্র পেয়েছেন। আর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৩ জন। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন কেউ মারা যাননি বলে জানিয়েছে কন্ট্রোল রুম।

অভিযোগ রয়েছে, এডিস মশা নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নানাভাবে উদ্যোগ নিলেও পাড়া-মহল্লায় তেমন কোন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। হাউজিং সোসাইটিগুলোতে যত্রতত্র পানি ফেলা হচ্ছে। গাড়ি ধোয়া হচ্ছে। নিয়ম কানুন কিছুই মানা হচ্ছে না। ফুলের টব, পানি, ডাবেল খোসা ফেলে রাখা হয়। থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে ডাবেল খোসায় পানি জমে সেখানে মশা ডিম পাড়ে ও প্রজনন ও বংশ বিস্তার ঘটছে।

মহাখালী রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোস্তাক হোসেন সংবাদকে জানান, ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হওয়ার আগেই প্রতিরোধ করতে হবে। হাসপাতালে যাতে যেতে না হয়। দরকার হলে দুই থেকে ৩ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে মশা মারতে হবে। মানুষকে বিচ্ছিন্নভাবে বললে সচেতন হয় না। সবাইকে সমন্বিত উদ্যোগ নিয়ে কাজ করতে হবে। কোভিড-১৯ মোবাবিলার মতো ডেঙ্গু মোকাবিলায় কাজে করলে উপকৃত হবে। বছর শেষ হলে সবাই ভুলে যায়। এখন ডেঙ্গু সারা বছরই থাকে। তাই মশা দমন করতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, ডেঙ্গুজ্বরের বাহক এখন রাজধানী থেকে গ্রামগঞ্জ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত কোন ব্যক্তি শহর থেকে গ্রামে গেলে সেখানে তাকে যদি মশা কামড় দেয়। সেই মশা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। এরপর ওই মশা নতুন করে কাউকে কামড় দিলে সেও আক্রান্ত হয়। এই ভাবে সারাদেশে ডেঙ্গুভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে।

সূত্র মতে, এখন শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত নির্মাণাধীন বিভিন্ন ভবনের ছাদে জমে থাকা পরিষ্কার পানিতে এডিস মশা প্রজনন ও বংশ বিস্তার ঘটে। এই ভাবে ডেঙ্গুজ্বর ছড়িয়ে পড়ে। অভিযোগ রয়েছে, মশার ওষুধ এখন অনেক এলাকায় ছিটানো হয় না। অভিযাত এলাকাগুলোতে মশার ওষুধ দেয়া হলেও অনেক এলাকায় নজরে পড়ে না। হাসপাতালের তথ্য মতে, মুগদা ও মিটফোর্ড হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বেশি। ওই সব এলাকায় প্রতিদিন আক্রান্ত রোগীরা ভর্তি হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, মশা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আছে। তবে অনেক দেশে মশা দমনে আলাদা বিভাগও রয়েছে। তারা বছরজুড়ে মশা দমনে ওষুধ দেয়া থেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন সবই করছে। আর তাৎক্ষণিকভাবে তারা ব্যবস্থা নিয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশ উন্নত থেকে স্মার্ট যুগে গেলেও মশা দমনে এখনও পিছিয়ে আছে বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রতি বছর মশার কামড়ে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে, আবার মারা যাচ্ছেন। কোন মতে মৃত্যু ঠেকানো যাচ্ছে না।

বর্ষা আসতে না আসতে এই বছর মশা বাহিত এই রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। ঢাকার বাইরে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত ইতোমধ্যে বেড়েছে। সেখানে ক্যাম্পগুলোতে যত্রতত্র পানি ফেলে রাখার কারণ সেখানে মশা প্রজনের হটস্পটে পরিণত হয়েছে। ঢাকার পরে কক্সবাজারে মশার উপদ্রব বেশি। পর্যটক এলাকাগুলোতে মশা দমনে তেমন তৎপরতা নেই। সর্বত্র মশা।

কয়েকজন পর্যটক বলেন, দিনে রাতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ও হোটেল-মোটেল জুনে মশার ওপর লাগামহীনভাবে বাড়ছে। বছরজুড়ে বাড়লে মশা মারার তেমন উদ্যোগ নেই। এই বছর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে আগে থেকে প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। চিকিৎসক ও নার্সদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।

back to top