alt

উপ-সম্পাদকীয়

বাংলা হরফের ডিজিটাল যাত্রা

মোস্তাফা জব্বার

: সোমবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩

দুই ॥

বিজয়ের প্রযুক্তি ও জন্ম ॥ আমরা জানি, আমাদের বাংলায় ১১+৩৯=৫০টি মূলবর্ণ আছে। কিন্তু স্বরচিহ্ন ও যুক্তবর্ণ মিলিয়ে এই সংখ্যা শত শত কিংবা হাজার হাজার। বাংলা ধ্বনির সঙ্গে হরফের যে সম্পর্ক তাতে শুধু যে বিদ্যমান যুক্তাক্ষর, তা-ই নয়, আমাদের নতুন নতুন যুক্তাক্ষরেরও প্রয়োজন হতে পারে। সত্যি কথা হচ্ছে, আমার যুক্তাক্ষরের তালিকার সঙ্গে যদি বিদ্যাসাগরের তালিকাটি এখন মিলিয়ে দেখা হয়, তাহলে আমার তালিকায় অনেক যুক্তাক্ষর পাওয়া যাবে, যা বিদ্যাসাগরের তালিকায় নেই। ধ্বনি ও লিপির ব্যাপারটি এমন যে, বাংলা ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে স্বরবর্ণ যুক্ত হয়ে তা স্বরচিহ্নে রূপান্তরিত হয়- আবার যখনই ব্যঞ্জনবর্ণ ‘অ’ বিমুক্ত হয় তখন তা যুক্ত হয়ে যায়।

আমাদের ব্যঞ্জনবর্ণ ‘অ’ যুক্ত (ৎ বাদে)। হসন্ত দিয়ে আমরা ‘অ’ যুক্ত ব্যঞ্জনকে ‘অ’ মুক্ত করতে পারি। সেই নিয়ম অনুযায়ী বর্তমানে বিদ্যমান যুক্তবর্ণের তালিকায় আমরা স্+ক্+ল, ম্+দ, ম্+ত, ফ্+ট, ক্+দ, প্+ক, জ্+ক, ম্+ক, ম+চ, ম+ছ এমন অনেক যুক্তাক্ষর তৈরি করতে পারি। আগে যেসব ধ্বনি আমরা ব্যবহার করতাম তার সঙ্গে বিদেশী শব্দের ধ্বনি নাও মিলতে পারে এবং সেসব ধ্বনি প্রকাশের জন্য আমরা নতুন নতুন যুক্তাক্ষর তৈরি করতেই পারি। আমার মনে হলো, শুধুমাত্র হসন্তই এই সবাই যুক্তাক্ষরের মধ্যমনি। বাংলার ছাত্র বলে কিনা জানি না, এটি আমার মাথায় পুরো ৮৮ সাল জুড়েই ঘোরপাক খাচ্ছিল।

বাসায় বসে বসে স্ত্রী রোকসানাকেও বিরক্ত করতাম। বাংলার ছাত্রী রোকসানা আমার সঙ্গে একমত হয় যে, হসন্ত ব্যবহার করে যুক্তাক্ষর তৈরির ভাবনাটা সঠিক। যেহেতু আমি নিজে ‘জব্বার’ কীবোর্ড বানিয়েছিলাম সেহেতু যুক্তাক্ষর তৈরির গ্লিফগুলো সম্পর্কে আমার ধারণা খুব স্পষ্ট ছিল। কিন্তু আমি চাইছিলাম এমন একটি উপায়, যার সাহায্যে আমি ব্যবহারকারীকে যুক্তাক্ষরের হাত থেকে রক্ষা করতে পারি। সেই ভাবনা থেকেই ‘বিজয়’ কীবোর্ড-এর নকশা তৈরি করতে থাকি। পুরো বছরজুড়ে মুহম্মদপুরের ৪২ সি কাজী নজরুল ইসলাম রোডের দোতালার বাসায় কত রাত যে আমি পায়চারী করে কাটিয়েছি তা মনে করা সম্ভব নয়।

কিন্তু কোনমতেই কম্পিউটারের সীমাবদ্ধ বোতামের মাঝে সবাই বাংলা বর্ণের ঠাই করতে পারছিলাম না। তবে আমি নিশ্চিত ছিলাম যে, এমন একটা কিছু আমি অবশ্যই খোঁজে পাব- আমার মাথায় এমন কিছু আসবে যার ফলে যুক্তাক্ষর নিয়ে কাউকে ভাবতে হবেনা। তবে আমার সমস্যাও ছিল অনেক। আমি বাংলা ভাষা ও লিপি জানি, কম্পিউটারের ভাষা বা প্রোগ্রামিং জানিনা। কেমন করে কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেম কাজ করে এবং তাতে কীবোর্ড ইন্টারফেস কেমন করে তৈরি করা যায় তার কোন ধারণাই আমার ছিল না। এছাড়া বাংলাদেশে মেকিন্টোস কম্পিউটারের জন্য প্রোগ্রামার পাওয়া যেত না। ভারতের রাবা কন্টেলের অরুণ নাথ তখন আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু।

আমি অরুণকে জানালাম, আমি বাংলা কীবোর্ড ড্রাইভার বানাতে চাই। আমার হাতে ফন্ট আছে- কিন্তু ফন্ট দিয়ে বাংলা লিখতে কীবোর্ডের চার স্তর ব্যবহার করতে হয়। আমি চার স্তর চাই না- স্বাভাবিক দুই স্তর চাই। অরুণ আমাকে দিল্লি যাবার বুদ্ধি দিলেন। সেখানে পরিচয় করিয়ে দিলেন, কুতুব হোটেলের কম্পাউন্ডেরই ডি-২ ফ্লাটে রাবা কন্টেলে কর্মরত প্রোগ্রামার দেবেন্দ্র জোশীর সঙ্গে। বেটে খাটো জোশী এবং তার সঙ্গে কর্মরত আরও কয়েকজন সহকর্মী তখন ম্যাকিন্টোসে ভারতীয় ভাষার কীবোর্ড ড্রাইভার এবং ফন্ট নিয়ে কাজ করছেন। তাদের মূল লক্ষ্য ছিল দেবনাগরী ভাষাকে কম্পিউটারে প্রয়োগ করা। পাঞ্জাবী, গুজরাটি, তামিল, তেলেগু এবং মালয়ালমও তাদের তালিকায় ছিল। তবে বাংলা তাদের কাজের তালিকায় ছিল না।

পশ্চিমবঙ্গে তখন ম্যাকের বাজার খুব ছোট। রাহুল কমার্স নামে তাদের যে ডিলার কলকাতায় ছিল, তারা তাদের বঙ্কিম ফন্ট নিয়েই সন্তুষ্ট ছিলো। কিন্তু আমি সুনন্দা ফন্টের পাশাপাশি বাংলা কীবোর্ড ড্রাইভার নিয়েও ব্যস্ত ছিলাম। ডিসেম্বর মাসের শুরুতে (১৯৮৮ সন) জোশীর সঙ্গে কুতুব হোটেলের ডি-২ ফ্লাটে কাজ করা শুরু করে আমি অনুভব করলাম যে, আমার স্বপ্ন সফল করা যেতে পারে। জোশী বাংলা জানতেন না- কিন্তু হিন্দি খুব ভালো জানতেন। ফলে আমি যখন তাকে হসন্ত (জোশী বলত হলন্ত) ব্যবহার করে যুক্তাক্ষর তৈরির কথা বললাম, জোশী তখন আমাকে আমার ফন্ট ফাইলটি (সুনন্দা ফন্টটি থেকে আমি তন্বী সুনন্দা ফন্ট বানাই) সাজিয়ে নিতে পরামর্শ দেন। জোশী তখন আমাকে এটিও জানান যে, ফন্টে কোডের ব্যবহার বাড়ালেও কোন অসুবিধা হবে না। আমি ১৮৮ অক্ষরের সংখ্যা বাড়িয়ে ২২০টি অক্ষর দিয়ে তন্বী সুনন্দা ফন্ট বানাই।

আসকি কোডের যেসব জায়গায় কন্ট্রোল কী আছে সেগুলো ছাড়া ব্যবহার করা যায় এমন সবাই কোডই আমি ব্যবহার করলাম। একটি যুক্তাক্ষরের তালিকাও আমি বানাই। আমার সঙ্গে বিদ্যাসাগরের বর্ণ পরিচয় বইটি ছিল। বইটি দিল্লি যাবার পথে কলকাতায় কিনেছিলাম। তালিকাটি সেই মোতাবেক করা হয়। প্রতিটি যুক্তাক্ষর এবং তার কী কম্বিনেশন ও গ্লিফ চাঁ তৈরি করা হয়। যতদূর মনে আছে, কুতুব হোটেলের ছয় তলায় ৫২২ নাম্বার রূমে বসে সাদা কাগজ আর পেনসিল দিয়ে বারবার কাটাছেঁড়া করে দুটি তালিকা প্রস্তুত করি আমি। একইসঙ্গে প্রস্তুত করি বিজয় কীবোর্ড কোন নিয়মে কাজ করবে তার নিয়মাবলি। সেজন্য বিজয় কীবোর্ড প্রস্তুতের আগে আমাকে ভাবতে হয় অনেক কিছু।

বিজয় কীবোর্ড সেই সময়ে বিদ্যমান সবাই কীবোর্ডের মৌলিক ধারণা থেকে স্বাতন্ত্র নিয়ে আলাদা হয়ে যায়। বিজয়-এর জন্মের সময় শহীদলিপি ও আবহ কীবোর্ড ছাড়া টাইপরাইটারের মুনীর কীবোর্ড প্রচলিত ছিল। শহীদলিপি ও আবহ কীবোর্ড আমার পছন্দ হয়নি। কম্পিউটারের অন্য কীবোর্ড শহীদলিপিও চারস্তরের এবং বিজ্ঞানসম্মত নয়। টাইপরাইটারে প্রচলিত মুনীর কীবোর্ডটি-ওই যন্ত্রের জন্য গ্রাফিক্যালি সবাই বর্ণ তৈরি করতে পারলেও, মুনীর চৌধুরীর পৌনঃপৌনিকতা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও কম্পিউটারের জন্য উপযোগী নয়। এতে কেবল যে গ্লিফকে কীবোর্ডের বোতামে বসানো হয়েছে এবং বিন্দু ও মাত্রা সহযোগে বর্ণমালা তৈরি করার উপায় তৈরি করা হয়েছে তাই নয়, এর সংখ্যা, চিহ্ন ইত্যাদিও সঠিকভাবে স্থাপিত নয়। কম্পিউটারের জন্য আমার তৈরি করা জব্বার কীবোর্ড ভিত্তিক এবং চার স্তরের বিধায় সেটিও গ্রহণযোগ্য নয়। ফলে বিজয় কীবোর্ড বিন্যস্ত করার সময় বিজ্ঞানসম্মত কিছু বিষয়কে মাথায় রাখা হয়েছে।

১) বাংলা মূল বর্ণের সংখ্যা ৫০ এবং এতে হসন্ত ও দাড়ি নামে দুটি অতিরিক্ত চিহ্ন মিলিয়ে সেটি ৫২টি মৌলিক বর্ণকে প্রথমে কীবোর্ডে বসানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু রেফ ও র ফলা যে ্+র এবং র+্ এবং য ফলা যে ্ + য, তা আমাদের ব্যবহারকারীরা তা বুঝতে পারেন না বিধায় এই তিনটি ফলাও কীবোর্ডে রাখার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। ফলে সাকুল্যে ৫৫টি অবস্থান বাংলা হরফের জন্য নিশ্চিত করা হয়। কীবোর্ডে ফ্রিকুয়েন্সি অনুযায়ী অক্ষর বসানো হয় এবং চন্দ্রবিন্দু, খ- ৎ ও বিসর্গকে ইংরেজি বর্ণসমূহের স্থানে না রেখে বাংলার জন্য প্রয়োজন নয়, এমন চিহ্নে স্থাপন করা হয়।

২) বর্ণগুলোকে যথাসম্ভব জোড় হিসেবে বসানো হয়। জোড় বিবেচনার সময় অল্পপ্রাণ-মহাপ্রাণ ও উচ্চারণের সমিলতা বিবেচনা করা হয়। হ ও ঞ-এর ক্ষেত্রে এসব সমিলতা না পাওয়ায় এমনিতেই জোড় হিসেবে আবদ্ধ করা হয়।

৩) ফ্রিকুয়েন্সি বেশি হওয়ায়, স্বরচিহ্নকে বোতামে বসানো হয়। ‘অ’ এর স্বরচিহ্ন না থাকায় এবং ে া কার দিয়ে ‘ও’ এর স্বরচিহ্ন প্রস্তুত করা যায় বলে অ এবং ও সরাসরি বোতামে রাখা হয়। বাকি স্বরবর্ণকে হসন্ত দিয়ে তৈরি করার ব্যবস্থা করা হয়।

৪) বাম হাতের হোম কী ও এর কাছাকাছি নিচের সারিতে স্বরচিহ্ন + স্বরবর্ণ এবং ডানহাতে ও বাম হাতের ওপরের সারিতে ব্যঞ্জনবর্ণ স্থাপন করা হয়, বর্ণ সংঘটনের স্বার্থে এই ব্যবস্থা নেয়া হয়। একই কারণে র ফলা, য ফলা ও রেফ বাম হাতে রাখা হয়েছে।

৫) ইংরেজি জি বোতামটিকে লিংক বোতাম বা সংযুক্তি বোতাম হিসেবে ব্যবহার করে যুক্তাক্ষর ও স্বরবর্ণ তৈরির ব্যবস্থা করা হয়েছে।

আমার হাতের কাছে মুনীর চৌধুরীর ফ্রিকুয়েন্সি এনালাইসিসের তালিকাটি ছিল। তাতে কিছু কিছু অক্ষরের ব্যবহারের বিষয়টি স্পষ্ট ছিল। তার ওপর নতুন করে আমি কিছু বাংলা পত্রিকা ও বই থেকে বর্ণানুক্রম যাচাই-বাছাই করি। এসব কাজ ঢাকায় বসেই করে গিয়েছিলাম। ফলে কীবোর্ডর বিষয়টি আমি মনে মনে চূড়ান্ত করেই দিল্লি গিয়েছিলাম। তবে জোসীর সঙ্গে কথা বলে যুক্তাক্ষর ও অন্যান্য গ্লিফের বিষয়টি বারবার বদলাতে হচ্ছিল। গ্লিফের কম্বিনেশনগুলো তৈরি করাও কঠিন কাজ ছিল।

কুতুব হোটেলের ৫২২ নাম্বার ঘরে বসেই যখন শেষ নকশাগুলো সম্পন্ন করা হয়, তখন গভীররাত। দিল্লির শহরতলীর নীরব ওই হোটেলে কান পাতলে আমার শ্বাসের আওয়াজও আমি শুনতে পেতাম। চারপাশে জনবসতি নেই বলে গাড়িঘোড়াও চলে না। কাজ শেষ করে ফেলায় প্রায় সারারাত উত্তেজনায় ঘুম হয়নি। আমার যদি সেই সময়ে মোবাইল ফোন থাকত তবে আমি অবশ্যই জোশীকে গভীর রাতেই জাগাতাম। আমার টেনশন ছিল, আমার লেআউট, যুক্তাক্ষরের সর্বশেষ তালিকা এবং কীবোর্ডের নিয়মাবলি কাজ করবে তো? যদি ‘না’ করে তবে আবার চেষ্টা করা যাবে। কিন্তু যদি করে- তবে সেই আনন্দ আমি কোথায় রাখব?

সম্ভবত : শেষ রাতে শুয়ে পড়েছিলাম এবং ঘুম থেকে উঠে নাস্তা সেরে ডি-২ তে গিয়ে জোশীকে প্রস্তুতই পেয়েছিলাম। জোশী আগের দিনই বাংলা কীবোর্ডের জন্য মূল প্রোগ্রামিং তৈরি করে রেখেছিল। আমার কাছ থেকে কীবোর্ডের লেআউট, বাংলা অক্ষরের কোড নং, লাতিন হরফের কোড নং এবং যুক্তাক্ষর তৈরির সিক্যুয়েন্স ও তার কোডসমূহ একের পর এক বসিয়ে গেলেন। ডি-২ অ্যাপার্টমেন্টে বসে ঘণ্টা তিনেকের মাঝেই আমার তালিকার কাজ শেষ হলো। জোশী প্রোগ্রামটি কম্পাইল করলেন bkbd নামে। আমিই তাকে বলেছিলাম, এর নাম হবে বিজয় কীবোর্ড। সামনেই ছিল ১৬ই ডিসেম্বর। সুতরাং আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ওইদিনে এই কীবোর্ডটি আমি প্রকাশ করব। স্বল্পভাষী জোশী মাত্র তিন কিলোবাইটের ওই প্রোগ্রামটি আমাকে দেখালেন। আমি আমার আসল নামের গোলাম -এর জি অক্ষরটিকে লিংক বা হসন্ত হিসেবে রাখলাম। ইচ্ছে করলে এর বদলে এইচ বোতামটিকেও লিঙ্ক হিসেবে রাখা যেত। বাংলা কীবোর্ড ও ইংরেজির মাঝে টোগল কী হিসেবে রাখলাম কন্ট্রোল- অপশন-বি। ‘বি’ দিয়ে বিজয় এবং বাংলা-দু’টিও বোঝায়।

১২ ডিসেম্বর, ২০১৩।

[লেখক : সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী, দেশের প্রথম ডিজিটাল নিউজ সার্ভিস আবাসের চেয়ারম্যান, বিজয় কিবোর্ড ও সফটওয়্যারের জনক]

দক্ষ মানবসম্পদ ও সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার

আফ্রিকায় হঠাৎ কেন যুক্তরাষ্ট্রের ঝোঁক?

ঢাকা মহানগর ও বুড়িগঙ্গা

জামাই মেলা : উৎসব, ঐতিহ্য ও কৃষ্টির রঙিন চিত্রপট

হারিয়ে যাওয়া ক্লাস, কঠোর মূল্যায়ন আর প্রশ্নের জটিলতায় নুয়ে পড়া এক প্রজন্ম

বৈষম্য দূর করে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলুন

চিকিৎসা যেন বাণিজ্যের হাতিয়ারে পরিণত না হয়

পথশিশু ও বাংলাদেশে সামাজিক চুক্তির ব্যর্থতা

মেগা প্রকল্প : প্রশ্ন হওয়া উচিত স্বচ্ছতা নিয়ে

আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া জরুরি

স্মার্ট দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা : উপগ্রহ চিত্র ও ওয়েবসাইটের অপরিহার্যতা

ক্ষমতা ও জনপ্রশাসন : আমলাতন্ত্রের ছায়াতলে আমজনতা

জনসংখ্যা : সম্পদ না সংকট?

ব্রিকসে নতুন ভূ-রাজনৈতিক ব্যবস্থার উত্থান

রম্যগদ্য : ‘ল্যাংড়া-লুলা, আতুড়-পাতুড়’

আষাঢ়ী পূর্ণিমা : আত্মশুদ্ধির সাধনায় বুদ্ধের অনন্ত আলো

বদলে যাওয়া মাটিতে সাহসী বীজ : জলবায়ুর বিপরীতে বাংলাদেশের কৃষির অভিযোজনগাথা

ছবি

জুলাই অভ্যুত্থান-গাথা : ‘শিকলে নাহি দিব ধরা’

প্রাচীন যৌধেয় জাতি ও তাদের সাম্যবাদী শাসন

গণঅভ্যুত্থান-উত্তর ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের স্বপ্ন

টেকসই উন্নয়নের স্বপ্নপূরণে উপগ্রহ চিত্রই চাবিকাঠি

রাবার শিল্প : সংকট, করণীয় ও উত্তরণের দিশা

রম্যগদ্য : দুধ, দই, কলা...

ছবি

কোপার্নিকাস : আলো হয়ে জন্ম নেওয়া বৈপ্লবিক মতবাদের প্রবর্তক

জলবায়ু সংকটে মানবসভ্যতা

টেকসই অর্থনীতির জন্য চাই টেকসই ব্যাংকিং

ডিজিটাল দাসত্ব : মনোযোগ অর্থনীতি ও জ্ঞান পুঁজিবাদে তরুণ প্রজন্মের মননশীলতার অবক্ষয়

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার : আস্থা ভঙ্গ ও জবাবদিহিতার সংকট

আসামি এখন নির্বাচন কমিশন

কোথায় হারাল একান্নবর্তী পরিবার?

এই শান্তি কি মহাঝড়ের পূর্বলক্ষণ?

মেগাসিটি : দারিদ্র্য যখন ‘অবাঞ্ছিত বর্জ্য’

ফলের রাজ্য পার্বত্য চট্টগ্রাম

ছবি

তৃতীয় শক্তির জন্য জায়গা খালি : বামপন্থীরা কি ঘুরে দাঁড়াতে পারে না

জমি আপনার, দখল অন্যের?

সিধু-কানু : ধ্বংসস্তূপের নিচেও জেগে আছে সাহস

tab

উপ-সম্পাদকীয়

বাংলা হরফের ডিজিটাল যাত্রা

মোস্তাফা জব্বার

সোমবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩

দুই ॥

বিজয়ের প্রযুক্তি ও জন্ম ॥ আমরা জানি, আমাদের বাংলায় ১১+৩৯=৫০টি মূলবর্ণ আছে। কিন্তু স্বরচিহ্ন ও যুক্তবর্ণ মিলিয়ে এই সংখ্যা শত শত কিংবা হাজার হাজার। বাংলা ধ্বনির সঙ্গে হরফের যে সম্পর্ক তাতে শুধু যে বিদ্যমান যুক্তাক্ষর, তা-ই নয়, আমাদের নতুন নতুন যুক্তাক্ষরেরও প্রয়োজন হতে পারে। সত্যি কথা হচ্ছে, আমার যুক্তাক্ষরের তালিকার সঙ্গে যদি বিদ্যাসাগরের তালিকাটি এখন মিলিয়ে দেখা হয়, তাহলে আমার তালিকায় অনেক যুক্তাক্ষর পাওয়া যাবে, যা বিদ্যাসাগরের তালিকায় নেই। ধ্বনি ও লিপির ব্যাপারটি এমন যে, বাংলা ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে স্বরবর্ণ যুক্ত হয়ে তা স্বরচিহ্নে রূপান্তরিত হয়- আবার যখনই ব্যঞ্জনবর্ণ ‘অ’ বিমুক্ত হয় তখন তা যুক্ত হয়ে যায়।

আমাদের ব্যঞ্জনবর্ণ ‘অ’ যুক্ত (ৎ বাদে)। হসন্ত দিয়ে আমরা ‘অ’ যুক্ত ব্যঞ্জনকে ‘অ’ মুক্ত করতে পারি। সেই নিয়ম অনুযায়ী বর্তমানে বিদ্যমান যুক্তবর্ণের তালিকায় আমরা স্+ক্+ল, ম্+দ, ম্+ত, ফ্+ট, ক্+দ, প্+ক, জ্+ক, ম্+ক, ম+চ, ম+ছ এমন অনেক যুক্তাক্ষর তৈরি করতে পারি। আগে যেসব ধ্বনি আমরা ব্যবহার করতাম তার সঙ্গে বিদেশী শব্দের ধ্বনি নাও মিলতে পারে এবং সেসব ধ্বনি প্রকাশের জন্য আমরা নতুন নতুন যুক্তাক্ষর তৈরি করতেই পারি। আমার মনে হলো, শুধুমাত্র হসন্তই এই সবাই যুক্তাক্ষরের মধ্যমনি। বাংলার ছাত্র বলে কিনা জানি না, এটি আমার মাথায় পুরো ৮৮ সাল জুড়েই ঘোরপাক খাচ্ছিল।

বাসায় বসে বসে স্ত্রী রোকসানাকেও বিরক্ত করতাম। বাংলার ছাত্রী রোকসানা আমার সঙ্গে একমত হয় যে, হসন্ত ব্যবহার করে যুক্তাক্ষর তৈরির ভাবনাটা সঠিক। যেহেতু আমি নিজে ‘জব্বার’ কীবোর্ড বানিয়েছিলাম সেহেতু যুক্তাক্ষর তৈরির গ্লিফগুলো সম্পর্কে আমার ধারণা খুব স্পষ্ট ছিল। কিন্তু আমি চাইছিলাম এমন একটি উপায়, যার সাহায্যে আমি ব্যবহারকারীকে যুক্তাক্ষরের হাত থেকে রক্ষা করতে পারি। সেই ভাবনা থেকেই ‘বিজয়’ কীবোর্ড-এর নকশা তৈরি করতে থাকি। পুরো বছরজুড়ে মুহম্মদপুরের ৪২ সি কাজী নজরুল ইসলাম রোডের দোতালার বাসায় কত রাত যে আমি পায়চারী করে কাটিয়েছি তা মনে করা সম্ভব নয়।

কিন্তু কোনমতেই কম্পিউটারের সীমাবদ্ধ বোতামের মাঝে সবাই বাংলা বর্ণের ঠাই করতে পারছিলাম না। তবে আমি নিশ্চিত ছিলাম যে, এমন একটা কিছু আমি অবশ্যই খোঁজে পাব- আমার মাথায় এমন কিছু আসবে যার ফলে যুক্তাক্ষর নিয়ে কাউকে ভাবতে হবেনা। তবে আমার সমস্যাও ছিল অনেক। আমি বাংলা ভাষা ও লিপি জানি, কম্পিউটারের ভাষা বা প্রোগ্রামিং জানিনা। কেমন করে কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেম কাজ করে এবং তাতে কীবোর্ড ইন্টারফেস কেমন করে তৈরি করা যায় তার কোন ধারণাই আমার ছিল না। এছাড়া বাংলাদেশে মেকিন্টোস কম্পিউটারের জন্য প্রোগ্রামার পাওয়া যেত না। ভারতের রাবা কন্টেলের অরুণ নাথ তখন আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু।

আমি অরুণকে জানালাম, আমি বাংলা কীবোর্ড ড্রাইভার বানাতে চাই। আমার হাতে ফন্ট আছে- কিন্তু ফন্ট দিয়ে বাংলা লিখতে কীবোর্ডের চার স্তর ব্যবহার করতে হয়। আমি চার স্তর চাই না- স্বাভাবিক দুই স্তর চাই। অরুণ আমাকে দিল্লি যাবার বুদ্ধি দিলেন। সেখানে পরিচয় করিয়ে দিলেন, কুতুব হোটেলের কম্পাউন্ডেরই ডি-২ ফ্লাটে রাবা কন্টেলে কর্মরত প্রোগ্রামার দেবেন্দ্র জোশীর সঙ্গে। বেটে খাটো জোশী এবং তার সঙ্গে কর্মরত আরও কয়েকজন সহকর্মী তখন ম্যাকিন্টোসে ভারতীয় ভাষার কীবোর্ড ড্রাইভার এবং ফন্ট নিয়ে কাজ করছেন। তাদের মূল লক্ষ্য ছিল দেবনাগরী ভাষাকে কম্পিউটারে প্রয়োগ করা। পাঞ্জাবী, গুজরাটি, তামিল, তেলেগু এবং মালয়ালমও তাদের তালিকায় ছিল। তবে বাংলা তাদের কাজের তালিকায় ছিল না।

পশ্চিমবঙ্গে তখন ম্যাকের বাজার খুব ছোট। রাহুল কমার্স নামে তাদের যে ডিলার কলকাতায় ছিল, তারা তাদের বঙ্কিম ফন্ট নিয়েই সন্তুষ্ট ছিলো। কিন্তু আমি সুনন্দা ফন্টের পাশাপাশি বাংলা কীবোর্ড ড্রাইভার নিয়েও ব্যস্ত ছিলাম। ডিসেম্বর মাসের শুরুতে (১৯৮৮ সন) জোশীর সঙ্গে কুতুব হোটেলের ডি-২ ফ্লাটে কাজ করা শুরু করে আমি অনুভব করলাম যে, আমার স্বপ্ন সফল করা যেতে পারে। জোশী বাংলা জানতেন না- কিন্তু হিন্দি খুব ভালো জানতেন। ফলে আমি যখন তাকে হসন্ত (জোশী বলত হলন্ত) ব্যবহার করে যুক্তাক্ষর তৈরির কথা বললাম, জোশী তখন আমাকে আমার ফন্ট ফাইলটি (সুনন্দা ফন্টটি থেকে আমি তন্বী সুনন্দা ফন্ট বানাই) সাজিয়ে নিতে পরামর্শ দেন। জোশী তখন আমাকে এটিও জানান যে, ফন্টে কোডের ব্যবহার বাড়ালেও কোন অসুবিধা হবে না। আমি ১৮৮ অক্ষরের সংখ্যা বাড়িয়ে ২২০টি অক্ষর দিয়ে তন্বী সুনন্দা ফন্ট বানাই।

আসকি কোডের যেসব জায়গায় কন্ট্রোল কী আছে সেগুলো ছাড়া ব্যবহার করা যায় এমন সবাই কোডই আমি ব্যবহার করলাম। একটি যুক্তাক্ষরের তালিকাও আমি বানাই। আমার সঙ্গে বিদ্যাসাগরের বর্ণ পরিচয় বইটি ছিল। বইটি দিল্লি যাবার পথে কলকাতায় কিনেছিলাম। তালিকাটি সেই মোতাবেক করা হয়। প্রতিটি যুক্তাক্ষর এবং তার কী কম্বিনেশন ও গ্লিফ চাঁ তৈরি করা হয়। যতদূর মনে আছে, কুতুব হোটেলের ছয় তলায় ৫২২ নাম্বার রূমে বসে সাদা কাগজ আর পেনসিল দিয়ে বারবার কাটাছেঁড়া করে দুটি তালিকা প্রস্তুত করি আমি। একইসঙ্গে প্রস্তুত করি বিজয় কীবোর্ড কোন নিয়মে কাজ করবে তার নিয়মাবলি। সেজন্য বিজয় কীবোর্ড প্রস্তুতের আগে আমাকে ভাবতে হয় অনেক কিছু।

বিজয় কীবোর্ড সেই সময়ে বিদ্যমান সবাই কীবোর্ডের মৌলিক ধারণা থেকে স্বাতন্ত্র নিয়ে আলাদা হয়ে যায়। বিজয়-এর জন্মের সময় শহীদলিপি ও আবহ কীবোর্ড ছাড়া টাইপরাইটারের মুনীর কীবোর্ড প্রচলিত ছিল। শহীদলিপি ও আবহ কীবোর্ড আমার পছন্দ হয়নি। কম্পিউটারের অন্য কীবোর্ড শহীদলিপিও চারস্তরের এবং বিজ্ঞানসম্মত নয়। টাইপরাইটারে প্রচলিত মুনীর কীবোর্ডটি-ওই যন্ত্রের জন্য গ্রাফিক্যালি সবাই বর্ণ তৈরি করতে পারলেও, মুনীর চৌধুরীর পৌনঃপৌনিকতা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও কম্পিউটারের জন্য উপযোগী নয়। এতে কেবল যে গ্লিফকে কীবোর্ডের বোতামে বসানো হয়েছে এবং বিন্দু ও মাত্রা সহযোগে বর্ণমালা তৈরি করার উপায় তৈরি করা হয়েছে তাই নয়, এর সংখ্যা, চিহ্ন ইত্যাদিও সঠিকভাবে স্থাপিত নয়। কম্পিউটারের জন্য আমার তৈরি করা জব্বার কীবোর্ড ভিত্তিক এবং চার স্তরের বিধায় সেটিও গ্রহণযোগ্য নয়। ফলে বিজয় কীবোর্ড বিন্যস্ত করার সময় বিজ্ঞানসম্মত কিছু বিষয়কে মাথায় রাখা হয়েছে।

১) বাংলা মূল বর্ণের সংখ্যা ৫০ এবং এতে হসন্ত ও দাড়ি নামে দুটি অতিরিক্ত চিহ্ন মিলিয়ে সেটি ৫২টি মৌলিক বর্ণকে প্রথমে কীবোর্ডে বসানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু রেফ ও র ফলা যে ্+র এবং র+্ এবং য ফলা যে ্ + য, তা আমাদের ব্যবহারকারীরা তা বুঝতে পারেন না বিধায় এই তিনটি ফলাও কীবোর্ডে রাখার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। ফলে সাকুল্যে ৫৫টি অবস্থান বাংলা হরফের জন্য নিশ্চিত করা হয়। কীবোর্ডে ফ্রিকুয়েন্সি অনুযায়ী অক্ষর বসানো হয় এবং চন্দ্রবিন্দু, খ- ৎ ও বিসর্গকে ইংরেজি বর্ণসমূহের স্থানে না রেখে বাংলার জন্য প্রয়োজন নয়, এমন চিহ্নে স্থাপন করা হয়।

২) বর্ণগুলোকে যথাসম্ভব জোড় হিসেবে বসানো হয়। জোড় বিবেচনার সময় অল্পপ্রাণ-মহাপ্রাণ ও উচ্চারণের সমিলতা বিবেচনা করা হয়। হ ও ঞ-এর ক্ষেত্রে এসব সমিলতা না পাওয়ায় এমনিতেই জোড় হিসেবে আবদ্ধ করা হয়।

৩) ফ্রিকুয়েন্সি বেশি হওয়ায়, স্বরচিহ্নকে বোতামে বসানো হয়। ‘অ’ এর স্বরচিহ্ন না থাকায় এবং ে া কার দিয়ে ‘ও’ এর স্বরচিহ্ন প্রস্তুত করা যায় বলে অ এবং ও সরাসরি বোতামে রাখা হয়। বাকি স্বরবর্ণকে হসন্ত দিয়ে তৈরি করার ব্যবস্থা করা হয়।

৪) বাম হাতের হোম কী ও এর কাছাকাছি নিচের সারিতে স্বরচিহ্ন + স্বরবর্ণ এবং ডানহাতে ও বাম হাতের ওপরের সারিতে ব্যঞ্জনবর্ণ স্থাপন করা হয়, বর্ণ সংঘটনের স্বার্থে এই ব্যবস্থা নেয়া হয়। একই কারণে র ফলা, য ফলা ও রেফ বাম হাতে রাখা হয়েছে।

৫) ইংরেজি জি বোতামটিকে লিংক বোতাম বা সংযুক্তি বোতাম হিসেবে ব্যবহার করে যুক্তাক্ষর ও স্বরবর্ণ তৈরির ব্যবস্থা করা হয়েছে।

আমার হাতের কাছে মুনীর চৌধুরীর ফ্রিকুয়েন্সি এনালাইসিসের তালিকাটি ছিল। তাতে কিছু কিছু অক্ষরের ব্যবহারের বিষয়টি স্পষ্ট ছিল। তার ওপর নতুন করে আমি কিছু বাংলা পত্রিকা ও বই থেকে বর্ণানুক্রম যাচাই-বাছাই করি। এসব কাজ ঢাকায় বসেই করে গিয়েছিলাম। ফলে কীবোর্ডর বিষয়টি আমি মনে মনে চূড়ান্ত করেই দিল্লি গিয়েছিলাম। তবে জোসীর সঙ্গে কথা বলে যুক্তাক্ষর ও অন্যান্য গ্লিফের বিষয়টি বারবার বদলাতে হচ্ছিল। গ্লিফের কম্বিনেশনগুলো তৈরি করাও কঠিন কাজ ছিল।

কুতুব হোটেলের ৫২২ নাম্বার ঘরে বসেই যখন শেষ নকশাগুলো সম্পন্ন করা হয়, তখন গভীররাত। দিল্লির শহরতলীর নীরব ওই হোটেলে কান পাতলে আমার শ্বাসের আওয়াজও আমি শুনতে পেতাম। চারপাশে জনবসতি নেই বলে গাড়িঘোড়াও চলে না। কাজ শেষ করে ফেলায় প্রায় সারারাত উত্তেজনায় ঘুম হয়নি। আমার যদি সেই সময়ে মোবাইল ফোন থাকত তবে আমি অবশ্যই জোশীকে গভীর রাতেই জাগাতাম। আমার টেনশন ছিল, আমার লেআউট, যুক্তাক্ষরের সর্বশেষ তালিকা এবং কীবোর্ডের নিয়মাবলি কাজ করবে তো? যদি ‘না’ করে তবে আবার চেষ্টা করা যাবে। কিন্তু যদি করে- তবে সেই আনন্দ আমি কোথায় রাখব?

সম্ভবত : শেষ রাতে শুয়ে পড়েছিলাম এবং ঘুম থেকে উঠে নাস্তা সেরে ডি-২ তে গিয়ে জোশীকে প্রস্তুতই পেয়েছিলাম। জোশী আগের দিনই বাংলা কীবোর্ডের জন্য মূল প্রোগ্রামিং তৈরি করে রেখেছিল। আমার কাছ থেকে কীবোর্ডের লেআউট, বাংলা অক্ষরের কোড নং, লাতিন হরফের কোড নং এবং যুক্তাক্ষর তৈরির সিক্যুয়েন্স ও তার কোডসমূহ একের পর এক বসিয়ে গেলেন। ডি-২ অ্যাপার্টমেন্টে বসে ঘণ্টা তিনেকের মাঝেই আমার তালিকার কাজ শেষ হলো। জোশী প্রোগ্রামটি কম্পাইল করলেন bkbd নামে। আমিই তাকে বলেছিলাম, এর নাম হবে বিজয় কীবোর্ড। সামনেই ছিল ১৬ই ডিসেম্বর। সুতরাং আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ওইদিনে এই কীবোর্ডটি আমি প্রকাশ করব। স্বল্পভাষী জোশী মাত্র তিন কিলোবাইটের ওই প্রোগ্রামটি আমাকে দেখালেন। আমি আমার আসল নামের গোলাম -এর জি অক্ষরটিকে লিংক বা হসন্ত হিসেবে রাখলাম। ইচ্ছে করলে এর বদলে এইচ বোতামটিকেও লিঙ্ক হিসেবে রাখা যেত। বাংলা কীবোর্ড ও ইংরেজির মাঝে টোগল কী হিসেবে রাখলাম কন্ট্রোল- অপশন-বি। ‘বি’ দিয়ে বিজয় এবং বাংলা-দু’টিও বোঝায়।

১২ ডিসেম্বর, ২০১৩।

[লেখক : সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী, দেশের প্রথম ডিজিটাল নিউজ সার্ভিস আবাসের চেয়ারম্যান, বিজয় কিবোর্ড ও সফটওয়্যারের জনক]

back to top