# সংস্কার শেষে নির্বাচনী রোডম্যাপে উঠবে বাংলাদেশে
# অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যেকোন ব্যর্থতা আমাদের সকলের ব্যর্থতা
# বিগত সরকার ছিলো বাই দ্যা মাফিয়া, অব দ্যা মাফিয়া, ফর দ্যা মাফিয়া
# এই সরকার যাতে নিজেরাই নিজেদের ব্যর্থতার কারণ না হয়ে দাঁড়ায়, সে ব্যাপারে তাদেরও সতর্ক থাকতে হবে
# পতিত ফ্যাসিবাদী সরকারের অনেক প্রেতাত্মা এখনও সরকারে অবস্থান করছে: মির্জা ফখরুল
নির্বাচনের মাধ্যমে কাংঙ্খিত সরকার প্রতিষ্ঠা করাই এই সরকারের প্রধান লক্ষ্য মন্তব্য করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘সংস্কার শেষ হলেই বাংলাদেশ নির্বাচনী রোডম্যাপে উঠবে।’
মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিশ্ব গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত হোন তারেক রহমান। বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান বলেন, ‘নির্বাচিত সরকার ছাড়া সংস্কার স্থায়ী হয় না, তাই জনগণের নির্বাচনের মাধ্যমে সংসদীয় সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ।’
বিগত সরকারের সমালোচনা করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘গত ১৫ বছর দেশে মাফিয়া শাসন চালু হয়েছিল। বিগত সরকার ছিলো বাই দ্যা মাফিয়া, অব দ্যা মাফিয়া, ফর দ্যা মাফিয়া। এই মাফিয়া চক্র দেশকে ভঙ্গুর করে দিয়েছে। মাফিয়া চক্রের রেখে যাওয়া জঞ্জাল এখনো পরিষ্কার হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘মাফিয়া সরকার শুধু দেশকে অর্থনৈতিকভাবে ধ্বংস করে নাই দেশের সাংবিধানিক এবং স্বায়ত্তশাসিত সকল প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে। মাফিয়া চক্র দলীয় স্বার্থ ব্যবহার করতে যেয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও ধ্বংস করেছে। ধ্বংস করেছে বিচার বিভাগকেও। এই মাফিয়া জঞ্জাল পরিষ্কার করতে একটু সময়তো লাগবেই।’
জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন ছাড়া সংস্কার কার্যক্রম প্রক্রিয়া টেকসই ও কার্যকর হয় না। একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমেই জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা সম্ভব বলে মনে করেন তারেক রহমান। অন্তর্বর্তী সরকার ইতিমধ্যে বেশ কিছু সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। তবে নির্বাচন কমিশন, জনপ্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সংস্কারের পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
অর্ন্তবর্তী সরকারকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সংস্কার শেষ করার তাগিদ দিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেই জনগণের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা পাবে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই সংস্কার করতে না পারলে ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থান ব্যর্থ হবে।’ অন্তর্বর্তী সরকার এজেন্ডা ঠিক করার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে না পারলে গণঅভ্যুত্থানের সাফল্য ব্যাহত করতে ষড়যন্ত্রকারী চক্র নানা সুযোগ গ্রহণ করতে পারে, এর কিছু আলামত ইতিমধ্যেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, ‘এই সরকার যাতে নিজেরাই নিজেদের ব্যর্থতার কারণ না হয়ে দাঁড়ায়, সে ব্যাপারে তাদেরও সতর্ক থাকতে হবে।’
এবারের গণঅভ্যুত্থানের চরিত্র অতীতের যে কোনো গণঅভ্যুত্থানের চেয়ে ব্যতিক্রম মন্তব্য করে বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘এবারের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে কেবল মানুষের অধিকারই প্রতিষ্ঠিত হয়নি, দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা পেয়েছে। এবার দেশ এবং জনগণের সুরক্ষায় প্রথম কাজ হতে হবে, রাষ্ট্র এবং সমাজে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার এবং ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘এই সরকারের কোনো কোনো কার্যক্রম সবার কাছে হয়তো সাফল্য হিসেবে বিবেচিত নাও হতে পারে। কিন্তু এই সরকারের ব্যর্থতা হবে বাংলাদেশের পক্ষের গণতন্ত্রকামী জনগণের ব্যর্থতা। এটি আমাদের প্রত্যেকের মনে রাখতে হবে। সুতরাং এই অন্তর্বর্তী সরকারকে কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। দেশ-বিদেশ থেকে নানা রকম উসকানিতেও জনগণ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ হতে দেবে না।’
বর্তমান সরকারকে আশ্বস্ত করে তারেক রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ কিংবা যে কোনো দেশে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত সরকার অবশ্যই জনগণের সরকার। জনগণ এই সরকারের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে এবং রাখবে।’
‘রাষ্ট্র সংস্কার যেকোনো দেশের জন্য একটি ধারাবাহিক কার্যক্রম’ উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘এই অর্ন্তবর্তী সরকারের প্রধান কাজ হলো একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা। আমরা বিশ্বাস করি বর্তমান এই অর্ন্তবর্তী সরকার তারা তাদের দ্বায়ীত্ব যথাযথ পালন করবে। কারন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যেকোন ব্যর্থতা আমাদের সকলের ব্যর্থতা।’
তিনি বলেন, ‘জনগণের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সংস্কার প্রয়োজন। সেই ধারাবাহিকতায় বিএনপি দলীয় রাজনীতি সংস্কারের জন্য ২০২৩ সালে ৩১ দফা ঘোষণা করা হয়েছে। ঘোষিত ৩১ দফাই শেষ কথা নয়। বিএনপি মনে করে, রাষ্ট্র কিংবা রাজনীতি, সব ক্ষেত্রেই সংস্কার কার্যক্রম একটি ধারাবাহিক এবং চলমান প্রক্রিয়া।’
তিনি বলেন, ‘কেউ যদি মনে করেন একটি উন্নত এবং নিরাপদ বাংলাদেশের জন্য আরও নতুন রাজনৈতিক দলের প্রয়োজন রয়েছে, তাতেও দোষের কিছু নেই। কারণ, শেষ পর্যন্ত জনগণই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে তারা কাকে সমর্থন জানাবে কিংবা কাকে সমর্থন দেবে না। এ কারণেই বিএনপি বারবার জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দিয়েছে।’
দেশে প্রায় সাড়ে ১২ কোটি ভোটর আছে, এরমধ্যে ২০০৯ এর পর আড়াই কোটি তরুণ প্রজন্মের ভোটার যুক্ত হয়েছে। যারা তাদের ভোটাধিকার কখনো প্রয়োগ করতে পারেনি বলে অভিযোগ করেন তিনি। এসময় জ্ঞানভিত্তিক রাষ্ট্র তৈরি করতে নিজেদেরকে তৈরি করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে আমাদের সামনে একটা সুযোগ এসেছে, ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে আমরা সুযোগ পেয়েছি একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার। সবাইকে অনুরোধ করব, সুযোগটা যেন হেলায় না হারাই।’ উপস্থিত নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা হচ্ছেন গণতন্ত্রের ভ্যানগার্ড, পাহারাদার। সে জন্য গণতন্ত্রকে কেউ যদি ধ্বংস করতে চায়, আবার বিপথে নিতে চায়, সেখানে অবশ্যই আপনারা রুখে দাঁড়াবেন।’ পতিত ফ্যাসিবাদী সরকারের অনেক প্রেতাত্মা এখনো সরকারে অবস্থান করছে জানিয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের সতর্ক করেন মির্জা ফখরুল।
বিএনপি নেতা সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, আমিনুল হক ও তানভীর আহমেদের পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুস সালাম, ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবীব উন নবী খান, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী ছাড়াও ছাত্রদল, যুবদল, মহিলা দল ও কৃষক দলের শীর্ষ নেতারা বক্তব্য দেন।
বেলা আড়াইটায় আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ শুরু হলেও নেতা-কর্মীরা দুপুর থেকেই খ- খ- মিছিল নিয়ে নয়াপল্টনে জড়ো হতে থাকেন। একপর্যায়ে সমাবেশ নয়াপল্টন ছাড়িয়ে কাকরাইল মোড় থেকে ফকিরাপুল হয়ে আরামবাগ, নাইটিঙ্গেল হয়ে বিজয়নগর, পুরানা পল্টন এলাকা পর্যন্ত ছড়িয়ে যায়। শান্তিনগর বাজার থেকে পুরানা পল্টন লেনসহ সকল গলিতে নেতা-কর্মীরা অবস্থান নেয়। নেমাকর্মীরা রাস্তা দখলে নিলে দুপুরের আগেই নয়াপল্টনের ভিআইপি সড়কের দুই পাশের সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিকেলের দিকে বিজয়নগর সড়কেও যানবাহন চলাচলে বিঘœ ঘটে। ফলে পুরানা পল্টন, কাকরাইল, শান্তিনগরসহ আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজট তৈরি হয়। এর প্রভাব পড়ে রাজধানীর অন্যান্য সড়কেও। এ কারণে অফিস ফেরত মানুষদের দুর্ভোগের মুখে পড়তে হয়।
মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
# সংস্কার শেষে নির্বাচনী রোডম্যাপে উঠবে বাংলাদেশে
# অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যেকোন ব্যর্থতা আমাদের সকলের ব্যর্থতা
# বিগত সরকার ছিলো বাই দ্যা মাফিয়া, অব দ্যা মাফিয়া, ফর দ্যা মাফিয়া
# এই সরকার যাতে নিজেরাই নিজেদের ব্যর্থতার কারণ না হয়ে দাঁড়ায়, সে ব্যাপারে তাদেরও সতর্ক থাকতে হবে
# পতিত ফ্যাসিবাদী সরকারের অনেক প্রেতাত্মা এখনও সরকারে অবস্থান করছে: মির্জা ফখরুল
নির্বাচনের মাধ্যমে কাংঙ্খিত সরকার প্রতিষ্ঠা করাই এই সরকারের প্রধান লক্ষ্য মন্তব্য করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘সংস্কার শেষ হলেই বাংলাদেশ নির্বাচনী রোডম্যাপে উঠবে।’
মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিশ্ব গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত হোন তারেক রহমান। বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান বলেন, ‘নির্বাচিত সরকার ছাড়া সংস্কার স্থায়ী হয় না, তাই জনগণের নির্বাচনের মাধ্যমে সংসদীয় সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ।’
বিগত সরকারের সমালোচনা করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘গত ১৫ বছর দেশে মাফিয়া শাসন চালু হয়েছিল। বিগত সরকার ছিলো বাই দ্যা মাফিয়া, অব দ্যা মাফিয়া, ফর দ্যা মাফিয়া। এই মাফিয়া চক্র দেশকে ভঙ্গুর করে দিয়েছে। মাফিয়া চক্রের রেখে যাওয়া জঞ্জাল এখনো পরিষ্কার হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘মাফিয়া সরকার শুধু দেশকে অর্থনৈতিকভাবে ধ্বংস করে নাই দেশের সাংবিধানিক এবং স্বায়ত্তশাসিত সকল প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে। মাফিয়া চক্র দলীয় স্বার্থ ব্যবহার করতে যেয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও ধ্বংস করেছে। ধ্বংস করেছে বিচার বিভাগকেও। এই মাফিয়া জঞ্জাল পরিষ্কার করতে একটু সময়তো লাগবেই।’
জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন ছাড়া সংস্কার কার্যক্রম প্রক্রিয়া টেকসই ও কার্যকর হয় না। একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমেই জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা সম্ভব বলে মনে করেন তারেক রহমান। অন্তর্বর্তী সরকার ইতিমধ্যে বেশ কিছু সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। তবে নির্বাচন কমিশন, জনপ্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সংস্কারের পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
অর্ন্তবর্তী সরকারকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সংস্কার শেষ করার তাগিদ দিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেই জনগণের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা পাবে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই সংস্কার করতে না পারলে ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থান ব্যর্থ হবে।’ অন্তর্বর্তী সরকার এজেন্ডা ঠিক করার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে না পারলে গণঅভ্যুত্থানের সাফল্য ব্যাহত করতে ষড়যন্ত্রকারী চক্র নানা সুযোগ গ্রহণ করতে পারে, এর কিছু আলামত ইতিমধ্যেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, ‘এই সরকার যাতে নিজেরাই নিজেদের ব্যর্থতার কারণ না হয়ে দাঁড়ায়, সে ব্যাপারে তাদেরও সতর্ক থাকতে হবে।’
এবারের গণঅভ্যুত্থানের চরিত্র অতীতের যে কোনো গণঅভ্যুত্থানের চেয়ে ব্যতিক্রম মন্তব্য করে বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘এবারের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে কেবল মানুষের অধিকারই প্রতিষ্ঠিত হয়নি, দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা পেয়েছে। এবার দেশ এবং জনগণের সুরক্ষায় প্রথম কাজ হতে হবে, রাষ্ট্র এবং সমাজে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার এবং ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘এই সরকারের কোনো কোনো কার্যক্রম সবার কাছে হয়তো সাফল্য হিসেবে বিবেচিত নাও হতে পারে। কিন্তু এই সরকারের ব্যর্থতা হবে বাংলাদেশের পক্ষের গণতন্ত্রকামী জনগণের ব্যর্থতা। এটি আমাদের প্রত্যেকের মনে রাখতে হবে। সুতরাং এই অন্তর্বর্তী সরকারকে কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। দেশ-বিদেশ থেকে নানা রকম উসকানিতেও জনগণ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ হতে দেবে না।’
বর্তমান সরকারকে আশ্বস্ত করে তারেক রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ কিংবা যে কোনো দেশে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত সরকার অবশ্যই জনগণের সরকার। জনগণ এই সরকারের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে এবং রাখবে।’
‘রাষ্ট্র সংস্কার যেকোনো দেশের জন্য একটি ধারাবাহিক কার্যক্রম’ উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘এই অর্ন্তবর্তী সরকারের প্রধান কাজ হলো একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা। আমরা বিশ্বাস করি বর্তমান এই অর্ন্তবর্তী সরকার তারা তাদের দ্বায়ীত্ব যথাযথ পালন করবে। কারন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যেকোন ব্যর্থতা আমাদের সকলের ব্যর্থতা।’
তিনি বলেন, ‘জনগণের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সংস্কার প্রয়োজন। সেই ধারাবাহিকতায় বিএনপি দলীয় রাজনীতি সংস্কারের জন্য ২০২৩ সালে ৩১ দফা ঘোষণা করা হয়েছে। ঘোষিত ৩১ দফাই শেষ কথা নয়। বিএনপি মনে করে, রাষ্ট্র কিংবা রাজনীতি, সব ক্ষেত্রেই সংস্কার কার্যক্রম একটি ধারাবাহিক এবং চলমান প্রক্রিয়া।’
তিনি বলেন, ‘কেউ যদি মনে করেন একটি উন্নত এবং নিরাপদ বাংলাদেশের জন্য আরও নতুন রাজনৈতিক দলের প্রয়োজন রয়েছে, তাতেও দোষের কিছু নেই। কারণ, শেষ পর্যন্ত জনগণই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে তারা কাকে সমর্থন জানাবে কিংবা কাকে সমর্থন দেবে না। এ কারণেই বিএনপি বারবার জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দিয়েছে।’
দেশে প্রায় সাড়ে ১২ কোটি ভোটর আছে, এরমধ্যে ২০০৯ এর পর আড়াই কোটি তরুণ প্রজন্মের ভোটার যুক্ত হয়েছে। যারা তাদের ভোটাধিকার কখনো প্রয়োগ করতে পারেনি বলে অভিযোগ করেন তিনি। এসময় জ্ঞানভিত্তিক রাষ্ট্র তৈরি করতে নিজেদেরকে তৈরি করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে আমাদের সামনে একটা সুযোগ এসেছে, ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে আমরা সুযোগ পেয়েছি একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার। সবাইকে অনুরোধ করব, সুযোগটা যেন হেলায় না হারাই।’ উপস্থিত নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা হচ্ছেন গণতন্ত্রের ভ্যানগার্ড, পাহারাদার। সে জন্য গণতন্ত্রকে কেউ যদি ধ্বংস করতে চায়, আবার বিপথে নিতে চায়, সেখানে অবশ্যই আপনারা রুখে দাঁড়াবেন।’ পতিত ফ্যাসিবাদী সরকারের অনেক প্রেতাত্মা এখনো সরকারে অবস্থান করছে জানিয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের সতর্ক করেন মির্জা ফখরুল।
বিএনপি নেতা সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, আমিনুল হক ও তানভীর আহমেদের পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুস সালাম, ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবীব উন নবী খান, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী ছাড়াও ছাত্রদল, যুবদল, মহিলা দল ও কৃষক দলের শীর্ষ নেতারা বক্তব্য দেন।
বেলা আড়াইটায় আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ শুরু হলেও নেতা-কর্মীরা দুপুর থেকেই খ- খ- মিছিল নিয়ে নয়াপল্টনে জড়ো হতে থাকেন। একপর্যায়ে সমাবেশ নয়াপল্টন ছাড়িয়ে কাকরাইল মোড় থেকে ফকিরাপুল হয়ে আরামবাগ, নাইটিঙ্গেল হয়ে বিজয়নগর, পুরানা পল্টন এলাকা পর্যন্ত ছড়িয়ে যায়। শান্তিনগর বাজার থেকে পুরানা পল্টন লেনসহ সকল গলিতে নেতা-কর্মীরা অবস্থান নেয়। নেমাকর্মীরা রাস্তা দখলে নিলে দুপুরের আগেই নয়াপল্টনের ভিআইপি সড়কের দুই পাশের সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিকেলের দিকে বিজয়নগর সড়কেও যানবাহন চলাচলে বিঘœ ঘটে। ফলে পুরানা পল্টন, কাকরাইল, শান্তিনগরসহ আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজট তৈরি হয়। এর প্রভাব পড়ে রাজধানীর অন্যান্য সড়কেও। এ কারণে অফিস ফেরত মানুষদের দুর্ভোগের মুখে পড়তে হয়।