alt

শোক ও স্মরন

সাংবাদিক রণেশ মৈত্র আর নেই

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : সোমবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২

ভাষা সৈনিক, বীরমুক্তিযোদ্ধা, দেশবরেণ্য একুশে পদক প্রাপ্ত প্রবীণ সাংবদিক ও কলামিস্ট, পাবনা প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক রণেশ মৈত্র মারা গেছেন।

সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) ভোর ৩ টা ৪৭ মিনিটে ঢাকা পপুলার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৯০ বছর।

রণেশ মৈত্র’র মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে পাবনায় বিভিন্ন স্তরের মানুষের মধ্যে নেমে আসে শোকের ছায়া।

পাবনা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আফরোজ আসাদ তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, তার সন্তান অস্ট্রেলিয়া থেকে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। তিনি পৌঁছানোর পর পারিবারিক সিদ্ধান্তে শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হবে।

তথ্যমতে, ১৯৩৩ সালের ৪ অক্টোবর রাজশাহী জেলার ন’হাটা গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। পৈত্রিক বাসস্থান পাবনা জেলার সাঁথিয়া উপজেলার ভুলবাড়িয়া গ্রামে। বাবা রমেশ চন্দ্র ছিলেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক। সপ্তম শ্রেণিতে ওঠার পর থেকেই রণেশ মৈত্র টিউশনি করে নিজের লেখাপড়ার খরচ চালাতেন।

নিজ জীবন সংগ্রাম থেকে শিক্ষা নিয়েই রণেশ মৈত্র দেশের অসহায়, শোষিত ও বঞ্চিত মানুষের জন্য আন্দোলন ও সংগ্রাম করেন। ১৯৫০ সালে পাবনা জিসিআই স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। ১৯৫৫ সালে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে আইএ এবং ১৯৫৯ সালে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

১৯৫১ সালে সিলেট থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক নওবেলাল পত্রিকায় সাংবাদিকতার মাধ্যমেই তার সাংবাদিকতা জীবন শুরু। এরপর কলকাতা থেকে প্রকাশিত দৈনিক সত্যযুগে তিন বছর সাংবাদিকতার পর ১৯৫৫ সালে তিনি যোগ দেন দৈনিক সংবাদে। ১৯৬১ সালে ডেইলি মর্নিং নিউজ এবং ১৯৬৭ সাল থেকে ১৯৯২ পর্যন্ত দৈনিক অবজারভারে পাবনা প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯২ সালে দি নিউ নেশনের মফস্বল সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৯৩ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত দি ডেইলি স্টারের পাবনা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। পরে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিয়ে একজন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক হিসেবে দেশের শীর্ষ পত্রপত্রিকায় কলাম লিখতেন।

১৯৬১ সালে পাবনায় সম্মেলনের মাধ্যমে গঠিত পূর্ব-পাকিস্তান সাংবাদিক সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। সে বছর প্রতিষ্ঠিত পাবনা প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি দীর্ঘদিন প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে জেলার সাংবাদিকদের নেতৃত্ব দিয়েছেন। সাংবাদিকতায় অবদানের জন্য তিনি ২০১৮ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন ।

১৯৪৮ সালে ছাত্র ইউনিয়ন থেকে ভাষা আন্দোলনের মিছিলে যোগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয় রণেশ মৈত্রের রাজনৈতিক জীবন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে জেল খেটেছেন। ষাটের দশকের শেষের দিকে বঙ্গবন্ধু যখন ঢাকা জেলে বন্দি, রাজশাহী জেল থেকে পরীক্ষা উপলক্ষে রণেশ মৈত্রকে ঢাকা জেলখানায় নেওয়া হয়। জেলখানার ভেতর প্রতিদিন সকাল-বিকালে হাঁটতেন বঙ্গবন্ধু। এ সময় বন্দিরা দূরে দূরে থাকতেন, অথবা তাদের দূরে দূরে রাখা হতো। একদিন রণেশ মৈত্র সাহস করে এগিয়ে গেলে বঙ্গবন্ধু ভালোবেসে তাকে হাঁটার সঙ্গী করে নেন। এরপর থেকে প্রতিদিন তার সঙ্গে হাঁটতেন। হাঁটতে হাঁটতে তাদের মধ্যে অনেক আলাপ হতো। তরুণ বামপন্থী ছাত্রনেতা রণেশ মৈত্র বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি নিয়ে অনেক অভিযোগ করতেন; কিন্তু বঙ্গবন্ধু তা শুনতেন আর হাসতেন। একদিন তিনি বললেন, আমার লক্ষ্য বাংলাদেশের স্বাধীনতা। শুনে বামপন্থী ছাত্রনেতা রণেশ মৈত্র মুখের ওপর বলেই ফেললেন, আপনাকে দিয়ে আর যাই হোক স্বাধীনতা হবে না। কারণ আপনার কেবলা তো আমেরিকা। আমেরিকা অন্তত আপনাকে স্বাধীনতা সংগ্রাম করতে দেবে না। বঙ্গবন্ধু বলেন, শোন রণেশ, আমার বিভিন্ন উইং বিভিন্ন জায়গায় কাজ করেছে। তাজউদ্দিনসহ যারা স্বাধীনতার জন্য কাজ করছে তাদের কাজ ভিন্ন। অন্যরা কাজ করছে ভিন্ন উইংয়ে। (তথ্য: রণেশ মৈত্রর লেখা থেকে প্রাপ্ত)

১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে তিনি পাবনা জেলার অন্যতম সংগঠক ছিলেন। সেই বছরেই তিনি ছাত্র ইউনিয়নের জেলা সাংগঠনিক কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৫৩ সালে এডওয়ার্ড কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে সাংস্কৃতিক সম্পাদক নির্বাচিত হন।

রাজনৈতিক আন্দোলনের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক আন্দোলন জোরদার করার লক্ষ্যে তিনি বাংলাদেশ অবজারভারের আব্দুল মতিন, কামাল লোহানীসহ প্রগতিশীল বন্ধুদের সঙ্গে গঠন করেন শিখা সংঘ নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন। সেখানে একটি সমৃদ্ধ পাঠাগার ছিল, যেখান থেকে শিখা নামে একটি হাতে লেখা পত্রিকাও প্রকাশিত হতো।

ভাষা আন্দোলন, ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনসহ পাক স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার জন্য তিনি বহুবার কারাবরণ করেন। ১৯৫৫ সালে জেল থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। ১৯৫৭ সালে মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ন্যাপে যোগ দেন। ১৯৬৭-এর দিকে তিনি মোজাফ্ফর আহমেদের নেতৃত্বাধীন ন্যাপে যোগদান করেন। দীর্ঘদিন ন্যাপের প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে ঐক্য ন্যাপের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও পাবনা জেলা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন।

সফল আইনজীবী হিসেবেও দীর্ঘদিন তিনি দায়িত্ব পালন করে পরে সেখান থেকেও স্বেচ্ছায় অবসর নেন।

তার স্ত্রী পূরবী মৈত্র বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের পাবনা জেলা শাখার সভাপতি। ৪ ছেলেমেয়ে সবাই নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত।

তার প্রকাশিত গ্রন্থ ‘রুদ্র চৈতন্যে বিপন্ন বাংলাদেশ’ পাঠক মহলে ব্যাপক সমাদৃত হয়েছে। এ ছাড়া তার প্রকাশিত স্মারক গ্রন্থ ‘নিঃসঙ্গ পথিক’ তার জীবনের উপর বিভিন্নজনের এক বর্ণিল চিত্রগাঁথা।

ছবি

মুস্তাফা জামান আব্বাসী আর নেই

ছবি

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক মারা গেছেন

ছবি

নির্বাসিত জীবনের চিরমুক্তি: কবি দাউদ হায়দার আর নেই

ছবি

প্রবীণ সাংবাদিক জয়নাল আবেদীন আর নেই

ছবি

অভিনেত্রী গুলশান আরা আহমেদ আর নেই

ছবি

কবি আবদুল হাই মাশরেকীর রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবি

ছবি

সংস্কৃতি অঙ্গনের কিংবদন্তি সন্‌জীদা খাতুনের মৃত্যুতে শোক

ছবি

সংস্কৃতি অঙ্গনের পথিকৃৎ সন্‌জীদা খাতুন আর নেই

ছবি

আছিয়ার মৃত্যুতে শাবিতে গায়েবানা জানাজা

ছবি

শরীয়তপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল ঔষধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধির

ছবি

গাইনি বিশেষজ্ঞ টি এ চৌধুরী আর নেই

ছবি

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা শওকত আলী আর নেই

ছবি

সেক্টর কমান্ডার সফিউল্লাহর শেষ বিদায়

ছবি

সাবেক এমপি আব্দুল কাদের খান মারা গেছেন

ছবি

কাজী নজরুল ইসলামের নাতি বাবুল কাজী আর নেই

ছবি

অর্থনীতিবিদ ও রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী আনিসুর রহমান আর নেই

ছবি

পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের মেঝ ছেলে ড. জামাল আনোয়ারের মৃত্যু

ছবি

নারায়ণগঞ্জের সাবেক এমপি এসএম আকরাম মারা গেছেন

ছবি

হেলাল হাফিজকে মরণোত্তর রাষ্ট্রীয় পদকের উদ্যোগ নেওয়া হবে: সংস্কৃতি উপদেষ্টা

ছবি

শুটিং তারকা সাদিয়া সুলতানার মৃত্যু

ছবি

কারাগারে হার্ট এ্যাটাকে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদৎ আলম ঝুনু মারা গেছেন

ছবি

সাবেক প্রধান বিচারপতি রুহুল আমিন আর নেই

ছবি

আজ আহমদুল কবিরের ২১তম মৃত্যুবার্ষিকী

ছবি

ভাষা সৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক এম আজিজুল জলিল আর নেই

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে অটোরিক্সা দূর্ঘটনায় শিক্ষার্থীর মৃত্যু

ছবি

সাবেক প্রধান বিচারপতি ফজলুল করিম আর নেই

ছবি

সংবা‌দের আখাউড়া প্রতি‌নিধি ও আখাউড়া প্রেসক্লাব সভা‌প‌তি মা‌নিক মিয়ার পিতৃবিয়োগ

ছবি

সাবেক মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার মারা গেছেন

ছবি

ক্রীড়া সাংবাদিক অঘোর মন্ডল মারা গেছেন

ছবি

ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমরানুল হকের মৃত্যু

ছবি

গায়ক আবিদুর রেজা জুয়েল মারা গেছেন

ছবি

ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার স্ত্রী সিগমা হুদা আর নেই

ছবি

কবি মাকিদ হায়দার মারা গেছেন

ছবি

নারায়ণগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রহমানের স্মরণে নাগরিক সভা

ছবি

মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম ছিলেন সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নিবেদিত আদর্শ নেতা

ছবি

নারায়ণগঞ্জের ক্রীড়া সংগঠক কুতুবউদ্দিন আকসির মারা গেছেন

tab

শোক ও স্মরন

সাংবাদিক রণেশ মৈত্র আর নেই

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

সোমবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২

ভাষা সৈনিক, বীরমুক্তিযোদ্ধা, দেশবরেণ্য একুশে পদক প্রাপ্ত প্রবীণ সাংবদিক ও কলামিস্ট, পাবনা প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক রণেশ মৈত্র মারা গেছেন।

সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) ভোর ৩ টা ৪৭ মিনিটে ঢাকা পপুলার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৯০ বছর।

রণেশ মৈত্র’র মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে পাবনায় বিভিন্ন স্তরের মানুষের মধ্যে নেমে আসে শোকের ছায়া।

পাবনা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আফরোজ আসাদ তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, তার সন্তান অস্ট্রেলিয়া থেকে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। তিনি পৌঁছানোর পর পারিবারিক সিদ্ধান্তে শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হবে।

তথ্যমতে, ১৯৩৩ সালের ৪ অক্টোবর রাজশাহী জেলার ন’হাটা গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। পৈত্রিক বাসস্থান পাবনা জেলার সাঁথিয়া উপজেলার ভুলবাড়িয়া গ্রামে। বাবা রমেশ চন্দ্র ছিলেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক। সপ্তম শ্রেণিতে ওঠার পর থেকেই রণেশ মৈত্র টিউশনি করে নিজের লেখাপড়ার খরচ চালাতেন।

নিজ জীবন সংগ্রাম থেকে শিক্ষা নিয়েই রণেশ মৈত্র দেশের অসহায়, শোষিত ও বঞ্চিত মানুষের জন্য আন্দোলন ও সংগ্রাম করেন। ১৯৫০ সালে পাবনা জিসিআই স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। ১৯৫৫ সালে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে আইএ এবং ১৯৫৯ সালে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

১৯৫১ সালে সিলেট থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক নওবেলাল পত্রিকায় সাংবাদিকতার মাধ্যমেই তার সাংবাদিকতা জীবন শুরু। এরপর কলকাতা থেকে প্রকাশিত দৈনিক সত্যযুগে তিন বছর সাংবাদিকতার পর ১৯৫৫ সালে তিনি যোগ দেন দৈনিক সংবাদে। ১৯৬১ সালে ডেইলি মর্নিং নিউজ এবং ১৯৬৭ সাল থেকে ১৯৯২ পর্যন্ত দৈনিক অবজারভারে পাবনা প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯২ সালে দি নিউ নেশনের মফস্বল সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৯৩ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত দি ডেইলি স্টারের পাবনা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। পরে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিয়ে একজন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক হিসেবে দেশের শীর্ষ পত্রপত্রিকায় কলাম লিখতেন।

১৯৬১ সালে পাবনায় সম্মেলনের মাধ্যমে গঠিত পূর্ব-পাকিস্তান সাংবাদিক সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। সে বছর প্রতিষ্ঠিত পাবনা প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি দীর্ঘদিন প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে জেলার সাংবাদিকদের নেতৃত্ব দিয়েছেন। সাংবাদিকতায় অবদানের জন্য তিনি ২০১৮ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন ।

১৯৪৮ সালে ছাত্র ইউনিয়ন থেকে ভাষা আন্দোলনের মিছিলে যোগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয় রণেশ মৈত্রের রাজনৈতিক জীবন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে জেল খেটেছেন। ষাটের দশকের শেষের দিকে বঙ্গবন্ধু যখন ঢাকা জেলে বন্দি, রাজশাহী জেল থেকে পরীক্ষা উপলক্ষে রণেশ মৈত্রকে ঢাকা জেলখানায় নেওয়া হয়। জেলখানার ভেতর প্রতিদিন সকাল-বিকালে হাঁটতেন বঙ্গবন্ধু। এ সময় বন্দিরা দূরে দূরে থাকতেন, অথবা তাদের দূরে দূরে রাখা হতো। একদিন রণেশ মৈত্র সাহস করে এগিয়ে গেলে বঙ্গবন্ধু ভালোবেসে তাকে হাঁটার সঙ্গী করে নেন। এরপর থেকে প্রতিদিন তার সঙ্গে হাঁটতেন। হাঁটতে হাঁটতে তাদের মধ্যে অনেক আলাপ হতো। তরুণ বামপন্থী ছাত্রনেতা রণেশ মৈত্র বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি নিয়ে অনেক অভিযোগ করতেন; কিন্তু বঙ্গবন্ধু তা শুনতেন আর হাসতেন। একদিন তিনি বললেন, আমার লক্ষ্য বাংলাদেশের স্বাধীনতা। শুনে বামপন্থী ছাত্রনেতা রণেশ মৈত্র মুখের ওপর বলেই ফেললেন, আপনাকে দিয়ে আর যাই হোক স্বাধীনতা হবে না। কারণ আপনার কেবলা তো আমেরিকা। আমেরিকা অন্তত আপনাকে স্বাধীনতা সংগ্রাম করতে দেবে না। বঙ্গবন্ধু বলেন, শোন রণেশ, আমার বিভিন্ন উইং বিভিন্ন জায়গায় কাজ করেছে। তাজউদ্দিনসহ যারা স্বাধীনতার জন্য কাজ করছে তাদের কাজ ভিন্ন। অন্যরা কাজ করছে ভিন্ন উইংয়ে। (তথ্য: রণেশ মৈত্রর লেখা থেকে প্রাপ্ত)

১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে তিনি পাবনা জেলার অন্যতম সংগঠক ছিলেন। সেই বছরেই তিনি ছাত্র ইউনিয়নের জেলা সাংগঠনিক কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৫৩ সালে এডওয়ার্ড কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে সাংস্কৃতিক সম্পাদক নির্বাচিত হন।

রাজনৈতিক আন্দোলনের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক আন্দোলন জোরদার করার লক্ষ্যে তিনি বাংলাদেশ অবজারভারের আব্দুল মতিন, কামাল লোহানীসহ প্রগতিশীল বন্ধুদের সঙ্গে গঠন করেন শিখা সংঘ নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন। সেখানে একটি সমৃদ্ধ পাঠাগার ছিল, যেখান থেকে শিখা নামে একটি হাতে লেখা পত্রিকাও প্রকাশিত হতো।

ভাষা আন্দোলন, ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনসহ পাক স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার জন্য তিনি বহুবার কারাবরণ করেন। ১৯৫৫ সালে জেল থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। ১৯৫৭ সালে মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ন্যাপে যোগ দেন। ১৯৬৭-এর দিকে তিনি মোজাফ্ফর আহমেদের নেতৃত্বাধীন ন্যাপে যোগদান করেন। দীর্ঘদিন ন্যাপের প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে ঐক্য ন্যাপের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও পাবনা জেলা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন।

সফল আইনজীবী হিসেবেও দীর্ঘদিন তিনি দায়িত্ব পালন করে পরে সেখান থেকেও স্বেচ্ছায় অবসর নেন।

তার স্ত্রী পূরবী মৈত্র বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের পাবনা জেলা শাখার সভাপতি। ৪ ছেলেমেয়ে সবাই নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত।

তার প্রকাশিত গ্রন্থ ‘রুদ্র চৈতন্যে বিপন্ন বাংলাদেশ’ পাঠক মহলে ব্যাপক সমাদৃত হয়েছে। এ ছাড়া তার প্রকাশিত স্মারক গ্রন্থ ‘নিঃসঙ্গ পথিক’ তার জীবনের উপর বিভিন্নজনের এক বর্ণিল চিত্রগাঁথা।

back to top