বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের এক দশক আগের গুম ও পরবর্তীতে ভারতের শিলংয়ে তার অবস্থান নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার মধ্যে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
তৎকালীন ফরাসি বার্তা সংস্থার বাংলাদেশ ব্যুরো প্রধানের দায়িত্বে থাকা শফিকুল আলম রোববার ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
তিনি লিখেছেন, সালাহউদ্দিনের শক্তিশালী বিবৃতির কারণে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ওপর ক্ষিপ্ত হন এবং তার ধারাবাহিকতায় বিএনপির এই নেতা অপহরণ ও গুমের শিকার হন।
যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এক সাংবাদিকের পোস্টের পর ঘটনাটি নতুন করে আলোচনায় আসে। ওই পোস্টে সাংবাদিক জানান, তিনি শিলংয়ে সালাহউদ্দিনের সঙ্গে দেখা করেন এবং তার বিলাসবহুল বাংলোয় আয়েশী জীবনযাপনের কথা উল্লেখ করেন।
২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাজধানীর উত্তরা থেকে সালাহউদ্দিন নিখোঁজ হন। প্রায় দুই মাস পর ১১ মে ভারতের মেঘালয়ের শিলংয়ে স্থানীয় পুলিশ তার সন্ধান পায়।
তাকে আটকের পর ফরেনার্স অ্যাক্টে মামলা করে মেঘালয় পুলিশ। ওই মামলায় নিম্ন আদালতের রায়ে ২০১৮ সালে সালাহউদ্দিন খালাস পান। ভারত সরকার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে তাকে সেখানেই থাকতে হয়।
২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আপিলেও খালাস পান তিনি এবং আদালত তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেয়। এরপর ৮ মে তিনি ভারতের আসাম রাজ্য সরকারের কাছে ভ্রমণ পাস অনুমোদনের আবেদন করেন, যা ঝুলে ছিল।
পরে ৫ অগাস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ১১ আগস্ট প্রায় ৯ বছর পর দেশে ফেরেন বিএনপির সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী।
ফেসবুক পোস্টে শফিকুল আলম লেখেন, নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে অপহরণের পর গুম করে ভারতে পাঠানোর কয়েক সপ্তাহ আগে সালাহউদ্দিন গোপন স্থান থেকে বিএনপির মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব নেন।
তিনি লেখেন, “সেই সময় আওয়ামী লীগ সরকার বিএনপির ওপর ব্যাপক দমন-পীড়ন চালাচ্ছিল। খালেদা জিয়াকে তার গুলশানের কার্যালয়ে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছিল।”
স্মৃতিচারণ করে তিনি আরও লেখেন, “সে সময় দলের নেতারা কেউ আত্মগোপনে, কেউ গ্রেপ্তার হন। আমি ও এএফপির দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান ক্রিস ওটন ব্রিটিশ হাই কমিশনার রবার্ট গিবসনের সঙ্গে গোপনে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে গিয়ে তার সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম।
সিভিল পোশাকের নিরাপত্তা রক্ষীরা আমাদের ব্রিটিশ হাই কমিশনের সদস্য ভেবে ভিতরে ঢুকতে দেয়।”
তিনি বলেন, “সেই সময়ে প্রতিদিন আমরা সালাহউদ্দিনের বিবৃতি পেতাম। তার বিবৃতিগুলো ছিল গোছানো, কার্যকর ও ক্ষুরধার। রিজভীর বিবৃতি ছিল জটিল ও দুর্বোধ্য, শক্তিশালী উদ্ধৃতি বের করাও কঠিন ছিল। কিন্তু রিজভী গ্রেপ্তার হওয়ার পর সালাহউদ্দিন অসাধারণ সব বিবৃতি দেওয়া শুরু করেন, যা শেখ হাসিনার শাসনকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করত।”
তিনি আরও বলেন, “সেই বিবৃতির কারণে শেখ হাসিনা এতটাই ক্ষিপ্ত হয়ে পড়েন যে, তিনি সালাহউদ্দিনকে ধরতে অভিযান চালানোর নির্দেশ দেন।”
এরপর সালাহউদ্দিন গুম হন উল্লেখ করে শফিকুল লিখেছেন, “২০১৫ সালের শুরুর দিকে তিনি অপহরণ ও গুমের শিকার হন। তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদ তার মুক্তির দাবিতে সাহসী আন্দোলন শুরু করেন। হাজেরা খাতুন ও তার মেয়েদের সঙ্গে শেখ হাসিনার শাসনের বিরুদ্ধে এই লড়াই ছিল চোখে পড়ার মতো।”
তিনি মন্তব্য করেন, “সম্ভবত সেই আন্দোলনই নিরাপত্তা বাহিনীকে সালাহউদ্দিনকে সীমান্ত পার করে শিলং পাঠাতে বাধ্য করে।”
তিনি আরও লেখেন, “বেশিরভাগ মানুষ, এমনকি বিএনপির অনেক তরুণ কর্মীও দলটির ১৭ বছরের লড়াইয়ের সাহসী অধ্যায় ভুলে গেছে। গতকাল আমরা তার (সালাহউদ্দিন) বিরুদ্ধে কিছু ঘৃণ্য অপপ্রচার দেখেছি।
কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে, এই সংগ্রামগুলোই শেখ হাসিনার শাসনামলে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। দুঃসময় পার হলে মানুষ রাজনৈতিক সংগ্রামের গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়গুলো ভুলে যায়। ভালো সময় যেন সব খারাপ স্মৃতিই মুছে দেয়।”
রোববার, ২৫ মে ২০২৫
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের এক দশক আগের গুম ও পরবর্তীতে ভারতের শিলংয়ে তার অবস্থান নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার মধ্যে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
তৎকালীন ফরাসি বার্তা সংস্থার বাংলাদেশ ব্যুরো প্রধানের দায়িত্বে থাকা শফিকুল আলম রোববার ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
তিনি লিখেছেন, সালাহউদ্দিনের শক্তিশালী বিবৃতির কারণে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ওপর ক্ষিপ্ত হন এবং তার ধারাবাহিকতায় বিএনপির এই নেতা অপহরণ ও গুমের শিকার হন।
যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এক সাংবাদিকের পোস্টের পর ঘটনাটি নতুন করে আলোচনায় আসে। ওই পোস্টে সাংবাদিক জানান, তিনি শিলংয়ে সালাহউদ্দিনের সঙ্গে দেখা করেন এবং তার বিলাসবহুল বাংলোয় আয়েশী জীবনযাপনের কথা উল্লেখ করেন।
২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাজধানীর উত্তরা থেকে সালাহউদ্দিন নিখোঁজ হন। প্রায় দুই মাস পর ১১ মে ভারতের মেঘালয়ের শিলংয়ে স্থানীয় পুলিশ তার সন্ধান পায়।
তাকে আটকের পর ফরেনার্স অ্যাক্টে মামলা করে মেঘালয় পুলিশ। ওই মামলায় নিম্ন আদালতের রায়ে ২০১৮ সালে সালাহউদ্দিন খালাস পান। ভারত সরকার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে তাকে সেখানেই থাকতে হয়।
২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আপিলেও খালাস পান তিনি এবং আদালত তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেয়। এরপর ৮ মে তিনি ভারতের আসাম রাজ্য সরকারের কাছে ভ্রমণ পাস অনুমোদনের আবেদন করেন, যা ঝুলে ছিল।
পরে ৫ অগাস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ১১ আগস্ট প্রায় ৯ বছর পর দেশে ফেরেন বিএনপির সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী।
ফেসবুক পোস্টে শফিকুল আলম লেখেন, নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে অপহরণের পর গুম করে ভারতে পাঠানোর কয়েক সপ্তাহ আগে সালাহউদ্দিন গোপন স্থান থেকে বিএনপির মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব নেন।
তিনি লেখেন, “সেই সময় আওয়ামী লীগ সরকার বিএনপির ওপর ব্যাপক দমন-পীড়ন চালাচ্ছিল। খালেদা জিয়াকে তার গুলশানের কার্যালয়ে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছিল।”
স্মৃতিচারণ করে তিনি আরও লেখেন, “সে সময় দলের নেতারা কেউ আত্মগোপনে, কেউ গ্রেপ্তার হন। আমি ও এএফপির দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান ক্রিস ওটন ব্রিটিশ হাই কমিশনার রবার্ট গিবসনের সঙ্গে গোপনে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে গিয়ে তার সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম।
সিভিল পোশাকের নিরাপত্তা রক্ষীরা আমাদের ব্রিটিশ হাই কমিশনের সদস্য ভেবে ভিতরে ঢুকতে দেয়।”
তিনি বলেন, “সেই সময়ে প্রতিদিন আমরা সালাহউদ্দিনের বিবৃতি পেতাম। তার বিবৃতিগুলো ছিল গোছানো, কার্যকর ও ক্ষুরধার। রিজভীর বিবৃতি ছিল জটিল ও দুর্বোধ্য, শক্তিশালী উদ্ধৃতি বের করাও কঠিন ছিল। কিন্তু রিজভী গ্রেপ্তার হওয়ার পর সালাহউদ্দিন অসাধারণ সব বিবৃতি দেওয়া শুরু করেন, যা শেখ হাসিনার শাসনকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করত।”
তিনি আরও বলেন, “সেই বিবৃতির কারণে শেখ হাসিনা এতটাই ক্ষিপ্ত হয়ে পড়েন যে, তিনি সালাহউদ্দিনকে ধরতে অভিযান চালানোর নির্দেশ দেন।”
এরপর সালাহউদ্দিন গুম হন উল্লেখ করে শফিকুল লিখেছেন, “২০১৫ সালের শুরুর দিকে তিনি অপহরণ ও গুমের শিকার হন। তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদ তার মুক্তির দাবিতে সাহসী আন্দোলন শুরু করেন। হাজেরা খাতুন ও তার মেয়েদের সঙ্গে শেখ হাসিনার শাসনের বিরুদ্ধে এই লড়াই ছিল চোখে পড়ার মতো।”
তিনি মন্তব্য করেন, “সম্ভবত সেই আন্দোলনই নিরাপত্তা বাহিনীকে সালাহউদ্দিনকে সীমান্ত পার করে শিলং পাঠাতে বাধ্য করে।”
তিনি আরও লেখেন, “বেশিরভাগ মানুষ, এমনকি বিএনপির অনেক তরুণ কর্মীও দলটির ১৭ বছরের লড়াইয়ের সাহসী অধ্যায় ভুলে গেছে। গতকাল আমরা তার (সালাহউদ্দিন) বিরুদ্ধে কিছু ঘৃণ্য অপপ্রচার দেখেছি।
কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে, এই সংগ্রামগুলোই শেখ হাসিনার শাসনামলে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। দুঃসময় পার হলে মানুষ রাজনৈতিক সংগ্রামের গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়গুলো ভুলে যায়। ভালো সময় যেন সব খারাপ স্মৃতিই মুছে দেয়।”