alt

উপ-সম্পাদকীয়

জেগে উঠুক সুকুমার বৃত্তি

সাজেদুল চৌধুরী রুবেল

: বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪

আইরিশ সরকারের পুনঃ এবং উচ্চশিক্ষা, গবেষণা, উদ্ভাবন ও বিজ্ঞানবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী নায়াল কলিন্স। কাকতালীয়ভাবে তার সঙ্গে দেখা। আমি যে শহরটিতে বাস করি সে শহরে ট্রেন স্টেশনের পাশে একটি কারপার্ক আছে। ওখানে তার গাড়িটি রেখে প্রায় পৌনে এক কিলোমিটারের মতো পথ হেঁটে একটি অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। এ অনুষ্ঠান শেষ করে আবারো তিনি একইভাবে ফিরে আসেন তার গাড়ির কাছে। তিনি গাড়িতে ওঠার জন্য দরজা খুলছিলেন ঠিক ওই মুহূর্তে সম্ভবত অবচেতন মনে উল্টো দিকে ঘাড় ফেরালেন। আমাকে অদূরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেন। চোখাচোখি হতেই আমি তার দিকে এগিয়ে যেতে লাগলাম এবং তিনিও গাড়িতে না উঠে আমার দিকে অগ্রসর হতে লাগলেন। একশ মিটার দূরত্বের মাঝামাঝিতে দুজন পৌঁছাতেই আমার আগে তিনি হাত বাড়িয়ে দিলেন। করমর্দন করলেন। কুশলাদি জেনে বিদায় নিয়ে চলে গেলেন। আমি নিতান্তই নগন্য একজন অভিবাসী। রাজনীতি করি না। তার দলেরও কেউ নই। আমাকে দিয়ে তার দু আনার প্রয়োজনও নেই। তাই আমাকে ‘হাই’ বলে কাছে আসা তো দূরের কথা না দেখার ভান করে চলে গেলেও তার কোনো ক্ষতি হতো না। কিন্তু তিনি তা করেননি, বরং তিনি তার বিনয় ও শিষ্টাচারবোধ দেখিয়ে মহত্মের বহিঃপ্রকাশ ঘটালেন। এখানেই তাদের সুশিক্ষার কৃতিত্ব। এখানেই আমাদের সঙ্গে তাদের পার্থক্য। দু-তিন মাস আগের কথা। ব্যক্তিগত কাজে তার অফিসে যাই। ওয়েটিং রুমে বসা ছিলাম। দেখতে পেলাম একটি কাগজ হাতে নিয়ে বেরুলেন। ভেবেছিলাম, অপেক্ষমাণ কাউকে ডাকবেন। কিন্তু না, তিনি আমাদেরকে ডিঙ্গিয়ে অন্য আরেকটি রুমে কাগজটি ফটোকপি করতে গেলেন। ফিরে এসে মূল কপিটি তার রুমে বসে থাকা ভদ্রলোকের কাছে ফেরত দিয়ে ফটোকপিটি নিজের কাছে রেখে দিলেন। ভাবা যায়! মন্ত্রীবর ইচ্ছে করলে মূল কপিটি রেখে দিতে পারতেন কিংবা যিনি নিজের প্রয়োজনে তার কাছে এসেছেন তাকে পাঠিয়ে অথবা মন্ত্রী তার সহকারীকে দিয়ে ফটোকপি করিয়ে নিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। অপেক্ষমান সাহায্যপ্রার্থীদের ভ্রƒক্ষেপ না করে চেয়ার থেকে উঠে গিয়ে মন্ত্রী নিজেই কাজটি করলেন।

একজন মন্ত্রীর যখন এমন আদর্শ তখন ওই দেশের সরকারি বা বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শিষ্টাচারবোধ, কর্মনিষ্ঠা, দায়িত্বজ্ঞান, সততা ও সহায়ক মনোভাব কেমন হবে তা সহজেই অনুমান করা যায়। এখানে পিওন বা কেরণীর চাকরি নেই বললেই চলে। মন্ত্রী-মিনিস্টার বা অফিসিয়াল বিগ বসদের পিএ-সচিব থাকে বটে কিন্তু তাদের নিজস্ব কাজে-কর্মে মন্ত্রী বা বস খুব কম সময়ই ব্যবহার করে থাকেন। অফিসগুলোতে সবাই সমান। কারো মাঝে কোনো জমিদারি ভাব নেই। কে ম্যনেজার, কে সিনিয়র বা এক্সিকিউটিভ তা-ও বুঝার কোনো উপায় নেই। সবাই দুহাতে কাজ করে। সবার আগে তাদের কাছে জনগণ। অহেতুক জনগণ বা ভোক্তাশ্রেণীকে দাঁড় করিয়ে লাইন লম্বা করার অপশিক্ষা তারা পায়নি। জনগণকে দ্রুত সেবা দেয়াটাই তাদের মূল লক্ষ্য। ভোক্তাদের কাজ-কর্ম সম্পন্ন করে সন্তোষজনকভাবে তাদের বিদায় করার পরই কেবল তারা পেপার ওয়ার্কস বা অন্যান্য কাজে চোখ বুলান। এখানে ‘অডজব’, ‘গুডজব’ দুটোই আছে। কিন্তু এসব নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না। কিচেনে হাঁড়ি-পাতিল ধুয়ে পাব-এ গিয়ে হোটেলের মালিক বা বসের সঙ্গে একই টেবিলে বিয়ার টানতে যেমন কারও কোনো সমস্যা হয় না ঠিক তেমনি ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তা যখন অধীনস্থদের সামনে অফিসের কার্পেটে ভ্যাকুম দেয় তখন তার জাত যায় না। আমার নিজের কাছেই এ ধরনের অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে। কিন্তু যখন নিজের দেশটার দিকে তাকাই তখন বেশ কষ্ট হয়। আমাদের ওখানে এমন উদাহরণ একটিও কি খুঁজে পাওয়া যাবে? মন্ত্রী সাহেব হাঁটবেন তো দূরের কথা, তিনি গাড়িতে চড়ে বেড়ালেও তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য জনগণকে সীমাহীন ভোগান্তির মুখে ঠেলে দেয়া হয়। ড্রাইভিংসহ ছোট-খাট কাজ মন্ত্রী নিজে করবেন? ভাবাই অবান্তর। সরকারি আমলা, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কথা যদি বলি তারাই বা কম কী! পিওন থেকে সচিব পর্যন্ত বলতে গেলে সবার চরিত্রই অভিন্ন। বছর দেড়েক আগে রাজউক, ভূমি অফিস, স্থানীয় নির্বাচন কমিশনের অফিসসহ দু-একটি ব্যংকে গিয়ে আমি তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। এরা নিজেদের জনগণের সেবক নয় বরং মালিক ভাবে। জমিদারি প্রথা বাতিল হয়েছে বটে কিন্তু স্টাইল রয়েছে ঠিক আগের মতোই। তাইতো এমপি-মন্ত্রী, আমলা বা বড় মাপের সরকারি চাকুরেদের বাড়ি-গাড়ি, পিওন, দারোয়ান, মালি, বাবুর্চিসহ গৃহপরিচারিকা প্রদানের রেওয়াজ এখনো অব্যাহত যা বিশ্বে বিরল। বড় সাহেবের রুমের সামনে দরোজা খোলা বা লাগানো কিংবা কেবোল স্যলুট দেয়ার জন্য একজনকে বসিয়ে রেখে জনগণের ঘামের পয়সা অপব্যবহার করার কালচার আর কোথাও কি আছে? উন্নত বিশ্বের যে কোনো দেশের দিকে তাকালে দেখা যাবে সরকারি বা বেসরকারি চাকরিজীবী থেকে শুরু করে রাজনীতিক, এমপি, মন্ত্রী, সরকারপ্রধান, রাষ্ট্রপ্রধান সবাই অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিজের কাজ নিজে করেনÑ এবং যা করেন তা যথেষ্ট দরদ দিয়ে, হৃদয় দিয়ে করেন। স্থানীয় সরকারের কার্যক্রম মানুষকে আরও বেশি তাক লাগিয়ে দেয়। রাস্তাঘাট পরিষ্কার করার জন্য মেয়রসহ কাউন্সিলরদের ঝাড়– হাতে নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়ে। এমন চিত্র সাধারণ মানুষকে একদিক দিয়ে যেমন রাস্তাঘাট পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে উৎসাহী করে তোলে তেমনি অপরিষ্কার করা থেকেও বিরত রাখে।

বিদেশিদের এমন কর্মশৈলিতা, আচার-আচরণ, কৃষ্টি, শিল্প-সাহিত্য, সংস্কৃতি, সামাজিক ও রাজনৈতিক ভাবধারার সঙ্গে পরিচিত হয়ে ওঠা আজকের এ ডিজিটাল যুগে তেমন কোনো দুঃসাধ্য ব্যপার নয়, ঘরে বসেই তা সম্ভব। তবে হৃদয়ে সুকুমার বৃত্তির চর্চা বা লালননির্ভর করে স্বীয় ইচ্ছে বা মনমানসিকতার ওপর। অপ্রিয় সত্য কথাটি বলতেই হয়, বিদেশিদের ভালো দিকগুলো আমাদের আকৃষ্ট করে না। বরং আমাদের জন্য যা অকল্যাণকর তার প্রতিই বেশি মোহাবিষ্ট হয়ে ওঠি। দেশটার বয়স তো কম হলো না! আর কতো বিপথগামিতা? কতো পশ্চাদপদতা? নিজেদের ভেতর সুকুমার বৃত্তির ভিত রচনা করে আমরা কি পারি না দেশটাকে পাল্টে দিতে!

[লেখক : আয়ারল্যান্ড প্রবাসী, কবি]

বিয়ের কিছু লোকাচার ও অপব্যয় প্রসঙ্গে

ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পকে রক্ষা করুন

তরুণদের দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি সম্ভব

শিশুমৃত্যু রোধে করণীয় কী

সিগমুন্ড ফ্রয়েড ও মনঃসমীক্ষণ

ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ও বাস্তবতা

স্বামী কিংবা স্ত্রীর পরবর্তী বিয়ের আইনি প্রতিকার ও বাস্তবতা

তথ্য-উপাত্তের গরমিলে বাজারে অস্থিরতা, অর্থনীতিতে বিভ্রান্তি

দেশে অফশোর ব্যাংকিংয়ের গুরুত্ব

ইরানে কট্টরপন্থার সাময়িক পরাজয়

পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থার ভবিষ্যৎ কী

ক্ষমতার সাতকাহন

জলবায়ু সংকট : আমাদের উপলব্ধি

নারী-পুরুষ চুড়ি পরি, দেশের অন্যায় দূর করি!

ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার সবার

ছবি

সাধারণ মানুষেরা বড় অসাধারণ

চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ও কারিগরি শিক্ষা

মাদক রুখতে গড়ে তুলতে হবে সামাজিক প্রতিরোধ

পারিবারিক অপরাধপ্রবণতা ও কয়েকটি প্রশ্ন

ডারউইনকে খুঁজে পেয়েছি

চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ফসল উৎপাদন করা জরুরি

পিএসসি প্রশ্নফাঁসের দায় এড়াবে কীভাবে

এত উন্নয়নের পরও বাসযোগ্যতায় কেন পিছিয়েই থাকছে ঢাকা

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য কি কেউ নেই?

জলবায়ু রক্ষায় কাজের কাজ কি কিছু হচ্ছে

অধরার হাতে সমর্পিত ক্ষমতা

প্রসঙ্গ : কোটাবিরোধী আন্দোলন

রম্যগদ্য : যে করিবে চালাকি, বুঝিবে তার জ্বালা কী

একটি মিথ্যা ধর্ষণ মামলার পরিণতি

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা কেন শ্রেণীকক্ষের বাইরে

মেধা নিয়ে কম মেধাবীর ভাবনা

প্রজাতন্ত্রের সেবক কেন ফ্রাঙ্কেনস্টাইন বনে যান

ছবি

বাইডেন কি দলে বোঝা হয়ে যাচ্ছেন?

ছবি

দুই যুগের পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

সাপ উপকারী প্রাণীও বটে!

ছবি

বাস্তববাদী রাজনীতিক জ্যোতি বসু

tab

উপ-সম্পাদকীয়

জেগে উঠুক সুকুমার বৃত্তি

সাজেদুল চৌধুরী রুবেল

বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪

আইরিশ সরকারের পুনঃ এবং উচ্চশিক্ষা, গবেষণা, উদ্ভাবন ও বিজ্ঞানবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী নায়াল কলিন্স। কাকতালীয়ভাবে তার সঙ্গে দেখা। আমি যে শহরটিতে বাস করি সে শহরে ট্রেন স্টেশনের পাশে একটি কারপার্ক আছে। ওখানে তার গাড়িটি রেখে প্রায় পৌনে এক কিলোমিটারের মতো পথ হেঁটে একটি অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। এ অনুষ্ঠান শেষ করে আবারো তিনি একইভাবে ফিরে আসেন তার গাড়ির কাছে। তিনি গাড়িতে ওঠার জন্য দরজা খুলছিলেন ঠিক ওই মুহূর্তে সম্ভবত অবচেতন মনে উল্টো দিকে ঘাড় ফেরালেন। আমাকে অদূরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেন। চোখাচোখি হতেই আমি তার দিকে এগিয়ে যেতে লাগলাম এবং তিনিও গাড়িতে না উঠে আমার দিকে অগ্রসর হতে লাগলেন। একশ মিটার দূরত্বের মাঝামাঝিতে দুজন পৌঁছাতেই আমার আগে তিনি হাত বাড়িয়ে দিলেন। করমর্দন করলেন। কুশলাদি জেনে বিদায় নিয়ে চলে গেলেন। আমি নিতান্তই নগন্য একজন অভিবাসী। রাজনীতি করি না। তার দলেরও কেউ নই। আমাকে দিয়ে তার দু আনার প্রয়োজনও নেই। তাই আমাকে ‘হাই’ বলে কাছে আসা তো দূরের কথা না দেখার ভান করে চলে গেলেও তার কোনো ক্ষতি হতো না। কিন্তু তিনি তা করেননি, বরং তিনি তার বিনয় ও শিষ্টাচারবোধ দেখিয়ে মহত্মের বহিঃপ্রকাশ ঘটালেন। এখানেই তাদের সুশিক্ষার কৃতিত্ব। এখানেই আমাদের সঙ্গে তাদের পার্থক্য। দু-তিন মাস আগের কথা। ব্যক্তিগত কাজে তার অফিসে যাই। ওয়েটিং রুমে বসা ছিলাম। দেখতে পেলাম একটি কাগজ হাতে নিয়ে বেরুলেন। ভেবেছিলাম, অপেক্ষমাণ কাউকে ডাকবেন। কিন্তু না, তিনি আমাদেরকে ডিঙ্গিয়ে অন্য আরেকটি রুমে কাগজটি ফটোকপি করতে গেলেন। ফিরে এসে মূল কপিটি তার রুমে বসে থাকা ভদ্রলোকের কাছে ফেরত দিয়ে ফটোকপিটি নিজের কাছে রেখে দিলেন। ভাবা যায়! মন্ত্রীবর ইচ্ছে করলে মূল কপিটি রেখে দিতে পারতেন কিংবা যিনি নিজের প্রয়োজনে তার কাছে এসেছেন তাকে পাঠিয়ে অথবা মন্ত্রী তার সহকারীকে দিয়ে ফটোকপি করিয়ে নিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। অপেক্ষমান সাহায্যপ্রার্থীদের ভ্রƒক্ষেপ না করে চেয়ার থেকে উঠে গিয়ে মন্ত্রী নিজেই কাজটি করলেন।

একজন মন্ত্রীর যখন এমন আদর্শ তখন ওই দেশের সরকারি বা বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শিষ্টাচারবোধ, কর্মনিষ্ঠা, দায়িত্বজ্ঞান, সততা ও সহায়ক মনোভাব কেমন হবে তা সহজেই অনুমান করা যায়। এখানে পিওন বা কেরণীর চাকরি নেই বললেই চলে। মন্ত্রী-মিনিস্টার বা অফিসিয়াল বিগ বসদের পিএ-সচিব থাকে বটে কিন্তু তাদের নিজস্ব কাজে-কর্মে মন্ত্রী বা বস খুব কম সময়ই ব্যবহার করে থাকেন। অফিসগুলোতে সবাই সমান। কারো মাঝে কোনো জমিদারি ভাব নেই। কে ম্যনেজার, কে সিনিয়র বা এক্সিকিউটিভ তা-ও বুঝার কোনো উপায় নেই। সবাই দুহাতে কাজ করে। সবার আগে তাদের কাছে জনগণ। অহেতুক জনগণ বা ভোক্তাশ্রেণীকে দাঁড় করিয়ে লাইন লম্বা করার অপশিক্ষা তারা পায়নি। জনগণকে দ্রুত সেবা দেয়াটাই তাদের মূল লক্ষ্য। ভোক্তাদের কাজ-কর্ম সম্পন্ন করে সন্তোষজনকভাবে তাদের বিদায় করার পরই কেবল তারা পেপার ওয়ার্কস বা অন্যান্য কাজে চোখ বুলান। এখানে ‘অডজব’, ‘গুডজব’ দুটোই আছে। কিন্তু এসব নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না। কিচেনে হাঁড়ি-পাতিল ধুয়ে পাব-এ গিয়ে হোটেলের মালিক বা বসের সঙ্গে একই টেবিলে বিয়ার টানতে যেমন কারও কোনো সমস্যা হয় না ঠিক তেমনি ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তা যখন অধীনস্থদের সামনে অফিসের কার্পেটে ভ্যাকুম দেয় তখন তার জাত যায় না। আমার নিজের কাছেই এ ধরনের অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে। কিন্তু যখন নিজের দেশটার দিকে তাকাই তখন বেশ কষ্ট হয়। আমাদের ওখানে এমন উদাহরণ একটিও কি খুঁজে পাওয়া যাবে? মন্ত্রী সাহেব হাঁটবেন তো দূরের কথা, তিনি গাড়িতে চড়ে বেড়ালেও তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য জনগণকে সীমাহীন ভোগান্তির মুখে ঠেলে দেয়া হয়। ড্রাইভিংসহ ছোট-খাট কাজ মন্ত্রী নিজে করবেন? ভাবাই অবান্তর। সরকারি আমলা, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কথা যদি বলি তারাই বা কম কী! পিওন থেকে সচিব পর্যন্ত বলতে গেলে সবার চরিত্রই অভিন্ন। বছর দেড়েক আগে রাজউক, ভূমি অফিস, স্থানীয় নির্বাচন কমিশনের অফিসসহ দু-একটি ব্যংকে গিয়ে আমি তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। এরা নিজেদের জনগণের সেবক নয় বরং মালিক ভাবে। জমিদারি প্রথা বাতিল হয়েছে বটে কিন্তু স্টাইল রয়েছে ঠিক আগের মতোই। তাইতো এমপি-মন্ত্রী, আমলা বা বড় মাপের সরকারি চাকুরেদের বাড়ি-গাড়ি, পিওন, দারোয়ান, মালি, বাবুর্চিসহ গৃহপরিচারিকা প্রদানের রেওয়াজ এখনো অব্যাহত যা বিশ্বে বিরল। বড় সাহেবের রুমের সামনে দরোজা খোলা বা লাগানো কিংবা কেবোল স্যলুট দেয়ার জন্য একজনকে বসিয়ে রেখে জনগণের ঘামের পয়সা অপব্যবহার করার কালচার আর কোথাও কি আছে? উন্নত বিশ্বের যে কোনো দেশের দিকে তাকালে দেখা যাবে সরকারি বা বেসরকারি চাকরিজীবী থেকে শুরু করে রাজনীতিক, এমপি, মন্ত্রী, সরকারপ্রধান, রাষ্ট্রপ্রধান সবাই অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিজের কাজ নিজে করেনÑ এবং যা করেন তা যথেষ্ট দরদ দিয়ে, হৃদয় দিয়ে করেন। স্থানীয় সরকারের কার্যক্রম মানুষকে আরও বেশি তাক লাগিয়ে দেয়। রাস্তাঘাট পরিষ্কার করার জন্য মেয়রসহ কাউন্সিলরদের ঝাড়– হাতে নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়ে। এমন চিত্র সাধারণ মানুষকে একদিক দিয়ে যেমন রাস্তাঘাট পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে উৎসাহী করে তোলে তেমনি অপরিষ্কার করা থেকেও বিরত রাখে।

বিদেশিদের এমন কর্মশৈলিতা, আচার-আচরণ, কৃষ্টি, শিল্প-সাহিত্য, সংস্কৃতি, সামাজিক ও রাজনৈতিক ভাবধারার সঙ্গে পরিচিত হয়ে ওঠা আজকের এ ডিজিটাল যুগে তেমন কোনো দুঃসাধ্য ব্যপার নয়, ঘরে বসেই তা সম্ভব। তবে হৃদয়ে সুকুমার বৃত্তির চর্চা বা লালননির্ভর করে স্বীয় ইচ্ছে বা মনমানসিকতার ওপর। অপ্রিয় সত্য কথাটি বলতেই হয়, বিদেশিদের ভালো দিকগুলো আমাদের আকৃষ্ট করে না। বরং আমাদের জন্য যা অকল্যাণকর তার প্রতিই বেশি মোহাবিষ্ট হয়ে ওঠি। দেশটার বয়স তো কম হলো না! আর কতো বিপথগামিতা? কতো পশ্চাদপদতা? নিজেদের ভেতর সুকুমার বৃত্তির ভিত রচনা করে আমরা কি পারি না দেশটাকে পাল্টে দিতে!

[লেখক : আয়ারল্যান্ড প্রবাসী, কবি]

back to top