সাম্প্রতিক সময়টায় খুব একটা স্বস্তিতে ছিলেন না ভারতের ব্যাটিং গ্রেট ভিরাট কোহলি। অস্ট্রেলিয়া সফরে প্রথম টেস্টে সেঞ্চুরির পর বাকিগুলোতে ভালো করতে পারেননি। আঙুল উঠেছে তার দিকে ও রোহিত শর্মাসহ সিনিয়র ক্রিকেটারদের দিকে। বোর্ডের নতুন নিয়মের কারণে এক যুগের বেশি সময় পর রাঞ্জি ট্রফিতে ফিরতে হয়েছে। ওয়ানডে ক্রিকেট তার নিজের সবচেয়ে শক্তির জায়গা। সেখানেও তার ব্যাটে ছিল গোধূলির নিস্তেজ রূপ। আগস্টে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের তিন ম্যাচেই ব্যর্থ হয়েছেন। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ঠিক আগে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচ খেলে প্রথমটিতে ব্যর্থ হয়েছেন। পরেরটিতে ফিফটি করলেও আসল কোহলিকে পাওয়া যাচ্ছিল না।
তরুণ অনেক ব্যাটসম্যান উঠে আসছেন। রিশাভ পান্ত একাদশের বাইরে বসে আছেন, জয়সওয়াল, তিলকা ভার্মার মতো আরও বেশ কজন প্রতিভা স্কোয়াডেই জায়গা পাননি। সবদিক থেকেই চাপ বাড়ছিল। কিন্তু কোহলি ঠিকই প্রমাণ করলেন, তার ফুরিয়ে যাওয়া এখনও অনেক দূরের পথ।
তার সেরা সময়ের মতো দাপুটে ও বিধ্বংসী ইনিংস এটি ছিল না। তবে এই ম্যাচে যা দরকার ছিল, সবটুকুই তিনি করেছেন। উইকেটের আচরণ বুঝে, ম্যাচের পরিস্থিতির দাবি মিটিয়ে একটু একটু করে দলকে নিয়ে গেছেন জয়ের কাছে। পাকিস্তানকে এক ঝটকায় উড়িয়ে দেননি তিনি, তবে প্রতিটি পদক্ষেপে পিষ্ট করেছেন প্রতিপক্ষের সম্ভাবনা।
ম্যাচের পর সেই সন্তুষ্টিই ফুটে উঠলো কোহলির কণ্ঠে।
‘এরকম গুরুত্বপূর্ণ একটি ম্যাচ, যেখানে সেমিতে জায়গা করে নেয়ার ব্যাপার ছিল, সেখানে এভাবে ব্যাট করতে পেরে ভালো লাগছে। রোহিতের বিদায়ের পর দলের প্রয়োজনে অবদান রাখতে পেরেও ভালো লাগছে। গত ম্যাচ থেকে যা কিছু বুঝতে পেরেছিলাম, আজকে তা কাজে লাগাতে হতো।’
‘আমার কাজটা ছিল স্পষ্ট, মাঝের ওভারগুলো নিয়ন্ত্রণ করা, স্পিনারদের বিপক্ষে ঝুঁকি না নেয়া ও পেসারদের বিপক্ষে দ্রুত রান তোলা। শেষ দিকে শ্রেয়াস রানের গতি বাড়িয়েছে, আমিও কিছু বাউন্ডারি পেয়েছি। এটা আমাকে সুযোগ করে দিয়েছে নিজের সহজাত ওয়ানডে ব্যাটিং করতে।’
ওয়ানডে বিশ্বকাপ হোক বা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, কিংবা এশিয়া কাপ, বড় উপলক্ষে বরাবরই চওড়া তার ব্যাট। তা সংস্করণ ওয়ানডে হোক বা টি-২০। তার ধার কমে না। এসব মঞ্চে পাকিস্তানকে পেলে তো কথাই নেই! ওয়ানডে বা টি-২০ যেটিই হোক, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, বিশ্বকাপ, এশিয়া কাপ মিলিয়ে বড় আসরে পাকিস্তানের বিপক্ষে ২৩ ম্যাচ খেলে চার সেঞ্চুরি ও সাত ফিফটি কোহলির। ১ হাজার ২২১ রান করেছেন ৮১.৪০ গড়ে। ম্যান অব দা ম্যাচ হয়েছেন ৮ বার। পাকিস্তানের যম বললে খুব একটা ভুল বলা হয় না!
অথচ বড় আসরের চাপের সঙ্গে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দলের সঙ্গে খেলার প্রবল চাপ থাকে এসব ম্যাচে সঙ্গী। কোহলি তা বরাবরই উড়িয়ে দেন তুড়ি বাজিয়ে। কীভাবে পারেন, নিজের সেই ভাবনা তিনি তুলে ধরলেন।
‘এত বছর ধরে খেলে, নিজের ব্যাটিংটা সম্পর্কে ভালো বোঝাপড়া আমার আছে। ব্যাপারটি হলো, বাইরের হট্টগোল দূরে রাখা, নিজের মতো থাকা এবং নিজের প্রাণশক্তি ও ভাবনাগুলোর যতœ নেয়া। প্রত্যাশার ভার চেপে বসা খুব স্বাভাবিক। আমার কাজ হলো বর্তমানে থাকা ও দলের জন্য কাজটি করা। নিজের প্রতি আমার মূলবার্তা হলো প্রতিটি বলে শতভাগ দেয়া। এরপর স্রষ্টা পুরস্কৃত করবেন।’
টানা দুই জয়ে সেমিফাইনাল অনেকটাই নিশ্চিত করেছে ভারত। পরের ম্যাচের আগে তারা বিরতি পাচ্ছে ছয় দিনের। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তাদের লড়াই আগামী রোববার।
এই বিরতি নিয়ে বেশ এক চোট মজাও করলেন তিনি ম্যাচ শেষে। ‘সত্যি বলতে, এই ৩৬ বছর বয়সে এটা (লম্বা বিরতি) বেশ ভালোই লাগে। যাদের বয়স ২৩-২৪ , তাদের কথা জানি না! এই ধরনের ম্যাচ অনেক কিছুই শুষে নেয়। কয়েকদিনের জন্য তাই দূরে থাকা দারুণ ব্যাপার।’
এই প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির কোনো ম্যাচে শতরান করলেন কোহলি। ২০১৩ ও ২০১৭ সালে এই প্রতিযোগিতায় খেললেও শতরান করতে পারেননি। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে এই ইনিংসের আগে মোট ৫৫১ রান ছিল তার। পাঁচটি অর্ধশতরান করেছিলেন। এই ইনিংসের পর সেই রানের সংখ্যা দাঁড়ালো ৬৫১।
রেকর্ড গড়ে ১৪ হাজার রান ক্লাবে কোহলি
বিশ্বের তৃতীয় ও দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে ওয়ানডে ক্রিকেটে ১৪ হাজার রান ক্লাবের সদস্য হলেন ভিরাট কোহলি। তার আগে এই তালিকায় নাম লিখিয়েছেন ভারতের শচীন টেন্ডুলকার ও শ্রীলঙ্কার কুমার সাঙ্গাকারা।
চলমান চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পঞ্চম ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে আজ অপরাজিত ১০০ রানের ইনিংস খেলার পথে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ১৪ হাজার রান পূর্ণ করেন কোহলি।
২৯৯ ম্যাচের ২৮৭ ইনিংসে ওয়ানডেতে ১৪ হাজার রান পূর্ণ করলেন কোহলি।
টেন্ডুলকার ও সাঙ্গাকারার ক্লাবে নাম লেখাতে গিয়ে বিশ্ব রেকর্ডও গড়েছেন কোহলি। ওয়ানডেতে দ্রুত ১৪ হাজার রানের মালিক হন তিনি। ২৯৯ ম্যাচের ২৮৭ ইনিংসে ওয়ানডেতে কোহলির রান এখন ১৪০৮৫ রান। ৩৫৯ ম্যাচের ৩৫০তম ইনিংসে ১৪ হাজার পূর্ণ করার রেকর্ড এতদিন দখলে ছিল টেন্ডুলকারের (২০০৬ সালে পেশোয়ারে)।
২০১৫ সালে সিডনিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে বিশ্বের দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে ১৪ হাজার রান করেছিলেন সাঙ্গাকারা। এজন্য ৪০২ ম্যাচের ৩৭৮ ইনিংসে ১৪ হাজার রান করেন সাঙ্গা।
সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
সাম্প্রতিক সময়টায় খুব একটা স্বস্তিতে ছিলেন না ভারতের ব্যাটিং গ্রেট ভিরাট কোহলি। অস্ট্রেলিয়া সফরে প্রথম টেস্টে সেঞ্চুরির পর বাকিগুলোতে ভালো করতে পারেননি। আঙুল উঠেছে তার দিকে ও রোহিত শর্মাসহ সিনিয়র ক্রিকেটারদের দিকে। বোর্ডের নতুন নিয়মের কারণে এক যুগের বেশি সময় পর রাঞ্জি ট্রফিতে ফিরতে হয়েছে। ওয়ানডে ক্রিকেট তার নিজের সবচেয়ে শক্তির জায়গা। সেখানেও তার ব্যাটে ছিল গোধূলির নিস্তেজ রূপ। আগস্টে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের তিন ম্যাচেই ব্যর্থ হয়েছেন। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ঠিক আগে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচ খেলে প্রথমটিতে ব্যর্থ হয়েছেন। পরেরটিতে ফিফটি করলেও আসল কোহলিকে পাওয়া যাচ্ছিল না।
তরুণ অনেক ব্যাটসম্যান উঠে আসছেন। রিশাভ পান্ত একাদশের বাইরে বসে আছেন, জয়সওয়াল, তিলকা ভার্মার মতো আরও বেশ কজন প্রতিভা স্কোয়াডেই জায়গা পাননি। সবদিক থেকেই চাপ বাড়ছিল। কিন্তু কোহলি ঠিকই প্রমাণ করলেন, তার ফুরিয়ে যাওয়া এখনও অনেক দূরের পথ।
তার সেরা সময়ের মতো দাপুটে ও বিধ্বংসী ইনিংস এটি ছিল না। তবে এই ম্যাচে যা দরকার ছিল, সবটুকুই তিনি করেছেন। উইকেটের আচরণ বুঝে, ম্যাচের পরিস্থিতির দাবি মিটিয়ে একটু একটু করে দলকে নিয়ে গেছেন জয়ের কাছে। পাকিস্তানকে এক ঝটকায় উড়িয়ে দেননি তিনি, তবে প্রতিটি পদক্ষেপে পিষ্ট করেছেন প্রতিপক্ষের সম্ভাবনা।
ম্যাচের পর সেই সন্তুষ্টিই ফুটে উঠলো কোহলির কণ্ঠে।
‘এরকম গুরুত্বপূর্ণ একটি ম্যাচ, যেখানে সেমিতে জায়গা করে নেয়ার ব্যাপার ছিল, সেখানে এভাবে ব্যাট করতে পেরে ভালো লাগছে। রোহিতের বিদায়ের পর দলের প্রয়োজনে অবদান রাখতে পেরেও ভালো লাগছে। গত ম্যাচ থেকে যা কিছু বুঝতে পেরেছিলাম, আজকে তা কাজে লাগাতে হতো।’
‘আমার কাজটা ছিল স্পষ্ট, মাঝের ওভারগুলো নিয়ন্ত্রণ করা, স্পিনারদের বিপক্ষে ঝুঁকি না নেয়া ও পেসারদের বিপক্ষে দ্রুত রান তোলা। শেষ দিকে শ্রেয়াস রানের গতি বাড়িয়েছে, আমিও কিছু বাউন্ডারি পেয়েছি। এটা আমাকে সুযোগ করে দিয়েছে নিজের সহজাত ওয়ানডে ব্যাটিং করতে।’
ওয়ানডে বিশ্বকাপ হোক বা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, কিংবা এশিয়া কাপ, বড় উপলক্ষে বরাবরই চওড়া তার ব্যাট। তা সংস্করণ ওয়ানডে হোক বা টি-২০। তার ধার কমে না। এসব মঞ্চে পাকিস্তানকে পেলে তো কথাই নেই! ওয়ানডে বা টি-২০ যেটিই হোক, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, বিশ্বকাপ, এশিয়া কাপ মিলিয়ে বড় আসরে পাকিস্তানের বিপক্ষে ২৩ ম্যাচ খেলে চার সেঞ্চুরি ও সাত ফিফটি কোহলির। ১ হাজার ২২১ রান করেছেন ৮১.৪০ গড়ে। ম্যান অব দা ম্যাচ হয়েছেন ৮ বার। পাকিস্তানের যম বললে খুব একটা ভুল বলা হয় না!
অথচ বড় আসরের চাপের সঙ্গে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দলের সঙ্গে খেলার প্রবল চাপ থাকে এসব ম্যাচে সঙ্গী। কোহলি তা বরাবরই উড়িয়ে দেন তুড়ি বাজিয়ে। কীভাবে পারেন, নিজের সেই ভাবনা তিনি তুলে ধরলেন।
‘এত বছর ধরে খেলে, নিজের ব্যাটিংটা সম্পর্কে ভালো বোঝাপড়া আমার আছে। ব্যাপারটি হলো, বাইরের হট্টগোল দূরে রাখা, নিজের মতো থাকা এবং নিজের প্রাণশক্তি ও ভাবনাগুলোর যতœ নেয়া। প্রত্যাশার ভার চেপে বসা খুব স্বাভাবিক। আমার কাজ হলো বর্তমানে থাকা ও দলের জন্য কাজটি করা। নিজের প্রতি আমার মূলবার্তা হলো প্রতিটি বলে শতভাগ দেয়া। এরপর স্রষ্টা পুরস্কৃত করবেন।’
টানা দুই জয়ে সেমিফাইনাল অনেকটাই নিশ্চিত করেছে ভারত। পরের ম্যাচের আগে তারা বিরতি পাচ্ছে ছয় দিনের। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তাদের লড়াই আগামী রোববার।
এই বিরতি নিয়ে বেশ এক চোট মজাও করলেন তিনি ম্যাচ শেষে। ‘সত্যি বলতে, এই ৩৬ বছর বয়সে এটা (লম্বা বিরতি) বেশ ভালোই লাগে। যাদের বয়স ২৩-২৪ , তাদের কথা জানি না! এই ধরনের ম্যাচ অনেক কিছুই শুষে নেয়। কয়েকদিনের জন্য তাই দূরে থাকা দারুণ ব্যাপার।’
এই প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির কোনো ম্যাচে শতরান করলেন কোহলি। ২০১৩ ও ২০১৭ সালে এই প্রতিযোগিতায় খেললেও শতরান করতে পারেননি। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে এই ইনিংসের আগে মোট ৫৫১ রান ছিল তার। পাঁচটি অর্ধশতরান করেছিলেন। এই ইনিংসের পর সেই রানের সংখ্যা দাঁড়ালো ৬৫১।
রেকর্ড গড়ে ১৪ হাজার রান ক্লাবে কোহলি
বিশ্বের তৃতীয় ও দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে ওয়ানডে ক্রিকেটে ১৪ হাজার রান ক্লাবের সদস্য হলেন ভিরাট কোহলি। তার আগে এই তালিকায় নাম লিখিয়েছেন ভারতের শচীন টেন্ডুলকার ও শ্রীলঙ্কার কুমার সাঙ্গাকারা।
চলমান চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পঞ্চম ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে আজ অপরাজিত ১০০ রানের ইনিংস খেলার পথে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ১৪ হাজার রান পূর্ণ করেন কোহলি।
২৯৯ ম্যাচের ২৮৭ ইনিংসে ওয়ানডেতে ১৪ হাজার রান পূর্ণ করলেন কোহলি।
টেন্ডুলকার ও সাঙ্গাকারার ক্লাবে নাম লেখাতে গিয়ে বিশ্ব রেকর্ডও গড়েছেন কোহলি। ওয়ানডেতে দ্রুত ১৪ হাজার রানের মালিক হন তিনি। ২৯৯ ম্যাচের ২৮৭ ইনিংসে ওয়ানডেতে কোহলির রান এখন ১৪০৮৫ রান। ৩৫৯ ম্যাচের ৩৫০তম ইনিংসে ১৪ হাজার পূর্ণ করার রেকর্ড এতদিন দখলে ছিল টেন্ডুলকারের (২০০৬ সালে পেশোয়ারে)।
২০১৫ সালে সিডনিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে বিশ্বের দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে ১৪ হাজার রান করেছিলেন সাঙ্গাকারা। এজন্য ৪০২ ম্যাচের ৩৭৮ ইনিংসে ১৪ হাজার রান করেন সাঙ্গা।