সুধীর বরণ মাঝি
পাটকে বলা সোনালি আঁশ। আর সোনালি আঁশের দেশ, পাটের দেশ, আমার প্রিয় জন্মভূমি সোনার বাংলাদেশ। এই পাটের ভেতরে লুকিয়ে আছে কত না রহস্য। বিশ্বের অন্যান্য দেশের পাট উৎপাদনকারী দেশের চেয়ে বাংলাদেশের পাট অধিক উন্নত ও সমাদৃত। সুদূর প্রাচীন কাল থেকেই আমাদের পাট শিল্প ছিল অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি। পাট আমাদের জাতীয় অর্থকরি ফসল।
আমাদের জাতীয় পরিচয়ের মধ্যে পাট একটি প্রধান পরিচায়ক। এক সময় বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান হাতিয়ার ছিল এই পাট। ২০২১-২০২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ পাট ও পাটজাত পণ্য থেকে ১ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে। গত অর্থবছরে তা ১৯ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৯১ কোটি ২০ লাখ ডলার; যা আমাদের অর্থনীতির জন্য মারাত্মক হুমকি। অথচ এ খাতের রায়েছে প্রচুর সম্ভাবনা। এ খাতের পরিকল্পনামাফিক প্রয়োগ নিশ্চিত করতে পারলে আমাদের অর্থনীতিতে যৌবন আনা সম্ভব।
সোনালি আঁশ অন্যদিকে রূপালী কাঠি দুয়ে মিলে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে পাট। পাটকাঠি থেকে উচ্চমূল্যের অ্যাকটিভেটেড চারকোল উৎপাদন করে বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে; যা থেকে তৈরি করা হচ্ছে কার্বন পেপার, কম্পিউটার ও ফটোকপিয়ারের কালি, আতশবাজি, ফেসওয়াশের উপকরণ, ওয়াটার পিউরিফিকেশন প্লান্ট, মোবাইল ফোনের ব্যাটারি ও বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনী পণ্য। পাট থেকে এই অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে জীবাণু-প্রতিরোধী অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা নিয়ে যখন ক্রমশই উদ্বেগ ও হতাশা বাড়ছে তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী একেবারে নতুন ধরনের একটি অ্যান্টিবায়োটিকের সন্ধান পেয়েছেন। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই অ্যান্টিবায়োটিকের গঠন ও বৈশিষ্ট্য দেখে মনে হচ্ছে যে এটি শক্তিশালী ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে মানুষের জীবন বাঁচাতে পারবে বলে তারা আশা করছেন। পাট থেকে এই অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার করা হয়েছে যার নাম দেওয়া হয়েছে হোমিকরসিন। তারা দেখলেন স্টেফাইলোকক্বাস হোমিনিস নামের এই ব্যাকটেরিয়াটি একটি অ্যান্টিবায়োটিকের মতো কাজ করছে। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, যাদের দেহে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করছে না, অর্থাৎ অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে অণুজীবের প্রতিরোধ গড়ে উঠেছে, তাদের চিকিৎসায় এই হোমিকরসিন অ্যান্টিবায়োটিক ভালোভাবেই কাজ করবে।
সুপারবাগ নামে পরিচিত যেসব ব্যাকটেরিয়া প্রচলিত কোনো অ্যান্টিবায়োটিকেই কাবু হয় না, তাদের সঙ্গে লড়াইয়ে হোমিকরসিন সফল হবে বলে তারা আশা করছেন। এটি শক্তিশালী ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে বহু রোগীর প্রাণ বাঁচাতে সক্ষম বলে তারা জানিয়েছেন। ২০০৯ সালে জুটিন (ঢেউটিন) এবং ২০১৮ সালে সোনালি ব্যাগ (পলিথিন) উল্লেখযোগ্য। আর ২০২১ সালের এই মাঝামাঝিতে সেই পাট থেকেই দেশের গবেষকরা খুঁজে বের করলেন জীবন বাঁচানোর ওষুধ। বেশ কিছু শক্তিশালী ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে মোক্ষমভাবে লড়াই করতে পারে এই অ্যান্টিবায়োটিক।
সুপার বাগ নামে পরিচিত এমন কিছু ব্যাকটেরিয়া আছে, যার প্রচলিত কোন অ্যান্টিবায়োটিকেই প্রতিকার হয় না। এগুলোর ক্ষেত্রেও সফল হয়েছে এই নতুন অ্যান্টিবায়োটিক। বিজ্ঞানী মোবারক আহমেদ খান পাট থেকে পলিথিন আর ঢেউটিন তৈরির রাস্তা দেখিয়েছেন। আর এবার সেই পাট থেকেই দেশের গবেষকরা পথ দেখালেন জীবন বাঁচানো অ্যান্টিবায়োটিক তৈরির। করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে প্রচলিত ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) অতিমাত্রায় পরিবেশ দূষণের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর সমাধানে এগিয়ে এসেছেন একজন বাংলাদেশি বিজ্ঞানী। পাটের পলিমার এবং পলিথিন ব্যাগের বিকল্প হিসেবে পাটের তৈরি সোনালি ব্যাগের আবিষ্কারক এবার তৈরি করেছেন পরিবেশবান্ধব পিপিই। পিপিই তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন যা মানের দিক থেকে প্রচলিত পিপিইর মতো হলেও বিষাক্ত নয়। সহজে এবং অল্প সময়ের মধ্যেই তা মিশে যাবে মাটির সঙ্গে।
আমাদের পাটের যে ঐতিহ্য, গুণগতমান ও সুনাম রয়েছে তাকে ধরে রাখতে হবে। এ খাতের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে।
[লেখক : শিক্ষক, হাইমচর সরকারি মহাবিদ্যালয়, চাঁদপুর]
সুধীর বরণ মাঝি
মঙ্গলবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩
পাটকে বলা সোনালি আঁশ। আর সোনালি আঁশের দেশ, পাটের দেশ, আমার প্রিয় জন্মভূমি সোনার বাংলাদেশ। এই পাটের ভেতরে লুকিয়ে আছে কত না রহস্য। বিশ্বের অন্যান্য দেশের পাট উৎপাদনকারী দেশের চেয়ে বাংলাদেশের পাট অধিক উন্নত ও সমাদৃত। সুদূর প্রাচীন কাল থেকেই আমাদের পাট শিল্প ছিল অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি। পাট আমাদের জাতীয় অর্থকরি ফসল।
আমাদের জাতীয় পরিচয়ের মধ্যে পাট একটি প্রধান পরিচায়ক। এক সময় বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান হাতিয়ার ছিল এই পাট। ২০২১-২০২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ পাট ও পাটজাত পণ্য থেকে ১ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে। গত অর্থবছরে তা ১৯ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৯১ কোটি ২০ লাখ ডলার; যা আমাদের অর্থনীতির জন্য মারাত্মক হুমকি। অথচ এ খাতের রায়েছে প্রচুর সম্ভাবনা। এ খাতের পরিকল্পনামাফিক প্রয়োগ নিশ্চিত করতে পারলে আমাদের অর্থনীতিতে যৌবন আনা সম্ভব।
সোনালি আঁশ অন্যদিকে রূপালী কাঠি দুয়ে মিলে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে পাট। পাটকাঠি থেকে উচ্চমূল্যের অ্যাকটিভেটেড চারকোল উৎপাদন করে বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে; যা থেকে তৈরি করা হচ্ছে কার্বন পেপার, কম্পিউটার ও ফটোকপিয়ারের কালি, আতশবাজি, ফেসওয়াশের উপকরণ, ওয়াটার পিউরিফিকেশন প্লান্ট, মোবাইল ফোনের ব্যাটারি ও বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনী পণ্য। পাট থেকে এই অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে জীবাণু-প্রতিরোধী অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা নিয়ে যখন ক্রমশই উদ্বেগ ও হতাশা বাড়ছে তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী একেবারে নতুন ধরনের একটি অ্যান্টিবায়োটিকের সন্ধান পেয়েছেন। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই অ্যান্টিবায়োটিকের গঠন ও বৈশিষ্ট্য দেখে মনে হচ্ছে যে এটি শক্তিশালী ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে মানুষের জীবন বাঁচাতে পারবে বলে তারা আশা করছেন। পাট থেকে এই অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার করা হয়েছে যার নাম দেওয়া হয়েছে হোমিকরসিন। তারা দেখলেন স্টেফাইলোকক্বাস হোমিনিস নামের এই ব্যাকটেরিয়াটি একটি অ্যান্টিবায়োটিকের মতো কাজ করছে। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, যাদের দেহে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করছে না, অর্থাৎ অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে অণুজীবের প্রতিরোধ গড়ে উঠেছে, তাদের চিকিৎসায় এই হোমিকরসিন অ্যান্টিবায়োটিক ভালোভাবেই কাজ করবে।
সুপারবাগ নামে পরিচিত যেসব ব্যাকটেরিয়া প্রচলিত কোনো অ্যান্টিবায়োটিকেই কাবু হয় না, তাদের সঙ্গে লড়াইয়ে হোমিকরসিন সফল হবে বলে তারা আশা করছেন। এটি শক্তিশালী ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে বহু রোগীর প্রাণ বাঁচাতে সক্ষম বলে তারা জানিয়েছেন। ২০০৯ সালে জুটিন (ঢেউটিন) এবং ২০১৮ সালে সোনালি ব্যাগ (পলিথিন) উল্লেখযোগ্য। আর ২০২১ সালের এই মাঝামাঝিতে সেই পাট থেকেই দেশের গবেষকরা খুঁজে বের করলেন জীবন বাঁচানোর ওষুধ। বেশ কিছু শক্তিশালী ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে মোক্ষমভাবে লড়াই করতে পারে এই অ্যান্টিবায়োটিক।
সুপার বাগ নামে পরিচিত এমন কিছু ব্যাকটেরিয়া আছে, যার প্রচলিত কোন অ্যান্টিবায়োটিকেই প্রতিকার হয় না। এগুলোর ক্ষেত্রেও সফল হয়েছে এই নতুন অ্যান্টিবায়োটিক। বিজ্ঞানী মোবারক আহমেদ খান পাট থেকে পলিথিন আর ঢেউটিন তৈরির রাস্তা দেখিয়েছেন। আর এবার সেই পাট থেকেই দেশের গবেষকরা পথ দেখালেন জীবন বাঁচানো অ্যান্টিবায়োটিক তৈরির। করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে প্রচলিত ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) অতিমাত্রায় পরিবেশ দূষণের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর সমাধানে এগিয়ে এসেছেন একজন বাংলাদেশি বিজ্ঞানী। পাটের পলিমার এবং পলিথিন ব্যাগের বিকল্প হিসেবে পাটের তৈরি সোনালি ব্যাগের আবিষ্কারক এবার তৈরি করেছেন পরিবেশবান্ধব পিপিই। পিপিই তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন যা মানের দিক থেকে প্রচলিত পিপিইর মতো হলেও বিষাক্ত নয়। সহজে এবং অল্প সময়ের মধ্যেই তা মিশে যাবে মাটির সঙ্গে।
আমাদের পাটের যে ঐতিহ্য, গুণগতমান ও সুনাম রয়েছে তাকে ধরে রাখতে হবে। এ খাতের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে।
[লেখক : শিক্ষক, হাইমচর সরকারি মহাবিদ্যালয়, চাঁদপুর]