দল হিসেবে তাদের বলা হয় চোকার।
বিশ্ব ক্রিকেটের অনেক চৌকষ,তারকা ক্রিকেটার থাকেন দলে। পুরো টুর্নামেন্ট ভালো খেলে সেমিফাইনালে গিয়ে হাস্যকর সব পরাজয়ের রেকর্ড তাদের। এবার টি টুয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালেও ভারতের সাথে হেরে শিরোপা স্বপ্ন জলাঞ্জলি দেয়া দলটার নাম দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে এবার তারাই তৃতীয় টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপের প্রথম দল হিসেবে ফাইনাল নিশ্চিত করলো। আজ পাকিস্তানকে ২ উইকেটে অবিশ্বাস্যভাবে হারিয়ে এই অর্জন তাদের।
দ্বিতীয় ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট জয়ের জন্য দরকার মাত্র ১৪৮ রান। হাতে ১০ উইকেট। দিনের হিসেবে দুইদিন এক সেশন তখনো বাকী। সবাই ভাবছেন এই টেস্ট দক্ষিণ আফ্রিকারই জয়ী হবার কথা সহজেই। কিন্তু তার আগে ঘটলো কত নাটক।
দক্ষিণ আফ্রিকার সেঞ্চুরিয়নের সুপারস্পোর্ট পার্কে সব ধরনের রোমাঞ্চ ডানা মেলে ছিলো দুদলের মধ্যেকার প্রথম টেস্ট ম্যাচে। দলটি দক্ষিন আফ্রিকা বলেই হয়তো ১৪৮ রানের ছোট লক্ষ্যে খেলতে নেমে ৯৯ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে হারের শংকায় পড়েছিলো।
পাকিস্তানের মোহাম্মদ আব্বাস মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে পতন হওয়া ৮ উইকেটের ৬টি একাই দখল করেন। জয়ের জন্য পাকিস্তানের দরকার তখন মাত্র ২ উইকেট। দক্ষিণ আফ্রিকার লক্ষ্যটা তুলনায় বড়, ৫০ রান লাগে তখনও।
উইকেটে মার্কো ইয়ানসেন এবং কাগিসো রাবাদা। নবম উইকেটে ৫০ রানের পার্টনারশিপ গড়ে পাকিস্তানের কাছ থেকে মুটামুটি জয় ছিনতাই করে নিলেন দুই আফ্রিকান।
রাবাদার সাথে ৫০ রানের জয়ী জুটিতে ইয়ানসেনের সংগ্রহ মাত্র ১৬ রান। রাবাদার সংগ্রহ ৩১ রান। তাও মাত্র ২৬ বলে, খেলার গুরুত্বপূর্ণ মূহুর্তে।
আব্বাসের করা ইনিংসের ৪০ তম ওভারের তৃতীয় বলে চার মেরে বিশ্ব জয়ের আনন্দ নিয়ে ভো দৌঁড় দেন ইয়ানসেন। তার পিছনে পিছনে দৌঁড়াচ্ছেন ডেসিং রুম থেকে হৈ হুল্লোড় করা কোচ, খেলোয়াড়, স্টাফ। রাবাদা তখনো আকাশের দিকে তাকিয়ে পরমেশ্বরের প্রতি কি যেন জপছেন।
এই জয় সহজ ছিলোনা। দক্ষিণ আফ্রিকা চতুর্থ দিন শুরু করেছিলো ৩ উইকেটে ২৭ রান নিয়ে। উইকেটে ছিলেন এইডেন মার্করাম এবং টেম্বা বাভুমা। প্রথম ঘন্টা ভালো ভাবেই কাটিয়ে দেন। আর কোনও উইকেটে না হারিয়ে ২৭ থেকে ৬২ রানে পানি পানের বিরতিতে যায় দক্ষিন আফ্রিকা।
ডিংকস বিরতি থেকে ফিরে প্রথম ওভারেই আব্বাসের শিকার মার্করাম। আব্বাসের নিচু হওয়া বলে বোল্ড হন তিনি ৩৭ রান সংগ্রহ করে।
তারপর ডেভিড বেডিংহামকে নিয়ে বাভুমা ভালোই জবাব দিচ্ছিলেন। কিন্তু আব্বাসের করা একটি বল মনে হলো বাভুমার ব্যাটে বাতাসের মতো লাগিয়ে চলে যায় উইকেট রক্ষক মোহাম্মদ রিজওয়ানের গ্লাভসে। পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের জোড়ালো আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার। বাভুমাও প্যাভিলিয়নে ফিরে যান।
পরে টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় বল বাভুমার ব্যাট স্পর্শ করেনি। হতাশ দক্ষিন আফ্রিকার সংগ্রহ তখন ৫ উইকেটে ৯৬ রান।
নাসির শাহ পরের ওভারে বোল্ড করেন কাইল ভেরেইনাকে। রান তখন ৯৯, উইকেট পড় গেছে ৬টি।
সেখান থেকে মূহুর্তেই মধ্যে আরও দুই উইকেটের পতন। রান তখনও ৯৯। কিন্তু ৮ উইকেটের পতনে দিশেহারা হয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
বিপরীত চিত্র পাকিস্তান শিবিরে তারা তখন আড়মোড়া ভেঙে জয়ের সুবাতাস পেতে শুরু করে। ৩ বছর পর দলে ফিরেই মোহাম্মদ আব্বাস ক্যারিয়ার সেরা ৬ উইকেট দখল করেন।
তখন অনেকেই ভেবে নিয়েছিলো বার বার চাপের মুখে ভেঙে পড়া দক্ষিণ আফ্রিকা হয়তো হারতে বসেছে এই টেস্ট। সেখান থেকে রাবাদা আর মার্কো ইয়ানসেনের ঐতিহাসিক জুটি এবং অবশেষে জয়।সেই জয়ে আবার টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপের ফাইনালে চলে যাওয়া নিসন্দেহে বিশেষ কিছু।
আরেকটি টেস্ট আছে এই সিরিজে। সেই দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট শুরু হবে ৩ জানুয়ারি দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনে।
স্কোরলাইনঃ
পাকিস্তান ২১১ ও ২৩৭।
দক্ষিণ আফ্রিকা ৩০১ ও ৩৯.৩ ওভারে ১৫০/৮
ফলাফলঃ দক্ষিণ আফ্রিকা ২ উইকেটে জয়ী
ম্যাচসেরাঃ এইডেন মার্করাম।
রোববার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪
দল হিসেবে তাদের বলা হয় চোকার।
বিশ্ব ক্রিকেটের অনেক চৌকষ,তারকা ক্রিকেটার থাকেন দলে। পুরো টুর্নামেন্ট ভালো খেলে সেমিফাইনালে গিয়ে হাস্যকর সব পরাজয়ের রেকর্ড তাদের। এবার টি টুয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালেও ভারতের সাথে হেরে শিরোপা স্বপ্ন জলাঞ্জলি দেয়া দলটার নাম দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে এবার তারাই তৃতীয় টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপের প্রথম দল হিসেবে ফাইনাল নিশ্চিত করলো। আজ পাকিস্তানকে ২ উইকেটে অবিশ্বাস্যভাবে হারিয়ে এই অর্জন তাদের।
দ্বিতীয় ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট জয়ের জন্য দরকার মাত্র ১৪৮ রান। হাতে ১০ উইকেট। দিনের হিসেবে দুইদিন এক সেশন তখনো বাকী। সবাই ভাবছেন এই টেস্ট দক্ষিণ আফ্রিকারই জয়ী হবার কথা সহজেই। কিন্তু তার আগে ঘটলো কত নাটক।
দক্ষিণ আফ্রিকার সেঞ্চুরিয়নের সুপারস্পোর্ট পার্কে সব ধরনের রোমাঞ্চ ডানা মেলে ছিলো দুদলের মধ্যেকার প্রথম টেস্ট ম্যাচে। দলটি দক্ষিন আফ্রিকা বলেই হয়তো ১৪৮ রানের ছোট লক্ষ্যে খেলতে নেমে ৯৯ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে হারের শংকায় পড়েছিলো।
পাকিস্তানের মোহাম্মদ আব্বাস মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে পতন হওয়া ৮ উইকেটের ৬টি একাই দখল করেন। জয়ের জন্য পাকিস্তানের দরকার তখন মাত্র ২ উইকেট। দক্ষিণ আফ্রিকার লক্ষ্যটা তুলনায় বড়, ৫০ রান লাগে তখনও।
উইকেটে মার্কো ইয়ানসেন এবং কাগিসো রাবাদা। নবম উইকেটে ৫০ রানের পার্টনারশিপ গড়ে পাকিস্তানের কাছ থেকে মুটামুটি জয় ছিনতাই করে নিলেন দুই আফ্রিকান।
রাবাদার সাথে ৫০ রানের জয়ী জুটিতে ইয়ানসেনের সংগ্রহ মাত্র ১৬ রান। রাবাদার সংগ্রহ ৩১ রান। তাও মাত্র ২৬ বলে, খেলার গুরুত্বপূর্ণ মূহুর্তে।
আব্বাসের করা ইনিংসের ৪০ তম ওভারের তৃতীয় বলে চার মেরে বিশ্ব জয়ের আনন্দ নিয়ে ভো দৌঁড় দেন ইয়ানসেন। তার পিছনে পিছনে দৌঁড়াচ্ছেন ডেসিং রুম থেকে হৈ হুল্লোড় করা কোচ, খেলোয়াড়, স্টাফ। রাবাদা তখনো আকাশের দিকে তাকিয়ে পরমেশ্বরের প্রতি কি যেন জপছেন।
এই জয় সহজ ছিলোনা। দক্ষিণ আফ্রিকা চতুর্থ দিন শুরু করেছিলো ৩ উইকেটে ২৭ রান নিয়ে। উইকেটে ছিলেন এইডেন মার্করাম এবং টেম্বা বাভুমা। প্রথম ঘন্টা ভালো ভাবেই কাটিয়ে দেন। আর কোনও উইকেটে না হারিয়ে ২৭ থেকে ৬২ রানে পানি পানের বিরতিতে যায় দক্ষিন আফ্রিকা।
ডিংকস বিরতি থেকে ফিরে প্রথম ওভারেই আব্বাসের শিকার মার্করাম। আব্বাসের নিচু হওয়া বলে বোল্ড হন তিনি ৩৭ রান সংগ্রহ করে।
তারপর ডেভিড বেডিংহামকে নিয়ে বাভুমা ভালোই জবাব দিচ্ছিলেন। কিন্তু আব্বাসের করা একটি বল মনে হলো বাভুমার ব্যাটে বাতাসের মতো লাগিয়ে চলে যায় উইকেট রক্ষক মোহাম্মদ রিজওয়ানের গ্লাভসে। পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের জোড়ালো আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার। বাভুমাও প্যাভিলিয়নে ফিরে যান।
পরে টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় বল বাভুমার ব্যাট স্পর্শ করেনি। হতাশ দক্ষিন আফ্রিকার সংগ্রহ তখন ৫ উইকেটে ৯৬ রান।
নাসির শাহ পরের ওভারে বোল্ড করেন কাইল ভেরেইনাকে। রান তখন ৯৯, উইকেট পড় গেছে ৬টি।
সেখান থেকে মূহুর্তেই মধ্যে আরও দুই উইকেটের পতন। রান তখনও ৯৯। কিন্তু ৮ উইকেটের পতনে দিশেহারা হয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
বিপরীত চিত্র পাকিস্তান শিবিরে তারা তখন আড়মোড়া ভেঙে জয়ের সুবাতাস পেতে শুরু করে। ৩ বছর পর দলে ফিরেই মোহাম্মদ আব্বাস ক্যারিয়ার সেরা ৬ উইকেট দখল করেন।
তখন অনেকেই ভেবে নিয়েছিলো বার বার চাপের মুখে ভেঙে পড়া দক্ষিণ আফ্রিকা হয়তো হারতে বসেছে এই টেস্ট। সেখান থেকে রাবাদা আর মার্কো ইয়ানসেনের ঐতিহাসিক জুটি এবং অবশেষে জয়।সেই জয়ে আবার টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপের ফাইনালে চলে যাওয়া নিসন্দেহে বিশেষ কিছু।
আরেকটি টেস্ট আছে এই সিরিজে। সেই দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট শুরু হবে ৩ জানুয়ারি দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনে।
স্কোরলাইনঃ
পাকিস্তান ২১১ ও ২৩৭।
দক্ষিণ আফ্রিকা ৩০১ ও ৩৯.৩ ওভারে ১৫০/৮
ফলাফলঃ দক্ষিণ আফ্রিকা ২ উইকেটে জয়ী
ম্যাচসেরাঃ এইডেন মার্করাম।