মো. কামরুজ্জামান
সারা বিশ্বে ৮ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার একযোগে পালিত হচ্ছে বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবস। ১৯৯৬ সালে ওয়ার্ল্ড কনফেডারেশন ফর ফিজিক্যালথেরাপি ৮ সেপ্টেম্বরকে বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হলো- ‘অস্টিওআর্থ্রাইটিস চিকিৎসায় ফিজিওথেরাপি সবচেয়ে কার্যকরী চিকিৎসাপদ্ধতি’।
বিভিন্ন ধরনের বাত, ব্যথা, প্যারালাইসিস, স্ট্রোকজনিত হ্যামিপ্লেজিয়া, বয়সজনিত ও হাড় ক্ষয়জনিত ব্যথা ও শারীরিকভাবে অক্ষম, জিবিএস, স্পাইনাল কর্ড ইঞ্জুরি, আঘাত ও স্পোর্টস ইঞ্জুরিজনিত সমস্যায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় ফিজিওথেরাপি অত্যাবশ্যকীয় অনুষঙ্গ। অনেক ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপিই একমাত্র চিকিৎসা হিসেবে বিবেচিত।
বাংলাদেশে ফিজিওথেরাপি:-১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের পর যুদ্ধাহত পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ঐকান্তিক প্রচেষ্ঠায় তৎকালীন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে গুরুত্বপূর্ণ এই চিকিৎসা চালু করেন। আমেরিকান বিখ্যাত অর্থোপেডিক সার্জন অধ্যাপক ডা. আর জে গার্স্টসহ কয়েকজন অর্থোপেডিক সার্জন ও ফিজিওথেরাপিস্টদের নিয়ে যৌথ টিম চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করেন। হাজার হাজার পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা এবং বিশাল জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কার্যক্রম সম্পন্ন কঠিন বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। প্রয়োজন পড়ে দক্ষ প্রশিক্ষিত চৌকস জনবল। সেই লক্ষ্যে ১৯৭২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদের অধীনে এম এস অর্থোপেডিকস এবং ইন্টার্নশিপসহ ৫ বছর মেয়াদি ব্যচেলর অব ফিজিওথেরাপি প্রফেশনাল ডিগ্রি কোর্স চালু করেন। সেই থেকে শুরু।
বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে এই শিক্ষাকোর্স চালু আছে। এর বাইরে বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদের মাধ্যমে সরকার স্বীকৃত ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি থেকে ৩ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন মেডিকেল টেকনোলজি (ফিজিওথেরাপি) শিক্ষা চালু করা হয়েছে। তারা মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ফিজিওথেরাপি)/ রিহ্যাবিলিটেশন টেকনোলজিস্ট হিসেবে ফিজিওথেরাপিস্ট/ রিহ্যাবিলিটেশন প্র?্যাকটিশনারের তত্ত্বাবধানে ফিজিওথেরাপি সেবা প্রদান করে যাচ্ছেন।
‘বাংলাদেশ ফিজিওথেরাপি অ্যাসোসিয়েশন’-এর জরিপে দেখা যায় বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলাতে যেনতনভাবে যত্রতত্র গড়ে উঠছে ফিজিওথেরাপি সেন্টার। অনেক ফিজিওথেরাপি সেন্টারেই বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল আইন-২০১৮ এর নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। এমন স্পর্শকাতর চিকিৎসা নিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে যাচ্ছে। অনেক সেন্টারে অদক্ষ-অল্পশিক্ষিত ব্যক্তি নিজের পরিচয় গোপন করে নামের আগে বিপিটি- ফিজিও লিখে রোগীদের ফিজিওথেরাপি চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপিতে কোন প্রকার শিক্ষাগত যোগ্যতা ছাড়া নিজেকে ফিজিওথেরাপিস্ট/টেকনিশিয়ান/ ফিজিও পরিচয় দিয়ে রোগীদের ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা দিয়ে ক্ষেত্রবিশেষে নিজের অজান্তেই অপচিকিৎসা প্রদান করে অপরাধ করে যাচ্ছেন।
ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা ও জনপ্রিয়তা বিবেচনা করে চিকিৎসা পেশায় জড়িত অনেকেই নিজেদের চেম্বারে অথবা অনেক চিকিৎসা সেবাকেন্দ্রে ফিজিওথেরাপি সেন্টার চালু করেছে। যেখানে রিহ্যাব কাউন্সিল আইন অনুসারে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা ও পরামর্শ ফিজিওথেরাপিস্ট/রিহ্যাবিলিটেশন প্র?্যাকটিশনারের মাধ্যমে দিচ্ছেন না। এ নিয়ে দেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা মিডিয়া এসব ভ্রান্তি নানাভাবে জনগণের সামনে তুলে ধরছে।
ফিজিওথেরাপি পেশায় জড়িত সবার প্রতি অনুরোধ বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে ফিজিওথেরাপিস্ট হিসেবে রোগীদের চিকিৎসা ও পরামর্শ প্রদান করবেন।
[লেখক: ফিজিওথেরাপিস্ট, চিকিৎসাকেন্দ্র, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়]
মো. কামরুজ্জামান
বৃহস্পতিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩
সারা বিশ্বে ৮ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার একযোগে পালিত হচ্ছে বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবস। ১৯৯৬ সালে ওয়ার্ল্ড কনফেডারেশন ফর ফিজিক্যালথেরাপি ৮ সেপ্টেম্বরকে বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হলো- ‘অস্টিওআর্থ্রাইটিস চিকিৎসায় ফিজিওথেরাপি সবচেয়ে কার্যকরী চিকিৎসাপদ্ধতি’।
বিভিন্ন ধরনের বাত, ব্যথা, প্যারালাইসিস, স্ট্রোকজনিত হ্যামিপ্লেজিয়া, বয়সজনিত ও হাড় ক্ষয়জনিত ব্যথা ও শারীরিকভাবে অক্ষম, জিবিএস, স্পাইনাল কর্ড ইঞ্জুরি, আঘাত ও স্পোর্টস ইঞ্জুরিজনিত সমস্যায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় ফিজিওথেরাপি অত্যাবশ্যকীয় অনুষঙ্গ। অনেক ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপিই একমাত্র চিকিৎসা হিসেবে বিবেচিত।
বাংলাদেশে ফিজিওথেরাপি:-১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের পর যুদ্ধাহত পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ঐকান্তিক প্রচেষ্ঠায় তৎকালীন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে গুরুত্বপূর্ণ এই চিকিৎসা চালু করেন। আমেরিকান বিখ্যাত অর্থোপেডিক সার্জন অধ্যাপক ডা. আর জে গার্স্টসহ কয়েকজন অর্থোপেডিক সার্জন ও ফিজিওথেরাপিস্টদের নিয়ে যৌথ টিম চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করেন। হাজার হাজার পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা এবং বিশাল জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কার্যক্রম সম্পন্ন কঠিন বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। প্রয়োজন পড়ে দক্ষ প্রশিক্ষিত চৌকস জনবল। সেই লক্ষ্যে ১৯৭২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদের অধীনে এম এস অর্থোপেডিকস এবং ইন্টার্নশিপসহ ৫ বছর মেয়াদি ব্যচেলর অব ফিজিওথেরাপি প্রফেশনাল ডিগ্রি কোর্স চালু করেন। সেই থেকে শুরু।
বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে এই শিক্ষাকোর্স চালু আছে। এর বাইরে বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদের মাধ্যমে সরকার স্বীকৃত ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি থেকে ৩ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন মেডিকেল টেকনোলজি (ফিজিওথেরাপি) শিক্ষা চালু করা হয়েছে। তারা মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ফিজিওথেরাপি)/ রিহ্যাবিলিটেশন টেকনোলজিস্ট হিসেবে ফিজিওথেরাপিস্ট/ রিহ্যাবিলিটেশন প্র?্যাকটিশনারের তত্ত্বাবধানে ফিজিওথেরাপি সেবা প্রদান করে যাচ্ছেন।
‘বাংলাদেশ ফিজিওথেরাপি অ্যাসোসিয়েশন’-এর জরিপে দেখা যায় বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলাতে যেনতনভাবে যত্রতত্র গড়ে উঠছে ফিজিওথেরাপি সেন্টার। অনেক ফিজিওথেরাপি সেন্টারেই বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল আইন-২০১৮ এর নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। এমন স্পর্শকাতর চিকিৎসা নিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে যাচ্ছে। অনেক সেন্টারে অদক্ষ-অল্পশিক্ষিত ব্যক্তি নিজের পরিচয় গোপন করে নামের আগে বিপিটি- ফিজিও লিখে রোগীদের ফিজিওথেরাপি চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপিতে কোন প্রকার শিক্ষাগত যোগ্যতা ছাড়া নিজেকে ফিজিওথেরাপিস্ট/টেকনিশিয়ান/ ফিজিও পরিচয় দিয়ে রোগীদের ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা দিয়ে ক্ষেত্রবিশেষে নিজের অজান্তেই অপচিকিৎসা প্রদান করে অপরাধ করে যাচ্ছেন।
ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা ও জনপ্রিয়তা বিবেচনা করে চিকিৎসা পেশায় জড়িত অনেকেই নিজেদের চেম্বারে অথবা অনেক চিকিৎসা সেবাকেন্দ্রে ফিজিওথেরাপি সেন্টার চালু করেছে। যেখানে রিহ্যাব কাউন্সিল আইন অনুসারে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা ও পরামর্শ ফিজিওথেরাপিস্ট/রিহ্যাবিলিটেশন প্র?্যাকটিশনারের মাধ্যমে দিচ্ছেন না। এ নিয়ে দেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা মিডিয়া এসব ভ্রান্তি নানাভাবে জনগণের সামনে তুলে ধরছে।
ফিজিওথেরাপি পেশায় জড়িত সবার প্রতি অনুরোধ বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে ফিজিওথেরাপিস্ট হিসেবে রোগীদের চিকিৎসা ও পরামর্শ প্রদান করবেন।
[লেখক: ফিজিওথেরাপিস্ট, চিকিৎসাকেন্দ্র, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়]