alt

উপ-সম্পাদকীয়

বায়ুদূষণের ক্ষতি

প্রীতি রাহা

: বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩
image

দেশে বায়ুদূষণের মূল উৎস ইটভাটা

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউট ‘এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্স-২০২৩’ শীর্ষক এক বৈশ্বিক গবেষণা প্রতিবেদনে বায়ুদূষণের ভয়ঙ্কর তথ্য উপস্থাপন করেছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে- বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর দেশে পরিণত হয়েছে। এই বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু কমে যাচ্ছে প্রায় ৬ দশমিক ৮ বছর অর্থাৎ প্রায় ৭ বছর। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এলাকাভেদে এই পরিস্থিতি আরও বেশি ভয়াবহ। বিশ্বের সর্বত্রই বায়ুদূষণের ফলে মানুষের আয়ু কমে যাচ্ছে। তবে গবেষণায় উল্লেখ করা আছে যে, পৃথিবীর ছয়টি দেশে সবচেয়ে বেশি দূষিত বায়ু উৎপন্ন হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, চীন, নাইজেরিয়া ও ইন্দোনেশিয়া। প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে- আমাদের দেশে বায়ুদূষণের মূল উৎস ইটভাটা ও যানবাহন। বাংলাদেশের অতি ক্ষুদ্র বস্তুকণার ৫৮ শতাংশ আসে ইটভাটা থেকে। চমকে যাওয়ার মতো বিষয়, ২০১০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে দেশে যানবাহনের সংখ্যা বেড়েছে তিনগুণ। নির্মাণ কাজের জন্য সৃষ্ট ধুলোবালি, ফসলের খড় পোড়ানো এবং শিল্প-কারখানার ধোঁয়া বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ। উল্লেখ্য, এই ধোঁয়া দক্ষিণ এশিয়ার এক দেশ থেকে অন্য দেশেও প্রবাহিত হচ্ছে। বায়ুদূষণের প্রভাব বেশ দীর্ঘমেয়াদি। বায়ুদূষণে বিদ্যমান অতি ক্ষুদ্র কণা এতটাই ক্ষুদ্র যে তা চোখে দেখা যায় না। তাই অতি সহজেই এটি আমাদের চোখ, নাক ও মুখ দিয়ে সরাসরি আমাদের রক্তের সঙ্গে মিশে যায়। এতে ফুসফুস, হার্ট, কিডনি ও লিভার আক্রান্ত হয়ে থাকে। বায়ুদূষণ যে কোন বয়সী মানুষের জন্য ক্ষতিকর। গর্ভবতী নারী, শিশু, অসুস্থ ব্যক্তি এবং প্রবীণদের জন্য এই বায়ুদূষণ মারাত্মক ক্ষতি করে থাকে। বায়ুদূষণের কারণে মানুষের প্রজনন স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। চিকিৎসকদের মতে, প্রজনন স্বাস্থ্যকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে এই বায়ুদূষণ। এর কারণে নারীদের ডিম্বাণু অতিরিক্ত পরিমাণে কমে যাচ্ছে। অপরদিকে, পুরুষের শুক্রাণু তৈরিতেও ব্যাঘাত ঘটছে। এতে করে শুক্রাণুর মান দিন দিন নিচের দিকে যাচ্ছে। উল্লেখ্য, শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশ, জন্মগত ত্রুটি, গর্ভপাত এগুলোতে বায়ুদূষণ বড় ধরনের প্রভাব ফেলে বলে জানা গেছে। মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে এই বায়ুদূষণ। বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণায় উঠে এসেছে- বাংলাদেশের যেসব স্থানে বায়ুদূষণ বেশি সেই এলাকাগুলোর ১৪ শতাংশ বাসিন্দা বিষণ্নতায় আক্রান্ত; যা কম দূষণ আক্রান্ত এলাকার চেয়ে বেশি। শুনলে আশ্চর্য হতে হয় যে, বায়ুদূষণের কারণে মানুষের বুদ্ধিও লোপ পাচ্ছে। এক গবেষণায় উঠে এসেছে যে, তীব্র বায়ুদূষণের সঙ্গে মানুষের বুদ্ধি কমে যাওয়ার সম্পর্ক থাকতে পারে। গবেষণাটি চালিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র ও চীন যৌথভাবে এবং গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছিল চীনে। বর্তমানে বায়ুদূষণের সঙ্গে মানবদেহে ডায়াবেটিস রোগের সম্পর্কও দেখতে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। চিকিৎসকদের মতে, কার্বন-ডাই-অক্সাইড, কার্বন-মনো-অক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড, ক্লোরোফ্লোরো কার্বন, বিভিন্ন যানবাহন থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া বাতাসের সঙ্গে সহজেই মিশে যাচ্ছে। এই বিষাক্ত ও ক্ষতিকর পদার্থগুলো শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে ফুসফুসে যাচ্ছে। এতে করে ক্ষতগ্রস্ত হচ্ছে ফুসফুস। আবার রক্তের সঙ্গে মিশে চলে যাচ্ছে হৃৎপিন্ডে। দীর্ঘদিন ধরে যদি এসব ক্ষতিকর পদার্থ মানবদেহে প্রবেশ করে তবে ফুসফুস, লিভার, কিডনি ও হৃৎপিন্ডে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়ে থাকে। পরিণামে দেখা যায়, বিভিন্ন অঙ্গ বিকলাঙ্গ হয়ে পড়ে এবং শেষ পরিণতি হিসেবে বায়ুদূষণের শিকার মানুষটিকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে হয়। বায়ুদূষণের ফলে আমাদের দেহের যথেষ্ট ক্ষতি হচ্ছে। আমরা আগেই জেনেছি যে, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউট (এপিক) গবেষণায় উঠে এসেছে যে, বায়ুদূষণের ফলে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু প্রায় ৭ বছর কমছে; যা খুবই উদ্বেগজনক। বায়ুদূষণ কমানো না গেলে এর ভয়াবহ মাশুল গুণতে হবে আমাদের সবাইকে। এখন প্রশ্ন আসতে পারে, বায়ুদূষণ বন্ধ করা যেতে পারে কিভাবে? সুস্থভাবে বাঁচতে মানুষের জন্য এখন প্রয়োজন পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ অক্সিজেনের। এই অক্সিজেনের জোগান দিতে পারে গাছপালা। অনেকে আছেন যারা নির্বিচারে গাছ কাটেন কিন্তু গাছ লাগান না; এটি অনুচিত। একটি গাছ কাটলে সেই স্থানে দুটি গাছ লাগাতে হয়। কিন্তু এই নিয়মটি অনেকেই মানেন না। নিজের আঙিনার খালি জায়গায় গাছ লাগান। ফ্ল্যাট-বাড়িতে থাকলে নিজের বারান্দায় গাছ লাগান; ছাদবাগান করুন। ধুলোবালি থেকে দূরে থাকতে মাস্ক ব্যবহার করুন। করোনা প্রতিরোধেও মাস্ক ব্যবহার অত্যন্ত জরুরি। নিজের বাড়িঘর এবং আশপাশের জায়গা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। রাস্তাঘাটে মাঝে মাঝে পানি ছিটাতে হবে, যাতে করে ধুলোবালি না ওড়ে। কলকারখানা ও ইটভাটা শহর থেকে দূরে স্থাপন করতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে যদি ধোঁয়া কমানো সম্ভব হয় তবে সেই দিকেও সরকারকে নজর দিতে হবে। ফসলের খড়, গাছের পাতা, বর্জ্যদ্রব্য পোড়ানো বন্ধ করতে হবে। এই ধোঁয়াও বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ। রাস্তায় ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল বন্ধ করতে হবে। এর কালো ধোঁয়া ব্যাপক পরিমাণে বায়ুদূষণের সৃষ্টি করে। রাস্তায় ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা অত্যাধিক পরিমাণে থাকে। গণপরিবহন ব্যবস্থা উন্নত করার মাধ্যমে রাস্তায় দৈনিক বের হওয়া ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা কমাতে হবে। উল্লেখ্য, এখন থেকেই ব্যক্তিগত গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে লাগাম টানতে হবে সরকারকে। জনগণের সম্মিলিত প্রয়াসের মাধ্যমে বায়ুদূষণ প্রতিরোধ করা সম্ভব। সবাই সুস্থ থাকতে এবং সবাইকে সুস্থ রাখতে এই পদক্ষেপের কোন বিকল্প নেই।

[লেখক: প্রাবন্ধিক]

বিজয়ের মাস : কোণঠাসা হানাদার বাহিনী

অর্থনীতিকে টেকসই করতে কৃষিভিত্তিক শিল্পে জোর দিতে হবে

ভারতের পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন

এইডস ও মাদকাসক্তি পরিস্থিতি : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ

ব্যাংকিং খাতে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রভাব

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রতি ভূমিদস্যুদের অত্যাচার কবে শেষ হবে

অপ্রিয় সত্য কথা

প্রসঙ্গ কৃষি ঋণ নীতিমালা

কপ-২৮ নিয়ে প্রত্যাশা

প্লাস্টিক রিসাইক্লিংয়ের সম্ভাবনা

টেকসই উন্নয়নে নিরাপদ সড়কের প্রয়োজনীয়তা

মৈমনসিংহ গীতিকার শতবর্ষ

প্রথম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম অ্যালামনাই

হারানো দিনের গাথা

প্রাথমিকে পঠন দক্ষতা অর্জনে সহায়ক কর্মকান্ড

গুরু রবিদাস: মানবতাবাদী সাধক

কীটনাশক ব্যবহারে সচেতন হতে হবে

মন দুলছে পেন্ডুলামের মতো

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

যাদবপুর-র‌্যাগিং এবং আমাদের সমাজ

বিনিয়োগের বিদ্যমান পরিবেশ ও মিশন ২০৪১

ছবি

অভিভাবক আহমদুল কবির

ছবি

কেন সহিংস হয়ে যাচ্ছে দেশের রাজনীতি

ছবি

অবরোধে কি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য পূরণ হবে

ছবি

দুবাই জলবায়ু সম্মেলন ও আমাদের প্রত্যাশা

কী হবে প্যালেস্টাইন এবং ইসরায়েলের?

প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সক্ষমতা বাড়াতে হবে

সুসম্পর্ক ও শান্তিতে সহাবস্থান

শিশুর জন্য চাই উন্নত ভবিষ্যৎ

ক্যাডাভেরিক অঙ্গসংযোজন

ডিজিটাল শিল্পযুগ

একাত্তরের গণহত্যার খন্ডচিত্র

নিরাপদ সড়ক এখনো অধরা

ছবি

ফ্রিল্যান্সিং পেশার উজ্জ্বল সম্ভাবনা

কংক্রিট : নির্মাণ শক্তিমত্তার যৌগ

একাত্তরের গণহত্যার খন্ডচিত্র

tab

উপ-সম্পাদকীয়

বায়ুদূষণের ক্ষতি

প্রীতি রাহা

image

দেশে বায়ুদূষণের মূল উৎস ইটভাটা

বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউট ‘এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্স-২০২৩’ শীর্ষক এক বৈশ্বিক গবেষণা প্রতিবেদনে বায়ুদূষণের ভয়ঙ্কর তথ্য উপস্থাপন করেছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে- বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর দেশে পরিণত হয়েছে। এই বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু কমে যাচ্ছে প্রায় ৬ দশমিক ৮ বছর অর্থাৎ প্রায় ৭ বছর। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এলাকাভেদে এই পরিস্থিতি আরও বেশি ভয়াবহ। বিশ্বের সর্বত্রই বায়ুদূষণের ফলে মানুষের আয়ু কমে যাচ্ছে। তবে গবেষণায় উল্লেখ করা আছে যে, পৃথিবীর ছয়টি দেশে সবচেয়ে বেশি দূষিত বায়ু উৎপন্ন হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, চীন, নাইজেরিয়া ও ইন্দোনেশিয়া। প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে- আমাদের দেশে বায়ুদূষণের মূল উৎস ইটভাটা ও যানবাহন। বাংলাদেশের অতি ক্ষুদ্র বস্তুকণার ৫৮ শতাংশ আসে ইটভাটা থেকে। চমকে যাওয়ার মতো বিষয়, ২০১০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে দেশে যানবাহনের সংখ্যা বেড়েছে তিনগুণ। নির্মাণ কাজের জন্য সৃষ্ট ধুলোবালি, ফসলের খড় পোড়ানো এবং শিল্প-কারখানার ধোঁয়া বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ। উল্লেখ্য, এই ধোঁয়া দক্ষিণ এশিয়ার এক দেশ থেকে অন্য দেশেও প্রবাহিত হচ্ছে। বায়ুদূষণের প্রভাব বেশ দীর্ঘমেয়াদি। বায়ুদূষণে বিদ্যমান অতি ক্ষুদ্র কণা এতটাই ক্ষুদ্র যে তা চোখে দেখা যায় না। তাই অতি সহজেই এটি আমাদের চোখ, নাক ও মুখ দিয়ে সরাসরি আমাদের রক্তের সঙ্গে মিশে যায়। এতে ফুসফুস, হার্ট, কিডনি ও লিভার আক্রান্ত হয়ে থাকে। বায়ুদূষণ যে কোন বয়সী মানুষের জন্য ক্ষতিকর। গর্ভবতী নারী, শিশু, অসুস্থ ব্যক্তি এবং প্রবীণদের জন্য এই বায়ুদূষণ মারাত্মক ক্ষতি করে থাকে। বায়ুদূষণের কারণে মানুষের প্রজনন স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। চিকিৎসকদের মতে, প্রজনন স্বাস্থ্যকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে এই বায়ুদূষণ। এর কারণে নারীদের ডিম্বাণু অতিরিক্ত পরিমাণে কমে যাচ্ছে। অপরদিকে, পুরুষের শুক্রাণু তৈরিতেও ব্যাঘাত ঘটছে। এতে করে শুক্রাণুর মান দিন দিন নিচের দিকে যাচ্ছে। উল্লেখ্য, শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশ, জন্মগত ত্রুটি, গর্ভপাত এগুলোতে বায়ুদূষণ বড় ধরনের প্রভাব ফেলে বলে জানা গেছে। মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে এই বায়ুদূষণ। বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণায় উঠে এসেছে- বাংলাদেশের যেসব স্থানে বায়ুদূষণ বেশি সেই এলাকাগুলোর ১৪ শতাংশ বাসিন্দা বিষণ্নতায় আক্রান্ত; যা কম দূষণ আক্রান্ত এলাকার চেয়ে বেশি। শুনলে আশ্চর্য হতে হয় যে, বায়ুদূষণের কারণে মানুষের বুদ্ধিও লোপ পাচ্ছে। এক গবেষণায় উঠে এসেছে যে, তীব্র বায়ুদূষণের সঙ্গে মানুষের বুদ্ধি কমে যাওয়ার সম্পর্ক থাকতে পারে। গবেষণাটি চালিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র ও চীন যৌথভাবে এবং গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছিল চীনে। বর্তমানে বায়ুদূষণের সঙ্গে মানবদেহে ডায়াবেটিস রোগের সম্পর্কও দেখতে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। চিকিৎসকদের মতে, কার্বন-ডাই-অক্সাইড, কার্বন-মনো-অক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড, ক্লোরোফ্লোরো কার্বন, বিভিন্ন যানবাহন থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া বাতাসের সঙ্গে সহজেই মিশে যাচ্ছে। এই বিষাক্ত ও ক্ষতিকর পদার্থগুলো শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে ফুসফুসে যাচ্ছে। এতে করে ক্ষতগ্রস্ত হচ্ছে ফুসফুস। আবার রক্তের সঙ্গে মিশে চলে যাচ্ছে হৃৎপিন্ডে। দীর্ঘদিন ধরে যদি এসব ক্ষতিকর পদার্থ মানবদেহে প্রবেশ করে তবে ফুসফুস, লিভার, কিডনি ও হৃৎপিন্ডে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়ে থাকে। পরিণামে দেখা যায়, বিভিন্ন অঙ্গ বিকলাঙ্গ হয়ে পড়ে এবং শেষ পরিণতি হিসেবে বায়ুদূষণের শিকার মানুষটিকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে হয়। বায়ুদূষণের ফলে আমাদের দেহের যথেষ্ট ক্ষতি হচ্ছে। আমরা আগেই জেনেছি যে, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউট (এপিক) গবেষণায় উঠে এসেছে যে, বায়ুদূষণের ফলে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু প্রায় ৭ বছর কমছে; যা খুবই উদ্বেগজনক। বায়ুদূষণ কমানো না গেলে এর ভয়াবহ মাশুল গুণতে হবে আমাদের সবাইকে। এখন প্রশ্ন আসতে পারে, বায়ুদূষণ বন্ধ করা যেতে পারে কিভাবে? সুস্থভাবে বাঁচতে মানুষের জন্য এখন প্রয়োজন পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ অক্সিজেনের। এই অক্সিজেনের জোগান দিতে পারে গাছপালা। অনেকে আছেন যারা নির্বিচারে গাছ কাটেন কিন্তু গাছ লাগান না; এটি অনুচিত। একটি গাছ কাটলে সেই স্থানে দুটি গাছ লাগাতে হয়। কিন্তু এই নিয়মটি অনেকেই মানেন না। নিজের আঙিনার খালি জায়গায় গাছ লাগান। ফ্ল্যাট-বাড়িতে থাকলে নিজের বারান্দায় গাছ লাগান; ছাদবাগান করুন। ধুলোবালি থেকে দূরে থাকতে মাস্ক ব্যবহার করুন। করোনা প্রতিরোধেও মাস্ক ব্যবহার অত্যন্ত জরুরি। নিজের বাড়িঘর এবং আশপাশের জায়গা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। রাস্তাঘাটে মাঝে মাঝে পানি ছিটাতে হবে, যাতে করে ধুলোবালি না ওড়ে। কলকারখানা ও ইটভাটা শহর থেকে দূরে স্থাপন করতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে যদি ধোঁয়া কমানো সম্ভব হয় তবে সেই দিকেও সরকারকে নজর দিতে হবে। ফসলের খড়, গাছের পাতা, বর্জ্যদ্রব্য পোড়ানো বন্ধ করতে হবে। এই ধোঁয়াও বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ। রাস্তায় ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল বন্ধ করতে হবে। এর কালো ধোঁয়া ব্যাপক পরিমাণে বায়ুদূষণের সৃষ্টি করে। রাস্তায় ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা অত্যাধিক পরিমাণে থাকে। গণপরিবহন ব্যবস্থা উন্নত করার মাধ্যমে রাস্তায় দৈনিক বের হওয়া ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা কমাতে হবে। উল্লেখ্য, এখন থেকেই ব্যক্তিগত গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে লাগাম টানতে হবে সরকারকে। জনগণের সম্মিলিত প্রয়াসের মাধ্যমে বায়ুদূষণ প্রতিরোধ করা সম্ভব। সবাই সুস্থ থাকতে এবং সবাইকে সুস্থ রাখতে এই পদক্ষেপের কোন বিকল্প নেই।

[লেখক: প্রাবন্ধিক]

back to top