অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর পূর্তিতে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। সংস্থাটির পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে, সরকার পরিবর্তন হলেও রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের ধরন ও মাত্রায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটেনি।
আসকের ভাষ্য অনুযায়ী, “রাজনীতির পরিবর্তন ঘটলেও গ্রেপ্তার, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও নারী-সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তাহীনতা রয়ে গেছে আগের মতোই। অন্তর্বর্তী সরকারকে জনদাবির ভিত্তিতে গঠিত একটি রূপান্তরের সূচনা বলা হলেও, গত এক বছরে মানবাধিকার পরিস্থিতিতে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি দেখা যায়নি।”
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানিয়েছে আসক।
বিচারবহির্ভূত হত্যায় অবসান হয়নি
আসক বলছে, রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের সবচেয়ে গুরুতর দিক হলো বিচারবহির্ভূত হত্যা। সরকার বদলের পর এসব ঘটনা বন্ধ হবে বলে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আগের মতোই রয়েছে।
রাজনৈতিক হয়রানি ও নির্বিচার গ্রেপ্তারের চিত্র স্পষ্ট
আসক তাদের পর্যবেক্ষণে তুলে ধরে, রাজনৈতিক মতপ্রকাশের কারণে বিরোধী দলের নেতা-কর্মী ও সাধারণ নাগরিকেরা গ্রেপ্তার, হয়রানি ও নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। নতুন সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী একটি সহনশীল রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরির লক্ষণ এখনও স্পষ্ট নয়।
নারী ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তাহীনতা বেড়েছে
বিবৃতিতে বলা হয়, নারী ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতা ও বৈষম্যের ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে অব্যাহত রয়েছে। সামাজিক ও ধর্মীয় উসকানির ফলে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ওপর হামলা এবং নারীদের বিরুদ্ধে নিপীড়নের ঘটনা ক্রমাগত বাড়ছে।
আসকের মতে, “নারী ও সংখ্যালঘুদের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ তৈরিতে রাষ্ট্রের ভূমিকা খুবই দুর্বল। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা বা পক্ষপাতমূলক আচরণ অপরাধীদের উৎসাহিত করছে।”
মতপ্রকাশ ও সাংবাদিকতার স্বাধীনতা সংকুচিত
সংস্থাটি জানিয়েছে, সমালোচনামূলক মত বা প্রতিবেদন প্রকাশের কারণে সাংবাদিকদের ওপর চাপ, চাকরিচ্যুতি, মামলাসহ নানা ধরনের হয়রানি অব্যাহত রয়েছে। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট (ডিএসএ) বাতিলের পরও একই ধাঁচের নতুন আইন ব্যবহারের অভিযোগ উঠছে।
“নাগরিকের মতপ্রকাশের অধিকার সংবিধান স্বীকৃত। অথচ বর্তমানে এটি চরম চাপের মুখে পড়েছে,” মন্তব্য আসকের।
নির্বাচন নিয়ে ইতিবাচক ইঙ্গিত, তবু প্রশ্ন রয়ে গেছে
আসক প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণায় আসন্ন নির্বাচনের সময়সীমা নির্ধারণকে একটি রাজনৈতিক বার্তা হিসেবে ইতিবাচকভাবে দেখলেও, মনে করে—এই নির্বাচনী প্রস্তুতিকে ঘিরেও মানুষের মধ্যে উদ্বেগ রয়ে গেছে। নির্বাচনকালীন পরিবেশে সহনশীলতা, রাজনৈতিক অংশগ্রহণ ও বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করা জরুরি।
মানবাধিকার কমিশন কার্যকর নয়, গঠন সংস্কারের দাবি
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের স্বাধীনতা ও কার্যকারিতার প্রশ্নে আসক বলেছে, এই সংস্থাটি এখনো রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত নয়। ফলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে তারা কার্যকর হস্তক্ষেপ করতে পারছে না। কমিশনের গঠনতন্ত্র ও সদস্য নিয়োগ পদ্ধতিতে কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন।
আসক মনে করে, সরকার পরিবর্তনের মূল কথা ছিল জনগণের আকাঙ্ক্ষা ও অধিকারের প্রতিফলন। সেই প্রতিশ্রুতি পূরণে নীতিগত ও কাঠামোগত পরিবর্তন জরুরি। সংস্থাটি বলেছে, “জনগণের অধিকার রক্ষায় রাজনৈতিক সদিচ্ছা, প্রশাসনিক জবাবদিহি এবং নিরপেক্ষ তদন্ত ব্যবস্থা ছাড়া মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়ন সম্ভব নয়।”
---
বৃহস্পতিবার, ০৭ আগস্ট ২০২৫
অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর পূর্তিতে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। সংস্থাটির পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে, সরকার পরিবর্তন হলেও রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের ধরন ও মাত্রায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটেনি।
আসকের ভাষ্য অনুযায়ী, “রাজনীতির পরিবর্তন ঘটলেও গ্রেপ্তার, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও নারী-সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তাহীনতা রয়ে গেছে আগের মতোই। অন্তর্বর্তী সরকারকে জনদাবির ভিত্তিতে গঠিত একটি রূপান্তরের সূচনা বলা হলেও, গত এক বছরে মানবাধিকার পরিস্থিতিতে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি দেখা যায়নি।”
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানিয়েছে আসক।
বিচারবহির্ভূত হত্যায় অবসান হয়নি
আসক বলছে, রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের সবচেয়ে গুরুতর দিক হলো বিচারবহির্ভূত হত্যা। সরকার বদলের পর এসব ঘটনা বন্ধ হবে বলে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আগের মতোই রয়েছে।
রাজনৈতিক হয়রানি ও নির্বিচার গ্রেপ্তারের চিত্র স্পষ্ট
আসক তাদের পর্যবেক্ষণে তুলে ধরে, রাজনৈতিক মতপ্রকাশের কারণে বিরোধী দলের নেতা-কর্মী ও সাধারণ নাগরিকেরা গ্রেপ্তার, হয়রানি ও নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। নতুন সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী একটি সহনশীল রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরির লক্ষণ এখনও স্পষ্ট নয়।
নারী ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তাহীনতা বেড়েছে
বিবৃতিতে বলা হয়, নারী ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতা ও বৈষম্যের ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে অব্যাহত রয়েছে। সামাজিক ও ধর্মীয় উসকানির ফলে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ওপর হামলা এবং নারীদের বিরুদ্ধে নিপীড়নের ঘটনা ক্রমাগত বাড়ছে।
আসকের মতে, “নারী ও সংখ্যালঘুদের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ তৈরিতে রাষ্ট্রের ভূমিকা খুবই দুর্বল। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা বা পক্ষপাতমূলক আচরণ অপরাধীদের উৎসাহিত করছে।”
মতপ্রকাশ ও সাংবাদিকতার স্বাধীনতা সংকুচিত
সংস্থাটি জানিয়েছে, সমালোচনামূলক মত বা প্রতিবেদন প্রকাশের কারণে সাংবাদিকদের ওপর চাপ, চাকরিচ্যুতি, মামলাসহ নানা ধরনের হয়রানি অব্যাহত রয়েছে। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট (ডিএসএ) বাতিলের পরও একই ধাঁচের নতুন আইন ব্যবহারের অভিযোগ উঠছে।
“নাগরিকের মতপ্রকাশের অধিকার সংবিধান স্বীকৃত। অথচ বর্তমানে এটি চরম চাপের মুখে পড়েছে,” মন্তব্য আসকের।
নির্বাচন নিয়ে ইতিবাচক ইঙ্গিত, তবু প্রশ্ন রয়ে গেছে
আসক প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণায় আসন্ন নির্বাচনের সময়সীমা নির্ধারণকে একটি রাজনৈতিক বার্তা হিসেবে ইতিবাচকভাবে দেখলেও, মনে করে—এই নির্বাচনী প্রস্তুতিকে ঘিরেও মানুষের মধ্যে উদ্বেগ রয়ে গেছে। নির্বাচনকালীন পরিবেশে সহনশীলতা, রাজনৈতিক অংশগ্রহণ ও বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করা জরুরি।
মানবাধিকার কমিশন কার্যকর নয়, গঠন সংস্কারের দাবি
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের স্বাধীনতা ও কার্যকারিতার প্রশ্নে আসক বলেছে, এই সংস্থাটি এখনো রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত নয়। ফলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে তারা কার্যকর হস্তক্ষেপ করতে পারছে না। কমিশনের গঠনতন্ত্র ও সদস্য নিয়োগ পদ্ধতিতে কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন।
আসক মনে করে, সরকার পরিবর্তনের মূল কথা ছিল জনগণের আকাঙ্ক্ষা ও অধিকারের প্রতিফলন। সেই প্রতিশ্রুতি পূরণে নীতিগত ও কাঠামোগত পরিবর্তন জরুরি। সংস্থাটি বলেছে, “জনগণের অধিকার রক্ষায় রাজনৈতিক সদিচ্ছা, প্রশাসনিক জবাবদিহি এবং নিরপেক্ষ তদন্ত ব্যবস্থা ছাড়া মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়ন সম্ভব নয়।”
---