alt

জাতীয়

‘স্বাভাবিক’ পরিস্থিতির আশায় ‘নতুন’ লক্ষ্যের বাজেট

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : বৃহস্পতিবার, ০১ জুন ২০২৩

অর্থনীতির সংকটের মধ্যেই আগামী অর্থবছরে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে বাজেট প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অর্থমন্ত্রীর ধারণা, আগামী বছর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পরিস্থিতি ‘স্বাভাবিক’ হবে এবং রাজস্ব আয়, বিনিয়োগ, রপ্তানি ‘বাড়বে’। আর এই ধারণার ওপর ভিত্তি করেই তিনি আগামীর বাজেট উপস্থাপন করেছেন।

বৈশ্বিক বাস্তবতা আর নানামুখী চাপের মধ্যে দাঁড়িয়েও ‘স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে’ যাত্রার চ্যালেঞ্জ নিয়ে ভোটের আগে নতুন অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট জাতীয় সংসদের সামনে উপস্থাপন করেছেন মুস্তফা কামাল।

এবারের বাজেটের শিরোনাম ‘উন্নয়নের অভিযাত্রার দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা’। বৃহস্পতিবার (১ জুন) স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এই বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী।

প্রস্তাবিত এই বাজেট বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের (৬ লাখ ৬০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা) চেয়ে ১৫.৩৩ শতাংশ বেশি। টাকার ওই অঙ্ক বাংলাদেশের মোট জিডিপির ১৫.২১ শতাংশের সমান। বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে মুস্তফা কামালের দেয়া বাজেটের আকার ছিল ২০২১-২২ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১৪.২৪ শতাংশ বেশি এবং জিডিপির চেয়ে ১৫.২৩ শতাংশের সমান।

বর্তমান পরিস্থিতিতে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট বাজেট বাস্তবায়ন করা কঠিন বলে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, জিডিপির তুলনায় বাংলাদেশের বাজেট কম হলেও বর্তমান সময় ও বাংলাদেশের সক্ষমতা অনুযায়ী এটি ‘উচ্চাভিলাসী’ বাজেট।

চলতি অর্থবছরের জন্য সরকার বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরেছিল ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। বৈরী পরিস্থিতিতে অর্থ মন্ত্রণালয় এবারের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য সংশোধন করে ৬ দশমিক ৫০ শতাংশে নামিয়েছিল। কিন্তু সেই লক্ষ্যও পূরণ হচ্ছে না।

এ প্রসঙ্গে গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিআরআই এর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ‘বিরাজমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে সাড়ে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পূরণ হবে না। মূল্যস্ফীতির চাপ, বিনিয়োগ কমে যাচ্ছে, আমদানি কমে যাচ্ছে। এই পরিবেশে প্রবৃদ্ধি খুব একটা যে হবে সেটা আশা করা ঠিক না। এ বছর বলা হচ্ছে ৬ দশমিক ০৩। সেটাও কমে হয়ত ৫ এর ঘরে চলে আসবে।’

একই কথা বলেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, ‘বর্তমানের এই সংকটময় পরিস্থিতিতে প্রবৃদ্ধির এই টার্গেট অনেক উচ্চাভিলাসী।’

রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রেও উচ্চভিলাসী লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। রাজস্ব আহরণে এনবিআর বিদায়ী অর্থবছরের লক্ষ্যের চেয়ে অনেকটা পিছিয়ে থাকলেও অর্থমন্ত্রী আশা করছেন, নতুন অর্থবছরের সম্ভাব্য ব্যয়ের প্রায় ৬৬ শতাংশ তিনি রাজস্ব খাত থেকে পাবেন।

তার প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব খাতে আয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এই অঙ্ক বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত রাজস্ব আয়ের ১৫.৫০ শতাংশ বেশি।

এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে কর হিসেবে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা যাবে বলে আশা করছেন অর্থমন্ত্রী। ফলে এনবিআরের কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে ১৬ শতাংশের বেশি। টাকার ওই অঙ্ক মোট বাজেটের ৫৬.৪৪ শতাংশের মতো।

গতবারের মতো এবারও সবচেয়ে বেশি কর আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট থেকে, ১ লাখ ৬৩ হাজার ৮৩৭ কোটি টাকা। এই অঙ্ক বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১২ শতাংশের মতো। বিদায়ী অর্থবছরের বাজেটে ভ্যাট থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা ছিল ১ লাখ ৪১ হাজার ১৯২ কোটি টাকা। সংশোধনে তা বাড়িয়ে ১ লাখ ৪৬ হাজার ২২৭ কোটি টাকা করা হয়।

আয়কর ও মুনাফার ওপর কর থেকে ১ লাখ ৫৩ হাজার ২৬০ কোটি টাকা রাজস্ব পাওয়ার আশা করা হয়েছে এবারের বাজেটে। বিদায়ী সংশোধিত বাজেটে এর পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২১ হাজার ৯৪ কোটি টাকা।

নতুন বাজেটে আমদানি শুল্ক থেকে ৪৬ হাজার ১৫ কোটি টাকা, সম্পূরক শুল্ক থেকে ৬০ হাজার ৭০৩ কোটি টাকা, রপ্তানি শুল্ক থেকে ৬৬ কোটি টাকা, আবগারি শুল্ক থেকে ৪ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকা এবং অন্যান্য কর ও শুল্ক থেকে ১ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করেছেন অর্থমন্ত্রী।

প্রতি বছরই অর্থমন্ত্রী এমন পরিকল্পনা করেন। কিন্তু বড় অঙ্কের রাজস্ব আহরণে ঘাটতিতে বছর শেষ হয়। তাই এবারও রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রাকেও উচ্চাভিলাসী হিসেবে দেখছেন অর্থনীতিবিদরা।

বর্তমানেও বিশ্বের অনেক দেশে মন্দার ঝুঁকি থাকলেও বাজেটের আকার বাড়িয়ে পরিকল্পনা সাজিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এবার ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেটে উন্নয়ন ব্যয় ১৫ শতাংশ বাড়িয়ে ধরা হয়েছে ২ লাখ ৭৭ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা।

এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। এরই মধ্যে এডিপি অনুমোদন করা হয়েছে। এবার পরিচালন ব্যয় (ঋণ, অগ্রিম ও দেনা পরিশোধ, খাদ্য হিসাব ও কাঠামোগত সমন্বয় বাদে) ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৭৫ হাজার ২৮১ কোটি টাকা, যা বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত অনুন্নয়ন বাজেটের চেয়ে প্রায় ১৪.৭২ শতাংশ বেশি।

এর মধ্যে ৯৪ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা যাবে সরকারের ঋণের ?সুদ পরিশোধে, যা মোট অনুন্নয়ন ব্যয়ের প্রায় ২০ শতাংশ। অনুন্নয়ন ব্যয়ের আরও প্রায় ১৬.২০ শতাংশ প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধে ব্যয় হয়, যার পরিমাণ অন্তত ৭৭ হাজার কোটি টাকা।

বাজেট পেশের আগে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমিও গরিবের সন্তান ছিলাম। একসময় আমি গরিব ছিলাম। আমি জানি গরিব হওয়াটা কত কষ্টের। কাউকে গরিব করে আমরা কিছু অর্জন করতে চাই না। সবাইকে নিয়ে সবার জন্যই আমরা বাজেটটা করতে চাই।’

২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। এবার ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে মোট ১ লাখ ২৬ হাজার ২৭২ কোটি টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের আকার গত অর্থবছরের চেয়ে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেশি। এবারের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তার আওতা, সুবিধাভোগীর সংখ্যা ও সহায়তার আকারও বাড়ছে।

গত ৩ বছর করমুক্ত আয়সীমা অপরিবর্তিত থাকলেও এবারের অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যক্তি করদাতার করমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৩ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া নারী ও ৬৫ বছর বা তদুর্ধ্ব বয়সের করদাতাদের আয়করমুক্ত সীমা সাড়ে ৩ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৪ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে।

এই সুযোগ ধনীদেরও দেয়া হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তিন কোটি টাকার সম্পদ থাকলেই তার কাছ থেকে সম্পদ কর বা সারচার্জ নেয়া হলেও আগামী অর্থবছর থেকে নূন্যতম সীমা চার কোটি টাকা করা হয়েছে।

অর্থাৎ গরিবের করমুক্ত আয় সীমা যেমন বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে, তেমনি ধনীদের সম্পদ করের সীমাও বাড়ানো হয়েছে।

তবে এবার করের আওতা বাড়ানোর জন্য রিটার্নের প্রমাণপত্র পেতে করদাতাকে নূন্যতম দুই হাজার টাকা আয়কর দিতে হবে। এমন প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সব মিলিয়ে ৪৪ ধরনের সেবা পেতে রিটার্ন জমার রসিদ লাগবে। তাদের এখন এসব সেবা পেতে করযোগ্য আয় না থাকলেও দুই হাজার টাকা কর দিতে হবে।

অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, ‘রাষ্ট্রের একজন নাগরিকের অন্যতম দায়িত্ব হচ্ছে রাষ্ট্র কর্তৃক প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধার বিপরীতে সরকারকে ন্যূনতম কর প্রদান করে সরকারের জনসেবামূলক কাজে অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ।’

তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই নীতি বাস্তবায়ন হলে মানুষ রিটার্ন জমা দিতে নিরুৎসাতি হবেন।

বিদায়ী অর্থবছরের মূল বাজেটে মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা, সংশোধনে তা সামান্য কমিয়ে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা করা হয়, যদিও মার্চ পর্যন্ত সময়ে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৬০ শতাংশ অর্জিত হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, ‘স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণ পরবর্তী সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ, ব্যয় দক্ষতা বৃদ্ধি ও সাশ্রয়ী অর্থায়নের দেশি-বিদেশি উৎস অনুসন্ধান হবে রাজস্ব খাতের নীতি-কৌশল। রাজস্ব আহরণে সব সম্ভাবনাকে আমরা কাজে লাগাতে চাই।’

আয় ও ব্যয়ের সামগ্রিক ঘাটতি থাকছে রেকর্ড ২ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ৫.২ শতাংশের সমান।

সাধারণত ঘাটতির পরিমাণ ৫ শতাংশের মধ্যে রেখে বাজেট প্রণয়নের চেষ্টা হয়। তবে টাকা যোগানোর চাপ থাকায় গত কয়েক বছর ধরেই তা সম্ভব হচ্ছে না।

বরাবরের মতোই বাজেট ঘাটতি পূরণে অর্থমন্ত্রীকে নির্ভর করতে হবে অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক ঋণের ওপর।

তিনি আশা করছেন, বিদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯০ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা ঋণ করে ওই ঘাটতি তিনি মেটাবেন।

অভ্যন্তরীণ খাতের মধ্যে ব্যাংকিং খাত থেকে রেকর্ড ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্র থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে আরও ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ধরা হয়েছে বাজেটে।

অর্থমন্ত্রী নতুন অর্থবছরের বাজেটে গড় মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে বেঁধে রাখার যে লক্ষ্যমাত্রা ধরেছেন, বাস্তবতার সঙ্গে তার খুব একটা মিল পাচ্ছেন না অর্থনীতিবিদরা।

তারা বলছেন, সরকার মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনার বিষয়টিকে বাজেটে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে, এটা ইতিবাচক। তবে অনেক কিছুই নির্ভর করছে ইউক্রেইন যুদ্ধ থামবে কি-না, তার ওপর।

প্রস্তাবে গড় মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে রেখে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ধরেছেন তিনি। এমন এক বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে তিনি ওই লক্ষ্যমাত্রা ধরেছেন, যখন ইউক্রেইন যুদ্ধের জেরে চলতি অর্থবছরের দশ মাসেই গড় মূল্যস্ফীতি প্রায় সাড়ে ৮ শতাংশের কাছাকাছি উঠে গেছে।

২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচককে ৫ দশমিক ৬ শতাংশে বেঁধে রাখার লক্ষ্য ঘোষণা করেছিলেন অর্থমন্ত্রী। পরে তা সংশোধন করে ৬ শতাংশ করা হয়। তবে সেই লক্ষ্যও পূরণ হচ্ছে না। কারণ বাজেটেই বলা হয়েছে বছর শেষে সাড়ে ৭ শতাংশ দাঁড়াবে।

এছাড়া সামষ্টিক অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা ও উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনে মুদ্রানীতিতে সময়োপযোগী পরিবর্তন আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

তিনি বলেছেন, ‘করোনার সংকটকালে মুদ্রাবাজারে প্রয়োজনীয় তারল্য সরবরাহ নিশ্চিতকরণের উদ্দেশ্যে রেপো সুদ হার ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে দুই ধাপে ১০০ বেসিস হ্রাস করে ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ করা হয়েছিল। অন্যদিকে রিভার্স রেপো সুদহার ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে ৭৫ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে ৪ শতাংশে পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছিল। পরে চাহিদাজনিত মূল্যস্ফীতির ক্রমবর্ধমান চাপ প্রশমনে রেপো সুদহার ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে ধাপে ধাপে ১২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে বর্তমানে ৬ শতাংশে এবং রিভার্স রেপো সুদহার ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৪ দশমিক ২৫ শতাংশে পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। এটি সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় ভূমিকার রাখছে।’

দেশের সব নাগরিককে পেনশন সুবিধার আওতায় আনতে চলতি বছরের শুরুতে যে আইন হয়েছে, তা নতুন অর্থবছরেই বাস্তবায়ন করতে চান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

বাজেট বক্তৃতায় তিনি বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অঙ্গীকার অনুযায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় আমি সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতি প্রবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। কাজটি ইতোমধ্যে অনেকটাই এগিয়ে এনেছি। মহান জাতীয় সংসদে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন-২০২৩ পাস হয়েছে। আশা করছি, ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকেই বাংলাদেশে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করা সম্ভব হবে।’

গত বছর বাজেট দিতে গিয়ে ‘কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায়’ প্রত্যাবর্তনের সংকল্প করেছিলেন অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামালকে। তবে ইউক্রেইন যুদ্ধের জেরে পরিবর্তিত বিশ্ব বাজার, জ্বালানি ও ডলার সংকট এবং মূল্যস্ফীতি তার সংকল্প বাস্তবায়ন করতে দেয়নি। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারকে হাঁটতে হয়েছে কৃচ্ছ্রের পথে। তার ওপর বিদেশি মুদ্রার ভান্ডারে স্বস্তি আনার চেষ্টায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ঋণ নিতে গিয়ে আর্থিক খাতের নানামুখী সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিতে হয়েছে। এবারও একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘অর্থনীতির স্থিতিশীলতাকে প্রধান গুরুত্বে রেখে সরকারকে কাজ করা উচিত বলে আমি মনে করি। অর্থনীতি স্থিতিশীল না থাকলে বাজেট দিয়েই হবে না। সেটা বাস্তবায়নও করতে হবে।’

আগামী ছয় মাস নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চলবে নিউমুরিং টার্মিনাল: অর্থ উপদেষ্টা

জ্যেষ্ঠতা যোগদানের তারিখ থেকে, রুল হাইকোর্টের

মগবাজারে হোটেলে স্ত্রী-সন্তানসহ প্রবাসীর মৃত্যু

ডেঙ্গু: আরও ৩৮৬ জন আক্রান্ত, মৃত্যু ১

আদালতে সাবেক সিইসি নূরুল হুদার ‘স্বীকারোক্তিমূলক’ জবানবন্দি

ছবি

বারোমাসিয়া নদীর ভাঙা সাঁকোয় বারোমাসই দুঃখ

ছবি

কক্সবাজারের সাবেক ডিসি, জজসহ ৫ জনের বিচার শুরু আগামী ৩ আগস্ট সাক্ষ্যগ্রহণ

ছবি

মুরাদনগরে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির ১৫ সদস্যের দল

ছবি

ইস্টার্ন রিফাইনারিতে গত অর্থবছরে তেল শোধন ১৫ লাখ ৩৫ হাজার মেট্রিক টন

ছবি

এনবিআরের আরও ৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনা ৫ অভিযোগ সঠিক নয়, দাবি রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবীর

ছবি

হবিগঞ্জ গ্যাসফিল্ড খনন প্রকল্পের নামে সমান হচ্ছে পাহাড়

রাজধানীতে বিএনপি নেতাকে কুপিয়ে হত্যা, গ্রেপ্তার ২

ছবি

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করেই ঘরে ফিরবো, ঘোষণা নাহিদ ইসলামের

ছবি

প্রতিবেশী দেশের নেতার সঙ্গে ফোনালাপ, থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীকে অব্যাহতি

জ্বালানি আমদানিতে শুল্ক নীতি সংশোধন, চাপে বিপিসি

ভোটের তারিখ বা সময় নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি: সিইসি

ছবি

জাতীয় সরকারের কথা বললেন তারেক

ছবি

স্বৈরাচার যেন আর মাথাচাড়া দিতে না পারে: প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

পদ্মা সেতু মামলার পুনরুজ্জীবনে উদ্যোগ, ‘গায়ের জোরে’ দায়মুক্তি দেওয়ার অভিযোগ দুদকের

ছবি

ডেঙ্গু আক্রান্ত ১০ হাজার ছাড়াল, মৃতের সংখ্যা ৪৩

ছবি

দেশে নারী ও শিশু নির্যাতন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে ড. কামাল হোসেনের উদ্বেগ প্রকাশ

ছবি

জুলাই গণ-অভ্যুত্থান বর্ষপূর্তিতে মাসব্যাপী স্মৃতি উদ্‌যাপন শুরু

ছবি

শেখ হাসিনাসহ ২৩ জনকে হাজিরার নির্দেশ, পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আদেশ

ছবি

আসিফের ব্যাগে ম্যাগাজিন: শাহজালাল বিমানবন্দরে বাড়ানো হল নিরাপত্তা

ছবি

বাংলাদেশে কোনো জঙ্গি নেই, ছিনতাইকারীরা-ই আসল সমস্যা: ডিএমপি কমিশনার

ছবি

ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন ধরে প্রস্তুতি নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ

ছবি

ইউনূস–রুবিও ফোনালাপে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিরাপত্তা জোরদারে জোর

ছবি

৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ, উত্তীর্ণ ১,৬৯০ জন

ছবি

‘ন্যায়সংগত ও টেকসই জ্বালানি রূপান্তরের প্রয়োজনীয়তা জরুরি’

আহমেদ আকবর সোবহান ও তারিক আহমেদ সিদ্দিককে দুদকে তলব

সাড়ে তিন মাসেও সন্ধান মেলেনি নিখোঁজ কলেজছাত্রীর

এনসিপির সততা নিয়ে প্রশ্ন ‘আপ বাংলাদেশ’র

পলাতক লিয়াকত শিকদার, জব্দ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট

ছবি

বাবুই পাখির ছানা হত্যা, অভিযুক্ত মোবারক আলী গ্রেপ্তার

শূন্য ইউনিটের বিদ্যুৎ বিল ৪০ হাজার টাকা!

tab

জাতীয়

‘স্বাভাবিক’ পরিস্থিতির আশায় ‘নতুন’ লক্ষ্যের বাজেট

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

বৃহস্পতিবার, ০১ জুন ২০২৩

অর্থনীতির সংকটের মধ্যেই আগামী অর্থবছরে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে বাজেট প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অর্থমন্ত্রীর ধারণা, আগামী বছর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পরিস্থিতি ‘স্বাভাবিক’ হবে এবং রাজস্ব আয়, বিনিয়োগ, রপ্তানি ‘বাড়বে’। আর এই ধারণার ওপর ভিত্তি করেই তিনি আগামীর বাজেট উপস্থাপন করেছেন।

বৈশ্বিক বাস্তবতা আর নানামুখী চাপের মধ্যে দাঁড়িয়েও ‘স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে’ যাত্রার চ্যালেঞ্জ নিয়ে ভোটের আগে নতুন অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট জাতীয় সংসদের সামনে উপস্থাপন করেছেন মুস্তফা কামাল।

এবারের বাজেটের শিরোনাম ‘উন্নয়নের অভিযাত্রার দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা’। বৃহস্পতিবার (১ জুন) স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এই বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী।

প্রস্তাবিত এই বাজেট বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের (৬ লাখ ৬০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা) চেয়ে ১৫.৩৩ শতাংশ বেশি। টাকার ওই অঙ্ক বাংলাদেশের মোট জিডিপির ১৫.২১ শতাংশের সমান। বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে মুস্তফা কামালের দেয়া বাজেটের আকার ছিল ২০২১-২২ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১৪.২৪ শতাংশ বেশি এবং জিডিপির চেয়ে ১৫.২৩ শতাংশের সমান।

বর্তমান পরিস্থিতিতে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট বাজেট বাস্তবায়ন করা কঠিন বলে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, জিডিপির তুলনায় বাংলাদেশের বাজেট কম হলেও বর্তমান সময় ও বাংলাদেশের সক্ষমতা অনুযায়ী এটি ‘উচ্চাভিলাসী’ বাজেট।

চলতি অর্থবছরের জন্য সরকার বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরেছিল ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। বৈরী পরিস্থিতিতে অর্থ মন্ত্রণালয় এবারের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য সংশোধন করে ৬ দশমিক ৫০ শতাংশে নামিয়েছিল। কিন্তু সেই লক্ষ্যও পূরণ হচ্ছে না।

এ প্রসঙ্গে গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিআরআই এর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ‘বিরাজমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে সাড়ে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পূরণ হবে না। মূল্যস্ফীতির চাপ, বিনিয়োগ কমে যাচ্ছে, আমদানি কমে যাচ্ছে। এই পরিবেশে প্রবৃদ্ধি খুব একটা যে হবে সেটা আশা করা ঠিক না। এ বছর বলা হচ্ছে ৬ দশমিক ০৩। সেটাও কমে হয়ত ৫ এর ঘরে চলে আসবে।’

একই কথা বলেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, ‘বর্তমানের এই সংকটময় পরিস্থিতিতে প্রবৃদ্ধির এই টার্গেট অনেক উচ্চাভিলাসী।’

রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রেও উচ্চভিলাসী লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। রাজস্ব আহরণে এনবিআর বিদায়ী অর্থবছরের লক্ষ্যের চেয়ে অনেকটা পিছিয়ে থাকলেও অর্থমন্ত্রী আশা করছেন, নতুন অর্থবছরের সম্ভাব্য ব্যয়ের প্রায় ৬৬ শতাংশ তিনি রাজস্ব খাত থেকে পাবেন।

তার প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব খাতে আয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এই অঙ্ক বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত রাজস্ব আয়ের ১৫.৫০ শতাংশ বেশি।

এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে কর হিসেবে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা যাবে বলে আশা করছেন অর্থমন্ত্রী। ফলে এনবিআরের কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে ১৬ শতাংশের বেশি। টাকার ওই অঙ্ক মোট বাজেটের ৫৬.৪৪ শতাংশের মতো।

গতবারের মতো এবারও সবচেয়ে বেশি কর আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট থেকে, ১ লাখ ৬৩ হাজার ৮৩৭ কোটি টাকা। এই অঙ্ক বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১২ শতাংশের মতো। বিদায়ী অর্থবছরের বাজেটে ভ্যাট থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা ছিল ১ লাখ ৪১ হাজার ১৯২ কোটি টাকা। সংশোধনে তা বাড়িয়ে ১ লাখ ৪৬ হাজার ২২৭ কোটি টাকা করা হয়।

আয়কর ও মুনাফার ওপর কর থেকে ১ লাখ ৫৩ হাজার ২৬০ কোটি টাকা রাজস্ব পাওয়ার আশা করা হয়েছে এবারের বাজেটে। বিদায়ী সংশোধিত বাজেটে এর পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২১ হাজার ৯৪ কোটি টাকা।

নতুন বাজেটে আমদানি শুল্ক থেকে ৪৬ হাজার ১৫ কোটি টাকা, সম্পূরক শুল্ক থেকে ৬০ হাজার ৭০৩ কোটি টাকা, রপ্তানি শুল্ক থেকে ৬৬ কোটি টাকা, আবগারি শুল্ক থেকে ৪ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকা এবং অন্যান্য কর ও শুল্ক থেকে ১ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করেছেন অর্থমন্ত্রী।

প্রতি বছরই অর্থমন্ত্রী এমন পরিকল্পনা করেন। কিন্তু বড় অঙ্কের রাজস্ব আহরণে ঘাটতিতে বছর শেষ হয়। তাই এবারও রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রাকেও উচ্চাভিলাসী হিসেবে দেখছেন অর্থনীতিবিদরা।

বর্তমানেও বিশ্বের অনেক দেশে মন্দার ঝুঁকি থাকলেও বাজেটের আকার বাড়িয়ে পরিকল্পনা সাজিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এবার ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেটে উন্নয়ন ব্যয় ১৫ শতাংশ বাড়িয়ে ধরা হয়েছে ২ লাখ ৭৭ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা।

এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। এরই মধ্যে এডিপি অনুমোদন করা হয়েছে। এবার পরিচালন ব্যয় (ঋণ, অগ্রিম ও দেনা পরিশোধ, খাদ্য হিসাব ও কাঠামোগত সমন্বয় বাদে) ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৭৫ হাজার ২৮১ কোটি টাকা, যা বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত অনুন্নয়ন বাজেটের চেয়ে প্রায় ১৪.৭২ শতাংশ বেশি।

এর মধ্যে ৯৪ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা যাবে সরকারের ঋণের ?সুদ পরিশোধে, যা মোট অনুন্নয়ন ব্যয়ের প্রায় ২০ শতাংশ। অনুন্নয়ন ব্যয়ের আরও প্রায় ১৬.২০ শতাংশ প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধে ব্যয় হয়, যার পরিমাণ অন্তত ৭৭ হাজার কোটি টাকা।

বাজেট পেশের আগে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমিও গরিবের সন্তান ছিলাম। একসময় আমি গরিব ছিলাম। আমি জানি গরিব হওয়াটা কত কষ্টের। কাউকে গরিব করে আমরা কিছু অর্জন করতে চাই না। সবাইকে নিয়ে সবার জন্যই আমরা বাজেটটা করতে চাই।’

২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। এবার ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে মোট ১ লাখ ২৬ হাজার ২৭২ কোটি টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের আকার গত অর্থবছরের চেয়ে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেশি। এবারের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তার আওতা, সুবিধাভোগীর সংখ্যা ও সহায়তার আকারও বাড়ছে।

গত ৩ বছর করমুক্ত আয়সীমা অপরিবর্তিত থাকলেও এবারের অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যক্তি করদাতার করমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৩ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া নারী ও ৬৫ বছর বা তদুর্ধ্ব বয়সের করদাতাদের আয়করমুক্ত সীমা সাড়ে ৩ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৪ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে।

এই সুযোগ ধনীদেরও দেয়া হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তিন কোটি টাকার সম্পদ থাকলেই তার কাছ থেকে সম্পদ কর বা সারচার্জ নেয়া হলেও আগামী অর্থবছর থেকে নূন্যতম সীমা চার কোটি টাকা করা হয়েছে।

অর্থাৎ গরিবের করমুক্ত আয় সীমা যেমন বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে, তেমনি ধনীদের সম্পদ করের সীমাও বাড়ানো হয়েছে।

তবে এবার করের আওতা বাড়ানোর জন্য রিটার্নের প্রমাণপত্র পেতে করদাতাকে নূন্যতম দুই হাজার টাকা আয়কর দিতে হবে। এমন প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সব মিলিয়ে ৪৪ ধরনের সেবা পেতে রিটার্ন জমার রসিদ লাগবে। তাদের এখন এসব সেবা পেতে করযোগ্য আয় না থাকলেও দুই হাজার টাকা কর দিতে হবে।

অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, ‘রাষ্ট্রের একজন নাগরিকের অন্যতম দায়িত্ব হচ্ছে রাষ্ট্র কর্তৃক প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধার বিপরীতে সরকারকে ন্যূনতম কর প্রদান করে সরকারের জনসেবামূলক কাজে অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ।’

তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই নীতি বাস্তবায়ন হলে মানুষ রিটার্ন জমা দিতে নিরুৎসাতি হবেন।

বিদায়ী অর্থবছরের মূল বাজেটে মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা, সংশোধনে তা সামান্য কমিয়ে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা করা হয়, যদিও মার্চ পর্যন্ত সময়ে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৬০ শতাংশ অর্জিত হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, ‘স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণ পরবর্তী সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ, ব্যয় দক্ষতা বৃদ্ধি ও সাশ্রয়ী অর্থায়নের দেশি-বিদেশি উৎস অনুসন্ধান হবে রাজস্ব খাতের নীতি-কৌশল। রাজস্ব আহরণে সব সম্ভাবনাকে আমরা কাজে লাগাতে চাই।’

আয় ও ব্যয়ের সামগ্রিক ঘাটতি থাকছে রেকর্ড ২ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ৫.২ শতাংশের সমান।

সাধারণত ঘাটতির পরিমাণ ৫ শতাংশের মধ্যে রেখে বাজেট প্রণয়নের চেষ্টা হয়। তবে টাকা যোগানোর চাপ থাকায় গত কয়েক বছর ধরেই তা সম্ভব হচ্ছে না।

বরাবরের মতোই বাজেট ঘাটতি পূরণে অর্থমন্ত্রীকে নির্ভর করতে হবে অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক ঋণের ওপর।

তিনি আশা করছেন, বিদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯০ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা ঋণ করে ওই ঘাটতি তিনি মেটাবেন।

অভ্যন্তরীণ খাতের মধ্যে ব্যাংকিং খাত থেকে রেকর্ড ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্র থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে আরও ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ধরা হয়েছে বাজেটে।

অর্থমন্ত্রী নতুন অর্থবছরের বাজেটে গড় মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে বেঁধে রাখার যে লক্ষ্যমাত্রা ধরেছেন, বাস্তবতার সঙ্গে তার খুব একটা মিল পাচ্ছেন না অর্থনীতিবিদরা।

তারা বলছেন, সরকার মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনার বিষয়টিকে বাজেটে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে, এটা ইতিবাচক। তবে অনেক কিছুই নির্ভর করছে ইউক্রেইন যুদ্ধ থামবে কি-না, তার ওপর।

প্রস্তাবে গড় মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে রেখে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ধরেছেন তিনি। এমন এক বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে তিনি ওই লক্ষ্যমাত্রা ধরেছেন, যখন ইউক্রেইন যুদ্ধের জেরে চলতি অর্থবছরের দশ মাসেই গড় মূল্যস্ফীতি প্রায় সাড়ে ৮ শতাংশের কাছাকাছি উঠে গেছে।

২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচককে ৫ দশমিক ৬ শতাংশে বেঁধে রাখার লক্ষ্য ঘোষণা করেছিলেন অর্থমন্ত্রী। পরে তা সংশোধন করে ৬ শতাংশ করা হয়। তবে সেই লক্ষ্যও পূরণ হচ্ছে না। কারণ বাজেটেই বলা হয়েছে বছর শেষে সাড়ে ৭ শতাংশ দাঁড়াবে।

এছাড়া সামষ্টিক অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা ও উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনে মুদ্রানীতিতে সময়োপযোগী পরিবর্তন আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

তিনি বলেছেন, ‘করোনার সংকটকালে মুদ্রাবাজারে প্রয়োজনীয় তারল্য সরবরাহ নিশ্চিতকরণের উদ্দেশ্যে রেপো সুদ হার ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে দুই ধাপে ১০০ বেসিস হ্রাস করে ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ করা হয়েছিল। অন্যদিকে রিভার্স রেপো সুদহার ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে ৭৫ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে ৪ শতাংশে পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছিল। পরে চাহিদাজনিত মূল্যস্ফীতির ক্রমবর্ধমান চাপ প্রশমনে রেপো সুদহার ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে ধাপে ধাপে ১২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে বর্তমানে ৬ শতাংশে এবং রিভার্স রেপো সুদহার ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৪ দশমিক ২৫ শতাংশে পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। এটি সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় ভূমিকার রাখছে।’

দেশের সব নাগরিককে পেনশন সুবিধার আওতায় আনতে চলতি বছরের শুরুতে যে আইন হয়েছে, তা নতুন অর্থবছরেই বাস্তবায়ন করতে চান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

বাজেট বক্তৃতায় তিনি বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অঙ্গীকার অনুযায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় আমি সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতি প্রবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। কাজটি ইতোমধ্যে অনেকটাই এগিয়ে এনেছি। মহান জাতীয় সংসদে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন-২০২৩ পাস হয়েছে। আশা করছি, ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকেই বাংলাদেশে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করা সম্ভব হবে।’

গত বছর বাজেট দিতে গিয়ে ‘কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায়’ প্রত্যাবর্তনের সংকল্প করেছিলেন অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামালকে। তবে ইউক্রেইন যুদ্ধের জেরে পরিবর্তিত বিশ্ব বাজার, জ্বালানি ও ডলার সংকট এবং মূল্যস্ফীতি তার সংকল্প বাস্তবায়ন করতে দেয়নি। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারকে হাঁটতে হয়েছে কৃচ্ছ্রের পথে। তার ওপর বিদেশি মুদ্রার ভান্ডারে স্বস্তি আনার চেষ্টায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ঋণ নিতে গিয়ে আর্থিক খাতের নানামুখী সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিতে হয়েছে। এবারও একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘অর্থনীতির স্থিতিশীলতাকে প্রধান গুরুত্বে রেখে সরকারকে কাজ করা উচিত বলে আমি মনে করি। অর্থনীতি স্থিতিশীল না থাকলে বাজেট দিয়েই হবে না। সেটা বাস্তবায়নও করতে হবে।’

back to top