alt

উপ-সম্পাদকীয়

রাজধানীকে বসবাসযোগ্য করুন

আর কে চৌধুরী

: মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪

রাজধানী ঢাকা ক্রমেই বসবাসযোগ্যতা হারাচ্ছে। দেশের প্রধানতম অর্থনৈতিক কেন্দ্র হওয়ায় বাড়ছে ঢাকামুখী মানুষের স্রোত। সেই সঙ্গে কমছে স্বাচ্ছন্দে ও সুস্থভাবে বেঁচে থাকার উপযোগী নাগরিক সুযোগ-সুবিধা। বায়ুদূষণের দিক থেকেও বিশ্বে ঢাকার অবস্থান কখনো প্রথম, কখনো দ্বিতীয়।

সামাজিক অস্থিতিশীলতা ও অপরাধের মাত্রা দিন দিনই বাড়ছে। যানজটে নাকাল হতে হয়। একটু বেশি বৃষ্টি হলেই নগরীর অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। সংস্কৃতিচর্চা ও বিনোদনের সুযোগ দিন দিনই কমছে। এমন পরিস্থিতিতে বসবাসযোগ্যতার দিক থেকে ঢাকার অবনমন ঘটাই স্বাভাবিক।

ঢাকার এমন অবস্থার জন্য দায়ী মূলত অপরিকল্পিত নগরায়ণ। রাজউক বা আবাসন সংস্থাগুলোর অল্প কিছু উদ্যোগ ছাড়া কোথাও পরিকল্পনার ছোঁয়া নেই। অথচ প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ঘরবাড়ি হচ্ছে, কিন্তু প্রয়োজনীয় রাস্তা থাকছে না।

পার্ক, খেলার মাঠ বা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হচ্ছে না। ঢাকায় এমন অনেক এলাকা আছে, যেখানে একটি রিকশা ঢোকাতেও কষ্ট হয়, ফায়ার ব্রিগেডের গাড়ি বা অ্যাম্বুলেন্স ঢোকার তো প্রশ্নই ওঠে না। যততত্র ময়লা-আবর্জনার স্তূপ জমে থাকে। ঢাকার বেশির ভাগ খাল দখল ও ভরাট হয়ে গেছে। অবশিষ্ট যেটুকু আছে, তা-ও ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।

বায়ুদূষণের মাত্রা এত বেশি যে দম বন্ধ হয়ে আসতে চায়। শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদরোগ, ক্যান্সারসহ প্রাণঘাতী বিভিন্ন রোগ দ্রুত বাড়ছে। অর্থাৎ সব দিক থেকেই ঢাকার বসবাসযোগ্যতা ক্রমেই কমছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের ইকোনমিস্ট গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ইকোনমিস্ট ইমপ্যাক্ট সম্প্রতি রেজিল্যান্ট সিটিস ইনডেক্স নামে বিশ্বের ২৫টি শহরের যে তালিকা প্রকাশ করেছে, তাতে ঢাকার অবস্থান ২৪তম। ঢাকার নিচে থাকা একমাত্র শহরটি নাইজেরিয়ার ল্যাগোস।

এই তালিকা তৈরিতে একটি শহরের গণপরিবহনের অবস্থা, বায়ুদূষণ, জনসংখ্যার ঘনত্ব, বিদ্যুৎ সুবিধা, দ্রুত নাগরিক পরিষেবা প্রদানের সক্ষমতা, সাইবার নিরাপত্তা, ভবন নির্মাণে জলবায়ু সহনশীলতা, তাপ সহনশীলতা, শিক্ষিত জনগোষ্ঠী, সাংস্কৃতিক সুযোগ ইত্যাদি বিবেচনা করা হয়।

অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে ঢাকা মহানগরীতে সবুজের ভাগ দ্রুত কমছে। ২০২৩ সালের জুন মাসে প্রকাশিত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২৮ বছরে রাজধানী ঢাকার সবুজ এলাকা ২২ থেকে কমে ৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অথচ নগর পরিকল্পনার মানদ- অনুযায়ী, একটি আদর্শ শহরে ২৫ শতাংশ সবুজ এলাকা থাকা প্রয়োজন। অন্যদিকে একটি নগরের মোট আয়তনের ২৫ শতাংশ জায়গা রাস্তার জন্য থাকা প্রয়োজন হলেও ঢাকায় আছে মাত্র ৫.১৫ শতাংশ। ঢাকা মহানগরে জনসংখ্যার অনুপাতে স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, খেলার মাঠ, উদ্যান-পার্কও অনেক কম।

নাগরিকদের জীবনমান উন্নয়নের দায়িত্ব রাষ্ট্রকেই নিতে হবে। পরিকল্পিত নগরায়ণ এবং নাগরিক সুবিধা সৃষ্টির মাধ্যমে ঢাকার বসবাসযোগ্যতা বাড়াতে হবে।

বিশ্বের যেসব মহানগরীর জনসংখ্যা দ্রুত বাড়ছে ঢাকা তার একটি। প্রতিদিন ঢাকার বাসিন্দা হিসেবে যোগ হচ্ছে ১ হাজার ৭০০ জন। প্রতি মাসে ঢাকার জনসংখ্যা বাড়ছে ৫১ হাজার, বছরে ৬ লাখেরও বেশি। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রাজধানীতে প্রতি একরে ৭০০ থেকে ৮০০ মানুষের বসবাস। কিন্তু এ নগরীর চারটি এলাকা বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ। এ চারটি এলাকা হচ্ছেÑ লালবাগ, বংশাল, গেন্ডারিয়া ও সবুজবাগ। এসব এলাকায় প্রতি একরে বাস করে প্রায় ৮০০ মানুষ। মেগাসিটির মানদ- অনুযায়ী প্রতি একর আয়তনে জনসংখ্যা থাকার কথা ১২০।

বিশ্লেষকদের মতে, সব ধরনের সেবা রাজধানীকেন্দ্রিক হওয়ায় মানুষ ভিড় জমাচ্ছে ঢাকায়। সরকারি অফিস-আদালত, সেরা বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যাংকের হেড অফিস, ভারি ও মাঝারি শিল্প-কারখানাসহ বিভিন্ন ধরনের সেবা কেন্দ্রীভূত হওয়ায় মানুষের সামনে কোনো বিকল্প পথ নেই। এছাড়া অনেক শিল্প-কলকারখানা রাজধানী এবং এর আশপাশে হওয়ায় বিশাল জনগোষ্ঠীর বাস রাজধানী ও সংলগ্ন এলাকায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, হাইকোর্ট, আবহাওয়া অধিদপ্তর, বন ভবন, খাদ্য ভবন, পানি ভবনসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় সহজেই স্থানান্তর বা বিকেন্দ্রীকরণ করা যায়। কিন্তু কোনো সরকার এতে আগ্রহ দেখায়নি। এছাড়া বিভাগ ও অন্য জেলাগুলোতে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করলে মানুষ আপনাআপনিই ঢাকা থেকে স্থানান্তরিত হবে। এতে এ নগরী ধীরে ধীরে বাসযোগ্যতা ফিরে পাবে।

ঢাকা মহানগরী ৬০ বছর আগেও ছিল সবুজ সমৃদ্ধ এক জনপদ। সে নগরী ক্রমেই ইট-কংক্রিটের স্তূপে পরিণত হচ্ছে। বিশ্বের অন্যতম নোংরা নগরী হিসাবে ঢাকার পরিচিতি কিছুতেই হটানো যাচ্ছে না। একসময় ঢাকায় ‘রাতে মশা দিনে মাছি, এই নিয়ে ঢাকায় আছি’ কথাটি প্রবাদবাক্য হয়ে উঠেছিল। রাজধানীতে মাছির উপদ্রব কমলেও মশার উপদ্রব সেই সাত দশক আগের মতোই প্রকট। ঢাকা বিশ্বের শীর্ষ যানজটের নগরীগুলোর একটি। ফুটপাতেও নেই হাঁটার পরিবেশ। দূষণ ও অস্বস্তিকর জীবনের কারণে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়ছে। বসবাসের অযোগ্য নগরী, ইট-কংক্রিটের বস্তি ইত্যাদি নানা অভিধা সত্ত্বেও ঢাকার জনসংখ্যা হুহু করে বাড়ছে। কিছুতেই ঠেকানো যাচ্ছে না ঢাকামুখী জনস্রোত। বসবাসের অযোগ্য নগরী হওয়া সত্ত্বেও মানুষ ঢাকামুখী হচ্ছে পেটের দায়ে। কর্মসংস্থানের সিংহভাগ সুযোগ ঢাকায় হওয়ায় বাধ্য হয়ে আসছে তারা। এ প্রবণতা ঠেকাতে রাজধানীর বাইরে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে। শিল্পকারখানা স্থাপন করতে হবে দেশের প্রতিটি প্রান্তে। ছোট শহরগুলোতেও নাগরিক সুবিধা সৃষ্টি করতে হবে।

আসলে পরিকল্পিত নগর বলতে বোঝায় একটি পরিকল্পিত জনবসতি, যার সবকিছু হবে পরিকল্পনা অনুযায়ী। পরিকল্পনা না থাকলে কিছু করা সম্ভব হবে না। রাজধানীতে প্রচুর গাছ লাগাতে হবে। বিল্ডিং নির্মাণ করতে হবে অবশ্যই রাজউকের নকশা অনুসারে। ভবনের পাশে খালি স্থান না রেখে ইচ্ছামতো ভবন নির্মাণ করা যাবে না। এজন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। শুধু ঢাকা নয়, দেশের অন্যান্য শহরকেও পরিকল্পনামাফিক গড়ে তুলতে হবে। সুষম উন্নয়ন করতে হবে গ্রামেও। শহরের ওপর জনসংখ্যার চাপ কমাতে এর কোনো বিকল্প নেই।

[লেখক : সাবেক চেয়ারম্যান, রাজউক]

বিয়ের কিছু লোকাচার ও অপব্যয় প্রসঙ্গে

ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পকে রক্ষা করুন

তরুণদের দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি সম্ভব

শিশুমৃত্যু রোধে করণীয় কী

সিগমুন্ড ফ্রয়েড ও মনঃসমীক্ষণ

ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ও বাস্তবতা

স্বামী কিংবা স্ত্রীর পরবর্তী বিয়ের আইনি প্রতিকার ও বাস্তবতা

তথ্য-উপাত্তের গরমিলে বাজারে অস্থিরতা, অর্থনীতিতে বিভ্রান্তি

দেশে অফশোর ব্যাংকিংয়ের গুরুত্ব

ইরানে কট্টরপন্থার সাময়িক পরাজয়

পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থার ভবিষ্যৎ কী

ক্ষমতার সাতকাহন

জলবায়ু সংকট : আমাদের উপলব্ধি

নারী-পুরুষ চুড়ি পরি, দেশের অন্যায় দূর করি!

ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার সবার

ছবি

সাধারণ মানুষেরা বড় অসাধারণ

চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ও কারিগরি শিক্ষা

মাদক রুখতে গড়ে তুলতে হবে সামাজিক প্রতিরোধ

পারিবারিক অপরাধপ্রবণতা ও কয়েকটি প্রশ্ন

ডারউইনকে খুঁজে পেয়েছি

চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ফসল উৎপাদন করা জরুরি

পিএসসি প্রশ্নফাঁসের দায় এড়াবে কীভাবে

এত উন্নয়নের পরও বাসযোগ্যতায় কেন পিছিয়েই থাকছে ঢাকা

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য কি কেউ নেই?

জলবায়ু রক্ষায় কাজের কাজ কি কিছু হচ্ছে

অধরার হাতে সমর্পিত ক্ষমতা

প্রসঙ্গ : কোটাবিরোধী আন্দোলন

রম্যগদ্য : যে করিবে চালাকি, বুঝিবে তার জ্বালা কী

একটি মিথ্যা ধর্ষণ মামলার পরিণতি

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা কেন শ্রেণীকক্ষের বাইরে

মেধা নিয়ে কম মেধাবীর ভাবনা

প্রজাতন্ত্রের সেবক কেন ফ্রাঙ্কেনস্টাইন বনে যান

ছবি

বাইডেন কি দলে বোঝা হয়ে যাচ্ছেন?

ছবি

দুই যুগের পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

সাপ উপকারী প্রাণীও বটে!

ছবি

বাস্তববাদী রাজনীতিক জ্যোতি বসু

tab

উপ-সম্পাদকীয়

রাজধানীকে বসবাসযোগ্য করুন

আর কে চৌধুরী

মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪

রাজধানী ঢাকা ক্রমেই বসবাসযোগ্যতা হারাচ্ছে। দেশের প্রধানতম অর্থনৈতিক কেন্দ্র হওয়ায় বাড়ছে ঢাকামুখী মানুষের স্রোত। সেই সঙ্গে কমছে স্বাচ্ছন্দে ও সুস্থভাবে বেঁচে থাকার উপযোগী নাগরিক সুযোগ-সুবিধা। বায়ুদূষণের দিক থেকেও বিশ্বে ঢাকার অবস্থান কখনো প্রথম, কখনো দ্বিতীয়।

সামাজিক অস্থিতিশীলতা ও অপরাধের মাত্রা দিন দিনই বাড়ছে। যানজটে নাকাল হতে হয়। একটু বেশি বৃষ্টি হলেই নগরীর অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। সংস্কৃতিচর্চা ও বিনোদনের সুযোগ দিন দিনই কমছে। এমন পরিস্থিতিতে বসবাসযোগ্যতার দিক থেকে ঢাকার অবনমন ঘটাই স্বাভাবিক।

ঢাকার এমন অবস্থার জন্য দায়ী মূলত অপরিকল্পিত নগরায়ণ। রাজউক বা আবাসন সংস্থাগুলোর অল্প কিছু উদ্যোগ ছাড়া কোথাও পরিকল্পনার ছোঁয়া নেই। অথচ প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ঘরবাড়ি হচ্ছে, কিন্তু প্রয়োজনীয় রাস্তা থাকছে না।

পার্ক, খেলার মাঠ বা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হচ্ছে না। ঢাকায় এমন অনেক এলাকা আছে, যেখানে একটি রিকশা ঢোকাতেও কষ্ট হয়, ফায়ার ব্রিগেডের গাড়ি বা অ্যাম্বুলেন্স ঢোকার তো প্রশ্নই ওঠে না। যততত্র ময়লা-আবর্জনার স্তূপ জমে থাকে। ঢাকার বেশির ভাগ খাল দখল ও ভরাট হয়ে গেছে। অবশিষ্ট যেটুকু আছে, তা-ও ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।

বায়ুদূষণের মাত্রা এত বেশি যে দম বন্ধ হয়ে আসতে চায়। শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদরোগ, ক্যান্সারসহ প্রাণঘাতী বিভিন্ন রোগ দ্রুত বাড়ছে। অর্থাৎ সব দিক থেকেই ঢাকার বসবাসযোগ্যতা ক্রমেই কমছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের ইকোনমিস্ট গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ইকোনমিস্ট ইমপ্যাক্ট সম্প্রতি রেজিল্যান্ট সিটিস ইনডেক্স নামে বিশ্বের ২৫টি শহরের যে তালিকা প্রকাশ করেছে, তাতে ঢাকার অবস্থান ২৪তম। ঢাকার নিচে থাকা একমাত্র শহরটি নাইজেরিয়ার ল্যাগোস।

এই তালিকা তৈরিতে একটি শহরের গণপরিবহনের অবস্থা, বায়ুদূষণ, জনসংখ্যার ঘনত্ব, বিদ্যুৎ সুবিধা, দ্রুত নাগরিক পরিষেবা প্রদানের সক্ষমতা, সাইবার নিরাপত্তা, ভবন নির্মাণে জলবায়ু সহনশীলতা, তাপ সহনশীলতা, শিক্ষিত জনগোষ্ঠী, সাংস্কৃতিক সুযোগ ইত্যাদি বিবেচনা করা হয়।

অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে ঢাকা মহানগরীতে সবুজের ভাগ দ্রুত কমছে। ২০২৩ সালের জুন মাসে প্রকাশিত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২৮ বছরে রাজধানী ঢাকার সবুজ এলাকা ২২ থেকে কমে ৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অথচ নগর পরিকল্পনার মানদ- অনুযায়ী, একটি আদর্শ শহরে ২৫ শতাংশ সবুজ এলাকা থাকা প্রয়োজন। অন্যদিকে একটি নগরের মোট আয়তনের ২৫ শতাংশ জায়গা রাস্তার জন্য থাকা প্রয়োজন হলেও ঢাকায় আছে মাত্র ৫.১৫ শতাংশ। ঢাকা মহানগরে জনসংখ্যার অনুপাতে স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, খেলার মাঠ, উদ্যান-পার্কও অনেক কম।

নাগরিকদের জীবনমান উন্নয়নের দায়িত্ব রাষ্ট্রকেই নিতে হবে। পরিকল্পিত নগরায়ণ এবং নাগরিক সুবিধা সৃষ্টির মাধ্যমে ঢাকার বসবাসযোগ্যতা বাড়াতে হবে।

বিশ্বের যেসব মহানগরীর জনসংখ্যা দ্রুত বাড়ছে ঢাকা তার একটি। প্রতিদিন ঢাকার বাসিন্দা হিসেবে যোগ হচ্ছে ১ হাজার ৭০০ জন। প্রতি মাসে ঢাকার জনসংখ্যা বাড়ছে ৫১ হাজার, বছরে ৬ লাখেরও বেশি। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রাজধানীতে প্রতি একরে ৭০০ থেকে ৮০০ মানুষের বসবাস। কিন্তু এ নগরীর চারটি এলাকা বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ। এ চারটি এলাকা হচ্ছেÑ লালবাগ, বংশাল, গেন্ডারিয়া ও সবুজবাগ। এসব এলাকায় প্রতি একরে বাস করে প্রায় ৮০০ মানুষ। মেগাসিটির মানদ- অনুযায়ী প্রতি একর আয়তনে জনসংখ্যা থাকার কথা ১২০।

বিশ্লেষকদের মতে, সব ধরনের সেবা রাজধানীকেন্দ্রিক হওয়ায় মানুষ ভিড় জমাচ্ছে ঢাকায়। সরকারি অফিস-আদালত, সেরা বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যাংকের হেড অফিস, ভারি ও মাঝারি শিল্প-কারখানাসহ বিভিন্ন ধরনের সেবা কেন্দ্রীভূত হওয়ায় মানুষের সামনে কোনো বিকল্প পথ নেই। এছাড়া অনেক শিল্প-কলকারখানা রাজধানী এবং এর আশপাশে হওয়ায় বিশাল জনগোষ্ঠীর বাস রাজধানী ও সংলগ্ন এলাকায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, হাইকোর্ট, আবহাওয়া অধিদপ্তর, বন ভবন, খাদ্য ভবন, পানি ভবনসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় সহজেই স্থানান্তর বা বিকেন্দ্রীকরণ করা যায়। কিন্তু কোনো সরকার এতে আগ্রহ দেখায়নি। এছাড়া বিভাগ ও অন্য জেলাগুলোতে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করলে মানুষ আপনাআপনিই ঢাকা থেকে স্থানান্তরিত হবে। এতে এ নগরী ধীরে ধীরে বাসযোগ্যতা ফিরে পাবে।

ঢাকা মহানগরী ৬০ বছর আগেও ছিল সবুজ সমৃদ্ধ এক জনপদ। সে নগরী ক্রমেই ইট-কংক্রিটের স্তূপে পরিণত হচ্ছে। বিশ্বের অন্যতম নোংরা নগরী হিসাবে ঢাকার পরিচিতি কিছুতেই হটানো যাচ্ছে না। একসময় ঢাকায় ‘রাতে মশা দিনে মাছি, এই নিয়ে ঢাকায় আছি’ কথাটি প্রবাদবাক্য হয়ে উঠেছিল। রাজধানীতে মাছির উপদ্রব কমলেও মশার উপদ্রব সেই সাত দশক আগের মতোই প্রকট। ঢাকা বিশ্বের শীর্ষ যানজটের নগরীগুলোর একটি। ফুটপাতেও নেই হাঁটার পরিবেশ। দূষণ ও অস্বস্তিকর জীবনের কারণে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়ছে। বসবাসের অযোগ্য নগরী, ইট-কংক্রিটের বস্তি ইত্যাদি নানা অভিধা সত্ত্বেও ঢাকার জনসংখ্যা হুহু করে বাড়ছে। কিছুতেই ঠেকানো যাচ্ছে না ঢাকামুখী জনস্রোত। বসবাসের অযোগ্য নগরী হওয়া সত্ত্বেও মানুষ ঢাকামুখী হচ্ছে পেটের দায়ে। কর্মসংস্থানের সিংহভাগ সুযোগ ঢাকায় হওয়ায় বাধ্য হয়ে আসছে তারা। এ প্রবণতা ঠেকাতে রাজধানীর বাইরে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে। শিল্পকারখানা স্থাপন করতে হবে দেশের প্রতিটি প্রান্তে। ছোট শহরগুলোতেও নাগরিক সুবিধা সৃষ্টি করতে হবে।

আসলে পরিকল্পিত নগর বলতে বোঝায় একটি পরিকল্পিত জনবসতি, যার সবকিছু হবে পরিকল্পনা অনুযায়ী। পরিকল্পনা না থাকলে কিছু করা সম্ভব হবে না। রাজধানীতে প্রচুর গাছ লাগাতে হবে। বিল্ডিং নির্মাণ করতে হবে অবশ্যই রাজউকের নকশা অনুসারে। ভবনের পাশে খালি স্থান না রেখে ইচ্ছামতো ভবন নির্মাণ করা যাবে না। এজন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। শুধু ঢাকা নয়, দেশের অন্যান্য শহরকেও পরিকল্পনামাফিক গড়ে তুলতে হবে। সুষম উন্নয়ন করতে হবে গ্রামেও। শহরের ওপর জনসংখ্যার চাপ কমাতে এর কোনো বিকল্প নেই।

[লেখক : সাবেক চেয়ারম্যান, রাজউক]

back to top