alt

রাজনীতি

বিএনপির বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, দ্রুত নির্বাচন দাবি

মহসীন ইসলাম টুটুল : শনিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৪

প্রায় ১৬ বছর পর ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে বর্ণাঢ্য ও দীর্ঘ র‌্যালি করে বিএনপি। গতবছর ২৮ অক্টোবরের পর এমন র‌্যালি করতে পেরে উচ্ছ্বসিত দলটির নেতাকর্মীরা। এ দিন শোভাযাত্রায় যোগ দিতে নয়াপল্টনে বিএনপি নেতাকর্মীদের ঢল নামে। বেলা তিনটায় তাদের শোভাযাত্রা শুরুর কথা থাকলেও সকাল থেকেই আসতে শুরু করে নেতাকর্মীরা।

https://sangbad.net.bd/images/2024/November/09Nov24/news/bnp.jpg

সেøাগানে সেøাগানে মুখরিত করে তুলে চারপাশ। শোভাযাত্রায় কয়েক লাখ নেতাকর্মী যোগ দিয়েছে বলে দাবি করেছে দলটি। শুক্রবার (৮ নভেম্বর) সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়া সত্ত্বেও শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে রাজধানী জুড়ে দেখা দেয় তীব্র যানজট। ফলে ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ। সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত এমন চিত্র দেখা যায়।

এই কর্মসূচির মাধ্যমে বিএনপি তাদের শক্তির জানান দেয়ার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের ব্যাপারে নেতাকর্মীদের সজাগ থাকার তাগিদ দিয়েছে বলে মনে করেন অনেকে। শোভাযাত্রা শেষে দলটির পক্ষ থেকে দেয়া সমাপনী বক্তব্যে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অতি দ্রুত সংস্কার শেষ করে নির্বাচন দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে ফকিরেরপুল থেকে কাকরাইল পর্যন্ত নেতাকর্মীদের সমাগমে সমাবেশ যেন জনসমুদ্রে রূপ নেয়। বেলা তিনটায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে শোভাযাত্রাটি উদ্বোধন করা হয় চারটার পর। এরপর দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়ে কাকরাইল, মৎস্য ভবন, ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট, শাহবাগ, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, বাংলামোটর, কারওয়ান বাজার ও ফার্মগেট হয়ে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে গিয়ে শোভাযাত্রাটি শেষ হয়।

বিএনপি ঢাকা উত্তরের সদস্য সচিব মোস্তফা জামান দাবি করে সংবাদকে বলেন, ‘র?্যালিতে শুধু বিএনপির নেতাকর্মীরা না, সমাজের সব শ্রেণী-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেছে। সেই সঙ্গে ঢাকা জেলার আশপাশের নেতাকর্মীরাও অংশগ্রহণ করেছে।’

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শুরু আর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শোভাযাত্রা শেষ হওয়ার কথা দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল। পরে নয়পল্টনেই ল-ন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে তারেক রহমান শোভাযাত্রর উদ্বোদন করেন। এ সময় মির্জা ফখরুলও সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন। পরে জানানো হয় শোভাযাত্রা শেষ হওয়ার সময় ল-নে জুম্মার নামাজের সময়, তাই তারেক রহমান সমাপ্তি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারছেন না।

উদ্বোধনী বক্তব্যে তারেক রহমান বলেন, ‘এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দেয়া যাবে না। অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, এটি আজ জনগণের চাওয়া। এই লক্ষ্য জনতার মিছিল কোনোভাবেই বৃথা যেতে দেয়া যাবে না। এই প্রত্যাশা রেখে এই মিছিলের সাফল্য কামনা করে এর শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করছি।’

শোভাযাত্রা শুরুর পর থেকে মাইকে বারবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনির দৃষ্টি আকর্ষন করা হয়। মাইকে বলা হয়, শোভাযাত্রা যেন নির্বিঘেœ যেতে পারে সেজন্য রাস্তা ফাঁকা রাখার জন্য অনুরোধ করা হয়। কোনো যানবাহন, রিকশা, সিএনজি শোভাযাত্রার মধ্যে ঢুকে যাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করে।

ফলে শোভাযাত্রকে কেন্দ্র করে পল্টন, নয়াপল্টন, কাকরাইল, কাকরাইল মসজিদ, মৎস ভবন মোড়, ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট, শাহবাগ, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, বাংলামোটর, কারওয়ান বাজার ও ফার্মগেট এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এসব রাস্তায় যান চলাচল করতে না পারায় রাজধানীর অন্য রাাস্তাগুলোতে যানবাহনের চাপ বেড়ে যায়। ফলে দেখা দেয় তীব্র যানজটের।

সড়কে যানজটের কারণে মেট্রোরেলে মানুষের চাপ ছিল বিগত যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। এরমধ্যে শোভাযাত্রায় অংশ নেয়া অনেক নেতাকর্মী মেট্রোরেলে চড়ে এক স্টেশন থেকে আরেক স্টেশনে যাতায়াত করতে দেখা গেছে। বিশেষ করে শাহবাগ থেকে ফার্মগেট ও উত্তরাগামী যাত্রীর চাপ বেশি দেখা গেছে। এতে মেট্রোরেলে নিয়মিত যাতায়াতকারীরা ভোগান্তিতে পড়েন। অনেককে মেট্রো স্টেশনের ফ্লোরে বসে বিশ্রাম নিতেও দেখা গেছে।

সন্ধ্যা সাতটার দিকে মেট্রোরেলের ফার্মগেট স্টেশন থেকে মতিঝিলগামী এক যাত্রী আক্ষেপ করে বলেন, ‘যত্রতত্র এসব মিটিং মিছিল করার রেওয়াজ এই দেশে যতদিন থকবে, ততদিন জনগণের এমন ভোগান্তি পোহাতেই হবে।’

নয়াপল্টনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এই ৭ নভেম্বর ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার দিন, ৭ নভেম্বর ছিল বাংলাদেশকে আধিপত্যবাদের কবল থেকে মুক্ত করবার দিন। আপনাদের নিশ্চয় জানা থাকার কথা, ৭ নভেম্বরের আগে ৩ নভেম্বর একটা অভ্যুত্থান হয়েছিল খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে। খালেদ মোশাররফের লক্ষ্য ছিল আধিপত্যবাদকে আবার প্রতিষ্ঠা করা, একদলীয় শাসনে দেশকে নিয়ে যাওয়া।’

তিনি বলেন, ‘এদেশের দেশপ্রেমিক সৈনিক ও জনগণ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে তাদেরকে পরাজিত করে সেদিন আমাদের স্বাধীনতার ঘোষক বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দিয়ে বাংলাদেশের জনগণ এক নতুন ইতিহাস রচনা করে। সেই ইতিহাস ছিল বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ইতিহাস, সেই ইতিহাস ছিল বাংলাদেশকে আধুনিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ইতিহাস। দেশের মানুষকে একটা স্বাতন্ত্র্য পরিচিতি দেয়ার ইতিহাস।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে এবছর আমরা আরেকটা অভ্যুত্থান দেখেছি, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান। দীর্ঘ ১৭ বছর আমরা লড়াই করেছি, সংগ্রাম করেছি ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে। এই ১৭ বছরে আওয়ামী লীগ পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক কাঠামো ধ্বংস করে দিয়েছিল।’

সমাপনী বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব বিপুল অংশগ্রহণের জন্য নেতাকর্মী ও আগতদের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বলেন, ‘ঢাকা মহানগর উত্তর, দক্ষিণ, ঢাকার আটটি জেলার নেতাকর্মী ও আপামর জনসাধারণ, আপনাদের বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও বিএনপির পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’

শোভাযাত্রায় আরও অংশ নেন মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আবদুল আউয়াল মিন্টু, আহমেদ আজম খান, আবদুস সালাম, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, মজিবুর রহমান সারোয়ার, খায়রুল কবির খোকন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, নাসির উদ্দিন অসীম, শিরিন সুলতানা, মীর সরাফত আলী সপু, মীর নেওয়াজ আলী, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, রফিকুল ইসলাম, রাকিবুল ইসলাম বকুল, নিলোফার চৌধুরী মনি, তাইফুল ইসলাম টিপু, আমিনুল হক, মোস্তফা জামান, এম মোনায়েম মুন্না, নরুল ইসলাম নয়ন, এসএম জিলানি, রাজীব আহসান, হাসান জাফির তুহিন, রাকিকুল ইসলাম রাকিব, নাছির উদ্দিন নাছির, নিপুণ রায় চৌধুরীসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা।

সাম্প্রদায়িকতার ধোঁয়া তুলে উপমহাদেশে আধিপত্য কায়েম করতে চায় ভারত : রিজভী

ছবি

সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণে সব ধরনের ষড়যন্ত্র হচ্ছে: খন্দকার মোশাররফ

ছবি

২৮ ছাত্রসংগঠনের সভায় ঐক্যবদ্ধ ছাত্র আন্দোলনের আহ্বান

ছবি

ভারতীয় শাড়ি আগুনে পোড়ালেন রিজভী

ছবি

সংবিধান সংস্কারে বিএনপির ৬২ প্রস্তাব

ছবি

শেখ হাসিনার বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রচারে ট্রাইব্যুনালের নিষেধাজ্ঞা

ছবি

সাত বছরের দণ্ড থেকে গিয়াস উদ্দিন মামুনকে খালাস দিলেন হাইকোর্ট

ছবি

‘কল্পকাহিনীর’ প্রচার ঠেকাতে একজোট হওয়ার আহ্বান ইউনূসের

ছবি

নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার মাধ্যমে ৮০ শতাংশ সমস্যা নিরসন হবে: রাকিবুল ইসলাম

ছবি

দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্তিতে শিক্ষার সংস্কার জরুরি: শিবির সভাপতি

ছবি

গণহত্যা: আমু ও কামরুলকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠাল ট্রাইব্যুনাল

ছবি

জগন্নাথে এক মঞ্চে হাসনাত-রাকিব মঞ্জুরসহ ১২ সংগঠনের নেতা

ছবি

আগরতলায় সহকারী হাইকমিশনে হামলার প্রতিবাদে জাতীয় নাগরিক কমিটির ক্ষোভ প্রকাশ

ছবি

কূটনৈতিক মিশনের নিরাপত্তায় ভারতে ‘শান্তিরক্ষা বাহিনী’র সহায়তা নেওয়ার আহ্বান রিজভীর

ছবি

আগরতলায় হাইকমিশনে হামলার নিন্দা, ছয় দফা দাবি জাতীয় নাগরিক কমিটির

ছবি

মমতার বক্তব্য বাংলাদেশের স্বাধীনতা–সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি: ফখরুল

ছবি

ভোটার তালিকা হালনাগাদ শেষে বাড়ি বাড়ি তথ্য সংগ্রহের উদ্যোগ

জয়দেবপুরে বাসে অগ্নিসংযোগ মামলায় তারেক রহমানসহ ৬০ জন খালাস

ছবি

রাজনৈতিক প্রতিহিংসা অবসানে তারেক রহমানের ‘ঐক্যবদ্ধ’ ও ‘নতুন অধ্যায়’ খোলার আহ্বান

ছবি

শিগগির তারেক রহমান দেশে আসছেন: মির্জা আব্বাস

ছবি

২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলায় কখনোই বিএনপি ইনভলভ ছিল না: মির্জা আব্বাস

ছবি

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে বলা হয়েছে বিচারিক আদালতের বিচার অবৈধ : শিশির মনির

ছবি

একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা : তারেক রহমান-বাবরসহ সব আসামি খালাস

ছবি

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা : আপিলের রায় আজ

ছবি

সংস্কার নিয়ে কারও চিন্তা করার দরকার নাই, সংস্কার আমরা করব: আমীর খসরু

ছবি

আমাদের ব্যর্থ করতে সব চেষ্টা করছেন শেখ হাসিনা: সারজিস

ছবি

লন্ডনে গেলেন ফখরুল, উদ্দেশ্য স্ত্রীর চিকিৎসা ও তারেকের সঙ্গে সাক্ষাৎ

সীমান্তের ওপারে বসে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে, সমাবেশে মির্জা ফখরুল

ছবি

গাজীপুরে আরও এক মামলায় খালাস পেলেন তারেক রহমান

ছবি

শুক্রবার বিক্ষোভ-সমাবেশের ঘোষণা হেফাজতের

ছবি

‘উদ্বিগ্ন , চিন্তিত’ মির্জা ফখরুল, ‘ কোথায় যাচ্ছে দেশ ’

ছবি

কয়লা খনি মামলায় খালেদাসহ ৩ জনকে অব্যাহতি, চারজনের বিচার শুরু

ছবি

কর ফাঁকির মামলা থেকে তারেক রহমানকে অব্যাহতি

ছবি

মার্কিন দূতাবাসে খালেদা জিয়া

ছবি

চীন যাচ্ছেন জামায়াতসহ ইসলামি দলগুলোর ১৪ নেতা

নতুন প্রতিনিধি কমিটি গঠন করল জাতীয় নাগরিক কমিটি

tab

রাজনীতি

বিএনপির বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, দ্রুত নির্বাচন দাবি

মহসীন ইসলাম টুটুল

শনিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৪

প্রায় ১৬ বছর পর ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে বর্ণাঢ্য ও দীর্ঘ র‌্যালি করে বিএনপি। গতবছর ২৮ অক্টোবরের পর এমন র‌্যালি করতে পেরে উচ্ছ্বসিত দলটির নেতাকর্মীরা। এ দিন শোভাযাত্রায় যোগ দিতে নয়াপল্টনে বিএনপি নেতাকর্মীদের ঢল নামে। বেলা তিনটায় তাদের শোভাযাত্রা শুরুর কথা থাকলেও সকাল থেকেই আসতে শুরু করে নেতাকর্মীরা।

https://sangbad.net.bd/images/2024/November/09Nov24/news/bnp.jpg

সেøাগানে সেøাগানে মুখরিত করে তুলে চারপাশ। শোভাযাত্রায় কয়েক লাখ নেতাকর্মী যোগ দিয়েছে বলে দাবি করেছে দলটি। শুক্রবার (৮ নভেম্বর) সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়া সত্ত্বেও শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে রাজধানী জুড়ে দেখা দেয় তীব্র যানজট। ফলে ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ। সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত এমন চিত্র দেখা যায়।

এই কর্মসূচির মাধ্যমে বিএনপি তাদের শক্তির জানান দেয়ার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের ব্যাপারে নেতাকর্মীদের সজাগ থাকার তাগিদ দিয়েছে বলে মনে করেন অনেকে। শোভাযাত্রা শেষে দলটির পক্ষ থেকে দেয়া সমাপনী বক্তব্যে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অতি দ্রুত সংস্কার শেষ করে নির্বাচন দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে ফকিরেরপুল থেকে কাকরাইল পর্যন্ত নেতাকর্মীদের সমাগমে সমাবেশ যেন জনসমুদ্রে রূপ নেয়। বেলা তিনটায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে শোভাযাত্রাটি উদ্বোধন করা হয় চারটার পর। এরপর দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়ে কাকরাইল, মৎস্য ভবন, ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট, শাহবাগ, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, বাংলামোটর, কারওয়ান বাজার ও ফার্মগেট হয়ে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে গিয়ে শোভাযাত্রাটি শেষ হয়।

বিএনপি ঢাকা উত্তরের সদস্য সচিব মোস্তফা জামান দাবি করে সংবাদকে বলেন, ‘র?্যালিতে শুধু বিএনপির নেতাকর্মীরা না, সমাজের সব শ্রেণী-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেছে। সেই সঙ্গে ঢাকা জেলার আশপাশের নেতাকর্মীরাও অংশগ্রহণ করেছে।’

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শুরু আর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শোভাযাত্রা শেষ হওয়ার কথা দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল। পরে নয়পল্টনেই ল-ন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে তারেক রহমান শোভাযাত্রর উদ্বোদন করেন। এ সময় মির্জা ফখরুলও সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন। পরে জানানো হয় শোভাযাত্রা শেষ হওয়ার সময় ল-নে জুম্মার নামাজের সময়, তাই তারেক রহমান সমাপ্তি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারছেন না।

উদ্বোধনী বক্তব্যে তারেক রহমান বলেন, ‘এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দেয়া যাবে না। অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, এটি আজ জনগণের চাওয়া। এই লক্ষ্য জনতার মিছিল কোনোভাবেই বৃথা যেতে দেয়া যাবে না। এই প্রত্যাশা রেখে এই মিছিলের সাফল্য কামনা করে এর শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করছি।’

শোভাযাত্রা শুরুর পর থেকে মাইকে বারবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনির দৃষ্টি আকর্ষন করা হয়। মাইকে বলা হয়, শোভাযাত্রা যেন নির্বিঘেœ যেতে পারে সেজন্য রাস্তা ফাঁকা রাখার জন্য অনুরোধ করা হয়। কোনো যানবাহন, রিকশা, সিএনজি শোভাযাত্রার মধ্যে ঢুকে যাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করে।

ফলে শোভাযাত্রকে কেন্দ্র করে পল্টন, নয়াপল্টন, কাকরাইল, কাকরাইল মসজিদ, মৎস ভবন মোড়, ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট, শাহবাগ, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, বাংলামোটর, কারওয়ান বাজার ও ফার্মগেট এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এসব রাস্তায় যান চলাচল করতে না পারায় রাজধানীর অন্য রাাস্তাগুলোতে যানবাহনের চাপ বেড়ে যায়। ফলে দেখা দেয় তীব্র যানজটের।

সড়কে যানজটের কারণে মেট্রোরেলে মানুষের চাপ ছিল বিগত যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। এরমধ্যে শোভাযাত্রায় অংশ নেয়া অনেক নেতাকর্মী মেট্রোরেলে চড়ে এক স্টেশন থেকে আরেক স্টেশনে যাতায়াত করতে দেখা গেছে। বিশেষ করে শাহবাগ থেকে ফার্মগেট ও উত্তরাগামী যাত্রীর চাপ বেশি দেখা গেছে। এতে মেট্রোরেলে নিয়মিত যাতায়াতকারীরা ভোগান্তিতে পড়েন। অনেককে মেট্রো স্টেশনের ফ্লোরে বসে বিশ্রাম নিতেও দেখা গেছে।

সন্ধ্যা সাতটার দিকে মেট্রোরেলের ফার্মগেট স্টেশন থেকে মতিঝিলগামী এক যাত্রী আক্ষেপ করে বলেন, ‘যত্রতত্র এসব মিটিং মিছিল করার রেওয়াজ এই দেশে যতদিন থকবে, ততদিন জনগণের এমন ভোগান্তি পোহাতেই হবে।’

নয়াপল্টনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এই ৭ নভেম্বর ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার দিন, ৭ নভেম্বর ছিল বাংলাদেশকে আধিপত্যবাদের কবল থেকে মুক্ত করবার দিন। আপনাদের নিশ্চয় জানা থাকার কথা, ৭ নভেম্বরের আগে ৩ নভেম্বর একটা অভ্যুত্থান হয়েছিল খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে। খালেদ মোশাররফের লক্ষ্য ছিল আধিপত্যবাদকে আবার প্রতিষ্ঠা করা, একদলীয় শাসনে দেশকে নিয়ে যাওয়া।’

তিনি বলেন, ‘এদেশের দেশপ্রেমিক সৈনিক ও জনগণ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে তাদেরকে পরাজিত করে সেদিন আমাদের স্বাধীনতার ঘোষক বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দিয়ে বাংলাদেশের জনগণ এক নতুন ইতিহাস রচনা করে। সেই ইতিহাস ছিল বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ইতিহাস, সেই ইতিহাস ছিল বাংলাদেশকে আধুনিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ইতিহাস। দেশের মানুষকে একটা স্বাতন্ত্র্য পরিচিতি দেয়ার ইতিহাস।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে এবছর আমরা আরেকটা অভ্যুত্থান দেখেছি, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান। দীর্ঘ ১৭ বছর আমরা লড়াই করেছি, সংগ্রাম করেছি ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে। এই ১৭ বছরে আওয়ামী লীগ পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক কাঠামো ধ্বংস করে দিয়েছিল।’

সমাপনী বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব বিপুল অংশগ্রহণের জন্য নেতাকর্মী ও আগতদের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বলেন, ‘ঢাকা মহানগর উত্তর, দক্ষিণ, ঢাকার আটটি জেলার নেতাকর্মী ও আপামর জনসাধারণ, আপনাদের বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও বিএনপির পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’

শোভাযাত্রায় আরও অংশ নেন মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আবদুল আউয়াল মিন্টু, আহমেদ আজম খান, আবদুস সালাম, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, মজিবুর রহমান সারোয়ার, খায়রুল কবির খোকন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, নাসির উদ্দিন অসীম, শিরিন সুলতানা, মীর সরাফত আলী সপু, মীর নেওয়াজ আলী, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, রফিকুল ইসলাম, রাকিবুল ইসলাম বকুল, নিলোফার চৌধুরী মনি, তাইফুল ইসলাম টিপু, আমিনুল হক, মোস্তফা জামান, এম মোনায়েম মুন্না, নরুল ইসলাম নয়ন, এসএম জিলানি, রাজীব আহসান, হাসান জাফির তুহিন, রাকিকুল ইসলাম রাকিব, নাছির উদ্দিন নাছির, নিপুণ রায় চৌধুরীসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা।

back to top