alt

উপ-সম্পাদকীয়

এরপরও কি গাছ লাগাবেন না, বন রক্ষা করবেন না?

সাঈদ চৌধুরী

: মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

ছায়া আছে, স্বস্তি নেই। কেনা পানিতে খাওয়া চলে, ওদিকে ভূগর্ভে পানি নেই। গাছগুলোকে আটকে রাখা হয়েছে পার্ক নামক চিড়িয়াখানাগুলোতে। ক্যালকুলেশনবিহীন নগরে প্রতিদিন প্রকাশ হয় বায়ুদূষণের মাত্রা। হিট অফিসার হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচতে দিচ্ছেন বার্তা।

বাগান সব উঠে গেছে ছাদে। শখের বাগানে এখন শোভা পায় জাদুঘরের মতো ফসল। মাটিহীন রাস্তায় স্যান্ডেল পড়েও টেকা সম্ভব নয় তীব্র তাপে। দুই দিনের গরমে গলে যাচ্ছে সড়কের পিচ। রেল চলাচল আস্তে করতে বলা হয়েছে। কাক মাটির কলসি খুঁজে পানি না পেয়ে বুড়িগঙ্গার আলকাতরাসম তরল খেয়ে ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে মরে। কুকুরের জিহ্বায় বৃক্ষ নিধনের অভিশাপ হয়ে ঝুলে থাকে!

শহরের বাউন্ডারিতে এখন সেপটিক ট্যাংক ও শিল্পকারখানার উচ্চ তাপামাত্রার পানির ড্রেইন। প্রতিটি বাড়ির ঘর থেকে এসি আর ফ্রিজ নিঃসরণ করছে প্রচুর গরম বাতাস।

এখন সবাই গরম কমানোর জন্য, ঝুঁকি এড়ানোর জন্য বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন; কিন্তু কেউ গাছ লাগানোর জন্য এগিয়ে আসছে না। আনুষ্ঠানিক বৃক্ষরোপণ হয় অনেক। কর্মকর্তা বলে ওঠেন এই গাছ লাগাবো গর্ত কর। পিয়ন, কর্মচারীরা দৌড়াদৌড়ি শুরু করে। পিয়ন দৌড়ে এসে বলেনÑ ‘স্যার প্রতিবার যেখানে গাছ লাগান সেখানেই কী গর্তটি করবো!’

এভাবেই তামাশার বৃক্ষরোপণ চলে; কিন্তু টেকে না তেমন কোনো বৃক্ষই। মানদ-ের ২৫ শতাংশের জায়গায় বর্তমানে আট থেকে নয় শতাংশ বৃক্ষের কথা বলা হচ্ছে।

এই সামান্য বৃক্ষ তাও আবার থোকায় থোকায়। শহরজুড়ে কিন্তু বৃক্ষ নেই। সবচেয়ে উদ্বিগ্নের বিষয় ঢাকায় এখন এমন এলাকা অনেক যে এক দুই কিলোমিটারের মধ্যে বৃক্ষ নেই। বাতাস পুড়ে বহমান বাতাস দাবদাহে রূপান্তরিত হচ্ছে! আশ্চর্য হারে ছড়িয়ে পড়ছে গরম।

যেখানে আগে মানুষ ক্লান্ত হলেই গাছের নিচে বসে শ্রান্ত হতেন সেখানে এখন ভালো ও বড় বৃক্ষ দেখতে রমনা পার্ক অথবা বোটানিক্যাল গার্ডেনে যেতে হয়। বিল্ডিংগুলোর নিচের ছায়ায় দাঁড়ালে মনে হয় গরম সিসা এসে লেগে চামড়া পুরে ভেদ করে যাচ্ছে ভেতরেও!

যে সমস্ত জায়গা বেশি তাপের উৎপাদক সেই সমস্ত জায়গার কারণে অন্যান্য সব জায়গায় গরম অনুভূত হচ্ছে। নদীগুলো থেকে কেমিক্যাল ও আনট্রিটেড ওয়াটারের কন্টামিনেট বাতাসের বেশি তাপের ভ্যাপার উপরের দিকে উঠছে। এক ইটভাটার দিকে বায়ুদূষণের দিক নির্ণয় করে সব যেন বৈধ করে নিচ্ছে অপরাধীরা।

জেনারেটরের এক্সস্ট লাইন নির্দিষ্ট উচ্চতায় দেয়া নেই অনেক কো¤পানি বা ফ্ল্যাটগুলোর। এসিগুলোতে সিএফসি ফ্রি গ্যাস ব্যবহার বাড়ানো যায়নি, প্রতিনিয়ত বাড়ছে ইলেক্ট্রনিক যন্ত্র, কেমিক্যালের ব্যবহার, বাড়ছে গাড়ি থেকে নির্গত কার্বনের হার।

বায়ুতে ভারি বস্তুর পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায়, কেমিক্যাল কন্টামিনেটেড হওয়ায় বাতাসে গরম স্থায়ী হচ্ছে। আকাশের দিকে তাকালে পরিষ্কার আকাশ দেখা এখন ভাগ্যের ব্যপার। ধুসর ও ঘোলাটে আকাশ বলে দেয় আমাদের পরিবেশ দূষণের মাত্রা। আমরা তবুও তা না দেখার ভান করে থাকি।

দুটো গাছ চারজন সদস্যের পরিবারকে এক বছর অক্সিজেন দিতে পারে বলে হিসেব করা হয়। একটি পরিপক্ব গাছ ৪৮ পাউন্ড কার্বডাই অক্সাইড শোষণ করতে পারে। যদিও এ হিসাবগুলো পারিপার্শিক অবস্থা, গাছের ধরণ ও বয়সের ওপর নির্ভর করে কিন্তু এ হিসাবগুলোর পেছনের উপাদানগুলোই আমাদের বাঁচিয়ে রাখছে প্রতিনিয়ত।

এখন প্রশ্ন হলো গাছ কি লাগাবেন না? ৩০ শতাংশের টার্গেট নিয়ে গাছ লাগানো শুরু করার দাবি জানাচ্ছি। তিন কোটি গাছ লাগানোর লক্ষমাত্রা ঠিক করুন।

গাছ কাটা বন্ধের একটি নীতিমালাও খুব বেশি প্রয়োজন। পল্লী বিদ্যুৎকে সরাসরি গাছ কাটা বন্ধ করতে বলুন। বিদ্যুতের তার কভারিং করে ব্যবহার না করতে পারলে ছোট গাছ লাগিয়ে উঁচু করে বিদ্যুতের লাইন করার ব্যবস্থা করুন।

এখন ঢাকায় গাছ লাগানো শুরু করা প্রয়োজন। প্রতিটি বাড়ির সামনে অন্তত দুটো বড় গাছ রাখার জন্য আদেশ জারি করুন।

নদীগুলো নিয়ে তো অনেক কথা হলো। একটিও কি দূষণ মুক্ত হয়েছে ? হয়নি। কিন্তু এ বিষয়ে আরও জোরালো কাজ আশা করছি।

গাজীপুরের অক্সিজেন ফ্যাক্টরি ভাওয়াল ও মধুপুরের গড়। প্রতিদিন এখানে আগুন দেয় মানুষ! বনের সাথে সাথে আমাদেরও মন পোড়ে। আমরা কষ্টে লেপ্টে যাই আবার ঘুরে দাঁড়ানোরও চেষ্টা করি; কিন্তু বন পোড়া বন্ধ করতে পারি না! এমনভাবে এ বন পোড়া বন্ধ করতে হবে যাতে কেউ আর এখানে আগুনে দেয়ার সাহস না পায়। শাস্তির ব্যবস্থা করুন।

সহজ পথে দেশের তাপমাত্রা কমানো যাবে না। কারণ আমরা আমাদের রিসোর্স যা ছিলো সব নষ্ট করে ফেলার পথে! আবার আগের অবস্থায় ফিরতে হয়ত দেরি হবে কিন্তু আমাদের চেষ্টা শুরু করতে হবে এখন থেকেই।

ঢাকাকে বৃক্ষ আচ্ছাদিত শহুরে রূপদান করার জন্য প্রতিটি নাগরিককে অন্তত একটি গাছ বড় করে তোলার দায়িত্ব দিন। কর আদায় যেমন বাধ্যতামূলক তেমনি বৃক্ষরোপণ বাধ্যতামূলক করে তা বড় করায় উৎসাহিত করুন। যারা একটি বৃক্ষ বড় করে তুলতে পারবে তাদের কর কমানোর ইনটেনসিভ ঘোষণা দিন। এ ধরনের নাগরিককে গ্রিনজোন নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দিন।

সরকারের একার পক্ষে এত বড় শহরে গাছ লাগিয়ে সুফল পেতে অনেক দেরি হয়ে যাবে। তাই এখানে জনসাধারণকে কাজে লাগানোর ব্যবস্থা করুন। সমাজকল্যাণ অধিদপ্তর থেকে যে ক্লাবগুলো রেজিস্ট্রেশন করা তাদের অনেকেই কোনো কাজ না করেই সরকারি টাকা দিচ্ছে। এদের ভলেন্টিয়ার কাজে ব্যবহার করে বৃক্ষরোপণ বাড়ান। নিধনের ক্ষেত্রে সরাসরি শাস্তির ব্যবস্থা করুন।

শহর নিয়ে এখন না ভাবলে এ শহর শেষ হতে আর বেশি দেরি হবে না। কারণ বাতাস দূষিত হলে, পানি না পেলে সেই শহরে আপনি থেকে কি বলতে পারবেন, ‘যদিও পরে কহর, তাও ছাড়িওনা শহর!’

[লেখক : পরিবেশকর্মী, রসায়নবিদ]

জনসংখ্যা : সম্পদ না সংকট?

ব্রিকসে নতুন ভূ-রাজনৈতিক ব্যবস্থার উত্থান

রম্যগদ্য : ‘ল্যাংড়া-লুলা, আতুড়-পাতুড়’

আষাঢ়ী পূর্ণিমা : আত্মশুদ্ধির সাধনায় বুদ্ধের অনন্ত আলো

বদলে যাওয়া মাটিতে সাহসী বীজ : জলবায়ুর বিপরীতে বাংলাদেশের কৃষির অভিযোজনগাথা

ছবি

জুলাই অভ্যুত্থান-গাথা : ‘শিকলে নাহি দিব ধরা’

প্রাচীন যৌধেয় জাতি ও তাদের সাম্যবাদী শাসন

গণঅভ্যুত্থান-উত্তর ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের স্বপ্ন

টেকসই উন্নয়নের স্বপ্নপূরণে উপগ্রহ চিত্রই চাবিকাঠি

রাবার শিল্প : সংকট, করণীয় ও উত্তরণের দিশা

রম্যগদ্য : দুধ, দই, কলা...

ছবি

কোপার্নিকাস : আলো হয়ে জন্ম নেওয়া বৈপ্লবিক মতবাদের প্রবর্তক

জলবায়ু সংকটে মানবসভ্যতা

টেকসই অর্থনীতির জন্য চাই টেকসই ব্যাংকিং

ডিজিটাল দাসত্ব : মনোযোগ অর্থনীতি ও জ্ঞান পুঁজিবাদে তরুণ প্রজন্মের মননশীলতার অবক্ষয়

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার : আস্থা ভঙ্গ ও জবাবদিহিতার সংকট

আসামি এখন নির্বাচন কমিশন

কোথায় হারাল একান্নবর্তী পরিবার?

এই শান্তি কি মহাঝড়ের পূর্বলক্ষণ?

মেগাসিটি : দারিদ্র্য যখন ‘অবাঞ্ছিত বর্জ্য’

ফলের রাজ্য পার্বত্য চট্টগ্রাম

ছবি

তৃতীয় শক্তির জন্য জায়গা খালি : বামপন্থীরা কি ঘুরে দাঁড়াতে পারে না

জমি আপনার, দখল অন্যের?

সিধু-কানু : ধ্বংসস্তূপের নিচেও জেগে আছে সাহস

ছবি

বাংলার অনন্য লোকসংস্কৃতি ও গণতান্ত্রিক চেতনা

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সাম্পান

তিন দিক থেকে স্বাস্থ্যঝুঁকি : করোনা, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া

দেশের অর্থ পাচারের বাস্তবতা

খাদ্য নিরাপত্তার নতুন দিগন্ত

আবারও কি রোহিঙ্গাদের ত্যাগ করবে বিশ্ব?

প্লান্ট ক্লিনিক বদলে দিচ্ছে কৃষির ভবিষ্যৎ

ঢাকাকে বাসযোগ্য নগরী করতে করণীয়

রম্যগদ্য : ‘ডন ডনা ডন ডন...’

ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্ব : কে সন্ত্রাসী, কে শিকার?

সুস্থ ও শক্তিশালী জাতি গঠনে শারীরিক শিক্ষার গুরুত্ব

প্রতিরোধই উত্তম : মাদকমুক্ত প্রজন্ম গড়ার ডাক

tab

উপ-সম্পাদকীয়

এরপরও কি গাছ লাগাবেন না, বন রক্ষা করবেন না?

সাঈদ চৌধুরী

মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

ছায়া আছে, স্বস্তি নেই। কেনা পানিতে খাওয়া চলে, ওদিকে ভূগর্ভে পানি নেই। গাছগুলোকে আটকে রাখা হয়েছে পার্ক নামক চিড়িয়াখানাগুলোতে। ক্যালকুলেশনবিহীন নগরে প্রতিদিন প্রকাশ হয় বায়ুদূষণের মাত্রা। হিট অফিসার হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচতে দিচ্ছেন বার্তা।

বাগান সব উঠে গেছে ছাদে। শখের বাগানে এখন শোভা পায় জাদুঘরের মতো ফসল। মাটিহীন রাস্তায় স্যান্ডেল পড়েও টেকা সম্ভব নয় তীব্র তাপে। দুই দিনের গরমে গলে যাচ্ছে সড়কের পিচ। রেল চলাচল আস্তে করতে বলা হয়েছে। কাক মাটির কলসি খুঁজে পানি না পেয়ে বুড়িগঙ্গার আলকাতরাসম তরল খেয়ে ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে মরে। কুকুরের জিহ্বায় বৃক্ষ নিধনের অভিশাপ হয়ে ঝুলে থাকে!

শহরের বাউন্ডারিতে এখন সেপটিক ট্যাংক ও শিল্পকারখানার উচ্চ তাপামাত্রার পানির ড্রেইন। প্রতিটি বাড়ির ঘর থেকে এসি আর ফ্রিজ নিঃসরণ করছে প্রচুর গরম বাতাস।

এখন সবাই গরম কমানোর জন্য, ঝুঁকি এড়ানোর জন্য বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন; কিন্তু কেউ গাছ লাগানোর জন্য এগিয়ে আসছে না। আনুষ্ঠানিক বৃক্ষরোপণ হয় অনেক। কর্মকর্তা বলে ওঠেন এই গাছ লাগাবো গর্ত কর। পিয়ন, কর্মচারীরা দৌড়াদৌড়ি শুরু করে। পিয়ন দৌড়ে এসে বলেনÑ ‘স্যার প্রতিবার যেখানে গাছ লাগান সেখানেই কী গর্তটি করবো!’

এভাবেই তামাশার বৃক্ষরোপণ চলে; কিন্তু টেকে না তেমন কোনো বৃক্ষই। মানদ-ের ২৫ শতাংশের জায়গায় বর্তমানে আট থেকে নয় শতাংশ বৃক্ষের কথা বলা হচ্ছে।

এই সামান্য বৃক্ষ তাও আবার থোকায় থোকায়। শহরজুড়ে কিন্তু বৃক্ষ নেই। সবচেয়ে উদ্বিগ্নের বিষয় ঢাকায় এখন এমন এলাকা অনেক যে এক দুই কিলোমিটারের মধ্যে বৃক্ষ নেই। বাতাস পুড়ে বহমান বাতাস দাবদাহে রূপান্তরিত হচ্ছে! আশ্চর্য হারে ছড়িয়ে পড়ছে গরম।

যেখানে আগে মানুষ ক্লান্ত হলেই গাছের নিচে বসে শ্রান্ত হতেন সেখানে এখন ভালো ও বড় বৃক্ষ দেখতে রমনা পার্ক অথবা বোটানিক্যাল গার্ডেনে যেতে হয়। বিল্ডিংগুলোর নিচের ছায়ায় দাঁড়ালে মনে হয় গরম সিসা এসে লেগে চামড়া পুরে ভেদ করে যাচ্ছে ভেতরেও!

যে সমস্ত জায়গা বেশি তাপের উৎপাদক সেই সমস্ত জায়গার কারণে অন্যান্য সব জায়গায় গরম অনুভূত হচ্ছে। নদীগুলো থেকে কেমিক্যাল ও আনট্রিটেড ওয়াটারের কন্টামিনেট বাতাসের বেশি তাপের ভ্যাপার উপরের দিকে উঠছে। এক ইটভাটার দিকে বায়ুদূষণের দিক নির্ণয় করে সব যেন বৈধ করে নিচ্ছে অপরাধীরা।

জেনারেটরের এক্সস্ট লাইন নির্দিষ্ট উচ্চতায় দেয়া নেই অনেক কো¤পানি বা ফ্ল্যাটগুলোর। এসিগুলোতে সিএফসি ফ্রি গ্যাস ব্যবহার বাড়ানো যায়নি, প্রতিনিয়ত বাড়ছে ইলেক্ট্রনিক যন্ত্র, কেমিক্যালের ব্যবহার, বাড়ছে গাড়ি থেকে নির্গত কার্বনের হার।

বায়ুতে ভারি বস্তুর পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায়, কেমিক্যাল কন্টামিনেটেড হওয়ায় বাতাসে গরম স্থায়ী হচ্ছে। আকাশের দিকে তাকালে পরিষ্কার আকাশ দেখা এখন ভাগ্যের ব্যপার। ধুসর ও ঘোলাটে আকাশ বলে দেয় আমাদের পরিবেশ দূষণের মাত্রা। আমরা তবুও তা না দেখার ভান করে থাকি।

দুটো গাছ চারজন সদস্যের পরিবারকে এক বছর অক্সিজেন দিতে পারে বলে হিসেব করা হয়। একটি পরিপক্ব গাছ ৪৮ পাউন্ড কার্বডাই অক্সাইড শোষণ করতে পারে। যদিও এ হিসাবগুলো পারিপার্শিক অবস্থা, গাছের ধরণ ও বয়সের ওপর নির্ভর করে কিন্তু এ হিসাবগুলোর পেছনের উপাদানগুলোই আমাদের বাঁচিয়ে রাখছে প্রতিনিয়ত।

এখন প্রশ্ন হলো গাছ কি লাগাবেন না? ৩০ শতাংশের টার্গেট নিয়ে গাছ লাগানো শুরু করার দাবি জানাচ্ছি। তিন কোটি গাছ লাগানোর লক্ষমাত্রা ঠিক করুন।

গাছ কাটা বন্ধের একটি নীতিমালাও খুব বেশি প্রয়োজন। পল্লী বিদ্যুৎকে সরাসরি গাছ কাটা বন্ধ করতে বলুন। বিদ্যুতের তার কভারিং করে ব্যবহার না করতে পারলে ছোট গাছ লাগিয়ে উঁচু করে বিদ্যুতের লাইন করার ব্যবস্থা করুন।

এখন ঢাকায় গাছ লাগানো শুরু করা প্রয়োজন। প্রতিটি বাড়ির সামনে অন্তত দুটো বড় গাছ রাখার জন্য আদেশ জারি করুন।

নদীগুলো নিয়ে তো অনেক কথা হলো। একটিও কি দূষণ মুক্ত হয়েছে ? হয়নি। কিন্তু এ বিষয়ে আরও জোরালো কাজ আশা করছি।

গাজীপুরের অক্সিজেন ফ্যাক্টরি ভাওয়াল ও মধুপুরের গড়। প্রতিদিন এখানে আগুন দেয় মানুষ! বনের সাথে সাথে আমাদেরও মন পোড়ে। আমরা কষ্টে লেপ্টে যাই আবার ঘুরে দাঁড়ানোরও চেষ্টা করি; কিন্তু বন পোড়া বন্ধ করতে পারি না! এমনভাবে এ বন পোড়া বন্ধ করতে হবে যাতে কেউ আর এখানে আগুনে দেয়ার সাহস না পায়। শাস্তির ব্যবস্থা করুন।

সহজ পথে দেশের তাপমাত্রা কমানো যাবে না। কারণ আমরা আমাদের রিসোর্স যা ছিলো সব নষ্ট করে ফেলার পথে! আবার আগের অবস্থায় ফিরতে হয়ত দেরি হবে কিন্তু আমাদের চেষ্টা শুরু করতে হবে এখন থেকেই।

ঢাকাকে বৃক্ষ আচ্ছাদিত শহুরে রূপদান করার জন্য প্রতিটি নাগরিককে অন্তত একটি গাছ বড় করে তোলার দায়িত্ব দিন। কর আদায় যেমন বাধ্যতামূলক তেমনি বৃক্ষরোপণ বাধ্যতামূলক করে তা বড় করায় উৎসাহিত করুন। যারা একটি বৃক্ষ বড় করে তুলতে পারবে তাদের কর কমানোর ইনটেনসিভ ঘোষণা দিন। এ ধরনের নাগরিককে গ্রিনজোন নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দিন।

সরকারের একার পক্ষে এত বড় শহরে গাছ লাগিয়ে সুফল পেতে অনেক দেরি হয়ে যাবে। তাই এখানে জনসাধারণকে কাজে লাগানোর ব্যবস্থা করুন। সমাজকল্যাণ অধিদপ্তর থেকে যে ক্লাবগুলো রেজিস্ট্রেশন করা তাদের অনেকেই কোনো কাজ না করেই সরকারি টাকা দিচ্ছে। এদের ভলেন্টিয়ার কাজে ব্যবহার করে বৃক্ষরোপণ বাড়ান। নিধনের ক্ষেত্রে সরাসরি শাস্তির ব্যবস্থা করুন।

শহর নিয়ে এখন না ভাবলে এ শহর শেষ হতে আর বেশি দেরি হবে না। কারণ বাতাস দূষিত হলে, পানি না পেলে সেই শহরে আপনি থেকে কি বলতে পারবেন, ‘যদিও পরে কহর, তাও ছাড়িওনা শহর!’

[লেখক : পরিবেশকর্মী, রসায়নবিদ]

back to top