২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে বিএনপি বলেছে, রাজনৈতিক দল ও জনগণের মতামত ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকার এ বাজেট ঘোষণা করেছে।
আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বাজেট নিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায় বিএনপি।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দেশে এখন যেহেতু সংসদ বা গণতান্ত্রিক কোনো সরকার নেই, তাই তাঁরা আশা করেছিলেন অন্তর্বর্তী সরকার ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে বাজেট প্রণয়ন করবে।
তিনি বলেন, সরকার চাইলে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মতামত নিতে পারত। বিশেষজ্ঞ, নাগরিক সমাজ, ব্যবসায়ী ও তরুণ প্রতিনিধিরাও অংশ নিতে পারতেন। কিন্তু তা করা হয়নি।
আমীর খসরুর মতে, রাজনৈতিক দল ও জনগণের মতামত থাকলে বাজেট প্রণয়ন একমুখী ও অংশগ্রহণহীন হতো না।
তিনি বলেন, বর্তমানে মূল্যস্ফীতি প্রায় ডাবল ডিজিট, অথচ তা ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে, যা বাস্তবসম্মত নয়। দারিদ্র্য বৃদ্ধির হারে লাগাম দেওয়া যেত।
তিনি আরও বলেন, বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, অন্তর্বর্তী সরকারের সময় ২৭ লাখের বেশি মানুষ আগের চেয়ে বেশি দরিদ্র হয়ে পড়েছে।
আমীর খসরু বলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবমতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ, অথচ এবারের বাজেটে তা ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। এটি আগের সরকারের মতোই অবান্তর ও কাগুজে প্রবৃদ্ধি।
খাদ্যনিরাপত্তা হুমকির মুখে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ত্রুটিপূর্ণ ও দুর্নীতিগ্রস্ত সামাজিক সুরক্ষা খাতে পেনশন ও কৃষি ভর্তুকি যুক্ত করে বরাদ্দ বাড়ানোর প্রচেষ্টা করা হলেও তা এখনো অপর্যাপ্ত।
তিনি বলেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষির মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে বরাদ্দ কমানো উদ্বেগজনক। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, কলেজ ও স্কুলগুলোকে পূর্ণাঙ্গ করমুক্তির আওতায় আনা যেত। ভবিষ্যতে বিএনপি ক্ষমতায় এলে তা করবে।
অর্থনৈতিক কাঠামোর দুর্বলতা কাটাতে বাজেটে স্পষ্ট রূপরেখা থাকা উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেন আমীর খসরু।
তিনি বলেন, বাজেটের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত ছিল বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি, শিল্প স্থাপন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও উদ্যোক্তা গড়ে তোলা। কিন্তু অতিরিক্ত সুদ ও কর শিল্প খাতে চাপ সৃষ্টি করবে। এতে অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যেতে পারে, কর্মসংস্থান হ্রাস পেতে পারে, মধ্য ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির আর্থিক চাপ বাড়তে পারে এবং অর্থনৈতিক অস্থিরতা বাড়ার পাশাপাশি দারিদ্র্য বিমোচনের গতি থমকে যেতে পারে।
তিনি আরও বলেন, বাজেটে ব্যবসার ব্যয়, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও ‘কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস’ কমানোর কোনো নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই। এতে উদ্যোক্তারা অনিশ্চিত ও প্রতিকূল পরিবেশে পড়বেন।
ডিজিটাল উদ্যোক্তাদের ওপর চাপ বাড়বে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনলাইন ব্যবসার ওপর শুল্ক বাড়ানোয় তরুণ উদ্যোক্তারা নিরুৎসাহিত হবেন, উদ্ভাবনের ক্ষেত্রেও হতাশা তৈরি হবে।
ব্যাংক খাতের দুর্বলতার কথা তুলে ধরে আমীর খসরু বলেন, খেলাপি ঋণ আদায়, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা ও করজাল সম্প্রসারণে পদক্ষেপ নিলে রাজস্ব আহরণে নতুন ভিত্তি গড়ে উঠত।
তিনি বলেন, সরকার ব্যাংক খাতের ওপর বেশি নির্ভর করছে এবং ‘ঋণ করে ঋণ শোধ’ দীর্ঘ মেয়াদে আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে উঠছে।
কালোটাকা সাদা করার সুযোগ কর ফাঁকি দেওয়া ব্যক্তিদের পুরস্কৃত করছে, যা নিয়মিত করদাতাদের প্রতি অবিচার এবং কর ব্যবস্থার প্রতি আস্থা হ্রাস করতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ, মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান এবং চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার।
বুধবার, ০৪ জুন ২০২৫
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে বিএনপি বলেছে, রাজনৈতিক দল ও জনগণের মতামত ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকার এ বাজেট ঘোষণা করেছে।
আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বাজেট নিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায় বিএনপি।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দেশে এখন যেহেতু সংসদ বা গণতান্ত্রিক কোনো সরকার নেই, তাই তাঁরা আশা করেছিলেন অন্তর্বর্তী সরকার ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে বাজেট প্রণয়ন করবে।
তিনি বলেন, সরকার চাইলে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মতামত নিতে পারত। বিশেষজ্ঞ, নাগরিক সমাজ, ব্যবসায়ী ও তরুণ প্রতিনিধিরাও অংশ নিতে পারতেন। কিন্তু তা করা হয়নি।
আমীর খসরুর মতে, রাজনৈতিক দল ও জনগণের মতামত থাকলে বাজেট প্রণয়ন একমুখী ও অংশগ্রহণহীন হতো না।
তিনি বলেন, বর্তমানে মূল্যস্ফীতি প্রায় ডাবল ডিজিট, অথচ তা ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে, যা বাস্তবসম্মত নয়। দারিদ্র্য বৃদ্ধির হারে লাগাম দেওয়া যেত।
তিনি আরও বলেন, বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, অন্তর্বর্তী সরকারের সময় ২৭ লাখের বেশি মানুষ আগের চেয়ে বেশি দরিদ্র হয়ে পড়েছে।
আমীর খসরু বলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবমতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ, অথচ এবারের বাজেটে তা ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। এটি আগের সরকারের মতোই অবান্তর ও কাগুজে প্রবৃদ্ধি।
খাদ্যনিরাপত্তা হুমকির মুখে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ত্রুটিপূর্ণ ও দুর্নীতিগ্রস্ত সামাজিক সুরক্ষা খাতে পেনশন ও কৃষি ভর্তুকি যুক্ত করে বরাদ্দ বাড়ানোর প্রচেষ্টা করা হলেও তা এখনো অপর্যাপ্ত।
তিনি বলেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষির মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে বরাদ্দ কমানো উদ্বেগজনক। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, কলেজ ও স্কুলগুলোকে পূর্ণাঙ্গ করমুক্তির আওতায় আনা যেত। ভবিষ্যতে বিএনপি ক্ষমতায় এলে তা করবে।
অর্থনৈতিক কাঠামোর দুর্বলতা কাটাতে বাজেটে স্পষ্ট রূপরেখা থাকা উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেন আমীর খসরু।
তিনি বলেন, বাজেটের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত ছিল বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি, শিল্প স্থাপন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও উদ্যোক্তা গড়ে তোলা। কিন্তু অতিরিক্ত সুদ ও কর শিল্প খাতে চাপ সৃষ্টি করবে। এতে অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যেতে পারে, কর্মসংস্থান হ্রাস পেতে পারে, মধ্য ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির আর্থিক চাপ বাড়তে পারে এবং অর্থনৈতিক অস্থিরতা বাড়ার পাশাপাশি দারিদ্র্য বিমোচনের গতি থমকে যেতে পারে।
তিনি আরও বলেন, বাজেটে ব্যবসার ব্যয়, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও ‘কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস’ কমানোর কোনো নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই। এতে উদ্যোক্তারা অনিশ্চিত ও প্রতিকূল পরিবেশে পড়বেন।
ডিজিটাল উদ্যোক্তাদের ওপর চাপ বাড়বে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনলাইন ব্যবসার ওপর শুল্ক বাড়ানোয় তরুণ উদ্যোক্তারা নিরুৎসাহিত হবেন, উদ্ভাবনের ক্ষেত্রেও হতাশা তৈরি হবে।
ব্যাংক খাতের দুর্বলতার কথা তুলে ধরে আমীর খসরু বলেন, খেলাপি ঋণ আদায়, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা ও করজাল সম্প্রসারণে পদক্ষেপ নিলে রাজস্ব আহরণে নতুন ভিত্তি গড়ে উঠত।
তিনি বলেন, সরকার ব্যাংক খাতের ওপর বেশি নির্ভর করছে এবং ‘ঋণ করে ঋণ শোধ’ দীর্ঘ মেয়াদে আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে উঠছে।
কালোটাকা সাদা করার সুযোগ কর ফাঁকি দেওয়া ব্যক্তিদের পুরস্কৃত করছে, যা নিয়মিত করদাতাদের প্রতি অবিচার এবং কর ব্যবস্থার প্রতি আস্থা হ্রাস করতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ, মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান এবং চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার।