alt

জাতীয়

‘স্বাভাবিক’ পরিস্থিতির আশায় ‘নতুন’ লক্ষ্যের বাজেট

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : বৃহস্পতিবার, ০১ জুন ২০২৩

অর্থনীতির সংকটের মধ্যেই আগামী অর্থবছরে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে বাজেট প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অর্থমন্ত্রীর ধারণা, আগামী বছর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পরিস্থিতি ‘স্বাভাবিক’ হবে এবং রাজস্ব আয়, বিনিয়োগ, রপ্তানি ‘বাড়বে’। আর এই ধারণার ওপর ভিত্তি করেই তিনি আগামীর বাজেট উপস্থাপন করেছেন।

বৈশ্বিক বাস্তবতা আর নানামুখী চাপের মধ্যে দাঁড়িয়েও ‘স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে’ যাত্রার চ্যালেঞ্জ নিয়ে ভোটের আগে নতুন অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট জাতীয় সংসদের সামনে উপস্থাপন করেছেন মুস্তফা কামাল।

এবারের বাজেটের শিরোনাম ‘উন্নয়নের অভিযাত্রার দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা’। বৃহস্পতিবার (১ জুন) স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এই বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী।

প্রস্তাবিত এই বাজেট বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের (৬ লাখ ৬০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা) চেয়ে ১৫.৩৩ শতাংশ বেশি। টাকার ওই অঙ্ক বাংলাদেশের মোট জিডিপির ১৫.২১ শতাংশের সমান। বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে মুস্তফা কামালের দেয়া বাজেটের আকার ছিল ২০২১-২২ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১৪.২৪ শতাংশ বেশি এবং জিডিপির চেয়ে ১৫.২৩ শতাংশের সমান।

বর্তমান পরিস্থিতিতে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট বাজেট বাস্তবায়ন করা কঠিন বলে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, জিডিপির তুলনায় বাংলাদেশের বাজেট কম হলেও বর্তমান সময় ও বাংলাদেশের সক্ষমতা অনুযায়ী এটি ‘উচ্চাভিলাসী’ বাজেট।

চলতি অর্থবছরের জন্য সরকার বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরেছিল ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। বৈরী পরিস্থিতিতে অর্থ মন্ত্রণালয় এবারের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য সংশোধন করে ৬ দশমিক ৫০ শতাংশে নামিয়েছিল। কিন্তু সেই লক্ষ্যও পূরণ হচ্ছে না।

এ প্রসঙ্গে গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিআরআই এর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ‘বিরাজমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে সাড়ে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পূরণ হবে না। মূল্যস্ফীতির চাপ, বিনিয়োগ কমে যাচ্ছে, আমদানি কমে যাচ্ছে। এই পরিবেশে প্রবৃদ্ধি খুব একটা যে হবে সেটা আশা করা ঠিক না। এ বছর বলা হচ্ছে ৬ দশমিক ০৩। সেটাও কমে হয়ত ৫ এর ঘরে চলে আসবে।’

একই কথা বলেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, ‘বর্তমানের এই সংকটময় পরিস্থিতিতে প্রবৃদ্ধির এই টার্গেট অনেক উচ্চাভিলাসী।’

রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রেও উচ্চভিলাসী লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। রাজস্ব আহরণে এনবিআর বিদায়ী অর্থবছরের লক্ষ্যের চেয়ে অনেকটা পিছিয়ে থাকলেও অর্থমন্ত্রী আশা করছেন, নতুন অর্থবছরের সম্ভাব্য ব্যয়ের প্রায় ৬৬ শতাংশ তিনি রাজস্ব খাত থেকে পাবেন।

তার প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব খাতে আয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এই অঙ্ক বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত রাজস্ব আয়ের ১৫.৫০ শতাংশ বেশি।

এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে কর হিসেবে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা যাবে বলে আশা করছেন অর্থমন্ত্রী। ফলে এনবিআরের কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে ১৬ শতাংশের বেশি। টাকার ওই অঙ্ক মোট বাজেটের ৫৬.৪৪ শতাংশের মতো।

গতবারের মতো এবারও সবচেয়ে বেশি কর আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট থেকে, ১ লাখ ৬৩ হাজার ৮৩৭ কোটি টাকা। এই অঙ্ক বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১২ শতাংশের মতো। বিদায়ী অর্থবছরের বাজেটে ভ্যাট থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা ছিল ১ লাখ ৪১ হাজার ১৯২ কোটি টাকা। সংশোধনে তা বাড়িয়ে ১ লাখ ৪৬ হাজার ২২৭ কোটি টাকা করা হয়।

আয়কর ও মুনাফার ওপর কর থেকে ১ লাখ ৫৩ হাজার ২৬০ কোটি টাকা রাজস্ব পাওয়ার আশা করা হয়েছে এবারের বাজেটে। বিদায়ী সংশোধিত বাজেটে এর পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২১ হাজার ৯৪ কোটি টাকা।

নতুন বাজেটে আমদানি শুল্ক থেকে ৪৬ হাজার ১৫ কোটি টাকা, সম্পূরক শুল্ক থেকে ৬০ হাজার ৭০৩ কোটি টাকা, রপ্তানি শুল্ক থেকে ৬৬ কোটি টাকা, আবগারি শুল্ক থেকে ৪ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকা এবং অন্যান্য কর ও শুল্ক থেকে ১ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করেছেন অর্থমন্ত্রী।

প্রতি বছরই অর্থমন্ত্রী এমন পরিকল্পনা করেন। কিন্তু বড় অঙ্কের রাজস্ব আহরণে ঘাটতিতে বছর শেষ হয়। তাই এবারও রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রাকেও উচ্চাভিলাসী হিসেবে দেখছেন অর্থনীতিবিদরা।

বর্তমানেও বিশ্বের অনেক দেশে মন্দার ঝুঁকি থাকলেও বাজেটের আকার বাড়িয়ে পরিকল্পনা সাজিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এবার ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেটে উন্নয়ন ব্যয় ১৫ শতাংশ বাড়িয়ে ধরা হয়েছে ২ লাখ ৭৭ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা।

এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। এরই মধ্যে এডিপি অনুমোদন করা হয়েছে। এবার পরিচালন ব্যয় (ঋণ, অগ্রিম ও দেনা পরিশোধ, খাদ্য হিসাব ও কাঠামোগত সমন্বয় বাদে) ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৭৫ হাজার ২৮১ কোটি টাকা, যা বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত অনুন্নয়ন বাজেটের চেয়ে প্রায় ১৪.৭২ শতাংশ বেশি।

এর মধ্যে ৯৪ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা যাবে সরকারের ঋণের ?সুদ পরিশোধে, যা মোট অনুন্নয়ন ব্যয়ের প্রায় ২০ শতাংশ। অনুন্নয়ন ব্যয়ের আরও প্রায় ১৬.২০ শতাংশ প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধে ব্যয় হয়, যার পরিমাণ অন্তত ৭৭ হাজার কোটি টাকা।

বাজেট পেশের আগে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমিও গরিবের সন্তান ছিলাম। একসময় আমি গরিব ছিলাম। আমি জানি গরিব হওয়াটা কত কষ্টের। কাউকে গরিব করে আমরা কিছু অর্জন করতে চাই না। সবাইকে নিয়ে সবার জন্যই আমরা বাজেটটা করতে চাই।’

২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। এবার ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে মোট ১ লাখ ২৬ হাজার ২৭২ কোটি টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের আকার গত অর্থবছরের চেয়ে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেশি। এবারের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তার আওতা, সুবিধাভোগীর সংখ্যা ও সহায়তার আকারও বাড়ছে।

গত ৩ বছর করমুক্ত আয়সীমা অপরিবর্তিত থাকলেও এবারের অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যক্তি করদাতার করমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৩ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া নারী ও ৬৫ বছর বা তদুর্ধ্ব বয়সের করদাতাদের আয়করমুক্ত সীমা সাড়ে ৩ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৪ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে।

এই সুযোগ ধনীদেরও দেয়া হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তিন কোটি টাকার সম্পদ থাকলেই তার কাছ থেকে সম্পদ কর বা সারচার্জ নেয়া হলেও আগামী অর্থবছর থেকে নূন্যতম সীমা চার কোটি টাকা করা হয়েছে।

অর্থাৎ গরিবের করমুক্ত আয় সীমা যেমন বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে, তেমনি ধনীদের সম্পদ করের সীমাও বাড়ানো হয়েছে।

তবে এবার করের আওতা বাড়ানোর জন্য রিটার্নের প্রমাণপত্র পেতে করদাতাকে নূন্যতম দুই হাজার টাকা আয়কর দিতে হবে। এমন প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সব মিলিয়ে ৪৪ ধরনের সেবা পেতে রিটার্ন জমার রসিদ লাগবে। তাদের এখন এসব সেবা পেতে করযোগ্য আয় না থাকলেও দুই হাজার টাকা কর দিতে হবে।

অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, ‘রাষ্ট্রের একজন নাগরিকের অন্যতম দায়িত্ব হচ্ছে রাষ্ট্র কর্তৃক প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধার বিপরীতে সরকারকে ন্যূনতম কর প্রদান করে সরকারের জনসেবামূলক কাজে অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ।’

তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই নীতি বাস্তবায়ন হলে মানুষ রিটার্ন জমা দিতে নিরুৎসাতি হবেন।

বিদায়ী অর্থবছরের মূল বাজেটে মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা, সংশোধনে তা সামান্য কমিয়ে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা করা হয়, যদিও মার্চ পর্যন্ত সময়ে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৬০ শতাংশ অর্জিত হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, ‘স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণ পরবর্তী সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ, ব্যয় দক্ষতা বৃদ্ধি ও সাশ্রয়ী অর্থায়নের দেশি-বিদেশি উৎস অনুসন্ধান হবে রাজস্ব খাতের নীতি-কৌশল। রাজস্ব আহরণে সব সম্ভাবনাকে আমরা কাজে লাগাতে চাই।’

আয় ও ব্যয়ের সামগ্রিক ঘাটতি থাকছে রেকর্ড ২ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ৫.২ শতাংশের সমান।

সাধারণত ঘাটতির পরিমাণ ৫ শতাংশের মধ্যে রেখে বাজেট প্রণয়নের চেষ্টা হয়। তবে টাকা যোগানোর চাপ থাকায় গত কয়েক বছর ধরেই তা সম্ভব হচ্ছে না।

বরাবরের মতোই বাজেট ঘাটতি পূরণে অর্থমন্ত্রীকে নির্ভর করতে হবে অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক ঋণের ওপর।

তিনি আশা করছেন, বিদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯০ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা ঋণ করে ওই ঘাটতি তিনি মেটাবেন।

অভ্যন্তরীণ খাতের মধ্যে ব্যাংকিং খাত থেকে রেকর্ড ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্র থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে আরও ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ধরা হয়েছে বাজেটে।

অর্থমন্ত্রী নতুন অর্থবছরের বাজেটে গড় মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে বেঁধে রাখার যে লক্ষ্যমাত্রা ধরেছেন, বাস্তবতার সঙ্গে তার খুব একটা মিল পাচ্ছেন না অর্থনীতিবিদরা।

তারা বলছেন, সরকার মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনার বিষয়টিকে বাজেটে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে, এটা ইতিবাচক। তবে অনেক কিছুই নির্ভর করছে ইউক্রেইন যুদ্ধ থামবে কি-না, তার ওপর।

প্রস্তাবে গড় মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে রেখে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ধরেছেন তিনি। এমন এক বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে তিনি ওই লক্ষ্যমাত্রা ধরেছেন, যখন ইউক্রেইন যুদ্ধের জেরে চলতি অর্থবছরের দশ মাসেই গড় মূল্যস্ফীতি প্রায় সাড়ে ৮ শতাংশের কাছাকাছি উঠে গেছে।

২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচককে ৫ দশমিক ৬ শতাংশে বেঁধে রাখার লক্ষ্য ঘোষণা করেছিলেন অর্থমন্ত্রী। পরে তা সংশোধন করে ৬ শতাংশ করা হয়। তবে সেই লক্ষ্যও পূরণ হচ্ছে না। কারণ বাজেটেই বলা হয়েছে বছর শেষে সাড়ে ৭ শতাংশ দাঁড়াবে।

এছাড়া সামষ্টিক অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা ও উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনে মুদ্রানীতিতে সময়োপযোগী পরিবর্তন আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

তিনি বলেছেন, ‘করোনার সংকটকালে মুদ্রাবাজারে প্রয়োজনীয় তারল্য সরবরাহ নিশ্চিতকরণের উদ্দেশ্যে রেপো সুদ হার ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে দুই ধাপে ১০০ বেসিস হ্রাস করে ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ করা হয়েছিল। অন্যদিকে রিভার্স রেপো সুদহার ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে ৭৫ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে ৪ শতাংশে পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছিল। পরে চাহিদাজনিত মূল্যস্ফীতির ক্রমবর্ধমান চাপ প্রশমনে রেপো সুদহার ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে ধাপে ধাপে ১২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে বর্তমানে ৬ শতাংশে এবং রিভার্স রেপো সুদহার ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৪ দশমিক ২৫ শতাংশে পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। এটি সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় ভূমিকার রাখছে।’

দেশের সব নাগরিককে পেনশন সুবিধার আওতায় আনতে চলতি বছরের শুরুতে যে আইন হয়েছে, তা নতুন অর্থবছরেই বাস্তবায়ন করতে চান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

বাজেট বক্তৃতায় তিনি বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অঙ্গীকার অনুযায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় আমি সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতি প্রবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। কাজটি ইতোমধ্যে অনেকটাই এগিয়ে এনেছি। মহান জাতীয় সংসদে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন-২০২৩ পাস হয়েছে। আশা করছি, ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকেই বাংলাদেশে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করা সম্ভব হবে।’

গত বছর বাজেট দিতে গিয়ে ‘কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায়’ প্রত্যাবর্তনের সংকল্প করেছিলেন অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামালকে। তবে ইউক্রেইন যুদ্ধের জেরে পরিবর্তিত বিশ্ব বাজার, জ্বালানি ও ডলার সংকট এবং মূল্যস্ফীতি তার সংকল্প বাস্তবায়ন করতে দেয়নি। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারকে হাঁটতে হয়েছে কৃচ্ছ্রের পথে। তার ওপর বিদেশি মুদ্রার ভান্ডারে স্বস্তি আনার চেষ্টায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ঋণ নিতে গিয়ে আর্থিক খাতের নানামুখী সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিতে হয়েছে। এবারও একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘অর্থনীতির স্থিতিশীলতাকে প্রধান গুরুত্বে রেখে সরকারকে কাজ করা উচিত বলে আমি মনে করি। অর্থনীতি স্থিতিশীল না থাকলে বাজেট দিয়েই হবে না। সেটা বাস্তবায়নও করতে হবে।’

ছবি

‘জোড়া লাগানো’ দুই শিশু ‘পৃথক হওয়া’র পর এবার ছাড়া পেলো হাসপাতাল থেকে

ছবি

খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়া ছাড়া আর পথ নেই: আইনমন্ত্রী

ছবি

দেশে ফিরলেন প্রধানমন্ত্রী

ছবি

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জ্যাক সুলিভানের বৈঠকের কথা জানাল হোয়াইট হাউস

ছবি

দেশের পথে প্রধানমন্ত্রী

ছবি

আইএমএফ ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির আগে পর্যালোচনা মিশন আসছে

ছবি

৯ মাসে ২১৭ সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানির শিকার

ছবি

ডেঙ্গুতে আরও ১৩ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ২৭৯৯

ছবি

‘সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন’ প্রণয়নের দাবি

ছবি

দুর্নীতি ও অপকর্মের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদেরকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে রাষ্ট্রপতির আহ্বান

ছবি

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অস্ত্রের ঝনঝনানির সুযোগ নেই: র‌্যাব

ছবি

বিবাহিত ছাত্রীদের হল ছাড়ার নির্দেশনা অযৌক্তিক : তথ্যমন্ত্রী

গণতন্ত্রের দুর্বলতার কারণে বাইরের শক্তির হস্তক্ষেপ

ছবি

গণমাধ্যমের ওপর ভিসা নীতি আরোপ নিয়ে যা বললেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র

কুড়িগ্রামে ‘স্বভাবকবি’ রাধাপদ রায়ের ওপর হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ বিশিষ্ট নাগরিকদের

ছবি

জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে ৫.৬ শতাংশ হওয়ার পূর্বাভাস বিশ্বব্যাংকের

ছবি

বায়ুদূষণের শীর্ষে লাহোর, ঢাকা ১১তম

ছবি

অগণতান্ত্রিক শক্তি ক্ষমতা দখল করতে পারবে না : প্রধানমন্ত্রী

ছবি

এলপি গ্যাস : টানা ৩ মাসে তিন দফায় দাম বাড়লো ৩৬%

ছবি

ডেঙ্গুতে আরও ১১ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ২৫৯৬

ছবি

বাংলাদেশে ভূমিকম্প অনুভূত

ছবি

ভিসানীতি নিয়ে যা হচ্ছে তা অতিরঞ্জিত : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

ছবি

১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডারের দাম বাড়লো ৭৯ টাকা

ছবি

বর্ডার খুলে দিলে আলু ২০-২৫ টাকায় নামবে : ভোক্তার ডিজি

ছবি

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রথম মাসে আয় পৌনে সাত কোটি টাকা

ছবি

নির্ধারিত সময়ের আগে চালু হতে পারে শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনাল

ছবি

জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে টিকাদান শুরু

ছবি

অপরাধী যেই হোক কাউকে ছাড় নয় : নবনিযুক্ত ডিএমপি কমিশনার

ছবি

মার্কিন ভিসা প্রক্রিয়া নিয়ে সুখবর দিলেন রেনা বিটার

ছবি

রেবোটিক্স এখন আর বিলাসী পন্য নয় : পলক

ছবি

ডেঙ্গুতে ৯ মাসেই মৃত্যু ছাড়ালো হাজার

ছবি

বিশ্বকে সুন্দর করার পূর্বশর্ত শিশুদের সুন্দর করে গড়ে তোলা : রাষ্ট্রপতি

ছবি

দেশে বছরে নতুন ১৩ হাজার নারী স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়

ছবি

পুলিশ লাইন্সের মেস সমূহে খাবার মান নিয়ে প্রশ্ন

ছবি

নগর ও গ্রামের জীবনযাত্রার বৈষম্য দূর করবে সরকার: প্রধানমন্ত্রী

২ কোটি ৯৫ লাখ ছাগল ও ভেড়াকে ভ্যাকসিন দেয়া হচ্ছে

tab

জাতীয়

‘স্বাভাবিক’ পরিস্থিতির আশায় ‘নতুন’ লক্ষ্যের বাজেট

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

বৃহস্পতিবার, ০১ জুন ২০২৩

অর্থনীতির সংকটের মধ্যেই আগামী অর্থবছরে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে বাজেট প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অর্থমন্ত্রীর ধারণা, আগামী বছর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পরিস্থিতি ‘স্বাভাবিক’ হবে এবং রাজস্ব আয়, বিনিয়োগ, রপ্তানি ‘বাড়বে’। আর এই ধারণার ওপর ভিত্তি করেই তিনি আগামীর বাজেট উপস্থাপন করেছেন।

বৈশ্বিক বাস্তবতা আর নানামুখী চাপের মধ্যে দাঁড়িয়েও ‘স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে’ যাত্রার চ্যালেঞ্জ নিয়ে ভোটের আগে নতুন অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট জাতীয় সংসদের সামনে উপস্থাপন করেছেন মুস্তফা কামাল।

এবারের বাজেটের শিরোনাম ‘উন্নয়নের অভিযাত্রার দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা’। বৃহস্পতিবার (১ জুন) স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এই বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী।

প্রস্তাবিত এই বাজেট বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের (৬ লাখ ৬০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা) চেয়ে ১৫.৩৩ শতাংশ বেশি। টাকার ওই অঙ্ক বাংলাদেশের মোট জিডিপির ১৫.২১ শতাংশের সমান। বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে মুস্তফা কামালের দেয়া বাজেটের আকার ছিল ২০২১-২২ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১৪.২৪ শতাংশ বেশি এবং জিডিপির চেয়ে ১৫.২৩ শতাংশের সমান।

বর্তমান পরিস্থিতিতে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট বাজেট বাস্তবায়ন করা কঠিন বলে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, জিডিপির তুলনায় বাংলাদেশের বাজেট কম হলেও বর্তমান সময় ও বাংলাদেশের সক্ষমতা অনুযায়ী এটি ‘উচ্চাভিলাসী’ বাজেট।

চলতি অর্থবছরের জন্য সরকার বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরেছিল ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। বৈরী পরিস্থিতিতে অর্থ মন্ত্রণালয় এবারের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য সংশোধন করে ৬ দশমিক ৫০ শতাংশে নামিয়েছিল। কিন্তু সেই লক্ষ্যও পূরণ হচ্ছে না।

এ প্রসঙ্গে গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিআরআই এর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ‘বিরাজমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে সাড়ে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পূরণ হবে না। মূল্যস্ফীতির চাপ, বিনিয়োগ কমে যাচ্ছে, আমদানি কমে যাচ্ছে। এই পরিবেশে প্রবৃদ্ধি খুব একটা যে হবে সেটা আশা করা ঠিক না। এ বছর বলা হচ্ছে ৬ দশমিক ০৩। সেটাও কমে হয়ত ৫ এর ঘরে চলে আসবে।’

একই কথা বলেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, ‘বর্তমানের এই সংকটময় পরিস্থিতিতে প্রবৃদ্ধির এই টার্গেট অনেক উচ্চাভিলাসী।’

রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রেও উচ্চভিলাসী লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। রাজস্ব আহরণে এনবিআর বিদায়ী অর্থবছরের লক্ষ্যের চেয়ে অনেকটা পিছিয়ে থাকলেও অর্থমন্ত্রী আশা করছেন, নতুন অর্থবছরের সম্ভাব্য ব্যয়ের প্রায় ৬৬ শতাংশ তিনি রাজস্ব খাত থেকে পাবেন।

তার প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব খাতে আয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এই অঙ্ক বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত রাজস্ব আয়ের ১৫.৫০ শতাংশ বেশি।

এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে কর হিসেবে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা যাবে বলে আশা করছেন অর্থমন্ত্রী। ফলে এনবিআরের কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে ১৬ শতাংশের বেশি। টাকার ওই অঙ্ক মোট বাজেটের ৫৬.৪৪ শতাংশের মতো।

গতবারের মতো এবারও সবচেয়ে বেশি কর আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট থেকে, ১ লাখ ৬৩ হাজার ৮৩৭ কোটি টাকা। এই অঙ্ক বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১২ শতাংশের মতো। বিদায়ী অর্থবছরের বাজেটে ভ্যাট থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা ছিল ১ লাখ ৪১ হাজার ১৯২ কোটি টাকা। সংশোধনে তা বাড়িয়ে ১ লাখ ৪৬ হাজার ২২৭ কোটি টাকা করা হয়।

আয়কর ও মুনাফার ওপর কর থেকে ১ লাখ ৫৩ হাজার ২৬০ কোটি টাকা রাজস্ব পাওয়ার আশা করা হয়েছে এবারের বাজেটে। বিদায়ী সংশোধিত বাজেটে এর পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২১ হাজার ৯৪ কোটি টাকা।

নতুন বাজেটে আমদানি শুল্ক থেকে ৪৬ হাজার ১৫ কোটি টাকা, সম্পূরক শুল্ক থেকে ৬০ হাজার ৭০৩ কোটি টাকা, রপ্তানি শুল্ক থেকে ৬৬ কোটি টাকা, আবগারি শুল্ক থেকে ৪ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকা এবং অন্যান্য কর ও শুল্ক থেকে ১ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করেছেন অর্থমন্ত্রী।

প্রতি বছরই অর্থমন্ত্রী এমন পরিকল্পনা করেন। কিন্তু বড় অঙ্কের রাজস্ব আহরণে ঘাটতিতে বছর শেষ হয়। তাই এবারও রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রাকেও উচ্চাভিলাসী হিসেবে দেখছেন অর্থনীতিবিদরা।

বর্তমানেও বিশ্বের অনেক দেশে মন্দার ঝুঁকি থাকলেও বাজেটের আকার বাড়িয়ে পরিকল্পনা সাজিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এবার ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেটে উন্নয়ন ব্যয় ১৫ শতাংশ বাড়িয়ে ধরা হয়েছে ২ লাখ ৭৭ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা।

এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। এরই মধ্যে এডিপি অনুমোদন করা হয়েছে। এবার পরিচালন ব্যয় (ঋণ, অগ্রিম ও দেনা পরিশোধ, খাদ্য হিসাব ও কাঠামোগত সমন্বয় বাদে) ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৭৫ হাজার ২৮১ কোটি টাকা, যা বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত অনুন্নয়ন বাজেটের চেয়ে প্রায় ১৪.৭২ শতাংশ বেশি।

এর মধ্যে ৯৪ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা যাবে সরকারের ঋণের ?সুদ পরিশোধে, যা মোট অনুন্নয়ন ব্যয়ের প্রায় ২০ শতাংশ। অনুন্নয়ন ব্যয়ের আরও প্রায় ১৬.২০ শতাংশ প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধে ব্যয় হয়, যার পরিমাণ অন্তত ৭৭ হাজার কোটি টাকা।

বাজেট পেশের আগে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমিও গরিবের সন্তান ছিলাম। একসময় আমি গরিব ছিলাম। আমি জানি গরিব হওয়াটা কত কষ্টের। কাউকে গরিব করে আমরা কিছু অর্জন করতে চাই না। সবাইকে নিয়ে সবার জন্যই আমরা বাজেটটা করতে চাই।’

২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। এবার ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে মোট ১ লাখ ২৬ হাজার ২৭২ কোটি টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের আকার গত অর্থবছরের চেয়ে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেশি। এবারের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তার আওতা, সুবিধাভোগীর সংখ্যা ও সহায়তার আকারও বাড়ছে।

গত ৩ বছর করমুক্ত আয়সীমা অপরিবর্তিত থাকলেও এবারের অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যক্তি করদাতার করমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৩ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া নারী ও ৬৫ বছর বা তদুর্ধ্ব বয়সের করদাতাদের আয়করমুক্ত সীমা সাড়ে ৩ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৪ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে।

এই সুযোগ ধনীদেরও দেয়া হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তিন কোটি টাকার সম্পদ থাকলেই তার কাছ থেকে সম্পদ কর বা সারচার্জ নেয়া হলেও আগামী অর্থবছর থেকে নূন্যতম সীমা চার কোটি টাকা করা হয়েছে।

অর্থাৎ গরিবের করমুক্ত আয় সীমা যেমন বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে, তেমনি ধনীদের সম্পদ করের সীমাও বাড়ানো হয়েছে।

তবে এবার করের আওতা বাড়ানোর জন্য রিটার্নের প্রমাণপত্র পেতে করদাতাকে নূন্যতম দুই হাজার টাকা আয়কর দিতে হবে। এমন প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সব মিলিয়ে ৪৪ ধরনের সেবা পেতে রিটার্ন জমার রসিদ লাগবে। তাদের এখন এসব সেবা পেতে করযোগ্য আয় না থাকলেও দুই হাজার টাকা কর দিতে হবে।

অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, ‘রাষ্ট্রের একজন নাগরিকের অন্যতম দায়িত্ব হচ্ছে রাষ্ট্র কর্তৃক প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধার বিপরীতে সরকারকে ন্যূনতম কর প্রদান করে সরকারের জনসেবামূলক কাজে অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ।’

তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই নীতি বাস্তবায়ন হলে মানুষ রিটার্ন জমা দিতে নিরুৎসাতি হবেন।

বিদায়ী অর্থবছরের মূল বাজেটে মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা, সংশোধনে তা সামান্য কমিয়ে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা করা হয়, যদিও মার্চ পর্যন্ত সময়ে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৬০ শতাংশ অর্জিত হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, ‘স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণ পরবর্তী সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ, ব্যয় দক্ষতা বৃদ্ধি ও সাশ্রয়ী অর্থায়নের দেশি-বিদেশি উৎস অনুসন্ধান হবে রাজস্ব খাতের নীতি-কৌশল। রাজস্ব আহরণে সব সম্ভাবনাকে আমরা কাজে লাগাতে চাই।’

আয় ও ব্যয়ের সামগ্রিক ঘাটতি থাকছে রেকর্ড ২ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ৫.২ শতাংশের সমান।

সাধারণত ঘাটতির পরিমাণ ৫ শতাংশের মধ্যে রেখে বাজেট প্রণয়নের চেষ্টা হয়। তবে টাকা যোগানোর চাপ থাকায় গত কয়েক বছর ধরেই তা সম্ভব হচ্ছে না।

বরাবরের মতোই বাজেট ঘাটতি পূরণে অর্থমন্ত্রীকে নির্ভর করতে হবে অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক ঋণের ওপর।

তিনি আশা করছেন, বিদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯০ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা ঋণ করে ওই ঘাটতি তিনি মেটাবেন।

অভ্যন্তরীণ খাতের মধ্যে ব্যাংকিং খাত থেকে রেকর্ড ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্র থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে আরও ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ধরা হয়েছে বাজেটে।

অর্থমন্ত্রী নতুন অর্থবছরের বাজেটে গড় মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে বেঁধে রাখার যে লক্ষ্যমাত্রা ধরেছেন, বাস্তবতার সঙ্গে তার খুব একটা মিল পাচ্ছেন না অর্থনীতিবিদরা।

তারা বলছেন, সরকার মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনার বিষয়টিকে বাজেটে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে, এটা ইতিবাচক। তবে অনেক কিছুই নির্ভর করছে ইউক্রেইন যুদ্ধ থামবে কি-না, তার ওপর।

প্রস্তাবে গড় মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে রেখে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ধরেছেন তিনি। এমন এক বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে তিনি ওই লক্ষ্যমাত্রা ধরেছেন, যখন ইউক্রেইন যুদ্ধের জেরে চলতি অর্থবছরের দশ মাসেই গড় মূল্যস্ফীতি প্রায় সাড়ে ৮ শতাংশের কাছাকাছি উঠে গেছে।

২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচককে ৫ দশমিক ৬ শতাংশে বেঁধে রাখার লক্ষ্য ঘোষণা করেছিলেন অর্থমন্ত্রী। পরে তা সংশোধন করে ৬ শতাংশ করা হয়। তবে সেই লক্ষ্যও পূরণ হচ্ছে না। কারণ বাজেটেই বলা হয়েছে বছর শেষে সাড়ে ৭ শতাংশ দাঁড়াবে।

এছাড়া সামষ্টিক অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা ও উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনে মুদ্রানীতিতে সময়োপযোগী পরিবর্তন আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

তিনি বলেছেন, ‘করোনার সংকটকালে মুদ্রাবাজারে প্রয়োজনীয় তারল্য সরবরাহ নিশ্চিতকরণের উদ্দেশ্যে রেপো সুদ হার ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে দুই ধাপে ১০০ বেসিস হ্রাস করে ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ করা হয়েছিল। অন্যদিকে রিভার্স রেপো সুদহার ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে ৭৫ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে ৪ শতাংশে পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছিল। পরে চাহিদাজনিত মূল্যস্ফীতির ক্রমবর্ধমান চাপ প্রশমনে রেপো সুদহার ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে ধাপে ধাপে ১২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে বর্তমানে ৬ শতাংশে এবং রিভার্স রেপো সুদহার ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৪ দশমিক ২৫ শতাংশে পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। এটি সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় ভূমিকার রাখছে।’

দেশের সব নাগরিককে পেনশন সুবিধার আওতায় আনতে চলতি বছরের শুরুতে যে আইন হয়েছে, তা নতুন অর্থবছরেই বাস্তবায়ন করতে চান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

বাজেট বক্তৃতায় তিনি বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অঙ্গীকার অনুযায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় আমি সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতি প্রবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। কাজটি ইতোমধ্যে অনেকটাই এগিয়ে এনেছি। মহান জাতীয় সংসদে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন-২০২৩ পাস হয়েছে। আশা করছি, ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকেই বাংলাদেশে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করা সম্ভব হবে।’

গত বছর বাজেট দিতে গিয়ে ‘কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায়’ প্রত্যাবর্তনের সংকল্প করেছিলেন অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামালকে। তবে ইউক্রেইন যুদ্ধের জেরে পরিবর্তিত বিশ্ব বাজার, জ্বালানি ও ডলার সংকট এবং মূল্যস্ফীতি তার সংকল্প বাস্তবায়ন করতে দেয়নি। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারকে হাঁটতে হয়েছে কৃচ্ছ্রের পথে। তার ওপর বিদেশি মুদ্রার ভান্ডারে স্বস্তি আনার চেষ্টায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ঋণ নিতে গিয়ে আর্থিক খাতের নানামুখী সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিতে হয়েছে। এবারও একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘অর্থনীতির স্থিতিশীলতাকে প্রধান গুরুত্বে রেখে সরকারকে কাজ করা উচিত বলে আমি মনে করি। অর্থনীতি স্থিতিশীল না থাকলে বাজেট দিয়েই হবে না। সেটা বাস্তবায়নও করতে হবে।’

back to top