ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের উপজেলা ‘ভোটে না দাঁড়ানোর’ নির্দেশনা প্রথম ধাপই কার্যত কাজে আসেনি। দুই-একজন ছাড়া কেন্দ্র থেকে বারবার তাগাদা দেয়ার পরও নির্বাচন থেকে অনেকে সরেননি।
দলীয় ও নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্র বলছে, প্রথম ধাপের ভোটে নির্দেশনা অমান্য করা চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে রয়ে গেছেন বিশজনের বেশি। তাছাড়া দলীয় নির্দেশনা ‘বিলম্ব হওয়ায়’ বেশ কয়েকজন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান হচ্ছেন এমপির স্বজনরা।
এবার দ্বিতীয় ধাপে একই পরিস্থিতির দিকে এগুচ্ছে। এই ধাপেও অন্তত ত্রিশ এমপির স্বজনরা ভোটে দাঁড়িয়েছেন। প্রথম ধাপের মতো দ্বিতীয় ধাপেও অনেক জায়গায় এমপিদের দাপটে অনেক জায়গায় অন্য প্রার্থী না হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। প্রার্থী থাকলেও ‘ডামি’ প্রার্থী রাখছেন এবং নিজেরা পরিস্থিতি ‘পর্যবেক্ষণ’ করছেন। ফলে নির্দেশনার মধ্যেই শেষ পর্যন্ত এই প্রার্থীরা ভোটের লড়াইয়ে থেকে যেতে পারেন, এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কয়েকজন তৃণমূল নেতার ধারণা, সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে আরও কঠোর বার্তা না এলে পরবর্তী ধাপগুলোতেও নির্দেশনার ধারাবাহিকতা থাকবে। তাদের ভাষ্য, শেষপর্যন্ত নির্বাচনে জিতে গেলে অতীতের মতো ক্ষমার সুযোগও পেয়ে যাবে।
তবে দলটির উচ্চ পর্যায়ের একাধিক সূত্র জানায়, আগামী মঙ্গলবার গণভবনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক রয়েছে, সেখানে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নিদের্শনা অমান্যকারীদের ‘কঠিন বার্তা’ দেবেন।
কেন সরছেন না
আগামী ৮ মে প্রথম ধাপে ১৫০ উপজেলায় ভোট হবে। এই ধাপে নরসিংদীর পলাশ উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন স্থানীয় এমপি আনোয়ারুল আশরাফ খানের সম্বন্ধী (স্ত্রীর বড় ভাই) মো. শরীফুল হক। ২২ এপ্রিল সোমবার শেষদিনেও দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে ভোটে থেকে গেছেন।
নোয়াখালী হাতিয়া উপজেলায় আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী ও ছেলে উভয়ের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারে কেন্দ্রের চাপ ছিল। কিন্তু শেষদিন প্রত্যাহার করেছেন তাদের একজন। উল্টো তৃতীয় প্রার্থী সরে যান। এমপি পুত্র আশিক আলী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান হতে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের একটি সূত্র জানায়, চারধাপের মধ্যে প্রথম ধাপে ২৫ জনের মতো এমপিদের স্বজন প্রার্থী হয়েছেন। তবে এরমধ্যে নাটোরের সিংড়ায় প্রতিমন্ত্রী পলকের শ্যালক হাবিবের মতো দুই এক জায়গায় সড়ে দাঁড়ানোর ঘটনা রয়েছে।
দলীয় সূত্রগুলো বলছে, বিলম্বে নির্দেশনা জারি ছাড়া দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা ঠিকঠাকভাবে নির্দেশনা পৌছে দিয়েছেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট এমপি ও প্রার্থীরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে ‘ঢিলেঢালা ভাব’ ভেবে শেষ পর্যন্ত ভোটে থেকে যান।
তাছাড়া সিদ্ধান্ত বিলম্বে জানানোর কারণে অনেকে সুবিধা পান ভোটে দাঁড়াতে। কারণ সরে দাঁড়াতে নির্দেশনা এসেছে ১৮ এপ্রিল। আর মনোনয়ন জমা দেয়ার তারিখ তিনদিন আগে তথা ১৫ এপ্রিল শেষ হয়ে যায়। এতে একক প্রার্থী হিসেবে বেশ কয়েকজন এমপির স্বজন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হচ্ছেন।
সূত্রগুলো বলছে, মন্ত্রী-এমপির স্বজন যেখানে যেখানে ছিল সেখানে প্রার্থী হতে সাহস দেখায়নি অন্যরা। আর সেগুলো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছে সেগুলো ‘ডামি’ অথবা ‘দুর্বল’। যে কারণে পাস করার নিশ্চিয়তা পেয়ে যাওয়ায় সরে যাননি।
অর্ধশত প্রার্থী ভোটে
নির্দেশনার মধ্যে দুই ধাপে প্রায় অর্ধশত মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়-স্বজন ভোটে রয়েছেন বলে একটি সূত্র জানায়। উচ্চ পর্যায়ের সূত্রগুলো বলছে, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ কেন্দ্রে জমা হয়েছে। এগুলো নিয়ে একটি তালিকা করা হচ্ছে। এই তালিকা ধরে দলের ‘বার্তা’ জানিয়ে দেয়া হচ্ছে।
দলটির একাধিক সূত্র আরও জানায়, দ্বিতীয় ধাপে সরে দাঁড়ানোর সুযোগ থাকবে ৩০ এপ্রিল। এছাড়া তৃতীয় ধাপে ১২ মে এবং নির্বাচন কমিশন চতুর্থ ধাপের বিস্তারিত সূচি ঘোষণা করলে সেই অনুযায়ী প্রত্যহারের শেষদিন পর্যন্ত সুযোগ থাকবে।
তফসিল অনুযায়ী দ্বিতীয় ধাপে ১৬০ উপজেলার ভোটগ্রহণ ২১ মে ও তৃতীয় ধাপের ১১২ উপজেলায় ভোটগ্রহণ ২৯ মে এবং ৫৫টি উপজেলা পরিষদে ৫ জুন চতুর্থ ধাপের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
উপজেলার দলের অবস্থান নিয়ে জানতে চাইলে দলটির যুগ্ম সাধারণ মাহবুবুল আলম হানিফ কথা বলতে রাজি হোননি।
তবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কয়েকদিন আগে ‘দলীয় ব্যবস্থা’ নেয়ার হুঁশিয়ারি করে বলেছেন, যারা ভবিষ্যতে করতে চায় ‘তাদেরকেও’ নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে।
এরআগে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার নির্দেশনা পেয়ে গত ১৮ এপ্রিল দলের সাংগঠনিক সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন সাধারণ সম্পাদক কাদের।
সেখানে তিনি সাংগঠনিক সম্পাদক ও দপ্তর সম্পাদককে সারাদেশে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের মধ্যে যাদের স্বজন ও পরিবারের সদস্য নির্বাচন করছেন, সে তালিকা তৈরির নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে দলীয় নির্দেশনা বাস্তবায়নে সাংগঠনিক সম্পাদকদের দায়িত্ব দেন বলে দলীয় সূত্র জানায়।
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের উপজেলা ‘ভোটে না দাঁড়ানোর’ নির্দেশনা প্রথম ধাপই কার্যত কাজে আসেনি। দুই-একজন ছাড়া কেন্দ্র থেকে বারবার তাগাদা দেয়ার পরও নির্বাচন থেকে অনেকে সরেননি।
দলীয় ও নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্র বলছে, প্রথম ধাপের ভোটে নির্দেশনা অমান্য করা চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে রয়ে গেছেন বিশজনের বেশি। তাছাড়া দলীয় নির্দেশনা ‘বিলম্ব হওয়ায়’ বেশ কয়েকজন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান হচ্ছেন এমপির স্বজনরা।
এবার দ্বিতীয় ধাপে একই পরিস্থিতির দিকে এগুচ্ছে। এই ধাপেও অন্তত ত্রিশ এমপির স্বজনরা ভোটে দাঁড়িয়েছেন। প্রথম ধাপের মতো দ্বিতীয় ধাপেও অনেক জায়গায় এমপিদের দাপটে অনেক জায়গায় অন্য প্রার্থী না হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। প্রার্থী থাকলেও ‘ডামি’ প্রার্থী রাখছেন এবং নিজেরা পরিস্থিতি ‘পর্যবেক্ষণ’ করছেন। ফলে নির্দেশনার মধ্যেই শেষ পর্যন্ত এই প্রার্থীরা ভোটের লড়াইয়ে থেকে যেতে পারেন, এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কয়েকজন তৃণমূল নেতার ধারণা, সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে আরও কঠোর বার্তা না এলে পরবর্তী ধাপগুলোতেও নির্দেশনার ধারাবাহিকতা থাকবে। তাদের ভাষ্য, শেষপর্যন্ত নির্বাচনে জিতে গেলে অতীতের মতো ক্ষমার সুযোগও পেয়ে যাবে।
তবে দলটির উচ্চ পর্যায়ের একাধিক সূত্র জানায়, আগামী মঙ্গলবার গণভবনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক রয়েছে, সেখানে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নিদের্শনা অমান্যকারীদের ‘কঠিন বার্তা’ দেবেন।
কেন সরছেন না
আগামী ৮ মে প্রথম ধাপে ১৫০ উপজেলায় ভোট হবে। এই ধাপে নরসিংদীর পলাশ উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন স্থানীয় এমপি আনোয়ারুল আশরাফ খানের সম্বন্ধী (স্ত্রীর বড় ভাই) মো. শরীফুল হক। ২২ এপ্রিল সোমবার শেষদিনেও দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে ভোটে থেকে গেছেন।
নোয়াখালী হাতিয়া উপজেলায় আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী ও ছেলে উভয়ের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারে কেন্দ্রের চাপ ছিল। কিন্তু শেষদিন প্রত্যাহার করেছেন তাদের একজন। উল্টো তৃতীয় প্রার্থী সরে যান। এমপি পুত্র আশিক আলী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান হতে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের একটি সূত্র জানায়, চারধাপের মধ্যে প্রথম ধাপে ২৫ জনের মতো এমপিদের স্বজন প্রার্থী হয়েছেন। তবে এরমধ্যে নাটোরের সিংড়ায় প্রতিমন্ত্রী পলকের শ্যালক হাবিবের মতো দুই এক জায়গায় সড়ে দাঁড়ানোর ঘটনা রয়েছে।
দলীয় সূত্রগুলো বলছে, বিলম্বে নির্দেশনা জারি ছাড়া দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা ঠিকঠাকভাবে নির্দেশনা পৌছে দিয়েছেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট এমপি ও প্রার্থীরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে ‘ঢিলেঢালা ভাব’ ভেবে শেষ পর্যন্ত ভোটে থেকে যান।
তাছাড়া সিদ্ধান্ত বিলম্বে জানানোর কারণে অনেকে সুবিধা পান ভোটে দাঁড়াতে। কারণ সরে দাঁড়াতে নির্দেশনা এসেছে ১৮ এপ্রিল। আর মনোনয়ন জমা দেয়ার তারিখ তিনদিন আগে তথা ১৫ এপ্রিল শেষ হয়ে যায়। এতে একক প্রার্থী হিসেবে বেশ কয়েকজন এমপির স্বজন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হচ্ছেন।
সূত্রগুলো বলছে, মন্ত্রী-এমপির স্বজন যেখানে যেখানে ছিল সেখানে প্রার্থী হতে সাহস দেখায়নি অন্যরা। আর সেগুলো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছে সেগুলো ‘ডামি’ অথবা ‘দুর্বল’। যে কারণে পাস করার নিশ্চিয়তা পেয়ে যাওয়ায় সরে যাননি।
অর্ধশত প্রার্থী ভোটে
নির্দেশনার মধ্যে দুই ধাপে প্রায় অর্ধশত মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়-স্বজন ভোটে রয়েছেন বলে একটি সূত্র জানায়। উচ্চ পর্যায়ের সূত্রগুলো বলছে, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ কেন্দ্রে জমা হয়েছে। এগুলো নিয়ে একটি তালিকা করা হচ্ছে। এই তালিকা ধরে দলের ‘বার্তা’ জানিয়ে দেয়া হচ্ছে।
দলটির একাধিক সূত্র আরও জানায়, দ্বিতীয় ধাপে সরে দাঁড়ানোর সুযোগ থাকবে ৩০ এপ্রিল। এছাড়া তৃতীয় ধাপে ১২ মে এবং নির্বাচন কমিশন চতুর্থ ধাপের বিস্তারিত সূচি ঘোষণা করলে সেই অনুযায়ী প্রত্যহারের শেষদিন পর্যন্ত সুযোগ থাকবে।
তফসিল অনুযায়ী দ্বিতীয় ধাপে ১৬০ উপজেলার ভোটগ্রহণ ২১ মে ও তৃতীয় ধাপের ১১২ উপজেলায় ভোটগ্রহণ ২৯ মে এবং ৫৫টি উপজেলা পরিষদে ৫ জুন চতুর্থ ধাপের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
উপজেলার দলের অবস্থান নিয়ে জানতে চাইলে দলটির যুগ্ম সাধারণ মাহবুবুল আলম হানিফ কথা বলতে রাজি হোননি।
তবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কয়েকদিন আগে ‘দলীয় ব্যবস্থা’ নেয়ার হুঁশিয়ারি করে বলেছেন, যারা ভবিষ্যতে করতে চায় ‘তাদেরকেও’ নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে।
এরআগে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার নির্দেশনা পেয়ে গত ১৮ এপ্রিল দলের সাংগঠনিক সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন সাধারণ সম্পাদক কাদের।
সেখানে তিনি সাংগঠনিক সম্পাদক ও দপ্তর সম্পাদককে সারাদেশে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের মধ্যে যাদের স্বজন ও পরিবারের সদস্য নির্বাচন করছেন, সে তালিকা তৈরির নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে দলীয় নির্দেশনা বাস্তবায়নে সাংগঠনিক সম্পাদকদের দায়িত্ব দেন বলে দলীয় সূত্র জানায়।