alt

উপ-সম্পাদকীয়

শিশুমৃত্যু রোধে দক্ষ মিডওয়াইফদের ভূমিকা

মাহতাব হোসাইন মাজেদ

: মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪

বাংলার গ্রামীণ জনপদে মিডওয়াইফ বা ধাত্রী পেশা অতি প্রাচীন। অতীতে যখন চিকিৎসাব্যবস্থার তেমন উন্নতি হয়নি, তখন কোন প্রসূতির সন্তান প্রসবে ধাত্রীই ছিল একমাত্র ভরসা। এরা প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা ছাড়াই বেশ দক্ষতার সঙ্গেই নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করে আসছে। দুয়েকটা ব্যতিক্রম ছাড়া সন্তান প্রসবে সহযোগিতার কাজটি তারা সফলতার সঙ্গেই করছে। মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু রোধে তাদের ভূমিকা উল্লেখ করার মতো। তাই সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে মিডওয়াইফদের একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আর পেশাগত দিক থেকে হোক বা নিজের দায়িত্ববোধ থেকে হোক একজন মিডওয়াইফ খুবই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে থাকেন। সাধারণত সোজা বাংলায় মিডওয়াইফদের ধাত্রী নামে ডাকা হয় বা সবাই এই নামে চিনে থাকে।

সাধারণত মিডওয়াইফ বা ধাত্রীরা মাতৃসেবা দান করে থাকেন। গর্ভাবস্থা থেকে শুরু করে প্রসব ও নবাগত শিশুর পরিচর্যা এবং পরামর্শ প্রদান করাই হলো মিডওয়াইফের আসল কাজ। নার্সিং স্বাস্থ্যসেবার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। সারা বিশ্বে নার্সদের অত্যাধিক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও কিছু প্রাতিষ্ঠানিক গাফিলতি ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে বাংলাদেশে দক্ষ নার্স ও মিডওয়াইফ তৈরি করা যাচ্ছে না। আর মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু রোধে দক্ষ মিডওয়াইফদের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। দক্ষ ও পেশাদার মিডওয়াইফরা মা ও নবজাতকের মৃত্যু রোধের পাশাপাশি তাদের স্বাস্থ্যসেবায়ও ভূমিকা রাখতে পারে। এক্ষেত্রে তাদের দায়িত্ব পালনে জবাবদিহিতার জন্যও প্রস্তুত থাকা উচিত। সবচেয়ে বড় কথা একজন দক্ষ মিডওয়াইফ বা ধাত্রীর সেই জ্ঞান থাকাটা জরুরি যে, কখন একজন মাকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

যুগ যুগ ধরে যে ধাত্রীরা মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসছে, সেই ধাত্রী পেশাই এখন স্বীকৃতি পেয়েছে। এদেরকে দেয়া হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। এই মর্যাদা অক্ষুণœ রাখার দায়িত্ব সরকারের যতটুকু, তার চেয়ে বেশি এই পেশায় নিয়োজিতদের। আর একসময় গ্রামে-গঞ্জে একশ্রেণির নারীরা হাজার হাজার গর্ভবতীর নরমাল ডেলিভারি করাত। আমাদের সময় সুশীলা নামে একজন মিডওয়াইফ সব নরমাল ডেলিভারি করাত। কিন্তু এই আমরাই তাদের ঘৃণার চোখে দেখেছি, অপমান করেছি, ফলে সেই সুশীলারা সমাজ থেকে হারিয়ে গেছে। সেই নরমাল ডেলিভারির সংখ্যা বৃদ্ধি ও অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার বন্ধে সেই সুশীলাদের ফিরিয়ে আনতে হবে। আর সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার প্রাণরক্ষাকারী পদক্ষেপ হলেও দেশে অপ্রয়োজনীভাবে এর সংখ্যা বাড়ছে।

দেশে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে যত গর্ভবর্তী নারী নবজাতক শিশু প্রসব করেন তার শতকরা ২৩ ভাগ সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে হয়। যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফ কর্তৃক বেঁধে দেয়া হারের প্রায় দ্বিগুণ। বর্তমানে সরকারি পর্যায়ে শতকরা ৩৮ ভাগ ও বেসরকারি পর্যায়ে শতকরা ৮০ ভাগ সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার হয়, যা খুবই উদ্বেগজনক। আর বর্তমান বাস্তবতায় সরকারের বিশেষ কিছু উদ্যোগের কারণে জনসাধারণ এখন মিডওয়াইফদের সেবা সম্পর্কে জানতে পারছে, সেবা নিতে হাসপাতালে ছুটে আসছে। মিডওয়াইফদের সংখ্যা আরও বাড়ানো গেলে মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর হার লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী কমিয়ে আনা কঠিন কিছু নয়। তাই মিডওয়াইফদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দেয়ার মাধ্যমে এ লক্ষ্য অর্জন সম্ভব।’

মাতৃ ও শিশুমৃত্যু হার বহুলাংশে হ্রাস করতে দক্ষ মিডওয়াইফ গড়ে তোলা দরকার। এই গুরুত্ব বিবেচনা করেই সরকারি প্রতিষ্ঠানে মিডওয়াইফ পদ সৃষ্টির পাশাপাশি মিডওয়াইফ শিক্ষাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া হচ্ছে। উপজেলা ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে মিডওয়াইফ। দেশে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল থেকে নিবন্ধন করা মিডওয়াইফের সংখ্যা প্রায় ৮ হাজার। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং ইউনিয়ন সাব সেন্টারে প্রায় ২ হাজার ৫৫৭ জন মিডওয়াইফ কাজ করছেন। তবে সেবাগ্রহীতার তুলনায় মিডওয়াইফদের সংখ্যা অপ্রতুল হওয়ায় নিরবচ্ছিন্ন সেবাদান ব্যাহত হচ্ছে। টেকসই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে দ্রুত মিডওয়াইফ নিয়োগ দেয়া জরুরি। গত বছর চারটি কলেজে মাত্র ২০টি করে মোট ৮০টি সিটে মিডওয়াইফরা বিএসসি-ইন-মিডওয়াইফারির সুযোগ পেয়েছে। এ সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে।

জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ এবং সুস্থ ও নিরোগ জাতি গঠনের লক্ষ্যে সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত নার্স ও মিডওয়াইফ গড়ে তোলার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের আওতাধীন নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর।

দেশের নার্সিং ও মিডওয়াইফারি পেশাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার লক্ষ্যে ২০১৬ সালে পূর্বতন সেবা পরিদপ্তরকে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরে রূপান্তর করা হয়। দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে আরও প্রায় ৫ হাজার নার্স নিয়োগের কার্যক্রম চলমান। নার্সদের পেশাগত ও শিক্ষার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এদেশে দক্ষ নার্স ও মিডওয়াইফদের বহিঃবিশ্বে প্রচুর চাহিদা রয়েছে এদের মাধ্যমে বাংলাদেশ অনেক রেমিট্যান্স অর্জন করতে পারে। এতদপ্রেক্ষিতে সরকারি ও বেসরকারি উদ্দ্যোগে দেশে দক্ষ নার্স ও মিডওয়াইফ তৈরি করা এখন সময়ের দাবি। স্মার্ট বাংলাদেশ বির্নিমাণে দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে দক্ষ নার্স ও মিডওয়াইফ তৈরি করার এক মেগাপ্রকল্প গ্রহণ করা যেতে পারে।

[লেখক : প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি]

জনসংখ্যা : সম্পদ না সংকট?

ব্রিকসে নতুন ভূ-রাজনৈতিক ব্যবস্থার উত্থান

রম্যগদ্য : ‘ল্যাংড়া-লুলা, আতুড়-পাতুড়’

আষাঢ়ী পূর্ণিমা : আত্মশুদ্ধির সাধনায় বুদ্ধের অনন্ত আলো

বদলে যাওয়া মাটিতে সাহসী বীজ : জলবায়ুর বিপরীতে বাংলাদেশের কৃষির অভিযোজনগাথা

ছবি

জুলাই অভ্যুত্থান-গাথা : ‘শিকলে নাহি দিব ধরা’

প্রাচীন যৌধেয় জাতি ও তাদের সাম্যবাদী শাসন

গণঅভ্যুত্থান-উত্তর ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের স্বপ্ন

টেকসই উন্নয়নের স্বপ্নপূরণে উপগ্রহ চিত্রই চাবিকাঠি

রাবার শিল্প : সংকট, করণীয় ও উত্তরণের দিশা

রম্যগদ্য : দুধ, দই, কলা...

ছবি

কোপার্নিকাস : আলো হয়ে জন্ম নেওয়া বৈপ্লবিক মতবাদের প্রবর্তক

জলবায়ু সংকটে মানবসভ্যতা

টেকসই অর্থনীতির জন্য চাই টেকসই ব্যাংকিং

ডিজিটাল দাসত্ব : মনোযোগ অর্থনীতি ও জ্ঞান পুঁজিবাদে তরুণ প্রজন্মের মননশীলতার অবক্ষয়

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার : আস্থা ভঙ্গ ও জবাবদিহিতার সংকট

আসামি এখন নির্বাচন কমিশন

কোথায় হারাল একান্নবর্তী পরিবার?

এই শান্তি কি মহাঝড়ের পূর্বলক্ষণ?

মেগাসিটি : দারিদ্র্য যখন ‘অবাঞ্ছিত বর্জ্য’

ফলের রাজ্য পার্বত্য চট্টগ্রাম

ছবি

তৃতীয় শক্তির জন্য জায়গা খালি : বামপন্থীরা কি ঘুরে দাঁড়াতে পারে না

জমি আপনার, দখল অন্যের?

সিধু-কানু : ধ্বংসস্তূপের নিচেও জেগে আছে সাহস

ছবি

বাংলার অনন্য লোকসংস্কৃতি ও গণতান্ত্রিক চেতনা

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সাম্পান

তিন দিক থেকে স্বাস্থ্যঝুঁকি : করোনা, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া

দেশের অর্থ পাচারের বাস্তবতা

খাদ্য নিরাপত্তার নতুন দিগন্ত

আবারও কি রোহিঙ্গাদের ত্যাগ করবে বিশ্ব?

প্লান্ট ক্লিনিক বদলে দিচ্ছে কৃষির ভবিষ্যৎ

ঢাকাকে বাসযোগ্য নগরী করতে করণীয়

রম্যগদ্য : ‘ডন ডনা ডন ডন...’

ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্ব : কে সন্ত্রাসী, কে শিকার?

সুস্থ ও শক্তিশালী জাতি গঠনে শারীরিক শিক্ষার গুরুত্ব

প্রতিরোধই উত্তম : মাদকমুক্ত প্রজন্ম গড়ার ডাক

tab

উপ-সম্পাদকীয়

শিশুমৃত্যু রোধে দক্ষ মিডওয়াইফদের ভূমিকা

মাহতাব হোসাইন মাজেদ

মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪

বাংলার গ্রামীণ জনপদে মিডওয়াইফ বা ধাত্রী পেশা অতি প্রাচীন। অতীতে যখন চিকিৎসাব্যবস্থার তেমন উন্নতি হয়নি, তখন কোন প্রসূতির সন্তান প্রসবে ধাত্রীই ছিল একমাত্র ভরসা। এরা প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা ছাড়াই বেশ দক্ষতার সঙ্গেই নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করে আসছে। দুয়েকটা ব্যতিক্রম ছাড়া সন্তান প্রসবে সহযোগিতার কাজটি তারা সফলতার সঙ্গেই করছে। মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু রোধে তাদের ভূমিকা উল্লেখ করার মতো। তাই সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে মিডওয়াইফদের একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আর পেশাগত দিক থেকে হোক বা নিজের দায়িত্ববোধ থেকে হোক একজন মিডওয়াইফ খুবই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে থাকেন। সাধারণত সোজা বাংলায় মিডওয়াইফদের ধাত্রী নামে ডাকা হয় বা সবাই এই নামে চিনে থাকে।

সাধারণত মিডওয়াইফ বা ধাত্রীরা মাতৃসেবা দান করে থাকেন। গর্ভাবস্থা থেকে শুরু করে প্রসব ও নবাগত শিশুর পরিচর্যা এবং পরামর্শ প্রদান করাই হলো মিডওয়াইফের আসল কাজ। নার্সিং স্বাস্থ্যসেবার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। সারা বিশ্বে নার্সদের অত্যাধিক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও কিছু প্রাতিষ্ঠানিক গাফিলতি ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে বাংলাদেশে দক্ষ নার্স ও মিডওয়াইফ তৈরি করা যাচ্ছে না। আর মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু রোধে দক্ষ মিডওয়াইফদের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। দক্ষ ও পেশাদার মিডওয়াইফরা মা ও নবজাতকের মৃত্যু রোধের পাশাপাশি তাদের স্বাস্থ্যসেবায়ও ভূমিকা রাখতে পারে। এক্ষেত্রে তাদের দায়িত্ব পালনে জবাবদিহিতার জন্যও প্রস্তুত থাকা উচিত। সবচেয়ে বড় কথা একজন দক্ষ মিডওয়াইফ বা ধাত্রীর সেই জ্ঞান থাকাটা জরুরি যে, কখন একজন মাকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

যুগ যুগ ধরে যে ধাত্রীরা মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসছে, সেই ধাত্রী পেশাই এখন স্বীকৃতি পেয়েছে। এদেরকে দেয়া হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। এই মর্যাদা অক্ষুণœ রাখার দায়িত্ব সরকারের যতটুকু, তার চেয়ে বেশি এই পেশায় নিয়োজিতদের। আর একসময় গ্রামে-গঞ্জে একশ্রেণির নারীরা হাজার হাজার গর্ভবতীর নরমাল ডেলিভারি করাত। আমাদের সময় সুশীলা নামে একজন মিডওয়াইফ সব নরমাল ডেলিভারি করাত। কিন্তু এই আমরাই তাদের ঘৃণার চোখে দেখেছি, অপমান করেছি, ফলে সেই সুশীলারা সমাজ থেকে হারিয়ে গেছে। সেই নরমাল ডেলিভারির সংখ্যা বৃদ্ধি ও অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার বন্ধে সেই সুশীলাদের ফিরিয়ে আনতে হবে। আর সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার প্রাণরক্ষাকারী পদক্ষেপ হলেও দেশে অপ্রয়োজনীভাবে এর সংখ্যা বাড়ছে।

দেশে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে যত গর্ভবর্তী নারী নবজাতক শিশু প্রসব করেন তার শতকরা ২৩ ভাগ সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে হয়। যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফ কর্তৃক বেঁধে দেয়া হারের প্রায় দ্বিগুণ। বর্তমানে সরকারি পর্যায়ে শতকরা ৩৮ ভাগ ও বেসরকারি পর্যায়ে শতকরা ৮০ ভাগ সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার হয়, যা খুবই উদ্বেগজনক। আর বর্তমান বাস্তবতায় সরকারের বিশেষ কিছু উদ্যোগের কারণে জনসাধারণ এখন মিডওয়াইফদের সেবা সম্পর্কে জানতে পারছে, সেবা নিতে হাসপাতালে ছুটে আসছে। মিডওয়াইফদের সংখ্যা আরও বাড়ানো গেলে মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর হার লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী কমিয়ে আনা কঠিন কিছু নয়। তাই মিডওয়াইফদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দেয়ার মাধ্যমে এ লক্ষ্য অর্জন সম্ভব।’

মাতৃ ও শিশুমৃত্যু হার বহুলাংশে হ্রাস করতে দক্ষ মিডওয়াইফ গড়ে তোলা দরকার। এই গুরুত্ব বিবেচনা করেই সরকারি প্রতিষ্ঠানে মিডওয়াইফ পদ সৃষ্টির পাশাপাশি মিডওয়াইফ শিক্ষাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া হচ্ছে। উপজেলা ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে মিডওয়াইফ। দেশে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল থেকে নিবন্ধন করা মিডওয়াইফের সংখ্যা প্রায় ৮ হাজার। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং ইউনিয়ন সাব সেন্টারে প্রায় ২ হাজার ৫৫৭ জন মিডওয়াইফ কাজ করছেন। তবে সেবাগ্রহীতার তুলনায় মিডওয়াইফদের সংখ্যা অপ্রতুল হওয়ায় নিরবচ্ছিন্ন সেবাদান ব্যাহত হচ্ছে। টেকসই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে দ্রুত মিডওয়াইফ নিয়োগ দেয়া জরুরি। গত বছর চারটি কলেজে মাত্র ২০টি করে মোট ৮০টি সিটে মিডওয়াইফরা বিএসসি-ইন-মিডওয়াইফারির সুযোগ পেয়েছে। এ সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে।

জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ এবং সুস্থ ও নিরোগ জাতি গঠনের লক্ষ্যে সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত নার্স ও মিডওয়াইফ গড়ে তোলার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের আওতাধীন নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর।

দেশের নার্সিং ও মিডওয়াইফারি পেশাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার লক্ষ্যে ২০১৬ সালে পূর্বতন সেবা পরিদপ্তরকে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরে রূপান্তর করা হয়। দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে আরও প্রায় ৫ হাজার নার্স নিয়োগের কার্যক্রম চলমান। নার্সদের পেশাগত ও শিক্ষার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এদেশে দক্ষ নার্স ও মিডওয়াইফদের বহিঃবিশ্বে প্রচুর চাহিদা রয়েছে এদের মাধ্যমে বাংলাদেশ অনেক রেমিট্যান্স অর্জন করতে পারে। এতদপ্রেক্ষিতে সরকারি ও বেসরকারি উদ্দ্যোগে দেশে দক্ষ নার্স ও মিডওয়াইফ তৈরি করা এখন সময়ের দাবি। স্মার্ট বাংলাদেশ বির্নিমাণে দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে দক্ষ নার্স ও মিডওয়াইফ তৈরি করার এক মেগাপ্রকল্প গ্রহণ করা যেতে পারে।

[লেখক : প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি]

back to top