alt

রাজনীতি

‘স্থবিরতা’ কাটাতে উপায় খুঁজছে বিএনপির হাইকমান্ড

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক : মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪

নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করতে ও তৃণমূলে জনসম্পৃক্তা জোরদার করাসহ নানা ইস্যুতে কর্মসূচি পালনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। দলটির স্থানীয় পর্যায়ের নেতাকর্মীরা যখন মামলা-হামলায় বিপর্যস্ত হয়ে দিশেহারা, দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ও শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন নেতাকর্মীরা। তখন এসব সমস্যা সমাধান করতে দলীয় হাইকমান্ড নানামুখি সমাধানের পথ খুঁজতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। সেইজন্য দলটির যুগপৎ আন্দোলনে সম্পৃক্ত সরকারবিরোধী দলগুলোকে নিয়ে আবারও রাজপথে সক্রিয় হতে সমমনাদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।

দলীয় সূত্র বলছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর অনেকটা ‘স্থবির’ সরকারবিরোধী আন্দোলন। বিএনপি শুধু তাদের নিজস্ব কর্মসূচি পালন করছে। মিত্র দলগুলোও নিজেদের মতো করে মাঝেমধ্যে পৃথক কর্মসূচি পালন করছে। এই অবস্থায় গত রবিবার ১২ দলীয় জোট ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক দলের (এলডিপি) সঙ্গে দলটির লিয়াজোঁ কমিটি বৈঠকে করেছে। আর গতকাল বৈঠক করে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ও লেবার পার্টির সঙ্গে। বৈঠকে আন্দোলনের কর্মসূচিসহ চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়।

বিএনপি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে থেকেই নির্বাচন বর্জন করে আসছে। সেই ধারাবাহিকতায় উপজেলা নির্বাচনসহ স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়। তাদের দাবি নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধিনে কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না তারা। যদিও একের পর এক নির্বাচন বয়কট করার পরবর্তী ধাপ বা করণীয় সম্পর্কে বিএনপি নেতারা কোনো ধারণা দলের নেতাকর্মীসহ দেশবাসীকে এখনও দিতে পারেননি।

দলের ভোট বর্জনের মধ্যেও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে বিএনপি অধ্যুষিত অনেক এলাকায় ভোট প্রদানের হার বেশি দেখা গেছে। এ নিয়ে ওইসব অঞ্চলের কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক নেতাদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলছে দলটির হাইকমান্ড। দলের অনেক কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতার অদৃশ্য ইশারায় ভোটার ও কর্মীরা নির্বাচনে সম্পৃক্ত থেকেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি ভোট কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে নেতাদের বিরুদ্ধে। এসব কারণেই ওইসব এলাকায় ভোটের হার অনেক বেশি হয়েছে বলে মনে করছেন দলটির অনেক নেতাকর্মী।

এদিকে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়া বিএনপি নেতাদের প্রার্থী হওয়া ঠেকাতে পারছে না। দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ও শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন অনেক নেতাকর্মী। এজন্য দল থেকে বহিষ্কারও করা হয় তাদের। প্রথম ধাপে সাবেক ও বর্তমান মিলিয়ে দলটির কমপক্ষে ৮০ জন নেতা প্রার্থী হন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী ছিলেন ২৭। তাদের মধ্যে ৭ জন নির্বাচিত হয়েছেন। দ্বিতীয় ধাপেও চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী আছেন দলটির ৩৩ জন নেতা।

এছাড়া প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের পর তৃতীয় ধাপেও বিএনপির বহিষ্কৃত নেতারা প্রার্থী হয়েছেন। দলের কঠোর অবস্থানের মুখেও তৃতীয় ধাপে বিএনপির অন্তত ১৮ জন নেতা চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। এই ধাপে বিএনপির ২৩ জন নেতা চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। এর মধ্যে পাঁচজন তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। দ্বিতীয় ধাপের ভোট হবে ২১ মে, তৃতীয় ধাপের ভোট হবে ২৯ মে আর চতুর্থ ধাপের ভোট হবে ৫ জুন।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে বিএনপির হাইকমান্ড পর্যালোচনা শুরু করেছে। কোন কোন এলাকায় বেশি ভোট পড়েছে এবং সেই এলাকার দলীয় নেতাকর্মীদের ভূমিকা কী ছিল, তা নিয়ে তারা চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন তারা।

দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘যে দেশে গণতন্ত্রের ছিটেফোঁটাও নেই, সেই দেশে নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না। ভোটারদের ভোটের প্রয়োজন হয় না। ফলাফল নির্ধারিত থাকে, সেটিই ঘোষিত হয়। আওয়ামী প্রতারণার ফাঁদে পা না দিয়ে দেশের ভোটারগণ সর্বান্তঃকরণে উপজেলা নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে।’

তবে বিএনপির কেন্দ্রীয় একজন সহসাংগঠনিক সম্পাদক জানান, ভোট কেনাবেচার চেয়ে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল বেশি প্রভাব ফেলছে উপজেলা নির্বাচনে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যেসব এলাকায় কোন্দল রয়েছে, সেখানে এক পক্ষ সরকারের সঙ্গে আঁতাত করছে আরেক পক্ষকে ঘায়েল করার জন্য। তারা ইন্ধন দিচ্ছেন ভোটের মাঠে। কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপের কারণে সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে কিছু কিছু জায়গায় অনৈতিক সম্পর্কের কারণে ভোটের মাঠে প্রভাব ফেলছে বলে তিনি স্বীকার করেন।

বিএনপির এক জ্যেষ্ঠ নেতা জানান, জাতীয় নির্বাচন থেকে উপজেলা নির্বাচনে ভোটের হার আরও অনেক কম হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটা না হয়ে কোন কোন উপজেলায় ৭২ শতাংশ পর্যন্ত ভোট পড়েছে। আর নির্বাচন কমিশনের হিসেব অনুযায়ী ভোটের হার ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ। বেশি ভোট পড়েছে এমন সব জেলার নেতাদের বক্তব্য ক্ষমতাসীনরা জাল ভোটের মাধ্যমে ভোটের হার বেশি দেখিয়েছেন। সেখানে বিএনপির হাইকমান্ড বলছে, নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিজেরা নিজেরা প্রতিদ্বন্দ্বী। সেখানে শুধু একপক্ষ জাল ভোট দিলে প্রার্থীদের ভোটের ব্যবধান অনেক হতো।’ এ বিষয়ে জেলা ও উপজেলার নেতাদের কাছে কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি। এ বিষয়ে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামে আলোচনা হতে পারে বলেও উল্লেখ করেন ওই নেতা।

এসব বিষয় মানতে নারাজ ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম। তার মতে এত ভোট কোথাও পড়েনি। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ৫ শতাংশের বেশি ভোট না পড়লেও সরকার সেটাকে ৪০ শতাংশে নিয়ে গেছে। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। জনগণ এ সরকার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে গেছে। তারা ভোট ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে বলে জনগণ আর ভোটের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না। তাই তারা নিজ উদ্যোগে ভোট বয়কট করছেন।

অন্যদিকে দুয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে চার পর্বে অনুষ্ঠিতব্য ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম দফায় দেশের ১৩৯টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে ৮ মে। প্রথম ধাপের ১৩৯টি উপজেলা নির্বাচনে ৮১টিতে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন নির্বাচনী এলাকার মোট ভোটারের ২০ ভাগেরও কম ভোট পেয়ে। মোট ভোটের হার ছিল ৩৬ দশমিক ১৮ শতাংশ। সামগ্রিক পরিস্থিতি ও ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, এরআগের তিনটি উপজেলা নির্বাচনেই ভোটের হার ধারাবাহিকভাবে কমেছে। অর্থাৎ এবারের নির্বাচনে ভোটারের অনীহা ও অনাগ্রহ সুস্পষ্ট। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ২০০৯ সালে তৃতীয় উপজেলা নির্বাচনে ৬৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ ভোট পড়ে। ২০১৪ সালে চতুর্থ উপজেলা নির্বাচনে ভোট পড়ে ৬১ শতাংশ, ২০১৯ সালের পঞ্চম উপজেলা নির্বাচনে ভোটের হার ছিল ৪১ শতাংশ।

ছবি

দুদকের আবেদনে লতিফ বিশ্বাস ও পরিবারের বিদেশযাত্রা স্থগিত

ছবি

‘সংস্কার ছাড়া নতুন বাংলাদেশ আসবে না’ — বরগুনায় এনসিপির পথসভায় আহ্বায়ক

ছবি

বিএনপির বিক্ষোভে ব্যবসায়ী হত্যা তদন্তের দাবি ও ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদ

ছবি

বিএনপির বিক্ষোভে ব্যবসায়ী হত্যা তদন্তের দাবি ও ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদ

ছবি

জাতীয় পার্টির বিভক্তির জন্য ক্ষমতাসীনদের দায় দেখছেন কিছু নেতা

ছবি

‘গুপ্ত সংগঠনের মব’ এর বিরুদ্ধে ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল

ছবি

বিএনপি এখন চাঁদাবাজের দলে পরিণত হয়েছে: নাহিদ

ছবি

‘তুমি টানতেছ কেন?’—পুলিশকে ধমক সাবেক মন্ত্রী কামরুলের

ছবি

সোহাগ হত্যা: আসামিদের পক্ষে লড়বেন না বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা

ছবি

জয়-পুতুলের দান-অনুদান সংক্রান্ত নথি চেয়ে এনবিআরকে দুদকের চিঠি

ছবি

সোহাগ হত্যাকে ‘রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার’ হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ ফখরুলের

ছবি

হাতিরঝিলে গ্রেপ্তার শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে চার্জশিট

ছবি

জরুরি অবস্থার অপব্যবহার ঠেকাতে সুনির্দিষ্ট আইন চায় এনসিপি

অপপ্রচারের জবাব দিতে তরুণদের সাইবার যুদ্ধে নামতে হবে’

ছবি

ইসি পুনর্গঠন ও শাপলা প্রতীকের পক্ষে অবস্থান নিলো এনসিপি

ছবি

মির্জা ফখরুলের ভাইয়ের ওপর বিএনপি কর্মীদের হামলা চেষ্টা, গাড়ি ভাঙচুর

ছবি

ব্যবসায়ী হত্যার প্রতিবাদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মশাল মিছিল

ছবি

‘৯ লাখের শেয়ার লেনদেন, দিয়েছেন ২৫ হাজার’ — খাগড়াছড়িতে এনসিপি নেত্রীকে অভিযুক্ত করলেন সহকর্মী

ছবি

‘গণতান্ত্রিক অধিকারের যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি’ — সজাগ থাকার আহ্বান তারেকের

ছবি

‘অন্তর্বর্তী সরকার অন্যায়কারীদের প্রশ্রয় দিচ্ছে কি না?’ – প্রশ্ন তারেক রহমানের

ছবি

সহিংসতা বন্ধ না করলে আওয়ামী লীগের পরিণতি ভোগ করবে বিএনপি’ — হুঁশিয়ারি যুবশক্তির

ছবি

পরিকল্পিত প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তায় দেশে অরাজকতা, নির্বাচন বিলম্বের সুযোগ তৈরি করছে : যুবদল সভাপতি

ছবি

সোহাগ হত্যাকাণ্ডে বিএনপির কড়া প্রতিক্রিয়া, জড়িতদের শাস্তির দাবি

ছবি

‘নৃশংসতার রাজনীতি চলতে পারে না’ — সোহাগ হত্যার প্রতিবাদে দুই দলের বিবৃতি

ছবি

জাতিসংঘ কার্যালয়কে ‘সার্বভৌমত্বের হুমকি’ আখ্যা দিয়ে তিন দাবি হেফাজতে ইসলামের

ছবি

সোহরাওয়ার্দীর সমাবেশকে ‘টার্নিং পয়েন্ট’ বললেন জামায়াত সেক্রেটারি জেনারেল

ছবি

“পাগলও বোঝে কারা ক্ষমতায় যাবে,” প্রতিবাদ সভায় দুদু

ছবি

তত্ত্বাবধায়ক, জরুরি অবস্থা ও বিচারপতি নিয়োগে আংশিক ঐকমত্য,আলোচনা চল‌বে : আলী রীয়াজ

ছবি

বিএনপি চায় না ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ সংবিধানের মূলনীতিতে অন্তর্ভুক্ত হোক: সালাহউদ্দিন আহমদ

ছবি

তরুণ ভোটার, সীমানা, পোস্টাল ব্যালট ও আইন সংশোধনে নানা প্রস্তাব ইসির

ছবি

“বিএনপি কি পাঁচ নম্বর দল?” ক্ষুব্ধ হয়ে চলে যাচ্ছিলেন সালাহউদ্দিন, অনুরোধে ফিরে আসেন

অনলাইন নিবন্ধনে প্রবাসীদের ভোট, সংসদ ও স্থানীয় নির্বাচনে আর ইভিএম নয়

ছবি

ছাত্রদলের অভিযোগ অস্বীকার, সুষ্ঠু তদন্তের আশ্বাস বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের

ছবি

শেখ হাসিনার গুলির নির্দেশের অডিও নিয়ে বিবিসির প্রতিবেদনকে একপেশে বললেন জয়

ছবি

বড়লেখায় জামায়াত নেতার ‘পাকিস্তান খ্যাত’ বক্তব্যে ক্ষুব্ধ ছাত্রদল, আইনগত ব্যবস্থার দাবি

ছবি

আইনশৃঙ্খলা থেকে পর্যবেক্ষক পর্যন্ত দায়িত্বে চার নির্বাচন কমিশনার

tab

রাজনীতি

‘স্থবিরতা’ কাটাতে উপায় খুঁজছে বিএনপির হাইকমান্ড

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪

নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করতে ও তৃণমূলে জনসম্পৃক্তা জোরদার করাসহ নানা ইস্যুতে কর্মসূচি পালনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। দলটির স্থানীয় পর্যায়ের নেতাকর্মীরা যখন মামলা-হামলায় বিপর্যস্ত হয়ে দিশেহারা, দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ও শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন নেতাকর্মীরা। তখন এসব সমস্যা সমাধান করতে দলীয় হাইকমান্ড নানামুখি সমাধানের পথ খুঁজতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। সেইজন্য দলটির যুগপৎ আন্দোলনে সম্পৃক্ত সরকারবিরোধী দলগুলোকে নিয়ে আবারও রাজপথে সক্রিয় হতে সমমনাদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।

দলীয় সূত্র বলছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর অনেকটা ‘স্থবির’ সরকারবিরোধী আন্দোলন। বিএনপি শুধু তাদের নিজস্ব কর্মসূচি পালন করছে। মিত্র দলগুলোও নিজেদের মতো করে মাঝেমধ্যে পৃথক কর্মসূচি পালন করছে। এই অবস্থায় গত রবিবার ১২ দলীয় জোট ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক দলের (এলডিপি) সঙ্গে দলটির লিয়াজোঁ কমিটি বৈঠকে করেছে। আর গতকাল বৈঠক করে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ও লেবার পার্টির সঙ্গে। বৈঠকে আন্দোলনের কর্মসূচিসহ চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়।

বিএনপি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে থেকেই নির্বাচন বর্জন করে আসছে। সেই ধারাবাহিকতায় উপজেলা নির্বাচনসহ স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়। তাদের দাবি নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধিনে কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না তারা। যদিও একের পর এক নির্বাচন বয়কট করার পরবর্তী ধাপ বা করণীয় সম্পর্কে বিএনপি নেতারা কোনো ধারণা দলের নেতাকর্মীসহ দেশবাসীকে এখনও দিতে পারেননি।

দলের ভোট বর্জনের মধ্যেও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে বিএনপি অধ্যুষিত অনেক এলাকায় ভোট প্রদানের হার বেশি দেখা গেছে। এ নিয়ে ওইসব অঞ্চলের কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক নেতাদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলছে দলটির হাইকমান্ড। দলের অনেক কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতার অদৃশ্য ইশারায় ভোটার ও কর্মীরা নির্বাচনে সম্পৃক্ত থেকেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি ভোট কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে নেতাদের বিরুদ্ধে। এসব কারণেই ওইসব এলাকায় ভোটের হার অনেক বেশি হয়েছে বলে মনে করছেন দলটির অনেক নেতাকর্মী।

এদিকে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়া বিএনপি নেতাদের প্রার্থী হওয়া ঠেকাতে পারছে না। দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ও শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন অনেক নেতাকর্মী। এজন্য দল থেকে বহিষ্কারও করা হয় তাদের। প্রথম ধাপে সাবেক ও বর্তমান মিলিয়ে দলটির কমপক্ষে ৮০ জন নেতা প্রার্থী হন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী ছিলেন ২৭। তাদের মধ্যে ৭ জন নির্বাচিত হয়েছেন। দ্বিতীয় ধাপেও চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী আছেন দলটির ৩৩ জন নেতা।

এছাড়া প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের পর তৃতীয় ধাপেও বিএনপির বহিষ্কৃত নেতারা প্রার্থী হয়েছেন। দলের কঠোর অবস্থানের মুখেও তৃতীয় ধাপে বিএনপির অন্তত ১৮ জন নেতা চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। এই ধাপে বিএনপির ২৩ জন নেতা চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। এর মধ্যে পাঁচজন তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। দ্বিতীয় ধাপের ভোট হবে ২১ মে, তৃতীয় ধাপের ভোট হবে ২৯ মে আর চতুর্থ ধাপের ভোট হবে ৫ জুন।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে বিএনপির হাইকমান্ড পর্যালোচনা শুরু করেছে। কোন কোন এলাকায় বেশি ভোট পড়েছে এবং সেই এলাকার দলীয় নেতাকর্মীদের ভূমিকা কী ছিল, তা নিয়ে তারা চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন তারা।

দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘যে দেশে গণতন্ত্রের ছিটেফোঁটাও নেই, সেই দেশে নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না। ভোটারদের ভোটের প্রয়োজন হয় না। ফলাফল নির্ধারিত থাকে, সেটিই ঘোষিত হয়। আওয়ামী প্রতারণার ফাঁদে পা না দিয়ে দেশের ভোটারগণ সর্বান্তঃকরণে উপজেলা নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে।’

তবে বিএনপির কেন্দ্রীয় একজন সহসাংগঠনিক সম্পাদক জানান, ভোট কেনাবেচার চেয়ে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল বেশি প্রভাব ফেলছে উপজেলা নির্বাচনে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যেসব এলাকায় কোন্দল রয়েছে, সেখানে এক পক্ষ সরকারের সঙ্গে আঁতাত করছে আরেক পক্ষকে ঘায়েল করার জন্য। তারা ইন্ধন দিচ্ছেন ভোটের মাঠে। কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপের কারণে সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে কিছু কিছু জায়গায় অনৈতিক সম্পর্কের কারণে ভোটের মাঠে প্রভাব ফেলছে বলে তিনি স্বীকার করেন।

বিএনপির এক জ্যেষ্ঠ নেতা জানান, জাতীয় নির্বাচন থেকে উপজেলা নির্বাচনে ভোটের হার আরও অনেক কম হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটা না হয়ে কোন কোন উপজেলায় ৭২ শতাংশ পর্যন্ত ভোট পড়েছে। আর নির্বাচন কমিশনের হিসেব অনুযায়ী ভোটের হার ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ। বেশি ভোট পড়েছে এমন সব জেলার নেতাদের বক্তব্য ক্ষমতাসীনরা জাল ভোটের মাধ্যমে ভোটের হার বেশি দেখিয়েছেন। সেখানে বিএনপির হাইকমান্ড বলছে, নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিজেরা নিজেরা প্রতিদ্বন্দ্বী। সেখানে শুধু একপক্ষ জাল ভোট দিলে প্রার্থীদের ভোটের ব্যবধান অনেক হতো।’ এ বিষয়ে জেলা ও উপজেলার নেতাদের কাছে কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি। এ বিষয়ে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামে আলোচনা হতে পারে বলেও উল্লেখ করেন ওই নেতা।

এসব বিষয় মানতে নারাজ ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম। তার মতে এত ভোট কোথাও পড়েনি। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ৫ শতাংশের বেশি ভোট না পড়লেও সরকার সেটাকে ৪০ শতাংশে নিয়ে গেছে। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। জনগণ এ সরকার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে গেছে। তারা ভোট ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে বলে জনগণ আর ভোটের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না। তাই তারা নিজ উদ্যোগে ভোট বয়কট করছেন।

অন্যদিকে দুয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে চার পর্বে অনুষ্ঠিতব্য ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম দফায় দেশের ১৩৯টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে ৮ মে। প্রথম ধাপের ১৩৯টি উপজেলা নির্বাচনে ৮১টিতে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন নির্বাচনী এলাকার মোট ভোটারের ২০ ভাগেরও কম ভোট পেয়ে। মোট ভোটের হার ছিল ৩৬ দশমিক ১৮ শতাংশ। সামগ্রিক পরিস্থিতি ও ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, এরআগের তিনটি উপজেলা নির্বাচনেই ভোটের হার ধারাবাহিকভাবে কমেছে। অর্থাৎ এবারের নির্বাচনে ভোটারের অনীহা ও অনাগ্রহ সুস্পষ্ট। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ২০০৯ সালে তৃতীয় উপজেলা নির্বাচনে ৬৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ ভোট পড়ে। ২০১৪ সালে চতুর্থ উপজেলা নির্বাচনে ভোট পড়ে ৬১ শতাংশ, ২০১৯ সালের পঞ্চম উপজেলা নির্বাচনে ভোটের হার ছিল ৪১ শতাংশ।

back to top