শহীদুর রহমান
চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিকাশ আমাদের প্রচলিত কর্মসংস্থান এবং জীবনযাপন প্রণালীতে পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। প্রচলিত কর্মসংস্থান কমে যাচ্ছে, নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে তিন ভাগের দুই ভাগ মানুষ চাকরি হারাবে, ৬৫% শিক্ষার্থীকে বেকার হয়ে বসে থাকতে হবে। কোভিড-১৯ এর পরবর্তী এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এই জাতীয় শিক্ষাক্রম সময় ও যুগোপযোগী। ইতোমধ্যে ২০২২ সালে ৬২টি স্কুলে পাইলোটিং প্রোগ্রাম শুরু এবং শেষ হয়ে গেছে। ২০২৩ সালে দেশব্যাপী শিক্ষাক্রমের আলোকে ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণীতে পাঠদান প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আগামীতে স্মার্ট দেশ গড়ার জন্য প্রয়োজন জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবোধ ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন দূরদর্শী, সংবেদনশীল অভিযোজনে সক্ষম মানবিক এবং যোগ্য দেশপ্রেমিক বিশ্বনাগরিক।
বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশে পদার্পণ করেছে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পদার্পণে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এই শিক্ষাক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা শিখনক্রমের ফাঁকে হাতে-কলমে বাস্তব অভিজ্ঞতানির্ভর জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে দক্ষতা, মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গির সমন্বিত প্রয়োগ করতে সক্ষম হয়ে উঠবে। স্লোগান হবেÑ ‘শিখন হবে অভিজ্ঞতায় মূল্যায়ন হবে যোগ্যতায়।’
যোগ্যতা :
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে পরিবর্তনশীল প্রেক্ষাপটে অভিযোজনের জন্য জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গির সমন্বয়ে অর্জিত সক্ষমতা।
শ্রেণীতে প্রয়োগ, বাস্তবায়ন :
বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা হলো বাস্তবভিত্তিক জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক সাক্ষরতা অর্জন করা। এর ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনুসন্ধানী মনোভাব, প্রক্রিয়াকরণ, দক্ষতা, গঠন ও আচরণের পরিবর্তন এবং বিজ্ঞানমনষ্কভাবে গড়ে উঠবে। সব প্রকার কুসংস্কারকে পেছনে ফেলে, বাস্তব ও পরীক্ষামূলক প্রমাণভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে এগিয়ে যাবে। এজন্য একক কাজের পাশাপাশি দলীয় কাজের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। প্রতিনিয়ত শ্রেণীতে ধারাবাহিক মূল্যায়নের মাধ্যমে বছরব্যাপী এই কার্যক্রম চলমান থাকবে। শুধু কাগজে-কলমে জ্ঞানভিত্তিক পরীক্ষানির্ভর না হয়ে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে তার নিজস্ব চিন্তন দক্ষতার সৃজনশীল প্রতিভা বিকশিত করার সুযোগ পাবে।
শিখন-শেখানো কৌশল :
প্রেক্ষাপটভিত্তিক এবং অভিজ্ঞতাভিত্তিক।
হাতে কলমে শিখন, প্রকল্প এবং সমস্যাভিত্তিক শিখন, সহযোগিতামূলক শিখন, অনুসন্ধানভিত্তিক শিখন, স্ব-প্রণোদিত শিখনের সংমিশ্রণ।
অনলাইন ও মিশ্র শিখন।
শিক্ষক সহায়তাকারী এবং শিক্ষার্থী সক্রিয় অংশগ্রহণকারী।
শিখন প্রক্রিয়ায় বিষয়সংশ্লিষ্ট কোনো বাস্তব জীবনধর্মী সমস্যা নির্ধারণ করে তা সমাধানের উপায় নির্ধারণ এবং তা প্রয়োগের অভিজ্ঞতা লাভের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর শিখন নিশ্চিতকরণ।
শিখন পরিবেশ হবে সহায়তামূলক, একীভূত, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে আগ্রহ ও উদ্দীপনা সৃষ্টিকারী।
শিখন পরিবেশ শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক, গণতান্ত্রিক ও সহযোগিতামূলক।
শিক্ষার্থীদের করণীয় :
নিয়মিত বিদ্যালয়ে যাওয়া এবং শ্রেণী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা।
সঠিক সময়ে পড়াশোনা করা, খাওয়া, ঘুমানো এবং মানসিক বিকাশের জন্য খেলাধুলায় অংশ নেয়া।
এনসিটিবি কর্তৃক প্রণীত পাঠ্যপুস্তক ও সম্পূরক পঠনসামগ্রী পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা।
নতুনকে গ্রহণ করে উপযুক্ত মানসিকতা বজায় রাখার চেষ্টা করা।
সরকার প্রদত্ত শিখন সামগ্রী যথাসময়ে সংগ্রহ করা।
শ্রেণীকক্ষে এবং শ্রেণীকক্ষের বাইরে অ্যাক্টিভিটি বেইজড লার্নিং কার্যক্রমে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করা।
বিদ্যালয়ে শিক্ষাসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে শ্রেণী শিক্ষকের সঙ্গে আলাপ করা।
অবসর সময়ে বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ সৃজনশীল বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা।
শিখনসংশ্লিষ্ট যে কোন বিষয় নিয়ে অভিভাবকদের (মা-বাবা) সঙ্গে কথা বলে পরামর্শ করা।
নিজের বুদ্ধিমত্তা দিয়ে শিখনের সর্বক্ষেত্রে অংশগ্রহণ করা।
দলগতকাজে সহপাঠীদের মূল্যায়নের নিরপেক্ষতা, সততা এবং নৈতিকতা বজায় রাখা।
স্কুলে শিক্ষার্থীদের জন্য গঠিত ক্লাবসমূহের মধ্যে অন্তত দুটি ক্লাবে নিজেকে সম্পৃক্ত করা।
অভিভাবকদের করণীয় :
শিক্ষার্থীদের নিজ এবং বাড়ির ছোট ছোট কাজগুলো করানোর বিষয়ে উৎসাহ প্রদান করা।
শিক্ষার্থীদের সময় দেয়া, গতিবিধি লক্ষ্য করা।
শিক্ষার্থীদের ভালো কাজে উৎসাহ দেয়া এবং ভুল, অপ্রয়োজনীয় কাজকে নিরুৎসাহিত করা।
কারিকুলাম বিস্তরণে অভিভাবকদের যে দায়িত্ব তা সঠিকভাবে পালন করা।
শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করা।
শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট-কোচিং-এ নিরুৎসাহিত করা।
শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের বিষয়ে নিরপেক্ষতা, সততা এবং নৈতিকতা বজায় রাখা।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃক আয়োজিত মতবিনিময় সভায় উপস্থিত থাকা।
[লেখক : সিনিয়র শিক্ষক (বিজ্ঞান) মাস্টার ট্রেইনার, (রসায়ন ও ডিসেমিনেশন অব নিউ কারিকুলাম), শাহজালাল এনজিএফএফ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সিলেট]
শহীদুর রহমান
বৃহস্পতিবার, ০৪ এপ্রিল ২০২৪
চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিকাশ আমাদের প্রচলিত কর্মসংস্থান এবং জীবনযাপন প্রণালীতে পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। প্রচলিত কর্মসংস্থান কমে যাচ্ছে, নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে তিন ভাগের দুই ভাগ মানুষ চাকরি হারাবে, ৬৫% শিক্ষার্থীকে বেকার হয়ে বসে থাকতে হবে। কোভিড-১৯ এর পরবর্তী এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এই জাতীয় শিক্ষাক্রম সময় ও যুগোপযোগী। ইতোমধ্যে ২০২২ সালে ৬২টি স্কুলে পাইলোটিং প্রোগ্রাম শুরু এবং শেষ হয়ে গেছে। ২০২৩ সালে দেশব্যাপী শিক্ষাক্রমের আলোকে ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণীতে পাঠদান প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আগামীতে স্মার্ট দেশ গড়ার জন্য প্রয়োজন জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবোধ ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন দূরদর্শী, সংবেদনশীল অভিযোজনে সক্ষম মানবিক এবং যোগ্য দেশপ্রেমিক বিশ্বনাগরিক।
বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশে পদার্পণ করেছে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পদার্পণে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এই শিক্ষাক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা শিখনক্রমের ফাঁকে হাতে-কলমে বাস্তব অভিজ্ঞতানির্ভর জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে দক্ষতা, মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গির সমন্বিত প্রয়োগ করতে সক্ষম হয়ে উঠবে। স্লোগান হবেÑ ‘শিখন হবে অভিজ্ঞতায় মূল্যায়ন হবে যোগ্যতায়।’
যোগ্যতা :
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে পরিবর্তনশীল প্রেক্ষাপটে অভিযোজনের জন্য জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গির সমন্বয়ে অর্জিত সক্ষমতা।
শ্রেণীতে প্রয়োগ, বাস্তবায়ন :
বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা হলো বাস্তবভিত্তিক জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক সাক্ষরতা অর্জন করা। এর ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনুসন্ধানী মনোভাব, প্রক্রিয়াকরণ, দক্ষতা, গঠন ও আচরণের পরিবর্তন এবং বিজ্ঞানমনষ্কভাবে গড়ে উঠবে। সব প্রকার কুসংস্কারকে পেছনে ফেলে, বাস্তব ও পরীক্ষামূলক প্রমাণভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে এগিয়ে যাবে। এজন্য একক কাজের পাশাপাশি দলীয় কাজের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। প্রতিনিয়ত শ্রেণীতে ধারাবাহিক মূল্যায়নের মাধ্যমে বছরব্যাপী এই কার্যক্রম চলমান থাকবে। শুধু কাগজে-কলমে জ্ঞানভিত্তিক পরীক্ষানির্ভর না হয়ে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে তার নিজস্ব চিন্তন দক্ষতার সৃজনশীল প্রতিভা বিকশিত করার সুযোগ পাবে।
শিখন-শেখানো কৌশল :
প্রেক্ষাপটভিত্তিক এবং অভিজ্ঞতাভিত্তিক।
হাতে কলমে শিখন, প্রকল্প এবং সমস্যাভিত্তিক শিখন, সহযোগিতামূলক শিখন, অনুসন্ধানভিত্তিক শিখন, স্ব-প্রণোদিত শিখনের সংমিশ্রণ।
অনলাইন ও মিশ্র শিখন।
শিক্ষক সহায়তাকারী এবং শিক্ষার্থী সক্রিয় অংশগ্রহণকারী।
শিখন প্রক্রিয়ায় বিষয়সংশ্লিষ্ট কোনো বাস্তব জীবনধর্মী সমস্যা নির্ধারণ করে তা সমাধানের উপায় নির্ধারণ এবং তা প্রয়োগের অভিজ্ঞতা লাভের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর শিখন নিশ্চিতকরণ।
শিখন পরিবেশ হবে সহায়তামূলক, একীভূত, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে আগ্রহ ও উদ্দীপনা সৃষ্টিকারী।
শিখন পরিবেশ শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক, গণতান্ত্রিক ও সহযোগিতামূলক।
শিক্ষার্থীদের করণীয় :
নিয়মিত বিদ্যালয়ে যাওয়া এবং শ্রেণী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা।
সঠিক সময়ে পড়াশোনা করা, খাওয়া, ঘুমানো এবং মানসিক বিকাশের জন্য খেলাধুলায় অংশ নেয়া।
এনসিটিবি কর্তৃক প্রণীত পাঠ্যপুস্তক ও সম্পূরক পঠনসামগ্রী পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা।
নতুনকে গ্রহণ করে উপযুক্ত মানসিকতা বজায় রাখার চেষ্টা করা।
সরকার প্রদত্ত শিখন সামগ্রী যথাসময়ে সংগ্রহ করা।
শ্রেণীকক্ষে এবং শ্রেণীকক্ষের বাইরে অ্যাক্টিভিটি বেইজড লার্নিং কার্যক্রমে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করা।
বিদ্যালয়ে শিক্ষাসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে শ্রেণী শিক্ষকের সঙ্গে আলাপ করা।
অবসর সময়ে বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ সৃজনশীল বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা।
শিখনসংশ্লিষ্ট যে কোন বিষয় নিয়ে অভিভাবকদের (মা-বাবা) সঙ্গে কথা বলে পরামর্শ করা।
নিজের বুদ্ধিমত্তা দিয়ে শিখনের সর্বক্ষেত্রে অংশগ্রহণ করা।
দলগতকাজে সহপাঠীদের মূল্যায়নের নিরপেক্ষতা, সততা এবং নৈতিকতা বজায় রাখা।
স্কুলে শিক্ষার্থীদের জন্য গঠিত ক্লাবসমূহের মধ্যে অন্তত দুটি ক্লাবে নিজেকে সম্পৃক্ত করা।
অভিভাবকদের করণীয় :
শিক্ষার্থীদের নিজ এবং বাড়ির ছোট ছোট কাজগুলো করানোর বিষয়ে উৎসাহ প্রদান করা।
শিক্ষার্থীদের সময় দেয়া, গতিবিধি লক্ষ্য করা।
শিক্ষার্থীদের ভালো কাজে উৎসাহ দেয়া এবং ভুল, অপ্রয়োজনীয় কাজকে নিরুৎসাহিত করা।
কারিকুলাম বিস্তরণে অভিভাবকদের যে দায়িত্ব তা সঠিকভাবে পালন করা।
শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করা।
শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট-কোচিং-এ নিরুৎসাহিত করা।
শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের বিষয়ে নিরপেক্ষতা, সততা এবং নৈতিকতা বজায় রাখা।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃক আয়োজিত মতবিনিময় সভায় উপস্থিত থাকা।
[লেখক : সিনিয়র শিক্ষক (বিজ্ঞান) মাস্টার ট্রেইনার, (রসায়ন ও ডিসেমিনেশন অব নিউ কারিকুলাম), শাহজালাল এনজিএফএফ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সিলেট]