alt

উপ-সম্পাদকীয়

নতুন শিক্ষা কারিকুলাম, নতুন মন্ত্রী ও আমাদের প্রত্যাশা

খোরশেদ আলম

: বুধবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৪

১.

দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে ১৯৭২ সালে ড. কুদরাত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়। ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত সেই রিপোর্টে বিজ্ঞান শিক্ষার উদ্দেশ্য বলতে লেখা হয়েছিল, ‘বিজ্ঞানের মুখ্য উদ্দেশ্য হলো সমাজের উন্নতি সাধন করা’ এবং প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চশিক্ষার শেষ ধাপ পর্যন্ত এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে কারিকুলামকে সাজানোর কথা বলা হয়েছিল। সেই কমিশনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করতে পারলে জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখার অনেক কিছু হয়ত আজ থেকে পাঁচ দশক আগেই বাস্তবায়িত হয়ে যেত।

বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা-২০২১’। নতুন এই রূপরেখায় প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সার্বিকভাবে শিক্ষার একটা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। রূপরেখাটি ২০২১ সাল থেকে দুটি শ্রেণিতে পাইলটিং শুরু হয়ে পর্যায়ক্রমে ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণিতে গিয়ে পূর্ণ বাস্তবায়নের পর্যায়ে যাবে। এতে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যসূচি ও মূল্যায়ন পদ্ধতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন শিক্ষাক্রমে দশম শ্রেণির আগের সব পাবলিক পরীক্ষা তুলে দেওয়া হয়েছে। এই পর্যায়ে পুরোটাই মূল্যায়ন হবে বিদ্যালয়ে ধারাবাহিকভাবে শিখন কার্যক্রমের মাধ্যমে। বিভিন্ন বিষয়ে কিছু মূল্যায়ন শিখনকালীন কার্যক্রমের ভিত্তিতে এবং কিছু অংশের মূল্যায়ন পরীক্ষার মাধ্যমে হবে। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা পদ্ধতিতেও আনা হয়েছে পরিবর্তন। এছাড়া থাকছে না নবম শ্রেণিতে বিভাগ পছন্দের সুযোগ। এর বদলে একাদশ শ্রেণিতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা পছন্দমতো বিভাগে পড়তে পারবেন।

রূপরেখা অনুযায়ী, প্রাক-প্রাথমিক স্তর, অর্থাৎ নার্সারি ও প্লেতে শিশুদের জন্য এখন আর কোনো বই থাকবে না। শ্রেণিকক্ষেই শিক্ষকরাই তাদেরকে সরাসরি শিখাবেন। এরপর প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের তিনটি বই পড়ানো হবে কিন্তু কোনো পরীক্ষা থাকবে না। বছরব্যাপী চলা বিভিন্ন শিখন কার্যক্রমের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে। চতুর্থ শ্রেণি থেকে মূল্যায়ন পদ্ধতিতে শিখন কার্যক্রম ও পরীক্ষা দুটোই থাকবে। এক্ষেত্রে চতুর্থ থেকে শ্রেণিভেদে শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে ৩০ থেকে ৬০ শতাংশ এবং পরীক্ষা হবে অবশিষ্ট অংশে। তবে বেশকিছু বিষয়ের মূল্যায়ন শতভাগ ধারাবাহিক শিখন কার্যক্রমের ওপর ভিত্তি করে করা হবে। শিখনকালীন মূল্যায়নের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের যোগাযোগের দক্ষতা, উপস্থাপন, ক্লাস অ্যাসাইনমেন্ট বা বাড়ির কাজসহ বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার কর হবে।

শিক্ষার্থীদের এখন নবম ও দশম শ্রেণিতে অভিন্ন সিলেবাসে পড়ানো হবে এবং অভিন্ন দশটি বিষয়ের ওপর এসএসসি পরীক্ষা নেওয়া হবে সেটাই হবে প্রথম পাবলিক পরীক্ষা। পরে একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান, মানবিক এবং বাণিজ্য এই তিনটার মধ্যে শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দমতো বিভাগ বেছে নিতে পারবেন। বর্তমান প্রচলিত এইচএসসি পরীক্ষার পরিবর্তে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে দুটি আলাদা পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর দুই পরীক্ষার ফলের সমন্বয় করে এইচএসসির চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা হবে। এক্ষেত্রে আবশ্যিক বিষয়ে শিখনকালীন মূল্যায়ন ৩০ শতাংশ এবং সামষ্টিক মূল্যায়ন বা পরীক্ষা হবে ৭০ শতাংশ।

দেখা গেছে, নতুন রূপরেখাটিতে ভবিষ্যতের জন্য সম্পূর্ণ নতুন কিছু দিকদর্শন উপস্থাপন করা হয়েছে। সেখানে রূপান্তরমূলক দক্ষতার কথা বলা হয়েছে-শিক্ষার্থী বিবিধ বিষয়ের তাদের অর্জিত জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গি সমন্বিতভাবে কাজে লাগিয়ে বাস্তব জীবনের যে কোনো স্তরে এবং যে কোনো পরিস্থিতিতে কাজে লাগাতে পারবে, জীবিকা নির্বাহ করে খেতে পারবে এবং জীবনব্যাপী শিক্ষা নেওয়ার জন্য অভ্যস্ত হবে। নিঃসন্দেহে এটি খুব যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত। নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক ধারাবাহিক মূল্যায়নের ওপর জোর দেওয়ার বিষয়টি ইতিবাচক। পর্যায়ক্রমে আমাদের এ ব্যবস্থায় যেতেই হবে। এ কথা অনস্বীকার্য যে, শুধু শ্রেণিকক্ষের পড়াশোনাই নয়, বরং পারিপার্শ্বিক, আর্থসামাজিক অবস্থা বিবেচনা রেখে অভিজ্ঞতা অর্জনের মাধ্যমে শিখনকে এই শিক্ষাক্রমে মূল শিখন কৌশল হিসেবে নেওয়া হয়েছে। নিজের কাজ নিজে করার যে শিক্ষা, তা কেবল পরিবার নয়, বরং প্রাক্? ও প্রাথমিক শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত থাকা জরুরি।

২.

তবে নতুন শিক্ষাক্রমের রূপরেখা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা চলছে। এমনকি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় মানববন্ধন করেছেন অনেকে। বিভিন্ন ধরনের তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ অন্য মাধ্যমগুলোতে এমনভাবে ছড়িয়ে পড়ছে তাতে অভিভাবকরা যেমন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে তেমনি শিক্ষকরাও খানিকটা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে রয়েছে। ফলে এর বিরূপ প্রভাবগুলো বাচ্চাদের ওপর পড়ছে বেশ প্রকটভাবে। নতুন রূপরেখা নিয়ে কিছু মানুষ ঢালাও সমালোচনা করলেও অনেক শিক্ষাবিদসহ সচেতনমহল বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে জাতীয় শিক্ষার লক্ষ্য বিবেচনায় নিয়ে রূপরেখার ইতিবাচক বিষয়গুলো প্রশংসাযোগ্য ও সাহসী বলছেন এবং একইসঙ্গে কিছু যৌক্তিক সমালোচনাসহ মতামত তুলে ধরছেন। তারা নতুন কারিকুলামে সমষ্টিক মূল্যায়ন বা পরীক্ষা কমিয়ে তার পরিবর্তে আছে ধারাবাহিক মূল্যায়নের নামে অ্যাসাইনমেন্ট, উপস্থাপন ও প্রজেক্ট নির্ভর মূল্যায়ন পদ্ধতি। শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রজেক্ট ও অ্যাসাইনমেন্টের সংযোজন অবশ্যই প্রশংসনীয় উদ্যোগ। মুখস্ত নির্ভর পরীক্ষা পদ্ধতির জায়গায় এক ধরনের বৈপ্লবিক চিন্তাও বটে। কিন্তু প্রজেক্টভিত্তিক মূল্যায়নের ক্ষেত্রে শ্রেণিশিক্ষকের পর্যবেক্ষণ আবশ্যক এবং সেটা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্তসংখ্যক মানম্মত শিক্ষক। বাংলাদেশে এমনিতেই শিক্ষার্থীর তুলনায় শিক্ষকের সংখ্যা খুবই অপ্রতুল তাই কার্যকর উদ্যোগ না নিলে বাস্তবায়ন কঠিন হবে।

নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে সমালোচনার আরেকটি জায়গা হচ্ছে বিজ্ঞান পাঠ নিয়ে। আমরা যদি একটু বিজ্ঞান শিক্ষার ক্ষেত্রে বলি-রূপরেখাটি খুব চমৎকার হলেও চতুর্থ শিল্পবিপ্লব কিংবা একুশ শতকের উপযোগী নাগরিক গড়ে তুলতে যেমনটি প্রয়োজন, মাধ্যমিকে বিভাগ উঠিয়ে দিয়ে সেটি একটি চ্যালেঞ্জে ফেলা হয়েছে বলে মনে হয়। নবম-দশম শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা বর্তমান নিয়মে পদার্থ, রসায়ন ও জীববিজ্ঞানের ওপর আলাদা তিনটি ১০০ নম্বরের বই পড়ে এবং গবেষণাগারে সেটি হাতে-কলমে দেখে থাকে। নতুন পদ্ধতিতে সেটি মাত্র একটি বইয়ে নেমে আসার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। মাত্র একটি বইয়ে বা ১০০ নম্বরের পত্রে, একত্রে পদার্থ-রসায়ন-জীববিজ্ঞান ঢুকিয়ে দিলে শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ বিজ্ঞান শিক্ষার বুনিয়াদ দুর্বল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। মাধ্যমিক স্তরে দুর্বল বিজ্ঞান শিক্ষা চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের এবং একুশ শতকের উপযোগী নাগরিক তৈরির জন্য চ্যালেঞ্জ হতে পারে। অর্থাৎ উচ্চমাধ্যমিকে যারা বিজ্ঞান পড়বে, তাদের পক্ষে মাধ্যমিকের পদার্থ, রসায়ন ও জীববিজ্ঞান বিষয়ের সীমিত জ্ঞান নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকের পদার্থ, রসায়ন, জীববিজ্ঞান আয়ত্ত করা কঠিন হতে পারে।

আরেকটি বিষয়ে নজর দেওয়া দরকার নতুন শিক্ষাক্রমে বাংলা মাধ্যমে যারা উচ্চ মাধ্যমিক পাস করবে, তাদের সঙ্গে ইংরেজি মাধ্যমে পাস করা শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান বিষয়ক জ্ঞানের ব্যাপক বৈষম্য তৈরি হবে। যুগের প্রয়োজনেই ও চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলায় কারিকুলাম আপডেটের প্রয়োজনীয়তা কেউ অস্বীকার করবে না। তবে অনেকেই মনে করেন এটা বাস্তবায়নের জন্য মাঠ প্রস্তুত নেই। একবারে ব্যাপক পরিবর্তনের ফলে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক সবার পক্ষেই তাল মেলানোটা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। অনেক প্রতিষ্ঠান প্রধান (প্রধান শিক্ষক) অনেক কিছু প্রকাশ্যে না বললেও তবে বাস্তবতা হলো, নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে সবচেয়ে বেশি দ্বিধা-দ্বন্দ্বে আছেন শিক্ষক ও অভিভাবকরা। তবে আশার কথা আমাদের নতুন শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, নতুন কারিকুলাম বিষয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখছি। এখানে যেসব বিষয় পরিবর্তন করা প্রয়োজন, সেগুলো অবশ্যই পরিবর্তন করা হবে। প্রত্যাশা থাকবে শিক্ষাবিদ, অভিভাবক, বিভিন্ন অংশীজনের মতামত ও বাস্তব সমস্যাগুলো বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় সংস্করন, পরিমার্জন ও পরিশীলনের মাধ্যমে নতুন রূপরেখাটি সফলভাবে এগিয়ে নিবে।

নতুন রূপরেখাটি বাস্তবায়নের জন্য কিছু প্রস্তাবনা :

ক) রূপরেখায় মূল্যায়ন পদ্ধতিতে শ্রেণিভেদে ত্রিশ থেকে ষাট ভাগ পর্যন্ত মূল্যায়নই করা হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিখনকালীন সময়ে। যেহেতু বর্তমানে পর্যাপ্ত দক্ষ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক সংকট রয়েছে তাই শিখনকালীন মূল্যায়নের অংশে ২০-৩০% রেখে বাকিটা পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন করা যেতে পারে। পর্যায়ক্রমে শিক্ষক : শিক্ষার্থীর অনুপাত কমিয়ে পর্যায়ক্রমে এটা বাড়ানো যেতে পারে।

মাধ্যমিক স্তরে দুর্বল বিজ্ঞান শিক্ষা চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের এবং একুশ শতকের উপযোগী নাগরিক তৈরির জন্য চ্যালেঞ্জ হতে পারে। অর্থাৎ উচ্চমাধ্যমিকে যারা বিজ্ঞান পড়বে, তাদের পক্ষে মাধ্যমিকের পদার্থ, রসায়ন ও জীববিজ্ঞান বিষয়ের সীমিত জ্ঞান নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকের পদার্থ, রসায়ন, জীববিজ্ঞান আয়ত্ত করা কঠিন হতে পারে

খ.) দ্রুততম সময়ে নতুন শিক্ষাক্রম, নতুন পাঠ্যপুস্তক, শিখন-শিক্ষণ, মূল্যায়ন পদ্ধতি ভালোভাবে শিক্ষকদের বুঝাতে হবে। ধারাবাহিকভাবে প্রশিক্ষণের পর প্রশিক্ষণ দিতে হবে। আবার শহর ও গ্রামে নানা বৈষম্য আছে। কাজেই নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের জন্য পর্যাপ্ত ও মেধাবী শিক্ষকদের নিয়োগের যেমন ব্যবস্থা করতে হবে, তেমনি তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ের প্রতি যৌক্তিক তদারকি ও নজরদারির ব্যবস্থা রাখতে হবে।

গ) এনসিটিবি সমীক্ষায় যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম চালু থাকা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে একজন শিক্ষকের বিপরীতে শিক্ষার্থী সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় গড়ে ১২ জন, থাইল্যান্ডে গড়ে ২৪ জন, ইন্দোনেশিয়ায় গড়ে ১৫ জন, অস্ট্রেলিয়ায় গড়ে ৯ জন, ফিনল্যান্ডে গড়ে ১৩ জন, ডেনমার্কে গড়ে ১১, এবং ভারতে গড়ে ২৮ জন। অন্যদিকে আমাদের দেশে মাধ্যমিকে গড়ে ৫২ শিক্ষার্থীকে পড়ান একজন শিক্ষক এবং প্রাথমিকেও গড়ে ৩৮ শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক রয়েছেন। অথচ নতুন শিক্ষাক্রম সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হলে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর ওপর নজর দিতে হবে। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অনুপাত কমিয়ে আনতে হবে।

ঘ) দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে শিক্ষা খাতে বাংলাদেশে বরাদ্দ যেমন কম, তেমনি কম শিক্ষকদের বেতন-ভাতাও। এসব কারণেই এখানে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মেধাবীরা শিকক্ষতা পেশায় আসেন না। কাজেই মেধাবীদের আনতে হলে তাদের যথাযথ সম্মান ও সুযোগ-সুবিধা ও পদোন্নতির বিষয়ে ভাবতে হবে। ২০১০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতিতে সব স্তরের শিক্ষকদের জন্য পৃথক বেতনকাঠামো প্রণয়ন করার কথা বলা হয়েছিল। এগুলো বাস্তবায়নের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

ঙ) নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শ্রেণিশিক্ষক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষা কর্মকর্তাদের জন্য শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) কর্তৃক জারিকৃত নির্দেশনাসমূহ পালনে সবাইকে শতভাগ আন্তরিক হতে হবে। শ্রেণি শিক্ষকদের এখানে শিখন শেখানো কার্যক্রম পরিচালনা, গতানুগতিক শিক্ষককেন্দ্রিক পদ্ধতি পরিহার করে সহায়তাকারীর ভূমিকা পালন করা, প্রকল্পভিত্তিক কাজ ও অনুসন্ধানমূলক কাজে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত, সমস্যা চিহ্নিত করা, মূল্যায়নের মূলনীতি অনুসরণসহ শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতি বা সুবিধাভোগী মনোভাব পরিহার করে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে। আবার অভিভাবকদের জন্য সন্তানদের বাড়ির ছোট ছোট কাজগুলো করানোর বিষয়ে উৎসাহ প্রদান করা, ভালো কাজে উৎসাহ দেওয়া, সততা ও নৈতিকতা বজায় রাখাসহ নানা বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অভিভাকদের সঙ্গে এসব নিয়ে কথা বলতে হবে। কোনো কোনো মহল শ্রেণিভিত্তিক শিখন কার্যক্রমের খ-িত অংশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে এটা সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করছে যা অভিভাবকদের আরও উদ্বিগ্ন করে তুলছে। অভিভাবক, শ্রেণিশিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান কার্যকর সমন্বয়ের মাধ্যমে এটা দূর করতে হবে।

চ) মাধ্যমিকে বিভাগ উঠিয়ে দেওয়ার ফলে নবম-দশম শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা বর্তমান নিয়মে পদার্থ, রসায়ন ও জীববিজ্ঞানের ওপর আলাদা তিনটি ১০০ নম্বরের বা একত্রে ৩০০ নম্বরের পরিবর্তে তিনটি মিলে মাত্র ১০০ নম্বরের পাঠ্যক্রম পড়ে ভবিষ্যৎ বিজ্ঞান শিক্ষার বুনিয়াদ দুর্বল হওয়ার আশঙ্কার কথা বলা হচ্ছে। চমৎকার আধুনিক শিক্ষাক্রমটি আরও ভালো বলা যায়, যদি এতে মাধ্যমিকে বিজ্ঞান, মানবিক, বাণিজ্য বিভাগের সঙ্গে সম্পর্কিত দুটি করে ঐচ্ছিক বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা যেত-যাতে করে যে চাইবে সে সেই বিষয়ে অধিকতর জ্ঞান অর্জন করতে পারবে। ঐচ্ছিক বিষয়ের সুবিধা হলো-মূল সিস্টেমের সুবিধাও সবার জন্য অক্ষুণœ থাকবে এবং যারা চাইবে তারা পছন্দের বিষয়ে বাড়তি পড়াশোনা করে তাদের পরবর্তী ধাপের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে পারবে।

ছ) বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। শুরু থেকেই বাংলাদেশের শিক্ষাক্রমে ‘কৃষি শিক্ষা’ অন্তর্ভুক্ত ছিল। প্রস্তাবিত শিক্ষা ব্যবস্থায় কৃষিকে গুরুত্ব খুবই কম দেওয়া হয়েছে মর্মে সমালোচনা রয়েছে। পরবর্তী সংস্করণে কৃষি শিক্ষাকে কিভাবে আরও কিছুটা সংযোজন করা যায় সেটা ভাবা যেতে পারে।

জ) এটা ইতিবাচক মানসিক ও শারীরিক শিক্ষার গুরুত্ব বিবেচনায় পাঠ্যপুস্তকে ‘স্বাস্থ্য সুরক্ষা’ বিষয় জাতীয় শিক্ষাক্রমে স্থান পেয়েছে। এক্ষেত্রে যে সকল স্কুলগুলোতে শরীরচর্চার পূর্ণাঙ্গ সুযোগ-সুবিধা নাই তালিকা করে পর্যাক্রমে এটা নিশ্চিৎ করতে হবে।

৩.

‘জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা-২০২১’ পরিবর্তনশীল প্রেক্ষাপটে অভিযোজনের জন্য জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গির সমন্বয়ে অর্জিত সক্ষমতাকে যোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। নিঃসন্দেহে এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক ও সাহসী সিদ্ধান্ত। আমরা চাই দেশে এমন এক শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে উঠুক, যাতে আমাদের শিক্ষার্থীরা একুশ শতকের উপযোগী আধুনিক, দক্ষ, শিক্ষিত ও বিকশিত মানুষ হিসাবে গড়ে ওঠে। জোর করে কাউকে পদার্থবিদ, অর্থনীতিবিদ বা প্রকৌশলী বানানো যাবে না, কিন্তু যে চায় তাকেও একটা সুযোগ দেওয়ার অপশন থাকা উচিত।

তবে এ কথা ঠিক, যে কোনো নতুনত্বই এক ধরনের চ্যালেঞ্জ। বিশ্বের অন্যান্য দেশে নির্দিষ্ট সময় পরপর বাস্তবতা ও যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষাক্রম মূল্যায়ন ও যুগোপযোগী করা হয়ে থাকে। আমাদের দেশে যেহেতু নতুন শিক্ষাক্রমটি শুরু হয়েছে, তাই বাস্তবতার আলোকে যৌক্তিক বিষয়গুলো বিবেচনায় নিলে তা সফল হবে বলে প্রত্যাশা করছি। পরিশেষে বলব, নতুন শিক্ষাক্রম এমনভাবে বাস্তবায়িত হোক, যেটি হবে একাধারে আন্তর্জাতিকমানের এবং আমাদের স্থানীয় সমস্যার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। অর্থাৎ আমাদের শিক্ষার্থীরা যেন প্রতিনিয়ত উদ্ভাবিত নতুন নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে সমন্বয় করে নিজেরা নেতৃত্বের জায়গায় টিকে থাকতে পারে। প্রত্যাশা থাকবে, নতুন শিক্ষাক্রম এমন বিশ্বনাগরিক তৈরি করবে, যা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে ভূমিকা রাখবে এবং একইসঙ্গে একুশ শতক তথা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকবে।

[লেখক : চেয়ারম্যান, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়]

কেন থমকে আছে কাক্সিক্ষত অগ্রগতি

বদলাচ্ছে সমাজ, বদলাচ্ছে অর্জনের গল্প

বাজেট কি গণমুখী হবে

টেকসই কৃষিতে মৌমাছি পালন

জনগণের বিশ্বাস ভেঙে নির্মিত নিষ্ক্রিয়তার সাম্রাজ্য

সাইবার ঝুঁকির চক্রে বাংলাদেশ

ছবি

কীভাবে পাকিস্তান ভারতের রাফায়েলকে পরাস্ত করল

ছবি

নজরুলের দ্রোহ চেতনার স্বরূপ সন্ধানে

পিতৃতন্ত্রের মনস্তত্ত্ব ও নারীর গ-িবদ্ধতা

চিরতন ও কালীচরণ : শতবর্ষ আগে যারা আইনের মঞ্চে উঠেছিলেন

রম্যগদ্য : প্লিজ স্যার... প্লিজ, ইকটু রেহাই দ্যান...

জমি, সম্মান ও প্রতিহিংসার নির্মম রাজনীতি

জানি তিনি মোড়ল বটে, আমাদের কেন তা হতে হবে

ভূমি মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় যুগোপযোগী আমূল সংস্কার জরুরি

বরেন্দ্রর মাটিতে আমের বিপ্লব : সম্ভাবনা ও সতর্কবার্তা

অবশেষে ‘হাসিনা’ গ্রেফতার

স্ক্যাবিস সংক্রমণের কারণ ও প্রতিরোধে করণীয়

বাস্তবমুখী বাজেটের প্রত্যাশা : বৈষম্যহীন অর্থনীতির পথে কতটা অগ্রগতি?

কৌশল নয়, এবার প্রযুক্তিতে সৌদি-মার্কিন জোট

সিউল : স্বর্গ নেমেছে ধরায়

নাচোল বিদ্রোহ ও ইলা মিত্র সংগ্রহশালা : সাঁওতাল স্মৃতি কেন উপেক্ষিত?

ছবি

অন্ধকার সত্য, শেষ সত্য নয়!

বিয়েতে মিতব্যয়িতা

এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বঞ্চনার কথা

রোহিঙ্গা সমস্যা : বাহবা, ব্যর্থতা ও ভবিষ্যতের ভয়

ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয়

প্রযুক্তির ফাঁদে শৈশব : স্ক্রিন টাইম গিলে খাচ্ছে খেলার মাঠ

রমগদ্য : সিরাজগঞ্জে ‘ব্রিটিশ প্রেতাত্মা’

বামপন্থা : নীতির সঙ্গে নেতৃত্বের ভূমিকা

দাবি আদায়ে জনদুর্ভোগ : জনশিক্ষা ও সুশাসনের পথ

ইমাম রইস উদ্দিন হত্যাকাণ্ড : সুবিচার নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব

কারাগার, সংশোধনাগার ও ভবঘুরে কেন্দ্রগুলোর সংস্কার কি হবে

জ্বালানির বদল, জীবিকার ঝুঁকি

প্রসঙ্গ : রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী ও চট্টগ্রামে এস্কর্ট ডিউটি

দেশটা কারো বাপের নয়!

বুদ্ধের বাণীতে বিশ্বশান্তির প্রার্থনা

tab

উপ-সম্পাদকীয়

নতুন শিক্ষা কারিকুলাম, নতুন মন্ত্রী ও আমাদের প্রত্যাশা

খোরশেদ আলম

বুধবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৪

১.

দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে ১৯৭২ সালে ড. কুদরাত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়। ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত সেই রিপোর্টে বিজ্ঞান শিক্ষার উদ্দেশ্য বলতে লেখা হয়েছিল, ‘বিজ্ঞানের মুখ্য উদ্দেশ্য হলো সমাজের উন্নতি সাধন করা’ এবং প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চশিক্ষার শেষ ধাপ পর্যন্ত এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে কারিকুলামকে সাজানোর কথা বলা হয়েছিল। সেই কমিশনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করতে পারলে জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখার অনেক কিছু হয়ত আজ থেকে পাঁচ দশক আগেই বাস্তবায়িত হয়ে যেত।

বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা-২০২১’। নতুন এই রূপরেখায় প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সার্বিকভাবে শিক্ষার একটা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। রূপরেখাটি ২০২১ সাল থেকে দুটি শ্রেণিতে পাইলটিং শুরু হয়ে পর্যায়ক্রমে ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণিতে গিয়ে পূর্ণ বাস্তবায়নের পর্যায়ে যাবে। এতে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যসূচি ও মূল্যায়ন পদ্ধতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন শিক্ষাক্রমে দশম শ্রেণির আগের সব পাবলিক পরীক্ষা তুলে দেওয়া হয়েছে। এই পর্যায়ে পুরোটাই মূল্যায়ন হবে বিদ্যালয়ে ধারাবাহিকভাবে শিখন কার্যক্রমের মাধ্যমে। বিভিন্ন বিষয়ে কিছু মূল্যায়ন শিখনকালীন কার্যক্রমের ভিত্তিতে এবং কিছু অংশের মূল্যায়ন পরীক্ষার মাধ্যমে হবে। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা পদ্ধতিতেও আনা হয়েছে পরিবর্তন। এছাড়া থাকছে না নবম শ্রেণিতে বিভাগ পছন্দের সুযোগ। এর বদলে একাদশ শ্রেণিতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা পছন্দমতো বিভাগে পড়তে পারবেন।

রূপরেখা অনুযায়ী, প্রাক-প্রাথমিক স্তর, অর্থাৎ নার্সারি ও প্লেতে শিশুদের জন্য এখন আর কোনো বই থাকবে না। শ্রেণিকক্ষেই শিক্ষকরাই তাদেরকে সরাসরি শিখাবেন। এরপর প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের তিনটি বই পড়ানো হবে কিন্তু কোনো পরীক্ষা থাকবে না। বছরব্যাপী চলা বিভিন্ন শিখন কার্যক্রমের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে। চতুর্থ শ্রেণি থেকে মূল্যায়ন পদ্ধতিতে শিখন কার্যক্রম ও পরীক্ষা দুটোই থাকবে। এক্ষেত্রে চতুর্থ থেকে শ্রেণিভেদে শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে ৩০ থেকে ৬০ শতাংশ এবং পরীক্ষা হবে অবশিষ্ট অংশে। তবে বেশকিছু বিষয়ের মূল্যায়ন শতভাগ ধারাবাহিক শিখন কার্যক্রমের ওপর ভিত্তি করে করা হবে। শিখনকালীন মূল্যায়নের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের যোগাযোগের দক্ষতা, উপস্থাপন, ক্লাস অ্যাসাইনমেন্ট বা বাড়ির কাজসহ বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার কর হবে।

শিক্ষার্থীদের এখন নবম ও দশম শ্রেণিতে অভিন্ন সিলেবাসে পড়ানো হবে এবং অভিন্ন দশটি বিষয়ের ওপর এসএসসি পরীক্ষা নেওয়া হবে সেটাই হবে প্রথম পাবলিক পরীক্ষা। পরে একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান, মানবিক এবং বাণিজ্য এই তিনটার মধ্যে শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দমতো বিভাগ বেছে নিতে পারবেন। বর্তমান প্রচলিত এইচএসসি পরীক্ষার পরিবর্তে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে দুটি আলাদা পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর দুই পরীক্ষার ফলের সমন্বয় করে এইচএসসির চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা হবে। এক্ষেত্রে আবশ্যিক বিষয়ে শিখনকালীন মূল্যায়ন ৩০ শতাংশ এবং সামষ্টিক মূল্যায়ন বা পরীক্ষা হবে ৭০ শতাংশ।

দেখা গেছে, নতুন রূপরেখাটিতে ভবিষ্যতের জন্য সম্পূর্ণ নতুন কিছু দিকদর্শন উপস্থাপন করা হয়েছে। সেখানে রূপান্তরমূলক দক্ষতার কথা বলা হয়েছে-শিক্ষার্থী বিবিধ বিষয়ের তাদের অর্জিত জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গি সমন্বিতভাবে কাজে লাগিয়ে বাস্তব জীবনের যে কোনো স্তরে এবং যে কোনো পরিস্থিতিতে কাজে লাগাতে পারবে, জীবিকা নির্বাহ করে খেতে পারবে এবং জীবনব্যাপী শিক্ষা নেওয়ার জন্য অভ্যস্ত হবে। নিঃসন্দেহে এটি খুব যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত। নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক ধারাবাহিক মূল্যায়নের ওপর জোর দেওয়ার বিষয়টি ইতিবাচক। পর্যায়ক্রমে আমাদের এ ব্যবস্থায় যেতেই হবে। এ কথা অনস্বীকার্য যে, শুধু শ্রেণিকক্ষের পড়াশোনাই নয়, বরং পারিপার্শ্বিক, আর্থসামাজিক অবস্থা বিবেচনা রেখে অভিজ্ঞতা অর্জনের মাধ্যমে শিখনকে এই শিক্ষাক্রমে মূল শিখন কৌশল হিসেবে নেওয়া হয়েছে। নিজের কাজ নিজে করার যে শিক্ষা, তা কেবল পরিবার নয়, বরং প্রাক্? ও প্রাথমিক শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত থাকা জরুরি।

২.

তবে নতুন শিক্ষাক্রমের রূপরেখা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা চলছে। এমনকি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় মানববন্ধন করেছেন অনেকে। বিভিন্ন ধরনের তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ অন্য মাধ্যমগুলোতে এমনভাবে ছড়িয়ে পড়ছে তাতে অভিভাবকরা যেমন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে তেমনি শিক্ষকরাও খানিকটা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে রয়েছে। ফলে এর বিরূপ প্রভাবগুলো বাচ্চাদের ওপর পড়ছে বেশ প্রকটভাবে। নতুন রূপরেখা নিয়ে কিছু মানুষ ঢালাও সমালোচনা করলেও অনেক শিক্ষাবিদসহ সচেতনমহল বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে জাতীয় শিক্ষার লক্ষ্য বিবেচনায় নিয়ে রূপরেখার ইতিবাচক বিষয়গুলো প্রশংসাযোগ্য ও সাহসী বলছেন এবং একইসঙ্গে কিছু যৌক্তিক সমালোচনাসহ মতামত তুলে ধরছেন। তারা নতুন কারিকুলামে সমষ্টিক মূল্যায়ন বা পরীক্ষা কমিয়ে তার পরিবর্তে আছে ধারাবাহিক মূল্যায়নের নামে অ্যাসাইনমেন্ট, উপস্থাপন ও প্রজেক্ট নির্ভর মূল্যায়ন পদ্ধতি। শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রজেক্ট ও অ্যাসাইনমেন্টের সংযোজন অবশ্যই প্রশংসনীয় উদ্যোগ। মুখস্ত নির্ভর পরীক্ষা পদ্ধতির জায়গায় এক ধরনের বৈপ্লবিক চিন্তাও বটে। কিন্তু প্রজেক্টভিত্তিক মূল্যায়নের ক্ষেত্রে শ্রেণিশিক্ষকের পর্যবেক্ষণ আবশ্যক এবং সেটা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্তসংখ্যক মানম্মত শিক্ষক। বাংলাদেশে এমনিতেই শিক্ষার্থীর তুলনায় শিক্ষকের সংখ্যা খুবই অপ্রতুল তাই কার্যকর উদ্যোগ না নিলে বাস্তবায়ন কঠিন হবে।

নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে সমালোচনার আরেকটি জায়গা হচ্ছে বিজ্ঞান পাঠ নিয়ে। আমরা যদি একটু বিজ্ঞান শিক্ষার ক্ষেত্রে বলি-রূপরেখাটি খুব চমৎকার হলেও চতুর্থ শিল্পবিপ্লব কিংবা একুশ শতকের উপযোগী নাগরিক গড়ে তুলতে যেমনটি প্রয়োজন, মাধ্যমিকে বিভাগ উঠিয়ে দিয়ে সেটি একটি চ্যালেঞ্জে ফেলা হয়েছে বলে মনে হয়। নবম-দশম শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা বর্তমান নিয়মে পদার্থ, রসায়ন ও জীববিজ্ঞানের ওপর আলাদা তিনটি ১০০ নম্বরের বই পড়ে এবং গবেষণাগারে সেটি হাতে-কলমে দেখে থাকে। নতুন পদ্ধতিতে সেটি মাত্র একটি বইয়ে নেমে আসার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। মাত্র একটি বইয়ে বা ১০০ নম্বরের পত্রে, একত্রে পদার্থ-রসায়ন-জীববিজ্ঞান ঢুকিয়ে দিলে শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ বিজ্ঞান শিক্ষার বুনিয়াদ দুর্বল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। মাধ্যমিক স্তরে দুর্বল বিজ্ঞান শিক্ষা চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের এবং একুশ শতকের উপযোগী নাগরিক তৈরির জন্য চ্যালেঞ্জ হতে পারে। অর্থাৎ উচ্চমাধ্যমিকে যারা বিজ্ঞান পড়বে, তাদের পক্ষে মাধ্যমিকের পদার্থ, রসায়ন ও জীববিজ্ঞান বিষয়ের সীমিত জ্ঞান নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকের পদার্থ, রসায়ন, জীববিজ্ঞান আয়ত্ত করা কঠিন হতে পারে।

আরেকটি বিষয়ে নজর দেওয়া দরকার নতুন শিক্ষাক্রমে বাংলা মাধ্যমে যারা উচ্চ মাধ্যমিক পাস করবে, তাদের সঙ্গে ইংরেজি মাধ্যমে পাস করা শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান বিষয়ক জ্ঞানের ব্যাপক বৈষম্য তৈরি হবে। যুগের প্রয়োজনেই ও চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলায় কারিকুলাম আপডেটের প্রয়োজনীয়তা কেউ অস্বীকার করবে না। তবে অনেকেই মনে করেন এটা বাস্তবায়নের জন্য মাঠ প্রস্তুত নেই। একবারে ব্যাপক পরিবর্তনের ফলে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক সবার পক্ষেই তাল মেলানোটা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। অনেক প্রতিষ্ঠান প্রধান (প্রধান শিক্ষক) অনেক কিছু প্রকাশ্যে না বললেও তবে বাস্তবতা হলো, নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে সবচেয়ে বেশি দ্বিধা-দ্বন্দ্বে আছেন শিক্ষক ও অভিভাবকরা। তবে আশার কথা আমাদের নতুন শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, নতুন কারিকুলাম বিষয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখছি। এখানে যেসব বিষয় পরিবর্তন করা প্রয়োজন, সেগুলো অবশ্যই পরিবর্তন করা হবে। প্রত্যাশা থাকবে শিক্ষাবিদ, অভিভাবক, বিভিন্ন অংশীজনের মতামত ও বাস্তব সমস্যাগুলো বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় সংস্করন, পরিমার্জন ও পরিশীলনের মাধ্যমে নতুন রূপরেখাটি সফলভাবে এগিয়ে নিবে।

নতুন রূপরেখাটি বাস্তবায়নের জন্য কিছু প্রস্তাবনা :

ক) রূপরেখায় মূল্যায়ন পদ্ধতিতে শ্রেণিভেদে ত্রিশ থেকে ষাট ভাগ পর্যন্ত মূল্যায়নই করা হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিখনকালীন সময়ে। যেহেতু বর্তমানে পর্যাপ্ত দক্ষ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক সংকট রয়েছে তাই শিখনকালীন মূল্যায়নের অংশে ২০-৩০% রেখে বাকিটা পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন করা যেতে পারে। পর্যায়ক্রমে শিক্ষক : শিক্ষার্থীর অনুপাত কমিয়ে পর্যায়ক্রমে এটা বাড়ানো যেতে পারে।

মাধ্যমিক স্তরে দুর্বল বিজ্ঞান শিক্ষা চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের এবং একুশ শতকের উপযোগী নাগরিক তৈরির জন্য চ্যালেঞ্জ হতে পারে। অর্থাৎ উচ্চমাধ্যমিকে যারা বিজ্ঞান পড়বে, তাদের পক্ষে মাধ্যমিকের পদার্থ, রসায়ন ও জীববিজ্ঞান বিষয়ের সীমিত জ্ঞান নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকের পদার্থ, রসায়ন, জীববিজ্ঞান আয়ত্ত করা কঠিন হতে পারে

খ.) দ্রুততম সময়ে নতুন শিক্ষাক্রম, নতুন পাঠ্যপুস্তক, শিখন-শিক্ষণ, মূল্যায়ন পদ্ধতি ভালোভাবে শিক্ষকদের বুঝাতে হবে। ধারাবাহিকভাবে প্রশিক্ষণের পর প্রশিক্ষণ দিতে হবে। আবার শহর ও গ্রামে নানা বৈষম্য আছে। কাজেই নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের জন্য পর্যাপ্ত ও মেধাবী শিক্ষকদের নিয়োগের যেমন ব্যবস্থা করতে হবে, তেমনি তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ের প্রতি যৌক্তিক তদারকি ও নজরদারির ব্যবস্থা রাখতে হবে।

গ) এনসিটিবি সমীক্ষায় যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম চালু থাকা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে একজন শিক্ষকের বিপরীতে শিক্ষার্থী সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় গড়ে ১২ জন, থাইল্যান্ডে গড়ে ২৪ জন, ইন্দোনেশিয়ায় গড়ে ১৫ জন, অস্ট্রেলিয়ায় গড়ে ৯ জন, ফিনল্যান্ডে গড়ে ১৩ জন, ডেনমার্কে গড়ে ১১, এবং ভারতে গড়ে ২৮ জন। অন্যদিকে আমাদের দেশে মাধ্যমিকে গড়ে ৫২ শিক্ষার্থীকে পড়ান একজন শিক্ষক এবং প্রাথমিকেও গড়ে ৩৮ শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক রয়েছেন। অথচ নতুন শিক্ষাক্রম সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হলে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর ওপর নজর দিতে হবে। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অনুপাত কমিয়ে আনতে হবে।

ঘ) দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে শিক্ষা খাতে বাংলাদেশে বরাদ্দ যেমন কম, তেমনি কম শিক্ষকদের বেতন-ভাতাও। এসব কারণেই এখানে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মেধাবীরা শিকক্ষতা পেশায় আসেন না। কাজেই মেধাবীদের আনতে হলে তাদের যথাযথ সম্মান ও সুযোগ-সুবিধা ও পদোন্নতির বিষয়ে ভাবতে হবে। ২০১০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতিতে সব স্তরের শিক্ষকদের জন্য পৃথক বেতনকাঠামো প্রণয়ন করার কথা বলা হয়েছিল। এগুলো বাস্তবায়নের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

ঙ) নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শ্রেণিশিক্ষক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষা কর্মকর্তাদের জন্য শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) কর্তৃক জারিকৃত নির্দেশনাসমূহ পালনে সবাইকে শতভাগ আন্তরিক হতে হবে। শ্রেণি শিক্ষকদের এখানে শিখন শেখানো কার্যক্রম পরিচালনা, গতানুগতিক শিক্ষককেন্দ্রিক পদ্ধতি পরিহার করে সহায়তাকারীর ভূমিকা পালন করা, প্রকল্পভিত্তিক কাজ ও অনুসন্ধানমূলক কাজে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত, সমস্যা চিহ্নিত করা, মূল্যায়নের মূলনীতি অনুসরণসহ শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতি বা সুবিধাভোগী মনোভাব পরিহার করে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে। আবার অভিভাবকদের জন্য সন্তানদের বাড়ির ছোট ছোট কাজগুলো করানোর বিষয়ে উৎসাহ প্রদান করা, ভালো কাজে উৎসাহ দেওয়া, সততা ও নৈতিকতা বজায় রাখাসহ নানা বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অভিভাকদের সঙ্গে এসব নিয়ে কথা বলতে হবে। কোনো কোনো মহল শ্রেণিভিত্তিক শিখন কার্যক্রমের খ-িত অংশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে এটা সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করছে যা অভিভাবকদের আরও উদ্বিগ্ন করে তুলছে। অভিভাবক, শ্রেণিশিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান কার্যকর সমন্বয়ের মাধ্যমে এটা দূর করতে হবে।

চ) মাধ্যমিকে বিভাগ উঠিয়ে দেওয়ার ফলে নবম-দশম শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা বর্তমান নিয়মে পদার্থ, রসায়ন ও জীববিজ্ঞানের ওপর আলাদা তিনটি ১০০ নম্বরের বা একত্রে ৩০০ নম্বরের পরিবর্তে তিনটি মিলে মাত্র ১০০ নম্বরের পাঠ্যক্রম পড়ে ভবিষ্যৎ বিজ্ঞান শিক্ষার বুনিয়াদ দুর্বল হওয়ার আশঙ্কার কথা বলা হচ্ছে। চমৎকার আধুনিক শিক্ষাক্রমটি আরও ভালো বলা যায়, যদি এতে মাধ্যমিকে বিজ্ঞান, মানবিক, বাণিজ্য বিভাগের সঙ্গে সম্পর্কিত দুটি করে ঐচ্ছিক বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা যেত-যাতে করে যে চাইবে সে সেই বিষয়ে অধিকতর জ্ঞান অর্জন করতে পারবে। ঐচ্ছিক বিষয়ের সুবিধা হলো-মূল সিস্টেমের সুবিধাও সবার জন্য অক্ষুণœ থাকবে এবং যারা চাইবে তারা পছন্দের বিষয়ে বাড়তি পড়াশোনা করে তাদের পরবর্তী ধাপের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে পারবে।

ছ) বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। শুরু থেকেই বাংলাদেশের শিক্ষাক্রমে ‘কৃষি শিক্ষা’ অন্তর্ভুক্ত ছিল। প্রস্তাবিত শিক্ষা ব্যবস্থায় কৃষিকে গুরুত্ব খুবই কম দেওয়া হয়েছে মর্মে সমালোচনা রয়েছে। পরবর্তী সংস্করণে কৃষি শিক্ষাকে কিভাবে আরও কিছুটা সংযোজন করা যায় সেটা ভাবা যেতে পারে।

জ) এটা ইতিবাচক মানসিক ও শারীরিক শিক্ষার গুরুত্ব বিবেচনায় পাঠ্যপুস্তকে ‘স্বাস্থ্য সুরক্ষা’ বিষয় জাতীয় শিক্ষাক্রমে স্থান পেয়েছে। এক্ষেত্রে যে সকল স্কুলগুলোতে শরীরচর্চার পূর্ণাঙ্গ সুযোগ-সুবিধা নাই তালিকা করে পর্যাক্রমে এটা নিশ্চিৎ করতে হবে।

৩.

‘জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা-২০২১’ পরিবর্তনশীল প্রেক্ষাপটে অভিযোজনের জন্য জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গির সমন্বয়ে অর্জিত সক্ষমতাকে যোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। নিঃসন্দেহে এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক ও সাহসী সিদ্ধান্ত। আমরা চাই দেশে এমন এক শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে উঠুক, যাতে আমাদের শিক্ষার্থীরা একুশ শতকের উপযোগী আধুনিক, দক্ষ, শিক্ষিত ও বিকশিত মানুষ হিসাবে গড়ে ওঠে। জোর করে কাউকে পদার্থবিদ, অর্থনীতিবিদ বা প্রকৌশলী বানানো যাবে না, কিন্তু যে চায় তাকেও একটা সুযোগ দেওয়ার অপশন থাকা উচিত।

তবে এ কথা ঠিক, যে কোনো নতুনত্বই এক ধরনের চ্যালেঞ্জ। বিশ্বের অন্যান্য দেশে নির্দিষ্ট সময় পরপর বাস্তবতা ও যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষাক্রম মূল্যায়ন ও যুগোপযোগী করা হয়ে থাকে। আমাদের দেশে যেহেতু নতুন শিক্ষাক্রমটি শুরু হয়েছে, তাই বাস্তবতার আলোকে যৌক্তিক বিষয়গুলো বিবেচনায় নিলে তা সফল হবে বলে প্রত্যাশা করছি। পরিশেষে বলব, নতুন শিক্ষাক্রম এমনভাবে বাস্তবায়িত হোক, যেটি হবে একাধারে আন্তর্জাতিকমানের এবং আমাদের স্থানীয় সমস্যার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। অর্থাৎ আমাদের শিক্ষার্থীরা যেন প্রতিনিয়ত উদ্ভাবিত নতুন নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে সমন্বয় করে নিজেরা নেতৃত্বের জায়গায় টিকে থাকতে পারে। প্রত্যাশা থাকবে, নতুন শিক্ষাক্রম এমন বিশ্বনাগরিক তৈরি করবে, যা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে ভূমিকা রাখবে এবং একইসঙ্গে একুশ শতক তথা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকবে।

[লেখক : চেয়ারম্যান, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়]

back to top