দুই ধাপে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শেষে ১১টি বিষয়ে পূর্ণ এবং ৯টি বিষয়ে আংশিক ঐকমত্য, চূড়ান্ত ‘জুলাই সনদ’ প্রস্তুতের কাজ চলছে
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জানিয়েছে, আগামী সপ্তাহে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আবারও সংলাপে বসবে তারা। উদ্দেশ্য—গৃহীত সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের পদ্ধতি নির্ধারণ এবং প্রত্যাশিত ‘জুলাই সনদ’-এর বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করা।
শুক্রবার (৮ আগস্ট) জাতীয় সংসদের এলডি হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, ঐকমত্যের ভিত্তিতে রচিত সনদের বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করা এবং তা বাস্তবায়নের পথ নির্ধারণ জরুরি। এ লক্ষ্যে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে এবং পরে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
সাড়ে পাঁচ মাসে দুই ধাপে সংলাপ
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত ফেব্রুয়ারিতে যাত্রা শুরু করে। ছয়টি পৃথক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের আলোকে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত গ্রহণ এবং সংলাপের মাধ্যমে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে তারা।
প্রথম ধাপে, ৫ মার্চ থেকে মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত ৩৫টি রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে সংলাপ হয়। এতে আলোচনায় উঠে আসে ১৬৬টি সংস্কার প্রস্তাব। সংলাপ শেষে ৬২টি বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে সুপারিশ গৃহীত হয়।
দ্বিতীয় ধাপে, ৩ জুন থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত সংলাপ চলে। এখানে ২০টি গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক ইস্যুতে আলোচনা হয়। এর মধ্যে ১১টি বিষয়ে সর্বসম্মতিক্রমে এবং ৯টি বিষয়ে অধিকাংশ দলের সমর্থনে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। যেসব বিষয়ে ভিন্নমত রয়ে গেছে, সেখানে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ সংযুক্ত থাকবে।
দ্বিতীয় পর্যায়ে যেসব বিষয়ে ঐকমত্য
কমিশন জানায়, দ্বিতীয় পর্যায়ে যেসব ২০টি সাংবিধানিক বিষয়ে আলোচনা হয়, সেগুলোর মধ্যে নিচের বিষয়গুলোতে পূর্ণ রাজনৈতিক ঐকমত্য হয়েছে:
1. সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ পরিবর্তন
2. সংসদীয় কমিটির সভাপতিত্বে ভারসাম্য
3. নির্বাচনি এলাকার সীমানা নির্ধারণ
4. রাষ্ট্রপতির ক্ষমা–সম্পর্কিত বিধান
5. সুপ্রিম কোর্ট ও অধস্তন আদালতের বিকেন্দ্রীকরণ
6. জরুরি অবস্থা জারির ক্ষমতার বিধান
7. প্রধান বিচারপতি নিয়োগ
8. সংবিধান সংশোধনের প্রক্রিয়া
9. প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার বিধান
10. সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের জন্য সাংবিধানিক কাউন্সিল
11. দুর্নীতি দমন কমিশন, মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও ন্যায়পাল নিয়োগ
যেসব বিষয়ে ভিন্নমত (নোট অব ডিসেন্ট)
বাকি ৯টি বিষয়ে ভিন্নমত থাকার কথা জানিয়েছে কমিশন। এসব হলো:
1. সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন
2. প্রধানমন্ত্রী একাধিক পদে থাকা
3. সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগ প্রক্রিয়া
4. সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব ও নির্বাচন পদ্ধতি
5. দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ
6. রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি
7. তত্ত্বাবধায়ক সরকার
8. রাষ্ট্রের মূলনীতি
9. রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব (অনুচ্ছেদ ৪৮(৩))
অন্যান্য সংস্কার কমিশনগুলোর আহ্বান
এই মুহূর্তে জাতীয় সনদ তৈরির কাজ চলছে। তবে শ্রম, নারী, গণমাধ্যম, স্থানীয় সরকার ও স্বাস্থ্যখাত–সংক্রান্ত পাঁচটি কমিশনের সুপারিশ এখনো ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে বিবেচিত হয়নি।
এই পাঁচ কমিশনের প্রধানরা (সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ, শিরীন পারভিন হক, তোফায়েল আহমেদ, এ কে আজাদ খান ও কামাল আহমেদ) জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন, যেন তাদের সুপারিশগুলোও জাতীয় সনদের অংশ হয়।
তাঁরা বলেন, “গণঅভ্যুত্থানে অংশ নিয়ে জীবন দিয়েছেন বহু শ্রমিক, নারী ও সাংবাদিক। তাঁদের আত্মত্যাগকে সম্মান জানিয়ে এসব খাতে সংস্কার না হলে, তা হতাশা এবং ক্ষোভের জন্ম দিতে পারে।”
‘জুলাই সনদ’ চূড়ান্তের পথে
কমিশনের লক্ষ্য এখন জাতীয় ঐকমত্যে পৌঁছানো সুপারিশগুলোকে চূড়ান্ত রূপ দিয়ে জুলাই সনদ নামে একটি ঐতিহাসিক দলিল প্রস্তুত করা, যা ভবিষ্যৎ সরকার ও সংসদের জন্য দিকনির্দেশক হবে।
কমিশনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। সহসভাপতির দায়িত্বে আছেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ। সামনের সপ্তাহে কমিশন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পর্যালোচনা করে নতুন আলোচনার সূচনা করবে।
---
শুক্রবার, ০৮ আগস্ট ২০২৫
দুই ধাপে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শেষে ১১টি বিষয়ে পূর্ণ এবং ৯টি বিষয়ে আংশিক ঐকমত্য, চূড়ান্ত ‘জুলাই সনদ’ প্রস্তুতের কাজ চলছে
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জানিয়েছে, আগামী সপ্তাহে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আবারও সংলাপে বসবে তারা। উদ্দেশ্য—গৃহীত সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের পদ্ধতি নির্ধারণ এবং প্রত্যাশিত ‘জুলাই সনদ’-এর বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করা।
শুক্রবার (৮ আগস্ট) জাতীয় সংসদের এলডি হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, ঐকমত্যের ভিত্তিতে রচিত সনদের বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করা এবং তা বাস্তবায়নের পথ নির্ধারণ জরুরি। এ লক্ষ্যে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে এবং পরে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
সাড়ে পাঁচ মাসে দুই ধাপে সংলাপ
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত ফেব্রুয়ারিতে যাত্রা শুরু করে। ছয়টি পৃথক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের আলোকে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত গ্রহণ এবং সংলাপের মাধ্যমে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে তারা।
প্রথম ধাপে, ৫ মার্চ থেকে মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত ৩৫টি রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে সংলাপ হয়। এতে আলোচনায় উঠে আসে ১৬৬টি সংস্কার প্রস্তাব। সংলাপ শেষে ৬২টি বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে সুপারিশ গৃহীত হয়।
দ্বিতীয় ধাপে, ৩ জুন থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত সংলাপ চলে। এখানে ২০টি গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক ইস্যুতে আলোচনা হয়। এর মধ্যে ১১টি বিষয়ে সর্বসম্মতিক্রমে এবং ৯টি বিষয়ে অধিকাংশ দলের সমর্থনে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। যেসব বিষয়ে ভিন্নমত রয়ে গেছে, সেখানে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ সংযুক্ত থাকবে।
দ্বিতীয় পর্যায়ে যেসব বিষয়ে ঐকমত্য
কমিশন জানায়, দ্বিতীয় পর্যায়ে যেসব ২০টি সাংবিধানিক বিষয়ে আলোচনা হয়, সেগুলোর মধ্যে নিচের বিষয়গুলোতে পূর্ণ রাজনৈতিক ঐকমত্য হয়েছে:
1. সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ পরিবর্তন
2. সংসদীয় কমিটির সভাপতিত্বে ভারসাম্য
3. নির্বাচনি এলাকার সীমানা নির্ধারণ
4. রাষ্ট্রপতির ক্ষমা–সম্পর্কিত বিধান
5. সুপ্রিম কোর্ট ও অধস্তন আদালতের বিকেন্দ্রীকরণ
6. জরুরি অবস্থা জারির ক্ষমতার বিধান
7. প্রধান বিচারপতি নিয়োগ
8. সংবিধান সংশোধনের প্রক্রিয়া
9. প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার বিধান
10. সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের জন্য সাংবিধানিক কাউন্সিল
11. দুর্নীতি দমন কমিশন, মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও ন্যায়পাল নিয়োগ
যেসব বিষয়ে ভিন্নমত (নোট অব ডিসেন্ট)
বাকি ৯টি বিষয়ে ভিন্নমত থাকার কথা জানিয়েছে কমিশন। এসব হলো:
1. সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন
2. প্রধানমন্ত্রী একাধিক পদে থাকা
3. সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগ প্রক্রিয়া
4. সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব ও নির্বাচন পদ্ধতি
5. দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ
6. রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি
7. তত্ত্বাবধায়ক সরকার
8. রাষ্ট্রের মূলনীতি
9. রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব (অনুচ্ছেদ ৪৮(৩))
অন্যান্য সংস্কার কমিশনগুলোর আহ্বান
এই মুহূর্তে জাতীয় সনদ তৈরির কাজ চলছে। তবে শ্রম, নারী, গণমাধ্যম, স্থানীয় সরকার ও স্বাস্থ্যখাত–সংক্রান্ত পাঁচটি কমিশনের সুপারিশ এখনো ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে বিবেচিত হয়নি।
এই পাঁচ কমিশনের প্রধানরা (সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ, শিরীন পারভিন হক, তোফায়েল আহমেদ, এ কে আজাদ খান ও কামাল আহমেদ) জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন, যেন তাদের সুপারিশগুলোও জাতীয় সনদের অংশ হয়।
তাঁরা বলেন, “গণঅভ্যুত্থানে অংশ নিয়ে জীবন দিয়েছেন বহু শ্রমিক, নারী ও সাংবাদিক। তাঁদের আত্মত্যাগকে সম্মান জানিয়ে এসব খাতে সংস্কার না হলে, তা হতাশা এবং ক্ষোভের জন্ম দিতে পারে।”
‘জুলাই সনদ’ চূড়ান্তের পথে
কমিশনের লক্ষ্য এখন জাতীয় ঐকমত্যে পৌঁছানো সুপারিশগুলোকে চূড়ান্ত রূপ দিয়ে জুলাই সনদ নামে একটি ঐতিহাসিক দলিল প্রস্তুত করা, যা ভবিষ্যৎ সরকার ও সংসদের জন্য দিকনির্দেশক হবে।
কমিশনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। সহসভাপতির দায়িত্বে আছেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ। সামনের সপ্তাহে কমিশন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পর্যালোচনা করে নতুন আলোচনার সূচনা করবে।
---