জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ১২টি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবে ‘রাষ্ট্রের মূলনীতি’ বিষয়ে দলগুলোর মধ্যে এখনও মতভেদ রয়েছে বলে জানিয়েছেন কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফার ১৯তম দিনের আলোচনার পর সাংবাদিকদের তিনি এ তথ্য জানান।
আলী রীয়াজ বলেন, “এই পর্যায়ে ১২টি সংস্কার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হয়েছে। আশা করছি, ৩১ জুলাইয়ের মধ্যেই আলোচনা শেষ করে আমরা একটি জাতীয় সনদ চূড়ান্ত করতে পারব।”
যে ১২টি বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে:
১. সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ পরিবর্তন
২. সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিত্বে সংস্কার
৩. নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনঃনির্ধারণ
৪. রাষ্ট্রপতির ক্ষমা-সম্পর্কিত বিধান সংস্কার
৫. উচ্চ আদালতের বিকেন্দ্রীকরণ
৬. উপজেলা পর্যায়ে নিম্ন আদালত স্থানান্তর
৭. জরুরি অবস্থা জারির বিধান
৮. প্রধান বিচারপতি নিয়োগ পদ্ধতি
৯. নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া
১০. প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার বিধান সংস্কার
১১. প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ ১০ বছর নির্ধারণ
১২. স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন
জাতীয় সনদ আসছে
আলোচনায় যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলো ভিত্তি করে তৈরি হবে ‘জাতীয় সনদ’। এই সনদে থাকবে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি ও ভবিষ্যৎ করণীয়। প্রাথমিক খসড়া সোমবার দলগুলোর কাছে মতামতের জন্য পাঠানো হবে বলে জানান আলী রীয়াজ।
তবে তিনি বলেন, “এই খসড়া নিয়ে আলাদা করে আর আলোচনায় আসা হবে না, যদি না বড় ধরনের মৌলিক আপত্তি উঠে।”
মূলনীতি নিয়ে দ্বিধা
রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি নিয়ে এখনও ঐকমত্য হয়নি। কমিশনের প্রস্তাবে ‘জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা’র পরিবর্তে প্রস্তাব করা হয়েছে— ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, গণতন্ত্র এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি’।
তবে সিপিবি, বাসদ, বাসদ (মার্কসবাদী) এবং বাংলাদেশ জাসদের মতো বামপন্থি দলগুলো বলছে, বিদ্যমান মূলনীতি বাদ দেওয়া যাবে না, বরং নতুন প্রস্তাবনা যুক্ত করা যেতে পারে। অন্যথায় তারা আলোচনায় অংশগ্রহণ স্থগিত করবে।
বিএনপি ও জামায়াত ইসলামী আগে পঞ্চম সংশোধনীর আলোকে ‘আল্লাহর উপর অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস’ রাখার কথা বললেও কমিশনের বর্তমান প্রস্তাবে তাদের আপত্তি নেই।
কমিশন এখন এ বিষয়ে নতুন করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছে।
স্বাধীন পুলিশ কমিশনের রূপরেখা
‘স্বাধীন পুলিশ কমিশন’ গঠনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হয়েছে। এ কমিশনের উদ্দেশ্য হবে পুলিশ বাহিনীর কার্যক্রমে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং নাগরিক ও পুলিশ সদস্যদের করা অভিযোগ নিষ্পত্তি করা।
কমিশনের প্রস্তাবিত গঠনতন্ত্রে বলা হয়েছে:
* চেয়ারম্যান হবেন আপিল বিভাগের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি (৭৫ বছরের নিচে)
* সদস্যসচিব হবেন একজন অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত আইজিপি (৬২ বছরের নিচে)
* সদস্য থাকবেন জাতীয় সংসদের সংসদ নেতা ও বিরোধী দলীয় নেতার প্রতিনিধি, স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের প্রতিনিধি, সচিব বা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা, জেলা জজ পদমর্যাদার বিচারক/আইনজীবী এবং একজন মানবাধিকারকর্মী।
* নারী সদস্য অন্তত দুজন রাখার বাধ্যবাধকতা থাকবে।
রোববারের আলোচনায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলন, সিপিবি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, এবি পার্টি, বাসদ (মার্কসবাদী)সহ প্রায় ৩০টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়।
এর আগে ছয়টি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী ১৬৬টি সুপারিশ নিয়ে গত ফেব্রুয়ারিতে কাজ শুরু করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। প্রথম পর্যায়ের সংলাপ শেষ হয় ঈদের আগে, দ্বিতীয় পর্যায় চলছে ২ জুন থেকে।
সংলাপ শেষে ‘জাতীয় সনদে’ যেসব সংস্কার বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকবে, রাজনৈতিক দলগুলো তাতে স্বাক্ষর করবে। যার মানে— আগামীতে যে দলই ক্ষমতায় আসুক, তারা এই সংস্কার বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে।
---
রোববার, ২৭ জুলাই ২০২৫
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ১২টি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবে ‘রাষ্ট্রের মূলনীতি’ বিষয়ে দলগুলোর মধ্যে এখনও মতভেদ রয়েছে বলে জানিয়েছেন কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফার ১৯তম দিনের আলোচনার পর সাংবাদিকদের তিনি এ তথ্য জানান।
আলী রীয়াজ বলেন, “এই পর্যায়ে ১২টি সংস্কার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হয়েছে। আশা করছি, ৩১ জুলাইয়ের মধ্যেই আলোচনা শেষ করে আমরা একটি জাতীয় সনদ চূড়ান্ত করতে পারব।”
যে ১২টি বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে:
১. সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ পরিবর্তন
২. সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিত্বে সংস্কার
৩. নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনঃনির্ধারণ
৪. রাষ্ট্রপতির ক্ষমা-সম্পর্কিত বিধান সংস্কার
৫. উচ্চ আদালতের বিকেন্দ্রীকরণ
৬. উপজেলা পর্যায়ে নিম্ন আদালত স্থানান্তর
৭. জরুরি অবস্থা জারির বিধান
৮. প্রধান বিচারপতি নিয়োগ পদ্ধতি
৯. নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া
১০. প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার বিধান সংস্কার
১১. প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ ১০ বছর নির্ধারণ
১২. স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন
জাতীয় সনদ আসছে
আলোচনায় যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলো ভিত্তি করে তৈরি হবে ‘জাতীয় সনদ’। এই সনদে থাকবে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি ও ভবিষ্যৎ করণীয়। প্রাথমিক খসড়া সোমবার দলগুলোর কাছে মতামতের জন্য পাঠানো হবে বলে জানান আলী রীয়াজ।
তবে তিনি বলেন, “এই খসড়া নিয়ে আলাদা করে আর আলোচনায় আসা হবে না, যদি না বড় ধরনের মৌলিক আপত্তি উঠে।”
মূলনীতি নিয়ে দ্বিধা
রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি নিয়ে এখনও ঐকমত্য হয়নি। কমিশনের প্রস্তাবে ‘জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা’র পরিবর্তে প্রস্তাব করা হয়েছে— ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, গণতন্ত্র এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি’।
তবে সিপিবি, বাসদ, বাসদ (মার্কসবাদী) এবং বাংলাদেশ জাসদের মতো বামপন্থি দলগুলো বলছে, বিদ্যমান মূলনীতি বাদ দেওয়া যাবে না, বরং নতুন প্রস্তাবনা যুক্ত করা যেতে পারে। অন্যথায় তারা আলোচনায় অংশগ্রহণ স্থগিত করবে।
বিএনপি ও জামায়াত ইসলামী আগে পঞ্চম সংশোধনীর আলোকে ‘আল্লাহর উপর অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস’ রাখার কথা বললেও কমিশনের বর্তমান প্রস্তাবে তাদের আপত্তি নেই।
কমিশন এখন এ বিষয়ে নতুন করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছে।
স্বাধীন পুলিশ কমিশনের রূপরেখা
‘স্বাধীন পুলিশ কমিশন’ গঠনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হয়েছে। এ কমিশনের উদ্দেশ্য হবে পুলিশ বাহিনীর কার্যক্রমে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং নাগরিক ও পুলিশ সদস্যদের করা অভিযোগ নিষ্পত্তি করা।
কমিশনের প্রস্তাবিত গঠনতন্ত্রে বলা হয়েছে:
* চেয়ারম্যান হবেন আপিল বিভাগের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি (৭৫ বছরের নিচে)
* সদস্যসচিব হবেন একজন অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত আইজিপি (৬২ বছরের নিচে)
* সদস্য থাকবেন জাতীয় সংসদের সংসদ নেতা ও বিরোধী দলীয় নেতার প্রতিনিধি, স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের প্রতিনিধি, সচিব বা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা, জেলা জজ পদমর্যাদার বিচারক/আইনজীবী এবং একজন মানবাধিকারকর্মী।
* নারী সদস্য অন্তত দুজন রাখার বাধ্যবাধকতা থাকবে।
রোববারের আলোচনায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলন, সিপিবি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, এবি পার্টি, বাসদ (মার্কসবাদী)সহ প্রায় ৩০টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়।
এর আগে ছয়টি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী ১৬৬টি সুপারিশ নিয়ে গত ফেব্রুয়ারিতে কাজ শুরু করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। প্রথম পর্যায়ের সংলাপ শেষ হয় ঈদের আগে, দ্বিতীয় পর্যায় চলছে ২ জুন থেকে।
সংলাপ শেষে ‘জাতীয় সনদে’ যেসব সংস্কার বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকবে, রাজনৈতিক দলগুলো তাতে স্বাক্ষর করবে। যার মানে— আগামীতে যে দলই ক্ষমতায় আসুক, তারা এই সংস্কার বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে।
---