মাহতাব হোসাইন মাজেদ
বাংলাদেশ প্রাকৃতিকভাবে সমৃদ্ধ ও বৈচিত্র্যময় একটি দেশ। এমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিশ্বের অনেক দেশেই বিরল। পর্যটন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিশ্বের প্রায় ৩০০ মিলিয়ন মানুষকে কর্মসংস্থানে সম্পৃক্ত করেছে। প্রতি ১০ জনের ১ জন কোন না কোনভাবে পর্যটন খাত দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
আজ ছিল বিশ্ব পর্যটন দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য ছিল ‘ট্যুরিজম অ্যান্ড গ্রিন ইনভেস্টমেন্ট’ বা পর্যটনে পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগ। ১৯৮০ সাল থেকে প্রতি বছর ২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ব পর্যটন দিবস উদযাপিত হচ্ছে। এর লক্ষ্য পর্যটনের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে পর্যটনের অবদান সম্পর্কে অবহিত করা।
বাংলাদেশ পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ। ভ্রমণ ও পর্যটনে বাংলাদেশ পৃথিবীর অনন্য দেশ। পৃথিবীতে আপনি এমন কোন দেশ খুঁজে পাবেন কিনা- যার ইতিহাস, সংস্কৃতি, প্রকৃতি-এতটা প্রাচুর্যময় যা মানুষকে ভ্রমণে আকৃষ্ট করে। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসমূহ যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে আপনি সহজে ভ্রমণ করতে পারেন।
পর্যটনের টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৯৫ সালে বিশ্ব পর্যটন সংস্থার সম্মেলনে পরিবেশবান্ধব পর্যটন শিল্প গড়ে তোলার জন্য একটি আন্তর্জাতিক খসড়া প্রস্তাব অনুমোদিত হয়, যা এজেন্ডা-২১ নামে পরিচিত। সুন্দর ও দূষণমুক্ত জলবায়ু পর্যটন শিল্পের অন্যতম উপাদান। কেননা পর্যটকদের ভ্রমণস্থান, গমন ও গমনের সিদ্ধান্ত গ্রহণে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই পর্যটন শিল্প জলবায়ু পরিবর্তনের দ্বারা প্রভাবিত হয়।
এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের অভিমত, দূষণমুক্ত ও পরিবেশবান্ধব পর্যটন জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে। লক্ষণীয় বিষয় হলো, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সাম্প্রতিক সময়ে আমেরিকায়ও পর্যটন শিল্পে ধস নেমেছে। আমাদেরও মনে রাখা দরকার, সিডরের কারণে সুন্দরবনের বিধ্বস্ত অবস্থা বাংলাদেশের পর্যটন অর্থনীতিতে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেছে। পর্যটন শিল্প বিকাশের জন্য চাই সুন্দর, দূষণমুক্ত, গুণগত মানসম্পন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশ।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে চমক আনতে পারে পর্যটন শিল্প : বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি বহাল রাখতে পর্যটন খাতকে গুরুত্ব দেওয়া একান্ত প্রয়োজন। পৃথিবীতে বর্তমানে ১৪০ কোটিরও বেশি পর্যটক রয়েছে। এই সংখ্যা আসন্ন বছরগুলোতে অর্থাৎ ২০২৫ সাল নাগাদ ২০০ কোটি হবে। এর আগে কোভিড মহামারির সময়ে বিশ্বব্যাপী পর্যটকের সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমে যায়। তবে ধীরে ধীরে এ সংখ্যা আবারো বাড়ছে।
গবেষণা বলছে, এই বিপুল পর্যটকের ৭৫ শতাংশ পর্যটক ভ্রমণের জন্য বেছে নেবে এশিয়া। আর সেখানেই বাংলাদেশের পর্যটন খাতকে নিজের সুযোগ তৈরি করে নিতে হবে। এখানে বড় ভূমিকা রাখতে পারে এবারের বাজেট। বাংলাদেশের পর্যটন খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত আছেন প্রায় ৪০ লাখ মানুষ। এর ভেতর সরাসরি জড়িত আছেন ১৫ লাখ আর প্রত্যক্ষভাবে জড়িত আছেন প্রায় ২৩ লাখ। এক হিসাবে দেখা গেছে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রায় ৯০ থেকে ৯৫ লাখ পর্যটক ভ্রমণ করছেন। এ সংখ্যাটি সন্তোষজনক হলেও এর মাত্র ২ শতাংশ বিদেশি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর রিপোর্ট অনুযায়ী- ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে মোট ১৬ লাখ ৪০ হাজার পর্যটক আসে। এর মধ্যে ৮০ দশমিক ২৮ শতাংশ অনাবাসী বাংলাদেশি। বাকি ২ লাখ ৯১ হাজার জন বিদেশি পর্যটক। করোনা মহামারিতে ২০২০-২১ অর্থবছরে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা আরও কমেছে। আর হতাশার বিষয় হলো- ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্সের ২০১৮ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ পর্যটনকে কাজে লাগিয়ে প্রবৃদ্ধিতে এগিয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের অবস্থান ৩৪। অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ এখানে অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৯ সাল জুড়ে আমাদের দেশে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ২৩ হাজার ২৯৫, যার অধিকাংশই ভারতীয়।
বর্তমানে দেশে দেশে নিষেধাজ্ঞা শিথিল হলেও পর্যটকদের মনের ভয় এখনো দূর হয়নি। নিরাপত্তাজনিত ভয়ে পর্যটকদের অনেকেই আসছেন না। নিজেদের ইতিহাস ঐতিহ্য সঠিকভাবে তুলে ধরাতেও গাফিলতি আছে বলে মনে করেন পর্যটনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।
বিদেশি পর্যটক আগমনের তথ্যের ভিত্তিতে বিশ্বের কোন দেশ পর্যটনে কেমন করছে, তার র্যাঙ্কিং করে মুন্ডি ইনডেক্স। তাদের তথ্য অনুযায়ী, পর্যটনশিল্পে বিশ্বের ১৮৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪১তম, আর এশিয়ার ৪৬টি দেশের মধ্যে ৪২তম। মুন্ডি র্যাঙ্কিংয়ে দক্ষিণ এশিয়ার আট দেশের মধ্যে ছয়টি স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ।
বিদেশি পর্যটক আকর্ষণ দূরে থাক, দেশের পর্যটকদের ধরে রাখতে পারছে না পর্যটন সংস্থাগুলো। বিবিএসের জরিপ অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরেই ২৯ লাখ ২১ হাজার ৫২০ বাংলাদেশি পর্যটক বিদেশে গেছেন। তাদের ৬০ ভাগের বেশি গেছেন ভারতে। এছাড়া সৌদি আরব (৮.১২%), মালয়েশিয়া (৪.৫৭%), থাইল্যান্ড, দুবাই, আফ্রিকা, নেপাল, তুরস্কে গেছেন তারা। এতে মোট ব্যয় হয়েছে ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৮৬৮ মিলিয়ন টাকা।
বিশাল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও সঠিক পরিকল্পনার অভাবে আমরা পর্যটন শিল্পে পিছিয়ে আছি। এ শিল্পের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন সমন্বিত পরিকল্পনা। পর্যটন শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত সবপক্ষকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করে যেতে হবে। দেশীয় পর্যটন বিকাশের পাশাপাশি বিদেশি পর্যটক আকর্ষণে প্রচার-প্রচারণার ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে। পাশাপাশি এ শিল্পের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। সঠিক কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা গেলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে পর্যটন শিল্প অন্যতম ভূমিকা পালন করতে পারবে। আর বাংলাদেশের পর্যটনের টেকসই বিকাশ এবং উন্নয়নে বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য বৃদ্ধি, প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ পর্যটনের বিকাশে গতি আনতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের পর্যটন শিল্পের প্রচার ও উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি ট্যুর অপারেটর, হোটেল ও এভিয়েশন সংশ্লিষ্ট সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
[লেখক : পরিবেশ ও স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক, সবুজ আন্দোলন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদ]
মাহতাব হোসাইন মাজেদ
বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩
বাংলাদেশ প্রাকৃতিকভাবে সমৃদ্ধ ও বৈচিত্র্যময় একটি দেশ। এমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিশ্বের অনেক দেশেই বিরল। পর্যটন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিশ্বের প্রায় ৩০০ মিলিয়ন মানুষকে কর্মসংস্থানে সম্পৃক্ত করেছে। প্রতি ১০ জনের ১ জন কোন না কোনভাবে পর্যটন খাত দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
আজ ছিল বিশ্ব পর্যটন দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য ছিল ‘ট্যুরিজম অ্যান্ড গ্রিন ইনভেস্টমেন্ট’ বা পর্যটনে পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগ। ১৯৮০ সাল থেকে প্রতি বছর ২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ব পর্যটন দিবস উদযাপিত হচ্ছে। এর লক্ষ্য পর্যটনের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে পর্যটনের অবদান সম্পর্কে অবহিত করা।
বাংলাদেশ পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ। ভ্রমণ ও পর্যটনে বাংলাদেশ পৃথিবীর অনন্য দেশ। পৃথিবীতে আপনি এমন কোন দেশ খুঁজে পাবেন কিনা- যার ইতিহাস, সংস্কৃতি, প্রকৃতি-এতটা প্রাচুর্যময় যা মানুষকে ভ্রমণে আকৃষ্ট করে। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসমূহ যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে আপনি সহজে ভ্রমণ করতে পারেন।
পর্যটনের টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৯৫ সালে বিশ্ব পর্যটন সংস্থার সম্মেলনে পরিবেশবান্ধব পর্যটন শিল্প গড়ে তোলার জন্য একটি আন্তর্জাতিক খসড়া প্রস্তাব অনুমোদিত হয়, যা এজেন্ডা-২১ নামে পরিচিত। সুন্দর ও দূষণমুক্ত জলবায়ু পর্যটন শিল্পের অন্যতম উপাদান। কেননা পর্যটকদের ভ্রমণস্থান, গমন ও গমনের সিদ্ধান্ত গ্রহণে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই পর্যটন শিল্প জলবায়ু পরিবর্তনের দ্বারা প্রভাবিত হয়।
এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের অভিমত, দূষণমুক্ত ও পরিবেশবান্ধব পর্যটন জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে। লক্ষণীয় বিষয় হলো, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সাম্প্রতিক সময়ে আমেরিকায়ও পর্যটন শিল্পে ধস নেমেছে। আমাদেরও মনে রাখা দরকার, সিডরের কারণে সুন্দরবনের বিধ্বস্ত অবস্থা বাংলাদেশের পর্যটন অর্থনীতিতে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেছে। পর্যটন শিল্প বিকাশের জন্য চাই সুন্দর, দূষণমুক্ত, গুণগত মানসম্পন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশ।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে চমক আনতে পারে পর্যটন শিল্প : বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি বহাল রাখতে পর্যটন খাতকে গুরুত্ব দেওয়া একান্ত প্রয়োজন। পৃথিবীতে বর্তমানে ১৪০ কোটিরও বেশি পর্যটক রয়েছে। এই সংখ্যা আসন্ন বছরগুলোতে অর্থাৎ ২০২৫ সাল নাগাদ ২০০ কোটি হবে। এর আগে কোভিড মহামারির সময়ে বিশ্বব্যাপী পর্যটকের সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমে যায়। তবে ধীরে ধীরে এ সংখ্যা আবারো বাড়ছে।
গবেষণা বলছে, এই বিপুল পর্যটকের ৭৫ শতাংশ পর্যটক ভ্রমণের জন্য বেছে নেবে এশিয়া। আর সেখানেই বাংলাদেশের পর্যটন খাতকে নিজের সুযোগ তৈরি করে নিতে হবে। এখানে বড় ভূমিকা রাখতে পারে এবারের বাজেট। বাংলাদেশের পর্যটন খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত আছেন প্রায় ৪০ লাখ মানুষ। এর ভেতর সরাসরি জড়িত আছেন ১৫ লাখ আর প্রত্যক্ষভাবে জড়িত আছেন প্রায় ২৩ লাখ। এক হিসাবে দেখা গেছে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রায় ৯০ থেকে ৯৫ লাখ পর্যটক ভ্রমণ করছেন। এ সংখ্যাটি সন্তোষজনক হলেও এর মাত্র ২ শতাংশ বিদেশি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর রিপোর্ট অনুযায়ী- ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে মোট ১৬ লাখ ৪০ হাজার পর্যটক আসে। এর মধ্যে ৮০ দশমিক ২৮ শতাংশ অনাবাসী বাংলাদেশি। বাকি ২ লাখ ৯১ হাজার জন বিদেশি পর্যটক। করোনা মহামারিতে ২০২০-২১ অর্থবছরে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা আরও কমেছে। আর হতাশার বিষয় হলো- ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্সের ২০১৮ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ পর্যটনকে কাজে লাগিয়ে প্রবৃদ্ধিতে এগিয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের অবস্থান ৩৪। অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ এখানে অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৯ সাল জুড়ে আমাদের দেশে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ২৩ হাজার ২৯৫, যার অধিকাংশই ভারতীয়।
বর্তমানে দেশে দেশে নিষেধাজ্ঞা শিথিল হলেও পর্যটকদের মনের ভয় এখনো দূর হয়নি। নিরাপত্তাজনিত ভয়ে পর্যটকদের অনেকেই আসছেন না। নিজেদের ইতিহাস ঐতিহ্য সঠিকভাবে তুলে ধরাতেও গাফিলতি আছে বলে মনে করেন পর্যটনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।
বিদেশি পর্যটক আগমনের তথ্যের ভিত্তিতে বিশ্বের কোন দেশ পর্যটনে কেমন করছে, তার র্যাঙ্কিং করে মুন্ডি ইনডেক্স। তাদের তথ্য অনুযায়ী, পর্যটনশিল্পে বিশ্বের ১৮৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪১তম, আর এশিয়ার ৪৬টি দেশের মধ্যে ৪২তম। মুন্ডি র্যাঙ্কিংয়ে দক্ষিণ এশিয়ার আট দেশের মধ্যে ছয়টি স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ।
বিদেশি পর্যটক আকর্ষণ দূরে থাক, দেশের পর্যটকদের ধরে রাখতে পারছে না পর্যটন সংস্থাগুলো। বিবিএসের জরিপ অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরেই ২৯ লাখ ২১ হাজার ৫২০ বাংলাদেশি পর্যটক বিদেশে গেছেন। তাদের ৬০ ভাগের বেশি গেছেন ভারতে। এছাড়া সৌদি আরব (৮.১২%), মালয়েশিয়া (৪.৫৭%), থাইল্যান্ড, দুবাই, আফ্রিকা, নেপাল, তুরস্কে গেছেন তারা। এতে মোট ব্যয় হয়েছে ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৮৬৮ মিলিয়ন টাকা।
বিশাল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও সঠিক পরিকল্পনার অভাবে আমরা পর্যটন শিল্পে পিছিয়ে আছি। এ শিল্পের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন সমন্বিত পরিকল্পনা। পর্যটন শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত সবপক্ষকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করে যেতে হবে। দেশীয় পর্যটন বিকাশের পাশাপাশি বিদেশি পর্যটক আকর্ষণে প্রচার-প্রচারণার ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে। পাশাপাশি এ শিল্পের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। সঠিক কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা গেলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে পর্যটন শিল্প অন্যতম ভূমিকা পালন করতে পারবে। আর বাংলাদেশের পর্যটনের টেকসই বিকাশ এবং উন্নয়নে বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য বৃদ্ধি, প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ পর্যটনের বিকাশে গতি আনতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের পর্যটন শিল্পের প্রচার ও উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি ট্যুর অপারেটর, হোটেল ও এভিয়েশন সংশ্লিষ্ট সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
[লেখক : পরিবেশ ও স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক, সবুজ আন্দোলন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদ]