alt

সম্পাদকীয়

‘জুলাই ঘোষণাপত্র’: কিছু জিজ্ঞাসা

: বৃহস্পতিবার, ০৭ আগস্ট ২০২৫

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ করেছেন। এই ঘোষণাপত্রের দাবিতে দেশে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল, নৈরাজ্যের আশঙ্কাও তৈরি হয়েছিল। অবশেষে ঘোষণাপত্র পাঠ করা হলো।

২৮ দফার ঘোষণাপত্রে ২০২৪ সালের ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানকে রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়ার অঙ্গীকার করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, “পরবর্তী নির্বাচনে নির্বাচিত সরকারের সংস্কারকৃত সংবিধানের তফসিলে এ ঘোষণাপত্র সন্নিবেশিত থাকবে।”

কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, এই ঘোষণাপত্রে যে ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে, তা কতটা নির্মোহ ও পক্ষপাতহীন? ইতোমধ্যে এই অভিযোগ উঠেছে যে, ঘোষণাপত্রে ইতিহাসের যে বয়ান দেওয়া হয়েছে, তা খ-িত ও একপেশে। ঘোষণাপত্রে বাংলাদেশের ৫৪ বছরের সব রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক সমস্যার জন্য কেবল একটি দল এবং ১৯৭২ সালের সংবিধান প্রণয়নের প্রক্রিয়াকে দায়ী করা হয়েছে। এটি একটি খ-িত দৃষ্টিভঙ্গি। কারণ ইতিহাস কখনোই একমাত্রিক হয় না।

ঘোষণাপত্রে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের কথা তুলে ধরা হয়েছে। এটা একটা ভালো দিক। বলা হয়েছে, জাতীয় মুক্তির লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। দীর্ঘ ২৩ বছর পাকিস্তানের স্বৈরশাসকদের বঞ্চনা ও শোষণের কথা এসেছে। নাগরিকদের উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আকাক্সক্ষার কথা বলা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শিক ভিত্তির কথা উচ্চারিত হয়েছে। এসব ঠিক আছে। কিন্তু এরপর ইতিহাসের যে বিবরণ দেওয়া হয়েছে সেটা কি সম্পূর্ণ? নাকি বেছে বেছে ইতিহাসের দু-একটি অংশকে তুলে ধরা হয়েছে?

ঘোষণাপত্রের বয়ান অনুযায়ী, বাংলাদেশের সব সমস্যার মূলে রয়েছে বাহাত্তরের সংবিধান এবং একটি রাজনৈতিক দল। মুক্তিযুদ্ধের জনআকাক্সক্ষা পূরণে ব্যর্থতার জন্য সংবিধান প্রনয়ন পদ্ধতি, এর কাঠামোগত দুর্বলতা ও অপপ্রয়োগকে দায়ী করা হয়েছে। এটা কি সর্বাংশে সত্য?

গত তিনটি নির্বাচন নিয়ে অনেক প্রশ্ন ও বিতর্ক রয়েছে। ঘোষণাপত্রে সেটা উঠে এসেছে। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, ২০০৮ সালের নির্বাচনকেও প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে ঘোষণাপত্রে। অথচ সেই নির্বাচনকে অনেকেই, যাদের অনেকে অন্তর্বর্তী সরকারের অংশীদার, বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম সেরা নির্বাচন বলে উল্লেখ করেছেন। ২০০৮ সালের নির্বাচন অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন এমন কেউ কেউ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সদস্য।

দেশে অতীতে ইতিহাসের বিকৃতি বা ইতিহাসের খ-িত বয়ানের অভিযোগ উঠেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে একই বিতর্ক দেখা দেবে সেটা কারও কাম্য ছিল না।

আরেকটি গুরুতর উদ্বেগের জায়গা হলো, ঘোষণাপত্র প্রণয়নের সময় দেশের সব রাজনৈতিক দলকে যথাযথভাবে সম্পৃক্ত করা হয়নি। কোনো কোনো দল এই প্রক্রিয়া থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নিয়েছে। বামদলগুলো অভিযোগ করেছে, তাদেরকে ঘোষণাপত্র প্রণয়নের প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করা হয়নি। এ কারণে অনেক দল ঘোষণাপত্র পাঠ অনুষ্ঠানে যোগ দেয়নি। এই বিভাজনমূলক প্রক্রিয়া অন্তর্বর্তী সরকারের অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য ও বাস্তবিক ‘নিরপেক্ষতাকে’ প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। তবে ইতিহাসের খ-িত বয়ান সংবলিত জুলাই ঘোষণাপত্রকে সংবিধানের তফসিলে যুক্ত করা হলে ভবিষ্যতে আরও বড় রাজনৈতিক ও আদর্শিক সংকট সৃষ্টি হবে কিনা সেই প্রশ্ন উঠেছে।

‘জুলাই ঘোষণার’ মাধ্যমে যদি জাতি সত্যিকার অর্থেই এক নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করতে চায়, তবে ইতিহাসকে নির্মোহভাবে মূল্যায়ন করতে হবে।

নির্বাচনের ঘোষণায় স্বস্তি, তবে আছে অনেক চ্যালেঞ্জ

বয়স্ক ভাতা পেতে আর কত অপেক্ষা

ডিএনডি এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যকর ব্যবস্থা নিন

গণঅভ্যুত্থানের এক বছর: প্রত্যাশায় কী প্রাপ্তি

অবৈধ মিনি পেট্রোল পাম্পের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

অজগর হত্যা : বন্যপ্রাণীর সুরক্ষায় চাই জনসচেতনতা

লেভেল ক্রসিংয়ে প্রাণহানি : অব্যবস্থাপনার দুর্ভাগ্যজনক চিত্র

ঠাকুরগাঁওয়ে জলাতঙ্ক টিকার সংকট দূর করুন

পাহাড় কাটা রোধে কঠোর ব্যবস্থা নিন

বনমালীনগরে পাকা সড়কের জন্য আর কত অপেক্ষা

সার বিতরণ ব্যবস্থায় অনিয়ম বন্ধে কঠোর নজরদারি প্রয়োজন

গাবতলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংকট দূর করুন

গ্যাস অপচয় ও অব্যবস্থাপনার দায় এড়ানোর সুযোগ নেই

সুন্দরবনের বাঘ : সাফল্যের পরিসংখ্যান, চ্যালেঞ্জের বাস্তবতা

ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে হামলা : প্রশ্নবিদ্ধ প্রশাসনের ভূমিকা

পীরগঞ্জে গবাদিপশুর চিকিৎসা নিয়ে কৃষকদের দুর্ভোগ

তিস্তায় অবৈধ পাথর উত্তোলন বন্ধে কঠোর হোন

রায়গঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দিন

অবাধ গাছ কাটা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিন

দাদনের ফাঁদে আটকে পড়া জেলে সমাজ

জলাবদ্ধতা মোকাবিলায় টেকসই ব্যবস্থা নিন

প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা নিয়ে বৈষম্যের অভিযোগ আমলে নিন

অব্যবস্থাপনার অনাকাঙ্ক্ষিত দৃষ্টান্ত হয়ে রইল মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি

একটি ট্র্যাজেডি, কিছু প্রশ্ন

আসামী ‘অজ্ঞাতনামা’, হয়রানি সাধারণ মানুষের

পাট চাষিদের বিকল্প পচন প্রযুক্তি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করুন

পুরোনো যানবাহন অপসারণে কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন

খাল দখল-ভরাট বন্ধে কঠোর হোন

কয়রায় টেকসই বাঁধ নির্মাণে বিলম্ব কেন

ফেনীর বন্যা : টেকসই সমাধান জরুরি

স্বাস্থ্য খাতে অব্যবস্থাপনার প্রতিচ্ছবি দুমকি হাসপাতাল

অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে প্রয়োজন কঠোর প্রশাসনিক উদ্যোগ

আইনের শাসন নিশ্চিত না হলে সহিংসতার পুনরাবৃত্তি থামবে না

এসএসসি পরীক্ষার ফল : বাস্তবতা মেনে, ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে চলতে হবে

বন্যা : কেন নেই টেকসই সমাধান?

জলাবদ্ধ নগরজীবন

tab

সম্পাদকীয়

‘জুলাই ঘোষণাপত্র’: কিছু জিজ্ঞাসা

বৃহস্পতিবার, ০৭ আগস্ট ২০২৫

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ করেছেন। এই ঘোষণাপত্রের দাবিতে দেশে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল, নৈরাজ্যের আশঙ্কাও তৈরি হয়েছিল। অবশেষে ঘোষণাপত্র পাঠ করা হলো।

২৮ দফার ঘোষণাপত্রে ২০২৪ সালের ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানকে রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়ার অঙ্গীকার করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, “পরবর্তী নির্বাচনে নির্বাচিত সরকারের সংস্কারকৃত সংবিধানের তফসিলে এ ঘোষণাপত্র সন্নিবেশিত থাকবে।”

কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, এই ঘোষণাপত্রে যে ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে, তা কতটা নির্মোহ ও পক্ষপাতহীন? ইতোমধ্যে এই অভিযোগ উঠেছে যে, ঘোষণাপত্রে ইতিহাসের যে বয়ান দেওয়া হয়েছে, তা খ-িত ও একপেশে। ঘোষণাপত্রে বাংলাদেশের ৫৪ বছরের সব রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক সমস্যার জন্য কেবল একটি দল এবং ১৯৭২ সালের সংবিধান প্রণয়নের প্রক্রিয়াকে দায়ী করা হয়েছে। এটি একটি খ-িত দৃষ্টিভঙ্গি। কারণ ইতিহাস কখনোই একমাত্রিক হয় না।

ঘোষণাপত্রে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের কথা তুলে ধরা হয়েছে। এটা একটা ভালো দিক। বলা হয়েছে, জাতীয় মুক্তির লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। দীর্ঘ ২৩ বছর পাকিস্তানের স্বৈরশাসকদের বঞ্চনা ও শোষণের কথা এসেছে। নাগরিকদের উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আকাক্সক্ষার কথা বলা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শিক ভিত্তির কথা উচ্চারিত হয়েছে। এসব ঠিক আছে। কিন্তু এরপর ইতিহাসের যে বিবরণ দেওয়া হয়েছে সেটা কি সম্পূর্ণ? নাকি বেছে বেছে ইতিহাসের দু-একটি অংশকে তুলে ধরা হয়েছে?

ঘোষণাপত্রের বয়ান অনুযায়ী, বাংলাদেশের সব সমস্যার মূলে রয়েছে বাহাত্তরের সংবিধান এবং একটি রাজনৈতিক দল। মুক্তিযুদ্ধের জনআকাক্সক্ষা পূরণে ব্যর্থতার জন্য সংবিধান প্রনয়ন পদ্ধতি, এর কাঠামোগত দুর্বলতা ও অপপ্রয়োগকে দায়ী করা হয়েছে। এটা কি সর্বাংশে সত্য?

গত তিনটি নির্বাচন নিয়ে অনেক প্রশ্ন ও বিতর্ক রয়েছে। ঘোষণাপত্রে সেটা উঠে এসেছে। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, ২০০৮ সালের নির্বাচনকেও প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে ঘোষণাপত্রে। অথচ সেই নির্বাচনকে অনেকেই, যাদের অনেকে অন্তর্বর্তী সরকারের অংশীদার, বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম সেরা নির্বাচন বলে উল্লেখ করেছেন। ২০০৮ সালের নির্বাচন অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন এমন কেউ কেউ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সদস্য।

দেশে অতীতে ইতিহাসের বিকৃতি বা ইতিহাসের খ-িত বয়ানের অভিযোগ উঠেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে একই বিতর্ক দেখা দেবে সেটা কারও কাম্য ছিল না।

আরেকটি গুরুতর উদ্বেগের জায়গা হলো, ঘোষণাপত্র প্রণয়নের সময় দেশের সব রাজনৈতিক দলকে যথাযথভাবে সম্পৃক্ত করা হয়নি। কোনো কোনো দল এই প্রক্রিয়া থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নিয়েছে। বামদলগুলো অভিযোগ করেছে, তাদেরকে ঘোষণাপত্র প্রণয়নের প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করা হয়নি। এ কারণে অনেক দল ঘোষণাপত্র পাঠ অনুষ্ঠানে যোগ দেয়নি। এই বিভাজনমূলক প্রক্রিয়া অন্তর্বর্তী সরকারের অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য ও বাস্তবিক ‘নিরপেক্ষতাকে’ প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। তবে ইতিহাসের খ-িত বয়ান সংবলিত জুলাই ঘোষণাপত্রকে সংবিধানের তফসিলে যুক্ত করা হলে ভবিষ্যতে আরও বড় রাজনৈতিক ও আদর্শিক সংকট সৃষ্টি হবে কিনা সেই প্রশ্ন উঠেছে।

‘জুলাই ঘোষণার’ মাধ্যমে যদি জাতি সত্যিকার অর্থেই এক নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করতে চায়, তবে ইতিহাসকে নির্মোহভাবে মূল্যায়ন করতে হবে।

back to top