সাঈদ চৌধুরী
বেনজীর কোথায় আছে কেউ জানে না। বিষয়টি কেমন অবাক করার মতো! সাধারণ মানুষের অনুভূতির জায়গা প্রখর। একজন মানুষের এত টাকার বিপরীতে সাধারণ মানুষের করুণ দশাকে কে মেনে নিতে চায়। একদিকে মূল্যস্ফিতির চাপে মানুষ নাকাল অন্যদিকে চাহিদার তুলনায় আয়ের চরম ঘাটতি। সেখানে এমন দুর্নীতির খবর মানুষের মানসিক শান্তিকে কোথায় নিয়ে দাঁড় করায় তা কেবল অভাবী মানুষগুলোই জানে।
শনিবার থেকে তেলের নতুন বাড়তি দাম কার্যকর হয়েছে। একজন সাধারণ মানুষ বলছিলেন যে তেলের দাম না বাড়িয়ে বেনজীরের টাকা কেটে নিলেই তো হয়ে যায়! অতিরিক্ত দাম দিয়ে কোনো ব্যক্তি জিনিস কিনতে গিয়েও ভাবছে যে আহা কারও কারও কাছে টাকা কত সস্তা আর আমাদের ভাগ্য কেমন! যারা কষ্ট করে সৎ উপায়ে জীবন চালায় তাদের প্রত্যেকের টাকাই হয়ত ঢুকেছে এমন দুর্নীতিবাজদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে!
পুলিশের সাবেক এই আইজিপির টাকার উৎস কি? কিভাবে এত টাকা বানানো যায় এগুলো নিয়েও বিস্তর চিন্তা মানুষের মধ্যে। এর কারণওতো আছে। এত এত টাকা উপার্জনের পথ করতে গিয়ে দেশের স্বার্থ, মানুষের স্বার্থ কতবার লঙ্ঘিত হয়েছে কে জানে! কত মানুষের রক্তের বিপরীতে এ টাকা এসেছে তাই বা হিসেব করবে কে!
দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা মানুষ এ দেশে এখনও অনেক আছে। তার মধ্যেতো শিক্ষকরাই বেশি। শিক্ষকদের দেখেছি তারা ক্লাস রুমে পড়িয়ে যান সদা সত্য কথা বলবে, সৎ পথে চলবে। এখনও অনেক শিক্ষক আছেন এমন যারা সারা জীবন ধওে মানুষকে সৎ চিন্তা করতে শিখিয়ে গেছেন। গ্রামের মেঠো পথ ধরে হেঁটে গিয়ে শিক্ষকরা পড়িয়ে আসেন শিক্ষার্থীদের। শিক্ষার্থীরা কি শেখে তবে ? প্রতিদিন শপথ হয় বিদ্যালয়ে। শপথে দেশকে বাঁচানোর কথা আসে, নীতির মধ্যে থাকার কথা আসে, সেবার কথা আসে উঠে আসে মানুষকে নিরাপত্তা দেয়ার কথাও! বেনজির বা অন্যান্য দুর্নীতিবাজেরা এমন শপথ স্কুলে করেন নি ? একজন সৎ মানুষ এভাবেই বলছিলেন আর মাথা নাড়ছিলেন হতাশায়।
প্রশ্নগুলো আমাদেরও। আমরা আসলে কতটা মানুষের মধ্যে ঢুকতে পারছি, কত মানুষের মনকে বিশ্লেষন করতে পারছি। কতটা বা নিজেই মানুষ হতে পারছি ! সাথে সাথে যারা দুর্নীতি করে ধরা পড়ছে তাদেও শাস্তির ব্যপারেও অনেক মানুষের বিভিন্ন ধরনের মতামত আছে।
আজ যিনি অবসরপ্রাপ্ত তিনি বিচারের আওতায় এসেছেন। কিন্তু যারা একেবারে ক্ষমতায় আছেন তাদের দুর্নীতি কি চোখের সামনে আসছে? কেউ কি সাহস করে বলতে পারবে দুর্নীতির কথা যে কারও বিরুদ্ধে ? বললে কি আমলে নেয়া হবে না’কি তার পরিবারই নিরাপত্তাহীন হয়ে যাবে!
দুর্নীতি কমানোর জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেয়। তার মধ্যে অন্যতম স্কুলে স্কুলে সততা সংঘ গঠন করা, সততা স্টোর প্রতিষ্ঠা করা, শিশুদেও দুর্নীতি বন্ধে কাজ করতে উৎসাহিত করা। কিন্তু এতে করেও কি শিশুদের আমরা বোঝাতে পারছি দুর্নীতি করা যাবে না বা দুর্নীতিবাজকে ঘৃণা করতে হবে। বরং যখন তারা দেখে দুর্নীতি করেই সমাজে সম্মান, প্রতিপত্তি ও ক্ষমতা পাওয়া যায় তখন তাদের মনের ভেতর কি খেলা খেলে যায়! তারা কি তবে এগুলোকেই অনুসরণ করছে ? শিশুরা দেখে দেখে শেখে বলে শেখানোর মানুষটিকেও তারা অনুসরণ করে, পারিপার্শকে অনুসরণ করে।
শিশুদের যদি সত্যিই ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হয় তবে পারিবারিক বিষয়টিও অনেক অনেক গুরুত্বপূর্ণ। পরিবারগুলোওতো দেখি লোভে ভরা একেকটি দুর্নীতির খনি। উচ্চবিত্ত পরিবারগুলোর বেশিরভাগই সন্তানদের প্রথম থেকেই শিক্ষা দেয় সে কিভাবে পুঁজিবাদী হয়ে উঠবে, কিভাবে টাকা উপার্জন করবে। তারপর আর কোনো কথা নেই।
আমাদের মাথা পিছু আয় বেড়েছে। লাখ লাখ টাকা মাথাপিছু আয়ের দেশে একজন মানুষের সর্বনি¤œ আয় কত?
তীব্র গরমে রাস্তায় প্যাডেল মারা রিকশা চালকটির দিকে তাকানোর সময় নেই এসিতে চলা বেশিরভাগ মানুষের। কিন্তু দেখুন তার মাত্র শ’তিনেক টাকার সাথে মাথাপিছু আয়ের গড় হচ্ছে কোটি কোটি টাকা ইনকামের মানুষের। তা হতেই পারে ধরে নিলাম। কিন্তু কালো টাকা, দুর্নীতিবাজ কত জন আছে এদেশে তা বের করবে কারা?
বেসরকারি চাকরি করা একজন মানুষকে কর দিতে হয় প্রতি মাসে নির্দিষ্ট আয়ের বিপরীতে আর সেখানে বেনজিরের মত মানুষেরা? সাধারণ মানুষ অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলে আর ভালো লাগেনা, আর পেরেও উঠিনা। মুরগির মতো দুপায়ে নাড়িয়ে নাড়িয়ে ইনকাম করা গিনিপিগ মানুষগুলো হতাশায় কবেইতো নিঃশেষ হতে বসেছে। এখন শুধু বেঁচে থাকার যুদ্ধ যেন।
দুদকের এখন সামনে থেকে ভূমিকায় আসা প্রয়োজন। এজন্য সরকারেরই আরও বেশী স্বচ্ছতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। বড় দুর্নীতিবাজ তৈরি হওয়ার আগেই নির্মূল করা না গেলে দেশটাই এক সময় নিরাপত্তাহীন হয়ে যাবে। স¤পদের হিসাব সবারটাই উন্মোচন করার ব্যবস্থা করা হোক।
শুদ্ধাচার পুরস্কার কারা পাচ্ছে সরকারের অধীনে? এ বিষয়টি কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রশাসনিক কাঠামোকে গ্রহনযোগ্যতায় রাখতে প্রশাসনিক আমলা যারা রয়েছেন তারা কি তাদের দায়িত্বকে সঠিকভাবে দেখেন কিনা সেটিও বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
আজ হয়ত আমরা ফাঁকি দিতে পারছি কিন্তু আগামীতে যখন পুরো প্রজন্মের ওপর দুর্নীতির কড়াল গ্রাস পড়বে তখন পিছু ফেরার পথ থাকবে না একটুও। তাই পুরো দেশটাকে বাঁচাতে এখন থেকেই শুরু করুন। দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। বিচারের আওতায় আনুন সব দুর্নীতিবাজকে। স¤পদের হিসাব নিন সবার। দুর্নীতি বন্ধ না হলে কোনো উন্নয়নই দেশের সব মানুষের জন্য টেকসই বলে বিবেচিত হবে না।
[লেখক : সাধারণ সম্পাদক, উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি, শ্রীপুর, গাজীপুর]
সাঈদ চৌধুরী
সোমবার, ০৩ জুন ২০২৪
বেনজীর কোথায় আছে কেউ জানে না। বিষয়টি কেমন অবাক করার মতো! সাধারণ মানুষের অনুভূতির জায়গা প্রখর। একজন মানুষের এত টাকার বিপরীতে সাধারণ মানুষের করুণ দশাকে কে মেনে নিতে চায়। একদিকে মূল্যস্ফিতির চাপে মানুষ নাকাল অন্যদিকে চাহিদার তুলনায় আয়ের চরম ঘাটতি। সেখানে এমন দুর্নীতির খবর মানুষের মানসিক শান্তিকে কোথায় নিয়ে দাঁড় করায় তা কেবল অভাবী মানুষগুলোই জানে।
শনিবার থেকে তেলের নতুন বাড়তি দাম কার্যকর হয়েছে। একজন সাধারণ মানুষ বলছিলেন যে তেলের দাম না বাড়িয়ে বেনজীরের টাকা কেটে নিলেই তো হয়ে যায়! অতিরিক্ত দাম দিয়ে কোনো ব্যক্তি জিনিস কিনতে গিয়েও ভাবছে যে আহা কারও কারও কাছে টাকা কত সস্তা আর আমাদের ভাগ্য কেমন! যারা কষ্ট করে সৎ উপায়ে জীবন চালায় তাদের প্রত্যেকের টাকাই হয়ত ঢুকেছে এমন দুর্নীতিবাজদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে!
পুলিশের সাবেক এই আইজিপির টাকার উৎস কি? কিভাবে এত টাকা বানানো যায় এগুলো নিয়েও বিস্তর চিন্তা মানুষের মধ্যে। এর কারণওতো আছে। এত এত টাকা উপার্জনের পথ করতে গিয়ে দেশের স্বার্থ, মানুষের স্বার্থ কতবার লঙ্ঘিত হয়েছে কে জানে! কত মানুষের রক্তের বিপরীতে এ টাকা এসেছে তাই বা হিসেব করবে কে!
দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা মানুষ এ দেশে এখনও অনেক আছে। তার মধ্যেতো শিক্ষকরাই বেশি। শিক্ষকদের দেখেছি তারা ক্লাস রুমে পড়িয়ে যান সদা সত্য কথা বলবে, সৎ পথে চলবে। এখনও অনেক শিক্ষক আছেন এমন যারা সারা জীবন ধওে মানুষকে সৎ চিন্তা করতে শিখিয়ে গেছেন। গ্রামের মেঠো পথ ধরে হেঁটে গিয়ে শিক্ষকরা পড়িয়ে আসেন শিক্ষার্থীদের। শিক্ষার্থীরা কি শেখে তবে ? প্রতিদিন শপথ হয় বিদ্যালয়ে। শপথে দেশকে বাঁচানোর কথা আসে, নীতির মধ্যে থাকার কথা আসে, সেবার কথা আসে উঠে আসে মানুষকে নিরাপত্তা দেয়ার কথাও! বেনজির বা অন্যান্য দুর্নীতিবাজেরা এমন শপথ স্কুলে করেন নি ? একজন সৎ মানুষ এভাবেই বলছিলেন আর মাথা নাড়ছিলেন হতাশায়।
প্রশ্নগুলো আমাদেরও। আমরা আসলে কতটা মানুষের মধ্যে ঢুকতে পারছি, কত মানুষের মনকে বিশ্লেষন করতে পারছি। কতটা বা নিজেই মানুষ হতে পারছি ! সাথে সাথে যারা দুর্নীতি করে ধরা পড়ছে তাদেও শাস্তির ব্যপারেও অনেক মানুষের বিভিন্ন ধরনের মতামত আছে।
আজ যিনি অবসরপ্রাপ্ত তিনি বিচারের আওতায় এসেছেন। কিন্তু যারা একেবারে ক্ষমতায় আছেন তাদের দুর্নীতি কি চোখের সামনে আসছে? কেউ কি সাহস করে বলতে পারবে দুর্নীতির কথা যে কারও বিরুদ্ধে ? বললে কি আমলে নেয়া হবে না’কি তার পরিবারই নিরাপত্তাহীন হয়ে যাবে!
দুর্নীতি কমানোর জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেয়। তার মধ্যে অন্যতম স্কুলে স্কুলে সততা সংঘ গঠন করা, সততা স্টোর প্রতিষ্ঠা করা, শিশুদেও দুর্নীতি বন্ধে কাজ করতে উৎসাহিত করা। কিন্তু এতে করেও কি শিশুদের আমরা বোঝাতে পারছি দুর্নীতি করা যাবে না বা দুর্নীতিবাজকে ঘৃণা করতে হবে। বরং যখন তারা দেখে দুর্নীতি করেই সমাজে সম্মান, প্রতিপত্তি ও ক্ষমতা পাওয়া যায় তখন তাদের মনের ভেতর কি খেলা খেলে যায়! তারা কি তবে এগুলোকেই অনুসরণ করছে ? শিশুরা দেখে দেখে শেখে বলে শেখানোর মানুষটিকেও তারা অনুসরণ করে, পারিপার্শকে অনুসরণ করে।
শিশুদের যদি সত্যিই ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হয় তবে পারিবারিক বিষয়টিও অনেক অনেক গুরুত্বপূর্ণ। পরিবারগুলোওতো দেখি লোভে ভরা একেকটি দুর্নীতির খনি। উচ্চবিত্ত পরিবারগুলোর বেশিরভাগই সন্তানদের প্রথম থেকেই শিক্ষা দেয় সে কিভাবে পুঁজিবাদী হয়ে উঠবে, কিভাবে টাকা উপার্জন করবে। তারপর আর কোনো কথা নেই।
আমাদের মাথা পিছু আয় বেড়েছে। লাখ লাখ টাকা মাথাপিছু আয়ের দেশে একজন মানুষের সর্বনি¤œ আয় কত?
তীব্র গরমে রাস্তায় প্যাডেল মারা রিকশা চালকটির দিকে তাকানোর সময় নেই এসিতে চলা বেশিরভাগ মানুষের। কিন্তু দেখুন তার মাত্র শ’তিনেক টাকার সাথে মাথাপিছু আয়ের গড় হচ্ছে কোটি কোটি টাকা ইনকামের মানুষের। তা হতেই পারে ধরে নিলাম। কিন্তু কালো টাকা, দুর্নীতিবাজ কত জন আছে এদেশে তা বের করবে কারা?
বেসরকারি চাকরি করা একজন মানুষকে কর দিতে হয় প্রতি মাসে নির্দিষ্ট আয়ের বিপরীতে আর সেখানে বেনজিরের মত মানুষেরা? সাধারণ মানুষ অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলে আর ভালো লাগেনা, আর পেরেও উঠিনা। মুরগির মতো দুপায়ে নাড়িয়ে নাড়িয়ে ইনকাম করা গিনিপিগ মানুষগুলো হতাশায় কবেইতো নিঃশেষ হতে বসেছে। এখন শুধু বেঁচে থাকার যুদ্ধ যেন।
দুদকের এখন সামনে থেকে ভূমিকায় আসা প্রয়োজন। এজন্য সরকারেরই আরও বেশী স্বচ্ছতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। বড় দুর্নীতিবাজ তৈরি হওয়ার আগেই নির্মূল করা না গেলে দেশটাই এক সময় নিরাপত্তাহীন হয়ে যাবে। স¤পদের হিসাব সবারটাই উন্মোচন করার ব্যবস্থা করা হোক।
শুদ্ধাচার পুরস্কার কারা পাচ্ছে সরকারের অধীনে? এ বিষয়টি কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রশাসনিক কাঠামোকে গ্রহনযোগ্যতায় রাখতে প্রশাসনিক আমলা যারা রয়েছেন তারা কি তাদের দায়িত্বকে সঠিকভাবে দেখেন কিনা সেটিও বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
আজ হয়ত আমরা ফাঁকি দিতে পারছি কিন্তু আগামীতে যখন পুরো প্রজন্মের ওপর দুর্নীতির কড়াল গ্রাস পড়বে তখন পিছু ফেরার পথ থাকবে না একটুও। তাই পুরো দেশটাকে বাঁচাতে এখন থেকেই শুরু করুন। দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। বিচারের আওতায় আনুন সব দুর্নীতিবাজকে। স¤পদের হিসাব নিন সবার। দুর্নীতি বন্ধ না হলে কোনো উন্নয়নই দেশের সব মানুষের জন্য টেকসই বলে বিবেচিত হবে না।
[লেখক : সাধারণ সম্পাদক, উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি, শ্রীপুর, গাজীপুর]