মঙ্গলবার অবরোধের প্রথম দিন হাইকোর্টের সামনে আগুন দেয়া হয় বাসে -সংবাদ
বিএনপি’র ডাকা টানা তিনদিনের অবরোধের প্রথমদিন মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিছিন্নভাবে কিছু সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। সংঘর্ষে দুইজন নেতা নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে বিএনপি। এছাড়াও পুলিশসহ আহত হয়েছে বেশ কয়েকজন।
‘সরকার পতনের’ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার সকাল থেকে সারাদেশে শুরু হয়েছে বিএনপির তিনদিনের সড়ক, রেল ও নৌপথ অবরোধ। অবরোধের প্রথমদিন সকালে দেশের কোথাও তেমনভাবে সক্রিয় দেখা যায়নি বিএনপি নেতাকর্মীদের।
সকালে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে দুটি বাস ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। চট্টগ্রামে একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেয়ার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া নারায়নগঞ্জ, কিশোরগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে বিছিন্নভাবে সংঘর্ষ হয়েছে।
রাজধানী ঢাকায় অবরোধের সমর্থনে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের কোন কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা যায়নি। তবে স্থানীয় নেতাকর্মীরা ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় জটিকা মিছিল করেছে বলে বিএনপি সূত্র জানিয়েছে।
মঙ্গলবার অবরোধের সময় রাজধানীতে সাধারণ মানুষের চলাচল অন্যান্য দিনের তুলনায় কম ছিল। সংখ্যায় কম হলেও চলেছে গণপরিবহন। তবে ঢাকার বাস টার্মিনালগুলো থেকে দূরপাল্লার কোন বাস ছেড়ে যায়নি। কমলাপুর থেকে ট্রেন চলাচল ছিল স্বাভাবিক। সাধারণ দিনের তুলনায় কম হলেও সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে লঞ্চ ছেড়ে গেছে।
সড়কে যানবাহন কম থাকলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। কিছুক্ষণ পর পর র?্যাব ও বিজিবির গাড়ি টহল দিয়েছে। মোড়ে মোড়ে পুলিশের সদস্যদের অবস্থান লক্ষ্য করা গেছে।
কিশোরগঞ্জে দুই জনের মৃত্যু
অবরোধকে ঘিরে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এতে দুজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এছাড়াও সংঘর্ষে আহত হয়েছেন পুলিশসহ প্রায় অর্ধশত ব্যক্তি। তবে সংঘর্ষ নিয়ে একপক্ষ আরেকপক্ষকে দায় দিচ্ছে।
দুইজন নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেন কুলিয়ারচরের ইউএনও সাদিয়া ইসলাম লুনা। নিহতদের নাম বিল্লাল হোসেন (৩০) ও রিফাত উল্লাহ (২০)। বিএনপি নেতাদের দাবি, রিফাত উপজেলার ছয়সূতি ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহসভাপতি। আর বিল্লাল একই ইউনিয়নের কৃষক দলের সভাপতি।
বিএনপির আরও দাবি, ২৫ থেকে ৩০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। অন্যদিকে কুলিয়ারচর থানার ওসি মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, সংঘর্ষে তিনিসহ ১৫-১৬ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জে ত্রিমুখী সংঘর্ষ
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে নারায়ণগঞ্জ আড়াইহাজার উপজেলার পাঁচরুখী এলাকায় আওয়ামী লীগ-বিএনপি ও পুলিশের ত্রিমুখী সংঘর্ষে তিন পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ২৩ জন আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। তবে আহতদের নাম পরিচয় জানা যায়নি।
জানা গেছে, এদিন সকাল সাড়ে ৮টার দিকে পাঁচরুখী এলাকায় বিএনপির নেতাকর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করে মিছিল করে। একই সময় বিএনপির সন্ত্রাস নৈরাজ্যের প্রতিবাদে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে বের হলে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পালটা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে শুরু হয় ত্রিমুখী সংঘর্ষ। এ সময় একটি বিআরটিসি বাসসহ দুটি বাস ভাঙচুর করে অবরোধকারীরা। পরে টিয়ারশেল ও রবার বুলেট ছুড়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সংঘর্ষে তিন পুলিশ সদস্যকে কুপিয়ে জখম করা হয়। এছাড়া সংঘর্ষের সময় বিএনপি ও আওয়ামী লীগের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। আহত পুলিশ সদস্যদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বিএনপির দাবি, পুলিশ তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে। তবে পুলিশ বলছে, বিএনপি মহাসড়ক অবরোধ করে তান্ডব চালিয়েছে।
বিভিন্ন স্থানে বিএনপির ঝটিকা মিছিল
মঙ্গলবার বিএনপির ডাকা অবরোধের প্রথম দিন রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় ঝটিকা মিছিল করেছে বলে জানিয়েছেন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। অবরোধের সমর্থনে সকালে ঢাকা নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল করে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। এদিকে সকালে বনানী সড়কে মিছিল করেছে যুবদল। একই সময়ে রাজধানীর কাঁটাবনে অবরোধের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপি। মিছিলটি হাতিরপুল থেকে শুরু হয়ে কাঁটাবন ঘুরে শাহবাগ মোড়ে এসে শেষ হয়।
আগারগাঁওয়ে মিছিল করেছে কৃষক দল। সকাল ১০টার দিকে যাত্রাবাড়ীতে অবরোধের সমর্থনে বিক্ষোভ করেছে মহানগর দক্ষিণ বিএনপির নেতাকর্মীরা। মিরপুর পল্লবীর সিরামিক রোডে সকাল ৭টায় ঝটিকা মিছিল করে বিএনপি ও যুবদল। পুলিশ সেখানে পৌঁছলে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
বিএনপির নেতারা জানান, খিলগাঁও, সবুজবাগ ও মুগদা এলাকায় মিছিল বের করেন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সকালে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের উদ্যোগে বিজয়নগর এলাকায় মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিল করেছে শাহবাগ ও রমনা থানা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। শ্যামপুর ও কদমতলী থানা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মিছিল বের করেন। বিএনপির পক্ষে থেকে দাবি করা হয়, সূত্রাপুর, গেন্ডারিয়া, ওয়ারী ও বংশাল এলাকার নেতাকর্মীরা গোপীবাগ থেকে মিছিল নিয়ে রাজধানী সুপার মার্কেট পর্যন্ত মিছিল করেছে। এ সময় পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাদের ধাওয়া, পাল্টা-ধাওয়া হয়।
বিএনপির সমমনা দল ও জোটের নেতাকর্মীরা অবরোধের সমর্থনে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে মিছিল করেছে । তারা সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে সরকার বিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেয়াসহ কোথাও কোথাও সংক্ষিপ্ত সমাবেশও করে। প্রেসক্লাব-পল্টন এলাকায় বিক্ষোভ করেছে ১২ দলীয় জোট। বাংলামোটর থেকে মগবাজার পর্যন্ত এলাকায় সকাল ১০টার দিকে অবরোধের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল করেছে গণ অধিকার পরিষদ।
ঢাকার বেশিরভাগ সড়ক ছিল ফাঁকা
বিএনপির অবরোধে অফিস আদালত খোলা থাকলেও সড়কে নেই চিরচেনা যানজট, নেই যাত্রীদের চাপ। রাজধানী ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ সড়ক ফাঁকা। সড়কে অল্প কয়েকটি গণপরিবহন মিললেও যাত্রী তেমন ছিল না।
অবরোধের মধ্যে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিস চলছে নিয়ম মেনে। ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠানও খোলা রয়েছে। তবে পথে বা সড়কে নেই আগের মতো পথচারীদের ভিড়। যারা চলাচল করছে তাদের বেশিরভাগই অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী।
এদিন রাজধানী সড়কের আধিপত্য ছিল রিকশা ও সিএনজির। যাত্রী কম পেলেও ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন চালকরা। তবে ফুটপাতের বেশ কিছু দোকান খোলা ছিল। যদিও সেখানে বিক্রি খুব একটা হয়নি বললেই চলে। পথচারীরা বলছেন, মানুষের মধ্যে অবরোধ নিয়ে আতঙ্ক কাজ করছে। তাই অনেকেই রাস্তায় বের হননি।
ঢাকা থেকে ছাড়েনি দূরপাল্লার বাস
অবরোধকে ঘিরে রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা গাবতলী অনেকটাই ফাঁকা দেখা গেছে। টেকনিক্যাল মোড়, মাজাররোড ও গাবতলী বাস টার্মিনালের বিভিন্ন মোড় ও কাউন্টারের সামনে যাত্রী ছিল না। ছাড়েনি দূরপাল্লার বাস। একই রকম অবস্থা দেখা গেছে মহাখালী, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালেও। বিভিন্ন পরিবহনের কাউন্টার খোলা দেখা গেলেও অলস বসে ছিলেন স্টাফরা।
বিভিন্ন পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজারদের দাবি, যাত্রী কম থাকায় তারা ‘বাস ছাড়তে পারছেন না’। তবে কেউ কেউ বাস না ছাড়ার পেছনে ‘অবরোধ আতঙ্কের’ কথাও জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক গাবতলী টার্মিনালের একটি পরিবহন কাউন্টার মাস্টার বলেন, ‘অবরোধে কখন কী হয় জানা নেই। বিভিন্ন জায়গায় বাসে আগুনের ঘটনা ঘটছেও। তাই চালক-শ্রমিকরা যেমন আতঙ্কে আছেন তেমনি বাস মালিকরাও শঙ্কা আছেন। একটা বাস পোড়লে বহু টাকা ক্ষতি হয়ে যায়। এসব কারণেই বাস ছাড়া যাচ্ছে না।’
মানুষের ভোগান্তি
দেড় বছরের ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে বিকেল চারটার দিকে মহাখালী টার্মিনালে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন কিশোরগঞ্জ ভৈরবের বাসিন্দা মোস্তাফিজুর রহমান। তার অসুস্থ ছেলে রাজধানীর কলেরা হাসপাতাল থেকে ভর্তি ছিল। এদিন সকালে ছেলেকে রিলিজ দেয়া হয়।
মোস্তাফিজ বলেন, ‘দুপুর থেকে অপেক্ষা করছি কোন বাস পাচ্ছি না। কোন বাসই যাচ্ছে না। কখন ছাড়বে তাও জানা নেই। অসুস্থ্য ছেলেকে নিয়ে বিপাকে পড়ে গেলাম।’
সায়েদাবাদ এলাকায় সকালে কুমিল্লাগামী যাত্রী তবারক হোসেন বলেন, ‘ভোরে এখানে এসেছি। জরুরি প্রয়োজনে বাড়ি যেতে হবে। কিন্তু কোনো বাস যেতে চাচ্ছে না।’
মঙ্গলবার অবরোধের প্রথম দিন হাইকোর্টের সামনে আগুন দেয়া হয় বাসে -সংবাদ
মঙ্গলবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৩
বিএনপি’র ডাকা টানা তিনদিনের অবরোধের প্রথমদিন মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিছিন্নভাবে কিছু সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। সংঘর্ষে দুইজন নেতা নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে বিএনপি। এছাড়াও পুলিশসহ আহত হয়েছে বেশ কয়েকজন।
‘সরকার পতনের’ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার সকাল থেকে সারাদেশে শুরু হয়েছে বিএনপির তিনদিনের সড়ক, রেল ও নৌপথ অবরোধ। অবরোধের প্রথমদিন সকালে দেশের কোথাও তেমনভাবে সক্রিয় দেখা যায়নি বিএনপি নেতাকর্মীদের।
সকালে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে দুটি বাস ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। চট্টগ্রামে একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেয়ার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া নারায়নগঞ্জ, কিশোরগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে বিছিন্নভাবে সংঘর্ষ হয়েছে।
রাজধানী ঢাকায় অবরোধের সমর্থনে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের কোন কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা যায়নি। তবে স্থানীয় নেতাকর্মীরা ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় জটিকা মিছিল করেছে বলে বিএনপি সূত্র জানিয়েছে।
মঙ্গলবার অবরোধের সময় রাজধানীতে সাধারণ মানুষের চলাচল অন্যান্য দিনের তুলনায় কম ছিল। সংখ্যায় কম হলেও চলেছে গণপরিবহন। তবে ঢাকার বাস টার্মিনালগুলো থেকে দূরপাল্লার কোন বাস ছেড়ে যায়নি। কমলাপুর থেকে ট্রেন চলাচল ছিল স্বাভাবিক। সাধারণ দিনের তুলনায় কম হলেও সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে লঞ্চ ছেড়ে গেছে।
সড়কে যানবাহন কম থাকলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। কিছুক্ষণ পর পর র?্যাব ও বিজিবির গাড়ি টহল দিয়েছে। মোড়ে মোড়ে পুলিশের সদস্যদের অবস্থান লক্ষ্য করা গেছে।
কিশোরগঞ্জে দুই জনের মৃত্যু
অবরোধকে ঘিরে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এতে দুজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এছাড়াও সংঘর্ষে আহত হয়েছেন পুলিশসহ প্রায় অর্ধশত ব্যক্তি। তবে সংঘর্ষ নিয়ে একপক্ষ আরেকপক্ষকে দায় দিচ্ছে।
দুইজন নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেন কুলিয়ারচরের ইউএনও সাদিয়া ইসলাম লুনা। নিহতদের নাম বিল্লাল হোসেন (৩০) ও রিফাত উল্লাহ (২০)। বিএনপি নেতাদের দাবি, রিফাত উপজেলার ছয়সূতি ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহসভাপতি। আর বিল্লাল একই ইউনিয়নের কৃষক দলের সভাপতি।
বিএনপির আরও দাবি, ২৫ থেকে ৩০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। অন্যদিকে কুলিয়ারচর থানার ওসি মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, সংঘর্ষে তিনিসহ ১৫-১৬ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জে ত্রিমুখী সংঘর্ষ
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে নারায়ণগঞ্জ আড়াইহাজার উপজেলার পাঁচরুখী এলাকায় আওয়ামী লীগ-বিএনপি ও পুলিশের ত্রিমুখী সংঘর্ষে তিন পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ২৩ জন আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। তবে আহতদের নাম পরিচয় জানা যায়নি।
জানা গেছে, এদিন সকাল সাড়ে ৮টার দিকে পাঁচরুখী এলাকায় বিএনপির নেতাকর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করে মিছিল করে। একই সময় বিএনপির সন্ত্রাস নৈরাজ্যের প্রতিবাদে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে বের হলে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পালটা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে শুরু হয় ত্রিমুখী সংঘর্ষ। এ সময় একটি বিআরটিসি বাসসহ দুটি বাস ভাঙচুর করে অবরোধকারীরা। পরে টিয়ারশেল ও রবার বুলেট ছুড়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সংঘর্ষে তিন পুলিশ সদস্যকে কুপিয়ে জখম করা হয়। এছাড়া সংঘর্ষের সময় বিএনপি ও আওয়ামী লীগের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। আহত পুলিশ সদস্যদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বিএনপির দাবি, পুলিশ তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে। তবে পুলিশ বলছে, বিএনপি মহাসড়ক অবরোধ করে তান্ডব চালিয়েছে।
বিভিন্ন স্থানে বিএনপির ঝটিকা মিছিল
মঙ্গলবার বিএনপির ডাকা অবরোধের প্রথম দিন রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় ঝটিকা মিছিল করেছে বলে জানিয়েছেন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। অবরোধের সমর্থনে সকালে ঢাকা নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল করে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। এদিকে সকালে বনানী সড়কে মিছিল করেছে যুবদল। একই সময়ে রাজধানীর কাঁটাবনে অবরোধের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপি। মিছিলটি হাতিরপুল থেকে শুরু হয়ে কাঁটাবন ঘুরে শাহবাগ মোড়ে এসে শেষ হয়।
আগারগাঁওয়ে মিছিল করেছে কৃষক দল। সকাল ১০টার দিকে যাত্রাবাড়ীতে অবরোধের সমর্থনে বিক্ষোভ করেছে মহানগর দক্ষিণ বিএনপির নেতাকর্মীরা। মিরপুর পল্লবীর সিরামিক রোডে সকাল ৭টায় ঝটিকা মিছিল করে বিএনপি ও যুবদল। পুলিশ সেখানে পৌঁছলে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
বিএনপির নেতারা জানান, খিলগাঁও, সবুজবাগ ও মুগদা এলাকায় মিছিল বের করেন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সকালে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের উদ্যোগে বিজয়নগর এলাকায় মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিল করেছে শাহবাগ ও রমনা থানা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। শ্যামপুর ও কদমতলী থানা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মিছিল বের করেন। বিএনপির পক্ষে থেকে দাবি করা হয়, সূত্রাপুর, গেন্ডারিয়া, ওয়ারী ও বংশাল এলাকার নেতাকর্মীরা গোপীবাগ থেকে মিছিল নিয়ে রাজধানী সুপার মার্কেট পর্যন্ত মিছিল করেছে। এ সময় পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাদের ধাওয়া, পাল্টা-ধাওয়া হয়।
বিএনপির সমমনা দল ও জোটের নেতাকর্মীরা অবরোধের সমর্থনে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে মিছিল করেছে । তারা সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে সরকার বিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেয়াসহ কোথাও কোথাও সংক্ষিপ্ত সমাবেশও করে। প্রেসক্লাব-পল্টন এলাকায় বিক্ষোভ করেছে ১২ দলীয় জোট। বাংলামোটর থেকে মগবাজার পর্যন্ত এলাকায় সকাল ১০টার দিকে অবরোধের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল করেছে গণ অধিকার পরিষদ।
ঢাকার বেশিরভাগ সড়ক ছিল ফাঁকা
বিএনপির অবরোধে অফিস আদালত খোলা থাকলেও সড়কে নেই চিরচেনা যানজট, নেই যাত্রীদের চাপ। রাজধানী ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ সড়ক ফাঁকা। সড়কে অল্প কয়েকটি গণপরিবহন মিললেও যাত্রী তেমন ছিল না।
অবরোধের মধ্যে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিস চলছে নিয়ম মেনে। ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠানও খোলা রয়েছে। তবে পথে বা সড়কে নেই আগের মতো পথচারীদের ভিড়। যারা চলাচল করছে তাদের বেশিরভাগই অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী।
এদিন রাজধানী সড়কের আধিপত্য ছিল রিকশা ও সিএনজির। যাত্রী কম পেলেও ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন চালকরা। তবে ফুটপাতের বেশ কিছু দোকান খোলা ছিল। যদিও সেখানে বিক্রি খুব একটা হয়নি বললেই চলে। পথচারীরা বলছেন, মানুষের মধ্যে অবরোধ নিয়ে আতঙ্ক কাজ করছে। তাই অনেকেই রাস্তায় বের হননি।
ঢাকা থেকে ছাড়েনি দূরপাল্লার বাস
অবরোধকে ঘিরে রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা গাবতলী অনেকটাই ফাঁকা দেখা গেছে। টেকনিক্যাল মোড়, মাজাররোড ও গাবতলী বাস টার্মিনালের বিভিন্ন মোড় ও কাউন্টারের সামনে যাত্রী ছিল না। ছাড়েনি দূরপাল্লার বাস। একই রকম অবস্থা দেখা গেছে মহাখালী, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালেও। বিভিন্ন পরিবহনের কাউন্টার খোলা দেখা গেলেও অলস বসে ছিলেন স্টাফরা।
বিভিন্ন পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজারদের দাবি, যাত্রী কম থাকায় তারা ‘বাস ছাড়তে পারছেন না’। তবে কেউ কেউ বাস না ছাড়ার পেছনে ‘অবরোধ আতঙ্কের’ কথাও জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক গাবতলী টার্মিনালের একটি পরিবহন কাউন্টার মাস্টার বলেন, ‘অবরোধে কখন কী হয় জানা নেই। বিভিন্ন জায়গায় বাসে আগুনের ঘটনা ঘটছেও। তাই চালক-শ্রমিকরা যেমন আতঙ্কে আছেন তেমনি বাস মালিকরাও শঙ্কা আছেন। একটা বাস পোড়লে বহু টাকা ক্ষতি হয়ে যায়। এসব কারণেই বাস ছাড়া যাচ্ছে না।’
মানুষের ভোগান্তি
দেড় বছরের ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে বিকেল চারটার দিকে মহাখালী টার্মিনালে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন কিশোরগঞ্জ ভৈরবের বাসিন্দা মোস্তাফিজুর রহমান। তার অসুস্থ ছেলে রাজধানীর কলেরা হাসপাতাল থেকে ভর্তি ছিল। এদিন সকালে ছেলেকে রিলিজ দেয়া হয়।
মোস্তাফিজ বলেন, ‘দুপুর থেকে অপেক্ষা করছি কোন বাস পাচ্ছি না। কোন বাসই যাচ্ছে না। কখন ছাড়বে তাও জানা নেই। অসুস্থ্য ছেলেকে নিয়ে বিপাকে পড়ে গেলাম।’
সায়েদাবাদ এলাকায় সকালে কুমিল্লাগামী যাত্রী তবারক হোসেন বলেন, ‘ভোরে এখানে এসেছি। জরুরি প্রয়োজনে বাড়ি যেতে হবে। কিন্তু কোনো বাস যেতে চাচ্ছে না।’