alt

উপ-সম্পাদকীয়

জনসেবায় পেশাদারিত্ব

ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ

: শনিবার, ১৮ মে ২০২৪

ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশরা আমলাতন্ত্রের জন্ম দিয়েছিলেন কোন মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে নয়। তারা চেয়েছিল উপমহাদেশে এমন এক এলিট শ্রেণী তৈরি করতে যারা দেখতে ভারতীয় কিন্তু মগজে ব্রিটিশ। মূলত ব্রিটিশদের শাসন, শোষণ ও স্বার্থ রক্ষা করা ছিল তাদের দায়িত্ব। তাদের সেভাবেই ট্রেনিং দিয়ে গড়ে তোলার চেষ্টা করা হতো। দুইশ বছরের ব্রিটিশ শাসনের শেষ একশ বছরে ইংরেজদের মানুষ প্রচ- ঘৃণা করতে শুরু করে। তাই তাদের দিয়েই ট্যাক্স তোলা সহজ হতো। ফলে প্রশাসনের বড় পদগুলো যেমন সচিব-অতিরিক্ত সচিব-যুগ্ম সচিব লেভেলের পদগুলোতে ইংরেজরা নিজেরাই কাজ করতো আর ছোট পদগুলোতে ছিল ভারতীয় চেহারার ব্রিটিশ মগজের অফিসারগুলো। এসব ভারতীয় আমলারাই মাঠ প্রশাসনে কাজ করত।

ব্রিটিশরা আমলাতন্ত্র যত আইন-কানুন নিয়ম-নীতি তৈরি করেছে, তার প্রায় সবই সাধারণ জনগণের স্বার্থের বিপক্ষে। শিক্ষিত ও সচেতন মানুষ অবাক হয়ে দেখলো, সদ্য ব্রিটিশ শাসন মুক্ত হওয়া পাকিস্তানও ব্রিটিশ আমলাদের তৈরি আইন-কানুন নিয়ম-নীতির তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন করেনি। দমনমূলক আইন বা কালাকানুনগুলো তেমন পরিবর্তন ঘটেনি। মানুষ তাই শত বছরের পুরনো এ আমলাতন্ত্রের ওপর আস্থা হারিয়েছে।

আধুনিককালে সিভিল সার্ভেন্টদের দ্বারা পরিচালিত প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে আমলাতন্ত্র বলে। আমলাতন্ত্রে পেশাদারিত্বের প্রতি জোর দেয়া হয়ে থাকে। আমাদের আমলাতন্ত্র কতটা সবল পেশাদারিত্বের ওপর প্রতিষ্ঠিত তা একবার আমাদের নীতি-নির্ধারক মহল ভেবে দেখেছেন কি? আধুনিক রাষ্ট্র বিজ্ঞানীদের মতে অনিয়ন্ত্রিত আমলাতন্ত্রে আধুনিকতার অনেক ফাটল বা ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়। যেমন আমলারা নিজেদের পদমর্যাদার ব্যাপারে অতিমাত্রায় সচেতন থেকে নিজেদের প্রভু, ক্ষমতাবান হিসেবে দাবি করে থাকেন। নাগরিকদের প্রতি উদাসীনতা ও উষ্মা প্রদর্শন করে থাকে। এছাড়া বর্তমানকালের আমলাদের মানসিকতায় আরও যা যা পরিলক্ষিত হয় তা হচ্ছেÑ সৃজনশীলতার অভাব, দৃষ্টিভঙ্গিগত সমস্যা, জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা, বেদবাক্য হিসেবে গ্রহণ, জবাবদিহিতার অনুপস্থিতি, লাল ফিতার দৌরাত্ম্য, আনুষ্ঠানিকতার বাড়াবাড়ি, দায়িত্ব এড়ানোর প্রবণতা, ক্ষমতা লিপ্সা, জনগণের আশাআকাক্সক্ষার প্রতি নির্লিপ্ততা, অভিভাবকসুলভ আচরণ, নিরপেক্ষহীনতা, জনগণের প্রতি অসহযোগিতা, রাজনৈতিক উন্নয়ন ও বিকাশে আমলাগণের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি এবং কখনো কখনো উস্কানিমূলক ভূমিকার কারণে আধুনিক সেবা প্রদান থেকে আমলারা দূরে সরে যাচ্ছেন বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।

সরকারের উদ্দেশ্য হবে আমলাদের মাধ্যমে ব্যাপক জনগণের উন্নয়ন ও কল্যাণ সাধন করা; কিন্তু সমস্যা হলো, সরকারি কর্মচারীরা জনগণের নাম ভাঙিয়ে বিশেষ গোষ্ঠী, শ্রেণী বা বিশেষ ধরনের তল্পিবাহকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য বিশেষভাবে মনোযোগী হতে হয়; যা ঔপনিবেশিক আমলের রীতি-নীতির নামান্তর। ঔপনিবেশিক আমলে আমলাগণকে সেবকের পরিবর্তে শাসন পরিচালনার অন্যতম হাতিয়ারে পরিণত করে তাদের মগজকে ধোলাই করা হতো। অর্থাৎ এমন বিশেষ প্রশিক্ষণ ও সংস্কৃতিতে আবদ্ধ করা হতো, যার ফলে আমলারা শুধুই তল্পিবাহক, পোষা প্রাণী, তোষামোদী বাহক ও এজেন্ট হিসেবে ব্যবহৃত হতো। আমাদের বর্তমান সরকারি চাকরিজীবীরা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অভ্যস্ত হয়ে খাপ খাওয়াতে কি চেষ্টা করেন বা পরিস্থিতির সাথে তাল মিলাতে ইচ্ছা প্রকাশ করেন। করতে চাইলেও কোথা থেকে যেন মানসিক প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়ে থাকে। বর্তমানে দলীয় রাজনীতির প্রভাবে প্রকাশ্যে অনিয়ম ও শৃঙ্খলাকে প্রশ্রয় দিতে সরকারি কর্মচারীরা উৎসাহবোধ করছেন। এছাড়া সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণের মধ্যে সাম্প্রতিককালে একটি প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে, যা সরকারি কর্মচারী সমাজের ঐক্য, পারস্পরিক আস্থা, সহমর্মিতা ও মর্যাদাবোধকে ক্ষতœ করছে। যেমন আজকাল কোনো কোনো কর্মকর্তা ও কর্মচারী অতি উৎসাহী হয়ে আচরণগত সমস্যার কারণে একে অন্যকে দোষারোপ করা, নিজেদের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি করা, কুৎসা, মিথ্যাচার রটানো, অযথা খোঁচা দিয়ে একটু বিষোদগার করা। এ যেন একটা নিয়মের বিষয় হিসেবে পরিণত হয়ে গেছে। এই জাতীয় প্রবণতার মাধ্যমে সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে অনৈক্য, ভুল বোঝাবুঝি এবং দূরত্ব সৃষ্টি হয়; যা জাতীয় ঐক্য সংহতিকে বিনষ্ট করতে পারে।

সরকারের প্রশাসনিক কাজকর্ম সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্তৃক পরিচালিত হয়ে থাকে। সরকারি কর্মচারীদের প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে সরকারের ভাবমূর্তি অক্ষত রেখে সাধারণ মানুষের সেবা করা। সরকারি কর্মচারীদের সেবক-সেবিকার মনোবৃত্তিতে জনগণ ও জাতিকে সেবা দেয়া আজ জনগণের অপরিহার্য দাবি। যে কয়েকটি বিষয়কে মাথায় রেখে দায়িত্ব পালন করতে হয় তা আজ সবারই জানা; কিন্তু এসব বিষয়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কতটা অঙ্গীকারবদ্ধ তা আজ প্রশ্নবিদ্ধ। আজকের এই লেখার শুরুতে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর ইঙ্গিত ও আলোকপাত করতে চাই। প্রথমেই যে জিনিসটির প্রতি আমাদের গুরুত্ব দেয়া উচিত, তা হচ্ছে অফিসের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা। এই নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার বিষয়ে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সর্বোচ্চ সতর্কতা ও সচেতনতা আবশ্যক; কিন্তু যদি অফিসের নথি হারিয়ে যায়, তাহলে অফিসের নিরাপত্তার মান কতটুকু অটুট বা সাবলীল থাকে তা আমাদের ভাবায়।

আজকাল মাঝে-মধ্যেই বিভিন্ন অফিস থেকে বিভিন্নসংখ্যক ফাইল গায়েব হয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া যায়। এগুলোতে কতটা প্রশাসনিক শৃঙ্খলা বজায় আছে তা আমাদের যথার্থই আতঙ্কিত করে তুলছে। সাধারণ জনগণ প্রশাসনের উঁচুস্তর বা গুরুতপূর্ণ পদধারী ব্যক্তিদের কাছ থেকে কতটা কল্যাণমুখী সেবা পাচ্ছেনÑ সেটা আমাদের খতিয়ে দেখার সময় এসেছে। শোনা যাচ্ছে যে, এসব পদধারী চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত কর্তাব্যক্তিরা ব্যক্তি বিশেষ ও স্বার্থান্বেষী মানুষের বিভিন্ন চাপ সৃষ্টির মুখে বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী ও প্রভাবশালীদের ব্যবহৃত মেশিনে পরিণত হয়ে থাকে। আমাদের সমাজে বিভিন্ন প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান বা বিভিন্ন সেক্টরের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন ব্যক্তিরা সাধারণ জনগণকে কোনরকম পাত্তাই দিতে চান না। তারা সাধারণ জনগণের ধরাছোঁয়ার বাইরে আড়ালে আবডালে থেকে নিজেদের স্বার্থ সংরক্ষণের দিকেই মনোযোগ দিয়ে থাকেন। কেউ কেউ চাপ সৃষ্টিকারী মহল বা স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর সুযোগ সুবিধা প্রদানের দিকে নজর দিয়ে থাকেন। এর মাধ্যমে অনেকের ব্যক্তি স্বার্থই চরিতার্থতা লাভ করে থাকে। এদের মধ্যে একটা শ্রেণী আছে যারা কোন কিছুতে জড়িত না হয়ে কোনরকম সময় কাটাতে পারলেই স্বস্তি অনুভব করেন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিস্থিতি ও চিত্রটি কেমন সেদিকে নজর দেয়া হলো। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ পরিস্থিতি ভালো নয়, নিম্নমুখী। এ আলোচনায় কিছু নেতিবাচক চিত্র ও অভিজ্ঞতার কথা এখানে সংযোজিত হলো। বর্ণিত বিষয়ে কিছু চেনা মুখকে এনে প্রশাসনকে বিকারগ্রস্ত করা হচ্ছে। অযোগ্য লোককে জায়গা করে দিয়ে তার দাপট বাড়ানো হচ্ছে। দক্ষতা ও যোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে, সর্বোপরি আস্থা ও নির্ভরশীলতাকে নষ্ট করে দিয়ে ত্রাসের পরিবেশে সৃজনশীলতাকে ধ্বংস করা হচ্ছে, আর অনিয়ম ও দুর্নীতিকে প্রশয় দেয়া হচ্ছে। বিভিন্ন সরকারের অধীনে বিভিন্ন সচিবের বা বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তাদের নিয়োগ ও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের একটি প্রসঙ্গ এখানে খানিকটা তুলে ধরা হলো। পর্যবেক্ষক মহলের দাবি, সরকারের তোষণ নীতি ও ধামাধরা এক শ্রেণীর সচিব ও কর্মকর্তা দফায় দফায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ ও পুনঃনিয়োগ পাচ্ছেন। সেই সচিব-বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তারা সরকারি ও জনস্বার্থ বিষয়ে কতটা বিশেষজ্ঞ সেটা কিন্তু সাধারণ জনগণের অগোচরেই থাকছে এবং চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত সেই সচিবরা কি ইতিবাচক ভূমিকা রাখছেন সে প্রশ্ন জনগণের।

তবে দফায় দফায় এ ধরনের নিয়োগ যে উদ্দেশ্যমূলক সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। দফায় দফায় এহেন নিয়োগের মাধ্যমে একজন অযোগ্য ও অদক্ষ লোককে ক্ষমতায়ন ও পদায়ন করে কোন বিশেষ সেক্টরের কি বিশেষ উন্নয়ন ঘটাবেন তা কিন্তু পরিষ্কার নয়। যোগ্যতা ও দক্ষতা নির্বিশেষে ব্যক্তি বিশেষের পছন্দ অপছন্দকে প্রাধান্য দিয়ে প্রাতিষ্ঠানিকতাকে নষ্ট করার মধ্যে কোন বাহাদুরি বা কৃতিত্ব নেই। পরোক্ষভাবে স্বার্থপর ও সুবিধাভোগী কর্মকর্তাদের জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন নিয়োগ ও পূর্ণ নিয়োগের মাধ্যমে বিগত দিনে অনেক অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রশ্রয় দেয়া হয়েছে। এতে সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নষ্ট হয়েছে। এমনকি বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির কথা মিডিয়াতে এসেছে এবং অনেক ক্ষেত্রে মিডিয়ার মুখও বন্ধ রাখা হয়েছে।

বর্তমান সরকারের প্রণীত জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলপত্র একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। দুর্নীতি দমন ও শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো- ‘উন্নয়ন কর্মকা-’। উন্নয়ন কর্মকা- বেশি হওয়া মানে বেশি অর্থের লেনদেন। যেখানে যত বেশি টাকা পয়সা খরচ হয়, সেখানে দুর্নীতির সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। সেজন্য উন্নয়নের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় অগ্রসরমান বাংলাদেশের জন্য এ মুহূর্তে অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হলো দুর্নীতি। সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সরকারের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে গত এক যুগে প্রণয়ন করা হয়েছে বিভিন্ন আইনকানুন, নিয়মনীতি, পরিকল্পনা এবং কৌশল। সেগুলো বাস্তবায়নও অব্যাহত আছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর পদ্ধতিগত সংস্কার, তাদের কৃত্য, কৃতী ও দক্ষতার উন্নয়ন এবং সর্বোপরি একটি সমন্বিত ও সংঘবদ্ধ উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে শুদ্ধাচারকে একটি আন্দোলন হিসেবে গড়ে তোলার রূপরেখা প্রণয়ন করা হয়েছে।

কিন্তু তারপরও কি থেমে আছে দুর্নীতি? আইন প্রয়োগ করে দুর্নীতি বিস্তৃতির রাশ কিছুটা টেনে ধরা গেলেও সামগ্রিকভাবে দুর্নীতিকে রুখে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দুর্নীতি বন্ধ হওয়া দরকার। দরকার মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের লাগাম টেনে ধরা। কারণ, প্রশাসনিক ক্ষমতার ছত্রছায়ায় এবং কিছু ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে দুর্নীতিবাজরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ক্ষমতার প্রভাব বন্ধ করতে হলে প্রশাসনের আমূল সংস্কার প্রয়োজন। সময়ের সাথে সাথে সবকিছুরই পরিবর্তন দরকার হয়। আমলাদের স্বার্থপরতা আর তোষণ নীতি সরকারের নির্বাহী বিভাগের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নষ্ট করছে। অধিকন্তু প্রশাসনিক ও নির্বাহী ক্ষমতার অপব্যবহার দুর্নীতির অন্যতম কারণ। তাই আসুন সবাই সরকারি-বেসরকারি দপ্তরে শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়ন করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাকে প্রতিষ্ঠিত করি।

আমাদের আমলাতন্ত্র কতটা সবল পেশাদারিত্বের ওপর প্রতিষ্ঠিত? প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা কতটা সেবক ও কতটা প্রভু? আমলানির্ভর সরকার রাষ্ট্রের উন্নয়নে কতটা সহায়ক বা প্রতিবন্ধক? এ প্রশ্নগুলো জনগণকে প্রতিনিয়ত তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। বিদ্যমান আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে আমলাতান্ত্রিক দৌরাত্ম্য অভিধায়ে আখ্যায়িত করা যায়। বিদ্যমান আমলাতন্ত্রে সামাজিক বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে। রাজনীতি ও আমলাতন্ত্রের ভারসাম্যহীনতায় জাতীয়রাষ্টের রাজনীতি কূণ্যতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। আমলাদের স্বার্থপরতা আর তোষণ নীতিতে সরকারের নির্বাহী বিভাগের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নষ্ট হচ্ছে। বিচার বিভাগের উপর প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের কারণে বিচার বিভাগ পর্যন্ত আজ প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। আমলারা সরকারের কাছ থেকে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নিয়ে রাষ্ট্র ও প্রশাসনকে অপব্যবহার করা হচ্ছে। অন্যদিকে মন্ত্রী এমপি পর্যন্ত প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছে অনেক সময় নতজানু নীতি অবলম্বন করে থাকে অথবা ভাগাভাগি চুক্তির মাধ্যমে সুবিধাভোগীর দায়িত্ব পালন করে থাকেন। এতে সাধারণ মানুষ আমলাদের দ্বারা বিভিন্নভাবে হয়রানি ও ভোগান্তির শিকারে পরিণত হন। সমাজ, দেশ ও রাষ্ট্রের স্বার্থে আমাদের আমলাতন্ত্রের আশু সংস্কারে মনোযোগ নিবদ্ধ হতে হবে।

[লেখক : সাবেক উপ-মহাপরিচালক, বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি]

বিয়ের কিছু লোকাচার ও অপব্যয় প্রসঙ্গে

ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পকে রক্ষা করুন

তরুণদের দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি সম্ভব

শিশুমৃত্যু রোধে করণীয় কী

সিগমুন্ড ফ্রয়েড ও মনঃসমীক্ষণ

ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ও বাস্তবতা

স্বামী কিংবা স্ত্রীর পরবর্তী বিয়ের আইনি প্রতিকার ও বাস্তবতা

তথ্য-উপাত্তের গরমিলে বাজারে অস্থিরতা, অর্থনীতিতে বিভ্রান্তি

দেশে অফশোর ব্যাংকিংয়ের গুরুত্ব

ইরানে কট্টরপন্থার সাময়িক পরাজয়

পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থার ভবিষ্যৎ কী

ক্ষমতার সাতকাহন

জলবায়ু সংকট : আমাদের উপলব্ধি

নারী-পুরুষ চুড়ি পরি, দেশের অন্যায় দূর করি!

ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার সবার

ছবি

সাধারণ মানুষেরা বড় অসাধারণ

চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ও কারিগরি শিক্ষা

মাদক রুখতে গড়ে তুলতে হবে সামাজিক প্রতিরোধ

পারিবারিক অপরাধপ্রবণতা ও কয়েকটি প্রশ্ন

ডারউইনকে খুঁজে পেয়েছি

চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ফসল উৎপাদন করা জরুরি

পিএসসি প্রশ্নফাঁসের দায় এড়াবে কীভাবে

এত উন্নয়নের পরও বাসযোগ্যতায় কেন পিছিয়েই থাকছে ঢাকা

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য কি কেউ নেই?

জলবায়ু রক্ষায় কাজের কাজ কি কিছু হচ্ছে

অধরার হাতে সমর্পিত ক্ষমতা

প্রসঙ্গ : কোটাবিরোধী আন্দোলন

রম্যগদ্য : যে করিবে চালাকি, বুঝিবে তার জ্বালা কী

একটি মিথ্যা ধর্ষণ মামলার পরিণতি

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা কেন শ্রেণীকক্ষের বাইরে

মেধা নিয়ে কম মেধাবীর ভাবনা

প্রজাতন্ত্রের সেবক কেন ফ্রাঙ্কেনস্টাইন বনে যান

ছবি

বাইডেন কি দলে বোঝা হয়ে যাচ্ছেন?

ছবি

দুই যুগের পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

সাপ উপকারী প্রাণীও বটে!

ছবি

বাস্তববাদী রাজনীতিক জ্যোতি বসু

tab

উপ-সম্পাদকীয়

জনসেবায় পেশাদারিত্ব

ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ

শনিবার, ১৮ মে ২০২৪

ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশরা আমলাতন্ত্রের জন্ম দিয়েছিলেন কোন মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে নয়। তারা চেয়েছিল উপমহাদেশে এমন এক এলিট শ্রেণী তৈরি করতে যারা দেখতে ভারতীয় কিন্তু মগজে ব্রিটিশ। মূলত ব্রিটিশদের শাসন, শোষণ ও স্বার্থ রক্ষা করা ছিল তাদের দায়িত্ব। তাদের সেভাবেই ট্রেনিং দিয়ে গড়ে তোলার চেষ্টা করা হতো। দুইশ বছরের ব্রিটিশ শাসনের শেষ একশ বছরে ইংরেজদের মানুষ প্রচ- ঘৃণা করতে শুরু করে। তাই তাদের দিয়েই ট্যাক্স তোলা সহজ হতো। ফলে প্রশাসনের বড় পদগুলো যেমন সচিব-অতিরিক্ত সচিব-যুগ্ম সচিব লেভেলের পদগুলোতে ইংরেজরা নিজেরাই কাজ করতো আর ছোট পদগুলোতে ছিল ভারতীয় চেহারার ব্রিটিশ মগজের অফিসারগুলো। এসব ভারতীয় আমলারাই মাঠ প্রশাসনে কাজ করত।

ব্রিটিশরা আমলাতন্ত্র যত আইন-কানুন নিয়ম-নীতি তৈরি করেছে, তার প্রায় সবই সাধারণ জনগণের স্বার্থের বিপক্ষে। শিক্ষিত ও সচেতন মানুষ অবাক হয়ে দেখলো, সদ্য ব্রিটিশ শাসন মুক্ত হওয়া পাকিস্তানও ব্রিটিশ আমলাদের তৈরি আইন-কানুন নিয়ম-নীতির তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন করেনি। দমনমূলক আইন বা কালাকানুনগুলো তেমন পরিবর্তন ঘটেনি। মানুষ তাই শত বছরের পুরনো এ আমলাতন্ত্রের ওপর আস্থা হারিয়েছে।

আধুনিককালে সিভিল সার্ভেন্টদের দ্বারা পরিচালিত প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে আমলাতন্ত্র বলে। আমলাতন্ত্রে পেশাদারিত্বের প্রতি জোর দেয়া হয়ে থাকে। আমাদের আমলাতন্ত্র কতটা সবল পেশাদারিত্বের ওপর প্রতিষ্ঠিত তা একবার আমাদের নীতি-নির্ধারক মহল ভেবে দেখেছেন কি? আধুনিক রাষ্ট্র বিজ্ঞানীদের মতে অনিয়ন্ত্রিত আমলাতন্ত্রে আধুনিকতার অনেক ফাটল বা ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়। যেমন আমলারা নিজেদের পদমর্যাদার ব্যাপারে অতিমাত্রায় সচেতন থেকে নিজেদের প্রভু, ক্ষমতাবান হিসেবে দাবি করে থাকেন। নাগরিকদের প্রতি উদাসীনতা ও উষ্মা প্রদর্শন করে থাকে। এছাড়া বর্তমানকালের আমলাদের মানসিকতায় আরও যা যা পরিলক্ষিত হয় তা হচ্ছেÑ সৃজনশীলতার অভাব, দৃষ্টিভঙ্গিগত সমস্যা, জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা, বেদবাক্য হিসেবে গ্রহণ, জবাবদিহিতার অনুপস্থিতি, লাল ফিতার দৌরাত্ম্য, আনুষ্ঠানিকতার বাড়াবাড়ি, দায়িত্ব এড়ানোর প্রবণতা, ক্ষমতা লিপ্সা, জনগণের আশাআকাক্সক্ষার প্রতি নির্লিপ্ততা, অভিভাবকসুলভ আচরণ, নিরপেক্ষহীনতা, জনগণের প্রতি অসহযোগিতা, রাজনৈতিক উন্নয়ন ও বিকাশে আমলাগণের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি এবং কখনো কখনো উস্কানিমূলক ভূমিকার কারণে আধুনিক সেবা প্রদান থেকে আমলারা দূরে সরে যাচ্ছেন বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।

সরকারের উদ্দেশ্য হবে আমলাদের মাধ্যমে ব্যাপক জনগণের উন্নয়ন ও কল্যাণ সাধন করা; কিন্তু সমস্যা হলো, সরকারি কর্মচারীরা জনগণের নাম ভাঙিয়ে বিশেষ গোষ্ঠী, শ্রেণী বা বিশেষ ধরনের তল্পিবাহকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য বিশেষভাবে মনোযোগী হতে হয়; যা ঔপনিবেশিক আমলের রীতি-নীতির নামান্তর। ঔপনিবেশিক আমলে আমলাগণকে সেবকের পরিবর্তে শাসন পরিচালনার অন্যতম হাতিয়ারে পরিণত করে তাদের মগজকে ধোলাই করা হতো। অর্থাৎ এমন বিশেষ প্রশিক্ষণ ও সংস্কৃতিতে আবদ্ধ করা হতো, যার ফলে আমলারা শুধুই তল্পিবাহক, পোষা প্রাণী, তোষামোদী বাহক ও এজেন্ট হিসেবে ব্যবহৃত হতো। আমাদের বর্তমান সরকারি চাকরিজীবীরা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অভ্যস্ত হয়ে খাপ খাওয়াতে কি চেষ্টা করেন বা পরিস্থিতির সাথে তাল মিলাতে ইচ্ছা প্রকাশ করেন। করতে চাইলেও কোথা থেকে যেন মানসিক প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়ে থাকে। বর্তমানে দলীয় রাজনীতির প্রভাবে প্রকাশ্যে অনিয়ম ও শৃঙ্খলাকে প্রশ্রয় দিতে সরকারি কর্মচারীরা উৎসাহবোধ করছেন। এছাড়া সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণের মধ্যে সাম্প্রতিককালে একটি প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে, যা সরকারি কর্মচারী সমাজের ঐক্য, পারস্পরিক আস্থা, সহমর্মিতা ও মর্যাদাবোধকে ক্ষতœ করছে। যেমন আজকাল কোনো কোনো কর্মকর্তা ও কর্মচারী অতি উৎসাহী হয়ে আচরণগত সমস্যার কারণে একে অন্যকে দোষারোপ করা, নিজেদের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি করা, কুৎসা, মিথ্যাচার রটানো, অযথা খোঁচা দিয়ে একটু বিষোদগার করা। এ যেন একটা নিয়মের বিষয় হিসেবে পরিণত হয়ে গেছে। এই জাতীয় প্রবণতার মাধ্যমে সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে অনৈক্য, ভুল বোঝাবুঝি এবং দূরত্ব সৃষ্টি হয়; যা জাতীয় ঐক্য সংহতিকে বিনষ্ট করতে পারে।

সরকারের প্রশাসনিক কাজকর্ম সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্তৃক পরিচালিত হয়ে থাকে। সরকারি কর্মচারীদের প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে সরকারের ভাবমূর্তি অক্ষত রেখে সাধারণ মানুষের সেবা করা। সরকারি কর্মচারীদের সেবক-সেবিকার মনোবৃত্তিতে জনগণ ও জাতিকে সেবা দেয়া আজ জনগণের অপরিহার্য দাবি। যে কয়েকটি বিষয়কে মাথায় রেখে দায়িত্ব পালন করতে হয় তা আজ সবারই জানা; কিন্তু এসব বিষয়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কতটা অঙ্গীকারবদ্ধ তা আজ প্রশ্নবিদ্ধ। আজকের এই লেখার শুরুতে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর ইঙ্গিত ও আলোকপাত করতে চাই। প্রথমেই যে জিনিসটির প্রতি আমাদের গুরুত্ব দেয়া উচিত, তা হচ্ছে অফিসের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা। এই নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার বিষয়ে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সর্বোচ্চ সতর্কতা ও সচেতনতা আবশ্যক; কিন্তু যদি অফিসের নথি হারিয়ে যায়, তাহলে অফিসের নিরাপত্তার মান কতটুকু অটুট বা সাবলীল থাকে তা আমাদের ভাবায়।

আজকাল মাঝে-মধ্যেই বিভিন্ন অফিস থেকে বিভিন্নসংখ্যক ফাইল গায়েব হয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া যায়। এগুলোতে কতটা প্রশাসনিক শৃঙ্খলা বজায় আছে তা আমাদের যথার্থই আতঙ্কিত করে তুলছে। সাধারণ জনগণ প্রশাসনের উঁচুস্তর বা গুরুতপূর্ণ পদধারী ব্যক্তিদের কাছ থেকে কতটা কল্যাণমুখী সেবা পাচ্ছেনÑ সেটা আমাদের খতিয়ে দেখার সময় এসেছে। শোনা যাচ্ছে যে, এসব পদধারী চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত কর্তাব্যক্তিরা ব্যক্তি বিশেষ ও স্বার্থান্বেষী মানুষের বিভিন্ন চাপ সৃষ্টির মুখে বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী ও প্রভাবশালীদের ব্যবহৃত মেশিনে পরিণত হয়ে থাকে। আমাদের সমাজে বিভিন্ন প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান বা বিভিন্ন সেক্টরের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন ব্যক্তিরা সাধারণ জনগণকে কোনরকম পাত্তাই দিতে চান না। তারা সাধারণ জনগণের ধরাছোঁয়ার বাইরে আড়ালে আবডালে থেকে নিজেদের স্বার্থ সংরক্ষণের দিকেই মনোযোগ দিয়ে থাকেন। কেউ কেউ চাপ সৃষ্টিকারী মহল বা স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর সুযোগ সুবিধা প্রদানের দিকে নজর দিয়ে থাকেন। এর মাধ্যমে অনেকের ব্যক্তি স্বার্থই চরিতার্থতা লাভ করে থাকে। এদের মধ্যে একটা শ্রেণী আছে যারা কোন কিছুতে জড়িত না হয়ে কোনরকম সময় কাটাতে পারলেই স্বস্তি অনুভব করেন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিস্থিতি ও চিত্রটি কেমন সেদিকে নজর দেয়া হলো। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ পরিস্থিতি ভালো নয়, নিম্নমুখী। এ আলোচনায় কিছু নেতিবাচক চিত্র ও অভিজ্ঞতার কথা এখানে সংযোজিত হলো। বর্ণিত বিষয়ে কিছু চেনা মুখকে এনে প্রশাসনকে বিকারগ্রস্ত করা হচ্ছে। অযোগ্য লোককে জায়গা করে দিয়ে তার দাপট বাড়ানো হচ্ছে। দক্ষতা ও যোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে, সর্বোপরি আস্থা ও নির্ভরশীলতাকে নষ্ট করে দিয়ে ত্রাসের পরিবেশে সৃজনশীলতাকে ধ্বংস করা হচ্ছে, আর অনিয়ম ও দুর্নীতিকে প্রশয় দেয়া হচ্ছে। বিভিন্ন সরকারের অধীনে বিভিন্ন সচিবের বা বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তাদের নিয়োগ ও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের একটি প্রসঙ্গ এখানে খানিকটা তুলে ধরা হলো। পর্যবেক্ষক মহলের দাবি, সরকারের তোষণ নীতি ও ধামাধরা এক শ্রেণীর সচিব ও কর্মকর্তা দফায় দফায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ ও পুনঃনিয়োগ পাচ্ছেন। সেই সচিব-বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তারা সরকারি ও জনস্বার্থ বিষয়ে কতটা বিশেষজ্ঞ সেটা কিন্তু সাধারণ জনগণের অগোচরেই থাকছে এবং চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত সেই সচিবরা কি ইতিবাচক ভূমিকা রাখছেন সে প্রশ্ন জনগণের।

তবে দফায় দফায় এ ধরনের নিয়োগ যে উদ্দেশ্যমূলক সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। দফায় দফায় এহেন নিয়োগের মাধ্যমে একজন অযোগ্য ও অদক্ষ লোককে ক্ষমতায়ন ও পদায়ন করে কোন বিশেষ সেক্টরের কি বিশেষ উন্নয়ন ঘটাবেন তা কিন্তু পরিষ্কার নয়। যোগ্যতা ও দক্ষতা নির্বিশেষে ব্যক্তি বিশেষের পছন্দ অপছন্দকে প্রাধান্য দিয়ে প্রাতিষ্ঠানিকতাকে নষ্ট করার মধ্যে কোন বাহাদুরি বা কৃতিত্ব নেই। পরোক্ষভাবে স্বার্থপর ও সুবিধাভোগী কর্মকর্তাদের জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন নিয়োগ ও পূর্ণ নিয়োগের মাধ্যমে বিগত দিনে অনেক অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রশ্রয় দেয়া হয়েছে। এতে সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নষ্ট হয়েছে। এমনকি বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির কথা মিডিয়াতে এসেছে এবং অনেক ক্ষেত্রে মিডিয়ার মুখও বন্ধ রাখা হয়েছে।

বর্তমান সরকারের প্রণীত জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলপত্র একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। দুর্নীতি দমন ও শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো- ‘উন্নয়ন কর্মকা-’। উন্নয়ন কর্মকা- বেশি হওয়া মানে বেশি অর্থের লেনদেন। যেখানে যত বেশি টাকা পয়সা খরচ হয়, সেখানে দুর্নীতির সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। সেজন্য উন্নয়নের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় অগ্রসরমান বাংলাদেশের জন্য এ মুহূর্তে অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হলো দুর্নীতি। সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সরকারের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে গত এক যুগে প্রণয়ন করা হয়েছে বিভিন্ন আইনকানুন, নিয়মনীতি, পরিকল্পনা এবং কৌশল। সেগুলো বাস্তবায়নও অব্যাহত আছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর পদ্ধতিগত সংস্কার, তাদের কৃত্য, কৃতী ও দক্ষতার উন্নয়ন এবং সর্বোপরি একটি সমন্বিত ও সংঘবদ্ধ উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে শুদ্ধাচারকে একটি আন্দোলন হিসেবে গড়ে তোলার রূপরেখা প্রণয়ন করা হয়েছে।

কিন্তু তারপরও কি থেমে আছে দুর্নীতি? আইন প্রয়োগ করে দুর্নীতি বিস্তৃতির রাশ কিছুটা টেনে ধরা গেলেও সামগ্রিকভাবে দুর্নীতিকে রুখে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দুর্নীতি বন্ধ হওয়া দরকার। দরকার মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের লাগাম টেনে ধরা। কারণ, প্রশাসনিক ক্ষমতার ছত্রছায়ায় এবং কিছু ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে দুর্নীতিবাজরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ক্ষমতার প্রভাব বন্ধ করতে হলে প্রশাসনের আমূল সংস্কার প্রয়োজন। সময়ের সাথে সাথে সবকিছুরই পরিবর্তন দরকার হয়। আমলাদের স্বার্থপরতা আর তোষণ নীতি সরকারের নির্বাহী বিভাগের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নষ্ট করছে। অধিকন্তু প্রশাসনিক ও নির্বাহী ক্ষমতার অপব্যবহার দুর্নীতির অন্যতম কারণ। তাই আসুন সবাই সরকারি-বেসরকারি দপ্তরে শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়ন করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাকে প্রতিষ্ঠিত করি।

আমাদের আমলাতন্ত্র কতটা সবল পেশাদারিত্বের ওপর প্রতিষ্ঠিত? প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা কতটা সেবক ও কতটা প্রভু? আমলানির্ভর সরকার রাষ্ট্রের উন্নয়নে কতটা সহায়ক বা প্রতিবন্ধক? এ প্রশ্নগুলো জনগণকে প্রতিনিয়ত তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। বিদ্যমান আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে আমলাতান্ত্রিক দৌরাত্ম্য অভিধায়ে আখ্যায়িত করা যায়। বিদ্যমান আমলাতন্ত্রে সামাজিক বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে। রাজনীতি ও আমলাতন্ত্রের ভারসাম্যহীনতায় জাতীয়রাষ্টের রাজনীতি কূণ্যতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। আমলাদের স্বার্থপরতা আর তোষণ নীতিতে সরকারের নির্বাহী বিভাগের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নষ্ট হচ্ছে। বিচার বিভাগের উপর প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের কারণে বিচার বিভাগ পর্যন্ত আজ প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। আমলারা সরকারের কাছ থেকে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নিয়ে রাষ্ট্র ও প্রশাসনকে অপব্যবহার করা হচ্ছে। অন্যদিকে মন্ত্রী এমপি পর্যন্ত প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছে অনেক সময় নতজানু নীতি অবলম্বন করে থাকে অথবা ভাগাভাগি চুক্তির মাধ্যমে সুবিধাভোগীর দায়িত্ব পালন করে থাকেন। এতে সাধারণ মানুষ আমলাদের দ্বারা বিভিন্নভাবে হয়রানি ও ভোগান্তির শিকারে পরিণত হন। সমাজ, দেশ ও রাষ্ট্রের স্বার্থে আমাদের আমলাতন্ত্রের আশু সংস্কারে মনোযোগ নিবদ্ধ হতে হবে।

[লেখক : সাবেক উপ-মহাপরিচালক, বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি]

back to top