দ্বাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত ৪৮টি মহিলা আসনে ৪৮ জন প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে আওয়ামী লীগ। বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভায় প্রতিটি আসনের জন্য একক প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়।
সভা শেষে গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। পরে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়ার সই করা চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা গণমাধ্যমে পাঠানো হয়।
মনোনয়নপ্রাপ্তদের মধ্যে ৩৪ জনই প্রথমবারের মতো মনোনয়ন পেয়েছেন। একাদশ সংসদের সংরক্ষিত এমপি (সংসদ সদস্য) ছিলেন এমন ৭ জন এবারও মনোনয়ন পেয়েছেন। ১৪ দলীয় জোটের শরিক দল থেকে পেয়েছেন একজন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেত্রীদের মধ্যে ৮ জন মনোনয়ন পেয়েছেন। তাদের মধ্যে চার জন এই প্রথম সংরক্ষিত এমপি হতে যাচ্ছেন।
সংরক্ষিত ৪৮টি আসনে প্রার্থী হতে এবার ১ হাজার ৫৪৯ জন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন। প্রতিটি আসনের বিপরীতে গড়ে ৩২জন প্রার্থী ছিলেন।
সবাইকে বুধবার সকাল ১০টায় গণভবনে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হয়। সকাল সাড়ে ৮টা থেকেই গণভবনের সামনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের জটলা দেখা যায়। নির্ধারিত সময়ের আগেই লাইন ধরে তারা গণবভনে প্রবেশ করেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। সংরক্ষিত আসনের জন্য ১৫৪৯ জনের মনোনয়ন ফরম তোলাকে ‘নারী জাগরণ’ হিসেবে বর্ণনা করেন তিনি।
মনোনয়নপ্রত্যাশীদের উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘এত মনোনয়নপ্রত্যাশী থেকে মনোনয়ন বাছাই করা, এটা একটা কঠিন কাজ। প্রত্যেকটি বিভাগ থেকেই নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনে কেউ মনোনয়ন পাবে কেউ পাবে না, এজন্য মন খারাপ করার কোনো কারণ নেই। এবার না হলে আগামীতে হবে। একবার না পারিলে দেখ শতবার।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেকে জানেন পাবেন না, তারপরও কেনা মানে যোগ্যতার জানান দেয়া। সবাই-ই যোগ্য। তবে কঠিন একটা কাজ আমাদের ওপর পড়ল। এখনও যদি কেউ পেছনে পড়ে থাকে, তাদের টেনে তোলার দায়িত্ব আজকের এই নেতৃত্বের।’
নারী নেতৃত্বের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান, ‘সংগঠন করতে হবে। মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে, তাদের আস্থা অর্জন করবে হবে। কেউ জায়গা করে দেয় না, জায়গা করে নিতে হয়।’ তৃণমূলে গিয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা মনোনয়ন পাবে না, তাদের নিজেকের আরও তৈরি করতে হবে।’
পরে প্রতিটি বিভাগ থেকে মনোনয়নন প্রত্যাশীদের সঙ্গে পরিচিত হন আওয়ামী লীগ সভপতি।
সংসদীয় বোর্ডের সভা
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সভাপতিত্বে দুপুর ১২টায় শুরু হয় সংসদীয় বোর্ডের সভা, শেষ হয় বিকেলে। সভায় ওবায়দুল কাদেরসহ সংসদীয় বোর্ডের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এরপর গণভবনেই সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসনে ৪৮ জনকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। ১৮ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশনে রিটার্নিং অফিসারের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া হবে।’
অধিকাংশই নতুন মুখ
আওয়ামী লীগের দপ্তর থেকে পাঠানো ওই তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মনোনয়নপ্রাপ্ত ৪৮ জনের মধ্যে ৩৪ জনই নতুন মুখ। তবে, টানা চতুর্থবার ও তৃতীয়বার মনোনয়ন পেয়েছেন এমন নেত্রীরাও এবার এমপি হওয়ার টিকিট পেয়েছেন। তাদের মধ্যে আছেন- মুন্সিগঞ্জের ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা এবং চট্টগ্রামের ওয়াসিকা আয়শা খান।
টানা দুইবার এবং মধ্যে বিরতি দিয়ে দুইবার মনোনয়ন পেয়েছেন এমন নেত্রীরাও এবার চূড়ান্ত মনোনয়ন তালিকায় আছেন। তাদের মধ্যে আছেন- ঢাকার তারানা হালিম ও নাহিদ ইজাহার খান, অপরাজিতা হক, আরমা দত্তসহ আরও কয়েকজন।
গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে গেছেন এবং মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে এরকম কয়েকজন সংরক্ষিত আসনে এমপি করা হচ্ছে। তাদের মধ্যে আছেন- গাজীপুরের মেহের আফরোজ চুমকি, বরিশালের শাম্মী আহমেদ।
১৪ দলীয় জোটের শরিকদের মধ্যে গণতন্ত্রী পার্টির কানন আরা বেগমকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।
যারা মনোনয়ন পেলেন
রেজিয়া ইসলাম (পঞ্চগড়), দ্রৌপদী বেবি আগরওয়াল (ঠাকুরগাঁও), আশিকা সুলতানা (নীলফামারী), রোকেয়া সুলতানা (জয়পুরহাট), কোহেলী কুদ্দুস (নাটোর), জারা জাবীন মাহবুব (চাঁপাইনবাবগঞ্জ), রুনু রেজা (খুলনা), ফরিদা আক্তার বানু (বাগেরহাট), মোসা. ফারজানা সুমি (বরগুনা), খালেদা বাহার (ভোলা)।
নাজনীন নাহার রশীদ (পটুয়াখালী), ফরিদা ইয়াসমিন (নরসিংদী), উম্মি ফারজানা ছাত্তার (ময়মনসিংহ), নাদিয়া বিনতে আমিন (নেত্রকোনা), মাহফুজা সুলতানা (জয়পুরহাট), পারভীন জামান (ঝিনাইদহ), আরমা দত্ত (কুমিল্লা), লায়লা পারভীন (সাতক্ষীরা), মন্নুজান সুফিয়ান (খুলনা), বেদৌরা আহমেদ সালাম (গোপালগঞ্জ)।
শবনম জাহান (ঢাকা), পারুল আক্তার (ঢাকা), সাবেরা বেগম (ঢাকা), শাম্মী আহমেদ (বরিশাল), নাহিদ ইজাহার খান (ঢাকা), ঝর্না হাসান (ফরিদপুর), ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা (মুন্সিগঞ্জ), সাহিদা তারেখ (ঢাকা), অনিমা মুক্তি গোমেজ (ঢাকা), শেখ আনার কলি (ঢাকা)।
মাসুদা সিদ্দিক রোজী (নরসিংদী), তারানা হালিম (টাঙ্গাইল), বেগম শামসুন নাহার (টাঙ্গাইল), মেহের আফরোজ চুমকি (গাজীপুর), অপরাজিতা হক (টাঙ্গাইল), হাছিনা বারী চৌধুরী (ঢাকা), নাজমা আকতার (গোপালগঞ্জ), রুমা চক্রবর্তী (সিলেট), ফরিদুন্নাহার লাইলী (লক্ষ্মীপুর), আশ্রাফুন নেছা (লক্ষ্মীপুর)।
কানন আরা বেগম (নোয়াখালী), শামীমা হারুন (চট্টগ্রাম), ফরিদা খানম (নোয়াখালী), দিলোয়ারা ইউসুফ (চট্টগ্রাম), ওয়াসিকা আয়েশা খান (চট্টগ্রাম), জ্বরতী তঞ্চঙ্গ্যা (রাঙামাটি), সানজিদা খানম (ঢাকা) ও মোছা. নাসিমা জামান (রংপুর)।
ইসি তফসিল
আগামী ৭ মার্চ ভোটের তারিখ রেখে দ্বাদশ সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তফসিল অনুযায়ী, আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে।
মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার দিন শেষে ইসির প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করবে। ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রার্থীতা প্রত্যাহারের দিন শেষে প্রার্থীদের নির্বাচিত হিসেবে ঘোষণা করা হবে। ভোটের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে না।
মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন যারা
সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন পেলেই এমপি; সুবর্ণ এই সুযোগ হেলায় হারাতে চাননি অনেকেই। ফরম সংগ্রহের তালিকায় আওয়ামী লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ ও সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রীসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের পদধারী নেত্রীরা ছিলেন।
তালিকায় বর্তমান ও সাবেক মন্ত্রী, এমপি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের স্ত্রী, শহীদ পরিবারের সদস্য, আইনজীবী, এনজিও কর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার নারীরাও ছিলেন।
চলচ্চিত্র ও টিভি তারকাদের মধ্যে যারা মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন তাদের মধ্যে ছিলেন- অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা, শমী কায়সার, তারিন জাহান, অপু বিশ্বাস, নিপুণ আক্তার, মাহিয়া মাহি, শিমলা, শাহনূর, তানভীন সুইটি, মেহের আফরোজ শাওন, রোকেয়া প্রাচী, সোহানা সাবা, ঊর্মিলা শ্রাবন্তী কর, জাকিয়া মুন ও শামিমা তুষ্টি।
মনোনয়ন পেলেই এমপি
সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলো নিজেদের আসন সংখ্যার আনুপাতিক হারে সংরক্ষিত আসন বরাদ্দ পায় এবং প্রতিটি আসনে একক প্রার্থী মনোনয়ন দেয়। এই কারণে, সংরক্ষিত আসনের নির্বাচনে ভোটগ্রহণের প্রয়োজন পড়ে না। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় পার হওয়ার পরেই দলগুলোর মনোনীত প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। পরে ফলাফলের গেজেট প্রকাশ করে ইসি।
কোন দলের কত আসন
কেন্দ্রীয় ১৪ দলের দুটিসহ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে জয় পাওয়া ২২৫ জন সংসদ সদস্যের হিসেবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আনুপাতিক হারে পাচ্ছে ৩৮টি সংরক্ষিত আসন। ৬২ জন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যের মধ্যে মতৈক্য হওয়ায় তাদের ভাগের ১০ আসনেও আওয়ামী লীগই প্রার্থী দেবে। ১৪ দলীয় শরিকদের জোটবদ্ধ করার এবং স্বতন্ত্রদের সমর্থনের চিঠি আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনে জমা দিয়েছে।
বাকি দুটি সংরক্ষিত আসন পাচ্ছে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি।
বুধবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
দ্বাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত ৪৮টি মহিলা আসনে ৪৮ জন প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে আওয়ামী লীগ। বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভায় প্রতিটি আসনের জন্য একক প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়।
সভা শেষে গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। পরে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়ার সই করা চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা গণমাধ্যমে পাঠানো হয়।
মনোনয়নপ্রাপ্তদের মধ্যে ৩৪ জনই প্রথমবারের মতো মনোনয়ন পেয়েছেন। একাদশ সংসদের সংরক্ষিত এমপি (সংসদ সদস্য) ছিলেন এমন ৭ জন এবারও মনোনয়ন পেয়েছেন। ১৪ দলীয় জোটের শরিক দল থেকে পেয়েছেন একজন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেত্রীদের মধ্যে ৮ জন মনোনয়ন পেয়েছেন। তাদের মধ্যে চার জন এই প্রথম সংরক্ষিত এমপি হতে যাচ্ছেন।
সংরক্ষিত ৪৮টি আসনে প্রার্থী হতে এবার ১ হাজার ৫৪৯ জন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন। প্রতিটি আসনের বিপরীতে গড়ে ৩২জন প্রার্থী ছিলেন।
সবাইকে বুধবার সকাল ১০টায় গণভবনে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হয়। সকাল সাড়ে ৮টা থেকেই গণভবনের সামনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের জটলা দেখা যায়। নির্ধারিত সময়ের আগেই লাইন ধরে তারা গণবভনে প্রবেশ করেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। সংরক্ষিত আসনের জন্য ১৫৪৯ জনের মনোনয়ন ফরম তোলাকে ‘নারী জাগরণ’ হিসেবে বর্ণনা করেন তিনি।
মনোনয়নপ্রত্যাশীদের উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘এত মনোনয়নপ্রত্যাশী থেকে মনোনয়ন বাছাই করা, এটা একটা কঠিন কাজ। প্রত্যেকটি বিভাগ থেকেই নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনে কেউ মনোনয়ন পাবে কেউ পাবে না, এজন্য মন খারাপ করার কোনো কারণ নেই। এবার না হলে আগামীতে হবে। একবার না পারিলে দেখ শতবার।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেকে জানেন পাবেন না, তারপরও কেনা মানে যোগ্যতার জানান দেয়া। সবাই-ই যোগ্য। তবে কঠিন একটা কাজ আমাদের ওপর পড়ল। এখনও যদি কেউ পেছনে পড়ে থাকে, তাদের টেনে তোলার দায়িত্ব আজকের এই নেতৃত্বের।’
নারী নেতৃত্বের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান, ‘সংগঠন করতে হবে। মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে, তাদের আস্থা অর্জন করবে হবে। কেউ জায়গা করে দেয় না, জায়গা করে নিতে হয়।’ তৃণমূলে গিয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা মনোনয়ন পাবে না, তাদের নিজেকের আরও তৈরি করতে হবে।’
পরে প্রতিটি বিভাগ থেকে মনোনয়নন প্রত্যাশীদের সঙ্গে পরিচিত হন আওয়ামী লীগ সভপতি।
সংসদীয় বোর্ডের সভা
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সভাপতিত্বে দুপুর ১২টায় শুরু হয় সংসদীয় বোর্ডের সভা, শেষ হয় বিকেলে। সভায় ওবায়দুল কাদেরসহ সংসদীয় বোর্ডের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এরপর গণভবনেই সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসনে ৪৮ জনকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। ১৮ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশনে রিটার্নিং অফিসারের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া হবে।’
অধিকাংশই নতুন মুখ
আওয়ামী লীগের দপ্তর থেকে পাঠানো ওই তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মনোনয়নপ্রাপ্ত ৪৮ জনের মধ্যে ৩৪ জনই নতুন মুখ। তবে, টানা চতুর্থবার ও তৃতীয়বার মনোনয়ন পেয়েছেন এমন নেত্রীরাও এবার এমপি হওয়ার টিকিট পেয়েছেন। তাদের মধ্যে আছেন- মুন্সিগঞ্জের ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা এবং চট্টগ্রামের ওয়াসিকা আয়শা খান।
টানা দুইবার এবং মধ্যে বিরতি দিয়ে দুইবার মনোনয়ন পেয়েছেন এমন নেত্রীরাও এবার চূড়ান্ত মনোনয়ন তালিকায় আছেন। তাদের মধ্যে আছেন- ঢাকার তারানা হালিম ও নাহিদ ইজাহার খান, অপরাজিতা হক, আরমা দত্তসহ আরও কয়েকজন।
গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে গেছেন এবং মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে এরকম কয়েকজন সংরক্ষিত আসনে এমপি করা হচ্ছে। তাদের মধ্যে আছেন- গাজীপুরের মেহের আফরোজ চুমকি, বরিশালের শাম্মী আহমেদ।
১৪ দলীয় জোটের শরিকদের মধ্যে গণতন্ত্রী পার্টির কানন আরা বেগমকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।
যারা মনোনয়ন পেলেন
রেজিয়া ইসলাম (পঞ্চগড়), দ্রৌপদী বেবি আগরওয়াল (ঠাকুরগাঁও), আশিকা সুলতানা (নীলফামারী), রোকেয়া সুলতানা (জয়পুরহাট), কোহেলী কুদ্দুস (নাটোর), জারা জাবীন মাহবুব (চাঁপাইনবাবগঞ্জ), রুনু রেজা (খুলনা), ফরিদা আক্তার বানু (বাগেরহাট), মোসা. ফারজানা সুমি (বরগুনা), খালেদা বাহার (ভোলা)।
নাজনীন নাহার রশীদ (পটুয়াখালী), ফরিদা ইয়াসমিন (নরসিংদী), উম্মি ফারজানা ছাত্তার (ময়মনসিংহ), নাদিয়া বিনতে আমিন (নেত্রকোনা), মাহফুজা সুলতানা (জয়পুরহাট), পারভীন জামান (ঝিনাইদহ), আরমা দত্ত (কুমিল্লা), লায়লা পারভীন (সাতক্ষীরা), মন্নুজান সুফিয়ান (খুলনা), বেদৌরা আহমেদ সালাম (গোপালগঞ্জ)।
শবনম জাহান (ঢাকা), পারুল আক্তার (ঢাকা), সাবেরা বেগম (ঢাকা), শাম্মী আহমেদ (বরিশাল), নাহিদ ইজাহার খান (ঢাকা), ঝর্না হাসান (ফরিদপুর), ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা (মুন্সিগঞ্জ), সাহিদা তারেখ (ঢাকা), অনিমা মুক্তি গোমেজ (ঢাকা), শেখ আনার কলি (ঢাকা)।
মাসুদা সিদ্দিক রোজী (নরসিংদী), তারানা হালিম (টাঙ্গাইল), বেগম শামসুন নাহার (টাঙ্গাইল), মেহের আফরোজ চুমকি (গাজীপুর), অপরাজিতা হক (টাঙ্গাইল), হাছিনা বারী চৌধুরী (ঢাকা), নাজমা আকতার (গোপালগঞ্জ), রুমা চক্রবর্তী (সিলেট), ফরিদুন্নাহার লাইলী (লক্ষ্মীপুর), আশ্রাফুন নেছা (লক্ষ্মীপুর)।
কানন আরা বেগম (নোয়াখালী), শামীমা হারুন (চট্টগ্রাম), ফরিদা খানম (নোয়াখালী), দিলোয়ারা ইউসুফ (চট্টগ্রাম), ওয়াসিকা আয়েশা খান (চট্টগ্রাম), জ্বরতী তঞ্চঙ্গ্যা (রাঙামাটি), সানজিদা খানম (ঢাকা) ও মোছা. নাসিমা জামান (রংপুর)।
ইসি তফসিল
আগামী ৭ মার্চ ভোটের তারিখ রেখে দ্বাদশ সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তফসিল অনুযায়ী, আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে।
মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার দিন শেষে ইসির প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করবে। ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রার্থীতা প্রত্যাহারের দিন শেষে প্রার্থীদের নির্বাচিত হিসেবে ঘোষণা করা হবে। ভোটের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে না।
মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন যারা
সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন পেলেই এমপি; সুবর্ণ এই সুযোগ হেলায় হারাতে চাননি অনেকেই। ফরম সংগ্রহের তালিকায় আওয়ামী লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ ও সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রীসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের পদধারী নেত্রীরা ছিলেন।
তালিকায় বর্তমান ও সাবেক মন্ত্রী, এমপি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের স্ত্রী, শহীদ পরিবারের সদস্য, আইনজীবী, এনজিও কর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার নারীরাও ছিলেন।
চলচ্চিত্র ও টিভি তারকাদের মধ্যে যারা মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন তাদের মধ্যে ছিলেন- অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা, শমী কায়সার, তারিন জাহান, অপু বিশ্বাস, নিপুণ আক্তার, মাহিয়া মাহি, শিমলা, শাহনূর, তানভীন সুইটি, মেহের আফরোজ শাওন, রোকেয়া প্রাচী, সোহানা সাবা, ঊর্মিলা শ্রাবন্তী কর, জাকিয়া মুন ও শামিমা তুষ্টি।
মনোনয়ন পেলেই এমপি
সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলো নিজেদের আসন সংখ্যার আনুপাতিক হারে সংরক্ষিত আসন বরাদ্দ পায় এবং প্রতিটি আসনে একক প্রার্থী মনোনয়ন দেয়। এই কারণে, সংরক্ষিত আসনের নির্বাচনে ভোটগ্রহণের প্রয়োজন পড়ে না। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় পার হওয়ার পরেই দলগুলোর মনোনীত প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। পরে ফলাফলের গেজেট প্রকাশ করে ইসি।
কোন দলের কত আসন
কেন্দ্রীয় ১৪ দলের দুটিসহ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে জয় পাওয়া ২২৫ জন সংসদ সদস্যের হিসেবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আনুপাতিক হারে পাচ্ছে ৩৮টি সংরক্ষিত আসন। ৬২ জন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যের মধ্যে মতৈক্য হওয়ায় তাদের ভাগের ১০ আসনেও আওয়ামী লীগই প্রার্থী দেবে। ১৪ দলীয় শরিকদের জোটবদ্ধ করার এবং স্বতন্ত্রদের সমর্থনের চিঠি আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনে জমা দিয়েছে।
বাকি দুটি সংরক্ষিত আসন পাচ্ছে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি।