alt

উপ-সম্পাদকীয়

নিত্যপণ্যের দাম: মানুষের কষ্ট লাঘব হবে কবে

মিহির কুমার রায়

: বৃহস্পতিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৩
image

নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে

সীমিত আয়ের সাধারণ মানুষের এখন এক আতঙ্কের নাম মূল্যবৃদ্ধি যা অনেকের কাছে করোনার চেয়েও ভয়ঙ্কর বলে প্রতিয়মান হয়। বাজারে চালের দাম বাড়ছে। গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, খুচরা বাজারে বিভিন্ন ধরনের চালের দাম বেড়েছে। কিছুদিন আগেও আলু, ডিম, মরিচের দাম ছিল চড়া। পেঁয়াজের দামও বেশি। চাল বিক্রেতারা বলছে মিলারদের কারসাজিতে এখন চালের দর বাড়তি। তারা সিন্ডিকেট করে মিল পর্যায় থেকে সব ধরনের চালের দর বাড়িয়ে দিয়েছে। যে কারণে পাইকারি থেকে খুচরা পর্যায়ে চালের দর বেশি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, দেশে চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজসহ সব পণ্যেরই মজুত ও সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে।নির্বাচনী বছরকে কেন্দ্র করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অনৈতিক লাভের নেশায় মেতে উঠেছে। কেউ কেউ পণ্য মজুত করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে। এতে নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। কষ্ট বাড়ছে নিম্নআয়ের মানুষের। মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলছে, নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে সরকার। কোনো পরিস্থিতিতেই বাজার যাতে অস্থির হতে না পারে সেজন্য কৌশল নির্ধারণও করা হচ্ছে। পণ্যের সরবরাহ ঠিক রাখার পাশাপাশি প্রয়োজন সাপেক্ষে আমদানিনির্ভর পণ্যগুলোর সরবরাহ ঠিক রাখার জন্য আমদানির পরিমাণ বাড়িয়ে মজুত স্বাভাবিক রাখা হচ্ছে যেমন আলু ও ডিম আমদানি শুরু হয়েছে। নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতির পেছনে রয়েছে অনেক কারণ। কারণ যাই হোক না কেন, দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া সাধারণ মানুষের কিছু করার নেই। বাজার নিয়ন্ত্রণে অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও বাজারবিশ্লেষক সবাই নানা ফর্মুলার কথা বললেও অধিকাংশই ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষণের আভাস দিচ্ছে। তবে যোই বলা হোক না কেন, সবকিছুর পেছনে আমাদের নীতি-আদর্শহীন, মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের কারসাজি নিয়ে কেউ তেমন একটা বলতে চান না। তাহলে হয়তো নিজেদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হবে। অথবা ব্যবসায়ীদের প্রভাব এত বেশি যে, তারা এখন সরকারের নীতিনির্ধারক, গণমাধ্যম ও অর্থনীতিবিদের তাদের জালে আটকে রাখতে সক্ষম হয়েছে। গত সেপ্টেম্বর মাসে পেঁয়াজের বাজার অস্থির ছিল যা ছিল প্রতি কেজি ১২০ টাকা যা এখন কিছুটা কমতে শুরু করেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মোতাবেক, দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ৩০ লাখ টন। আর দেশে উৎপাদন হয় ২২-২৪ লাখ টন। বাদবাকি আমদানি করতে হয়। ভারতে গত বছর বন্যার অজুহাতে দেশে পেঁয়াজ সংকটে মানুষ নাকাল হয়েছিল। তখন অনেকের ধারণা ছিল, এ বছর পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে। গত বছরের অভিজ্ঞতা থেকে এ বছর সংকট সৃষ্টির আগেই পেঁয়াজ আমদানি করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়; কিন্তু এবারও যথারীতি সময়মতো পেঁয়াজ আমদানি হলো না। সংকটে সাধারণ ভোক্তা বিপর্যস্ত হল আর ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের পকেট ভরল। দেশের চাহিদার সিংহভাগ দেশীয় উৎপাদন দিয়ে মেটানো সম্ভব হলেও ব্যবসায়ীরা আমদানিকৃত পেঁয়াজ বিক্রিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। কারণ, পেপারলেস ব্যবসা হওয়ার কারণে আমদানিকৃত পেঁয়াজ নিয়ে ক্রেতাদের সহজেই বোকা বানানো যায়। ২০১৯ সালেও এসব ব্যবসায়ী একই কায়দায় পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছিল। এবারও তারা একই কায়দায় ক্রেতাদের পকেট কাটছে। নিত্যভোগ্যপণ্য বাজারের সবকিছুই এখন অশান্ত। চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। খেটে খাওয়া মানুষের মোটা চালের দাম বেশি অনেকদিন থেকেই। একজন সাধারণ শ্রমিকের জবানিতে জানা যায়, তার সংসারে তিনবেলায় চার কেজি চাল ও দুই কেজি আটা লাগে। আড়াইশ টাকা চলে যায় চাল কেনাতেই। লবণ, তেল, ডাল, পেঁয়াজ কেনা কঠিন হয়ে পড়ে। মাছ, মাংস আর ডিমের চিন্তা তো করাই যায় না। বলার অপেক্ষো রাখে না, বিগত বছরগুলোতে একবার পেঁয়াজ, একবার চাল, একবার সয়াবিন এবং সর্বশেষ আলুর মূল্যবৃদ্ধিতে ভোক্তাদের নাভিশ্বাস উঠেছে। সামনে নির্বাচন। এটা নিয়ে চলছে অনেক হিসাবনিকাশ। রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ চরিতার্থ করতে যখন সব পক্ষকে খুশি রাখতে হয় তখন জনকল্যাণ হয়ে যায় গৌণ। তাই আমাদের নিত্যভোগ্যপণ্যের বাজার এখন সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই, এটি ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। এ অবস্থায় ব্যবসায়ীরা যেভাবে চাইবে, সেভাবেই বাজার পরিচালিত হবে। নিত্যভোগ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির অভিযোগ উঠলেই ব্যবসায়ীরা মুক্তবাজার অর্থনীতির কথা বলেন। আর আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির অজুহাতে ব্যবসায়ীরা বারবার তাৎক্ষণিক দাম বাড়ালেও বিদেশে দাম কমলে তার প্রতিফলন দেখা যায় না; তখন উল্টো সুর- বেশি দামে কেনা, লোকসান দিয়ে বিক্রি করব নাকি? তাই ভোক্তাকে সুরক্ষা দিতে হবে রাষ্ট্রকেই। কিন্তু নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণের মতো জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সরকারি সংস্থাগুলোর চরম উদাসীনতা ও ব্যর্থতা রয়েছে। এ কারণে সরকারের অনেক সাফল্য কিছুটা হলেও ম্লান করেছে। যে কোনো পণ্যের দাম বাড়লে বা কৃত্রিম সংকট তৈরি হলে ইতোপূর্বে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসন ওই খাতের ব্যবসায়ী, ভোক্তা ও প্রশাসনের লোকজন নিয়ে করণীয় বিষয়ে পরামর্শ সভা করে বিকল্প উৎস থেকে আমদানি করা, বাজার তদারকি জোরদার করে মজুদদারি ঠেকানো, আমদানিকারকের এজেন্ট পরিচয়ে অবৈধ পেপারলেস ব্যবসা বন্ধ, পেঁয়াজসহ নিত্যভোগ্যপণ্যের ব্যবসায়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, বিকল্প বাজার হিসেবে খাদ্য বিভাগের আওতায় বাজারে ওএমএস চালু, টিসিবির মাধ্যমে খোলাবাজারে পণ্য বিক্রির উদ্যোগ ইত্যাদির মাধ্যমে অস্থিরতা ঠেকানোর নজির থাকলেও ইদানীং ব্যবসায়ীদের ওপর সবকিছু ছেড়ে দিয়েছে যা কাম্য নয়। ২৮ অক্টোবর থেকে রাজনীতিতে যে সহিংসতা শুরু হয়েছে, তা অব্যাহত আছে। এর মধ্যে বিএনপি দফায় দফায় হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে। দলটির অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে আনুষ্ঠানিক কোনো সংবাদ সম্মেলন করার অবস্থায়ও নেই। দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিবকে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন করে নতুন কর্মসূচির ঘোষণা দিতে হয়েছে। বিএনপির আন্দোলনের কৌশল আদৌ কার্যকর কিছু হবে কিনা, তা বোঝার জন্য আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। তবে নিত্যপণ্যের বাজারে এর মধ্যে যে তার প্রভাব পড়েছে এবং ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

[লেখক: অধ্যাপক, সিটি ইউনিভার্সিটি]

জামাই মেলা : উৎসব, ঐতিহ্য ও কৃষ্টির রঙিন চিত্রপট

হারিয়ে যাওয়া ক্লাস, কঠোর মূল্যায়ন আর প্রশ্নের জটিলতায় নুয়ে পড়া এক প্রজন্ম

বৈষম্য দূর করে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলুন

চিকিৎসা যেন বাণিজ্যের হাতিয়ারে পরিণত না হয়

পথশিশু ও বাংলাদেশে সামাজিক চুক্তির ব্যর্থতা

মেগা প্রকল্প : প্রশ্ন হওয়া উচিত স্বচ্ছতা নিয়ে

আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া জরুরি

স্মার্ট দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা : উপগ্রহ চিত্র ও ওয়েবসাইটের অপরিহার্যতা

ক্ষমতা ও জনপ্রশাসন : আমলাতন্ত্রের ছায়াতলে আমজনতা

জনসংখ্যা : সম্পদ না সংকট?

ব্রিকসে নতুন ভূ-রাজনৈতিক ব্যবস্থার উত্থান

রম্যগদ্য : ‘ল্যাংড়া-লুলা, আতুড়-পাতুড়’

আষাঢ়ী পূর্ণিমা : আত্মশুদ্ধির সাধনায় বুদ্ধের অনন্ত আলো

বদলে যাওয়া মাটিতে সাহসী বীজ : জলবায়ুর বিপরীতে বাংলাদেশের কৃষির অভিযোজনগাথা

ছবি

জুলাই অভ্যুত্থান-গাথা : ‘শিকলে নাহি দিব ধরা’

প্রাচীন যৌধেয় জাতি ও তাদের সাম্যবাদী শাসন

গণঅভ্যুত্থান-উত্তর ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের স্বপ্ন

টেকসই উন্নয়নের স্বপ্নপূরণে উপগ্রহ চিত্রই চাবিকাঠি

রাবার শিল্প : সংকট, করণীয় ও উত্তরণের দিশা

রম্যগদ্য : দুধ, দই, কলা...

ছবি

কোপার্নিকাস : আলো হয়ে জন্ম নেওয়া বৈপ্লবিক মতবাদের প্রবর্তক

জলবায়ু সংকটে মানবসভ্যতা

টেকসই অর্থনীতির জন্য চাই টেকসই ব্যাংকিং

ডিজিটাল দাসত্ব : মনোযোগ অর্থনীতি ও জ্ঞান পুঁজিবাদে তরুণ প্রজন্মের মননশীলতার অবক্ষয়

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার : আস্থা ভঙ্গ ও জবাবদিহিতার সংকট

আসামি এখন নির্বাচন কমিশন

কোথায় হারাল একান্নবর্তী পরিবার?

এই শান্তি কি মহাঝড়ের পূর্বলক্ষণ?

মেগাসিটি : দারিদ্র্য যখন ‘অবাঞ্ছিত বর্জ্য’

ফলের রাজ্য পার্বত্য চট্টগ্রাম

ছবি

তৃতীয় শক্তির জন্য জায়গা খালি : বামপন্থীরা কি ঘুরে দাঁড়াতে পারে না

জমি আপনার, দখল অন্যের?

সিধু-কানু : ধ্বংসস্তূপের নিচেও জেগে আছে সাহস

ছবি

বাংলার অনন্য লোকসংস্কৃতি ও গণতান্ত্রিক চেতনা

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সাম্পান

তিন দিক থেকে স্বাস্থ্যঝুঁকি : করোনা, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া

tab

উপ-সম্পাদকীয়

নিত্যপণ্যের দাম: মানুষের কষ্ট লাঘব হবে কবে

মিহির কুমার রায়

image

নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে

বৃহস্পতিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৩

সীমিত আয়ের সাধারণ মানুষের এখন এক আতঙ্কের নাম মূল্যবৃদ্ধি যা অনেকের কাছে করোনার চেয়েও ভয়ঙ্কর বলে প্রতিয়মান হয়। বাজারে চালের দাম বাড়ছে। গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, খুচরা বাজারে বিভিন্ন ধরনের চালের দাম বেড়েছে। কিছুদিন আগেও আলু, ডিম, মরিচের দাম ছিল চড়া। পেঁয়াজের দামও বেশি। চাল বিক্রেতারা বলছে মিলারদের কারসাজিতে এখন চালের দর বাড়তি। তারা সিন্ডিকেট করে মিল পর্যায় থেকে সব ধরনের চালের দর বাড়িয়ে দিয়েছে। যে কারণে পাইকারি থেকে খুচরা পর্যায়ে চালের দর বেশি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, দেশে চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজসহ সব পণ্যেরই মজুত ও সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে।নির্বাচনী বছরকে কেন্দ্র করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অনৈতিক লাভের নেশায় মেতে উঠেছে। কেউ কেউ পণ্য মজুত করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে। এতে নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। কষ্ট বাড়ছে নিম্নআয়ের মানুষের। মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলছে, নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে সরকার। কোনো পরিস্থিতিতেই বাজার যাতে অস্থির হতে না পারে সেজন্য কৌশল নির্ধারণও করা হচ্ছে। পণ্যের সরবরাহ ঠিক রাখার পাশাপাশি প্রয়োজন সাপেক্ষে আমদানিনির্ভর পণ্যগুলোর সরবরাহ ঠিক রাখার জন্য আমদানির পরিমাণ বাড়িয়ে মজুত স্বাভাবিক রাখা হচ্ছে যেমন আলু ও ডিম আমদানি শুরু হয়েছে। নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতির পেছনে রয়েছে অনেক কারণ। কারণ যাই হোক না কেন, দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া সাধারণ মানুষের কিছু করার নেই। বাজার নিয়ন্ত্রণে অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও বাজারবিশ্লেষক সবাই নানা ফর্মুলার কথা বললেও অধিকাংশই ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষণের আভাস দিচ্ছে। তবে যোই বলা হোক না কেন, সবকিছুর পেছনে আমাদের নীতি-আদর্শহীন, মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের কারসাজি নিয়ে কেউ তেমন একটা বলতে চান না। তাহলে হয়তো নিজেদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হবে। অথবা ব্যবসায়ীদের প্রভাব এত বেশি যে, তারা এখন সরকারের নীতিনির্ধারক, গণমাধ্যম ও অর্থনীতিবিদের তাদের জালে আটকে রাখতে সক্ষম হয়েছে। গত সেপ্টেম্বর মাসে পেঁয়াজের বাজার অস্থির ছিল যা ছিল প্রতি কেজি ১২০ টাকা যা এখন কিছুটা কমতে শুরু করেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মোতাবেক, দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ৩০ লাখ টন। আর দেশে উৎপাদন হয় ২২-২৪ লাখ টন। বাদবাকি আমদানি করতে হয়। ভারতে গত বছর বন্যার অজুহাতে দেশে পেঁয়াজ সংকটে মানুষ নাকাল হয়েছিল। তখন অনেকের ধারণা ছিল, এ বছর পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে। গত বছরের অভিজ্ঞতা থেকে এ বছর সংকট সৃষ্টির আগেই পেঁয়াজ আমদানি করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়; কিন্তু এবারও যথারীতি সময়মতো পেঁয়াজ আমদানি হলো না। সংকটে সাধারণ ভোক্তা বিপর্যস্ত হল আর ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের পকেট ভরল। দেশের চাহিদার সিংহভাগ দেশীয় উৎপাদন দিয়ে মেটানো সম্ভব হলেও ব্যবসায়ীরা আমদানিকৃত পেঁয়াজ বিক্রিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। কারণ, পেপারলেস ব্যবসা হওয়ার কারণে আমদানিকৃত পেঁয়াজ নিয়ে ক্রেতাদের সহজেই বোকা বানানো যায়। ২০১৯ সালেও এসব ব্যবসায়ী একই কায়দায় পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছিল। এবারও তারা একই কায়দায় ক্রেতাদের পকেট কাটছে। নিত্যভোগ্যপণ্য বাজারের সবকিছুই এখন অশান্ত। চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। খেটে খাওয়া মানুষের মোটা চালের দাম বেশি অনেকদিন থেকেই। একজন সাধারণ শ্রমিকের জবানিতে জানা যায়, তার সংসারে তিনবেলায় চার কেজি চাল ও দুই কেজি আটা লাগে। আড়াইশ টাকা চলে যায় চাল কেনাতেই। লবণ, তেল, ডাল, পেঁয়াজ কেনা কঠিন হয়ে পড়ে। মাছ, মাংস আর ডিমের চিন্তা তো করাই যায় না। বলার অপেক্ষো রাখে না, বিগত বছরগুলোতে একবার পেঁয়াজ, একবার চাল, একবার সয়াবিন এবং সর্বশেষ আলুর মূল্যবৃদ্ধিতে ভোক্তাদের নাভিশ্বাস উঠেছে। সামনে নির্বাচন। এটা নিয়ে চলছে অনেক হিসাবনিকাশ। রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ চরিতার্থ করতে যখন সব পক্ষকে খুশি রাখতে হয় তখন জনকল্যাণ হয়ে যায় গৌণ। তাই আমাদের নিত্যভোগ্যপণ্যের বাজার এখন সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই, এটি ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। এ অবস্থায় ব্যবসায়ীরা যেভাবে চাইবে, সেভাবেই বাজার পরিচালিত হবে। নিত্যভোগ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির অভিযোগ উঠলেই ব্যবসায়ীরা মুক্তবাজার অর্থনীতির কথা বলেন। আর আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির অজুহাতে ব্যবসায়ীরা বারবার তাৎক্ষণিক দাম বাড়ালেও বিদেশে দাম কমলে তার প্রতিফলন দেখা যায় না; তখন উল্টো সুর- বেশি দামে কেনা, লোকসান দিয়ে বিক্রি করব নাকি? তাই ভোক্তাকে সুরক্ষা দিতে হবে রাষ্ট্রকেই। কিন্তু নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণের মতো জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সরকারি সংস্থাগুলোর চরম উদাসীনতা ও ব্যর্থতা রয়েছে। এ কারণে সরকারের অনেক সাফল্য কিছুটা হলেও ম্লান করেছে। যে কোনো পণ্যের দাম বাড়লে বা কৃত্রিম সংকট তৈরি হলে ইতোপূর্বে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসন ওই খাতের ব্যবসায়ী, ভোক্তা ও প্রশাসনের লোকজন নিয়ে করণীয় বিষয়ে পরামর্শ সভা করে বিকল্প উৎস থেকে আমদানি করা, বাজার তদারকি জোরদার করে মজুদদারি ঠেকানো, আমদানিকারকের এজেন্ট পরিচয়ে অবৈধ পেপারলেস ব্যবসা বন্ধ, পেঁয়াজসহ নিত্যভোগ্যপণ্যের ব্যবসায়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, বিকল্প বাজার হিসেবে খাদ্য বিভাগের আওতায় বাজারে ওএমএস চালু, টিসিবির মাধ্যমে খোলাবাজারে পণ্য বিক্রির উদ্যোগ ইত্যাদির মাধ্যমে অস্থিরতা ঠেকানোর নজির থাকলেও ইদানীং ব্যবসায়ীদের ওপর সবকিছু ছেড়ে দিয়েছে যা কাম্য নয়। ২৮ অক্টোবর থেকে রাজনীতিতে যে সহিংসতা শুরু হয়েছে, তা অব্যাহত আছে। এর মধ্যে বিএনপি দফায় দফায় হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে। দলটির অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে আনুষ্ঠানিক কোনো সংবাদ সম্মেলন করার অবস্থায়ও নেই। দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিবকে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন করে নতুন কর্মসূচির ঘোষণা দিতে হয়েছে। বিএনপির আন্দোলনের কৌশল আদৌ কার্যকর কিছু হবে কিনা, তা বোঝার জন্য আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। তবে নিত্যপণ্যের বাজারে এর মধ্যে যে তার প্রভাব পড়েছে এবং ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

[লেখক: অধ্যাপক, সিটি ইউনিভার্সিটি]

back to top