জাঁ- নেসার ওসমান
“কীরে ভাই দুই মিনিট বইল্লা বসায়া রাইক্কা এতক্ষণ পরে আইলেন, ব্যাপার কী? নেতাগো মতুন আপনেরও কোনো মুখের কথার দাম নাই নাকি??”
“আরে বলিসনে ভাই বলিসনে! ঘুটা ঘুটা, পান করতে করতে, প্রকৃতিকে উত্তর দিতে দিতে...দাঁড়া দাঁড়া আইতাছি ভাই আইতাছি,...”
“আবার কতক্ষণ?”
“দুই মিনিট ভাই দুই মিনিট...”
বলেই রম্য লেখক উঠে দৌড়। কটা টাকা পাব বলে বসে আছি, না হলে কখন চলে যেতাম। শালা বাঙালিদের মুখের কথা আর ডাইরিয়ার ইয়ে প্রায় একই রকম, কোনো ডেপথ নাই; শালা পাতলা। যাকে ইচ্ছা যখন ইচ্ছা কথা দেয়, কথা রাখার কোনো বালাই নেই। তবে শালা কথা দিস ক্যেন??
কারণ তোর কথার ওপর নির্ভর করে আমি আবার আরেকজনকে কথা দেই। এখন তুই কথা না রাখলে, আমিও কথা রাখতে পারি না। ফলে ওই লোক আমাকে দুই নাম্বারভাবে। এভাবে এখন সিরিজ কানকেশনের মতো কেউ আর কাউকে বিশ্বাসই করে না!! ভাই ভাইকে, বন্ধু-বন্ধুকে, বান্ধবী-বান্ধবীকে, মা-ছেলেকে, কেউ কাউকে বিশ্বাস করে না!! কী যুগ পড়লো রে বাবা। এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম বুঝি!!
“ভাইরে, কোঁকাতে কোঁকাতে তথাকথিত ভাই দ্রুত এসে বললেন, ওরস্যালাইনে খাইতে খাইতে মইরা গেলাম। ডাইরিয়া ভাই ডাইরিয়া। সকাল থ্যেইক্কা ৭ বার।”
“মানে কী? কালকে কী খাইছিলেন??”
“বিয়া। বড় লোকের মাইয়ার বিয়া। হেই বিয়া খায়া অহন আমি আর নাইরে...”
“ধনীর মাইয়ার বিয়া! হ্যেয় তো ভালো খাওয়াইবো? তয় ফুডপয়জন!! ইটা না মানতে পারলাম না!!”
“আরে ব্যাটা তুই না মানলে কী হইব!!! আমার প্যেটে তো মাইন্না নিছে। ধনীর বিয়াতেও ফুডপয়জন হয়।”
“আচ্ছা স্যার এত কোঁত কোঁত না করে বিষয়টা বিস্তারিত বলুন না শুনি।”
“আরে হালায় কিশোরগঞ্জের দীপু নাম্বারটুর পাল্লায় পইড়া ধনীর মাইয়ার বিয়াতে গেলাম রবাহুত মেহমান, জনাব জাহান্দারুল ওসমান। ও মা!! যায়া তো টাসকি!! তিন মাস ধইরা প্যান্ডেল বানাইছে,...”
“ও বুজছি,প্যান্ডেল বানাইছে কবির বেডি নিনা, খরচ,পাঁচ লাখ টাকা।”
“আরে তোর নিনা-মিনার বেইল নাই। প্যান্ডেল বানাইছে, রাশিয়ার কোম্পানি আনাদোলোফেজ, খরচ মাত্র সাত কোটি টাকা।”
“সাত কোটি টাকা!! শুধু প্যান্ডেলের খরচ!! ধুর মানতে পারলাম না, সাত কোটি টাকা। এই প্যান্ডেলের কাঠ তখতা, কাপড় কিইন্না সাত কোটি টাকা হয় নাকি??”
“হয় হয়, পুরা প্যান্ডেলের কাপড়, ঝাড়বাতি, মিস্ত্রি, হাতুড়ি-পেরেক, প্যান্ডেল বানাইন্নার ডিজাইনার, তিরিশজন উৎভিন্না যৌবনা মহিলাকর্মীসহ মোট ৭২ জন লোকের প্লেনের টিকেট, এক মাসের থাকা-খাওয়া, হাত খরচ, হোটেল বিল, ওদের পারিশ্রমিক ছাড়াই খরচ সাত কোটি টাকারে; সাত কোটি টাকা।”
“বুঝলাম, সেট ডিজাইনার, মিস্ত্রি, ইলেক্ট্রিক ইঞ্জিনিয়ার সব লাগব, তয় মহিলা লাগব ক্যান?”
“ওই ব্যেক্কল বোজে না; মহিলা লাগব ক্যান? এই মহিলারা ব্রাইড মানে বৌরে, সাজাইব, বুঝছস??”
“বৌ সাজাইতে তিরিশজন কম্যুনিস্ট যৌবনা!!! মা-রে মা। কউ কী??”
“বাস্তব সত্য। এই বাংলাদেশের পোলাপান রাশিয়া থ্যেইক্কা কামেরবেডি আইন্না কাম করাইতেছে।
ভাবতে পারছস!!”
“আচ্ছা বৌরে সাজাইব রাশিয়ান কামেরবেডি, জামাইরে সাজাইব কে??”
“ভাই সে কথা আর বলবেন না। জামাই পরেছে ১৮৮৮ শতাব্দীর স্টাইলে টাক্সেডো।”
“বলছেন কী, টাক্সেডো!! আরে ভাই পৃথিবীর সবচেয়ে দামি টাক্সেডোটার দাম বাংলাদেশের টাকায় মাত্র ৭,১৪,০০,০০০/-(সাত কোটি চৌদ্দ লক্ষ) টাকা। সেই টাক্সেডো পরেছেন জামাই বাবু!!”
“আরে না, একটা সন্ধ্যাকালীন স্যুটের জন্য জামাইবাবু অতো খরচ করেননি উনি গুলশানের দুই-নাম্বার থেকে একটা দুই-নাম্বার টাক্সেডো বানিয়েছেন, এই দুই লাখ টাকা দিয়ে। দুই-নাম্বার লোক, দুই নাম্বারি টাকা, তাই উনি গুলশানের দুই-নাম্বার থেকে দুই-নাম্বার টাক্সেডো বানিয়েছেন। হেঁঃ হেঁঃ।”
“তাহলে জামাইবাবুর পায়ে কী, ‘সলিড গোল্ড, এয়ার জর্ডানের’ বিশ লক্ষ টাকার জুতো??”
“না না বাবুর পায়ে ছিল মার্টিন ডিংম্যনের লক্ষ টাকার জুতো।”
“সবই তো বুঝলাম, কোটি কোটি টাকা খরচ করছে, কিন্তু তুমি ভাই ডাইরিয়া বাধাইলা ক্যেমনে??”
“ফিলে-ও-ফিশ।”
“ফিলে-ও-ফিশ! এর সঙ্গে তুমার ডাইরিয়ার সম্পর্ক কী?”
“আছে রে আছে, এই যে এত কোটি কোটি টাকা খরচ করছে, সেটা পাবলিককে দেখাতে হবে না?”
“নিশ্চয় পাঁচ গ্রামের লোককে দেখাতেই হবে।”
“জ্বি, গেস্ট হচ্ছে, পাঁচ হাজার। এখন এই পাঁচ হাজার গেস্টের জন্য পাঁচ হাজার ফিলে-ও-ফিশ সার্ভ করতে হলে কতো সময় লাগবে?”
“তখন থেকে ফিলে-ও-ফিশ, ফিলে-ও-ফিশ করছেন এই ফিলে-ও-ফিশটা কী?”
“ওই ব্যাডা বঙ্গাল তুমি বোজনা! ফিলে-ও-ফিশ মানে মাছ ভাজি।”
“ফিলে-ও-ফিশ, মানে মাছভাজি খায়া কারো প্যেট খারাপ হয় নাকি?”
“ফিলে-ও-ফিশ মানে বোঝস, এইডা যেনতেন মাছভাজি না, প্রথমে মাছ কাঁটাছাড়িয়ে ময়দা মেখে ডিমের কুসুমে ডুবিয়ে, বিস্কুটের গুঁড়ো মাখিয়ে ফ্রিজে রেখে, বিশ মিনিট পরে উত্তপ্ত ডুবো তেলে ভেজে গরম গরম সার্ভ করতে হয়। তবেই ফিলে-ও-ফিশের প্রকৃত স্বাদ তুই পাবি।”
“ভালো কথা। তো তুমারে ডাইরিয়া ধরল ক্যে। কুত্তার পেটে ঘি-ভাত হজম হয় না। হাঃ হাঃ হাঃ।”
“হাসিস না ব্যাডা। ধরলাম আমরা বাঙালিরা বিশ্বের ধনী কুত্তার চেয়েও খারাপ থাকি, কিন্তু ফিলে-
ও-ফিশ গরম গরম সার্ভ করতে হয়। কিন্তু স্যারেরা পাঁচ হাজার পিস ফিলে-ও-ফিশ ক্যেমনে গরম গরম সার্ভ করব, তাই সকাল থ্যেইক্কা ভাইজ্জা রাখছে, সার্ভ করছে সন্ধ্যায়। ফলে বিস্কুটের গুঁড়া শক্ত হয়া পাত্থর ছুরি দিয়া কাটে না, এত শক্ত কাটতে গেলে ফিলে-ও-ফিশ লাফদিয়া প্লেট থইক্কা ফালপাড়ে, এমডির ভাইগ্না তাই দেইখ্খা চিল্লাপাল্লা শুরু করছে, “হেঁঃ হেঁঃ হেঁঃ রাজা হরিশচন্দ্রের মতো মরা মাছে ফাল পাড়ে। হিঃ হিঃ হিঃ মরা মাছে ফাল পাড়ে।”
“দারুণ তো। ফিলে-ও-ফিশ পাড়ে।”
“চোপ ব্যাটা ফিলে-ও-ফিশ ফাল পাড়ে!! সকালের ভাজা ফিলে-ও-ফিশ রাত্রে সার্ভ করাতে, ফিলে-ও-ফিশ’এ টক্ হয়া গেছেগা, আর আমার শুরু হইছে, দাঁড়া দাঁড়া, আরেক রাউন্ড...”
“আচ্ছা ভাই সত্যি কইরা কনতো বিয়াডা কার??”
“কইতাছি কইতাছি, বিয়াডা হইলো আমাগো লেদুর মাইয়ার ঘরের নাতির।”
“মানে আমাগো বগামিয়ার পোলার??”
“হ হ বগামিয়ার পোলা, নবাব শরীফজাদার।”
“যেই লেদুমিয়া খড়ম পায়ে ঘুরতো, হ্যের নাতি পরে, লাখটাকার জুতা!! রাশিয়ার মাতারি দিয়া বৌ’সাজায়, আর লেদুর গরিব আত্মীয়রা না খায়া রাস্তায় পইড়া মইরা থাকে!!!”
দশই জানুয়ারি, ১৯৭২ সাল, বঙ্গবন্ধু ভাষণে বললেন, কবিগুরু বলেছিলেন, “সাত কোটি বাঙালিরে হে বঙ্গ জননী, রেখেছো বাঙালি করে, মানুষ করোনি। আজ কবি গুরুর কথা মিথ্যা, প্রমাণ হয়ে গেছে, আমার বাঙালি আজ মানুষ হয়েছে।” এই নাকি বাঙালি মানুষ হয়েছে!!!
হঠাৎ গুনথারের কথা মনে হলো, গুনথারের রয়েছে দুটি প্রাইভেট প্লেন, সুমিংপুলওয়ালা, ম্যানশন, রোলস রয়েস গাড়ি। আজ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়াতে আমরাও জার্মানের গুনথারের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছি!!!
[লেখক : চলচ্চিত্র নির্মাতা]
জাঁ- নেসার ওসমান
শনিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
“কীরে ভাই দুই মিনিট বইল্লা বসায়া রাইক্কা এতক্ষণ পরে আইলেন, ব্যাপার কী? নেতাগো মতুন আপনেরও কোনো মুখের কথার দাম নাই নাকি??”
“আরে বলিসনে ভাই বলিসনে! ঘুটা ঘুটা, পান করতে করতে, প্রকৃতিকে উত্তর দিতে দিতে...দাঁড়া দাঁড়া আইতাছি ভাই আইতাছি,...”
“আবার কতক্ষণ?”
“দুই মিনিট ভাই দুই মিনিট...”
বলেই রম্য লেখক উঠে দৌড়। কটা টাকা পাব বলে বসে আছি, না হলে কখন চলে যেতাম। শালা বাঙালিদের মুখের কথা আর ডাইরিয়ার ইয়ে প্রায় একই রকম, কোনো ডেপথ নাই; শালা পাতলা। যাকে ইচ্ছা যখন ইচ্ছা কথা দেয়, কথা রাখার কোনো বালাই নেই। তবে শালা কথা দিস ক্যেন??
কারণ তোর কথার ওপর নির্ভর করে আমি আবার আরেকজনকে কথা দেই। এখন তুই কথা না রাখলে, আমিও কথা রাখতে পারি না। ফলে ওই লোক আমাকে দুই নাম্বারভাবে। এভাবে এখন সিরিজ কানকেশনের মতো কেউ আর কাউকে বিশ্বাসই করে না!! ভাই ভাইকে, বন্ধু-বন্ধুকে, বান্ধবী-বান্ধবীকে, মা-ছেলেকে, কেউ কাউকে বিশ্বাস করে না!! কী যুগ পড়লো রে বাবা। এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম বুঝি!!
“ভাইরে, কোঁকাতে কোঁকাতে তথাকথিত ভাই দ্রুত এসে বললেন, ওরস্যালাইনে খাইতে খাইতে মইরা গেলাম। ডাইরিয়া ভাই ডাইরিয়া। সকাল থ্যেইক্কা ৭ বার।”
“মানে কী? কালকে কী খাইছিলেন??”
“বিয়া। বড় লোকের মাইয়ার বিয়া। হেই বিয়া খায়া অহন আমি আর নাইরে...”
“ধনীর মাইয়ার বিয়া! হ্যেয় তো ভালো খাওয়াইবো? তয় ফুডপয়জন!! ইটা না মানতে পারলাম না!!”
“আরে ব্যাটা তুই না মানলে কী হইব!!! আমার প্যেটে তো মাইন্না নিছে। ধনীর বিয়াতেও ফুডপয়জন হয়।”
“আচ্ছা স্যার এত কোঁত কোঁত না করে বিষয়টা বিস্তারিত বলুন না শুনি।”
“আরে হালায় কিশোরগঞ্জের দীপু নাম্বারটুর পাল্লায় পইড়া ধনীর মাইয়ার বিয়াতে গেলাম রবাহুত মেহমান, জনাব জাহান্দারুল ওসমান। ও মা!! যায়া তো টাসকি!! তিন মাস ধইরা প্যান্ডেল বানাইছে,...”
“ও বুজছি,প্যান্ডেল বানাইছে কবির বেডি নিনা, খরচ,পাঁচ লাখ টাকা।”
“আরে তোর নিনা-মিনার বেইল নাই। প্যান্ডেল বানাইছে, রাশিয়ার কোম্পানি আনাদোলোফেজ, খরচ মাত্র সাত কোটি টাকা।”
“সাত কোটি টাকা!! শুধু প্যান্ডেলের খরচ!! ধুর মানতে পারলাম না, সাত কোটি টাকা। এই প্যান্ডেলের কাঠ তখতা, কাপড় কিইন্না সাত কোটি টাকা হয় নাকি??”
“হয় হয়, পুরা প্যান্ডেলের কাপড়, ঝাড়বাতি, মিস্ত্রি, হাতুড়ি-পেরেক, প্যান্ডেল বানাইন্নার ডিজাইনার, তিরিশজন উৎভিন্না যৌবনা মহিলাকর্মীসহ মোট ৭২ জন লোকের প্লেনের টিকেট, এক মাসের থাকা-খাওয়া, হাত খরচ, হোটেল বিল, ওদের পারিশ্রমিক ছাড়াই খরচ সাত কোটি টাকারে; সাত কোটি টাকা।”
“বুঝলাম, সেট ডিজাইনার, মিস্ত্রি, ইলেক্ট্রিক ইঞ্জিনিয়ার সব লাগব, তয় মহিলা লাগব ক্যান?”
“ওই ব্যেক্কল বোজে না; মহিলা লাগব ক্যান? এই মহিলারা ব্রাইড মানে বৌরে, সাজাইব, বুঝছস??”
“বৌ সাজাইতে তিরিশজন কম্যুনিস্ট যৌবনা!!! মা-রে মা। কউ কী??”
“বাস্তব সত্য। এই বাংলাদেশের পোলাপান রাশিয়া থ্যেইক্কা কামেরবেডি আইন্না কাম করাইতেছে।
ভাবতে পারছস!!”
“আচ্ছা বৌরে সাজাইব রাশিয়ান কামেরবেডি, জামাইরে সাজাইব কে??”
“ভাই সে কথা আর বলবেন না। জামাই পরেছে ১৮৮৮ শতাব্দীর স্টাইলে টাক্সেডো।”
“বলছেন কী, টাক্সেডো!! আরে ভাই পৃথিবীর সবচেয়ে দামি টাক্সেডোটার দাম বাংলাদেশের টাকায় মাত্র ৭,১৪,০০,০০০/-(সাত কোটি চৌদ্দ লক্ষ) টাকা। সেই টাক্সেডো পরেছেন জামাই বাবু!!”
“আরে না, একটা সন্ধ্যাকালীন স্যুটের জন্য জামাইবাবু অতো খরচ করেননি উনি গুলশানের দুই-নাম্বার থেকে একটা দুই-নাম্বার টাক্সেডো বানিয়েছেন, এই দুই লাখ টাকা দিয়ে। দুই-নাম্বার লোক, দুই নাম্বারি টাকা, তাই উনি গুলশানের দুই-নাম্বার থেকে দুই-নাম্বার টাক্সেডো বানিয়েছেন। হেঁঃ হেঁঃ।”
“তাহলে জামাইবাবুর পায়ে কী, ‘সলিড গোল্ড, এয়ার জর্ডানের’ বিশ লক্ষ টাকার জুতো??”
“না না বাবুর পায়ে ছিল মার্টিন ডিংম্যনের লক্ষ টাকার জুতো।”
“সবই তো বুঝলাম, কোটি কোটি টাকা খরচ করছে, কিন্তু তুমি ভাই ডাইরিয়া বাধাইলা ক্যেমনে??”
“ফিলে-ও-ফিশ।”
“ফিলে-ও-ফিশ! এর সঙ্গে তুমার ডাইরিয়ার সম্পর্ক কী?”
“আছে রে আছে, এই যে এত কোটি কোটি টাকা খরচ করছে, সেটা পাবলিককে দেখাতে হবে না?”
“নিশ্চয় পাঁচ গ্রামের লোককে দেখাতেই হবে।”
“জ্বি, গেস্ট হচ্ছে, পাঁচ হাজার। এখন এই পাঁচ হাজার গেস্টের জন্য পাঁচ হাজার ফিলে-ও-ফিশ সার্ভ করতে হলে কতো সময় লাগবে?”
“তখন থেকে ফিলে-ও-ফিশ, ফিলে-ও-ফিশ করছেন এই ফিলে-ও-ফিশটা কী?”
“ওই ব্যাডা বঙ্গাল তুমি বোজনা! ফিলে-ও-ফিশ মানে মাছ ভাজি।”
“ফিলে-ও-ফিশ, মানে মাছভাজি খায়া কারো প্যেট খারাপ হয় নাকি?”
“ফিলে-ও-ফিশ মানে বোঝস, এইডা যেনতেন মাছভাজি না, প্রথমে মাছ কাঁটাছাড়িয়ে ময়দা মেখে ডিমের কুসুমে ডুবিয়ে, বিস্কুটের গুঁড়ো মাখিয়ে ফ্রিজে রেখে, বিশ মিনিট পরে উত্তপ্ত ডুবো তেলে ভেজে গরম গরম সার্ভ করতে হয়। তবেই ফিলে-ও-ফিশের প্রকৃত স্বাদ তুই পাবি।”
“ভালো কথা। তো তুমারে ডাইরিয়া ধরল ক্যে। কুত্তার পেটে ঘি-ভাত হজম হয় না। হাঃ হাঃ হাঃ।”
“হাসিস না ব্যাডা। ধরলাম আমরা বাঙালিরা বিশ্বের ধনী কুত্তার চেয়েও খারাপ থাকি, কিন্তু ফিলে-
ও-ফিশ গরম গরম সার্ভ করতে হয়। কিন্তু স্যারেরা পাঁচ হাজার পিস ফিলে-ও-ফিশ ক্যেমনে গরম গরম সার্ভ করব, তাই সকাল থ্যেইক্কা ভাইজ্জা রাখছে, সার্ভ করছে সন্ধ্যায়। ফলে বিস্কুটের গুঁড়া শক্ত হয়া পাত্থর ছুরি দিয়া কাটে না, এত শক্ত কাটতে গেলে ফিলে-ও-ফিশ লাফদিয়া প্লেট থইক্কা ফালপাড়ে, এমডির ভাইগ্না তাই দেইখ্খা চিল্লাপাল্লা শুরু করছে, “হেঁঃ হেঁঃ হেঁঃ রাজা হরিশচন্দ্রের মতো মরা মাছে ফাল পাড়ে। হিঃ হিঃ হিঃ মরা মাছে ফাল পাড়ে।”
“দারুণ তো। ফিলে-ও-ফিশ পাড়ে।”
“চোপ ব্যাটা ফিলে-ও-ফিশ ফাল পাড়ে!! সকালের ভাজা ফিলে-ও-ফিশ রাত্রে সার্ভ করাতে, ফিলে-ও-ফিশ’এ টক্ হয়া গেছেগা, আর আমার শুরু হইছে, দাঁড়া দাঁড়া, আরেক রাউন্ড...”
“আচ্ছা ভাই সত্যি কইরা কনতো বিয়াডা কার??”
“কইতাছি কইতাছি, বিয়াডা হইলো আমাগো লেদুর মাইয়ার ঘরের নাতির।”
“মানে আমাগো বগামিয়ার পোলার??”
“হ হ বগামিয়ার পোলা, নবাব শরীফজাদার।”
“যেই লেদুমিয়া খড়ম পায়ে ঘুরতো, হ্যের নাতি পরে, লাখটাকার জুতা!! রাশিয়ার মাতারি দিয়া বৌ’সাজায়, আর লেদুর গরিব আত্মীয়রা না খায়া রাস্তায় পইড়া মইরা থাকে!!!”
দশই জানুয়ারি, ১৯৭২ সাল, বঙ্গবন্ধু ভাষণে বললেন, কবিগুরু বলেছিলেন, “সাত কোটি বাঙালিরে হে বঙ্গ জননী, রেখেছো বাঙালি করে, মানুষ করোনি। আজ কবি গুরুর কথা মিথ্যা, প্রমাণ হয়ে গেছে, আমার বাঙালি আজ মানুষ হয়েছে।” এই নাকি বাঙালি মানুষ হয়েছে!!!
হঠাৎ গুনথারের কথা মনে হলো, গুনথারের রয়েছে দুটি প্রাইভেট প্লেন, সুমিংপুলওয়ালা, ম্যানশন, রোলস রয়েস গাড়ি। আজ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়াতে আমরাও জার্মানের গুনথারের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছি!!!
[লেখক : চলচ্চিত্র নির্মাতা]