alt

উপ-সম্পাদকীয়

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রতি ভূমিদস্যুদের অত্যাচার কবে শেষ হবে

বাবুল রবিদাস

: বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩

আদিবাসী বা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জনগণ অনগ্রসর পিছে পড়া জাতি। তারা অত্যন্ত সহজ-সরল। এসব অনগ্রসর জাতিকে রক্ষার জন্য সরকার বিভিন্ন সময় আইন তৈরি করেছে। কিন্তু চালাক-চতুর সন্ত্রাসী ও ভূমিখেকোরা এসব জাতির মধ্যে কৌশলে অনুপ্রবেশ করে ভাই-ভাইয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব লাগিয়ে তাদের (আদিবাসী) ভূমিকে গ্রাস করছে। তার এক বাস্তব ঘটনা পাঠকদের মাঝে তুলে ধরার চেষ্টা করলাম।

জয়পুরহাট জেলার অন্তর্গত পাঁচবিবি থানার আটাপুর ইউনিয়ন পরিষদ। এ ইউনিয়নের গ্রাম সূর্য্যাপুর উচাই। এ গ্রামের বাসিন্দা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী তথা আদিবাসী সি,এস খতিয়ান মূল মালিক (৩২৬) গঙ্গারাম ওরাং পিতা মৃত ভাদোয়া ছিল। তার সম্পত্তি ছিল ১৫ একর। গঙ্গারাম ওরাং এক পুত্র সন্তান ও ১৫ একর সম্পত্তি নির্দয় অবস্থায় রেখে মৃত্যুবরণ করে। এক পুত্রের নাম বুধুয়া উড়াও।

অতঃপর বুধুয়া উড়াও ১৫ একর সম্পত্তি পৈতৃক ওয়ারিশ মূলে ভোগদখলে থাকা অবস্থায় তিনপুত্র যথাক্রমে বিরষা উড়াও, গঙ্গারাম উড়াও, বুদু উড়াওকে ওয়ারিশ রেখে মৃত্যুবরণ করেন। উপরোক্ত তিন পুত্রের মধ্যে গঙ্গারাম উড়াও পিতা বুধুয়া উড়াও ছিল অত্যন্ত চালাক চতুর লোক। ১৯৬২ সালের রেকর্ডে ১৫ একর সম্পত্তি এম,আর,আর খতিয়ানে গঙ্গারাম উড়াও এর নামে গোপনে করে রাখা প্রকাশ পায়।

তারপর বিরষা উড়াও ১৯৬২ সালের কাগজপত্র সংগ্রহ করে জানতে পারে যে, ১৫ একর সম্পত্তি সম্পূর্ণটা তার সহদোর ভ্রাতা গঙ্গারাম উড়াও করে রেখেছে। এমন পরিস্থিতিতে বিরষা উড়াও সব ভাইদের সঙ্গে ঘরোয়াভাবে বসে আপোষ মিমাংসা করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এমতাবস্থায় বিরষা উড়াও পৈতৃক সম্পত্তির ভাগ বা বণ্টন নামা মূলে প্রাপ্তির লক্ষ্যে জয়পুরহাট সাব জজ আদালতে ১৬৯/১৯৮৫ বণ্টন মামলা দায়ের করে।

দীর্ঘদিন মামলা চলার পর আদালতে ওয়ারিশ সনদ, কাগজপত্র, সাক্ষ্য প্রমাণ দৃষ্টে বিগত ২০/০৬/১৯৮৭ তারিখে দু তরফা সূত্রে প্রাথমিক ডিক্রি মতে প্রত্যেক ভাইকে ০৫ একর সম্পত্তি করে প্রদান করেন। তারপর কমিশন রিপোর্ট মতে চূড়ান্ত ডিক্রি ছাহামপ্রাপ্ত হয়। ৪/১৯৮৮ বণ্টন ডিক্রিজারি মামলা মূলে বিজ্ঞ কোর্ট লাল পতাকা মূলে বিরষা উড়াওকে দখল প্রদান করেন। কিন্তু বিরষা উড়াও বয়োবৃদ্ধের কারণে মৃত্যুবরণ করে থাকে। এক পুত্র কমল চন্দ্র খালকো কোর্ট থেকে দখলপ্রাপ্ত ০৫ একর সম্পত্তি গঙ্গারাম উড়াও পূত্র অর্জুন উড়াও ভূয়া অ্যাগ্রিমেন্ট তৈরি করে ক্ষতিগ্রস্ত করার লক্ষ্যে প্রভাশালী ব্যক্তি নাজিমা খানম (ইউপি সদস্য) ও তার স্বামী তোমেজ উদ্দিন মন্ডল দ্বারা কোর্টের বণ্টননামা মূলে মামলার সম্পত্তি জোরপূর্বক দখল করে নেয়।

মামলা চলাকালীন (নাতি) গঙ্গারাম উড়াও মৃত্যুবরণ করে। তার এক পুত্র অর্জুন উড়াও থাকে। অজুর্ন উড়াও ১৬৯/১৯৮৫নং মোকদ্দমার বিরুদ্ধে ৫১/৮৮ নং বণ্টন আপিল মামলা দায়ের করে তবে তাহা তামাদি দোষে বিগত ১২/০১/১৯৯২ তারিখে খারিজ হয়। তারপর ৩৪/২০০২ নং চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার মামলা বিরষা উড়াও এর পুত্র কমল চন্দ্র খালকোর বিরুদ্ধে দায়ের করে পরাজিত হন। এছাড়া মামলা নং (১) ৫৫/৯৮নং (২) ৬৩২/২০০১ নং, (৩) ৩২৩৭/২০০১নং (৪) ২৬৯/৮৮ নং, (৫) ৩৪৭/২০১৬নং (৬) ৫৬/২০২২ নং (৭) ২১৩/২১নং (৮) ৫৬পি/২২ (পাঁচ) নং, (৯) এনজিআর ৪৩/২৩নং বিভিন্ন মামলা দায়ের করেও পরাজিত হন।

পাঠকরা বলা হয় ন্যায় পরায়ণতা সব সময় আইনকে অনুসরণ করে। বিজ্ঞ কোর্ট থেকে যেখানে ৫ (পাঁচ) একর অর্থাৎ ১৫ বিঘা সম্পত্তি বিরষা উড়াও পুত্র কমল চন্দ্র খালকো বণ্টনমূলে দখল দেয়া হয়। সেখানেও অর্জুন উড়াও এর লেলিয়ে দেয়া প্রভাবশালীদের দ্বারা পরিমাণ ১.১৯ একর সম্পত্তি জোরপূর্বক ভুয়া অ্যাগ্রিমেন্ট মূলে খাওয়া কি যুক্তিযুক্ত? অ-প্রকৃত মালিকের সঙ্গে অ্যাগ্রিমেন্টের চুক্তি হয় মাত্র ৭ বছরের জন্য। যে অ্যাগ্রিমেন্ট দেখানো হচ্ছে সে তো জমির মালিক নন কি প্রকৃত ওয়ারিশন নয়। তিনি তৃতীয় ব্যক্তি বটে। এ প্রসঙ্গে ১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের ৯৫ (১) ধারায় উল্লেখ রয়েছে যে, প্রকৃত কোনো কৃষক তার কৃষি জমির মালিক তার সম্পত্তি অনাধিক ০৭ (সাত) বৎসরের জন্য সম্পূর্ণ খায়খালাসি রেহেন (বন্ধক) রেখে টাকা বা কর্জ গ্রহণ করিতে পাবেন। কোনো রায়ত (প্রজা) এরূপ খায়খালাসি রেহেন (বন্ধক) ব্যতীত অন্যকোন প্রকার রেহেন কে তার জোত-জমা বা উহার কোনো অংশ বিশেষ দায়বদ্ধ বা আবদ্ধ রাখতে পারবে না।

ভিকটিম কমল চন্দ্র খালকো প্রভাবশালী ও আইন অমান্যকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ০৪/০১/২০১০ তারিখে পুলিশ সুপার বরাবর সন্ত্রাসী কায়দায় ভুয়া অ্যাগ্রিমেন্ট তৈরি ও চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা থাকা স্বত্বেও আদিবাসীর জমি জবরদখল বিষয়ে কমল খালকো দরখাস্ত প্রদান করেন। তারপর ০৪/১২/২০১৯ তারিখে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর ভূমিদস্যুদের দ্বারা ভূমি হাড়াইড়া মানবেতর জীবনযাপন, জয়পুরহাট জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদনে ও কোনো ফল পান নাই বলে জানান ভিকটিম কমল চন্দ্র খালকো। উপরোন্ত তার নামে ৫৯৮ রেকর্ড ৫৮০০ দাগের ৪৩০০ বসতবাড়ির জায়গায় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন হামলা জবর-দখলের চেষ্টা চালিয়েছেন আইন ভঙ্গকারীরা।

সস্ত্রাসী ও ভূমি জবর-দখলকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ১৩ জুলাই ২০২০ তারিখে একটি দৈনিক পত্রিকায় গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ পায়। আইনমান্যকারী ব্যক্তি ভিকটিম কমল চন্দ্র খালকো আবেগ আপ্লুত কণ্ঠে জানান আমি একাই লড়াই করছি পৈতৃক মূলে বণ্টনসূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি রক্ষার জন্য। বিভিন্ন সময় থানায় আশ্রয় গ্রহণ করেছি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এসে চলে যায়, পরবর্তীতে আমি ৯৯৯-এ ফোন করলে পুলিশ এসে চলে যায়। এভাবে আর কতদিন চলব? আমার বয়স এখন ৭৫ বছর আমার স্ত্রী বিগত হয়েছে। বর্তমানে এক পুত্র বিনয় চন্দ্র খালকো। তার জমি জমা রক্ষা ও উদ্ধার করে দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট মহলের প্রতি অনুরোধ জানান। ২৫ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে তার বসতবাড়ির জায়গা দখলের লক্ষ্যে ভিকটিম কমল চন্দ্র খালকোকে শারীরিকভাবে আক্রমণ করে আহত করলে তিনি মহিপুর হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসাপত্র গ্রহণ করেন। এভাবে আর কতদিন কমল চন্দ্র খালকো অত্যাচারিত হবেন।

আইন সব সময় দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন করে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর লোকেরা পিছিয়ে পড়া জাতি। তাই কমল চন্দ্র খালকোকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সব সময় পাশে থাকবেন বলে অনেকেই আশা করেন। পক্ষান্তরে কমল চন্দ্র খালকোর সম্পত্তি ১.১৯ একর রক্ষার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রতি আহ্বান জানান। দেশের সুশীল সমাজ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর পাশে থেকে অত্যাচার ও নির্যাতন রুখে দেবেন। কারণ নাগরিকের জান-মাল নিরাপত্তার বিধান করা দায়িত্ব ও কর্তব্য বটে।

[লেখক: অ্যাডভোকেট,

জজ কোর্ট, জয়পুরহাট]

বিয়ের কিছু লোকাচার ও অপব্যয় প্রসঙ্গে

ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পকে রক্ষা করুন

তরুণদের দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি সম্ভব

শিশুমৃত্যু রোধে করণীয় কী

সিগমুন্ড ফ্রয়েড ও মনঃসমীক্ষণ

ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ও বাস্তবতা

স্বামী কিংবা স্ত্রীর পরবর্তী বিয়ের আইনি প্রতিকার ও বাস্তবতা

তথ্য-উপাত্তের গরমিলে বাজারে অস্থিরতা, অর্থনীতিতে বিভ্রান্তি

দেশে অফশোর ব্যাংকিংয়ের গুরুত্ব

ইরানে কট্টরপন্থার সাময়িক পরাজয়

পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থার ভবিষ্যৎ কী

ক্ষমতার সাতকাহন

জলবায়ু সংকট : আমাদের উপলব্ধি

নারী-পুরুষ চুড়ি পরি, দেশের অন্যায় দূর করি!

ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার সবার

ছবি

সাধারণ মানুষেরা বড় অসাধারণ

চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ও কারিগরি শিক্ষা

মাদক রুখতে গড়ে তুলতে হবে সামাজিক প্রতিরোধ

পারিবারিক অপরাধপ্রবণতা ও কয়েকটি প্রশ্ন

ডারউইনকে খুঁজে পেয়েছি

চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ফসল উৎপাদন করা জরুরি

পিএসসি প্রশ্নফাঁসের দায় এড়াবে কীভাবে

এত উন্নয়নের পরও বাসযোগ্যতায় কেন পিছিয়েই থাকছে ঢাকা

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য কি কেউ নেই?

জলবায়ু রক্ষায় কাজের কাজ কি কিছু হচ্ছে

অধরার হাতে সমর্পিত ক্ষমতা

প্রসঙ্গ : কোটাবিরোধী আন্দোলন

রম্যগদ্য : যে করিবে চালাকি, বুঝিবে তার জ্বালা কী

একটি মিথ্যা ধর্ষণ মামলার পরিণতি

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা কেন শ্রেণীকক্ষের বাইরে

মেধা নিয়ে কম মেধাবীর ভাবনা

প্রজাতন্ত্রের সেবক কেন ফ্রাঙ্কেনস্টাইন বনে যান

ছবি

বাইডেন কি দলে বোঝা হয়ে যাচ্ছেন?

ছবি

দুই যুগের পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

সাপ উপকারী প্রাণীও বটে!

ছবি

বাস্তববাদী রাজনীতিক জ্যোতি বসু

tab

উপ-সম্পাদকীয়

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রতি ভূমিদস্যুদের অত্যাচার কবে শেষ হবে

বাবুল রবিদাস

বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩

আদিবাসী বা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জনগণ অনগ্রসর পিছে পড়া জাতি। তারা অত্যন্ত সহজ-সরল। এসব অনগ্রসর জাতিকে রক্ষার জন্য সরকার বিভিন্ন সময় আইন তৈরি করেছে। কিন্তু চালাক-চতুর সন্ত্রাসী ও ভূমিখেকোরা এসব জাতির মধ্যে কৌশলে অনুপ্রবেশ করে ভাই-ভাইয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব লাগিয়ে তাদের (আদিবাসী) ভূমিকে গ্রাস করছে। তার এক বাস্তব ঘটনা পাঠকদের মাঝে তুলে ধরার চেষ্টা করলাম।

জয়পুরহাট জেলার অন্তর্গত পাঁচবিবি থানার আটাপুর ইউনিয়ন পরিষদ। এ ইউনিয়নের গ্রাম সূর্য্যাপুর উচাই। এ গ্রামের বাসিন্দা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী তথা আদিবাসী সি,এস খতিয়ান মূল মালিক (৩২৬) গঙ্গারাম ওরাং পিতা মৃত ভাদোয়া ছিল। তার সম্পত্তি ছিল ১৫ একর। গঙ্গারাম ওরাং এক পুত্র সন্তান ও ১৫ একর সম্পত্তি নির্দয় অবস্থায় রেখে মৃত্যুবরণ করে। এক পুত্রের নাম বুধুয়া উড়াও।

অতঃপর বুধুয়া উড়াও ১৫ একর সম্পত্তি পৈতৃক ওয়ারিশ মূলে ভোগদখলে থাকা অবস্থায় তিনপুত্র যথাক্রমে বিরষা উড়াও, গঙ্গারাম উড়াও, বুদু উড়াওকে ওয়ারিশ রেখে মৃত্যুবরণ করেন। উপরোক্ত তিন পুত্রের মধ্যে গঙ্গারাম উড়াও পিতা বুধুয়া উড়াও ছিল অত্যন্ত চালাক চতুর লোক। ১৯৬২ সালের রেকর্ডে ১৫ একর সম্পত্তি এম,আর,আর খতিয়ানে গঙ্গারাম উড়াও এর নামে গোপনে করে রাখা প্রকাশ পায়।

তারপর বিরষা উড়াও ১৯৬২ সালের কাগজপত্র সংগ্রহ করে জানতে পারে যে, ১৫ একর সম্পত্তি সম্পূর্ণটা তার সহদোর ভ্রাতা গঙ্গারাম উড়াও করে রেখেছে। এমন পরিস্থিতিতে বিরষা উড়াও সব ভাইদের সঙ্গে ঘরোয়াভাবে বসে আপোষ মিমাংসা করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এমতাবস্থায় বিরষা উড়াও পৈতৃক সম্পত্তির ভাগ বা বণ্টন নামা মূলে প্রাপ্তির লক্ষ্যে জয়পুরহাট সাব জজ আদালতে ১৬৯/১৯৮৫ বণ্টন মামলা দায়ের করে।

দীর্ঘদিন মামলা চলার পর আদালতে ওয়ারিশ সনদ, কাগজপত্র, সাক্ষ্য প্রমাণ দৃষ্টে বিগত ২০/০৬/১৯৮৭ তারিখে দু তরফা সূত্রে প্রাথমিক ডিক্রি মতে প্রত্যেক ভাইকে ০৫ একর সম্পত্তি করে প্রদান করেন। তারপর কমিশন রিপোর্ট মতে চূড়ান্ত ডিক্রি ছাহামপ্রাপ্ত হয়। ৪/১৯৮৮ বণ্টন ডিক্রিজারি মামলা মূলে বিজ্ঞ কোর্ট লাল পতাকা মূলে বিরষা উড়াওকে দখল প্রদান করেন। কিন্তু বিরষা উড়াও বয়োবৃদ্ধের কারণে মৃত্যুবরণ করে থাকে। এক পুত্র কমল চন্দ্র খালকো কোর্ট থেকে দখলপ্রাপ্ত ০৫ একর সম্পত্তি গঙ্গারাম উড়াও পূত্র অর্জুন উড়াও ভূয়া অ্যাগ্রিমেন্ট তৈরি করে ক্ষতিগ্রস্ত করার লক্ষ্যে প্রভাশালী ব্যক্তি নাজিমা খানম (ইউপি সদস্য) ও তার স্বামী তোমেজ উদ্দিন মন্ডল দ্বারা কোর্টের বণ্টননামা মূলে মামলার সম্পত্তি জোরপূর্বক দখল করে নেয়।

মামলা চলাকালীন (নাতি) গঙ্গারাম উড়াও মৃত্যুবরণ করে। তার এক পুত্র অর্জুন উড়াও থাকে। অজুর্ন উড়াও ১৬৯/১৯৮৫নং মোকদ্দমার বিরুদ্ধে ৫১/৮৮ নং বণ্টন আপিল মামলা দায়ের করে তবে তাহা তামাদি দোষে বিগত ১২/০১/১৯৯২ তারিখে খারিজ হয়। তারপর ৩৪/২০০২ নং চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার মামলা বিরষা উড়াও এর পুত্র কমল চন্দ্র খালকোর বিরুদ্ধে দায়ের করে পরাজিত হন। এছাড়া মামলা নং (১) ৫৫/৯৮নং (২) ৬৩২/২০০১ নং, (৩) ৩২৩৭/২০০১নং (৪) ২৬৯/৮৮ নং, (৫) ৩৪৭/২০১৬নং (৬) ৫৬/২০২২ নং (৭) ২১৩/২১নং (৮) ৫৬পি/২২ (পাঁচ) নং, (৯) এনজিআর ৪৩/২৩নং বিভিন্ন মামলা দায়ের করেও পরাজিত হন।

পাঠকরা বলা হয় ন্যায় পরায়ণতা সব সময় আইনকে অনুসরণ করে। বিজ্ঞ কোর্ট থেকে যেখানে ৫ (পাঁচ) একর অর্থাৎ ১৫ বিঘা সম্পত্তি বিরষা উড়াও পুত্র কমল চন্দ্র খালকো বণ্টনমূলে দখল দেয়া হয়। সেখানেও অর্জুন উড়াও এর লেলিয়ে দেয়া প্রভাবশালীদের দ্বারা পরিমাণ ১.১৯ একর সম্পত্তি জোরপূর্বক ভুয়া অ্যাগ্রিমেন্ট মূলে খাওয়া কি যুক্তিযুক্ত? অ-প্রকৃত মালিকের সঙ্গে অ্যাগ্রিমেন্টের চুক্তি হয় মাত্র ৭ বছরের জন্য। যে অ্যাগ্রিমেন্ট দেখানো হচ্ছে সে তো জমির মালিক নন কি প্রকৃত ওয়ারিশন নয়। তিনি তৃতীয় ব্যক্তি বটে। এ প্রসঙ্গে ১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের ৯৫ (১) ধারায় উল্লেখ রয়েছে যে, প্রকৃত কোনো কৃষক তার কৃষি জমির মালিক তার সম্পত্তি অনাধিক ০৭ (সাত) বৎসরের জন্য সম্পূর্ণ খায়খালাসি রেহেন (বন্ধক) রেখে টাকা বা কর্জ গ্রহণ করিতে পাবেন। কোনো রায়ত (প্রজা) এরূপ খায়খালাসি রেহেন (বন্ধক) ব্যতীত অন্যকোন প্রকার রেহেন কে তার জোত-জমা বা উহার কোনো অংশ বিশেষ দায়বদ্ধ বা আবদ্ধ রাখতে পারবে না।

ভিকটিম কমল চন্দ্র খালকো প্রভাবশালী ও আইন অমান্যকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ০৪/০১/২০১০ তারিখে পুলিশ সুপার বরাবর সন্ত্রাসী কায়দায় ভুয়া অ্যাগ্রিমেন্ট তৈরি ও চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা থাকা স্বত্বেও আদিবাসীর জমি জবরদখল বিষয়ে কমল খালকো দরখাস্ত প্রদান করেন। তারপর ০৪/১২/২০১৯ তারিখে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর ভূমিদস্যুদের দ্বারা ভূমি হাড়াইড়া মানবেতর জীবনযাপন, জয়পুরহাট জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদনে ও কোনো ফল পান নাই বলে জানান ভিকটিম কমল চন্দ্র খালকো। উপরোন্ত তার নামে ৫৯৮ রেকর্ড ৫৮০০ দাগের ৪৩০০ বসতবাড়ির জায়গায় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন হামলা জবর-দখলের চেষ্টা চালিয়েছেন আইন ভঙ্গকারীরা।

সস্ত্রাসী ও ভূমি জবর-দখলকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ১৩ জুলাই ২০২০ তারিখে একটি দৈনিক পত্রিকায় গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ পায়। আইনমান্যকারী ব্যক্তি ভিকটিম কমল চন্দ্র খালকো আবেগ আপ্লুত কণ্ঠে জানান আমি একাই লড়াই করছি পৈতৃক মূলে বণ্টনসূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি রক্ষার জন্য। বিভিন্ন সময় থানায় আশ্রয় গ্রহণ করেছি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এসে চলে যায়, পরবর্তীতে আমি ৯৯৯-এ ফোন করলে পুলিশ এসে চলে যায়। এভাবে আর কতদিন চলব? আমার বয়স এখন ৭৫ বছর আমার স্ত্রী বিগত হয়েছে। বর্তমানে এক পুত্র বিনয় চন্দ্র খালকো। তার জমি জমা রক্ষা ও উদ্ধার করে দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট মহলের প্রতি অনুরোধ জানান। ২৫ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে তার বসতবাড়ির জায়গা দখলের লক্ষ্যে ভিকটিম কমল চন্দ্র খালকোকে শারীরিকভাবে আক্রমণ করে আহত করলে তিনি মহিপুর হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসাপত্র গ্রহণ করেন। এভাবে আর কতদিন কমল চন্দ্র খালকো অত্যাচারিত হবেন।

আইন সব সময় দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন করে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর লোকেরা পিছিয়ে পড়া জাতি। তাই কমল চন্দ্র খালকোকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সব সময় পাশে থাকবেন বলে অনেকেই আশা করেন। পক্ষান্তরে কমল চন্দ্র খালকোর সম্পত্তি ১.১৯ একর রক্ষার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রতি আহ্বান জানান। দেশের সুশীল সমাজ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর পাশে থেকে অত্যাচার ও নির্যাতন রুখে দেবেন। কারণ নাগরিকের জান-মাল নিরাপত্তার বিধান করা দায়িত্ব ও কর্তব্য বটে।

[লেখক: অ্যাডভোকেট,

জজ কোর্ট, জয়পুরহাট]

back to top