হীরেন পন্ডিত
তারুণ্য মানব জীবনের সাহসী, সংগ্রামী ও সৃজনশীলতার অধ্যায়। পুরাতনকে ভেঙে, সংস্কার করে নতুন কিছু করাই যেন তারুণ্যের ধর্ম। তরুণদের চিন্তা-চেতনা, মন-মগজে পুরাতনকে সংস্কার করে নতুন কিছু করার ভাবনা তৈরি করতে হবে। সাহসিকতা ও সততার সঙ্গে তরুণ সমাজকে এই সংস্কার কাজে এগিয়ে আসতে হবে। তরুণরা এগিয়ে আসলেই সমাজের সব স্তরে পরিবর্তনের শুরু হবে। আর এক্ষেত্রে তরুণ সমাজের সম্মিলিত প্রয়াস সবচেয়ে কার্যকরী।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মতে, যুবদের বয়স ১৫ থেকে ২৯ বছর। সরকারের যুব নীতিতে এই সীমা ১৮ থেকে ৩৫ বছর। বয়সসীমা যদি ২৯ বছর ধরে যুবক হিসেবে ধরা হয়, তাহলে দেশের প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ এর নিচে। দেশের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ যুবক। বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক বৈচিত্র্যসহ বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে হলে তরুণদের কথা ভাবতে হবে। তরুণরা বৈশ্বিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দেবে।
দেশের তরুণদের অর্জন অনেক। খেলাধুলা, শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে তরুণরা এগিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন উদ্দীপনা এবং সম্ভাবনাগুলোকে ব্যবহার করে বিভিন্ন উপায়ে এগিয়ে যাচ্ছে তরুণ সমাজ। তবে তরুণদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশের শক্তি দেশ ও জাতির জন্য সঠিকভাবে ব্যবহার হচ্ছে কিনা তা যেমন স্পষ্ট নয় তেমনি তা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। তাদের স্বেচ্ছায় মূলধারায় নেতৃত্ব দিতে হবে। আজকের তরুণ সমাজই ভবিষ্যতের নীতিনির্ধারক। তারা অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে সমাজ ধীরে ধীরে পরিবর্তন হতে শুরু করবে।
রাষ্ট্র ও সমাজের সব কল্যাণমূলক কাজে যুবসমাজের অংশগ্রহণ আবশ্যক। তরুণ সমাজ ঘুমিয়ে থাকলে অনিয়ম-দুর্নীতিতে নিমজ্জিত সমাজের আকাশ থেকে কখনো কালো মেঘের ছায়া সরবে না। সমাজ পরিবর্তন করতে হলে তরুণ সমাজকে আত্মকেন্দ্রিক চিন্তাধারা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ক্যারিয়ার গড়ার পাশাপাশি দেশ ও সমাজের কথাও ভাবতে হয়। সবাই সমাজকল্যাণমূলক কাজে এগিয়ে আসতে হবে। যৌবন অসীম প্রাণশক্তির উৎস। সেজন্য তারুণ্যকে কাজে লাগিয়ে জীবনকে গতিশীল ও প্রতিশ্রুতিশীল করতে হবে। জরাজীর্ণ সমাজব্যবস্থা সংস্কার করে নতুন কিছু সৃষ্টির জন্য প্রথমে তরুণ সমাজকে জেগে উঠতে হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। তবেই সমাজের সর্বস্তরে দুর্নীতি নির্মূল করা সম্ভব। তারুণ্যের শক্তিই পারে সমাজকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে।
বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সে জন্য বর্তমান সরকার মজুরির মাধ্যমে বিভিন্ন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে তরুণদের জন্য উপযুক্ত চাকরি নিশ্চিত করতে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিচ্ছে- উপার্জন এবং আত্মকর্মসংস্থান।
আমাদের কর্মসংস্থানের দিকে নজর দিতে হবে। দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধ্বংস না করে সঠিকভাবে শিক্ষিত করা আমাদের সবার দায়িত্ব। মানসম্পন্ন শিক্ষার জন্য শিক্ষকদের যেমন দায়িত্ব রয়েছে, তেমনি অভিভাবকদের এবং সুশীল সমাজেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সরকারি দল, বিরোধী দল, নাগরিক সমাজসহ সমাজের প্রত্যেকেরই কর্মসংস্থান সৃষ্টির দায়িত্ব রয়েছে। চাকরি সৃষ্টি একটি বড় চ্যালেঞ্জ; দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ত্রুটিমুক্ত ও দুর্নীতিমুক্ত রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। বাইপাস করে চাকরি পাওয়া সম্ভব নয়। বড় ডিগ্রি নিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না। শিক্ষাব্যবস্থা বাজারের চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ না হওয়ায় দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ছে।
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা শ্রমবাজারে দক্ষ ও শিক্ষাগতভাবে যোগ্য শ্রমিকের চাহিদা মেটাতে পারছে না। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষায় বিশেষ দক্ষতার অভাবে চাকরির বাজারের চাহিদা মেটাতে পারছে না পড়াশোনা শেষ করা তরুণ-তরুণীরা। কলেজের স্নাতকদের মধ্যে মাত্র ১৯ শতাংশ ফুলটাইম বা পার্টটাইম নিযুক্ত, যেখানে প্রায় অর্ধেক বেকার। অধিকন্তু, মহিলা স্নাতকদের স্নাতক হওয়ার দুই বছর পরেও বেকার এবং পড়াশোনার বাইরে থাকার সম্ভাবনা অনেক বেশি : ৩৭ শতাংশ পুরুষ স্নাতকদের বিপরীতে ৪৩ শতাংশ মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক বেকার থাকে।
কিন্তু তরুণদের বেকারত্বকে অর্থনীতির জন্য একটি অন্যতম প্রধান সমস্যা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া আমাদের নীতিমালায় অনুপস্থিত। জাতীয় যুব নীতি ২০১৭ যুবকদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে পর্যাপ্ত মনোযোগ দেয়া হয়নি বলে মনে করেন অনেকে। নীতিমালায় তরুণদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা নেই। অবশ্য অর্থনীতিতে বেসরকারি খাতের অবদান বেশি হওয়ায় কর্মসংস্থানের প্রধান উৎস হতে হবে বেসরকারি খাতকে। সেখানে আরও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকারকে নীতিগত সহায়তা দিতে হবে।
এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য শিক্ষায় কঠোর মান নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। এজন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন কাঠামো, তদারকি ও মান নিয়ন্ত্রণ যথাযথভাবে করতে হবে। উচ্চশিক্ষার কারিকুলাম তৈরি করতে হলে বাজারের চাহিদা অনুযায়ী কারিকুলাম হালনাগাদ করতে হবে। আইনপ্রণেতা, নিয়োগকর্তা এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমন্বয়প্রয়োজন। সরকারকে কিছু প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা নিতে হবে। শুধু ভালো শিক্ষাই নয়, সতর্কতা ও নিষ্ঠাও সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। আমরা শিক্ষা পেয়ে জীবনকে পেশা হিসেবে দেখতে চাই, আমরা বেকারত্বের অভিশাপ দেখতে চাই না, তরুণদের হতাশ দেখতে চাই না, আমরা উদ্যোক্তা হিসেবে দেখতে চাই। তরুণদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা খুবই জরুরি। এজন্য আগামী বাজেটে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বিশেষ বরাদ্দ রাখতে হবে। কিন্তু বাজেটকে বিভিন্নভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রক্রিয়ায় একটি কার্যকর উপায় হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। অবকাঠামোগত প্রকল্পে বিনিয়োগ, রাস্তা সম্প্রসারণ এবং অন্যান্য কর্মশক্তির বিভিন্ন বিভাগের জন্য চাকরি তৈরি করে। চাকরির সংখ্যা, তাদের ধরন এবং কোন সেক্টরে চাকরি তৈরি করা হবে তার একটি চিত্র থাকতে হবে।
যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ বৃদ্ধি পেয়েছে, তবুও চাকরির বাজারে দক্ষতার বিশাল ঘাটতি রয়েছে। বেসরকারি খাতের অনেক কর্মী ছাঁটাই করা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কিত জ্ঞানের অভাব, বিশেষ করে সুবিধাবঞ্চিত পরিবারের যুবকদের মধ্যে, কর্মসংস্থানের জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত জ্ঞানের অভাব দেখায়, যা তাদের আরও পেছনে ঠেলে দিচ্ছে। একটি প্রগতিশীল ও সমৃদ্ধ সমাজ গঠনের জন্য যুব সমাজকে মূলধারায় যুক্ত করার জন্য আমাদের উপরোক্ত বিষয়টিতে মনোনিবেশ করা উচিত।
আজকের তরুণ সমাজ ভবিষ্যতের নীতিনির্ধারক। তারা যদি অনিয়ম আর দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়, তাহলে সমাজে ধীরে ধীরে পরিবর্তন আসতে শুরু করবে। তাই রাষ্ট্র ও সমাজের সব কল্যাণমূলক কাজে তরুণদের অংশগ্রহণ একান্ত প্রয়োজন। তরুণ সমাজ ঘুমিয়ে থাকলে অনিয়ম আর দুর্নীতিতে নিমজ্জিত সমাজের আকাশ থেকে কালো মেঘের ছায়া কখনো দূর হবে না। সমাজ পরিবর্তন করতে চাইলে তরুণ সমাজকে আত্মকেন্দ্রিক চিন্তাভাবনা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। নিজের ক্যারিয়ার গঠনের পাশাপাশি দেশ ও সমাজ নিয়ে ভাবতে হবে। এগিয়ে আসতে হবে সমাজকল্যাণমূলক সব কাজে। তারুণ্য হচ্ছে অফুরন্ত প্রাণশক্তির আধার। তাই তারুণ্যকে কাজে লাগিয়ে জীবনকে করতে হবে গতিশীল ও প্রত্যাশাময়। জরাজীর্ণ সমাজব্যবস্থাকে সংস্কার করে নতুন কিছু রচনার জন্য সবার আগে তরুণ সমাজকেই জাগতে হবে।
[লেখক: প্রাবন্ধিক]
হীরেন পন্ডিত
শুক্রবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৩
তারুণ্য মানব জীবনের সাহসী, সংগ্রামী ও সৃজনশীলতার অধ্যায়। পুরাতনকে ভেঙে, সংস্কার করে নতুন কিছু করাই যেন তারুণ্যের ধর্ম। তরুণদের চিন্তা-চেতনা, মন-মগজে পুরাতনকে সংস্কার করে নতুন কিছু করার ভাবনা তৈরি করতে হবে। সাহসিকতা ও সততার সঙ্গে তরুণ সমাজকে এই সংস্কার কাজে এগিয়ে আসতে হবে। তরুণরা এগিয়ে আসলেই সমাজের সব স্তরে পরিবর্তনের শুরু হবে। আর এক্ষেত্রে তরুণ সমাজের সম্মিলিত প্রয়াস সবচেয়ে কার্যকরী।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মতে, যুবদের বয়স ১৫ থেকে ২৯ বছর। সরকারের যুব নীতিতে এই সীমা ১৮ থেকে ৩৫ বছর। বয়সসীমা যদি ২৯ বছর ধরে যুবক হিসেবে ধরা হয়, তাহলে দেশের প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ এর নিচে। দেশের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ যুবক। বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক বৈচিত্র্যসহ বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে হলে তরুণদের কথা ভাবতে হবে। তরুণরা বৈশ্বিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দেবে।
দেশের তরুণদের অর্জন অনেক। খেলাধুলা, শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে তরুণরা এগিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন উদ্দীপনা এবং সম্ভাবনাগুলোকে ব্যবহার করে বিভিন্ন উপায়ে এগিয়ে যাচ্ছে তরুণ সমাজ। তবে তরুণদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশের শক্তি দেশ ও জাতির জন্য সঠিকভাবে ব্যবহার হচ্ছে কিনা তা যেমন স্পষ্ট নয় তেমনি তা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। তাদের স্বেচ্ছায় মূলধারায় নেতৃত্ব দিতে হবে। আজকের তরুণ সমাজই ভবিষ্যতের নীতিনির্ধারক। তারা অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে সমাজ ধীরে ধীরে পরিবর্তন হতে শুরু করবে।
রাষ্ট্র ও সমাজের সব কল্যাণমূলক কাজে যুবসমাজের অংশগ্রহণ আবশ্যক। তরুণ সমাজ ঘুমিয়ে থাকলে অনিয়ম-দুর্নীতিতে নিমজ্জিত সমাজের আকাশ থেকে কখনো কালো মেঘের ছায়া সরবে না। সমাজ পরিবর্তন করতে হলে তরুণ সমাজকে আত্মকেন্দ্রিক চিন্তাধারা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ক্যারিয়ার গড়ার পাশাপাশি দেশ ও সমাজের কথাও ভাবতে হয়। সবাই সমাজকল্যাণমূলক কাজে এগিয়ে আসতে হবে। যৌবন অসীম প্রাণশক্তির উৎস। সেজন্য তারুণ্যকে কাজে লাগিয়ে জীবনকে গতিশীল ও প্রতিশ্রুতিশীল করতে হবে। জরাজীর্ণ সমাজব্যবস্থা সংস্কার করে নতুন কিছু সৃষ্টির জন্য প্রথমে তরুণ সমাজকে জেগে উঠতে হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। তবেই সমাজের সর্বস্তরে দুর্নীতি নির্মূল করা সম্ভব। তারুণ্যের শক্তিই পারে সমাজকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে।
বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সে জন্য বর্তমান সরকার মজুরির মাধ্যমে বিভিন্ন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে তরুণদের জন্য উপযুক্ত চাকরি নিশ্চিত করতে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিচ্ছে- উপার্জন এবং আত্মকর্মসংস্থান।
আমাদের কর্মসংস্থানের দিকে নজর দিতে হবে। দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধ্বংস না করে সঠিকভাবে শিক্ষিত করা আমাদের সবার দায়িত্ব। মানসম্পন্ন শিক্ষার জন্য শিক্ষকদের যেমন দায়িত্ব রয়েছে, তেমনি অভিভাবকদের এবং সুশীল সমাজেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সরকারি দল, বিরোধী দল, নাগরিক সমাজসহ সমাজের প্রত্যেকেরই কর্মসংস্থান সৃষ্টির দায়িত্ব রয়েছে। চাকরি সৃষ্টি একটি বড় চ্যালেঞ্জ; দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ত্রুটিমুক্ত ও দুর্নীতিমুক্ত রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। বাইপাস করে চাকরি পাওয়া সম্ভব নয়। বড় ডিগ্রি নিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না। শিক্ষাব্যবস্থা বাজারের চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ না হওয়ায় দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ছে।
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা শ্রমবাজারে দক্ষ ও শিক্ষাগতভাবে যোগ্য শ্রমিকের চাহিদা মেটাতে পারছে না। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষায় বিশেষ দক্ষতার অভাবে চাকরির বাজারের চাহিদা মেটাতে পারছে না পড়াশোনা শেষ করা তরুণ-তরুণীরা। কলেজের স্নাতকদের মধ্যে মাত্র ১৯ শতাংশ ফুলটাইম বা পার্টটাইম নিযুক্ত, যেখানে প্রায় অর্ধেক বেকার। অধিকন্তু, মহিলা স্নাতকদের স্নাতক হওয়ার দুই বছর পরেও বেকার এবং পড়াশোনার বাইরে থাকার সম্ভাবনা অনেক বেশি : ৩৭ শতাংশ পুরুষ স্নাতকদের বিপরীতে ৪৩ শতাংশ মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক বেকার থাকে।
কিন্তু তরুণদের বেকারত্বকে অর্থনীতির জন্য একটি অন্যতম প্রধান সমস্যা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া আমাদের নীতিমালায় অনুপস্থিত। জাতীয় যুব নীতি ২০১৭ যুবকদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে পর্যাপ্ত মনোযোগ দেয়া হয়নি বলে মনে করেন অনেকে। নীতিমালায় তরুণদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা নেই। অবশ্য অর্থনীতিতে বেসরকারি খাতের অবদান বেশি হওয়ায় কর্মসংস্থানের প্রধান উৎস হতে হবে বেসরকারি খাতকে। সেখানে আরও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকারকে নীতিগত সহায়তা দিতে হবে।
এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য শিক্ষায় কঠোর মান নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। এজন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন কাঠামো, তদারকি ও মান নিয়ন্ত্রণ যথাযথভাবে করতে হবে। উচ্চশিক্ষার কারিকুলাম তৈরি করতে হলে বাজারের চাহিদা অনুযায়ী কারিকুলাম হালনাগাদ করতে হবে। আইনপ্রণেতা, নিয়োগকর্তা এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমন্বয়প্রয়োজন। সরকারকে কিছু প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা নিতে হবে। শুধু ভালো শিক্ষাই নয়, সতর্কতা ও নিষ্ঠাও সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। আমরা শিক্ষা পেয়ে জীবনকে পেশা হিসেবে দেখতে চাই, আমরা বেকারত্বের অভিশাপ দেখতে চাই না, তরুণদের হতাশ দেখতে চাই না, আমরা উদ্যোক্তা হিসেবে দেখতে চাই। তরুণদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা খুবই জরুরি। এজন্য আগামী বাজেটে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বিশেষ বরাদ্দ রাখতে হবে। কিন্তু বাজেটকে বিভিন্নভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রক্রিয়ায় একটি কার্যকর উপায় হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। অবকাঠামোগত প্রকল্পে বিনিয়োগ, রাস্তা সম্প্রসারণ এবং অন্যান্য কর্মশক্তির বিভিন্ন বিভাগের জন্য চাকরি তৈরি করে। চাকরির সংখ্যা, তাদের ধরন এবং কোন সেক্টরে চাকরি তৈরি করা হবে তার একটি চিত্র থাকতে হবে।
যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ বৃদ্ধি পেয়েছে, তবুও চাকরির বাজারে দক্ষতার বিশাল ঘাটতি রয়েছে। বেসরকারি খাতের অনেক কর্মী ছাঁটাই করা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কিত জ্ঞানের অভাব, বিশেষ করে সুবিধাবঞ্চিত পরিবারের যুবকদের মধ্যে, কর্মসংস্থানের জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত জ্ঞানের অভাব দেখায়, যা তাদের আরও পেছনে ঠেলে দিচ্ছে। একটি প্রগতিশীল ও সমৃদ্ধ সমাজ গঠনের জন্য যুব সমাজকে মূলধারায় যুক্ত করার জন্য আমাদের উপরোক্ত বিষয়টিতে মনোনিবেশ করা উচিত।
আজকের তরুণ সমাজ ভবিষ্যতের নীতিনির্ধারক। তারা যদি অনিয়ম আর দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়, তাহলে সমাজে ধীরে ধীরে পরিবর্তন আসতে শুরু করবে। তাই রাষ্ট্র ও সমাজের সব কল্যাণমূলক কাজে তরুণদের অংশগ্রহণ একান্ত প্রয়োজন। তরুণ সমাজ ঘুমিয়ে থাকলে অনিয়ম আর দুর্নীতিতে নিমজ্জিত সমাজের আকাশ থেকে কালো মেঘের ছায়া কখনো দূর হবে না। সমাজ পরিবর্তন করতে চাইলে তরুণ সমাজকে আত্মকেন্দ্রিক চিন্তাভাবনা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। নিজের ক্যারিয়ার গঠনের পাশাপাশি দেশ ও সমাজ নিয়ে ভাবতে হবে। এগিয়ে আসতে হবে সমাজকল্যাণমূলক সব কাজে। তারুণ্য হচ্ছে অফুরন্ত প্রাণশক্তির আধার। তাই তারুণ্যকে কাজে লাগিয়ে জীবনকে করতে হবে গতিশীল ও প্রত্যাশাময়। জরাজীর্ণ সমাজব্যবস্থাকে সংস্কার করে নতুন কিছু রচনার জন্য সবার আগে তরুণ সমাজকেই জাগতে হবে।
[লেখক: প্রাবন্ধিক]