আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে জাতীয় পার্টির (জাপা) অভ্যান্তরীণ ‘জটিলতা’ কাটছে না। নির্বাচনের প্রার্থী ঘোষণায় দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদকে ঘিরে দুই বলয়ের ‘দ্বন্দ্ব’ এখন নতুন মাত্রা পেয়েছে।
জিএম কাদের পক্ষের নেতারা ‘এককভাবে’ নির্বাচনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। শুরুতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রশ্নে ‘দ্বিধাদ্বন্দ্ব’ থাকলেও শেষ সময়ে এসে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেয় দলটি।
কিন্তু দলের ভেতরের ‘বিভেদ’ না মিটিয়েই দলীয় প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করে দলটি। তালিকায় রওশন এরশাদের আসন ফাঁকা রাখলেও জায়গা হয়নি তার ছেলে রাহগীর আল মাহি সাদ এরশাদের। মনোনয়ন তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন রওশনপন্থি হিসেবে পরিচিত নেতারাও।
এমন পরিস্থিতিতে ‘ক্ষুব্ধ’ রওশন এরশাদ ও তার অনুসারীরা। রওশনপন্থি একাধিক নেতা জানিয়েছেন, সাদ এরশাদ ও নিজ অনুসারীদের মনোনয়ন না দিলে নির্বাচনে যাবেন না রওশন।
নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী আজ মনোনয়ন ফরম জমা দেয়ার শেষ দিন। আজকের পর মনোনয়ন ফরম জমা দেয়ার সময় না বাড়লে নির্বাচনে অংশ নেয়াটা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে রওশন এরশাদের। সঙ্গে তার ছেলে ও সমর্থিত নেতাদেরও। তবে এখনও নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপরে আশা ছাড়ছেন না রওশনপন্থিরা। যেকোনো মুহূর্তে ‘মিরাকল’ কিছু ঘটতে পারে বলে ধারণা তাদের।
রওশন এরশাদকে নির্বাচনে আনতে এবং সমঝোতার জন্য ‘প্রচেষ্টা’ চলছে বলেও দলীয় সূত্র জানায়। এর মধ্যে জিএম কাদের রওশন এরশাদের সঙ্গে দেখাও করেছেন বলেও সূত্রের খবর। পার্টির সব নেতারা ঐক্যমত পৌঁছতে দফা দফায় বৈঠক হচ্ছে বলেও নেতারা জানিয়েছেন। নেতাদের আশা, সমঝোতার মাধ্যমে ‘দুইপক্ষ একসঙ্গে’ নির্বাচনে লড়বে।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করলে শুরুতে দোটানায় থাকলেও পরে নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দেয় জাপা। এমন ঘোষণায় কারণ হিসেবে দলের মহাসচিব মো. মুজিবুল হক জানিয়েছেন, নির্বাচন কমিশনসহ সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে তাদের ‘আশ্বস্ত’ করা হয়েছে।
তবে একাধিক সূত্র জানায়, দলের কর্তৃত্ব নিয়েই জিএম কাদের-রওশন এরশাদের মধ্যে প্রধান সমস্যা। জিএম কাদের দলীয় মনোনয়নসহ দলীয় সব সিদ্ধান্ত তার হাতে রাখতে চান। অন্যদিকে দলে প্রভাব ধরে রাখতে চান রওশন এরশাদ।
নিজ সব অনুসারীদের মনোনয়নের ব্যাপারেও নিশ্চিত হতে চান তিনি। বিশেষ করে পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদের আসনেই তার ছেলে সাদ এরশাদের মনোনয়ন চেয়েছেন। সেখানে এবার ছাড়তে চান না জিএম কাদের।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর দুই নেতার পক্ষে নির্বাচন কমিশনে (ইসিতে) পৃথক পৃথক চিঠি দিয়ে ‘দ্বিমুখী অবস্থানও’ প্রকাশ পায়। রওশন এরশাদ চিঠিতে ‘জোটগতভাবে’ নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহের কথা জানান। আর অন্য চিঠিতে জিএম কাদেরকে দলের ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি হিসেবে অবগত করা হয়।
এমন পরিস্থিতির মধ্যেই রওশন এরশাদপন্থিদের বাদ রেখে গত সোমবার নির্বাচনের প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করে জাপা। তাতে রওশন এরশাদের অনুসারী মসিউর রহমান রাঙ্গা, গোলাম মসীহ, কাজী মামুনুর রশিদ, সাবেক প্রতিমন্ত্রী গোলাম সারওয়ার মিলন, সাবেক এমপি জিয়াউল হক মৃধা ও নুরুল ইসলাম, ডা. কে আর ইসলাম, ইকবাল হোসেন রাজুসহ বেশ কয়েকজনকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি।
সন্ধ্যায় তালিকা প্রকাশ করে পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু জানিয়েছেন, জাপা ‘এককভাবে’ নির্বাচনে অংশ নেবেন। তবে ওই রাতেই ‘একতরফাভাবে’ প্রার্থী ঘোষণার অভিযোগ আনেন রওশন এরশাদের রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ।
এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘এটা আমরা আশা করিনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘জাপা এর আগেও চারবার ভেঙেছে। প্রতিটি নির্বাচনের আগেই জাতীয় পার্টিতে ভাঙন দেখা দেয়। এটা আমাদের জন্য খুবই দুর্ভাগ্যজনক।’ গোলাম মসীহ বলেন, ‘এই ভাঙনের অবস্থায় তিনি (রওশন এরশাদ) নির্বাচনে যাবেন না। যতদিন পর্যন্ত এই বিষয়টির মীমাংসা না হবে, উনি নির্বাচনে যাবেন না। জিএম কাদের ইচ্ছাকৃতভাবে আমাদের নির্বাচনের বাইরে রাখার ব্যবস্থা করেছেন। বেগম রওশন এরশাদ নৌকা বা অন্য কোনো প্রতীকে ভোট করবেন না।’
তবে জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু জানিয়েছেন, রওশন এরশাদ নির্বাচন করলে তাকে ‘সবধরনের সহযোগিতা’ করা হবে। আর অন্যদের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সাদ এরশাদ তো মনোনয়ন চাননি আমাদের কাছে। কেউ যদি নিজে না আসেন, তাকে তো বাদ বলা যাবে না। দলের সঙ্গে যাদের সংশ্লিষ্টতা নেই, যাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে, তাদের মনোনয়ন দেয়া হয়নি। এখানে বলার আর কিছু নেই।’
বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩
আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে জাতীয় পার্টির (জাপা) অভ্যান্তরীণ ‘জটিলতা’ কাটছে না। নির্বাচনের প্রার্থী ঘোষণায় দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদকে ঘিরে দুই বলয়ের ‘দ্বন্দ্ব’ এখন নতুন মাত্রা পেয়েছে।
জিএম কাদের পক্ষের নেতারা ‘এককভাবে’ নির্বাচনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। শুরুতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রশ্নে ‘দ্বিধাদ্বন্দ্ব’ থাকলেও শেষ সময়ে এসে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেয় দলটি।
কিন্তু দলের ভেতরের ‘বিভেদ’ না মিটিয়েই দলীয় প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করে দলটি। তালিকায় রওশন এরশাদের আসন ফাঁকা রাখলেও জায়গা হয়নি তার ছেলে রাহগীর আল মাহি সাদ এরশাদের। মনোনয়ন তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন রওশনপন্থি হিসেবে পরিচিত নেতারাও।
এমন পরিস্থিতিতে ‘ক্ষুব্ধ’ রওশন এরশাদ ও তার অনুসারীরা। রওশনপন্থি একাধিক নেতা জানিয়েছেন, সাদ এরশাদ ও নিজ অনুসারীদের মনোনয়ন না দিলে নির্বাচনে যাবেন না রওশন।
নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী আজ মনোনয়ন ফরম জমা দেয়ার শেষ দিন। আজকের পর মনোনয়ন ফরম জমা দেয়ার সময় না বাড়লে নির্বাচনে অংশ নেয়াটা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে রওশন এরশাদের। সঙ্গে তার ছেলে ও সমর্থিত নেতাদেরও। তবে এখনও নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপরে আশা ছাড়ছেন না রওশনপন্থিরা। যেকোনো মুহূর্তে ‘মিরাকল’ কিছু ঘটতে পারে বলে ধারণা তাদের।
রওশন এরশাদকে নির্বাচনে আনতে এবং সমঝোতার জন্য ‘প্রচেষ্টা’ চলছে বলেও দলীয় সূত্র জানায়। এর মধ্যে জিএম কাদের রওশন এরশাদের সঙ্গে দেখাও করেছেন বলেও সূত্রের খবর। পার্টির সব নেতারা ঐক্যমত পৌঁছতে দফা দফায় বৈঠক হচ্ছে বলেও নেতারা জানিয়েছেন। নেতাদের আশা, সমঝোতার মাধ্যমে ‘দুইপক্ষ একসঙ্গে’ নির্বাচনে লড়বে।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করলে শুরুতে দোটানায় থাকলেও পরে নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দেয় জাপা। এমন ঘোষণায় কারণ হিসেবে দলের মহাসচিব মো. মুজিবুল হক জানিয়েছেন, নির্বাচন কমিশনসহ সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে তাদের ‘আশ্বস্ত’ করা হয়েছে।
তবে একাধিক সূত্র জানায়, দলের কর্তৃত্ব নিয়েই জিএম কাদের-রওশন এরশাদের মধ্যে প্রধান সমস্যা। জিএম কাদের দলীয় মনোনয়নসহ দলীয় সব সিদ্ধান্ত তার হাতে রাখতে চান। অন্যদিকে দলে প্রভাব ধরে রাখতে চান রওশন এরশাদ।
নিজ সব অনুসারীদের মনোনয়নের ব্যাপারেও নিশ্চিত হতে চান তিনি। বিশেষ করে পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদের আসনেই তার ছেলে সাদ এরশাদের মনোনয়ন চেয়েছেন। সেখানে এবার ছাড়তে চান না জিএম কাদের।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর দুই নেতার পক্ষে নির্বাচন কমিশনে (ইসিতে) পৃথক পৃথক চিঠি দিয়ে ‘দ্বিমুখী অবস্থানও’ প্রকাশ পায়। রওশন এরশাদ চিঠিতে ‘জোটগতভাবে’ নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহের কথা জানান। আর অন্য চিঠিতে জিএম কাদেরকে দলের ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি হিসেবে অবগত করা হয়।
এমন পরিস্থিতির মধ্যেই রওশন এরশাদপন্থিদের বাদ রেখে গত সোমবার নির্বাচনের প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করে জাপা। তাতে রওশন এরশাদের অনুসারী মসিউর রহমান রাঙ্গা, গোলাম মসীহ, কাজী মামুনুর রশিদ, সাবেক প্রতিমন্ত্রী গোলাম সারওয়ার মিলন, সাবেক এমপি জিয়াউল হক মৃধা ও নুরুল ইসলাম, ডা. কে আর ইসলাম, ইকবাল হোসেন রাজুসহ বেশ কয়েকজনকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি।
সন্ধ্যায় তালিকা প্রকাশ করে পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু জানিয়েছেন, জাপা ‘এককভাবে’ নির্বাচনে অংশ নেবেন। তবে ওই রাতেই ‘একতরফাভাবে’ প্রার্থী ঘোষণার অভিযোগ আনেন রওশন এরশাদের রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ।
এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘এটা আমরা আশা করিনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘জাপা এর আগেও চারবার ভেঙেছে। প্রতিটি নির্বাচনের আগেই জাতীয় পার্টিতে ভাঙন দেখা দেয়। এটা আমাদের জন্য খুবই দুর্ভাগ্যজনক।’ গোলাম মসীহ বলেন, ‘এই ভাঙনের অবস্থায় তিনি (রওশন এরশাদ) নির্বাচনে যাবেন না। যতদিন পর্যন্ত এই বিষয়টির মীমাংসা না হবে, উনি নির্বাচনে যাবেন না। জিএম কাদের ইচ্ছাকৃতভাবে আমাদের নির্বাচনের বাইরে রাখার ব্যবস্থা করেছেন। বেগম রওশন এরশাদ নৌকা বা অন্য কোনো প্রতীকে ভোট করবেন না।’
তবে জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু জানিয়েছেন, রওশন এরশাদ নির্বাচন করলে তাকে ‘সবধরনের সহযোগিতা’ করা হবে। আর অন্যদের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সাদ এরশাদ তো মনোনয়ন চাননি আমাদের কাছে। কেউ যদি নিজে না আসেন, তাকে তো বাদ বলা যাবে না। দলের সঙ্গে যাদের সংশ্লিষ্টতা নেই, যাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে, তাদের মনোনয়ন দেয়া হয়নি। এখানে বলার আর কিছু নেই।’