ক্রিকেটের সবচেয়ে অনিয়মিত কিন্তু আকর্ষণীয় আসরের তকমা কি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির জন্য বরাদ্দ করা যায়? উত্তরটা পুরো লেখা শেষে হয়ত আপনিও হ্যাঁ বলতে পারেন। এ এমনই এক ট্রফি যা বহু কিংবদন্তির জন্যই আক্ষেপ মেটানোর কাজ করেছে। ভারতের ক্রিকেটে মহারাজা নাম পাওয়া সৌরভ গাঙ্গুলি কিংবা রেকর্ডের বরপুত্র ব্রায়ান লারার একমাত্র আইসিসি স্বীকৃত শিরোপা এই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি।
আবার দক্ষিণ আফ্রিকা বা সর্বকালের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার জ্যাক ক্যালিসের একমাত্র আইসিসি শিরোপা এটিই। ক্যালিস অবশ্য জিতেছিলেন ভিন্ন নামে। আবার বাংলাদেশের জন্য আইসিসি টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ অর্জনের গল্পেও মিশে আছে এই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি।
পাকিস্তানের জন্য এই আসর ক্রিকেটের জগতে নতুন করে ফিরে আসা। ১৯৯৬ সালের পর কোনো আইসিসি আসর ফিরছে লাহোর-করাচি আর রাওয়ালপিন্ডির ঐতিহ্যবাহী স্টেডিয়ামে। অথচ, এই আসরটাকেই আইসিসি কখনো বন্ধ করতে চেয়েছে, কখনো নাম বদলেছে। আবার কখনোবা বন্ধ থেকে ৮ বছরের জন্য।
করাচিতে পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ডের ম্যাচ দিয়ে পাকিস্তানে শুধু আইসিসি আসর না, বরং পুনর্জন্ম হবে খোদ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিরও। তবে ব্যাট বলের লড়াইয়ের আগে দেখে আসা যাক চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির টুকিটাকি অজানা অধ্যায়গুলো।
বিশ্বায়ন থেকে বাণিজ্যিকীকরণ
ক্রিকেটের এই বৈশ্বিক আসরের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৯৮ সালে। শুরুর দিকে এই টুর্নামেন্টে উদ্দেশ্য ছিল সহযোগী দেশগুলোতে ক্রিকেট উন্মাদনা ছড়িয়ে দেয়া। যে কারণে প্রথম আসরেই বেছে নেয়া হয়েছিল বাংলাদেশকে। সেই আসরটা অবশ্য পুরোপুরি নিজের করে নিয়েছিলেন জ্যাক ক্যালিস। আসরে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক এবং উইকেটশিকারী ছিলেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকাও নিজেদের একমাত্র (এখন পর্যন্ত) আইসিসি শিরোপা বাগিয়ে নেয় সেই সূত্রে।
প্রথম আসরের আনুষ্ঠানিক নাম ছিল ‘উইলস ইন্টারন্যাশনাল কাপ।’ তবে ফরম্যাটের কারণে পরের আসরেই তা হয়ে যায় আইসিসি নকআউট ট্রফি। ‘মিনি বিশ্বকাপ’ হিসেবেও নামডাক ছিল। দ্বিতীয় আসর হয় কেনিয়ায়। ২০০০ সালে। এরপরেই ব্যাপক জনপ্রিয়তার কারণে বিশ্বায়ন থেকে বাণিজ্যে পরিণত হয় এই আয়োজন।
তৃতীয় আসর থেকেই এটির নাম হয়ে যায় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। নকআউট ফরম্যাটও বদলে যায়। আয়োজক হিসেবে বেছে নেওয়া হয় পূর্ণ সদস্য দেশগুলোকে।
পরিবর্তন ও পালাবদল
নাম বদল হলেও টুর্নামেন্ট আয়োজনের ধারায় ২০০৮ সাল পর্যন্ত হেরফের হয়নি। চারটি আসর হয়েছিল দুই বছরের বিরতিতে। ২০০৮ সালের আসর হওয়ার কথা ছিল পাকিস্তানে। কিন্তু নিরাপত্তাজনিত কারণে তা পিছিয়ে ২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত হয় দক্ষিণ আফ্রিকায়।
এরপরই দুই বছরের বদলে চার বছরের বিরতিতে টুর্নামেন্ট আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়। ২০১৩ ও ২০১৭ সালে পরপর দুই দফায় আয়োজক ছিল ইংল্যান্ড। ২০১৮ সালে সিদ্ধান্ত হয়, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি আর থাকবে না। কিন্তু ২০২১ সালেই আবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ২০২৫ থেকে নতুন করে শুরু হবে এই টুর্নামেন্ট।
তাদের প্রথম ও কখনো একমাত্র
ক্রিকেট ইতিহাসের অনেক রথী-মহারথীর জীবনেই একমাত্র আইসিসি স্বীকৃতি হয়ে আছে এই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপা। ভারতে সৌরভ গাঙ্গুলি, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্রায়ান লারা, চন্দরপল কিংবা সারওয়ান, দক্ষিণ আফ্রিকায় হ্যান্সি ক্রনিয়ে, জ্যাক ক্যালিস কিংবা জন্টি রোডসদের মতো কিংবদন্তিরা এক্ষেত্রে বড় নাম। ২০০০ সালে নিউজিল্যান্ডের হয়ে এই টুর্নামেন্ট জিতেছিলেন স্টিফেন ফ্লেমিং, ক্রিস ক্রেয়ান্সরা।
ভারতের হয়ে ২০১১ বিশ্বকাপ জেতার আগে শচীনের একমাত্র আইসিসি স্বীকৃত অর্জন ছিল ২০০২ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। রাহুল দ্রাবিড়, ভিভিএস লক্ষ্মণরা ক্যারিয়ার শেষ করেছেন এই ট্রফি নিয়েই। আবার বাবর আজমের একমাত্র প্রাপ্তিও ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি।
ডার্কহর্সরাই যেখানে শিরোপার দৌড়ে
৯৮ এর দক্ষিণ আফ্রিকা, ২০০০ সালের নিউজিল্যান্ড, ২০০৪ এর ওয়েস্ট ইন্ডিজ কিংবা ২০১৭ এর বাংলাদেশ। আসর শুরুর আগে এই দলগুলোকে সেমিফাইনালে দেখা যাবে, এমন বাজি ধরার পক্ষেও মানুষ খুঁজে পাওয়া ছিল দুষ্কর। প্রভিভা থাকলেও শিরোপা দৌড়ের জন্য বিবেচনায় ছিল না এসব স্কোয়াড। তবে বাংলাদেশ ছাড়া তিন দলই পরবর্তীতে হয়েছে চ্যাম্পিয়ন।
আইসিসির এই টুর্নামেন্ট বরাবরই ডার্ক হর্স বা বাজির কালো ঘোড়াদের উত্থানের মঞ্চ। ২০২৫ সালে সেটা হতে পারে বাংলাদেশ কিংবা আফগানিস্তান। অস্ট্রেলিয়ার একাধিক তারকার না থাকা, ভারতে জাসপ্রিত বুমরাহর অনুপস্থিতি হয়ত শিরোপার দ্বার খুলে দেবে নতুন কোনো দলের জন্য।
বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
ক্রিকেটের সবচেয়ে অনিয়মিত কিন্তু আকর্ষণীয় আসরের তকমা কি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির জন্য বরাদ্দ করা যায়? উত্তরটা পুরো লেখা শেষে হয়ত আপনিও হ্যাঁ বলতে পারেন। এ এমনই এক ট্রফি যা বহু কিংবদন্তির জন্যই আক্ষেপ মেটানোর কাজ করেছে। ভারতের ক্রিকেটে মহারাজা নাম পাওয়া সৌরভ গাঙ্গুলি কিংবা রেকর্ডের বরপুত্র ব্রায়ান লারার একমাত্র আইসিসি স্বীকৃত শিরোপা এই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি।
আবার দক্ষিণ আফ্রিকা বা সর্বকালের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার জ্যাক ক্যালিসের একমাত্র আইসিসি শিরোপা এটিই। ক্যালিস অবশ্য জিতেছিলেন ভিন্ন নামে। আবার বাংলাদেশের জন্য আইসিসি টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ অর্জনের গল্পেও মিশে আছে এই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি।
পাকিস্তানের জন্য এই আসর ক্রিকেটের জগতে নতুন করে ফিরে আসা। ১৯৯৬ সালের পর কোনো আইসিসি আসর ফিরছে লাহোর-করাচি আর রাওয়ালপিন্ডির ঐতিহ্যবাহী স্টেডিয়ামে। অথচ, এই আসরটাকেই আইসিসি কখনো বন্ধ করতে চেয়েছে, কখনো নাম বদলেছে। আবার কখনোবা বন্ধ থেকে ৮ বছরের জন্য।
করাচিতে পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ডের ম্যাচ দিয়ে পাকিস্তানে শুধু আইসিসি আসর না, বরং পুনর্জন্ম হবে খোদ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিরও। তবে ব্যাট বলের লড়াইয়ের আগে দেখে আসা যাক চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির টুকিটাকি অজানা অধ্যায়গুলো।
বিশ্বায়ন থেকে বাণিজ্যিকীকরণ
ক্রিকেটের এই বৈশ্বিক আসরের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৯৮ সালে। শুরুর দিকে এই টুর্নামেন্টে উদ্দেশ্য ছিল সহযোগী দেশগুলোতে ক্রিকেট উন্মাদনা ছড়িয়ে দেয়া। যে কারণে প্রথম আসরেই বেছে নেয়া হয়েছিল বাংলাদেশকে। সেই আসরটা অবশ্য পুরোপুরি নিজের করে নিয়েছিলেন জ্যাক ক্যালিস। আসরে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক এবং উইকেটশিকারী ছিলেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকাও নিজেদের একমাত্র (এখন পর্যন্ত) আইসিসি শিরোপা বাগিয়ে নেয় সেই সূত্রে।
প্রথম আসরের আনুষ্ঠানিক নাম ছিল ‘উইলস ইন্টারন্যাশনাল কাপ।’ তবে ফরম্যাটের কারণে পরের আসরেই তা হয়ে যায় আইসিসি নকআউট ট্রফি। ‘মিনি বিশ্বকাপ’ হিসেবেও নামডাক ছিল। দ্বিতীয় আসর হয় কেনিয়ায়। ২০০০ সালে। এরপরেই ব্যাপক জনপ্রিয়তার কারণে বিশ্বায়ন থেকে বাণিজ্যে পরিণত হয় এই আয়োজন।
তৃতীয় আসর থেকেই এটির নাম হয়ে যায় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। নকআউট ফরম্যাটও বদলে যায়। আয়োজক হিসেবে বেছে নেওয়া হয় পূর্ণ সদস্য দেশগুলোকে।
পরিবর্তন ও পালাবদল
নাম বদল হলেও টুর্নামেন্ট আয়োজনের ধারায় ২০০৮ সাল পর্যন্ত হেরফের হয়নি। চারটি আসর হয়েছিল দুই বছরের বিরতিতে। ২০০৮ সালের আসর হওয়ার কথা ছিল পাকিস্তানে। কিন্তু নিরাপত্তাজনিত কারণে তা পিছিয়ে ২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত হয় দক্ষিণ আফ্রিকায়।
এরপরই দুই বছরের বদলে চার বছরের বিরতিতে টুর্নামেন্ট আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়। ২০১৩ ও ২০১৭ সালে পরপর দুই দফায় আয়োজক ছিল ইংল্যান্ড। ২০১৮ সালে সিদ্ধান্ত হয়, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি আর থাকবে না। কিন্তু ২০২১ সালেই আবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ২০২৫ থেকে নতুন করে শুরু হবে এই টুর্নামেন্ট।
তাদের প্রথম ও কখনো একমাত্র
ক্রিকেট ইতিহাসের অনেক রথী-মহারথীর জীবনেই একমাত্র আইসিসি স্বীকৃতি হয়ে আছে এই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপা। ভারতে সৌরভ গাঙ্গুলি, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্রায়ান লারা, চন্দরপল কিংবা সারওয়ান, দক্ষিণ আফ্রিকায় হ্যান্সি ক্রনিয়ে, জ্যাক ক্যালিস কিংবা জন্টি রোডসদের মতো কিংবদন্তিরা এক্ষেত্রে বড় নাম। ২০০০ সালে নিউজিল্যান্ডের হয়ে এই টুর্নামেন্ট জিতেছিলেন স্টিফেন ফ্লেমিং, ক্রিস ক্রেয়ান্সরা।
ভারতের হয়ে ২০১১ বিশ্বকাপ জেতার আগে শচীনের একমাত্র আইসিসি স্বীকৃত অর্জন ছিল ২০০২ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। রাহুল দ্রাবিড়, ভিভিএস লক্ষ্মণরা ক্যারিয়ার শেষ করেছেন এই ট্রফি নিয়েই। আবার বাবর আজমের একমাত্র প্রাপ্তিও ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি।
ডার্কহর্সরাই যেখানে শিরোপার দৌড়ে
৯৮ এর দক্ষিণ আফ্রিকা, ২০০০ সালের নিউজিল্যান্ড, ২০০৪ এর ওয়েস্ট ইন্ডিজ কিংবা ২০১৭ এর বাংলাদেশ। আসর শুরুর আগে এই দলগুলোকে সেমিফাইনালে দেখা যাবে, এমন বাজি ধরার পক্ষেও মানুষ খুঁজে পাওয়া ছিল দুষ্কর। প্রভিভা থাকলেও শিরোপা দৌড়ের জন্য বিবেচনায় ছিল না এসব স্কোয়াড। তবে বাংলাদেশ ছাড়া তিন দলই পরবর্তীতে হয়েছে চ্যাম্পিয়ন।
আইসিসির এই টুর্নামেন্ট বরাবরই ডার্ক হর্স বা বাজির কালো ঘোড়াদের উত্থানের মঞ্চ। ২০২৫ সালে সেটা হতে পারে বাংলাদেশ কিংবা আফগানিস্তান। অস্ট্রেলিয়ার একাধিক তারকার না থাকা, ভারতে জাসপ্রিত বুমরাহর অনুপস্থিতি হয়ত শিরোপার দ্বার খুলে দেবে নতুন কোনো দলের জন্য।