জাতীয় নির্বাচনের আগে ‘জুলাই সনদ’ ও ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির মতে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ ঐকমত্য ছাড়া ভোটের তারিখ ঘোষণা হলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না।
রোববার (২৭ জুলাই) রাতে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের চলমান সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন। একইসঙ্গে বিএনপি ও জামায়াতসহ অন্যান্য দলের নেতারাও নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেন।
আখতার হোসেন বলেন, “জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র বাস্তবায়নের আগে যদি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এককভাবে ভোটের তারিখ নির্ধারণে এগোয়, তবে তা দেশের গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।”
তিনি আরও বলেন, “ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন সম্ভব, যদি এর আগেই সংস্কার দৃশ্যমান হয়। রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যেই গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব।”
তারেক-ইউনূস বৈঠকের ঘোষণার সমালোচনা
গত জুনে লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠকের পর যে ঘোষণায় ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভোটের সম্ভাব্য সময় উল্লেখ করা হয়, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলে এনসিপি।
আখতার বলেন, “যদি নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে শুধুমাত্র একটি বা দুইটি দলের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তাহলে সেটা একতরফা বলে গণ্য হবে এবং আমাদের দল বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করবে।”
জামায়াত বলছে, তারিখ ঘোষণার বিষয়ে তারা অবগত নয়
প্রধান উপদেষ্টা চার-পাঁচ দিনের মধ্যে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন— এমন সংবাদে জামায়াত ইসলামী বিস্ময় প্রকাশ করেছে। দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান বলেন, “আমাদের কাছে এ ধরনের তথ্য নেই। প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকেও এমন কিছু বলা হয়নি।”
তিনি জানান, “আমরা প্রত্যাশা করছি, ৩১ জুলাইয়ের মধ্যেই জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণা করা হবে। কমিশনও সে লক্ষ্যে কাজ করছে।”
নারী আসন নিয়ে ভিন্ন মত বিএনপি-জামায়াতের
এদিন নারী আসন সংক্রান্ত সংস্কার প্রশ্নে বিএনপি ও জামায়াত ভিন্নমত পোষণ করে। বিএনপি প্রস্তাব দিয়েছে— বিদ্যমান ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসন বহাল রেখে ৩০০ আসনের ভিত্তিতে প্রথমে ৫% (১৫টি) আসনে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নারীদের নির্বাচনের সুযোগ দেওয়া হোক। ভবিষ্যতে এটি বাড়িয়ে ১০% (৩০টি) করা যেতে পারে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “এভাবে সরাসরি নির্বাচনের পথ তৈরি হলে নারী প্রতিনিধিত্ব ধীরে ধীরে শক্তিশালী হবে।”
অন্যদিকে, জামায়াতের রফিকুল ইসলাম জানান, তারা সংসদে ১০০টি নারী আসনের পক্ষে। তবে এসব আসনে প্রতিনিধিত্ব নির্বাচিত হতে হবে ৩০০ আসনের ভোটের অনুপাত অনুযায়ী, অর্থাৎ আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে (PR System)।
তিনি বলেন, “আমরা চাই, ৩০০ আসনের নির্বাচনের ফলাফলের ভিত্তিতে নারীদের ১০০ আসনে প্রতিনিধিত্ব নির্ধারণ করা হোক। অধিকাংশ দলই এ মডেলে আগ্রহ দেখিয়েছে।”
ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা হচ্ছে ১২টি বিষয়ে :
১. সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ পরিবর্তন
২. সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিত্বে সংস্কার
৩. নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনঃনির্ধারণ
৪. রাষ্ট্রপতির ক্ষমা-সম্পর্কিত বিধান সংস্কার
৫. উচ্চ আদালতের বিকেন্দ্রীকরণ
৬. উপজেলা পর্যায়ে নিম্ন আদালত স্থানান্তর
৭. জরুরি অবস্থা জারির বিধান
৮. প্রধান বিচারপতি নিয়োগ পদ্ধতি
৯. নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া
১০. প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার বিধান সংস্কার
১১. প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ ১০ বছর নির্ধারণ
১২. স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন
সংবিধানের মূলনীতি, নারী আসন ও সরাসরি ভোটের পদ্ধতি বিষয়ে আলোচনা এখনো চলমান।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের রোববারের বৈঠকে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলন, সিপিবি, বাসদ (মার্কসবাদী), এবি পার্টি ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টিসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়।
কমিশনের সদস্য বিচারপতি এমদাদুল হক, ইফতেখারুজ্জামান, বদিউল আলম মজুমদারসহ অন্যরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
গত অক্টোবরে গঠিত ছয়টি সংস্কার কমিশনের ১৬৬টি সুপারিশ নিয়ে ৩৮টি দল ও জোটের মধ্যে ৩৩টি ইতোমধ্যে মতামত দিয়েছে। এসব সুপারিশের ভিত্তিতে ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত ৪৫টি অধিবেশনের মাধ্যমে প্রথম দফার আলোচনা শেষ হয়। দ্বিতীয় দফার সংলাপ চলছে ২ জুন থেকে।
এ আলোচনা শেষে ‘জাতীয় সনদ’ নামে একটি দলিল প্রকাশিত হবে, যেখানে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত সংস্কারগুলোর কথা থাকবে। রাজনৈতিক দলগুলো তা স্বাক্ষর করবে এবং ভবিষ্যৎ সরকার সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সংস্কার বাস্তবায়নে বাধ্য থাকবে।
---
রোববার, ২৭ জুলাই ২০২৫
জাতীয় নির্বাচনের আগে ‘জুলাই সনদ’ ও ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির মতে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ ঐকমত্য ছাড়া ভোটের তারিখ ঘোষণা হলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না।
রোববার (২৭ জুলাই) রাতে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের চলমান সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন। একইসঙ্গে বিএনপি ও জামায়াতসহ অন্যান্য দলের নেতারাও নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেন।
আখতার হোসেন বলেন, “জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র বাস্তবায়নের আগে যদি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এককভাবে ভোটের তারিখ নির্ধারণে এগোয়, তবে তা দেশের গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।”
তিনি আরও বলেন, “ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন সম্ভব, যদি এর আগেই সংস্কার দৃশ্যমান হয়। রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যেই গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব।”
তারেক-ইউনূস বৈঠকের ঘোষণার সমালোচনা
গত জুনে লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠকের পর যে ঘোষণায় ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভোটের সম্ভাব্য সময় উল্লেখ করা হয়, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলে এনসিপি।
আখতার বলেন, “যদি নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে শুধুমাত্র একটি বা দুইটি দলের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তাহলে সেটা একতরফা বলে গণ্য হবে এবং আমাদের দল বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করবে।”
জামায়াত বলছে, তারিখ ঘোষণার বিষয়ে তারা অবগত নয়
প্রধান উপদেষ্টা চার-পাঁচ দিনের মধ্যে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন— এমন সংবাদে জামায়াত ইসলামী বিস্ময় প্রকাশ করেছে। দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান বলেন, “আমাদের কাছে এ ধরনের তথ্য নেই। প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকেও এমন কিছু বলা হয়নি।”
তিনি জানান, “আমরা প্রত্যাশা করছি, ৩১ জুলাইয়ের মধ্যেই জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণা করা হবে। কমিশনও সে লক্ষ্যে কাজ করছে।”
নারী আসন নিয়ে ভিন্ন মত বিএনপি-জামায়াতের
এদিন নারী আসন সংক্রান্ত সংস্কার প্রশ্নে বিএনপি ও জামায়াত ভিন্নমত পোষণ করে। বিএনপি প্রস্তাব দিয়েছে— বিদ্যমান ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসন বহাল রেখে ৩০০ আসনের ভিত্তিতে প্রথমে ৫% (১৫টি) আসনে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নারীদের নির্বাচনের সুযোগ দেওয়া হোক। ভবিষ্যতে এটি বাড়িয়ে ১০% (৩০টি) করা যেতে পারে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “এভাবে সরাসরি নির্বাচনের পথ তৈরি হলে নারী প্রতিনিধিত্ব ধীরে ধীরে শক্তিশালী হবে।”
অন্যদিকে, জামায়াতের রফিকুল ইসলাম জানান, তারা সংসদে ১০০টি নারী আসনের পক্ষে। তবে এসব আসনে প্রতিনিধিত্ব নির্বাচিত হতে হবে ৩০০ আসনের ভোটের অনুপাত অনুযায়ী, অর্থাৎ আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে (PR System)।
তিনি বলেন, “আমরা চাই, ৩০০ আসনের নির্বাচনের ফলাফলের ভিত্তিতে নারীদের ১০০ আসনে প্রতিনিধিত্ব নির্ধারণ করা হোক। অধিকাংশ দলই এ মডেলে আগ্রহ দেখিয়েছে।”
ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা হচ্ছে ১২টি বিষয়ে :
১. সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ পরিবর্তন
২. সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিত্বে সংস্কার
৩. নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনঃনির্ধারণ
৪. রাষ্ট্রপতির ক্ষমা-সম্পর্কিত বিধান সংস্কার
৫. উচ্চ আদালতের বিকেন্দ্রীকরণ
৬. উপজেলা পর্যায়ে নিম্ন আদালত স্থানান্তর
৭. জরুরি অবস্থা জারির বিধান
৮. প্রধান বিচারপতি নিয়োগ পদ্ধতি
৯. নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া
১০. প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার বিধান সংস্কার
১১. প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ ১০ বছর নির্ধারণ
১২. স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন
সংবিধানের মূলনীতি, নারী আসন ও সরাসরি ভোটের পদ্ধতি বিষয়ে আলোচনা এখনো চলমান।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের রোববারের বৈঠকে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলন, সিপিবি, বাসদ (মার্কসবাদী), এবি পার্টি ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টিসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়।
কমিশনের সদস্য বিচারপতি এমদাদুল হক, ইফতেখারুজ্জামান, বদিউল আলম মজুমদারসহ অন্যরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
গত অক্টোবরে গঠিত ছয়টি সংস্কার কমিশনের ১৬৬টি সুপারিশ নিয়ে ৩৮টি দল ও জোটের মধ্যে ৩৩টি ইতোমধ্যে মতামত দিয়েছে। এসব সুপারিশের ভিত্তিতে ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত ৪৫টি অধিবেশনের মাধ্যমে প্রথম দফার আলোচনা শেষ হয়। দ্বিতীয় দফার সংলাপ চলছে ২ জুন থেকে।
এ আলোচনা শেষে ‘জাতীয় সনদ’ নামে একটি দলিল প্রকাশিত হবে, যেখানে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত সংস্কারগুলোর কথা থাকবে। রাজনৈতিক দলগুলো তা স্বাক্ষর করবে এবং ভবিষ্যৎ সরকার সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সংস্কার বাস্তবায়নে বাধ্য থাকবে।
---