দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করে জমিয়ে তুলতে গিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বঞ্চিত নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দেয়। নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক এবং ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে দলীয় প্রতীকের প্রার্থী ছাড়াও স্বতন্ত্র হয়ে অনেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাতে অনেক জায়গার মত গাজীপুরে দলীয় কৌশলে ‘বেকায়দায়’ পরেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার হেভিওয়েট প্রার্থীরা। গাজীপুরের ৫টি আসনের মধ্যে ৪টি আসনে আওয়ামী লীগের এই স্বতন্ত্র প্রার্থীরা দুই মন্ত্রী এবং একজন সংসদ সদস্যের মাথাব্যাথার কারন হয়ে দারিয়েছেন।
এর কারন হিসেবে স্থানীয়রা মনে করছেন, জনপ্রিয়তা প্রমান করতে তিন স্বতন্ত্র প্রর্থীকে বিজয়ী করতে উঠেপরে লেগেছেন গাজীপুরের সাবেক সিটি মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। ইতোমধ্যে তিনি ৩ স্বতন্ত্র প্রার্থীকে একমঞ্চে নিয়ে নৌকার প্রার্থীদের বিরুদ্ধে প্রচারনায় নেমেছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষে সাবেক সিটি মেয়র মাঠে নামায় নৌকার এসব হেভিওয়েট প্রার্থীদের নির্বাচনে জয়ী হওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাজীপুরের ৫টি আসনের সবকটি আসনেই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে ভোটারদের কাছে ভোট চাওয়া থেকে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে শোডাউন ও ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার করা। ইতোমধ্যে কোন কোন প্রার্থীকে প্রচার ও গনসংযোগে অপর প্রার্থীর কর্মীদের দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়েছেন বলে সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করতেও দেখা গেছে।
নির্বাচন কমিশন সূত্র অনুযায়ী, গাজীপুরের পাঁচটি আসনের মধ্যে তিনটিতেই নারী প্রার্থী নৌকার মনোনয়োন পেয়েছেন। আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়ে গাজীপুরে যারা নৌকার মাঝি হয়েছেন তারা হলেন, গাজীপুর-১ আ ক ম মোজাম্মেল হক, গাজীপুর-২ জাহিদ আহসান রাসেল, গাজীপুর-৩ রুমানা আলী টুসি, গাজীপুর-৪ সিমিন হোসেন রিমি ও গাজীপুর-৫ এ মেহের আফরোজ চুমকি। সূত্র অনুযায়ী গাজীপুরের ৫টি আসনে মোট প্রার্থী ৩৮ জন। এরমধ্যে গাজীপুর-১ ৭জন, গাজীপুর-২ ৯জন, গাজীপুর-৩ ৭জন, গাজীপুর-৪ ৭জন এবং গাজীপুর-৫ ৮জন।
স্থানীয় সূত্র ও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাজীপুরে যাদের আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে তাদের ৫ জনের মধ্যে গাজীপুর-১ এর আ ক ম মোজাম্মেল হক ছাড়া বাকি ৪ জনই বিভিন্ন সময়ে পিতার পরিচয়ে নিজ নিজ আসনে নৌকার মাঝি হয়ে হাল ধরেছেন।
এদিকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুর-২ আসন থেকে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে পাননি। তবে নিজে প্রার্থী হতে না পারলেও ভোটের মাঠে তিনি সক্রিয়। স্থানীয়রা বলছেন, গাজীপুরের ৪টি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের আর্থিক সহ সব ধরনের সহায়তা দিচ্ছেন জাহাঙ্গীর। ফলে এই স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নৌকার প্রার্থীদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে যতটুকু জানা গেছে, শুধুমাত্র গাজীপুর-৪ আসনে সিমিন হোসেন রিমি তুলনামূলকভাবে কম চাপে আছেন। কোনো দুর্ঘটনা না ঘটলে তার বিজয়ের ব্যাপারে অনেকেই আশাবাদী। কিন্তু বাকি চারজনকেই চোখ রাঙাচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। যাদের নেপথ্যে আছেন সিটির সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম।
অবস্থাদৃষ্টে দেখা যাচ্ছে গাজীপুরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি ও নির্বাচনে মূল ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছেন জাহাঙ্গীর, যিনি ক্ষমতাসীন দল থেকে দুবার বহিষ্কৃত হওয়ার পরে ক্ষমা পেয়ে আবার দলে ফিরেছেন। কিন্তু গাজীপুরের স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে যার দূরত্ব অনেক।
স্থানীয়রা বলছেন, জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক থাকাকালিন সময়ে সিটির প্রায় সব এলাকায় তার পক্ষে বিশাল কর্মী বাহীনি গড়ে তুলেন। এছাড়া গার্মেন্টস ব্যবসার সাথে জড়িত থাকার কারনে গার্মেন্টস শ্রমিকদের উপরও তার একটা প্রভাব রয়েছে। যা তিনি এই নির্বাচনকালিন সময়ে কাজে লাগাচ্ছেন। জাহাঙ্গীর নিজেও বিভিন্ন বক্তব্যে বলেছেন, ‘আমি গাজীপুরের ২৪ লাখ শ্রমিক নিয়ে কাজ করি। তারা আমাকে ভালোবাসে, আমিও তাদেরকে ভালোবাসি। তাদের ভালো মন্দ দেখার দ্বায়িত্বও আমার। নির্বাচনে এই গার্মেন্টস শ্রমিকদের একটা বড় ভূমিকা থাকবে বলে তিনি মনে করেন।
তবে এই শ্রমিকরা ভোটের সমীকরনে বড় ফ্যাক্টর হলেও নির্বাচনের সময় ৩ দিনের ছুটি ভোটের ফলাফল উলট পালট করে দিতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টরা।
সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গাজীপুরে আলোচনা, জাহাঙ্গীর স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন মূলত ব্যক্তিগত ক্ষোভ থেকে। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী এবং ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তার অবস্থানের কথা গাজীপুরে সবার আলচনার বিষয়। তার এই ক্ষোভের কারণ, জাহাঙ্গীর মনে করেন তাকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারের পেছনে ওই দুজনের ভূমিকা আছে।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের ৩জন স্বতন্ত্র প্রার্থীর জন্য জাহাঙ্গীর আলম সরাসরি সহায়তা ও প্রচারনা করছেন। তারা হলেন, গাজীপুর-১ মো: রেজাউল করিম (ট্রাক), গাজীপুর-২ কাজী আলিম উদ্দিন বুদ্দিন (ট্রাক), ও গাজীপুর-৫ এ আখতারুজ্জামান (ট্রাক)। এই ৩ প্রার্থীকে নিয়ে জাহাঙ্গীরকে একই মঞ্চে নির্বাচনী প্রচারনা করতেও দেখা গেছে। এছাড়াও গাজীপুর-৩ মুহাম্মদ ইকবাল হোসেনকেও (ট্রাক) জাহাঙ্গীর নানা ভাবে সহায়তা করছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, গাজীপুর-২ এ মো: সাইফুল ইসলামের (ঈগল) জন্যও জাহাঙ্গীর কাজ করছে। এর কারন হিসেবে তারা বলেছেন, নৌকার প্রার্থী রাসেল এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইফুল একই এলাকার। তাই সাইফুলকে সহায়তা করে রাসেলের ভোট কাটাই জাহাঙ্গীরের উদ্দেশ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, গাজীপুর সিটি নির্বাচনে জাহাঙ্গীর আলম আগেই ধারণা করেছিলেন তার মনোনয়নপত্রটি বাতিল হতে পারে। সেজন্য তিনি ডামি হিসেবে মায়ের পক্ষেও মনোনয়নপত্র জমা দেন। নির্বাচনে মেয়র পদে জয়ী হন জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন। আওয়ামী লীগের বাঘা নেতা আজমত উল্লা খানকে পরাজিত করে ডামি প্রার্থীকে জিতিয়ে আনেন জাহাঙ্গীর। তাই গাজীপুরের রাজনীতিতে জাহাঙ্গীর আলম এখন একটা ফ্যাক্টর। এই অবস্থায় জাহাঙ্গীর আলম সংসদ নির্বাচনে যে ৪জন সতন্ত্র প্রার্থীর জন্য লড়ছেন তাদেরকেও তার মায়ের মতো জিতিয়ে নিতে পারবেন কিনা সে প্রশ্ন এখন সবার মুখে মুখে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, প্রতিক বরাদ্ধ হওয়ার এক সপ্তাহ পর্যন্ত প্রার্থীদের কর্মীদের মধ্যে তেমন কোন চাঞ্চলতা দেখা যায়নি। তবে ধীরে ধীরে নৌকার প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত গনসংযোগ ও নির্বাচনী প্রচারনা চালাতে শুরু করেছেন।
বয়োজেষ্ঠ্য রফিকুল ইসলাম সংবাদের সাথে আলাপচারিতায় বলেন, মুক্তিযুদ্ধ করেছি, আমি একজন গেরিলা যোদ্ধা। গনতন্ত্রের জন্য দেশের উন্নয়নের জন্য একটা অবাদ সুষ্ঠু নির্বাচন প্রয়োজন। সতন্ত্র প্রর্থীদের কারনে নির্বাচন প্রতিযোগীতা মূলক হবে, তবে ভোটারদের গুরুত্ব না দিয়ে প্রভাব খাটিয়ে বিজয়ী হওয়ার হিংসাত্মক মনোভাবের জন্য অনেক স্থানে বিশৃঙ্খলা ও সহিংস ঘটনা ঘটতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
ইটালী প্রবাসী মো: সেলিম বাবার মৃত্যু সংবাদ পেয়ে দেশে এসেছেন সম্প্রতি। ফেরার সময় ঘনিয়ে এলেও নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছেন। কয়েক মাস ধরে নির্বাচনী পরিবেশ পর্যবেক্ষন করছেন তিনি। এই সময়টুকুর মধ্যে নির্বাচনের পরিবেশ দেখে তিনি হতাশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে সংঘর্ষ অবধারিত। নৌকার প্রার্থীরা যেভাবে গাছাড়া ভাব নিয়ে আছে, তাতে মনে হচ্ছে অন্য প্রার্থীদের তারা আমলেই নিচ্ছে না। প্রতিদ্ধন্ধি প্রার্থীরাও যে আওয়ামী লীগের লোক তা তারা যেন ভুলে গেছে।’
গাজীপুর-১
গাজীপুরের ৫টি আসনের মধ্যে যিনি সবচেয়ে বেশি বিপাকে আছেন বলে মনে করেন স্থানীয়রা, সেই নৌকার হেভিওয়েট প্রার্থী মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী গাজীপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম মোজাম্মেল হক স্বতন্ত্র প্রার্থীকে আমলেই নিচ্ছেন না। গত ১৫ বছর যাবৎ এই আসনটি ধরে রেখেছেন তিনি। এবারও মনোনয়ন পেয়ে নৌকার প্রার্থী হয়েছেন। এই আসনটিতে মোট প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীর সংখ্যা ৭ জন হলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে নৌকার সাথে স্বতন্ত্র প্রার্থী কালিয়াকৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রাসেলের ট্রাক মার্কার সাথে। এর কারন, রাসেলের পক্ষে মাঠে প্রচারনা করছেন গাজীপুরের সাবেক সিটি মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। আসনটি কালিয়কৈর উপজেলার গাজীপুর সিটির ১ থেকে ১৮ নং ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত।
নৌকার বিপক্ষে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষ নেওয়া জাহাঙ্গীরের বিষয়ে মোজাম্মেল হক বলেন, ‘গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের কোনো কথা আমি বিবেচনায় নেই না। তার কথা গরুত্ব দেওয়ার মতো লোক তিনি এখনো হননি। যখন হবেন তখন বিবেচনা করব। তবে যে ভাষায় কুৎসা রটনা করছেন তা দুঃখজনক। যারা কথা বলছেন যদি জবাব দেওয়ার মতো পর্যায়ে তারা যান তখন জবাব দেব।’
গাজীপুর-২
গাজীপুরের এই আসনটি নৌকার মনোনয়ন পেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আরেক হেভিওয়েট প্রার্থী যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী গাজীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য মো: জাহিদ আহসান রাসেল। গাজীপুরের মধ্যে এই আসনটিতে জাহাঙ্গীর আলম দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন, কিন্তু তিনি পাননি। এজন্য এই আসনটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে জয়ী করতে তিনি বেশি তৎপরতা চালাচ্ছেন বলে জানান স্থানীয়রা।
গাজীপুরের মধ্যে এই আসনটিতেই সবচেয়ে বেশি প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই আসনে মোট ৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে নৌকার সাথে স্বতন্ত্র প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা কাজী আলিম উদ্দিন বুদ্দিনের ট্রাক মার্কা। এর পেছনেও সেই একই কারন, আলিম উদ্দিন বুদ্দিনের পক্ষে মাঠে প্রচারনা করছেন গাজীপুরের সাবেক সিটি মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। আসনটি সিটির ১৯ থেকে ৩৮ ও ৪৩ থেকে ৫৭ নং ওয়ার্ড এবং ক্যান্টনমেন্ট এলাকা নিয়ে গঠিত।
সংবাদের সাথে আলাপকালে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী গাজীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য মো: জাহিদ আহসান রাসেল বলেন, যারা বঙ্গবন্ধু ও গনতন্ত্রে বিশ্বাসী তারা অবশ্যই নৌকায় ভোট দিয়ে আমাকে জয়যুক্ত করবে। আমার বাবা শহিদ আহসান উল্লাহ মাস্টার গাজীপুরের মানুষের কথা বলতেন। আমি আমার নির্বাচনি এলাকায় সাধারণ মানুষের পাশে থেকে উন্নয়নমূলক কাজ করেছি। নৌকার বিজয় ইনশাআল্লাহ নিশ্চিত। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুযায়ী এবারের ভোট সুষ্ঠু ও অবাধ হবে।
ভোটার উপস্থিতি বিষয়ে জানতে চাইলে রাসেল সরাসরি জবাব না দিয়ে বলেন, ‘আমরা আশাবাদী ভালো ভোট কাস্ট হবে, তবে আমার নির্বাচনী এলাকায় এমনিতেই ভোট কাস্ট কম হয়। এর কারন এই অঞ্চলটি শিল্প অধ্যষিত এলাকা হওয়ায় অনেক ভোটার এলাকা ছেড়ে চলে গেছে। তাই এখানে কম ভোট কাস্ট হয়। তারপরও আমি আশাবাদী , ভোটারদের মধ্যে যথেষ্ট স্বত:স্ফূর্ততা দেখা যাচ্ছে, নির্বাচনের দিন মানুষ ভোট দিতে আসব।’
গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের ভূমিকা বিষয়ে জানতে চাইলে জাহিদ আহসান রাসেল বলেন, ‘প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় একজন করে সতন্ত্র প্রার্থী দিয়ে সে (জাহাঙ্গীর আলম) প্রমান করেছে তার মধ্যে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ছিটেফোঁটাও নেই।’
নির্বাচন বিষয়ে সংবাদের বেশিরভাগ প্রশ্ন গাজীপুরের সাবেক মেয়র মো: জাহাঙ্গীর আলম এড়িয়ে যান। তবে সংসদ নির্বাচনে একাধিক সতন্ত্র প্রার্থীর জন্য কাজ করা ও প্রচারনায় অংশ নেয়া বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘এসব প্রশ্ন আমাকে কেন করেন। এসব সকল প্রশ্নের জবাব দিবেন প্রধানমন্ত্রী।’
এক উঠান বৈঠকে বক্তব্যকালে জাহাঙ্গীর বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী একটা সুযোগ দিয়েছেন, সেই সুযোগটা আগামী ৭ জানুয়ারি আমরা কাজে লাগাতে চাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলছেন, যে গাড়িতে আগুন দেবে তার হাতে আগুন লাগাইয়া দিবা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলছেন, ভোট বাক্সে যে হাত দেবে তার হাত ছেঁচে দিবা। আমরা সবাই আজ একতাবদ্ধ। কেউ হুমকি দিলে খালি নাম্বারটা দিয়ে দিবেন। চুরি আর ছ্যাঁচড়ামি চলবে না।’
গাজীপুর-৩
এই আসনের নৌকার প্রার্থী সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য রুমানা আলী টুসি। এই আসনে মোট ৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে নৌকার সাথে স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন সবুজের ট্রাক মার্কার। ইকবালের জন্যও জাহাঙ্গীর কাজ করছেন বলে ওই এলাকার সূত্রে জানা গেছে। আসনটি শ্রীপুর, সদর উপজেলার মির্জাপুর, ভাওয়াল গড় ও পিরুজালী ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত।
নির্বাচন বিষয়ে টুসি বলেন, আমি মনে করি এই এলাকার অধিবাসীরা কখনো নৌকার বিপক্ষে ভোট দিবে না। তাদের ভোটে নৌকার বিজয় নিশ্চিত। এই আসনে তার মূল প্রতিদ্বন্দ্বি বর্তমান সংসদ সদস্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ইকবাল হোসেন সবুজ। ইকবাল হোসেন বলেন, নেত্রী আমাদের বলেছে এলাকায় যাও, মানুষের জন্য কি করেছো দেখাও। তিনি রুমানা আলীকে উদ্দেশ করে বলেন, শেখ হাসিনা আপনারও, শেখ হাসিনা আমারও।
গাজীপুর-৪
স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে যতটুকু জানা গেছে, শুধুমাত্র গাজীপুর-৪ আসনে সিমিন হোসেন রিমি তুলনামূলকভাবে কম চাপে আছেন। কোনো দুর্ঘটনা না ঘটলে তার বিজয়ের ব্যাপারে অনেকেই আশাবাদী। এই আসনে মোট ৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে নৌকার সাথে ২ স্বতন্ত্র প্রার্থীর। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা হলেন, সামসুল হক (ট্রাক) এবং আলম আহমেদ (ঈগল)। আসনটি কাপাসিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত।
গাজীপুর-৫
গাজীপুরের নৌকার হেভিওয়েট প্রার্থীর মধ্যে রয়েছেন এই আসনের সংসদ সদস্য সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। এই আসনেও স্বতন্ত্র প্রার্থী নৌকার মাথাব্যাথার কারন। কারন এই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থীর জন্য সরাসরি কাজ করছেন সিটির সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর। চুমকিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হচ্ছে ঢাকসুর সাবেক ভিপি স্বতন্ত্র প্রার্থী আখতারুজ্জামানের সাথে। নির্বাচন বিষয়ে চুমকি বলেন, আমি যুদ্ধ বা পরিক্ষাকে ছোট করে দেখি না। নির্বাচনী আইন মেনে সুন্দর সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগন যাকে ভালোবেসে নির্বাচিত করবে সেই নির্বাচিত হবে। তবে স্থানীয়রা বলছেন, কালিগঞ্জ উপজেলায় (গাজীপুর-৫) যতটুকু উন্নয়ন হওয়া উচিৎ ছিল তা হয়নি। এখানকার রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎসহ কোন কিছুতেই উন্নয়নের ছোয়া লাগে নি। আসনটি কালীগঞ্জ, সিটির ৩৯ থেকে ৪২ নং ওয়ার্ড এবং সদর উপজেলার বাড়িয়া ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত।
রোববার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করে জমিয়ে তুলতে গিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বঞ্চিত নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দেয়। নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক এবং ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে দলীয় প্রতীকের প্রার্থী ছাড়াও স্বতন্ত্র হয়ে অনেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাতে অনেক জায়গার মত গাজীপুরে দলীয় কৌশলে ‘বেকায়দায়’ পরেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার হেভিওয়েট প্রার্থীরা। গাজীপুরের ৫টি আসনের মধ্যে ৪টি আসনে আওয়ামী লীগের এই স্বতন্ত্র প্রার্থীরা দুই মন্ত্রী এবং একজন সংসদ সদস্যের মাথাব্যাথার কারন হয়ে দারিয়েছেন।
এর কারন হিসেবে স্থানীয়রা মনে করছেন, জনপ্রিয়তা প্রমান করতে তিন স্বতন্ত্র প্রর্থীকে বিজয়ী করতে উঠেপরে লেগেছেন গাজীপুরের সাবেক সিটি মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। ইতোমধ্যে তিনি ৩ স্বতন্ত্র প্রার্থীকে একমঞ্চে নিয়ে নৌকার প্রার্থীদের বিরুদ্ধে প্রচারনায় নেমেছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষে সাবেক সিটি মেয়র মাঠে নামায় নৌকার এসব হেভিওয়েট প্রার্থীদের নির্বাচনে জয়ী হওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাজীপুরের ৫টি আসনের সবকটি আসনেই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে ভোটারদের কাছে ভোট চাওয়া থেকে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে শোডাউন ও ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার করা। ইতোমধ্যে কোন কোন প্রার্থীকে প্রচার ও গনসংযোগে অপর প্রার্থীর কর্মীদের দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়েছেন বলে সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করতেও দেখা গেছে।
নির্বাচন কমিশন সূত্র অনুযায়ী, গাজীপুরের পাঁচটি আসনের মধ্যে তিনটিতেই নারী প্রার্থী নৌকার মনোনয়োন পেয়েছেন। আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়ে গাজীপুরে যারা নৌকার মাঝি হয়েছেন তারা হলেন, গাজীপুর-১ আ ক ম মোজাম্মেল হক, গাজীপুর-২ জাহিদ আহসান রাসেল, গাজীপুর-৩ রুমানা আলী টুসি, গাজীপুর-৪ সিমিন হোসেন রিমি ও গাজীপুর-৫ এ মেহের আফরোজ চুমকি। সূত্র অনুযায়ী গাজীপুরের ৫টি আসনে মোট প্রার্থী ৩৮ জন। এরমধ্যে গাজীপুর-১ ৭জন, গাজীপুর-২ ৯জন, গাজীপুর-৩ ৭জন, গাজীপুর-৪ ৭জন এবং গাজীপুর-৫ ৮জন।
স্থানীয় সূত্র ও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাজীপুরে যাদের আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে তাদের ৫ জনের মধ্যে গাজীপুর-১ এর আ ক ম মোজাম্মেল হক ছাড়া বাকি ৪ জনই বিভিন্ন সময়ে পিতার পরিচয়ে নিজ নিজ আসনে নৌকার মাঝি হয়ে হাল ধরেছেন।
এদিকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুর-২ আসন থেকে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে পাননি। তবে নিজে প্রার্থী হতে না পারলেও ভোটের মাঠে তিনি সক্রিয়। স্থানীয়রা বলছেন, গাজীপুরের ৪টি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের আর্থিক সহ সব ধরনের সহায়তা দিচ্ছেন জাহাঙ্গীর। ফলে এই স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নৌকার প্রার্থীদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে যতটুকু জানা গেছে, শুধুমাত্র গাজীপুর-৪ আসনে সিমিন হোসেন রিমি তুলনামূলকভাবে কম চাপে আছেন। কোনো দুর্ঘটনা না ঘটলে তার বিজয়ের ব্যাপারে অনেকেই আশাবাদী। কিন্তু বাকি চারজনকেই চোখ রাঙাচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। যাদের নেপথ্যে আছেন সিটির সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম।
অবস্থাদৃষ্টে দেখা যাচ্ছে গাজীপুরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি ও নির্বাচনে মূল ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছেন জাহাঙ্গীর, যিনি ক্ষমতাসীন দল থেকে দুবার বহিষ্কৃত হওয়ার পরে ক্ষমা পেয়ে আবার দলে ফিরেছেন। কিন্তু গাজীপুরের স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে যার দূরত্ব অনেক।
স্থানীয়রা বলছেন, জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক থাকাকালিন সময়ে সিটির প্রায় সব এলাকায় তার পক্ষে বিশাল কর্মী বাহীনি গড়ে তুলেন। এছাড়া গার্মেন্টস ব্যবসার সাথে জড়িত থাকার কারনে গার্মেন্টস শ্রমিকদের উপরও তার একটা প্রভাব রয়েছে। যা তিনি এই নির্বাচনকালিন সময়ে কাজে লাগাচ্ছেন। জাহাঙ্গীর নিজেও বিভিন্ন বক্তব্যে বলেছেন, ‘আমি গাজীপুরের ২৪ লাখ শ্রমিক নিয়ে কাজ করি। তারা আমাকে ভালোবাসে, আমিও তাদেরকে ভালোবাসি। তাদের ভালো মন্দ দেখার দ্বায়িত্বও আমার। নির্বাচনে এই গার্মেন্টস শ্রমিকদের একটা বড় ভূমিকা থাকবে বলে তিনি মনে করেন।
তবে এই শ্রমিকরা ভোটের সমীকরনে বড় ফ্যাক্টর হলেও নির্বাচনের সময় ৩ দিনের ছুটি ভোটের ফলাফল উলট পালট করে দিতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টরা।
সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গাজীপুরে আলোচনা, জাহাঙ্গীর স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন মূলত ব্যক্তিগত ক্ষোভ থেকে। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী এবং ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তার অবস্থানের কথা গাজীপুরে সবার আলচনার বিষয়। তার এই ক্ষোভের কারণ, জাহাঙ্গীর মনে করেন তাকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারের পেছনে ওই দুজনের ভূমিকা আছে।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের ৩জন স্বতন্ত্র প্রার্থীর জন্য জাহাঙ্গীর আলম সরাসরি সহায়তা ও প্রচারনা করছেন। তারা হলেন, গাজীপুর-১ মো: রেজাউল করিম (ট্রাক), গাজীপুর-২ কাজী আলিম উদ্দিন বুদ্দিন (ট্রাক), ও গাজীপুর-৫ এ আখতারুজ্জামান (ট্রাক)। এই ৩ প্রার্থীকে নিয়ে জাহাঙ্গীরকে একই মঞ্চে নির্বাচনী প্রচারনা করতেও দেখা গেছে। এছাড়াও গাজীপুর-৩ মুহাম্মদ ইকবাল হোসেনকেও (ট্রাক) জাহাঙ্গীর নানা ভাবে সহায়তা করছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, গাজীপুর-২ এ মো: সাইফুল ইসলামের (ঈগল) জন্যও জাহাঙ্গীর কাজ করছে। এর কারন হিসেবে তারা বলেছেন, নৌকার প্রার্থী রাসেল এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইফুল একই এলাকার। তাই সাইফুলকে সহায়তা করে রাসেলের ভোট কাটাই জাহাঙ্গীরের উদ্দেশ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, গাজীপুর সিটি নির্বাচনে জাহাঙ্গীর আলম আগেই ধারণা করেছিলেন তার মনোনয়নপত্রটি বাতিল হতে পারে। সেজন্য তিনি ডামি হিসেবে মায়ের পক্ষেও মনোনয়নপত্র জমা দেন। নির্বাচনে মেয়র পদে জয়ী হন জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন। আওয়ামী লীগের বাঘা নেতা আজমত উল্লা খানকে পরাজিত করে ডামি প্রার্থীকে জিতিয়ে আনেন জাহাঙ্গীর। তাই গাজীপুরের রাজনীতিতে জাহাঙ্গীর আলম এখন একটা ফ্যাক্টর। এই অবস্থায় জাহাঙ্গীর আলম সংসদ নির্বাচনে যে ৪জন সতন্ত্র প্রার্থীর জন্য লড়ছেন তাদেরকেও তার মায়ের মতো জিতিয়ে নিতে পারবেন কিনা সে প্রশ্ন এখন সবার মুখে মুখে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, প্রতিক বরাদ্ধ হওয়ার এক সপ্তাহ পর্যন্ত প্রার্থীদের কর্মীদের মধ্যে তেমন কোন চাঞ্চলতা দেখা যায়নি। তবে ধীরে ধীরে নৌকার প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত গনসংযোগ ও নির্বাচনী প্রচারনা চালাতে শুরু করেছেন।
বয়োজেষ্ঠ্য রফিকুল ইসলাম সংবাদের সাথে আলাপচারিতায় বলেন, মুক্তিযুদ্ধ করেছি, আমি একজন গেরিলা যোদ্ধা। গনতন্ত্রের জন্য দেশের উন্নয়নের জন্য একটা অবাদ সুষ্ঠু নির্বাচন প্রয়োজন। সতন্ত্র প্রর্থীদের কারনে নির্বাচন প্রতিযোগীতা মূলক হবে, তবে ভোটারদের গুরুত্ব না দিয়ে প্রভাব খাটিয়ে বিজয়ী হওয়ার হিংসাত্মক মনোভাবের জন্য অনেক স্থানে বিশৃঙ্খলা ও সহিংস ঘটনা ঘটতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
ইটালী প্রবাসী মো: সেলিম বাবার মৃত্যু সংবাদ পেয়ে দেশে এসেছেন সম্প্রতি। ফেরার সময় ঘনিয়ে এলেও নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছেন। কয়েক মাস ধরে নির্বাচনী পরিবেশ পর্যবেক্ষন করছেন তিনি। এই সময়টুকুর মধ্যে নির্বাচনের পরিবেশ দেখে তিনি হতাশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে সংঘর্ষ অবধারিত। নৌকার প্রার্থীরা যেভাবে গাছাড়া ভাব নিয়ে আছে, তাতে মনে হচ্ছে অন্য প্রার্থীদের তারা আমলেই নিচ্ছে না। প্রতিদ্ধন্ধি প্রার্থীরাও যে আওয়ামী লীগের লোক তা তারা যেন ভুলে গেছে।’
গাজীপুর-১
গাজীপুরের ৫টি আসনের মধ্যে যিনি সবচেয়ে বেশি বিপাকে আছেন বলে মনে করেন স্থানীয়রা, সেই নৌকার হেভিওয়েট প্রার্থী মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী গাজীপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম মোজাম্মেল হক স্বতন্ত্র প্রার্থীকে আমলেই নিচ্ছেন না। গত ১৫ বছর যাবৎ এই আসনটি ধরে রেখেছেন তিনি। এবারও মনোনয়ন পেয়ে নৌকার প্রার্থী হয়েছেন। এই আসনটিতে মোট প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীর সংখ্যা ৭ জন হলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে নৌকার সাথে স্বতন্ত্র প্রার্থী কালিয়াকৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রাসেলের ট্রাক মার্কার সাথে। এর কারন, রাসেলের পক্ষে মাঠে প্রচারনা করছেন গাজীপুরের সাবেক সিটি মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। আসনটি কালিয়কৈর উপজেলার গাজীপুর সিটির ১ থেকে ১৮ নং ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত।
নৌকার বিপক্ষে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষ নেওয়া জাহাঙ্গীরের বিষয়ে মোজাম্মেল হক বলেন, ‘গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের কোনো কথা আমি বিবেচনায় নেই না। তার কথা গরুত্ব দেওয়ার মতো লোক তিনি এখনো হননি। যখন হবেন তখন বিবেচনা করব। তবে যে ভাষায় কুৎসা রটনা করছেন তা দুঃখজনক। যারা কথা বলছেন যদি জবাব দেওয়ার মতো পর্যায়ে তারা যান তখন জবাব দেব।’
গাজীপুর-২
গাজীপুরের এই আসনটি নৌকার মনোনয়ন পেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আরেক হেভিওয়েট প্রার্থী যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী গাজীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য মো: জাহিদ আহসান রাসেল। গাজীপুরের মধ্যে এই আসনটিতে জাহাঙ্গীর আলম দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন, কিন্তু তিনি পাননি। এজন্য এই আসনটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে জয়ী করতে তিনি বেশি তৎপরতা চালাচ্ছেন বলে জানান স্থানীয়রা।
গাজীপুরের মধ্যে এই আসনটিতেই সবচেয়ে বেশি প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই আসনে মোট ৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে নৌকার সাথে স্বতন্ত্র প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা কাজী আলিম উদ্দিন বুদ্দিনের ট্রাক মার্কা। এর পেছনেও সেই একই কারন, আলিম উদ্দিন বুদ্দিনের পক্ষে মাঠে প্রচারনা করছেন গাজীপুরের সাবেক সিটি মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। আসনটি সিটির ১৯ থেকে ৩৮ ও ৪৩ থেকে ৫৭ নং ওয়ার্ড এবং ক্যান্টনমেন্ট এলাকা নিয়ে গঠিত।
সংবাদের সাথে আলাপকালে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী গাজীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য মো: জাহিদ আহসান রাসেল বলেন, যারা বঙ্গবন্ধু ও গনতন্ত্রে বিশ্বাসী তারা অবশ্যই নৌকায় ভোট দিয়ে আমাকে জয়যুক্ত করবে। আমার বাবা শহিদ আহসান উল্লাহ মাস্টার গাজীপুরের মানুষের কথা বলতেন। আমি আমার নির্বাচনি এলাকায় সাধারণ মানুষের পাশে থেকে উন্নয়নমূলক কাজ করেছি। নৌকার বিজয় ইনশাআল্লাহ নিশ্চিত। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুযায়ী এবারের ভোট সুষ্ঠু ও অবাধ হবে।
ভোটার উপস্থিতি বিষয়ে জানতে চাইলে রাসেল সরাসরি জবাব না দিয়ে বলেন, ‘আমরা আশাবাদী ভালো ভোট কাস্ট হবে, তবে আমার নির্বাচনী এলাকায় এমনিতেই ভোট কাস্ট কম হয়। এর কারন এই অঞ্চলটি শিল্প অধ্যষিত এলাকা হওয়ায় অনেক ভোটার এলাকা ছেড়ে চলে গেছে। তাই এখানে কম ভোট কাস্ট হয়। তারপরও আমি আশাবাদী , ভোটারদের মধ্যে যথেষ্ট স্বত:স্ফূর্ততা দেখা যাচ্ছে, নির্বাচনের দিন মানুষ ভোট দিতে আসব।’
গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের ভূমিকা বিষয়ে জানতে চাইলে জাহিদ আহসান রাসেল বলেন, ‘প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় একজন করে সতন্ত্র প্রার্থী দিয়ে সে (জাহাঙ্গীর আলম) প্রমান করেছে তার মধ্যে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ছিটেফোঁটাও নেই।’
নির্বাচন বিষয়ে সংবাদের বেশিরভাগ প্রশ্ন গাজীপুরের সাবেক মেয়র মো: জাহাঙ্গীর আলম এড়িয়ে যান। তবে সংসদ নির্বাচনে একাধিক সতন্ত্র প্রার্থীর জন্য কাজ করা ও প্রচারনায় অংশ নেয়া বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘এসব প্রশ্ন আমাকে কেন করেন। এসব সকল প্রশ্নের জবাব দিবেন প্রধানমন্ত্রী।’
এক উঠান বৈঠকে বক্তব্যকালে জাহাঙ্গীর বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী একটা সুযোগ দিয়েছেন, সেই সুযোগটা আগামী ৭ জানুয়ারি আমরা কাজে লাগাতে চাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলছেন, যে গাড়িতে আগুন দেবে তার হাতে আগুন লাগাইয়া দিবা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলছেন, ভোট বাক্সে যে হাত দেবে তার হাত ছেঁচে দিবা। আমরা সবাই আজ একতাবদ্ধ। কেউ হুমকি দিলে খালি নাম্বারটা দিয়ে দিবেন। চুরি আর ছ্যাঁচড়ামি চলবে না।’
গাজীপুর-৩
এই আসনের নৌকার প্রার্থী সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য রুমানা আলী টুসি। এই আসনে মোট ৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে নৌকার সাথে স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন সবুজের ট্রাক মার্কার। ইকবালের জন্যও জাহাঙ্গীর কাজ করছেন বলে ওই এলাকার সূত্রে জানা গেছে। আসনটি শ্রীপুর, সদর উপজেলার মির্জাপুর, ভাওয়াল গড় ও পিরুজালী ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত।
নির্বাচন বিষয়ে টুসি বলেন, আমি মনে করি এই এলাকার অধিবাসীরা কখনো নৌকার বিপক্ষে ভোট দিবে না। তাদের ভোটে নৌকার বিজয় নিশ্চিত। এই আসনে তার মূল প্রতিদ্বন্দ্বি বর্তমান সংসদ সদস্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ইকবাল হোসেন সবুজ। ইকবাল হোসেন বলেন, নেত্রী আমাদের বলেছে এলাকায় যাও, মানুষের জন্য কি করেছো দেখাও। তিনি রুমানা আলীকে উদ্দেশ করে বলেন, শেখ হাসিনা আপনারও, শেখ হাসিনা আমারও।
গাজীপুর-৪
স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে যতটুকু জানা গেছে, শুধুমাত্র গাজীপুর-৪ আসনে সিমিন হোসেন রিমি তুলনামূলকভাবে কম চাপে আছেন। কোনো দুর্ঘটনা না ঘটলে তার বিজয়ের ব্যাপারে অনেকেই আশাবাদী। এই আসনে মোট ৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে নৌকার সাথে ২ স্বতন্ত্র প্রার্থীর। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা হলেন, সামসুল হক (ট্রাক) এবং আলম আহমেদ (ঈগল)। আসনটি কাপাসিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত।
গাজীপুর-৫
গাজীপুরের নৌকার হেভিওয়েট প্রার্থীর মধ্যে রয়েছেন এই আসনের সংসদ সদস্য সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। এই আসনেও স্বতন্ত্র প্রার্থী নৌকার মাথাব্যাথার কারন। কারন এই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থীর জন্য সরাসরি কাজ করছেন সিটির সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর। চুমকিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হচ্ছে ঢাকসুর সাবেক ভিপি স্বতন্ত্র প্রার্থী আখতারুজ্জামানের সাথে। নির্বাচন বিষয়ে চুমকি বলেন, আমি যুদ্ধ বা পরিক্ষাকে ছোট করে দেখি না। নির্বাচনী আইন মেনে সুন্দর সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগন যাকে ভালোবেসে নির্বাচিত করবে সেই নির্বাচিত হবে। তবে স্থানীয়রা বলছেন, কালিগঞ্জ উপজেলায় (গাজীপুর-৫) যতটুকু উন্নয়ন হওয়া উচিৎ ছিল তা হয়নি। এখানকার রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎসহ কোন কিছুতেই উন্নয়নের ছোয়া লাগে নি। আসনটি কালীগঞ্জ, সিটির ৩৯ থেকে ৪২ নং ওয়ার্ড এবং সদর উপজেলার বাড়িয়া ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত।