দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের বিরুদ্ধে তৃতীয় দিনে ১৫৫ জন প্রার্থী নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আপিল আবেদন করেছেন। তাদের মধ্যে ১৫১ জন নিজের প্রার্থিতা ফেরত পেতে এবং চারটি আপিল আবেদন পড়েছে বৈধ প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করার জন্য।

তিন দিনে মোট আপিলকারীর সংখ্যা দাঁড়ালো ৩৩৮। এর মধ্যে মোট সাতজনের প্রার্থিতা বাতিলের আবেদনও রয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম এসব তথ্য জানান।

নির্বাচন ভবনের সামনে ১০টি অস্থায়ী বুথে প্রার্থীদের আপিল আবেদন জমা নেয়া হয়। আগামী ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত আপিল আবেদন জমা দেয়া যাবে। ১০ ডিসেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত আপিল শুনানির মাধ্যমে রায় ঘোষণা করা হবে।

প্রার্থিতা ফিরে পেতে প্রথম দিন মঙ্গলবার ৪২ জন আপিল আবেদন করেন। দ্বিতীয় দিন বুধবার ১৪১ জন আপিল আবেদন করেন; এর মধ্যে ১৩৮ জন প্রার্থিতা ফিরে পেতে এবং তিনটি আপিল আবেদন পড়ে বৈধ প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করার জন্য।

বৈধ প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলের আপিল

যশোর-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এনামুল হকের মনোনয়নপত্রের বৈধতার বিরুদ্ধে আপিল করেছেন ওই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য রনজিত কুমার রায়। এবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন রনজিত। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী এনামুলের বিরুদ্ধে ঋণখেলাপি হওয়ার অভিযোগ করেছেন।

ময়মনসিংহ-৮ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহমুদ হাসানের মনোনয়নের বৈধতার বিরুদ্ধে আপিল করেছেন জাতীয় পার্টির বর্তমান সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম। এবারও তিনি ওই আসন থেকে নির্বাচন করছেন।

বরিশাল-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর মনোনয়নপত্রের বৈধতার বিরুদ্ধে আপিল করা হয়েছে। হলফনামায় সম্পদ বিবরণীতে অসত্য দেয়ার অভিযোগ তুলে ইসিতে ওই আবেদন করেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহিদ ফারুকের মনোনয়নপত্রের সমর্থনকারী কে বি এস আহমেদ।

এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য জাহিদ ফারুক। অন্যদিকে সাদিক আবদুল্লাহ বরিশাল সিটি করপোরেশনের সদ্যবিদায়ী মেয়র। তার পিতা আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ বরিশাল-১ আসনের সংসদ সদস্য এবং আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের সদস্য।

এ বছর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নানা কারণে বিতর্কিত সাদিক আদুল্লাহর বদলে তার চাচা আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাতকে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে

নৌকার মনোনয়ন চেয়েও ব্যর্থ হন সাদিক আবদুল্লাহ।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনশ’ আসনে ১ হাজার ৯৮৫টি মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করে ইসি। বাতিল করে ৭৩১টি; এর অধিকাংশই স্বতন্ত্র প্রার্থী।

ঋণখেলাপি, দ্বৈত নাগরিকত্ব, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ভোটারের স্বাক্ষরের তালিকায় গরমিল, প্রয়োজনীয় নথিপত্র না থাকাসহ বিভিন্ন কারণে এসব মনোনয়নপত্র বাতিল করেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা।

বাছাইয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বাদপড়া, নৌকার মনোনয়নবঞ্চিত প্রার্থী টিকে যাওয়ার ঘটনা যেমন আছে, তেমনি দীর্ঘদিনের মিত্র জাতীয় পার্টির আসনে দলীয় (আওয়ামী লীগ) প্রার্থী বাদপড়ার ঘটনাও ঘটেছে।

কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ-তাড়াইল) আসন থেকে নির্বাচনে বৈধ প্রার্থী জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। তিন এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য। আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. নাসিরুল ইসলাম খানের মনোনয়নপত্র এখানে বাতিল হয়।

কারামুক্ত হয়ে ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঠালিয়া) আসনে বিএনপির সাবেক নেতা মেজর (অব.) শাহজাহান ওমর আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে বৈধ হন। এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়।

দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকার অভিযোগে বরিশাল-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাম্মী আহম্মেদের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করা বর্তমান সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথের প্রার্থিতা বৈধত পায়।

তফসিল অনুযায়ী, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৭ ডিসেম্বর। প্রতীক বরাদ্দ ১৮ ডিসেম্বর। এরপর থেকে নির্বাচনী প্রচারণা চলানো যাবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। আগামী ৭ জানুয়ারি এই নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে।