দেশের সশস্ত্র বাহিনীর কোনো সদস্যকে প্রশিক্ষণের জন্য ভারতে না পাঠানোর ‘অনুরোধ’ জানিয়েছেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান অলি আহমদ।
শনিবার রাজধানীর মহাখালীর রাওয়া কনভেশন সেন্টারে এক সেমিনারে তিনি বলেন, “আমাদের বুঝতে হবে, ভারত কখনো বাংলাদেশের উন্নয়ন চায় না। বাংলাদেশের মানুষ শান্তিতে থাকুক, তা তারা চায় না। তারা এ দেশকে শোষণ ও শাসন করতে চায়। এ ব্যাপারে কারো দ্বিধা-দ্বন্দ্ব থাকার অবকাশ নাই।”
তিনি বলেন, “প্রশিক্ষণের জন্য সশস্ত্র বাহিনীর কোনো সদস্য যেন ভারতে পাঠানো না হয়, এটার জন্য সেনাপ্রধানকে বা অন্যান্য প্রধানদের অনুরোধ করব। কারণ ওখানে যাওয়ার পর অনেকে অনৈতিক সমস্যায় জড়িয়ে পড়তে পারেন।
“অতীতে অনেকে জড়িয়ে পড়েছেন, যেমন হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ। বিস্তারিত আমি বলতে চাই না, কারণ আমি জানি ঘটনাগুলো।”
অলি আহমদ বলেন, “সেনাপ্রধান হওয়ার আগে অনেকে ভারতের দেওয়া ১৮-২০টা শর্তের ওপর দস্তখত করেছে। এ কথা সকলে জানে, কিন্তু বলে না। এছাড়া বিভিন্ন সময় সশস্ত্র বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হওয়া বা প্রমোশনের জন্য ভারতের শরণাপন্ন হয়েছেন।”
সাবেক এ সেনা কর্মকর্তা বলেন, “সর্বপ্রথম এরশাদই ভারতের সাহায্য নিয়ে ক্ষমতা দখল করে। ২০০৮ সালে জেনারেল মঈন ইউ আহমদ নিজের এবং নিজের পরিবারের নিরাপত্তার জন্য ভারতের কাছে আত্মসমর্পণ করেন।”
‘রাষ্ট্র সংস্কার-রাজনীতির প্রভাবমুক্ত সশস্ত্র বাহিনী’ শিরোনামে এ সেমিনার আয়োজন করে অবসরে যাওয়া সেনা কর্মকর্তাদের সংগঠন রিটায়ার্ড আর্মড ফোর্সেস অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন-রাওয়া।
অলি আহমদ বলেন, “ভারত হল আমাদের মূল সমস্যা, এটা বুঝতে হবে আপনাদের। তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। আপনারা দেখেছেন, হাসিনাকে পাহাড়া দেওয়ার জন্য, বিডিআরের অভ্যন্তরে যেসব ঘটনা ঘটেছে, সেখানে ব্ল্যাক ক্যাট জড়িত ছিল ভারতের। আমাদের ক্যাটগুলো তো জড়িত ছিলই, কিন্তু ভারতের ব্ল্যাক ক্যাট জড়িত ছিল।”
৫ অগাস্ট গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন, “এবার আপনারা দেখেন ভারতের ব্ল্যাক ক্যাটগুলো তিনটা কালো বাসে করে ক্যান্টনমেন্ট থেকে তারা বের হয়েছিল, এবং এয়ারপোর্টে কীভাবে তারা পালাচ্ছিল, এটাতো কারো অজানা নয়। ভারতের ব্ল্যাক ক্যাটই ছিল হাসিনার পাহাড়াদার ও আমাদের জনগণকে হত্যার জন্য মুখ্য ভূমিকা পালনকারী। তাদের ব্যাপারে আমাদের সব সময় সতর্ক থাকতে হবে।”
দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে তিনি বলেন, “আপনি যদি অর্থনৈতিক অবস্থা দেখেন খুবই খারাপ। বর্তমানে উনারা ভালো ভালো লেকচার দিচ্ছেন, নাটক করতেসেন, আমরাও দেখতেসি। নাটকগুলো কিন্তু সাজানো। আসলে ব্যাংকে কোনো টাকা নাই, অবস্থা ভালো না, আমাদের দেখাচ্ছে ওখান থেকে পাঁচ আসছে, ওখান থেকে হাজার আসছে।”
দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা সশস্ত্র বাহিনীর মূল দায়িত্ব বলে তুলে ধরে তিনি বলেন, “কোন অবস্থাতেই রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত হওয়া উচিত হবে না। তাহলে সশস্ত্র বাহিনী একটি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান হিসাবে সবার কাছে সম্মানের আসনে অধীষ্ঠ হবে।”
৮৭ বছর বয়স হলেও নিজেকে ২৫ বছরের যুবক মনে করেন বলে তুলে ধরে অলি আহমদ বলেন, “আই ক্যান ডু এনাদার ক্যু এগেইনস্ট পাকিস্তান আর্মি।”
১৯৭৫ সালে ১৫ অগাস্ট সংগঠিত হওয়ার জন্য অনেকগুলো কারণ রয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমি চাকরিতে ছিলাম। সংক্ষেপে যেমন, স্বশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের এবং মুক্তিযোদ্ধাদের অবমূল্যায়ন। অন্যদিকে ভারতের তত্ত্বাবধানে রক্ষী বাহিনীর মাধ্যমে সব কিছুর নিয়ন্ত্রণ। একদলীয় শাসন কায়েম করার অপচেষ্টা, যেটা স্বশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা মেনে নিতে পারেন নাই। এটারই ফলশ্রুতি ছিল ১৫ অগাস্ট।”
অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধে অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহ আল ইউসুফ বলেন, “সশস্ত্র বাহিনীর দায়িত্ব, কর্তব্য ও ভূমিকার বিষয়টি স্পষ্ট করা প্রয়োজন। সশস্ত্র বাহিনী কি শুধুই বহিঃস্থ স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষার দায়িত্বে থাকবে, নাকি আভ্যন্তরীণ স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষায়ও তাদের অংশগ্রহণ থাকবে?
“এ বিষয়টি স্পষ্ট না থাকার কারণেই রাজনৈতিক দলগুলো সামরিক বাহিনীকে নিজেদের ক্ষমতাকে সুসংহত করার লক্ষ্যে ব্যবহার করেছে। তারা নিজেদের প্রয়োজনেই কখনও জনগণকে নির্যাতনের হাতিয়ার হিসেবে সামরিক বাহিনীকে ব্যবহার করেছে, সামরিক বাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। আবার যখন সামরিক বাহিনীর উচিৎ ছিল জনগণের পাশে এসে দাড়ানোর, তখন তাদেরকে ব্যারাকে ফিরে যেতে বলা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “কখনও পুরস্কারের আশায়, আবার কখনও তিরস্কারের ভয়ে সামরিক নেতৃত্ব দলীয় অপরাজনীতির লেজুড়বৃত্তি করেছে। তাই, যথাযথ ভূমিকা পালনের জন্য সামরিক বাহিনীকে রাজনীতিমুক্ত নয়, বরং দলীয় অপরাজনীতির প্রভাবমুক্ত রাখা প্রয়োজন।”
আরেক প্রবন্ধে আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেন, “ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে, স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন আমলে সামরিক বাহিনীতে যে রাজনীতিকরণ হয়েছে, তার জন্য কোনো একপক্ষ দায়ী নয়।
“কখনো ঊর্ধ্বতন সামরিক অফিসাররা ব্যক্তিস্বার্থে রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করেছেন, আবার কখনো রাজনীতিবিদরাও নিজেদের অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে সামরিক বাহিনীকে ব্যবহার করেছেন। দেশের জন্য ক্ষতিকর এই অশুভ পরিস্থিতির অবসান হওয়া জরুরি।”
শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫
দেশের সশস্ত্র বাহিনীর কোনো সদস্যকে প্রশিক্ষণের জন্য ভারতে না পাঠানোর ‘অনুরোধ’ জানিয়েছেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান অলি আহমদ।
শনিবার রাজধানীর মহাখালীর রাওয়া কনভেশন সেন্টারে এক সেমিনারে তিনি বলেন, “আমাদের বুঝতে হবে, ভারত কখনো বাংলাদেশের উন্নয়ন চায় না। বাংলাদেশের মানুষ শান্তিতে থাকুক, তা তারা চায় না। তারা এ দেশকে শোষণ ও শাসন করতে চায়। এ ব্যাপারে কারো দ্বিধা-দ্বন্দ্ব থাকার অবকাশ নাই।”
তিনি বলেন, “প্রশিক্ষণের জন্য সশস্ত্র বাহিনীর কোনো সদস্য যেন ভারতে পাঠানো না হয়, এটার জন্য সেনাপ্রধানকে বা অন্যান্য প্রধানদের অনুরোধ করব। কারণ ওখানে যাওয়ার পর অনেকে অনৈতিক সমস্যায় জড়িয়ে পড়তে পারেন।
“অতীতে অনেকে জড়িয়ে পড়েছেন, যেমন হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ। বিস্তারিত আমি বলতে চাই না, কারণ আমি জানি ঘটনাগুলো।”
অলি আহমদ বলেন, “সেনাপ্রধান হওয়ার আগে অনেকে ভারতের দেওয়া ১৮-২০টা শর্তের ওপর দস্তখত করেছে। এ কথা সকলে জানে, কিন্তু বলে না। এছাড়া বিভিন্ন সময় সশস্ত্র বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হওয়া বা প্রমোশনের জন্য ভারতের শরণাপন্ন হয়েছেন।”
সাবেক এ সেনা কর্মকর্তা বলেন, “সর্বপ্রথম এরশাদই ভারতের সাহায্য নিয়ে ক্ষমতা দখল করে। ২০০৮ সালে জেনারেল মঈন ইউ আহমদ নিজের এবং নিজের পরিবারের নিরাপত্তার জন্য ভারতের কাছে আত্মসমর্পণ করেন।”
‘রাষ্ট্র সংস্কার-রাজনীতির প্রভাবমুক্ত সশস্ত্র বাহিনী’ শিরোনামে এ সেমিনার আয়োজন করে অবসরে যাওয়া সেনা কর্মকর্তাদের সংগঠন রিটায়ার্ড আর্মড ফোর্সেস অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন-রাওয়া।
অলি আহমদ বলেন, “ভারত হল আমাদের মূল সমস্যা, এটা বুঝতে হবে আপনাদের। তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। আপনারা দেখেছেন, হাসিনাকে পাহাড়া দেওয়ার জন্য, বিডিআরের অভ্যন্তরে যেসব ঘটনা ঘটেছে, সেখানে ব্ল্যাক ক্যাট জড়িত ছিল ভারতের। আমাদের ক্যাটগুলো তো জড়িত ছিলই, কিন্তু ভারতের ব্ল্যাক ক্যাট জড়িত ছিল।”
৫ অগাস্ট গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন, “এবার আপনারা দেখেন ভারতের ব্ল্যাক ক্যাটগুলো তিনটা কালো বাসে করে ক্যান্টনমেন্ট থেকে তারা বের হয়েছিল, এবং এয়ারপোর্টে কীভাবে তারা পালাচ্ছিল, এটাতো কারো অজানা নয়। ভারতের ব্ল্যাক ক্যাটই ছিল হাসিনার পাহাড়াদার ও আমাদের জনগণকে হত্যার জন্য মুখ্য ভূমিকা পালনকারী। তাদের ব্যাপারে আমাদের সব সময় সতর্ক থাকতে হবে।”
দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে তিনি বলেন, “আপনি যদি অর্থনৈতিক অবস্থা দেখেন খুবই খারাপ। বর্তমানে উনারা ভালো ভালো লেকচার দিচ্ছেন, নাটক করতেসেন, আমরাও দেখতেসি। নাটকগুলো কিন্তু সাজানো। আসলে ব্যাংকে কোনো টাকা নাই, অবস্থা ভালো না, আমাদের দেখাচ্ছে ওখান থেকে পাঁচ আসছে, ওখান থেকে হাজার আসছে।”
দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা সশস্ত্র বাহিনীর মূল দায়িত্ব বলে তুলে ধরে তিনি বলেন, “কোন অবস্থাতেই রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত হওয়া উচিত হবে না। তাহলে সশস্ত্র বাহিনী একটি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান হিসাবে সবার কাছে সম্মানের আসনে অধীষ্ঠ হবে।”
৮৭ বছর বয়স হলেও নিজেকে ২৫ বছরের যুবক মনে করেন বলে তুলে ধরে অলি আহমদ বলেন, “আই ক্যান ডু এনাদার ক্যু এগেইনস্ট পাকিস্তান আর্মি।”
১৯৭৫ সালে ১৫ অগাস্ট সংগঠিত হওয়ার জন্য অনেকগুলো কারণ রয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমি চাকরিতে ছিলাম। সংক্ষেপে যেমন, স্বশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের এবং মুক্তিযোদ্ধাদের অবমূল্যায়ন। অন্যদিকে ভারতের তত্ত্বাবধানে রক্ষী বাহিনীর মাধ্যমে সব কিছুর নিয়ন্ত্রণ। একদলীয় শাসন কায়েম করার অপচেষ্টা, যেটা স্বশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা মেনে নিতে পারেন নাই। এটারই ফলশ্রুতি ছিল ১৫ অগাস্ট।”
অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধে অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহ আল ইউসুফ বলেন, “সশস্ত্র বাহিনীর দায়িত্ব, কর্তব্য ও ভূমিকার বিষয়টি স্পষ্ট করা প্রয়োজন। সশস্ত্র বাহিনী কি শুধুই বহিঃস্থ স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষার দায়িত্বে থাকবে, নাকি আভ্যন্তরীণ স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষায়ও তাদের অংশগ্রহণ থাকবে?
“এ বিষয়টি স্পষ্ট না থাকার কারণেই রাজনৈতিক দলগুলো সামরিক বাহিনীকে নিজেদের ক্ষমতাকে সুসংহত করার লক্ষ্যে ব্যবহার করেছে। তারা নিজেদের প্রয়োজনেই কখনও জনগণকে নির্যাতনের হাতিয়ার হিসেবে সামরিক বাহিনীকে ব্যবহার করেছে, সামরিক বাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। আবার যখন সামরিক বাহিনীর উচিৎ ছিল জনগণের পাশে এসে দাড়ানোর, তখন তাদেরকে ব্যারাকে ফিরে যেতে বলা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “কখনও পুরস্কারের আশায়, আবার কখনও তিরস্কারের ভয়ে সামরিক নেতৃত্ব দলীয় অপরাজনীতির লেজুড়বৃত্তি করেছে। তাই, যথাযথ ভূমিকা পালনের জন্য সামরিক বাহিনীকে রাজনীতিমুক্ত নয়, বরং দলীয় অপরাজনীতির প্রভাবমুক্ত রাখা প্রয়োজন।”
আরেক প্রবন্ধে আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেন, “ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে, স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন আমলে সামরিক বাহিনীতে যে রাজনীতিকরণ হয়েছে, তার জন্য কোনো একপক্ষ দায়ী নয়।
“কখনো ঊর্ধ্বতন সামরিক অফিসাররা ব্যক্তিস্বার্থে রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করেছেন, আবার কখনো রাজনীতিবিদরাও নিজেদের অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে সামরিক বাহিনীকে ব্যবহার করেছেন। দেশের জন্য ক্ষতিকর এই অশুভ পরিস্থিতির অবসান হওয়া জরুরি।”