alt

উপ-সম্পাদকীয়

হুন্ডি আর মানিলন্ডারিং কেন বন্ধ করা যায় না?

রহমান মৃধা

: বৃহস্পতিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৩

দেশ এবং দেশের মানুষকে পরাধীন থেকে স্বাধীন করার পেছনে যে ক্ষোভ, আক্ষেপ বা যুক্তিগুলো আমাদের ছিল যেমন ছয় দফা থেকে শুরু করে নানা ধরনের শর্তাবলি, তার মধ্যে কি পড়ে যে আমরা স্বাধীন হলে দুর্নীতি, অনিয়ম, সরকারি কর্মচারীর কাছে জিম্মি, নিজ দেশে পরাধীন, হুন্ডি, মানিলন্ডারিং, গুম, ভেজাল- এর সব কিছু করব এবং বাঁক স্বাধীনতা হারাব? না, কথা ছিল একটি বাংলাদেশ আমরা গড়ব যেখানে ধর্ম, বর্ণ, হিংসা-বিদ্বেষ, ধনী-দরিদ্র, শিক্ষিত-অশিক্ষিত সবাই এক সঙ্গে বসবাস করব, সুখ-শান্তিতে এবং আমাদের জাতিয় সঙ্গীত “আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি” এই প্রতিজ্ঞায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে দেশকে সোনার বাংলা করব।

আমাদের একটি অংশ দেশে এবং বিদেশে বসবাস করছি তাদের বেশির ভাগই বেশ শিক্ষিত, দেখতে নাদুস-নুদুস, ভালো পরিবারের সন্তান, মানে উচ্চ রুচিসম্পন্ন বা এলিট শ্রেণির নাগরিক। অথচ আমরা দেশের অর্থ বিদেশে দিব্বি পাচার করছি নানা অসৎ উপায়ে, এটা কি রুচির মধ্যেই পড়ে? তাই যদি হয় তবে অরুচি বলতে আমরা কি বুঝাতে চাইছি! আমরা বলছি আমাদের পরিবর্তন হওয়া দরকার। পরিবর্তন হওয়া মানে ভালো থেকে খারাপ নয় বরং খারাপ থেকে ভালো হবার কথা বোঝানো হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে দেশের একটি আলোচিত ইস্যু রিজার্ভ সঙ্কট। রিজার্ভ সঙ্কটের জন্য রফতানির থেকে আমদানি বেশি হওয়ার পাশাপাশি আলোচিত হচ্ছে দেশ থেকে টাকা পাচার ও বিদেশ থেকে অবৈধ পথে দেশে টাকা পাঠানোর বিষয়টি। আর এই কর্মকান্ডের সঙ্গে উচ্চারিত হচ্ছে হুন্ডির নাম। বলা হচ্ছে, দেশ থেকে বিদেশে টাকা পাচার এবং বিদেশ থেকে অবৈধভাবে দেশে রেমিট্যান্স ঢুকছে মূলত হুন্ডির মাধ্যমে। এর ফলে সরকার একদিকে বঞ্চিত হচ্ছে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব থেকে। পাশাপাশি প্রবাসীরা তাদের আয় দেশে পাঠালেও হুন্ডির কারণে তা যোগ হচ্ছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডারে। সরকারের কোনো পদক্ষেপেই থামছে না হুন্ডির দৌরাত্ম বরং প্রযুক্তির সহায়তা এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দিন দিন আরও বেড়ে উঠছে হুন্ডির কারবার।

হুন্ডি হচ্ছে চোরাচালানি, সরকারকে ফাঁকি দিয়ে ব্যাংকিং পদ্ধতির বাইরের অর্থ লেনদেনের একটি উপায়। একে বাণিজ্যিক আদান প্রদান ও লেনদেনের অনানুষ্ঠানিক দলিলও বলা যেতে পারে। যার মাধ্যমে দুই পক্ষ বা ব্যক্তির মধ্যে টাকা লেনদেন হয়। বিশ্বের প্রচলিত ব্যাংকিং পদ্ধতির অনুসরণ হয় না বলে হুন্ডির লেনদেনে দেশের সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়। মধ্য যুগে ভারতে সম্পদ লেনদেনের জন্য প্রথম এই পদ্ধতির সূচনা হয়। বর্তমানে বৈধ পদ্ধতি এড়িয়ে বিদেশে টাকা পাচার এবং বিদেশ থেকে দেশে টাকা আনার কাজে হুন্ডি পদ্ধতিকে ব্যবহার করা হচ্ছে।ভ

প্রবাসীরা তাদের আয় দেশে পাঠালেও হুন্ডির কারণে তা যোগ হচ্ছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডারে। সরকারের কোনো পদক্ষেপেই থামছে না হুন্ডির দৌরাত্ম

তারপর চলছে মানি লন্ডারিং! কোনো অবৈধ অর্থকে বৈধ করাকে মানি লন্ডারিং বলা হয় বা যে প্রক্রিয়ায় কালো টাকা অর্থ লেনদেনের একটি কাহিনী বৃত্তের মধ্যে প্রবেশ করানো হয় তথা বিশোধিত করা হয়, যাতে তা অন্য প্রান্ত দিয়ে বৈধ অর্থ তথা সাদা টাকা হিসেবে বেরিয়ে আসে, অন্যভাবে বললে, বেআইনিভাবে প্রাপ্ত অর্থের উৎস পর্যায়ক্রমে স্থানান্তর এবং লেনদেনের মাধ্যমে গোপন করা হয়, যাতে সেই একই অর্থ শেষ পর্যন্ত বৈধ আয় হিসেবে দেখানো যায়। এটাও নিশ্চিত কোন ভালো রুচির পরিচয় না।

আমরা শুধু দেশের মানুষকে ছোট করে দেখি, তাদের দোষ ত্রুটি নিয়ে কথা বলি। অথচ আমরা যারা বিদেশে বসবাস করছি আমরা কেমন মানুষ?

হুন্ডির সঙ্গে দেশের কিছু মানুষ জড়িত এখন তাদের সঙ্গে যারা দেশের বাইরে একাজ করছে তারও নিশ্চিত বাংলাদেশের মানুষ, তাহলে দেশের বাইরে আমরা যারা বসবাস করছি তারাও যে এক্ষেত্রে ভালো মানুষ না বললে নিশ্চয়ই ভুল হবে না।

এখন কথা আছে, আমার সম্পদ আমি খরচ করব সেটা নিয়ে কেন কথা উঠবে? এখানে সমস্যা হচ্ছে সরকার আইন করেছে যেমন দশ হাজার ডলারের বেশি অর্থ বিদেশে বৈধ ভাবে নেওয়া যাবে না। এখন অনেকে বিদেশে তার নিজেস্ব অর্থ নিতে চায়, হতে পারে তার বা তার পরিবারের দরকার, সত্ত্বেও সে তার অর্থ নিতে পারছে না। সেক্ষেত্রে আইনকে নিজের হাতে তুলে নিয়ে বেআইনি ভাবে টাকা দেশ থেকে বের করতে বাধ্য হচ্ছে। এখন এই সুযোগে কিছু অসৎ লোক দেশ থেকে দুর্নীতি করে তাদের সেই দুর্নীতির অর্থ বিদেশে পাচার করে দেশকে ‘বটম লেস বাস্কেট বানাচ্ছে’।

আমি নিজে বহু বছর দেশের বাইরে। আমি সুইডেন থেকে দেশে অর্থ পাঠাই কখনও সুইডিশ সরকার আমাকে বাধা দেয়নি। আমি আমার সমস্ত সম্পদও যদি বাংলাদেশে পাঠাই কোনো সমস্যা নেই। অথচ বাংলাদেশে যে আমি এ যাবত ইনভেস্ট করলাম এখন আমার বৃদ্ধ বয়সে যদি আমার দরকারে সেই অর্থ কাজে লাগাতে না পারলাম তাহলে কি লাভ হলো আমার এতকিছু করে? এ ধরনের সমস্যা একটি গ্রুপ বিদেশি বাংলাদেশিদের বেশ বিরক্তিকর করে তুলেছে। এই গ্রুপের মানুষগুলো এখনও অবৈধ পথে চলতে শুরু করেনি কিন্তু দেশ যদি এর কোন সমাধান না করে তবে শেষে এরাও আইন লঙ্ঘন করতে শুরু করবে। আমি বলেছি স্বাধীনতা মানে স্বাধীনতা, যেখানে নিয়ম কানুনে কোন ফাঁক বা ঝামেলা থাকবে না। দুর্নীতির টাকা পাচার করা সহজ। কারণ সেটা অবৈধ টাকা, সে টাকা হুন্ডি করে পাঠাতে যদি অর্ধেক ঘুষ দিতে হয় সমস্যা নেই, কিন্তু যারা আজীবন কষ্ট করে কিছু সঞ্চয় করেছে সেই টাকা যদি হুন্ডির মাধ্যমে আনতে হয়ে এবং তার অর্ধেক যদি দালাল বা বাটপারদের দিতে হয় তাহলে কি ন্যায্য বিচার হলো? দেশের সব সেক্টরে অন্যায়ের বন্যা বয়ে চলেছে। এই বন্যাকে বাঁধ দিয়েও ঠেকানো যাচ্ছে না দেশের দুর্বল অবকাঠামোর কারণে।

[লেখক: সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন]

নেতানিয়াহুর এক ভ্রান্ত কৌশলের মুখোমুখি ইসরায়েল

আসিয়ানে বাংলাদেশের অভিযাত্রা : সম্ভাবনার পথে কূটনৈতিক বাস্তবতা ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ

ভাঙছে নদী, গড়ছে দুঃখের গ্রাম

ছবি

গণঅভ্যুত্থান ও গণআকাক্সক্ষা : এক বছরে অর্জনটা কী?

ছবি

ভিন্নমত, ভিন্নপথ এবং প্রান্তজনের স্বপ্ন

আচরণগত অর্থনীতির আয়নায় বাংলাদেশিদের বিদেশযাত্রা

গরিবের ইলিশ শুধুই স্বপ্ন কেন?

চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান : বৈষম্য ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে জাগরণ

শারীরিক শিক্ষা : সুস্থ ও সচেতন প্রজন্ম গড়ার সম্ভাবনা

জ্ঞানতীর্থের সংকট ও গবেষণাবিমুখ উচ্চশিক্ষা

ছবি

জুলাই অভ্যুত্থান-গাথা : মেঘ থম থম করে

অলৌকিকতা, লৌকিকতা ও বিশ্বাসের বিভ্রান্তি

বিচারপতি গ্রেফতার, শুনানিতে পুলিশের অসহযোগিতা ও কিছু আইনি জিজ্ঞাসা

অপেক্ষার রাজনীতি ও সময়গত বৈষম্য : ঢাকা শহরের প্রেক্ষাপট

বৃক্ষরোপণ হোক পরিবেশ রক্ষার আন্দোলন

আফ্রিকায় রাশিয়ার ভূরাজনৈতিক কৌশল

বিভীষিকাময় দুর্ঘটনা ও করুণ মৃত্যু

কেন এত তরুণ দেশ ছাড়তে চাচ্ছে

রেলওয়ে পরিচালনায় আমলাতন্ত্রের প্রভাব

রম্যগদ্য : ‘গোপালগঞ্জ, বাংলার গোপালগঞ্জ...’

দেশি মাছ রক্ষায় অভয়াশ্রম

আলুর বাজার বিপর্যয় : কৃষকের ভাগ্যে লোকসান

ছবি

নীল নদের পানি নীল নয়

বিশ্ব বাঘ দিবস

ঢাকার কি রিস্ক এনালাইসিস করা আছে?

ছবি

সোনার হরফে লেখা অনন্য শিক্ষকের নাম

পরীক্ষার পর পরীক্ষা, কিন্তু কোথায় মূল্যায়ন ও মূল্যবোধের ভিত্তি?

বৃত্তি পরীক্ষায় কিন্ডারগার্টেন বাদ কেন?

সময়ের স্বৈরতন্ত্র : প্রতীক্ষা, ক্ষমতা ও জীবনের অসমতা

জলবায়ু পরিবর্তন মডেলে গণিতের ব্যবহার

দুর্ঘটনাজনিত দুর্যোগ-পরবর্তী করণীয় কী?

ডেঙ্গু, জিকা আর চিকুনগুনিয়া : একই উৎস, ত্রিমুখী সংকট

কেন থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়ার ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি?

দুর্নীতি নির্মূল করা কি সম্ভব?

দরকার মানসম্মত শিক্ষা

ইসরায়েলের যুদ্ধনীতি ও বিশ্ব নিরাপত্তার সংকট

tab

উপ-সম্পাদকীয়

হুন্ডি আর মানিলন্ডারিং কেন বন্ধ করা যায় না?

রহমান মৃধা

বৃহস্পতিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৩

দেশ এবং দেশের মানুষকে পরাধীন থেকে স্বাধীন করার পেছনে যে ক্ষোভ, আক্ষেপ বা যুক্তিগুলো আমাদের ছিল যেমন ছয় দফা থেকে শুরু করে নানা ধরনের শর্তাবলি, তার মধ্যে কি পড়ে যে আমরা স্বাধীন হলে দুর্নীতি, অনিয়ম, সরকারি কর্মচারীর কাছে জিম্মি, নিজ দেশে পরাধীন, হুন্ডি, মানিলন্ডারিং, গুম, ভেজাল- এর সব কিছু করব এবং বাঁক স্বাধীনতা হারাব? না, কথা ছিল একটি বাংলাদেশ আমরা গড়ব যেখানে ধর্ম, বর্ণ, হিংসা-বিদ্বেষ, ধনী-দরিদ্র, শিক্ষিত-অশিক্ষিত সবাই এক সঙ্গে বসবাস করব, সুখ-শান্তিতে এবং আমাদের জাতিয় সঙ্গীত “আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি” এই প্রতিজ্ঞায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে দেশকে সোনার বাংলা করব।

আমাদের একটি অংশ দেশে এবং বিদেশে বসবাস করছি তাদের বেশির ভাগই বেশ শিক্ষিত, দেখতে নাদুস-নুদুস, ভালো পরিবারের সন্তান, মানে উচ্চ রুচিসম্পন্ন বা এলিট শ্রেণির নাগরিক। অথচ আমরা দেশের অর্থ বিদেশে দিব্বি পাচার করছি নানা অসৎ উপায়ে, এটা কি রুচির মধ্যেই পড়ে? তাই যদি হয় তবে অরুচি বলতে আমরা কি বুঝাতে চাইছি! আমরা বলছি আমাদের পরিবর্তন হওয়া দরকার। পরিবর্তন হওয়া মানে ভালো থেকে খারাপ নয় বরং খারাপ থেকে ভালো হবার কথা বোঝানো হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে দেশের একটি আলোচিত ইস্যু রিজার্ভ সঙ্কট। রিজার্ভ সঙ্কটের জন্য রফতানির থেকে আমদানি বেশি হওয়ার পাশাপাশি আলোচিত হচ্ছে দেশ থেকে টাকা পাচার ও বিদেশ থেকে অবৈধ পথে দেশে টাকা পাঠানোর বিষয়টি। আর এই কর্মকান্ডের সঙ্গে উচ্চারিত হচ্ছে হুন্ডির নাম। বলা হচ্ছে, দেশ থেকে বিদেশে টাকা পাচার এবং বিদেশ থেকে অবৈধভাবে দেশে রেমিট্যান্স ঢুকছে মূলত হুন্ডির মাধ্যমে। এর ফলে সরকার একদিকে বঞ্চিত হচ্ছে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব থেকে। পাশাপাশি প্রবাসীরা তাদের আয় দেশে পাঠালেও হুন্ডির কারণে তা যোগ হচ্ছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডারে। সরকারের কোনো পদক্ষেপেই থামছে না হুন্ডির দৌরাত্ম বরং প্রযুক্তির সহায়তা এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দিন দিন আরও বেড়ে উঠছে হুন্ডির কারবার।

হুন্ডি হচ্ছে চোরাচালানি, সরকারকে ফাঁকি দিয়ে ব্যাংকিং পদ্ধতির বাইরের অর্থ লেনদেনের একটি উপায়। একে বাণিজ্যিক আদান প্রদান ও লেনদেনের অনানুষ্ঠানিক দলিলও বলা যেতে পারে। যার মাধ্যমে দুই পক্ষ বা ব্যক্তির মধ্যে টাকা লেনদেন হয়। বিশ্বের প্রচলিত ব্যাংকিং পদ্ধতির অনুসরণ হয় না বলে হুন্ডির লেনদেনে দেশের সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়। মধ্য যুগে ভারতে সম্পদ লেনদেনের জন্য প্রথম এই পদ্ধতির সূচনা হয়। বর্তমানে বৈধ পদ্ধতি এড়িয়ে বিদেশে টাকা পাচার এবং বিদেশ থেকে দেশে টাকা আনার কাজে হুন্ডি পদ্ধতিকে ব্যবহার করা হচ্ছে।ভ

প্রবাসীরা তাদের আয় দেশে পাঠালেও হুন্ডির কারণে তা যোগ হচ্ছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডারে। সরকারের কোনো পদক্ষেপেই থামছে না হুন্ডির দৌরাত্ম

তারপর চলছে মানি লন্ডারিং! কোনো অবৈধ অর্থকে বৈধ করাকে মানি লন্ডারিং বলা হয় বা যে প্রক্রিয়ায় কালো টাকা অর্থ লেনদেনের একটি কাহিনী বৃত্তের মধ্যে প্রবেশ করানো হয় তথা বিশোধিত করা হয়, যাতে তা অন্য প্রান্ত দিয়ে বৈধ অর্থ তথা সাদা টাকা হিসেবে বেরিয়ে আসে, অন্যভাবে বললে, বেআইনিভাবে প্রাপ্ত অর্থের উৎস পর্যায়ক্রমে স্থানান্তর এবং লেনদেনের মাধ্যমে গোপন করা হয়, যাতে সেই একই অর্থ শেষ পর্যন্ত বৈধ আয় হিসেবে দেখানো যায়। এটাও নিশ্চিত কোন ভালো রুচির পরিচয় না।

আমরা শুধু দেশের মানুষকে ছোট করে দেখি, তাদের দোষ ত্রুটি নিয়ে কথা বলি। অথচ আমরা যারা বিদেশে বসবাস করছি আমরা কেমন মানুষ?

হুন্ডির সঙ্গে দেশের কিছু মানুষ জড়িত এখন তাদের সঙ্গে যারা দেশের বাইরে একাজ করছে তারও নিশ্চিত বাংলাদেশের মানুষ, তাহলে দেশের বাইরে আমরা যারা বসবাস করছি তারাও যে এক্ষেত্রে ভালো মানুষ না বললে নিশ্চয়ই ভুল হবে না।

এখন কথা আছে, আমার সম্পদ আমি খরচ করব সেটা নিয়ে কেন কথা উঠবে? এখানে সমস্যা হচ্ছে সরকার আইন করেছে যেমন দশ হাজার ডলারের বেশি অর্থ বিদেশে বৈধ ভাবে নেওয়া যাবে না। এখন অনেকে বিদেশে তার নিজেস্ব অর্থ নিতে চায়, হতে পারে তার বা তার পরিবারের দরকার, সত্ত্বেও সে তার অর্থ নিতে পারছে না। সেক্ষেত্রে আইনকে নিজের হাতে তুলে নিয়ে বেআইনি ভাবে টাকা দেশ থেকে বের করতে বাধ্য হচ্ছে। এখন এই সুযোগে কিছু অসৎ লোক দেশ থেকে দুর্নীতি করে তাদের সেই দুর্নীতির অর্থ বিদেশে পাচার করে দেশকে ‘বটম লেস বাস্কেট বানাচ্ছে’।

আমি নিজে বহু বছর দেশের বাইরে। আমি সুইডেন থেকে দেশে অর্থ পাঠাই কখনও সুইডিশ সরকার আমাকে বাধা দেয়নি। আমি আমার সমস্ত সম্পদও যদি বাংলাদেশে পাঠাই কোনো সমস্যা নেই। অথচ বাংলাদেশে যে আমি এ যাবত ইনভেস্ট করলাম এখন আমার বৃদ্ধ বয়সে যদি আমার দরকারে সেই অর্থ কাজে লাগাতে না পারলাম তাহলে কি লাভ হলো আমার এতকিছু করে? এ ধরনের সমস্যা একটি গ্রুপ বিদেশি বাংলাদেশিদের বেশ বিরক্তিকর করে তুলেছে। এই গ্রুপের মানুষগুলো এখনও অবৈধ পথে চলতে শুরু করেনি কিন্তু দেশ যদি এর কোন সমাধান না করে তবে শেষে এরাও আইন লঙ্ঘন করতে শুরু করবে। আমি বলেছি স্বাধীনতা মানে স্বাধীনতা, যেখানে নিয়ম কানুনে কোন ফাঁক বা ঝামেলা থাকবে না। দুর্নীতির টাকা পাচার করা সহজ। কারণ সেটা অবৈধ টাকা, সে টাকা হুন্ডি করে পাঠাতে যদি অর্ধেক ঘুষ দিতে হয় সমস্যা নেই, কিন্তু যারা আজীবন কষ্ট করে কিছু সঞ্চয় করেছে সেই টাকা যদি হুন্ডির মাধ্যমে আনতে হয়ে এবং তার অর্ধেক যদি দালাল বা বাটপারদের দিতে হয় তাহলে কি ন্যায্য বিচার হলো? দেশের সব সেক্টরে অন্যায়ের বন্যা বয়ে চলেছে। এই বন্যাকে বাঁধ দিয়েও ঠেকানো যাচ্ছে না দেশের দুর্বল অবকাঠামোর কারণে।

[লেখক: সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন]

back to top