রাজনীতিতে নারীদের সামনে আনতে ২০০৮ সালে আইনের পরিবর্তন করেছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ওই সময় গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন করে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য ২০২০ সালের মধ্যে সর্বস্তরে ৩৩ শতাংশ নারীর অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল।
১৩ বছর পেরিয়ে গেলেও শর্ত পূরণ করতে পারেনি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো। বর্তমানে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৩৯টি। আরপিও অনুযায়ী, সব দলেরই ওই শর্ত পূরণ করার কথা।
রাজনৈতিক দলগুলোর কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারী সদস্যের অনুপাত কত
আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি (জাপা), ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণফোরাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে সংবাদ। কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের তালিকা সংগ্রহ করা হয়। তবে জাপার তালিকা পাওয়া যায়নি।
জানা যায়, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারী সদস্য ২২ দশমিক ৭৮ শতাংশ এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারী আছে ১০ শতাংশের একটু বেশি। আর জাপার দাবি অনুযায়ী কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারী সদস্যের হার ২৪ শতাংশ (যাচাই করা সম্ভব হয়নি)।
সিপিবিতে ২৭ দশমিক ৯১ শতাংশ, ওয়ার্কার্স পার্টিতে ৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ, জাসদে ১১ দশমিক ১১ শতাংশ এবং গণফোরামের একটি অংশের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারী নেতৃত্ব ৮ দশমিক ৯২ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় পর্যায়ে নারীদের সীমিত অংশগ্রহণ থাকলেও সব রাজনৈতিক দলের জেলা-উপজেলা পর্যায়ের কমিটিগুলো পুরুষনিয়ন্ত্রিত, সেখানে নারীদের অংশগ্রহণ অনেক কম।
এদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ ধর্মভিত্তিক বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলে নারীদের সরাসরি অংশগ্রহণ নেই। তবে কয়েকটি দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সীমিত সংখ্যক নারী সদস্য আছে। এরমধ্যে ইসলামী ঐক্যজোটে আছে প্রায় ৩ শতাংশ নারী।
রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানোর বিপক্ষে না বললেও কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী বাধ্যতামূলক করার বিষয়ে অনেকের আপত্তি আছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নেতৃত্বে এক-তৃতীয়াংশ ‘যোগ্য’ নারী খুঁজে পাওয়া কঠিন বলে দাবি করছে বেশকিছু দল। যদিও এই ‘যোগ্যতার’ সংজ্ঞা কী তার উত্তর পাওয়া যায়নি।
ইসিতে নিবন্ধিত ধর্মাশ্রয়ী (ইসলামপন্থী) অধিকাংশ দলই কমিটিতে নারীদের অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক করার বিপক্ষে। তবে কয়েকটি দল বলছে, তারা পৃথক সহযোগী সংগঠন করে নারীদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছে। একাধিক দল বলছে, ইসি এই আইনে দলের নিবন্ধন বাতিল করলে আদালতে যাবে তারা।
যদিও এই আইন না মানার কারণে ইসি এখন পর্যন্ত কোন দলের নিবন্ধন বাতিল করেনি।
উল্টো, নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন সদ্য বিদায়ি নির্বাচন কমিশন সবস্তরের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী রাখার বাধ্যবাধকতা উঠিয়ে ‘রাজনৈতিক দল সমূহের নিবন্ধন আইন, ২০২০’ শিরোনামে একটি খসড়া আইন প্রণয়ন করেছে, যদিও আইনটি এখনও সংসদে পাশ হয়নি।
খসড়ায় ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য রাখার বাধ্যবাধকতা তুলে দিয়ে একটি অস্পষ্ট ধারা যুক্ত করেছে। প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, ‘কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সকল পর্যায়ের কমিটি ন্যূনপক্ষে শতকরা ৩৩ ভাগ সদস্যপদ মহিলা সদস্যদের জন্য সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য থাকিবে এবং কমিশনে প্রদেয় বার্ষিক প্রতিবেদনে এই লক্ষ্যমাত্র অর্জনের বিবরণী অন্তর্ভুক্ত করিতে হইবে। ’
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সংখ্যা ৮১ জন। বর্তমানে কমিটিতে আছেন ৭৯ জন। এরমধ্যে নারী সদস্য ১৮ জন। অর্থাৎ কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারী নেতৃত্ব ২২ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
দলের সভাপতি (শীর্ষ পদ) শেখ হাসিনা। সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সভাপতিম-লীতে (১৯ সদস্য) সভাপতিসহ নারী সদস্য তিনজন (সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ও মতিয়া চৌধুরী) বা প্রায় ১৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
সাধারণ সম্পাদক পদে আছেন ওবায়দুল কাদের। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের চারটি পদে নারী (দীপু মনি) একজন অর্থাৎ ২৫ শতাংশ।
সম্পাদকম-লীতে (৩৪ সদস্য) একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকসহ নারী সাতজন বা ২০ দশমিক ৫৮ শতাংশ। কার্যনির্বাহী সদস্য (গঠনতন্ত্রে ২৮ জন) ২৬ জনের মধ্যে নারী ৮ জন বা ২৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
আওয়ামী লীগের ৫১ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদে নারী দু’জন অর্থাৎ ৩ দশমিক ৯২ শতাংশ।
তবে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য লে. কর্নেল মুহাম্মদ ফারুক খান (অব.) সংবাদকে বলেন, ‘রাজনীতিতে নারীর সম্পৃক্ততা বাড়াতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সব সময় সচেষ্ট। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৭ সালে মহিলা লীগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নারীদের মূলধারার রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ২০০২ সালে যুব মহিলা লীগ গঠন করে রাজনীতিতে নারীদের সম্পৃক্ততার সুযোগ বৃদ্ধি করেছেন।’
কমিটির সব স্তরে ৩৩ শতাংশ নারী রাখার বাধ্যবাধকতা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এটা হওয়া উচিত। তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কিছু সময় প্রয়োজন। আওয়ামী লীগের লক্ষ্য সবস্তরে নারীর অংশগ্রহণ পুরুষের সমান করার।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জেলা-উপজেলা পর্যায়ের কমিটিতে নারী নেতৃত্ব ‘কিছুটা কম’। তবে তৃণমূল সম্মেলনের মাধ্যমে নারীদের সামনে আনতে ‘কাজ করছে’ কেন্দ্রীয় কমিটি।
বিএনপি
দলে নারী নেতৃত্ব কত শতাংশ আছে তা জানে না বিএনপি। তবে, দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলছেন, বিএনপিতে নারী নেতৃত্বের ‘অগ্রগতি হচ্ছে’। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘আমাদের (বিএনপি) কত শতাংশ নারী নেতৃত্ব রয়েছে ঠিক বলতে পারবো না। কারণ কমিটি প্রক্রিয়াধীন। আর বিভিন্ন জেলায় নেতাদের দিক-নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, তারা সেভাবে কমিটি গঠন করছেন।’
বিএনপির সর্বশেষ কাউন্সিলে ৫০২ সদস্যের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করা হয়। তবে এখন দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সংখ্যা ৭০২ জন। এর মধ্যে নারী রয়েছেন ৭১ জন। অর্থাৎ ১০ দশমিক ১১ শতাংশ।
দলটির নীতিনির্ধারণী স্থায়ী কমিটির সদস্য ১৯ জন। তাতে দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ছাড়া একমাত্র নারী সেলিমা রহমান। অর্থাৎ ১০ দশমিক ৫৩ শতাংশ নারী। ৮২ জনের উপদেষ্টাম-লীতে ছয়জন নারী রয়েছেন, অর্থাৎ ৭ দশমিক ৩২ শতাংশ। সাংগঠনিক, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সম্পাদকম-লী, সহসম্পাদকম-লীর সদস্য সংখ্যা ২০৯। এই পদগুলোতে নারী রয়েছেন ২০ জন, যা ৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ। ভাইস চেয়ারপারসন ৩৭ জন, নারী মাত্র একজন।
বিএনপি বলছে তাদের লক্ষ্য ‘২০৩০ সালের মধ্যে দলটিতে ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করা’। এ লক্ষ্য নিয়েই ‘১৫ শতাংশ নারী রেখে এখন কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের সব কমিটি গঠন করার নীতিগত সিদ্ধান্ত’ দলটির। দলটির কেন্দ্রীয় দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্তরা দাবি করেন জেলা ও উপজেলা কমিটির কাছে নির্দেশনা অনেক আগেই দেয়া হয়েছে। কেন্দ্র থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কমিটিও হচ্ছে, যা চলমান প্রক্রিয়া।
তবে সেলিমা রহমান বলছেন, ‘দলে কত দিনে ৩৩ শতাংশ নারীদের জন্য সংরক্ষণ এবং এসব পদ পূরণ হবে, বলা মুশকিল। তবে, আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৩৩ শতাংশ না পারি তার কাছাকাছি অন্তত পূরণ করবো।’
আর বিএনপির কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন নির্বাচন কমিশনের এই বিধান জারির ‘নৈতিক অধিকার’ নিয়ে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নেতারা বলছেন বর্তমান কমিশনে পাঁচজনের একজন নারী, অর্থাৎ ৩৩ শতাংশের নীতি পূরণ করা হয়নি। নির্বাচন কমিশনে যারা চাকরি করছেন সেখানে ‘৩৩ শতাংশ দূরের কথা ৫ শতাংশ নারী চাকরি করে কি-না সন্দেহ’। এক্ষেত্রে ৩৩ শতাংশ নারীর নিয়োগ ‘ওনারা (ইসি) আগে নিশ্চিত করুক। তারপর আমাদের ওপর শর্ত জারি করুক’।
জাতীয় পার্টি (জাপা)
জাতীয় পার্টি (জাপা) মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুও সঠিক তথ্য দিতে পারছেন না, তার দলে নারী নেতৃত্ব কত শতাংশ। তিনি বলছেন, ‘রাজনীতিতে নারীরা আর খুব বেশি এগিয়ে আসেন না। আর যারা আগ্রহী রাজনীতি করতে পুরুষের তুলনায় ‘পারসেন্টে’ কম। আমাদের দলে (জাতীয় পার্টি) কত শতাংশ নারী রয়েছে সঠিকভাবে বলা মুশকিল।’
তবে জাপার দপ্তর থেকে দাবি করা হয়েছে, তাদের দলে প্রায় ২০ শতাংশ নারী নেতৃত্ব রয়েছে। দলটির ২৯৯ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটিতে ৭২ জনের বেশি নারী আছেন বলে তাদের দাবি। অর্থাৎ ২৪ শতাংশের একটু বেশি। তবে তাদের তালিকা সংবাদের পক্ষে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
জাতীয় পার্টিতে নারীদের মধ্যে সর্বোচ্চ নেতৃত্বে রয়েছেন দলটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ।
মুজিবুল হকের ভাষ্য ‘স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ’ রাজনৈতিক পরিবেশ যতদিন না হবে, ততদিন পর্যন্ত ৩৩ শতাংশ পূরণ করা ‘দুরূহ’।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)
এই বামপন্থি দলের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে গত সপ্তাহে। তাদের ৪৩ সদস্যের নতুন কমিটিতে আছেন ১২ জন নারী, অর্থাৎ ২৭ দশমিক ৯১ শতাংশ। সিপিবি সূত্রে জানা গেছে, এর আগের কমিটিতে ৮ জন নারী ছিলেন।
সিপিবির নবনির্বাচিত সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম সংবাদকে বলেন, ‘আমরা বেশ অগ্রগতি করতে পেরেছি। আমরা নারীদের বিষয়ে প্রাধান্য দিচ্ছি। কিন্তু নারীরা তাদের রাজনৈতিক, সোশ্যাল মুভমেন্ট, সামাজিক অবস্থার সমন্বয়হীনতার কারণে এগিয়ে আসছে না। এ কারণে ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব কতটুকু করতে পারবো আমরা জানি না।’
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি
দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম ১৫ সদস্যের ‘পলিটব্যুরো’তে একমাত্র নারী সদস্য হাজেরা সুলতানা। দলের ৯১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারী আছেন ৭ জন। যা মোট সদস্যের ৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ। এরমধ্যে কেন্দ্রীয় সদস্য ৬২ জন, নারী দু’জন। কেন্দ্রীয় কমিটির বিকল্প সদস্য ২৮ জন, নারী আছেন চারজন।
তবে দলের সভাপতি রাশেদ খান মেননের মতে যোগ্য অনেক নারী আছেন এবং ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। যদিও দলে এর প্রতিফলন দৃশ্যমান নয়। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘আমরা নারী নেতৃত্ব বাড়ানোর চেষ্টা করছি।’
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)
জাসদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদে (সাধারণ সম্পাদক) আছেন একজন নারী শিরীন আখতার। তবে কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারী সদস্যের ভাগ মাত্র ১১ দশমিক ১১ শতাংশ। ১৩৫ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারী আছেন ১৫ জন।
দলটির সহ-সভাপতি ১৫ জন, এর মধ্যে নারী দু’জন। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের ১২টি পদ এবং সাংগঠনিক সম্পাদকের ১২টি পদে কোন নারী নেই।
তবে তথ্য-প্রযুক্তি, নারী, সমবায় ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদকের চারটি পদে নারীরা স্থান পেয়েছেন। এছাড়া সহ-সম্পাদক পদে দু’জন এবং সদস্য পদে ছয়জন নারী আছেন।
জাসদের ২১ সদস্যের স্থায়ী কমিটিতে নারী আছেন দু’জন। তবে ৫১ সদস্যের উপদেষ্টাম-লীতে কোন নারী সদস্য নেই।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ
জামায়াতে ইসলামী’র নিবন্ধন বাতিল হওয়ার পর দেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় ‘চরমোনাইর পীর’ বলে পরিচিত সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে ২৯৭টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল দলটি। ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভাসহ স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন নির্বাচনে প্রতীক নিয়ে মাঠে আছেন দলীয় প্রার্থীরা।
দলে ১১ সদস্যের প্রেসিডিয়াম, ৬৩ সদস্যের কেন্দ্রীয় মজলিসে আমেলা এবং ১৯ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদ রয়েছে। তবে কোন স্তরেই নারী নেতৃত্ব নেই।
বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট
দলটির ৬১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটিতে কোন নারী সদস্য নেই। কারণ দলটির মহাসচিব এম এ মতিন বলছেন, ‘এর বিপক্ষে আমরা। ইসির সঙ্গে মতবিনিময়েও এ বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছি। আমরা বলেছি, ওই আইনে নারী-পুরুষ উভয়ের অধিকার খর্ব করা হয়েছে।’
‘তবে নারী রাজনীতির বিরুদ্ধে নই আমরা। বাংলাদেশ ইসলামী মহিলা ফ্রন্ট নামে নারীদের জন্য আমাদের পৃথক সহযোগী সংগঠন আছে।’
ইসলামী ঐক্যজোট
তবে এই দলটি ‘রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণের বিরুদ্ধে নয়’, সংবাদকে বললেন দলের মহাসচিব মুফতী ফয়জুল্লাহ। দলটির ১০১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারী আছেন ৩ জন। অর্থাৎ কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারী নেতৃত্ব প্রায় তিন শতাংশ।
ফয়জুল্লাহ বলেন, ‘তবে বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী নিশ্চিত করতে সময়ের প্রয়োজন। যোগ্য নারী নেতৃত্ব খুঁজে বের করতে হবে। আমরা পর্যায়ক্রমে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর চেষ্টা করছি।’
গণফোরাম (মন্টু গ্রুপ)
গণফোরামের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব খান ফারুক জানিয়েছেন, তাদের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ১৫৭ জন সদস্যের মধ্যে নারী মাত্র ১৬ জন অর্থাৎ ৮ দশমিক ৯২ শতাংশ। এর মধ্যে সদস্য পদে ১৪ জন এবং সম্পাদকম-লীতে দু’জন।
দলটির সভাপতি মোস্তাফা মোহসিন মন্টু সংবাদকে বলেন, আমাদের জেলা পর্যায় কমিটিতে বেশকিছু নারী কর্মী রয়েছে। কিন্তু আমরা ৩৩ শতাংশ এখনও পূরণ করতে পারিনি। তবে, কত শতাংশ পূরণ হয়েছে সে হিসাব পাওয়া যায়নি।
সোমবার, ০৭ মার্চ ২০২২
রাজনীতিতে নারীদের সামনে আনতে ২০০৮ সালে আইনের পরিবর্তন করেছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ওই সময় গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন করে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য ২০২০ সালের মধ্যে সর্বস্তরে ৩৩ শতাংশ নারীর অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল।
১৩ বছর পেরিয়ে গেলেও শর্ত পূরণ করতে পারেনি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো। বর্তমানে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৩৯টি। আরপিও অনুযায়ী, সব দলেরই ওই শর্ত পূরণ করার কথা।
রাজনৈতিক দলগুলোর কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারী সদস্যের অনুপাত কত
আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি (জাপা), ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণফোরাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে সংবাদ। কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের তালিকা সংগ্রহ করা হয়। তবে জাপার তালিকা পাওয়া যায়নি।
জানা যায়, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারী সদস্য ২২ দশমিক ৭৮ শতাংশ এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারী আছে ১০ শতাংশের একটু বেশি। আর জাপার দাবি অনুযায়ী কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারী সদস্যের হার ২৪ শতাংশ (যাচাই করা সম্ভব হয়নি)।
সিপিবিতে ২৭ দশমিক ৯১ শতাংশ, ওয়ার্কার্স পার্টিতে ৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ, জাসদে ১১ দশমিক ১১ শতাংশ এবং গণফোরামের একটি অংশের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারী নেতৃত্ব ৮ দশমিক ৯২ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় পর্যায়ে নারীদের সীমিত অংশগ্রহণ থাকলেও সব রাজনৈতিক দলের জেলা-উপজেলা পর্যায়ের কমিটিগুলো পুরুষনিয়ন্ত্রিত, সেখানে নারীদের অংশগ্রহণ অনেক কম।
এদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ ধর্মভিত্তিক বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলে নারীদের সরাসরি অংশগ্রহণ নেই। তবে কয়েকটি দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সীমিত সংখ্যক নারী সদস্য আছে। এরমধ্যে ইসলামী ঐক্যজোটে আছে প্রায় ৩ শতাংশ নারী।
রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানোর বিপক্ষে না বললেও কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী বাধ্যতামূলক করার বিষয়ে অনেকের আপত্তি আছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নেতৃত্বে এক-তৃতীয়াংশ ‘যোগ্য’ নারী খুঁজে পাওয়া কঠিন বলে দাবি করছে বেশকিছু দল। যদিও এই ‘যোগ্যতার’ সংজ্ঞা কী তার উত্তর পাওয়া যায়নি।
ইসিতে নিবন্ধিত ধর্মাশ্রয়ী (ইসলামপন্থী) অধিকাংশ দলই কমিটিতে নারীদের অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক করার বিপক্ষে। তবে কয়েকটি দল বলছে, তারা পৃথক সহযোগী সংগঠন করে নারীদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছে। একাধিক দল বলছে, ইসি এই আইনে দলের নিবন্ধন বাতিল করলে আদালতে যাবে তারা।
যদিও এই আইন না মানার কারণে ইসি এখন পর্যন্ত কোন দলের নিবন্ধন বাতিল করেনি।
উল্টো, নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন সদ্য বিদায়ি নির্বাচন কমিশন সবস্তরের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী রাখার বাধ্যবাধকতা উঠিয়ে ‘রাজনৈতিক দল সমূহের নিবন্ধন আইন, ২০২০’ শিরোনামে একটি খসড়া আইন প্রণয়ন করেছে, যদিও আইনটি এখনও সংসদে পাশ হয়নি।
খসড়ায় ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য রাখার বাধ্যবাধকতা তুলে দিয়ে একটি অস্পষ্ট ধারা যুক্ত করেছে। প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, ‘কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সকল পর্যায়ের কমিটি ন্যূনপক্ষে শতকরা ৩৩ ভাগ সদস্যপদ মহিলা সদস্যদের জন্য সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য থাকিবে এবং কমিশনে প্রদেয় বার্ষিক প্রতিবেদনে এই লক্ষ্যমাত্র অর্জনের বিবরণী অন্তর্ভুক্ত করিতে হইবে। ’
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সংখ্যা ৮১ জন। বর্তমানে কমিটিতে আছেন ৭৯ জন। এরমধ্যে নারী সদস্য ১৮ জন। অর্থাৎ কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারী নেতৃত্ব ২২ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
দলের সভাপতি (শীর্ষ পদ) শেখ হাসিনা। সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সভাপতিম-লীতে (১৯ সদস্য) সভাপতিসহ নারী সদস্য তিনজন (সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ও মতিয়া চৌধুরী) বা প্রায় ১৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
সাধারণ সম্পাদক পদে আছেন ওবায়দুল কাদের। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের চারটি পদে নারী (দীপু মনি) একজন অর্থাৎ ২৫ শতাংশ।
সম্পাদকম-লীতে (৩৪ সদস্য) একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকসহ নারী সাতজন বা ২০ দশমিক ৫৮ শতাংশ। কার্যনির্বাহী সদস্য (গঠনতন্ত্রে ২৮ জন) ২৬ জনের মধ্যে নারী ৮ জন বা ২৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
আওয়ামী লীগের ৫১ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদে নারী দু’জন অর্থাৎ ৩ দশমিক ৯২ শতাংশ।
তবে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য লে. কর্নেল মুহাম্মদ ফারুক খান (অব.) সংবাদকে বলেন, ‘রাজনীতিতে নারীর সম্পৃক্ততা বাড়াতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সব সময় সচেষ্ট। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৭ সালে মহিলা লীগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নারীদের মূলধারার রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ২০০২ সালে যুব মহিলা লীগ গঠন করে রাজনীতিতে নারীদের সম্পৃক্ততার সুযোগ বৃদ্ধি করেছেন।’
কমিটির সব স্তরে ৩৩ শতাংশ নারী রাখার বাধ্যবাধকতা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এটা হওয়া উচিত। তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কিছু সময় প্রয়োজন। আওয়ামী লীগের লক্ষ্য সবস্তরে নারীর অংশগ্রহণ পুরুষের সমান করার।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জেলা-উপজেলা পর্যায়ের কমিটিতে নারী নেতৃত্ব ‘কিছুটা কম’। তবে তৃণমূল সম্মেলনের মাধ্যমে নারীদের সামনে আনতে ‘কাজ করছে’ কেন্দ্রীয় কমিটি।
বিএনপি
দলে নারী নেতৃত্ব কত শতাংশ আছে তা জানে না বিএনপি। তবে, দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলছেন, বিএনপিতে নারী নেতৃত্বের ‘অগ্রগতি হচ্ছে’। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘আমাদের (বিএনপি) কত শতাংশ নারী নেতৃত্ব রয়েছে ঠিক বলতে পারবো না। কারণ কমিটি প্রক্রিয়াধীন। আর বিভিন্ন জেলায় নেতাদের দিক-নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, তারা সেভাবে কমিটি গঠন করছেন।’
বিএনপির সর্বশেষ কাউন্সিলে ৫০২ সদস্যের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করা হয়। তবে এখন দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সংখ্যা ৭০২ জন। এর মধ্যে নারী রয়েছেন ৭১ জন। অর্থাৎ ১০ দশমিক ১১ শতাংশ।
দলটির নীতিনির্ধারণী স্থায়ী কমিটির সদস্য ১৯ জন। তাতে দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ছাড়া একমাত্র নারী সেলিমা রহমান। অর্থাৎ ১০ দশমিক ৫৩ শতাংশ নারী। ৮২ জনের উপদেষ্টাম-লীতে ছয়জন নারী রয়েছেন, অর্থাৎ ৭ দশমিক ৩২ শতাংশ। সাংগঠনিক, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সম্পাদকম-লী, সহসম্পাদকম-লীর সদস্য সংখ্যা ২০৯। এই পদগুলোতে নারী রয়েছেন ২০ জন, যা ৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ। ভাইস চেয়ারপারসন ৩৭ জন, নারী মাত্র একজন।
বিএনপি বলছে তাদের লক্ষ্য ‘২০৩০ সালের মধ্যে দলটিতে ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করা’। এ লক্ষ্য নিয়েই ‘১৫ শতাংশ নারী রেখে এখন কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের সব কমিটি গঠন করার নীতিগত সিদ্ধান্ত’ দলটির। দলটির কেন্দ্রীয় দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্তরা দাবি করেন জেলা ও উপজেলা কমিটির কাছে নির্দেশনা অনেক আগেই দেয়া হয়েছে। কেন্দ্র থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কমিটিও হচ্ছে, যা চলমান প্রক্রিয়া।
তবে সেলিমা রহমান বলছেন, ‘দলে কত দিনে ৩৩ শতাংশ নারীদের জন্য সংরক্ষণ এবং এসব পদ পূরণ হবে, বলা মুশকিল। তবে, আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৩৩ শতাংশ না পারি তার কাছাকাছি অন্তত পূরণ করবো।’
আর বিএনপির কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন নির্বাচন কমিশনের এই বিধান জারির ‘নৈতিক অধিকার’ নিয়ে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নেতারা বলছেন বর্তমান কমিশনে পাঁচজনের একজন নারী, অর্থাৎ ৩৩ শতাংশের নীতি পূরণ করা হয়নি। নির্বাচন কমিশনে যারা চাকরি করছেন সেখানে ‘৩৩ শতাংশ দূরের কথা ৫ শতাংশ নারী চাকরি করে কি-না সন্দেহ’। এক্ষেত্রে ৩৩ শতাংশ নারীর নিয়োগ ‘ওনারা (ইসি) আগে নিশ্চিত করুক। তারপর আমাদের ওপর শর্ত জারি করুক’।
জাতীয় পার্টি (জাপা)
জাতীয় পার্টি (জাপা) মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুও সঠিক তথ্য দিতে পারছেন না, তার দলে নারী নেতৃত্ব কত শতাংশ। তিনি বলছেন, ‘রাজনীতিতে নারীরা আর খুব বেশি এগিয়ে আসেন না। আর যারা আগ্রহী রাজনীতি করতে পুরুষের তুলনায় ‘পারসেন্টে’ কম। আমাদের দলে (জাতীয় পার্টি) কত শতাংশ নারী রয়েছে সঠিকভাবে বলা মুশকিল।’
তবে জাপার দপ্তর থেকে দাবি করা হয়েছে, তাদের দলে প্রায় ২০ শতাংশ নারী নেতৃত্ব রয়েছে। দলটির ২৯৯ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটিতে ৭২ জনের বেশি নারী আছেন বলে তাদের দাবি। অর্থাৎ ২৪ শতাংশের একটু বেশি। তবে তাদের তালিকা সংবাদের পক্ষে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
জাতীয় পার্টিতে নারীদের মধ্যে সর্বোচ্চ নেতৃত্বে রয়েছেন দলটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ।
মুজিবুল হকের ভাষ্য ‘স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ’ রাজনৈতিক পরিবেশ যতদিন না হবে, ততদিন পর্যন্ত ৩৩ শতাংশ পূরণ করা ‘দুরূহ’।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)
এই বামপন্থি দলের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে গত সপ্তাহে। তাদের ৪৩ সদস্যের নতুন কমিটিতে আছেন ১২ জন নারী, অর্থাৎ ২৭ দশমিক ৯১ শতাংশ। সিপিবি সূত্রে জানা গেছে, এর আগের কমিটিতে ৮ জন নারী ছিলেন।
সিপিবির নবনির্বাচিত সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম সংবাদকে বলেন, ‘আমরা বেশ অগ্রগতি করতে পেরেছি। আমরা নারীদের বিষয়ে প্রাধান্য দিচ্ছি। কিন্তু নারীরা তাদের রাজনৈতিক, সোশ্যাল মুভমেন্ট, সামাজিক অবস্থার সমন্বয়হীনতার কারণে এগিয়ে আসছে না। এ কারণে ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব কতটুকু করতে পারবো আমরা জানি না।’
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি
দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম ১৫ সদস্যের ‘পলিটব্যুরো’তে একমাত্র নারী সদস্য হাজেরা সুলতানা। দলের ৯১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারী আছেন ৭ জন। যা মোট সদস্যের ৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ। এরমধ্যে কেন্দ্রীয় সদস্য ৬২ জন, নারী দু’জন। কেন্দ্রীয় কমিটির বিকল্প সদস্য ২৮ জন, নারী আছেন চারজন।
তবে দলের সভাপতি রাশেদ খান মেননের মতে যোগ্য অনেক নারী আছেন এবং ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। যদিও দলে এর প্রতিফলন দৃশ্যমান নয়। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘আমরা নারী নেতৃত্ব বাড়ানোর চেষ্টা করছি।’
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)
জাসদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদে (সাধারণ সম্পাদক) আছেন একজন নারী শিরীন আখতার। তবে কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারী সদস্যের ভাগ মাত্র ১১ দশমিক ১১ শতাংশ। ১৩৫ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারী আছেন ১৫ জন।
দলটির সহ-সভাপতি ১৫ জন, এর মধ্যে নারী দু’জন। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের ১২টি পদ এবং সাংগঠনিক সম্পাদকের ১২টি পদে কোন নারী নেই।
তবে তথ্য-প্রযুক্তি, নারী, সমবায় ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদকের চারটি পদে নারীরা স্থান পেয়েছেন। এছাড়া সহ-সম্পাদক পদে দু’জন এবং সদস্য পদে ছয়জন নারী আছেন।
জাসদের ২১ সদস্যের স্থায়ী কমিটিতে নারী আছেন দু’জন। তবে ৫১ সদস্যের উপদেষ্টাম-লীতে কোন নারী সদস্য নেই।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ
জামায়াতে ইসলামী’র নিবন্ধন বাতিল হওয়ার পর দেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় ‘চরমোনাইর পীর’ বলে পরিচিত সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে ২৯৭টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল দলটি। ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভাসহ স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন নির্বাচনে প্রতীক নিয়ে মাঠে আছেন দলীয় প্রার্থীরা।
দলে ১১ সদস্যের প্রেসিডিয়াম, ৬৩ সদস্যের কেন্দ্রীয় মজলিসে আমেলা এবং ১৯ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদ রয়েছে। তবে কোন স্তরেই নারী নেতৃত্ব নেই।
বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট
দলটির ৬১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটিতে কোন নারী সদস্য নেই। কারণ দলটির মহাসচিব এম এ মতিন বলছেন, ‘এর বিপক্ষে আমরা। ইসির সঙ্গে মতবিনিময়েও এ বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছি। আমরা বলেছি, ওই আইনে নারী-পুরুষ উভয়ের অধিকার খর্ব করা হয়েছে।’
‘তবে নারী রাজনীতির বিরুদ্ধে নই আমরা। বাংলাদেশ ইসলামী মহিলা ফ্রন্ট নামে নারীদের জন্য আমাদের পৃথক সহযোগী সংগঠন আছে।’
ইসলামী ঐক্যজোট
তবে এই দলটি ‘রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণের বিরুদ্ধে নয়’, সংবাদকে বললেন দলের মহাসচিব মুফতী ফয়জুল্লাহ। দলটির ১০১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারী আছেন ৩ জন। অর্থাৎ কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারী নেতৃত্ব প্রায় তিন শতাংশ।
ফয়জুল্লাহ বলেন, ‘তবে বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী নিশ্চিত করতে সময়ের প্রয়োজন। যোগ্য নারী নেতৃত্ব খুঁজে বের করতে হবে। আমরা পর্যায়ক্রমে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর চেষ্টা করছি।’
গণফোরাম (মন্টু গ্রুপ)
গণফোরামের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব খান ফারুক জানিয়েছেন, তাদের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ১৫৭ জন সদস্যের মধ্যে নারী মাত্র ১৬ জন অর্থাৎ ৮ দশমিক ৯২ শতাংশ। এর মধ্যে সদস্য পদে ১৪ জন এবং সম্পাদকম-লীতে দু’জন।
দলটির সভাপতি মোস্তাফা মোহসিন মন্টু সংবাদকে বলেন, আমাদের জেলা পর্যায় কমিটিতে বেশকিছু নারী কর্মী রয়েছে। কিন্তু আমরা ৩৩ শতাংশ এখনও পূরণ করতে পারিনি। তবে, কত শতাংশ পূরণ হয়েছে সে হিসাব পাওয়া যায়নি।