alt

উপ-সম্পাদকীয়

কত দিন পরে এলে, একটু শোনো

রহমান মৃধা

: বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

এসো হে বৈশাখ এসো এসো। ইংরেজি বছরের মতো নতুন করে পহেলা বৈশাখ প্রত্যেক বছরই আসে! এসেছে এবারও ঘুরে ফিরে কিছুটা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে, ফিরে এসেছে কোটি কোটি বাঙালির হৃদয়ে নতুন করে সেই দিনপঞ্জিকাটিতে। পহেলা বৈশাখের প্রভাতে উদীয়মান সূর্যকে স্বাগত জানানোর মধ্য দিয়ে শুরু হয় নববর্ষের উৎসব।

পুরাতনের বিদায়, নতুনের আগমনে আশা-ভরসার স্বপ্ন ঘুরঘুর করছে চারপাশে। মনে হচ্ছে পরিবর্তন হবে, কিন্তু কিসের? ভাগ্যের! খুশিতে চোখে জল আসছে।

ভাবি, এ কিসের জল? নতুন কিছু পাওয়ার? নাকি হারাবার! নতুন বছর মানেই সবার কাছে নতুন দিনের প্রেরণা, নতুনভাবে জেগে ওঠার কল্পনা। অচেনা অজানার বিরুদ্ধে নতুন করে লড়াই করার স্বপ্ন দেখা। তাই পুরনো দিনের গ্লানি ভুলে নতুনভাবে সামনে এগিয়ে যাওয়ার তাগিদেই এ দিনটিকে আপন করে নিতে এত আয়োজন।

বাংলা নববর্ষ বা পহেলা বৈশাখ উদযাপন বাঙালির প্রাচীনতম ঐতিহ্য। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাংলাদেশে এই নববর্ষ উদযাপন পরিণত হয়েছে সার্বজনীন উৎসবে। আবহমানকাল ধরে বাংলার ঘরে ঘরে পালিত হচ্ছে বর্ষবরণের উৎসব। হিন্দু-মুসলিম, বৌদ্ধ-খ্রিস্টান তথা বাঙালি জাতির একান্ত এ উৎসবে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে আসছে সবাই।

বাংলার কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমাজে নতুন ফসলকে কেন্দ্র করে যে উৎসবের সূচনা, কালক্রমে সেটাই পরিণত হয়েছে নববর্ষ বরণ উৎসবে। শতাব্দীর পর শতাব্দী পার হয়েছে, বহুবার বদল হয়েছে শাসকের, কিন্তু বৈশাখ চিরন্তন উৎসবের রূপে জড়িয়ে রেখেছে বাংলার জনপদকে।

শহরে পহেলা বৈশাখ যে ব্যাপক উৎসবের উপলক্ষ নিয়ে আসে গ্রামীণ জীবনে তার আমেজ ভিন্ন। নগর জীবনে এ দিন যেমন পান্তা-ইলিশ খাওয়ার ধুম পড়ে যায়, তেমনি যুক্ত হয় নতুন কাপড় পরার আয়োজনও। অতীতে গ্রাম-বাংলায় সকালবেলা দই-চিড়া দিয়ে অতিথি আপ্যায়ন করার রেওয়াজ ছিল, এখন মনে হয় না সেটা আছে!

ব্যবসায়ীরা দোকানে দোকানে হালখাতার আনুষ্ঠানিকতায় মিষ্টি দিয়ে তাদের ক্রেতাদের স্বাগত জানাতো। কালের বিবর্তনে নববর্ষের সঙ্গে সম্পর্কিত অনেক পুরোনো উৎসবের বিলুপ্তি ঘটেছে, আবার সংযোগ ঘটেছে অনেক নতুন উৎসবের।

আমার ছোটবেলার দিনগুলোতে ঘোড় দৌড়ের প্রতিযোগিতা ছিল এক অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ বিনোদন। পহেলা বৈশাখের প্রভাতে উদীয়মান সূর্যকে স্বাগত জানানোর মধ্য দিয়ে শুরু হতো নববর্ষের উৎসব। নববর্ষকে স্বাগত জানিয়ে শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করতেন।

এদিন সাধারণত সব শ্রেণীর এবং সব বয়সের মানুষ ঐতিহ্যবাহী বাঙালি পোশাক পরিধান করে।

নববর্ষকে স্বাগত জানাতে তরুণীরা লালপাড়ে সাদা শাড়ি, হাতে চুড়ি, খোঁপায় ফুল, গলায় ফুলের মালা, কপালে টিপ পরে, আর ছেলেরা পরে পাজামা ও পাঞ্জাবি। কেউ কেউ ধুতি-পাঞ্জাবিও পরে।

ভাবনাতে ঢুকেছে সেই ফেলে আসা ছোটবেলার দিনগুলোর কথা, সেই হালখাতার কথা। একই সঙ্গে বড় ইচ্ছে করছে ভাবতে বাংলাদেশেকে যদি স্পেন বা সুইডেনের মতো করে গড়তে পারতাম। যেখানে রয়েছে মানুষের প্রতি মানুষের বিশ্বাস যা সহজে ভঙ্গ হয় না। যেখানে রয়েছে সাগরের ঢেউ যা এদের মনকে উদার করেছে। যেখানে রয়েছে সুশিক্ষা, সুস্বাস্থ্য, অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের নিরাপত্তা। যেখানে রয়েছে গণতন্ত্রের পরিকাঠামো মজবুত যা সহজে নড়চড় হয় না।

এখানেও নতুন বছর প্রতি বছরের মতো নতুন বছর আসে এবং তা মধুময় স্মৃতি হয়ে ইতিহাসের পাতায় সাক্ষী হয়ে থাকে। আমার ভাবনায় ঠিক এমন একটি পহেলা বৈশাখ দেখার ইচ্ছে জেগেছে।

বাংলাদেশে কবে আসবে এমন একটি পহেলা বৈশাখ? কবে সম্ভব হবে তা বাস্তবে রূপ দেবার? কবে গাইবে গান সেই রমনা পার্কের বটতলায় সবাই মিলে, যেখানে থাকবে না দিনের আলোয় এক অন্ধকার ভরা পহেলা বৈশাখ।

নতুন বছর মানেই সবার কাছে নতুনত্বের প্রেরণা, নতুনভাবে জেগে ওঠার কল্পনা। অচেনা অজানার বিরুদ্ধে নতুন করে লড়াই করার স্বপ্ন দেখা। তাই পুরনো দিনের গ্লানি ভুলে নতুনভাবে সামনে এগিয়ে যাওয়ার তাগিদেই এ দিনটিকে আপন করে নিতে এত আয়োজন।

বাংলা আমাদের মাতৃভাষা এবং আমরা বাঙালি জাতি। আমাদের একটি নিজস্ব বৈশিষ্ট্য এবং সংস্কৃতি রয়েছে সেটাকে হঠাৎ করে নিষিদ্ধ করতে চেষ্টা করা, গ্রহণযোগ্য বা পালনযোগ্য না ভাবা, বৈশ্বিক চাপ বা ব্যক্তিগত বিশ্বাসের কারণেÑ সেটা মনে হয় না বিজ্ঞতার চিন্তা! আমরা যেন ভুলবশত আত্মপ্রতারক না হয়ে পড়ি সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সমাজে ঘৃণা ও বিদ্বেষের বীজ বপন করে শুধুমাত্র নিজের গোপন অসৎ উদ্দেশ্য পূরণ করার জন্য যদি কিছু করতে চেষ্টা করা হয় সেটা কখনও সুন্দর হতে পারে না।

পহেলা বৈশাখ (১৪ এপ্রিল) সারা বিশ্বের বাঙালিদের জন্য একটি বিশেষ দিন। এই দিনটি নানা ধরনের অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সারা বিশ্বব্যাপী সব জাতিগোষ্ঠী গর্বের সঙ্গে প্রতি বছরই পালন করে। এখানে ধর্মে বিশ্বাসী বা অবিশ্বাসী বলে কথা নেই, এখানে জাতিগত পরিচয়কে শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ এবং সেটাকে পালন করাই মুখ্য উদ্দেশ্য। বাঙালির নৃতাত্ত্বিক ও আত্মিক পরিচয় বাংলা নববর্ষ আমরা যেন ভুলেও এমন কিছু না করি; যা ব্যক্তিগত ও সম্প্রদায়গত বিশ্বাসকে জাতিগত পরিচয়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক করে। তাহলে আমরা বিশ্বে একটি বড় দুর্ভাগা জাতিতে পরিণত হব। দূর হোক কুসংস্কার জয় হোক মানবতার, গড়ে উঠুক বাঙালির বাঙালিয়ান চর্চা মনেপ্রাণে এবং ধ্যানে। এবারের পহেলা বৈশাখ হতে পারে কি ভবিষ্যৎ নির্মাণের চাবিকাঠি; যা সবার জন্য বয়ে আনবে ভালোবাসা। বাংলা নববর্ষের ঐতিহ্যবাহী শুভেচ্ছা বাক্য হলো ‘শুভ নববর্ষ’। সবাইকে নববর্ষের প্রাণঢালা শুভেচ্ছা এবং ভালোবাসা।

[লেখক : সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন]

জামাই মেলা : উৎসব, ঐতিহ্য ও কৃষ্টির রঙিন চিত্রপট

হারিয়ে যাওয়া ক্লাস, কঠোর মূল্যায়ন আর প্রশ্নের জটিলতায় নুয়ে পড়া এক প্রজন্ম

বৈষম্য দূর করে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলুন

চিকিৎসা যেন বাণিজ্যের হাতিয়ারে পরিণত না হয়

পথশিশু ও বাংলাদেশে সামাজিক চুক্তির ব্যর্থতা

মেগা প্রকল্প : প্রশ্ন হওয়া উচিত স্বচ্ছতা নিয়ে

আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া জরুরি

স্মার্ট দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা : উপগ্রহ চিত্র ও ওয়েবসাইটের অপরিহার্যতা

ক্ষমতা ও জনপ্রশাসন : আমলাতন্ত্রের ছায়াতলে আমজনতা

জনসংখ্যা : সম্পদ না সংকট?

ব্রিকসে নতুন ভূ-রাজনৈতিক ব্যবস্থার উত্থান

রম্যগদ্য : ‘ল্যাংড়া-লুলা, আতুড়-পাতুড়’

আষাঢ়ী পূর্ণিমা : আত্মশুদ্ধির সাধনায় বুদ্ধের অনন্ত আলো

বদলে যাওয়া মাটিতে সাহসী বীজ : জলবায়ুর বিপরীতে বাংলাদেশের কৃষির অভিযোজনগাথা

ছবি

জুলাই অভ্যুত্থান-গাথা : ‘শিকলে নাহি দিব ধরা’

প্রাচীন যৌধেয় জাতি ও তাদের সাম্যবাদী শাসন

গণঅভ্যুত্থান-উত্তর ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের স্বপ্ন

টেকসই উন্নয়নের স্বপ্নপূরণে উপগ্রহ চিত্রই চাবিকাঠি

রাবার শিল্প : সংকট, করণীয় ও উত্তরণের দিশা

রম্যগদ্য : দুধ, দই, কলা...

ছবি

কোপার্নিকাস : আলো হয়ে জন্ম নেওয়া বৈপ্লবিক মতবাদের প্রবর্তক

জলবায়ু সংকটে মানবসভ্যতা

টেকসই অর্থনীতির জন্য চাই টেকসই ব্যাংকিং

ডিজিটাল দাসত্ব : মনোযোগ অর্থনীতি ও জ্ঞান পুঁজিবাদে তরুণ প্রজন্মের মননশীলতার অবক্ষয়

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার : আস্থা ভঙ্গ ও জবাবদিহিতার সংকট

আসামি এখন নির্বাচন কমিশন

কোথায় হারাল একান্নবর্তী পরিবার?

এই শান্তি কি মহাঝড়ের পূর্বলক্ষণ?

মেগাসিটি : দারিদ্র্য যখন ‘অবাঞ্ছিত বর্জ্য’

ফলের রাজ্য পার্বত্য চট্টগ্রাম

ছবি

তৃতীয় শক্তির জন্য জায়গা খালি : বামপন্থীরা কি ঘুরে দাঁড়াতে পারে না

জমি আপনার, দখল অন্যের?

সিধু-কানু : ধ্বংসস্তূপের নিচেও জেগে আছে সাহস

ছবি

বাংলার অনন্য লোকসংস্কৃতি ও গণতান্ত্রিক চেতনা

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সাম্পান

তিন দিক থেকে স্বাস্থ্যঝুঁকি : করোনা, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া

tab

উপ-সম্পাদকীয়

কত দিন পরে এলে, একটু শোনো

রহমান মৃধা

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

এসো হে বৈশাখ এসো এসো। ইংরেজি বছরের মতো নতুন করে পহেলা বৈশাখ প্রত্যেক বছরই আসে! এসেছে এবারও ঘুরে ফিরে কিছুটা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে, ফিরে এসেছে কোটি কোটি বাঙালির হৃদয়ে নতুন করে সেই দিনপঞ্জিকাটিতে। পহেলা বৈশাখের প্রভাতে উদীয়মান সূর্যকে স্বাগত জানানোর মধ্য দিয়ে শুরু হয় নববর্ষের উৎসব।

পুরাতনের বিদায়, নতুনের আগমনে আশা-ভরসার স্বপ্ন ঘুরঘুর করছে চারপাশে। মনে হচ্ছে পরিবর্তন হবে, কিন্তু কিসের? ভাগ্যের! খুশিতে চোখে জল আসছে।

ভাবি, এ কিসের জল? নতুন কিছু পাওয়ার? নাকি হারাবার! নতুন বছর মানেই সবার কাছে নতুন দিনের প্রেরণা, নতুনভাবে জেগে ওঠার কল্পনা। অচেনা অজানার বিরুদ্ধে নতুন করে লড়াই করার স্বপ্ন দেখা। তাই পুরনো দিনের গ্লানি ভুলে নতুনভাবে সামনে এগিয়ে যাওয়ার তাগিদেই এ দিনটিকে আপন করে নিতে এত আয়োজন।

বাংলা নববর্ষ বা পহেলা বৈশাখ উদযাপন বাঙালির প্রাচীনতম ঐতিহ্য। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাংলাদেশে এই নববর্ষ উদযাপন পরিণত হয়েছে সার্বজনীন উৎসবে। আবহমানকাল ধরে বাংলার ঘরে ঘরে পালিত হচ্ছে বর্ষবরণের উৎসব। হিন্দু-মুসলিম, বৌদ্ধ-খ্রিস্টান তথা বাঙালি জাতির একান্ত এ উৎসবে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে আসছে সবাই।

বাংলার কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমাজে নতুন ফসলকে কেন্দ্র করে যে উৎসবের সূচনা, কালক্রমে সেটাই পরিণত হয়েছে নববর্ষ বরণ উৎসবে। শতাব্দীর পর শতাব্দী পার হয়েছে, বহুবার বদল হয়েছে শাসকের, কিন্তু বৈশাখ চিরন্তন উৎসবের রূপে জড়িয়ে রেখেছে বাংলার জনপদকে।

শহরে পহেলা বৈশাখ যে ব্যাপক উৎসবের উপলক্ষ নিয়ে আসে গ্রামীণ জীবনে তার আমেজ ভিন্ন। নগর জীবনে এ দিন যেমন পান্তা-ইলিশ খাওয়ার ধুম পড়ে যায়, তেমনি যুক্ত হয় নতুন কাপড় পরার আয়োজনও। অতীতে গ্রাম-বাংলায় সকালবেলা দই-চিড়া দিয়ে অতিথি আপ্যায়ন করার রেওয়াজ ছিল, এখন মনে হয় না সেটা আছে!

ব্যবসায়ীরা দোকানে দোকানে হালখাতার আনুষ্ঠানিকতায় মিষ্টি দিয়ে তাদের ক্রেতাদের স্বাগত জানাতো। কালের বিবর্তনে নববর্ষের সঙ্গে সম্পর্কিত অনেক পুরোনো উৎসবের বিলুপ্তি ঘটেছে, আবার সংযোগ ঘটেছে অনেক নতুন উৎসবের।

আমার ছোটবেলার দিনগুলোতে ঘোড় দৌড়ের প্রতিযোগিতা ছিল এক অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ বিনোদন। পহেলা বৈশাখের প্রভাতে উদীয়মান সূর্যকে স্বাগত জানানোর মধ্য দিয়ে শুরু হতো নববর্ষের উৎসব। নববর্ষকে স্বাগত জানিয়ে শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করতেন।

এদিন সাধারণত সব শ্রেণীর এবং সব বয়সের মানুষ ঐতিহ্যবাহী বাঙালি পোশাক পরিধান করে।

নববর্ষকে স্বাগত জানাতে তরুণীরা লালপাড়ে সাদা শাড়ি, হাতে চুড়ি, খোঁপায় ফুল, গলায় ফুলের মালা, কপালে টিপ পরে, আর ছেলেরা পরে পাজামা ও পাঞ্জাবি। কেউ কেউ ধুতি-পাঞ্জাবিও পরে।

ভাবনাতে ঢুকেছে সেই ফেলে আসা ছোটবেলার দিনগুলোর কথা, সেই হালখাতার কথা। একই সঙ্গে বড় ইচ্ছে করছে ভাবতে বাংলাদেশেকে যদি স্পেন বা সুইডেনের মতো করে গড়তে পারতাম। যেখানে রয়েছে মানুষের প্রতি মানুষের বিশ্বাস যা সহজে ভঙ্গ হয় না। যেখানে রয়েছে সাগরের ঢেউ যা এদের মনকে উদার করেছে। যেখানে রয়েছে সুশিক্ষা, সুস্বাস্থ্য, অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের নিরাপত্তা। যেখানে রয়েছে গণতন্ত্রের পরিকাঠামো মজবুত যা সহজে নড়চড় হয় না।

এখানেও নতুন বছর প্রতি বছরের মতো নতুন বছর আসে এবং তা মধুময় স্মৃতি হয়ে ইতিহাসের পাতায় সাক্ষী হয়ে থাকে। আমার ভাবনায় ঠিক এমন একটি পহেলা বৈশাখ দেখার ইচ্ছে জেগেছে।

বাংলাদেশে কবে আসবে এমন একটি পহেলা বৈশাখ? কবে সম্ভব হবে তা বাস্তবে রূপ দেবার? কবে গাইবে গান সেই রমনা পার্কের বটতলায় সবাই মিলে, যেখানে থাকবে না দিনের আলোয় এক অন্ধকার ভরা পহেলা বৈশাখ।

নতুন বছর মানেই সবার কাছে নতুনত্বের প্রেরণা, নতুনভাবে জেগে ওঠার কল্পনা। অচেনা অজানার বিরুদ্ধে নতুন করে লড়াই করার স্বপ্ন দেখা। তাই পুরনো দিনের গ্লানি ভুলে নতুনভাবে সামনে এগিয়ে যাওয়ার তাগিদেই এ দিনটিকে আপন করে নিতে এত আয়োজন।

বাংলা আমাদের মাতৃভাষা এবং আমরা বাঙালি জাতি। আমাদের একটি নিজস্ব বৈশিষ্ট্য এবং সংস্কৃতি রয়েছে সেটাকে হঠাৎ করে নিষিদ্ধ করতে চেষ্টা করা, গ্রহণযোগ্য বা পালনযোগ্য না ভাবা, বৈশ্বিক চাপ বা ব্যক্তিগত বিশ্বাসের কারণেÑ সেটা মনে হয় না বিজ্ঞতার চিন্তা! আমরা যেন ভুলবশত আত্মপ্রতারক না হয়ে পড়ি সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সমাজে ঘৃণা ও বিদ্বেষের বীজ বপন করে শুধুমাত্র নিজের গোপন অসৎ উদ্দেশ্য পূরণ করার জন্য যদি কিছু করতে চেষ্টা করা হয় সেটা কখনও সুন্দর হতে পারে না।

পহেলা বৈশাখ (১৪ এপ্রিল) সারা বিশ্বের বাঙালিদের জন্য একটি বিশেষ দিন। এই দিনটি নানা ধরনের অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সারা বিশ্বব্যাপী সব জাতিগোষ্ঠী গর্বের সঙ্গে প্রতি বছরই পালন করে। এখানে ধর্মে বিশ্বাসী বা অবিশ্বাসী বলে কথা নেই, এখানে জাতিগত পরিচয়কে শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ এবং সেটাকে পালন করাই মুখ্য উদ্দেশ্য। বাঙালির নৃতাত্ত্বিক ও আত্মিক পরিচয় বাংলা নববর্ষ আমরা যেন ভুলেও এমন কিছু না করি; যা ব্যক্তিগত ও সম্প্রদায়গত বিশ্বাসকে জাতিগত পরিচয়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক করে। তাহলে আমরা বিশ্বে একটি বড় দুর্ভাগা জাতিতে পরিণত হব। দূর হোক কুসংস্কার জয় হোক মানবতার, গড়ে উঠুক বাঙালির বাঙালিয়ান চর্চা মনেপ্রাণে এবং ধ্যানে। এবারের পহেলা বৈশাখ হতে পারে কি ভবিষ্যৎ নির্মাণের চাবিকাঠি; যা সবার জন্য বয়ে আনবে ভালোবাসা। বাংলা নববর্ষের ঐতিহ্যবাহী শুভেচ্ছা বাক্য হলো ‘শুভ নববর্ষ’। সবাইকে নববর্ষের প্রাণঢালা শুভেচ্ছা এবং ভালোবাসা।

[লেখক : সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন]

back to top